মেহেরপুর সদর উপজেলার দরবেশপুর শোলমারী বিলে পাহারা দেওয়ার সময় রোকন বিশ্বাস (৩৮) ও হাসান বিশ্বাস (৪২) নামের দুই চাচাত ভাইকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যার ৯ দিন অতিবাহিত হলেও কোন আসামিকে ধরতে পারেনি পুলিশ।
তবে পুলিশ কয়েকটি বিষয়কে মূল কারণ হিসেবে নিয়ে তদন্তে নেমেছে। পুলিশের দাবি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে এ হত্যাকান্ডের ক্লু বের হবে এবং আসামিদের আটক করা সম্ভব হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রোকন ও হাসানের এক আত্মিয় মেহেরপুর প্রতিদিনকে জানান, রোকন ও হাসানের কোন শত্রু গ্রামে নেই। তবে রোকন প্রভাবশালী ঘরের ছেলে। এলাকার যে কোন বিষয়ে সে সবার আগে সমাধান করার চেষ্টা করতো। এছাড়া অনুরাগ আদর্শ ক্লাবের নির্বাচন নিয়ে বিরোধও রোকনের জন্য কাল হতে পারে তিনি ধারণা করছেন। এ বিষয়ে পুলিশ ঠিকমত তদন্ত করলে আসলে রহস্য বের হয়ে আসবে। তবে হত্যাকান্ডের আট দিন পার হলেও এখন পর্যন্ত কোন আসামি আটক হয়নি এটাই কষ্টের।
এদিকে জোড়া খুনের ঘটনায় কোন আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় এলাকার মানুষের মাঝে উৎকন্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে। দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মেহেরপুর সদর থানার এসআই আহসান হাবিব জানান, বেশ কয়েকটি সূত্র ধরে তদন্তের কাজ চলছে। রোকন এবং হাসান দুজনই দির্ঘদিন ধরে মাছ চাষ করছেন যে বিলে সেই বিল লিজ নেওয়াকে কেন্দ্র করে বিরোধ থাকতে পারে, এলাকায় অনুরাগ আদর্শ ক্লাব নামের একটি সংগঠনের সাথে বিরোধের কথাও শোনা যাচ্ছে এছাড়া রাজনৈতিক দ্বন্দও হত্যাকান্ডের কারণ হতে পারে।
তিনি আরো জানান, এমনকি নারী সংক্রান্ত কোন ঘটনার জেরেও এ হত্যা কান্ডের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। সবগুলো বিষয়কেই সামনে নিয়ে আমরা তদন্তের কাজ করছি। আশা করছি খুব দ্রুত এ হত্যাকান্ডের আসল তথ্য বের হয়ে আসবে।
মেহেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল) মোস্তাফিজুর রহমান মেহেরপুর প্রতিদিনকে জানান, নৃশংস এ হত্যাকান্ডের তথ্য বের করতে পুলিশ কাজ করছে। শত্রুতার চরম পর্যায়ে পৌছালেই কেবল এ ধরণের নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। তবে বিভিন্ন ভাবে এ হত্যাকান্ডের তদন্ত চালানো হচ্ছে। মাছের বিল, ক্লাবের বিরোধ, আত্মিয়দের সাথে বিরোধ ইত্যাদি বিষয়গুলো সামনে আসছে। তবে হত্যাকান্ডের সাথে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার কিছু লোকজনও জড়িত আছে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরো জানান, ইতিমধ্যে সন্দেহভাহ তিনজনকে নিয়ে আসা হয়েছিল। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে তেমন কিছু পাওয়া না যাওয়ায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে এ হত্যাকান্ডের তথ্য বের হবে।
উল্লেখ্য, ঘটনার দিন ১১ সেপ্টেম্বর বুধবার রাত ১১ টার দিকে প্রতিদিনের ন্যায় রোকন ও হাসান তাদের ইজারা নেওয়া শোলমারী বিলে পাহারাদারদের খোঁজ খবর নিতে যায়। এসময় তারা বিলের অস্থায়ী পাহারা ঘরে বসে ছিলো। তখন ১০/১২ জনের একদল সন্ত্রাসী ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাদের দুজনের উপর হামলা করে। এসময় তাদের হাত পা বেধে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলার পিছন দিকে কুপিয়ে হত্যা নিশ্চিত করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে পুলিশ লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন সংগ্রহ করে লাশ মযনাতদন্তের জন্য মেহেরপুর মর্গে পাঠায়। ১৩ সেপ্টেম্বর রোকনের স্ত্রী আলেয়া খাতুন বাদি হয়ে অজ্ঞাত ১০/১২ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মেপ্র/ নিজস্ব প্রতিবেদক