ফরহাদ হোসেন পরিবার নিয়ে কানাডায় পালিয়েছেন !
নেতাকর্মীদের বিপদের মুখে রেখে সদ্য সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ও মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরহাদ হোসেন পরিবার নিয়ে কানাডায় পালিয়ে গেছেন বলে গুঞ্জন উঠেছে। এমনকি পালিয়ে যাওয়ার আগে কারোর সাথে যোগাযোগ করেননি বলে বিভিন্ন জন অভিযোগ করেছেন। তবে অভিযোগকারীরা এখনই নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।
একটি বিশ^স্ত সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনা পদত্যাগের কিছুক্ষণ আগে বা পরে সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে কানাডায় পালিয়ে গেছেন। তার একদিন আগে তার স্ত্রী মোনালিসা খাতুন ও দুই সন্তানকে পাঠিয়ে দিয়েছেন বলে সূত্রটি জানায়। তবে এ বিষয়টি পরিস্কার হওয়ার জন্য মেহেরপুর প্রতিদিন থেকে তাঁর ফোনে ফোন করা হলে ফোনে পাওয়া যায়নি। পরে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের ফোন করা হলেও তাদেরও পাওয়া যায়নি। এদিকে, গত সোমবার এই মন্ত্রীর মেহেরপুরস্থ বাসভবনে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ জনতা। একই সঙ্গে তার ভাই এর মার্কেটসহ জেলা আওয়ামী লীগের অফিস ও নেতাকর্মীদের বাসভভন ও অফিস ভাংচুর করে বিক্ষুব্ধরা।
জানা গেছে, ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উড়ে এসে জুড়ে বসার মত আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে একতরফা নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের কোন পদে না থাকলেও এমপি হওয়ার সুবাদে ২০১৫ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ বাগিয়ে নেন। এর পর থেকে শুরু হয় ভিন্ন মতের নেতাদের নির্যাতন। নানাভাবে নিজ দলীয় নেতাদের মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টি করে তাদের দুরে সরিয়ে রাখেন। কমিটিতে পদ দেন হাইব্রিড নেতাদের । যাদের মধ্যে এমন অনেক নেতা ছিলেন যারা কখনো আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেননি। ত্যাগী নেতারা কেন্দ্রে নানা ভাবে অভিযোগ দিয়েও কেন্দ্র কোন কর্ণপাত করেনি। পরবর্তিতে ২০১৮ সালে তাকে মনোনয়ন না দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের বহু নেতা সমাবেশ করে। তারপরও কেন্দ্র তাকেই মনোনয়ন দেন। বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় নির্বাচিত হন ফরহাদ হোসেন। এবার এমপির পাশাপাশি তার মুকটে লাগে প্রতিমন্ত্রীর পালক । করা হয় জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী। মাত্র তিন বছরের নেতা থেকে হয়ে যান প্রতিমন্ত্রী। প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে যেন আর মাটিতেই পা দেন না।
পরবর্তি ২০২৪ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও মনোনয়ন পান ফরহাদ হোসেন। নিজ দলের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সাথে প্রতিদ্বন্দীতা করে নির্বাচত হন। নির্বাচিত হওয়ার পর মুকুটে যুক্ত হয় আরও বড় পালক। করা হয় জনপ্রশাসন মন্ত্রী। মন্ত্রী হওয়ার পর প্রতিদ্বন্দী প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের ট্রাক ভোটে করার অপরাধে নানা ভাবে হামলা মামলায় জর্জরিত করেন।
একজন বেসরকারি কলেজের শিক্ষক থেকে গত ১০ বছরে এমপি ও মন্ত্রী হওয়ার পর হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তার ভাই বোন, আত্মীয় স্বজনরাও কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। অথচ ১০ বছর আগে তার ভাই-স্বজনদের সংসার চলতো না বলে লোকমুখে শুনা যায়। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে তার বিরুদ্ধে মেহেরপুর প্রতিদিনে নানা অভিযোগ ও তার সহায় সম্পত্তির হিসাবের তথ্য আসতে শুরু করেছে। মেহেরপুর প্রতিদিন ধারাবাহিকভাবে সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রীর দুর্নীতি, অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।