১৯৯৬ থেকে ২০২২। মধ্যে চলে গেছে ২৭ বছর। এই ২৭ বছর বিভিন্ন বিভাগের চিঠি চালাচালি আর দুবার গেজেট প্রকাশেই মেহেরপুরের স্থলবন্দর কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রয়েছে। ১৯৯৬ সালে মেহেরপুরের বুড়িপোতা এবং ২০২২ এ মুজিবনগর স্থলবন্দর হিসেবে গেজেট প্রকাশিত হয়।
মুজিবনগর স্থলবন্দরের গেজেট প্রকাশ হলেও অবকাঠামো নির্মাণ, জমি অধিগ্রহণ কোনটিই বাস্তবে রুপ পায়নি। ওপারে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয় জেলার চাপড়া থানাধীন হৃদয়পুরেও স্থলবন্ধর বাস্তবায়নে তেমন কোন অগ্রগতি নেই বলে জানা গেছে।
মেহেরপুরের মুজিবনগরের ঐতিহাসিক স্বাধীনতা সড়কে মুজিবনগর স্থলবন্দর নির্মাণের গেজেট প্রকাশ করেছে এনবিআর। তার সময়ও ১০ মাস পেরিয়ে যাচ্ছে। এর আগে মুজিবনগর বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন মোড় থেকে ভারতের শুণ্য রেখা পর্যন্ত ৫০৪ মিটার সড়ক নির্মান সম্পন্ন হয়েছে। যে সড়কের নামকরণ করা হয়েছে ‘স্বাধীনতা সড়ক’। এছাড়া স্থলবন্দর বাস্তবায়নের যে অবকাঠামো, জমি অধিগ্রহণ তার কোনটিই এখন পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি।
স্বাধীনতা সূতিকাগার ঐতিহাসিক মুজিবনগরে বিভিন্ন সময়ে পরিদর্শনে আসেন সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব, রাজনৈতিক শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। এসেছেন ভারতীয় হাইকমিশনের রাজশাহী অঞ্চলের দূতাবাস প্রধানও। প্রতিবারই সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী ও উর্ধতন কর্মকর্তারা স্থলবন্দর বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়ে যান।
সম্প্রতি জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ও মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেন, অচিরেই স্থল বন্দরের সকল কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন। এনিয়ে নতুন করে স্থলবন্দর আলোচনায় আসে।
জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২৯ মার্চ মেহেরপুর স্থলবন্দর বাস্তবায়ন আন্দোলন ফোরামের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা কমিটির সদস্য এম এ এস ইমনের নেতৃত্বে মেহেরপুর শহরে চার কিলোমিটার দীর্ঘ মানববন্ধন করা হয়।
পরে ১২ এপ্রিল ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করা হয়। এছাড়াও স্থলবন্দর বাস্তবায়নের দাবিতে বিভিন্ন সময় আন্দোলন কর্মসূচী করতে দেখা গেছে।
জানা গেছে, ১৯৯৬ সালের এপ্রিলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে মেহেরপুরের বুড়িপোতায় স্থলবন্দর স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে তা প্রজ্ঞাপন আকারে ২৮ জুলাই গেজেট প্রকাশ করা হয়।
এরপর ২০০১ সালে তৎকালীন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মেহেরপুরের বুড়িপোতায় স্থলবন্দর স্থাপনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে ওই বছরের ১০ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে একটি পত্র পাঠান। এরপর এনবিআর ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে একাধিক চিঠি চালাচালি হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের মুজিবনগর কমপ্লেক্সে এসে স্থলবন্দর নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। পরের বছর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মফিদুল ইসলাম মুজিবনগর ও বুড়িপোতা সীমান্ত এলাকা ঘুরে যান। তিনি এলাকা পরিদর্শন ও স্থলবন্দর স্থাপনে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ সম্পন্ন করে স্থলবন্দর স্থাপনের পক্ষে একটি প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দেন। প্রতিবেদনটি প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির (নিকার) বৈঠকে অনুমোদন পায়।
