ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, আলমডাঙ্গা উপজেলা শাখার গণ-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার বিকেল ৩ টার দিকে আলমডাঙ্গা পুরাতন বাসস্ট্যান্ড (স্বাধীনতা স্তম্ভ ৭১) মোড়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আলমডাঙ্গা উপজেলা শাখার সভাপতি মাওঃ আকরাম হোসাইন সাইরাফী এর সভাপতিত্বে বিশাল গণ-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওঃ জহুরুল ইসলাম আজিজী।
গণসমাবেশে প্রধান অতিথি তার বক্তবে বলেন, পীর সাহেব চরমোনাই ৯ দফা ঘোষণা বাস্তবায়নে তারা জনমত গড়ে তুলবেন। তাদের এজেন্ডার ভিতরে রয়েছে বিগত সরকারের সকল মন্ত্রী-এমপি এবং নেতাকর্মীদের সম্পদের হিসাব নিতে হবে। সকল সম্পদ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে হবে। দুর্নীতিগ্রস্থ যে সকল নেতাকর্মীরা রয়েছে তাদের নির্বাচন করার বৈধতা বাতিল করতে হবে। আগামী নির্বাচনে সংখানুপাতিক (পি.আর) পদ্ধততে নির্বাচন দিতে হবে। কেননা পি.আর পদ্ধতি ছাড়া জনগণের রায়ের সঠিক মূল্যায়ন করা সম্ভব হয় না।তিনি আরও বলেন- দেশ দ্বিতীয়বারের মতো স্বৈরাচার মুক্ত হলেও এখনো কিছু মানুষ স্বৈরাচারী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। স্বৈরাচার শাসকের সময় যেরকমভাবে বিভিন্ন হাটবাজার, খাল-বিল, স্টিমারঘাট, লঞ্চঘাট লুটপাট করে খেত, এখন একদল স্বার্থান্বেষী সেই ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। প্রধান বক্তা অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন ভারত এক স্বৈরাচারকে এদেশের মসনদে বসিয়ে দেশের জনগণের উপর যেরকমভাবে অত্যাচারের স্টিম রোলার চালিয়েছিল জনগণ দেরিতে হলেও সেটা প্রতিহত করেছে। এক্ষেত্রে ভারত চরমভাবে হতাশ হয়েছে। হতাশা থেকে প্রতিশোধ স্বরুপ ভারত আমাদের উপর পানি আগ্রাসন চালিয়েছে। কিন্তু দেশের সর্বস্তরের জনতা যেভাবে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মরত প্রত্যেক সদস্য, বাংলাদেশ পুলিশ সদস্য তাদের একদিনের আয় এবং অনেকে বন্যার্তদের সহযোগিতায় গাড়ি ভাড়া ফ্রি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের স্টাফদের এক দিনের আয় দান করেছেন। তেমনিভাবে দেশের মানবিক সংগঠনগুলো নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে মানবতার পাশে দাঁড়িয়েছেন। জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ মানবতার সাহায্যের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন এবং ভারতের পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। আমি এই জনতাকে সাধুবাদ জানাই। তবে লক্ষণীয় বিষয় হলো জনতার ঐক্যবদ্ধ হওয়াতে ভারতকে আরো হতাশায় নিমজ্জিত হতে দেখা যাচ্ছে।”
জেলা শ্রমিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মাওঃ সাইফুল ইসলামের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তৃতা করেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, আলমডাঙ্গা উপজেলা শাখার সভাপতি মাওলানা আকরাম হোসাইন সাইরাফী, সিনিয়র সহ সভাপতি আমিনুল হক, সেক্রেটারী ডা. ওয়ালিদ হোসেন জোয়ার্দার, সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক হোসেন, সদস্য মীর শফিকুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খাসকররা ইউনিয়নের সভাপতি মাওঃ আব্বাস উদ্দিন, আইলহাস ইউনিয়নের সেক্রেটারী মাও. জাহিদ হাসান, শাখার উপদেষ্টা মাওঃ আব্দুস সুবহান, নাগদাহ ইউনিয়নের সেক্রেটারী আল মামুন রতন, জেহালা ইউনিয়নের সহ-সভাপতি মুফতি সাজ্জাদুর রহমান, পৌর সেক্রেটারী তানভীরুল হক জোসেফ। সমাবেশ শেষে দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন ইসলামী আন্দোলন উপজেলা সদস্য মুফতি সিরাজুল ইসলাম।
সমাবেশে উপস্থিত বক্তারা বলেন, একাত্তরে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও সঠিক নেতৃত্বের অভাবে দেশ যেরকমভাবে দুর্নীতি থেকে মুক্ত হতে পারে নাই। ঠিক বর্তমানেও ২৪-এ এসেও যদি আমরা নেতা নির্বাচনে ভুল করি তাহলে ৭১ পরবর্তী সময়ের যেরকমভাবে ভুলে মাসুল দিয়েছে আমরা এবারও আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম সেই ভুলের মাশুল দিতে হবে। আমরা একই ভুল বারবার করব না। এবার দেশপ্রেমিক জনতাকে সাথে নিয়ে দেশকে নিজেরা গুছিয়ে নেব ইনশাআল্লাহ্।
অন্যান্য বক্তারা স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ড সমালোচনা করেন। শেখ হাসিনা ভারতে বসে ষড়যন্ত্র করছেন। তার শাসনামলে দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। আর সেগুলো উদ্ধার করে টাকা পাচারকারী ও দুর্নীতির সাথে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়। তারা বলেন, অবিলম্বে তার দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে। ৫ আগস্টে যে সমস্ত পুলিশ সদস্য নিরীহ ছাত্র-জনতার ওপরে গুলি করেছিল তাদেরও শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানান বক্তারা। এরপর সংক্ষিপ্ত দোয়ার মাধ্যমে গণ-সমাবেশের কর্মসূচি শেষ হয়।