মেহেরপুরে ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ৯৩টির মধ্যে ৭৩টি জমা পড়েছে। বাকি ২০ টি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সামরিক ব্যক্তিদের। গত ৩ সেপ্টেম্বর রাত ১২ টা পর্যন্ত এসকল অস্ত্র জমা পড়ে। এর মধ্যে সদর থানায় ৩৯টি, গাংনী থানায় ২৯টি এবং মুজিবনগর থানায় ৫টি অস্ত্র জমা পড়েছে।
মেহেরপুর জেলায় বর্তমানে বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও অস্ত্রের লাইসেন্স রয়েছে মোট ৩০২ টি। ২০০৯ সালের জুন থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত নতুন করে বৈধ অস্ত্রধারী হয়েছেন ১১৪ জন। আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে নীতিমালা পালন না করেই রাজনৈতিক বিবেচনায় দেয়া হয়েছে লাইসেন্সগুলো। জানা গেছে নতুন বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পেয়েছেন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগের সাথে যুক্ত ব্যক্তিরা, বিভিন্ন সময়ে মেহেরপুর জেলায় কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যাংক কর্মকর্তারা। এক্ষেত্রে বাদ যাননি বিএনপির নেতা ও জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার।
মেহেরপুর জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ২০০৯ সালের পর মেহেরপুর বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও অস্ত্রের লাইসেন্স রয়েছে ৩০২ টি। গত ১৫ বছরে লাইসেন্স পেয়েছেন ১১৪টি। এর মধ্যে এক নলা বন্দুক ১৪ টি, দুই নলা বন্দুক ২৭ টি, শর্টগান ২৬ টি, এনপিবি পিস্তল ১৫, পিস্তল ৩টি, ১২ বোর রাইফেল ১ টি ও ২২ বোর রাইফেল ২ টিসহ আরো কয়েক প্রকৃতির আগ্নেয়াস্ত্র। এছাড়াও কয়েকজন লাইসেন্স নিলেও অস্ত্র কিনেননি বলে জানা গেছে।
২০০৯ সাল থেকে মেহেরপুর জেলায় আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পেয়েছিলেন মেহেরপুর সদর উপজেলার স্টেডিয়াম পাড়ার মেজর মোঃ আসাদুজ্জামান একটি এনপিবি পিস্তল , চাদপুর গ্রামের মোঃ আশরাফুল ইসলাম একটি ২ নলা বন্দুক, তেরঘরিয়া গ্রামের মোঃ আব্দুল আউয়াল ভদ্র একটি ২ নলা বন্দুক, নৌবাহিনীতে কর্মরত কাঁসারী পাড়ার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার ফয়সাল মেহেদী একটি ১২ বোরের বন্দুক, সদ্য সাবেক কাথুলি ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান রানা একটি ২ নলা বন্দুক ও একটি শটগান, রাজাপুর গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস একটি ২ নলা বন্দুক, মেহেরপুর ১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জয়নাল আবেদীনের ছেলে তানভীর আহমেদ খান রানা একটি এনপিবি পিস্তল, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা গ্রামের গনি উল আজম একটি পিস্তল, মেহেরপুরের সদ্য সাবেক পৌর মেয়র মাহফুজুর রহমান রিটন একটি শর্টগান ও একটি এনপিবি পিস্তল , ঝাউবাড়িয়া গ্রামের বায়েজিদ বিশ্বাস একটি ২ নলা বন্দুক, সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন একটি শর্টগান ও একটি এনপিবি পিস্তল, গোপালপুর গ্রামের সামসুজ্জোহা ওরফে মোস্তফা কামাল একটি ২ নলা বন্দুক, আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ আব্দুস শুকুর ইমন একটি শটগান, পিরোজপুর গ্রামের হাবিবুর রহমান হাবিব একটি শটগান ও একটি এনপিবি পিস্তল, ইসলামী ব্যাংক মেহেরপুর শাখার ব্যবস্থাপক অনুকূলে একটি শটগান, রাইপুরের আবু হেনা মো: মামুনুর রশিদ একটি ২ নলা বন্দুক, সুবিদপুর গ্রামের শাহানা খানম একটি ১ নলা বন্দুক , পিরোজপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রীর