গাংনী উপজেলা এলজিইডি প্রকৗশলী ফয়সাল আহমেদের সাথে থাকা শহিদুল ইসলামকে নিয়ে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা সমালোচনা। বিভিন্ন ঠিকাদারের কাছ থেকে প্রকৌশলী ফয়সাল আহমেদের নামে ঘুষ গ্রহণ করার অভিযোগ উঠেছে শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে। আবার কোন কোন ঠিকাদারকে ত্রুটিপুর্ণ কাজের অজুহাত সেই সাথে সঠিক সময়ে বিল পাইয়ে দেয়ার কথা বলে শহিদুল ইসলাম উৎকোচ নিয়ে থাকেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রকৌশলীর আস্থাভাজন শহিদুল ইসলামের সাথে বাক বিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। বিষয়টি মামলা পর্যন্ত গড়ায়। শহিদুল ইসলাম প্রকল্পের চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ পেয়ে সরকারি কর্মচারি দাবী করে মামলা করায় আলোচিত হয়েছেন সর্বমহলে। তবে উপজেলা প্রকৌশলী বলেছেন, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সঠিক নয়।
সুত্র জানায়, শহিদুল ইসলাম এলজিইডি অফিসের শিক্ষা প্রকল্প গভমেন্ট প্রাইমারি স্কুল (জিপিএস) জুনিয়র সুপারভিশন ইঞ্জিনিয়ার পদে ও পিইডিপি-৪ এর (অস্থায়ী ভিত্তিতে) চাকরিরত ছিলেন। তার বাড়ি গাংনী উপজেলার আড়পাড়া গ্রামে। তার চাকরীর মেয়াদ শেষ হবার পরও তিনি নিয়মিত অফিসে আসেন ও প্রকৌশলী ফয়সাল আহমেদের সাথে বিভিন্ন প্রকল্পের তদারকি করেন। সেই সাথে নানা অজুহাতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও সাপ্লাইয়ারের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেন। এর যথার্থ প্রমানও মিলেছে। সম্প্রতি গাংনীর মটমুড়া ইউনিয়ন ভ’মি অফিসের ভবন নির্মাণকারি মেসার্স মিঠু এন্টার প্রাইজের সত্বাধীকারি দোলোয়ার হোসেন মিঠুর কাছ থেকে বিল পাশ করিয়ে দেয়ার কথা কয়েক দফায় ঘুষ গ্রহন করেছেন। কখনো হাতে হাতে আবার কখনো অন্য মাধ্যমে এ টাকা পরিশোধ করা হয়। গত ১১ ডিসেম্বর অতিরিক্ত অর্থ দাবী করেন প্রকৌশলী ফয়সাল আহমেদ এবং ওই অর্থ শহিদুল ইসলামের নিকট প্রদান করতে বলেন। এক পর্যায়ে ঠিকাদার দেলোয়ার হোসেন মিঠু ও শহিদুল ইসলামের সাথে বাকবিতন্ডা ঘটনা ঘটে।
এ ব্যাপারে দেলোয়ার হোসেন মিঠু তার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রকৌশলী ফয়সাল আহমেদ ও তার সাথে থাকা শহিদুল ইসলামের ঘুষ ও উৎকোচ বানিজ্যের ফিরিস্তি তুলে ধরেন। এদিকে নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে ফয়সাল আহমেদের পক্ষ হয়ে শহিদুল ইসলাম নিজেকে সরকারি কর্মকর্তা পরিচয়ে গাংনী থানায় দেলোয়ার হোসেন মিঠুর বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। বর্তমানে মিঠু ওই মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন।
অপরদিকে উপজেলা প্রকৌশলীর পক্ষ নিয়ে গাংনীর ঠিকাদার অ্যাসোসিয়েশনের কয়েকজন সদস্য ঠিকাদার দেলোয়ার হোসেন মিঠুর বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে উপজেলা প্রেকৌশলী ফয়সাল আহমেদকে একজন সৎ কর্মকর্তা হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়েছে। নিজেদের স্বার্থ হাসিল ও প্রকৌশলীর আঙ্গুলী নির্দেশে অ্যাসোসিয়েসনের সদস্য হওয়ার পরও ঠিকাদাররা দেলোয়ার হোসেন মিঠুর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনের ডাক দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ঠিকাদার জানান, শহিদুল ইসলাম প্রকৌশলীর নামে দ্বৈত নিতিতে