২০২১ সালের মার্চে স্থলবন্দর হিসেবে যাতায়াতের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সীমান্তের ৫০০ মিটার সড়ক নির্মাণ করে এলজিইডি। যার নামকরণ করা স্বাধীনতা সড়ক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সালের ২৭ মার্চ স্বাধীনতা সড়কটি ঢাকা থেকে জুম মিটিংয়ের মাধ্যমে উদ্ধোধন করেন। এর পর ২০২২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি জাতাীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে মুজিবনগর স্থলবন্দর নামে গেজেট প্রকাশ করে। এর পরে আর কোন অগ্রগতী দেখা যায়নি। ভ’মি অধিগ্রহণের জন্য কয়েকটি জমি পরিদর্শন করা হয়েছে। ইমিগ্রেশন চেক পোস্ট ভবনের সম্ভাব্য জমি পরিদর্শন করা হয়েছে। কিন্তু তা বাস্তবে রুপ দেয়নি।
স্থাণীয় কৃষক শরিফুল ইসলাম জানান, দুবছর ধরে শুনছি চেকপোস্ট হবে। কিন্তু হচ্ছে না। চেকপোস্টটা হলে ভারতের হৃদয়পুরে আত্মীয়স্বজন আছে তাদেরকে দেখতে যেতে পারতাম। অসুখ বিসুখ হলে দ্রুত কলকাতায় যেতে পারতাম।
মুজিবনগর প্রেস ক্লাবের সভাপতি মুন্সি ওমর ফারুক বলেন, মুজিবনগর স্থল বন্দরকে ঘিরে এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে চলেছে। তাই দ্রুত এর বাস্তবায়ন দাবি করছি।
মেহেরপুর শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রসুল বলেন, স্থলবন্দরকে ঘিরে অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছে মেহেরপুরবাসী। অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি দুই দেশের মানুষের মেলবন্ধনও তৈরি হবে। কিন্তু প্রায় একবছর আগে গেজেট প্রকাশ হলেও দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন এখনো দেখা যাচ্ছে না। সরকারের কাছে দাবী দ্রুত স্থলবন্দর বাস্তবায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
মেহেরপুর স্থলবন্দর বাস্তবায়ন আন্দোলন ফোরামের মুখপাত্র ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা কমিটির সদস্য এম এ এস ইমন বলেন, স্থলবন্দরের অগ্রগতী গেজেট প্রকাশেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। স্থলবন্দর মেহেরপুরবাসীর দীর্ঘদিনের আকাঙ্খা। আমরা দীর্ঘদিন ধরে স্থলবন্দর বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন করে আসছি। মেহেরপুরের সকল শ্রেণী পেশার মানুষ আমাদের সেই আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষনা করেছেন। কিন্তু মেহেরপুরের কিছু শীর্ষ নেতা স্থলবন্দর নিয়ে আগ্রহ না দেখানোর কারণে এটা সেই সময়ে হয়েছিলো না। পরবর্তিতে ২০১১ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিবনগরে এসে স্থলবন্দর বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেন। এর পরে চলতি বছরে স্থলবন্দর নিয়ে গেজেট প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু অগ্রগতি নেই। এটার জন্য আমাদের আবারও আন্দোলনে নামতে হবে।
মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান বলেন, গেজেট প্রকাশের পর অফিসিয়ালি কোন অগ্রগতি হচ্ছে কিনা সেটা আমার জানা নেই। তবে যতটুকু জানি মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয়ভাবে কাজ চলছে। প্রশাসনিক ভাবে আমাদের কাছে কোন তথ্য আসলে জানতে পারবো।
তবে এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেনকে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
মুজিবনগর বৈদ্যনাথতলা স্থলবন্দর : এ স্থলবন্দরের রুট হলো স্বাধীনতা সড়ক (মেহেরপুর-মুজিবনগর-চাপড়া-কৃষ্ণনগর সড়ক) সড়কপথ। এ বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি করা যাবে, সেগুলো হলো- মাছ, সুতা, গুঁড়া দুধ, চিনি ও আলু (HS Code ০৭০১.৯০.১৯ ও ০৭০১.৯০.২৯) ছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রজ্ঞাপন এস.আর.ও নং ১৪/ডি/কাস/৭২, তারিখ : ২৯-০৪-৭২ এর টেবিলের পার্ট-ঠও এর অধীনে সুনির্দিষ্টকৃত ওজনের মালামাল এবং প্যাসেঞ্জার ব্যাগেজ (Passengers baggages)।