বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের নাম ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো মেহেরপুরেও গড়ে ওঠেছে বেশ কিছু ভুঁইফোড় সংগঠন। বিভিন্ন দিবস ভিত্তিক অনুষ্ঠান ও ফেসবুক ব্যবহার করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করতেন ওই সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দলবাজি, দখলবাজি, সালিস সহ বিভিন্ন অপরাধমূলক অভিযোগ পাওয়া যেত। তবে বর্তমানের তাদের অস্তিত্ব থাকলেও কোন কর্মসূচী দেখা যায় না। তবে জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলছেন ভুঁইফোড় কোন সংগঠন মেহেরপুরে রাখা হবে না।
জানা গেছে, সংগঠনগুলো নিজেদের আওয়ামী লীগের অঙ্গ কিংবা সহযোগী সংগঠন দাবি করে প্রচারণায় দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা ব্যবহার করছে। ২০১৫ সালের পর থেকে ১০১৮ সাল পর্যন্ত মেহেরপুরে বিভিন্ন ভুঁইফোড় সংগঠনগুলো বিভিন্ন দিবসভিত্তিক কর্মসূচী পালন করে। ওই সকল কর্মসূচীতে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকতেও দেখা গেছে। ওই সময় বেশ কিছু সংগঠনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দখলবাজীসহ বিভিন্ন অভিযোগও পাওয়া গেছে। ভুঁইফোড় সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ কারণে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ বিব্রত। যে কারণে ২০০৯ সালের পর থেকে যে সকল সংগঠন হয়েছে ওই গুলোকে ভুঁইফোড় বলে আখ্যায়িত করেছে আওয়ামী লীগ এবং ওই সকল সংগঠন গুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী মহিলা আওয়ামী লীগ, আওয়ামী যুবলীগ, আওয়ামী যুব মহিলা লীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, তাঁতী লীগ । ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন দুটি হলো বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ।
এর বাইরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বা তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে কোনো সংগঠন করতে হলে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’–এর অনুমোদন নিতে হয়। এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধাসংক্রান্ত সংগঠনের ক্ষেত্রে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) অনুমোদন দিয়ে থাকে। কিন্তু ভুঁইফোড় সংগঠনগুলো অনুমোদনের ধার ধারে না।
২০০৯ সালের পর গঠন করা সংগঠনগুলোকে ভুঁইফোড় সংগঠন বলা হচ্ছে। বর্তমানে ভুঁইফোড় সংগঠনের মধ্যে মেহেরপুরে মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ, সজীব ওয়াজেদ জয় পরিষদ, বাংলাদেশ আওয়ামী বাস্তহারা লীগ, বাংলাদেশ আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ, আওয়ামী যুব প্রজন্ম লীগ, নবীন লীগ নামের ৭টি সংগঠন থাকলেও বাংলাদেশ আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ ছাড়া বাকী সংগঠনগুলোর কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তবে বিগত দিনে এসকল সংগঠনের কার্যক্রম চলমান ছিলো বলে জানা গেছে। জানা গেছে, বাকী সংগঠনগুলো শুধুমাত্র কমিটিতেই সীমাবদ্ধ। তাদের দলীয় কার্য্যলয় বা কর্মকাণ্ড নেই।
মেহেরপুর জেলা আওয়ামী বাস্তহারা লীগের সাবেক সভাপতি ফিরোজ আহমেদ বলেন, গত ৪ বছর হলো আমি সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছি। আমি আর কিছুই জানিনা। আমি সভাপতি হবার পর কিছু দলীয় কার্যক্রম করা হলেও বর্তমানে দলের কোন কার্যক্রম নেই। আনুমানিক গত আট-দশ বছর আগে মেহেরপুর জেলা আওয়ামী বাস্তহারা লীগের কমিটির অনুমোদন হয়।
বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের সাধারণ সম্পাদক তরুণ আহমেদ বলেন, ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের মেহেরপুর জেলা কমিটি গঠন করা হয়। করোনা পরিস্থিতে দলীয় কার্যক্রম বন্ধ আছে। তাছাড়া কেন্দ্র থেকে যখন যেভাবে নির্দেশনা আসে আমরা সেই অনুযায়ী কর্মসূচি পালন করি। সভাপতি ও আমি ব্যক্তিগত টাকা দিয়ে সংগঠনের খরচ বহন করি।
তরিকুল ইসলাম বলেন, কেন্দ্র থেকে যখন যেমন নির্দেশনা আসে সেই অনুযায়ী জেলা কমিটি তার কার্যক্রম করে। আমরা জেলা কমিটির সদস্যদের সাথে মাসিক চাঁদা তুলে সংগঠনের খরচ বহন করি। সদস্যগণ তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী প্রতি মাসে যার যতটুকু সম্ভব হয় চাঁদা প্রদান করে। বর্তমানে আমাদের কোন দলীয় কার্যালয় নেই। চলতি বছরের ২২ মার্চ কমিটি গঠন হয়। আমাদের
কেন্দ্রীয় সভাপতি হচ্ছেন আসাদুজ্জামান দূর্জয়। গত কয়েকদিন আগেও আমরা কেন্দ্র থেকে আগষ্ট মাসে বিভিন্ন অনুষ্ঠান পালনের একটি নির্দেশনাও পেয়েছি।
আওয়ামী যুব প্রজন্মলীগের সভাপতি জাহিদ হাসান জানান, আমারা জেলা কমিটি পেয়েছি গত বছরের ১৮ নভেম্বর। দলের তেমন কোন কার্যক্রম করতে পারিনি। যদিও জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি দেওয়ার কথা ছিল কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে কোন কিছুই হয়নি। আর দলের কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় তেমন কোন অর্থের প্রয়োজন পড়েনি।
সজীব ওয়াজেদ জয় পরিষদ এর সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন এর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
মেহেরপুর জেলা নবীন লীগের সভাপতি মিজান জানান, বর্তমানে আমাদের দলীয় কার্য্যালয় নেই। সম্প্রতি কেন্দ্র থেকে কমিটি দিয়েছে। আমাদের কেন্দ্রীয় সভাপতির নাম লুৎফর রহমান। চলতি বছরের ৩ জুন মেহেরপুর জেলা কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এবিষয়ে মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেক মেহেরপুর প্রতিদিনকে জানান, আওয়ামী লীগের সহযোগী ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাড়া ভুঁইফোড় সংগঠনগুলো বিভিন্ন অনুষ্ঠান করলে আমাদের অতিথি হিসেবে দাওয়াত করে। আমরা তাদের অনুষ্ঠানের যাই না। তবে একসময় ওই সকল সংগঠনের অনুষ্ঠানের নেতারা গিয়েছেন। তখন তাদের প্রতি এতো এলার্জি ছিলো না। তিনি বলেন, এখন আর মেহেরপুরে কোন ভুঁইফোড় সংগঠন রাখা হবে। কেন্দ্র নির্দেশ দিলেও আমরা এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করবো।