ভগ্নিপতি আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাস একটি পিস্তল, খোকসা গ্রামের মোঃ মোস্তাক আহমেদ একটি শটগান , ফতেপুর গ্রামের মো: ফজলুল হক একটি ১ নলা বন্দুক, আশরাফপুর গ্রামের মোঃ জহিরুল ইসলাম ফিরোজ একটি ১ নলা বন্দুক, ফতেপুর গ্রামের মোঃ কবির উদ্দিন একটি শটগান , কালীগাংনী গ্রামের মাহিরুল ইসলাম একটি ১ নলা বন্দুক, আমঝুপি গ্রামের মোঃ জিয়াউর রহমান মুকুল একটি এনপিবি পিস্তল, পূবালী ব্যাংকের মেহেরপুর শাখার ব্যবস্থাপকের একটি শটগান, আমদহ গ্রামের মোঃ বকুল হোসেন একটি শটগান , মেহেরপুর পৌর ২ নম্বর ওয়ার্ডের মো: সাবেদুদ্দোজা মতি একটি ১ নলা বন্দুক , শুভরাজপুর গ্রামের মো:মন্জুর রহমান বিশ্বাস একটি ১ নলা বন্দুক, উজলপুর গ্রামের বাবুল হাচান একটি শট গান, কুতুবপুর গ্রামের মোঃ ফয়সাল হোসেন একটি শট গান, কালাচাঁদপুর গ্রামের রঞ্জু আহমেদ একটি শটগান, ফতেপুর গ্রামের মোঃ মাহবুবুর রহমান একটি শট গান, সুবিদপুর গ্রামের মোঃ মাহফিজুর রহমান একটি অত্যাধুনিক ২২ বোরের রাইফেল, উজলপুর গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান মোল্লা একটি শটগান, নতুন পোস্ট অফিস পাড়ার মো: শাহাজাহান কবির একটি শর্ট গান, উজলপুর গ্রামের হাফিজুর রহমান একটি শটগান, শোলমারী গ্রামের মোহাম্মদ সেলিম রেজা (সদ্য সাবেক কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান) একটি শটগান, জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার ইমরুল কায়েস একটি ২ নলা বন্দুক , টুঙ্গী গ্রামের মো: জাহিদুল হক একটি ২ নলা বন্দুকের লাইসেন্স সহ মালিক বনেছেন। সদ্যসাবেক মেহেরপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুহা: আব্দুস সালাম একটি পিস্তলের লাইসেন্স পেলেও তিনি অস্ত্র কেনেননি।
গাংনী উপজেলার, বাঁশবাড়িয়া গ্রামের মমতাজ বেগম একটি ১ নলা বন্দুক, গাংনি পৌর শহরের আনারুল ইসলাম একটি শটগান, শিশির পাড়ার মোঃ মনিরুজ্জামান একটি ১ নলা বন্দুক , মানিকদিয়া গ্রামের মোঃ একরামুল হক একটি ১ নলা বন্দুক, বামুন্দির তরিকুল ইসলাম একটি ২ নলা বন্দুক, করমদি গ্রামের আবু সাঈদ মো: দেলোয়ার হোসেন একটি ১ নলা বন্দুক, বগুড়া সেনানিবাসে কর্মরত সেনা কর্মকর্তা ষোলটাকা গ্রামের ক্যাপ্টেন মোঃ জয়নুল আবেদীন একটি ২ নলা বন্দুক, রাধাগোবিন্দপুর গ্রামের মোঃ সোহরাব হোসেন একটি ২ নলা বন্দুক, বাদিয়াপাড়া গ্রামের মোঃ সেলিম মাহমুদ একটি ২বনলা বন্দুক, রামদেবপুর গ্রামের মোঃ মতিয়ার রহমান একটি ২ নলা বন্দুক, নওয়াপাড়া গ্রামের মোহাম্মদ জিয়ারুল ইসলাম মুকুল ২ নলা বন্দুক, নওদাপাড়া গ্রামের মোঃ আব্দুল মতিন একটি ২ নলা বন্দুক, তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামের মোঃ শরিফুল ইসলাম একটি ২ নলা বন্দুক, বিজিবিতে সার্জেন্ট পদে কর্মরত নিশিপুর গ্রামের মোঃ আখতারুজ্জামান একটি শটগান, কামারখালী গ্রামের মোঃ রোকনুজ্জামান একটি ১ নলা বন্দুক, কাস্টদহ গ্রামের মোঃ জহুরুল ইসলাম একটি ২ নলা বন্দুক, হেমায়েতপুরের মোঃ নবিছদ্দিন একটি ১ নলা বন্দুক, গাংনী উত্তর পাড়ার মো: আশরাফুল ইসলাম একটি শটগান ও একটি এনপিবি পিস্তল, নিশিপুর গ্রামের মোছাঃ জেনিস ফারজানা তানিয়া একটি ১ নলা বন্দুক, সাহারবাটী গ্রামের মোঃ খালেদুজ্জামান একটি ২ নালা বন্দুক, চ্যাংগাড়া গ্রামের মোঃ বাহাউদ্দিন একটি ১ নলা বন্দুক, ছাতিয়ান গ্রামের মো: আমিরুল ইসলাম একটি শটগান, গাড়াবাড়িয়া গ্রামের মো: মনজুরুল ইসলাম একটি ২ নলা বন্দুক, মেহেরপুর ২ সংসদীয় আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাহিদুজ্জামান খোকনের একটি শর্টগান ও একটি পিস্তল, হেমায়েতপুর গ্রামের মোঃ মিজানুর রহমান একটি ১ নলা বন্দুক, চৌগাছার মোঃ আখতারুজ্জামান একটি ২ নলা বন্দুক, গাংনী ভিটা পাড়ার মোহাঃ রাশেদুল ইসলাম একটি ১ নলা বন্দুক, করমদি গ্রামের মো: মোশারফ হোসেন একটি শটগান, হিন্দা গ্রামের আব্দুর রহমান একটি ২ নালা বন্দুক, ও বিএনপি নেতা মোঃ আমজাদ হোসেন একটি এনপিবি পিস্তলের লাইসেন্স সহ বৈধ অস্ত্রধারী হয়েছেন।
