মেহেরপুর জেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণে নিম্মমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করায় ক্ষুব্ধ হয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ করেছে গণপূর্তের খুলনা বিভাগীয় অফিস।
১৪ কোটি ২৬ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯০ টাকা ব্যায়ে মেহেরপুর জেলা মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ পেয়েছেন এন হোসেন শামীম (জেভি), মিশন পাড়া, পুরাতন কসবা, যশোর। প্রতিষ্ঠানটি মডেল মসজিদ নির্মাণের শুরু থেকেই সিডিউল বহির্ভূত নির্মাণ কাজ করছে। আগামি দেড় বছরের মধ্যে কাজটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে ঠিকাদার এন হোসেন শামিম মেহেরপুর গণপূর্ত প্রকৌশলী মোহা. জাকির হোসেনের আত্মিয়। তার যোগসাজশেই তিনি ঠিকাদার হিসেবে কাজটি পেয়েছেন।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের খুলনা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার বসু গত ২০ সেপ্টেম্বর মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ সরেজমিনে পরিদর্শনে নানা ধরণের অনিয়ম দেখতে পান। তিনি কাজের দৃশ্যমান কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি অসঙ্গতি উল্লেখ করে সিডিউল মোতাবেক কাজ করার জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে লিখিত নির্দেশও দিয়েছেন। এরপরেও সিডিউল বহির্ভূত নি¤œমানের সামগ্রি দিয়ে নির্মানকাজ করা হচ্ছে। যেভাবে নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে তাতে নির্মাণ পরবর্তী ফ্লোর ফেটে যাওয়াসহ অনাকাংক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে। এমন আশংকা গণপূর্ত বিভাগের বিভাগীয় প্রকৌশলীদের।
গণপূর্তের খুলনা বিভাগীয় অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর লিখিত নির্দেশে উল্লেখ করা হয়েছে, নির্মাণাধীন জেলা সদর মডেল মসজিদের একদিক থেকে কলামের বেইজ ঢালাই করা হচ্ছে অন্যদিকে একবারে ৮-১০ ফুট উচ্চতার ভিতর মাটি ফেলা হচ্ছে । স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী ৬ ইঞ্চি লেয়ারে কম্প্যাকশন করার কথা থাকলেও সেই অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে না । এতে করে ফ্লোর ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সমস্ত মাটি তুলে স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী পুনরায় মাটি ভরাট করে সঠিক নিয়মে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। কাজের সাইটে ব্যবহৃত নির্মাণ সামগ্রীর মধ্যে শক্তিশালি স্টিল রড, পাথর চিপস, বি এস আর এম, আনোয়ার, একেএস কোম্পানির যেকোন একটি ব্র্যান্ডের রড় ব্যবহার করার কথা। সিডিউলে বলা এসব নিয়ম মানা হচ্ছেনা বলে অভিযোগ করা হযেছে নোটিশে।
নোটিশে আরও উল্লেখ রয়েছে, নির্মাণ কাজে ভিতরের মাটি ভরাট ও ক্যাপশন কাজ স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী করার জন্য এবং গ্রহণযোগ্য টেস্ট রেজাল্টের উপর ভিত্তি করে নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের করার কথা থাকলেও নিম্মমানের সামগ্রী দিয়ে চলছে মডেল মসজিদের নির্মাণ কাজ। সরেজমিনে কাজের সাইডে গিয়ে দেখা যায় নি¤œমানের টাইগার নামের রড দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। যার বাজারমূল্য ওই রডের প্রতিকেজির দাম ৪৫ টাকা। অথচ সিডিউলে ৮২ টাকা কেজি দরের বিএসআরএম রড দেয়ার জন্য সিডিউলে বলা হয়েছে। অন্যন্য নির্মান সামগ্রিও নি¤œমানের দেয়া হচ্ছে।
তবে ঠিকাদার এন হোসেন শামিমের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে প্রকল্প এলাকায় তিনি ছিলেন না। সেখানে কর্মরত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কেউ তার সাথে যোগাযোগের কোন ব্যবস্থা করে অপরাগত প্রকাশ করেন।
মেহেরপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহা. জাকির হোসেন জানান- বিভাগীয় প্রকৌশলীর নির্দেশে কাজ তদারকি করা হচ্ছে। নি¤œমানের সামগ্রি সরিয়ে দেয়া হয়েছে। টাইগার রড অপসারণ করে আনোয়ার কোম্পানীর রড সংযোজন করা হয়েছে। মাটি কম্প্যাকশন সম্পর্কে তিনি বলেন, এখানে ১২টি গর্ত করা হয়েছে। একেকটি গর্ত হতে দেড় হাজার সিএফটি মাটি উঠানো হয়েছে। স্খান সংকুলান না হওয়ায় ভরাটের কাজটি ওভাবেই করতে হয়েছে। ঠিকাদার শামিম সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, সে তার কোন আত্মিয় না।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. আতাউল গনি নি¤œমানের কাজ হবার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, মেহেরপুর জেলা সদরে মডেল মসজিদ নির্মান কাজে অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি। কাজে কোন রকম অনিয়ম মেনে নেওয়া হবে না। বিভাগীয় খুলনা গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সরেজমিনে নির্মাণকাজ পরিদর্শন করে অনিয়ম দেখেছেন। তিনি মেহেরপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে নির্দেশ দিয়ে গেছেন সিডিউল মোতাবেক কাজটি দেখভাল করে বুঝে নেবার।