মেহেরপুর প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা কিন্তু ৮নং ওয়ার্ডের নাগরিক সেবা তৃতীয় শ্রেণীর মত। বাসিন্দারা নাগরিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বছরের পর বছর চলাচল করতে পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ। পর্যাপ্ত ময়লা আবর্জনা ফেলার ডাষ্টবিনের অভাবে সড়কের পাশে দূর্গন্ধময় ময়লা আবর্জনায় স্তুুপ হয়ে পড়ে থাকে। এই ওয়ার্ডে ড্রেনের সু ব্যবস্থা থাকলেও ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করার কারণে ড্রেনে ময়লা, কাঁদা ও পানি জমে দুর্গন্ধ ও মশার উপদ্রপ সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিনিয়িত। তাছাড়া অসচেতন বাসিন্দারা দৈনন্দিন ময়লা আবর্জনা ড্রেনে ফেলার কারণে ওয়ার্ডের বিভিন্ন জায়গায় ড্রেনের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে।
পুরাতন বাসষ্ট্যান্ড পাড়া, ভূমি অফিস পাড়া, ষ্টেডিয়াম পাড়া, হোটেল বাজার মসজিদ পাড়া, পশু হাসপাতাল পাড়া, শহীদ আরজ সড়ক, মল্লিকপাড়া একাংশ, নজরুল স্কুল পাড়া, মারকাজ মসজিদ পাড়া, সালাম ক্লিনিক পাড়া, কলেজ পাড়া একাংশ, হাট পাড়া নিয়ে গঠিত মেহেরপুর পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডের ভোটার সংখ্যা ৩ হাজারের অধিক। এই ওয়ার্ডের নির্বাচিত কাউন্সিলর সৈয়দ মঞ্জুরুল কবির রিপন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৮ নং বিভিন্ন ওয়ার্ডের সড়কে বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দর, ভাঙ্গা ড্রেনের গাইডওয়াল ও ঢাকনা যা দীর্ঘ দিন ধরে সংস্কার ও পুণঃ নির্মাণ হয়নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীদের। দীর্ঘদিন সড়কগুলো মেরামত না করার কারণে পিচ রাস্তা মাটির রাস্তায় পরিণত হয়েছে।
নেই ময়লা আবর্জনা ফেলার জায়গা। বছরের পর বছর বসবাস করতে হচ্ছে বসতবাড়ির আশেপাশে গাইডওয়াল ভাঙ্গা ও ঢাকনা বিহীন ড্রেনের পাশে দূর্গন্ধময় ময়লা আবর্জনায় স্তুুপ ও মশা-মাছি নিয়ে। পাড়ার প্রধান সড়কের সাথে ড্রেন দিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকলেও অলিগলির ড্রেনগুলোর চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন। ড্রেনগুলো সময়মত পরিষ্কার না করায় ময়লা আবর্জনায় ভরে গেছে। এবিষয়ে কাউন্সিলরকে অবগত করলেও কোন সুফল মেলেনা বলেও অভিযোগ এলাকাবাসীদের।
স্টেডিয়াম পাড়ার সেলিনা খাতুন বলেন, ১ম শ্রেণীর পৌরসভা হলেও আমাদের নেই কোনো নাগরিক সুযোগ সুবিধা। পাড়ার অলিগলির রাস্তাগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে। বাড়ির দেয়াল ঘেঁষে যে ড্রেন তা কতদিন যে পরিস্কার করা হয়নি তা আমাদের মনে নেই। পাড়ার ভিতরে নেই ময়লা ফেলার জায়গা। কষ্ট করে ওই স্টেডিয়ামের কাছে ময়লা ফেলে আসতে হয়। পৌরসভা থেকে বাড়ি বাড়ি এসে ময়লা নিয়ে যাবে তার জন্য মাসে ৩০ টাকা দিতে হবে বলে পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তা আর হয়নি। বাড়িতে ময়লা রেখে পচে যায় কিন্তু পৌরসভা থেকে লোক আসে না। নিরুপায় হয়ে স্টেডিয়ামের ওই কোনায় আমরা ময়লা ফেলে আসি। তাছাড়া এই ড্রেনগুলো যে কতদিন পরিস্কার করা হয়নি তা মনে নেই। ড্রেনগুলো ভেঙ্গে গেছে। নেই ঢাকনা। মশা-মাছি আর ময়লা আবর্জনার দূর্গন্ধে জীবন অতীষ্ট। আমাদের অভিযোগ শোনার মত কোন লোক নেই।