মুজিবনগর উপজেলার, নাজিরাকোনা গ্রামের এম.এম সালাউদ্দিন একটি ১ নলা বন্দুক, কোমরপুর গ্রামের মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান একটি ২ নলা বন্দুক , এনএসআই কর্মকর্তা শিবপুর গ্রামের জিএম আলীমুদ্দিন একটি পিস্তল। সোনাপুর গ্রামের মোঃ হাফিজুর রহমান একটি ২ নলা বন্দুক, সদ্য সাবেক মুজিবনগর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আমাম হোসেন মিলু একটি পিস্তল, গৌরীনগর গ্রামের মোঃ রুমনুজ্জামান একটি ২ নলা বন্দুকের লাইসেন্স অস্ত্রধারী হয়েছে।
সরকারি কর্মকর্তা, ব্যাংক কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরাও মেহেরপুর জেলা থেকে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পেয়েছেন এবং অস্ত্র কিনেছেন। মধ্যে রয়েছেন, ব্যবস্থাপক রূপালী ব্যাংক মেহেরপুর শাখার অনুকূলে ১টি শর্টগান, নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কমান্ডার ফয়সাল মেহেদী একটি ১২ বোর বন্দুক, বগুড়ার ১৯ মিডি রেজিমেন্ট আর্টিলারির ক্যাপ্টেন মোঃ জয়নাল আবেদীন একটি ২ নলা বন্দুক, মেহেরপুরের সাবেক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বৈজয়ন্ত বিশ্বাস একটি এনপিবি পিস্তল, সাবেক পুলিশ সুপার মোঃ মোফাজ্জল হোসেন একটি শটগান, এনএসআই কর্মকর্তা জিএম আলীমুদ্দিন একটি পিস্তল, বিজিবি সদস্য সার্জেন্ট মোঃ আখতারুজ্জামান একটি শটগান, ইসলামী ব্যাংক ব্যবস্থাপক মেহেরপুরের অনুকূলে একটি শটগান, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ এনপিবি পিস্তল, ব্যবস্থাপক পূবালী ব্যাংক মেহেরপুরে অনুকূলে একটি শটগান, সাবেক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ ছানাউল্লাহ একটি এনপিবি পিস্তল, মেহেরপুরের সাবেক চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মহিদুজ্জামান একটি এনপিবি পিস্তল, গাংনী থানার সাবেক ওসি হরেন্দ্রনাথ সরকার একটি এনটিভি পিস্তল, ঢাকা সেনানিবাস এর সার্জেন্ট এবিএম আলাউদ্দিন একটি শটগান, স্থানীয় সরকার বিভাগ মেহেরপুরের সাবেক উপ-পরিচালক মৃধা মোঃ আলাউদ্দিন একটি ২২ বোর রাইফেল, পূবালী ব্যাংক লিমিটেড গাংনী শাখার ব্যবস্থাপক অনুকূলে একটি শটগান। রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মোঃ পারভেজ হক একটি শটগানের লাইসেন্স পেলেও তিনি অস্ত্র কিনেন নি।
উল্লেখ্য, গত ২৫ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিগত ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি হতে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য প্রদত্ত সকল আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স (কর্মরত সামরিক-অসামরিক কর্মকর্তা ব্যতীত) স্থগিত করে। স্থগিতকৃত লাইসেন্সভুক্ত আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ সমূহ আগামী ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে লাইসেন্স গ্রহীতার সংশ্লিষ্ট থানায় অথবা বর্তমান বসবাসের ঠিকানার নিকটস্থ থানায় লাইসেন্স গ্রহীতাকে নিজে বা মনোনীত প্রতিনিধির মাধ্যমে জমা প্রদান করার নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী লাইসেন্সধারীরা কেই নিজে কেই প্রতিনিধিদের মাধ্যমে স্ব স্ব থানায় জমা দেন।