মেহেরপুর জেলা জামায়াতের তৎকালীন আমীর হাজি ছমির উদ্দিনের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অপরাধে জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাজি গোলাম রসুলকে প্রধান আসামি করে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের ২৩ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে এক শ থেকে দেড়শ জনকে।
আজ সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জামায়াতের সাবেক আমীর আলহাজ্ব ছমির উদ্দিনের ছেলে তাওফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে আইন শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন ২০০২ এর ৪(১)(২) উপধারা (১)/৫(১) তৎসহ দণ্ডবিধি আইনের ৪৩৬ ধারায় মামলাটি দায়ের করেন।
আইন শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন আদালতের বিচারক শারমিন নাহার মেহেরপুর সদর থানাকে মামলাটি সরাসরি এফআইআরের নির্দেশ দেন।
মামলার আসামিরা হলেন মেহেরপুর জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব গোলাম রসুল, জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি সাজ্জাদুল আনাম, বড়বাজার এলাকার যুবলীগ নেতা কাজল দত্ত, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সদর উপজেলার আমদহ গ্রামের বারিকুল ইসলাম লিজন, নীলমনি সিনেমা হলপাড়ার যুবলীগ নেতা মাহাবুব হোসেন, ১ নং ওয়ার্ডের জুয়েল হোসেন, মল্লিকপাড়া এলাকার যুবলীগ নেতা মাহফুজুর রহমান পলেন, শাহাজিপাড়ার সজল হোসেন, পন্ডেরঘাট এলাকার বায়োজিদ হোসেন, স্টেডিয়ামপাড়ার তুফান আলী, গোভীপুর গ্রামের গোলজার হোসেন, রাঁধাকান্তপুর গ্রামের জুয়েল রানা, শহরের পিয়াদাপাড়া এলাকার তৌহিদ হোসেন, চক্রপাড়ার নাসির হোসেন, গোরস্থান পাড়ার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আনন্দ, নতুনপাড়ার রাজীব হোসেন, বামনপাড়ার দরুদ আলী মেম্বর, বন্দর গ্রামের মোমিন আলী, একই গ্রামের আলতাব হোসেন মহুরি, রাঁধাকান্তপুর গ্রামের সাজু, একই গ্রামের সামিরুল ইসলাম, সাংস্কৃতিক কর্মী বোসপাড়ার নিসান সাবের ও লর্ড মার্কেট এলাকার আসলাম খান পিন্টু।
বাদী তার মামলার আরজিতে লিখেছে, আসামীরা ঘটনার তারিখ ও সময়ে পরিকল্পিতভাবে দেশীয় অস্ত্র বাঁশের লাঠি, কাঠের বাটাম, জিআই পাইপ, দা, শাবল, ধারালো হাঁসুয়া, ছিপদা, রামদা, পেট্রোল বোমা ও পেট্রোল সহ সহ নানা প্রকার দেশীয় অস্ত্র শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বে-আইনী জনতাবন্ধে আবদ্ধ হয়ে ওই তারিখে তথাকথিত আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল নামক কোর্টের মাধ্যমে আর্ন্তজাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মুফাচ্ছিরে কোরআন মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় ঘোষনার পরপরই ১ ও ২ নং আসামীর নেতৃত্বে আনন্দ মিছিল ও বুনো উল্লাস সহকারে “একটা দুইটা জামাত ধর সকাল বিকাল নাস্তা কর”, “জামায়াতের আস্তানা এই বাংলায় রাখবোনা”সহ নানা প্রকার ভয়ংকর শ্লোগান দিয়ে আমাদের বাড়ির সামনে আসে। আসামীরা তাদের হাতে থাকা শাবল দিয়ে বাড়ীর নিচ তলার বড় ভাই তারিক মোঃ সাইফুল ইসলামের মালিকানাধীন “মেসার্স তাওহীদ অটো” নামক মোটর সাইকেল পার্টস ও খুচরা যন্ত্রাংশের দোকানের সামনে সার্টার ও তালা ভাংচুর করে। আসামীরা ছাড়াও অজ্ঞাত আসামীগণ দোকানের ভিতরে প্রবেশ করে সমস্ত মালামাল লুটপাট করে। তারা ক্যাশ বাকস থেকে ৮৫ হাজার টাকা চুরি করে নেই। একপর্যায়ে পেট্রোল ঢেলে গ্যাস লাইট দিয়ে দোকানে আগুন লাগিয়ে দেই।
তারা পবিত্র কোরআন শরীফেও আগুন ধরিয়ে দেয়। (যা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির চেষ্টা করে)। দোকানে থাকা টায়ার ও টিউব ব্যাটারীতে আগুন লাগায় আগুনের ভয়াবহ লেলিহান শিখায় দোকানের কাঠের র্যাক, শো-কেস সহ সমস্ত জিনিস পত্রাদি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আগুনের কারনে বিল্ডিংয়ের ছাদের ঢালাই পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থ হয়, এবং ছাদের রড পর্যন্ত গলে বাঁকা হয়ে যায়। লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় প্রায় ৩৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন বাদী।
বাদী আরো উল্লেখ করেন, নিচের আগুনের লেলিহান শিখা ভবনটির দ্বিতীয় তলায় পৌছে গেলে সেখানে অবস্থানরত আমার মা, শতবর্ষী দাদী, দুই বছরের শিশু ভাতিজী, আমার স্ত্রী ও বোনসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা ভীত হয়ে প্রাণ বাঁচাতে আকুতি করতে থাকে। আসামীরা আমাদের পরিবার বর্গকে হত্যার উদ্দেশ্যে দ্বিতীয় তলায় প্রবেশ পথের লোহর কেচি গেট রামদা ও দেশীয় অস্ত্র দ্বারা কোপাতে থাকে। এঘটনায় দ্বিতীয় তলায় অবস্থানরত নারী, শিশু পরিবারের সদস্যবৃন্দ মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। পরবর্তীতে আসামীগণ ভয়ভীতিমূলক বিভিন্ন শ্লোগান দিয়ে বাড়ির সামনে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে চলে যায়।
মামলার বাদি তাওফিকুল ইসলাম বলেন, আমার প্রাণ নাশের হুমকি থাকায় এতোদিন মামলা দায়ের করতে পারিনি। মামলাটি আদালত খুশি হয়ে সরাসরি নথিভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। আশা করি আমরা আদালতে ন্যায় বিচার পাবো।
মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী মারুফ আহমেদ বিজন বলেন, আমরা এর আগেও এই মামলাটি দায়ের করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু পরিবেশ আনুকুলে না থাকায় মামলাটি দায়ের করা সম্ভব হয়নি। এখন পরিবেশ সৃস্টি হওয়ায় এই আলোচিত মামলাটি করা হয়েছে। আদালত সন্তুষ্ট হয়ে মামলাটি সরাসরি এফআইআরের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা আশা করছি আদালতে আমরা ন্যায় বিচার পাবো।
এদিকে তৎকালীন জেলা জামায়াতের আমীর আলহাজ্ব ছমির উদ্দিন বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের সন্ত্রাসী বাহিনী আমার সন্তানকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আমার বাড়ি ঘরে আগুন জালিয়ে দিয়েছে। এখন সময় এসেছে তাদের বিচারের মুখোমুখি করার।