মেহেরপুরের কৃষকদেও কাছে দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মালচিং পদ্ধতি। কৃষি ক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধি খরচ কম ও মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় যে সকল চাষ পদ্ধতি রয়েছে তার অন্যতম মালচিং পদ্ধতি। আর পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে লাভবান হওয়ায় মেহেরপুর জেলার কৃষকরা ঝুঁকছেন এ পদ্ধতি ব্যবহারে।
মালচিং পদ্ধতিতে উৎপাদিত ফসলের চাহিদা ও মুল্য বেশি পাওয়ায় অনেক কৃষকই আগ্রহী হয়ে পরামর্শ নিচ্ছেন মালচিং পদ্ধতি সম্পর্কে। আর এতে সহায়তা করছেন বেসরকারী সংস্থা পলাশী পাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতি।
মেহেরপুর কৃষি অফিসের দেয়া তথ্য সুত্রে জানাগেছে, জেলায় এবছর ৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের টমেটো আবাদ হয়েছে। এতে ২০০০ মেট্রিক টন টমেটো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। জেলায় উন্নত জাতের মধ্যে বিউটি প্লাস, লাভলী, অভিলাস, লভেলট্রি, বাহুবলি ও জিরো ফোর জাতের টমেটো আবাদ হচ্ছে। আর এসকল টমোটোর আবাদের খরচ কমিয়ে রোগ বালাইয়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে মালচিং পদ্ধতি দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
মালচিং হচ্ছে চাষকরা মাটির উপর এক ধরনের মোটা ও কার্বন যুক্ত পলিথিন পেপার। যা মাটি বাহিত বালাই প্রতিরোধী ও সেচ সাশ্রয়ী। মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করে খরচ কম হচ্ছে এবং উৎপাদিত ফসলের গুনগত মান বৃদ্ধি হচ্ছে। পাশাপাশি বাজারেও চাহিদা বাড়ছে। ফলে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে মেহেরপুরের টমেটোসহ মালচিং পদ্ধতিতে উৎপাদিত বিভিন্ন সবজি। এপদ্ধতি ব্যাপক হারে ছড়িয়ে দিতে কৃষি অফিস থেকে বিভিন্ন পরামর্শও দেয়া হচ্ছে। সরকারি সহায়তার পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতি কাজ করে কৃষকদের আরও সমৃদ্ধ করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
গাড়াডোব গ্রামের টমেটো চাষী আমজাদ হোসেন জানান, প্রচলিত পদ্ধতিতে আবাদ করে লোকসান হচ্ছিল। পরে পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতি বিনামুল্যে মালচিং পেপার ও কিছু নগদ অর্থ সহায়তা করে। তাদের কৃষি অফিসারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রথমে এক বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করা হয়। টমেটো গাছ অনেক বড় ও সবল হয়েছে। মাটি বাহিত রোগ বালাই নেই। সেচ খরচও হচ্ছেনা। এক বিঘা জমিতে টমেটো আবাদ করেত খরচ হয়েছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। ৫০ হাজার টাকার টমেটো ইতোমধ্যে বিক্রি করা হয়েছে। এখনও গাছে পর্যাপ্ত টমেটো রয়েছে। আশা করা হচ্ছে এক লক্ষ টাকার টমেটো বিক্রি করা সম্ভব হবে।
কৃষক জাকিরুল ইসলাম জানান, মালচিং পদ্ধতিতে চাষ প্রশিক্ষণ নিয়ে টমেটো চাষ করায় অন্যান্য বছরের তুলনায় মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো গাছে বেশি টমেটো হয়েছে। দেখতে সজিব ও সুন্দর। বাজারে অন্যান্য জেলার তুলনায় এ পদ্ধতিতে উৎপাদিত টমেটোর কদর অনেক বেশি। দামও ভাল। আগে সবজিতে ৪/৫ টি সেচ লাগতো। মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করে মাত্র দুটি সেচেই আবাদ হচ্ছে। আগাছাও কম। এপদ্ধতি ব্যবহারে কৃষকদের অনেক খরচ কমে যাবে এবং কীটনাশকের ব্যবহারও কমে আসবে।
কৃষক জাকিরুলের ছেলে জুয়েল রানা জানান, আমি লেখাপড়ার পাশাপাশি বাবার সাথে কৃষি কাজেও সহায়তা করি। আগে জমিতে অনেক সেচ ও আগাছা দমনে সময় বেশি লাগতো । এখন আর তা লাগেনা। আমাদের আবাদ ভাল হচ্ছে এবং খরচও কমেছে।
মেহেরপুর পলাশীপাড়া সমিতির কৃষি অফিসার মস্তফা রাব্বি জানান, কৃষি নির্ভরশীল ও সম্ভাবনাময় মেহেরপুরের কুষিকে আরো সমৃদ্ধ করতে সরকারি সহায়তার পাশাপাশি আমরাও নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রশিক্ষন ও পরামর্শ দিচ্ছি কৃষকদের।
পিএসকেএস সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মুহঃ মোশাররফ হোসেন, বলেন, পিকেএসএফ অর্থায়নে পরিচালিত আমাদের এই সংস্থা। সংস্থাটি জন কল্যাণে ও কৃষি কল্যাণে কাজ করছে দির্ঘদিন থেকে। কৃষি প্রণোদনা হিসেবে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিয়ে যাচ্ছি কৃষকদের। উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে। মালচিং একটি প্রযুক্তি। যা ব্যবহার করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।
মেহেরপুর কৃষি অধিদপ্তরের উপ পরিচালক শংকর কুমার মজুমদার জানান, মালচিং পদ্ধতি মেহেরপুরের কৃষকদেও কাছে দিনদিন জনপ্রিয় হচ্ছে। এতে রোগবালাই কম হয় ফলে কীটনাশক ব্যবহার কমে এসেছে। সেচ খরচও কম। এবং উৎপাদিক ফসল দেখতেও ভাল হয়। যে কারনে বাজারেও চাহিদা বেশি। আমাদেও পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাও কৃষিকে এগিয়ে নিচ্ছে, যা ভাল উদ্যোগ। আমরা চাই কৃষকরা যে কোন ভাবে কৃষকরা লাভবান হোক।