স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে নিয়মিতভাবে চালু হচ্ছে মুজিবনগর-কলকাতা স্বাধীনতা সড়ক। স্থাপন করা হচ্ছে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট, যা আগামী ২৬ মার্চ যৌথভাবে অনলাইনে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন।
ফলে মেহেরপুরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি স্থলবন্দরের। সেস্থলে চেকপোস্ট হলেও প্রাথমিক ধাপ এগিয়ে যাবে মেহেরপুর। এর ফলে ওই এলাকাজুড়ে সৃস্টি হবে কর্মচাঞ্চল্য, বাড়বে কর্মসংস্থান। দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধির সাথে সাথে ঐতিহাসিক মুজিবনগরের গুরত্ব আরো বেড়ে যাবে পর্যটকদের কাছে।
এ উদ্যোগের কথা জানিয়ে সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরগুলোতে চিঠি দিয়েছে পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘‘আমাদের স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষে ‘মুজিবনগর-কলকাতা স্বাধীনতা সড়ক’ নিয়মিতভাবে চালু এবং ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট স্থাপন করতে চাই।
আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যৌথভাবে এ সড়ক ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট উদ্বোধন করবেন। এ জন্য ইতিমধ্যে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সড়কটি খুলবে। ফলে অনেক পর্যটকও আসবেন ঐতিহাসিক এই দর্শনীয় স্থান নিয়মিত পরিদর্শনে।’’ জানা গেছে, সড়কটি চালু ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট স্থাপন করতে স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পত্র দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পত্রের আলোকে ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্টদের করণীয় নির্ধারণে সরকারি দফতরগুলোতে পৃথক চিঠি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ ও সুরক্ষা সেবা বিভাগ।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের যুগ্ম-সচিব এ এস এম জাকির হোসেন বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পত্রের আলোকে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মতামত চাওয়া হয়েছে। তাদের মতামতের ভিত্তিতে সবকিছু চূড়ান্ত করা হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব কাইজার মোহাম্মদ ফারাবী বলেন, মুজিবনগর-কলকাতা স্বাধীনতা সড়ক চালুর নিমিত্তে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোকে অবহিত করা হয়েছে। এর আগে স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষে ‘স্বাধীনতা সড়ক’ (মুজিবনগর-কলকাতা) নিয়মিতভাবে চালু করা এবং ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট স্থাপন করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ১০ আগস্ট পত্র দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। তার স্বাক্ষরিত পত্রের অনুলিপি দেওয়া হয় জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনকে।
পত্রে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ৮ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ, টুঙ্গিপাড়া কমপ্লেক্স এবং আমাদের স্বাধীনতা ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স দর্শন করি। বিশ্বের মুষ্টিমেয় কয়েকটি জাতি আছে, যারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে সরকার গঠন করে স্বাধীনতাযুদ্ধে বিজয়ী হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে সরকার গঠন করে আমরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। এ কারণে বিশ্ব জনমত আমাদের পক্ষে আনা সহজতর হয়েছিল।’ পত্রে আরও বলা হয়, ‘১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল কলকাতা থেকে আমাদের জাতীয় নেতা, দেশি-বিদেশি সাংবাদিকরা মুজিবনগরে আগমন ও শপথ গ্রহণ করেছিলেন।
যে পথে তারা এসেছিলেন, তা এখন বন্ধ রয়েছে। আগামী বছর ২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আমরা বৃহত্তর পরিসরে সুবর্ণজয়ন্তী উদ্্যাপন করব। এ উপলক্ষে কলকাতা থেকে মুজিবনগরে যাতায়াতের এই ঐতিহাসিক সড়কটি চালু করা হলে আমাদের ইতিহাস-সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক মুজিবনগর আরও সমৃদ্ধ হবে। পাশাপাশি মুজিবনগরে স্থায়ীভাবে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট স্থাপন করলে সড়কটি নিয়মিতভাবে সচল থাকবে। বাংলাদেশ ও ভারতের বাসিন্দাদের যাতায়াতে সুবিধা হবে এবং পর্যটক সংখ্যা বাড়বে।’ এ অবস্থায় স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষে স্বাধীনতা সড়ক (মুজিবনগর-কলকাতা) নিয়মিতভাবে চালু রাখা এবং ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট স্থাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিশেষভাবে অনুরোধ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।
এ বিষয়ে মেহেরপুর স্থল বন্দর বাস্তবায়ন আন্দোলনের ফোরামের মুখপাত্র ও মেহেরপুর প্রতিদিন এর প্রকাশক জানান, মেহেরপুরবাসী স্থল বন্দর বাস্তবায়নের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। আন্দোলনের অংশ হিসেবে মানববন্ধন, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করা হয়েছে। আমরা মনে করি সেই আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমাদের প্রাথমিক বিজয় হচ্ছে। আমরা মেহেরপুরবাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনকে কৃতজ্ঞতাসহ ধন্যাবাদ জানাই।
এম এ এস ইমন আরো বলেন, আমরা যখন স্থলবন্দর আন্দোলন শুরু করি মেহেরপুরের মানুষ জানতো না বন্দর কি। তারা বলতো এখানে তো পানি নেই তো বন্দর কিভাবে হবে। ধিরে ধিরে মানুষকে বুঝিয়ে আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত করতে পেরেছিলাম।