ঘুষ গ্রহন করেন। ঠিকাদারের কাছে বিভিন্ন অজুহাতে টাকা নেয়া ছাড়াও কাজ সমাপ্ত হবার পর টাকা না দিলে ওই নির্মান কাজ বুঝে নেয়া হয়না। তাছাড়াও ঠিকাদারের কাছে মালামাল সরবাহকারিদের কাছ থেকেও টাকা নিয়ে থাকেন এই শহিদুল ইসলাম। টাকা না দিলে মালামালের বিভিন্ন ত্রুটি ধরে মালামাল বাতিল করেন। বড় লোকসানের ভয়ে মালামাল সরবরাহকারিরা বাধ্য হয়ে টাকা প্রদান করেন। কয়েকজন মালামাল সরবরাহকারী এমনি তথ্য জানিয়েছেন। শহিদুল ইসলাম গাংনীর মানুষ হওয়ায় এ অফিসের সব অফিসারের কাছে জনপ্রিয় ও আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। যে কারনে তিনি চলেন বহাল তবিয়তে।
শহিদুল ইসলাম উপজেলা প্রকৌশলীর আস্থাভাজন হওয়ায় বিভিন্ন কাজ পরিদর্শন করেন । বিভিন্ন ঠিকাদারকে বিল পাইয়ে দেয়া ছাড়াও বিভিন্ন কাজের অসংগতি উল্লেখ করে প্রকৌশলীকে ম্যানেজ করার কথা বলে টাকা গ্রহন করেন। অপর একটি সুত্র জানায়, শহিদুল ইসলাম নিজেকে ঠিকাদারদের কাছে সরকারি কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীর কাছের মানুষ বলে পরিচয় দেন। ঠিাকাদারী কাজে পান থেকে চুন খসলেই তা প্রকৌশলীকে জানানো হবে বলে হুমকী দিয়ে টাকা নিয়ে নিজ পকেট ভর্তি করেন। তা নাহলে চাকরি ছাড়াই একজন মানুষ কিভাবে সেবা প্রদান করেন এ প্রশ্ন এখন সকলের।
ঠিকাদার দেলোয়ার হোসেন মিঠু জানান, গাংনী উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) গোলাপ আলী শেখ বদলি হলে বর্তমান প্রকৌশলী ফয়সাল আহমেদ তার স্থলাভিষিক্ত হন। মটমুড়া ভুমি অফিসের ভবন নির্মাণের কাজটি পান। প্রায় ৬৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নিয়মানুযায়ি ভবন নির্মাণ করেন। ১০ অক্টোব ২০২১ ইং তারিখে শেষ হয় ভবন নির্মান। প্রকৌশলী ফয়সাল আহমেদ যোগদানের পর তাকে ৩%, সহকারী আলাউদ্দিনকে ২%, ও সার্ভেয়ার আক্তারুজ্জামানকে ১% টাকা দিতে হয়েছে। ৮ মাস আগে ভবন নির্মাণ কাজ শেষ হলেও তা বুঝে না নিয়ে দফায় দফায় টাকা আদায়ের কৌশল আটেন শহিদুল ইসলাম।
গত ১১ ডিসেম্বর সকালে শহিদুল ইসলামকে সাথে নিয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মটমুড়া ইউনিয়নের বাওট বাজারে নবনির্মিত ভূমি অফিসের ভবন পরিদর্শনে যান। এ সময় ঠিকাদার মিঠু উপজেলা প্রকৌশলী ফয়সাল আহমদকে ভবন হস্তান্তর নিতে অনুরোধ করেন। শহিদুল ইসলাম ১০ হাজার টাকা উপজেলা প্রকৌশলীকে দেয়ার পরামর্শ দেন। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি একপর্যায়ে শহিদুল ইসলামের সাথে হাতাহাতির ঘটনাটি ঘটে। এতে রাগান্বিত প্রকৌশলী ফয়সাল আহমেদ বিল পরিশোধ করা হবে না বলেও জানান।
মামলার এজাহারে নিজেকে উপ-সহকারী প্রকৌশলী সরকারী কর্মকর্তা দাবি করেছেন কেন? তাছাড়া প্রকল্প সংশ্লিষ্ট না হয়েও ভূমি অফিস নির্মাণ কাজ পরিদর্শনে কেন গিয়েছিলেন ? এমন প্রশ্নের জবাবে শহিদুল ইসলাম বলেন,আমি এলজিইডি উপজেলা প্রকৗশলী স্যারকে আমাকে নিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।
উপজেলা প্রকৌশলী ফয়সাল আহমেদের কাছে শহিদুল ইসলাম সরকারী কর্মকর্তা পরিচয় দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে, তিনি বলেন তিনি সরকারি প্রকল্পে কাজ করেন তাই তাকে সরকারী কর্মকর্তা বলা যায়। তবে শহিদুল ইসলামকে নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে প্রকৌশলী ফয়সাল আহমেদ অন্য কারোর কথায় কান না দিতে অনুরোধ জানান।