সুইট বলেন, পাড়ার কোন জায়গায় ডাষ্টবিন না থাকার কারণে স্টেডিয়ামের প্রাচীর ঘেষে দৈনন্দিন ময়লা আবর্জনা ফেলার জন্য ইটদিয়ে ঘিরে সাময়িকভাবে একটি ডাস্টবিন তৈরী করা হয়েছিল। এলাকার লোকজন এখানেই তাদের ময়লা আবর্জনা ফেলে। কিন্তু এসব ময়লা আবর্জনা প্রতিদিন নেওয়া হয় না। ২ দিন ৩ দিন পর এসব ময়লা অপসারণ করা হয়। তবে কিছুদিন না যেতেই এই ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর সেই ডাস্টবিনের ইট ভেঙ্গে তার বাড়িতে নিয়ে গেছে। এবিষয়ে পৌর কর্তৃপক্ষ জানানো হলেও পরবর্তীতে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি
ময়লা আবর্জনা ফেলার ডাষ্টবিনের অভাবে সড়কের পাশে দূর্গন্ধময় ময়লা আবর্জনায় স্তুুপ হয়ে পড়ে থাকে। ভুল করেও এদিকে পৌরসভার পরিচ্ছন্ন কর্মীরা আসে না। গত কয়েক বছরের এইসব সড়কের তেমন কোনো সংষ্কার চোখে পড়েনি ওয়ার্ডবাসীর। ফলে দুর্ভোগে এই এলাকার বাসীন্দারা। এছাড়াও ডাষ্টবিন এর অভাবে যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনায় স্তুুপ, মশা-মাছির উপদ্রপতো আছেই। ৮নং ওয়ার্ডের বাবলু বলেন, পাড়ায় কোনো ডাষ্টবিন নির্মাণ না করায় স্থানীয়রা কাজী অফিসের সামনে ময়লা আবর্জনায় ফেলে। এই ময়লা আবর্জনাগুলো ঠিকমত নিয়ে যাওয়া হয়না। অনেক সময় ২-৩ দিনও পড়ে থাকে যার ফলে পচে দূর্গন্ধ ছড়ায়। অনেক সময় দেখা যায় পশুপাখিতে আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাস্তার মাঝখানে নিয়ে আসে এতে করে পথচারীদের চলাচলেও সমস্যা সৃস্টি হয়। খোলা জায়গায় আবর্জনা ফেলার কারণে দূর্গন্ধময় পরিবেশে কষ্ট করেই বসবাস করতে হচ্ছে।
একই ওয়ার্ডের লাল্টুর মোড় এলাকার দোকানদার লাল্টু বলেন, আমার দোকানের অপর পাশে ময়লা আবর্জনার স্তুপ হয়ে পড়ে থাকে যা ঠিকমত পরিষ্কার হয় না। অনেক সময় সপ্তাহখানেক পড়ে থাকলেও পরিষ্কার হয় না। এই রাস্তাটিও দীর্ঘদিন ধরে মেরামত না করায় বিভিন্ন স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। মেহেরপুর পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ মঞ্জুরুল কবির রিপন বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকায় নানান সমস্যা রয়েছে। জনগণের স্বার্থে ও ওয়ার্ডের উন্নয়নের জন্য যেসব কাজ করার কথা ছিল বা ওয়াদাবদ্ধ ছিলাম তা আমি সম্পূর্ণ করতে পারিনি। পৌরসভার আর্থিক সংকট এবং ওয়ার্ডের উন্নয়নের জন্য চাহিদামত বরাদ্দ না পাওয়া আবার বরাদ্দ পেলেও তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে কোন উন্নয়ন করতে পারিনি। এছাড়াও আছে করোনা মহামারীর কারণে জনসেবা ও ওয়ার্ড উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত ওয়ার্ডবাসী। এরপরও জনগণের যতটুকু সেবা দেয়া সম্ভব হয়েছে তা দেয়ার চেষ্টা করেছি।