মেহেরপুরে শ্মশান ঘাটে ঠাই হওয়া দম্পতি পেলেন নতুন পাকা ঘর

ঘর ভাড়া দিতে না পারায় সিরাজুল ও নার্গিস খাতুন নামের এক দম্পতিকে ঘর থেকে বের করে দেন বাড়ি মালিক। পরে উপায় না পেয়ে কাজলা নদির ধারে শ্মশান ঘাটে সরকারি জমিতে পাট খড়ি দিয়ে খুবড়ি ঘর বানিয়ে থাকতে শুরু করেন এই দম্পতি। সেখানেই এক চোখ নষ্ট অসহায় সিরাজুল ইসলাম চা বিক্রি করে কোন রকমে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছিল। ঘটনাটি মেহেরপুর সদর উপজেলার যুগিন্দা গ্রামের। অসহায় ওই দম্পতি একটি ঘর পাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত আবেদন করেন।

আজ মঙ্গলবার (৯ জুলাই) সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেই শ্মশান ঘাটে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পান। এবং তাৎক্ষনিক শ্মশান ঘাট থেকে নিজ পকেট থেকে গাড়ি ভাড়া দিয়ে তাদের নিয়ে এসে রঘুনাথপুর আশ্রয়নের ১৪৬ নম্বর একটি সেমি পাকা ঘর প্রদান করেন তাদের।

জানা গেছে, সিরাজুল ও নার্গিস দম্পতি মেহেরপুর সদর উপজেলার যুগিন্দা গ্রামের বাসিন্দা। বারাবরই তাদের কোন জমিজায়গা নেই। গাংনী উপজেলার একটি ঘরে মাসিক ২ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে তারা বসবাস করতেন। তাদের এক মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। তারা দুজনেই বিয়ে করে শশুর বাড়িতে বসবাস করেন। অসহায় দম্পতি রাস্তার ধারে ভ্রাম্যমান চা বিক্রিতা হিসেবে কাজ করে সামান্য কিছু টাকা আয় করেন। যা দিয়ে তাদের সংসার চালানোই দায়। এমতাবস্তায় ঘর ভাড়ার টাকা দিতে না পারায় ঘর মালিক তাদের বের করে দেন।

এ বিষয়ে সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমার এক চোখ নষ্ট। আরেক চোখে হালকা দেখতে পাই। টুকটাক চা বেচে কোন রকম সংসার চলে। ঘর ভাড়া দেবো কোথায় থেকে। আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুক্রিয়া ইউএনও স্যার আমাকে একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এখন আর রোদ বৃষ্টি আমাদের গায়ে পড়েব না। আমরা পাকা ঘরে থাকবো। সিরাজুলের স্ত্রী নার্গিস খাতুন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, সরকারি ঘরটা না পেলে হয়তো আমরা পৃথিবীতে আর বেচে থাকতাম না। কারন এভাবে মাঠে মাঠে রাত কাটিয়ে জীবন চলতে পারে না।

এ ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাজী নাজিব হাসান বলেন, অসহায় ওই দম্পতির বিষয়টি আমাদের নজরে এলে, আমরা ঘটনাস্থলে যায় এবং সেখানে গিয়ে তাদের সাথে সাথে নিয়ে এসে রঘুনাথপুর আশ্রয়নের একটি ঘর তাদের উপহার দেয়া হয়। ইউএনও আরও বলেন, বর্তমান সরকার ভূমিহীনদের বিনামূল্যে জমিসহ ঘর দিচ্ছে। ইতিমধ্যে মেহেরপুরে অনেক অসহায় পরিবার ঘর পেয়েছে। তবে জেলার সব তথ্য হয়তো আমাদের কাছে আসে না। কোন না কোন মাধ্যমে এ ধরনের তথ্য আমাদের কাছে আসলে আমরা অবশ্যই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখি।




কোটচাঁদপুরের রমজান আলী শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত

শিক্ষককের রোষানলে পড়ে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, রমজান আলী (১৩)।

এমন অভিযোগ তুলেছেন তাঁর পিতা আলী হোসেন। এ ঘটনাটি ঘটেছে কোটচাঁদপুরের কাগমারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বিষয়টি তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। জানা যায়, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর কাগমারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৮৯ সালে। বিদ্যালয়ের পাশেই বাড়ি আলী হোসেনের।

ওনার দুই ছেলে। নুরনবী ও রমজান আলী। রমজান আলীর বয়স এখন ১৩ বছর। এ সময় তাঁর ৬ ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার কথা থাকলেও গন্ডি পেরুতে পারেনি প্রাইমারীর। এখন সে ভবঘুরের মত করে ঘুরে বেড়ান। আর পিতার কাজের সহায়তা করে সময় পার করেন। এ ব্যাপারে রমজান আলীর পিতা আলী হোসেন বলেন, আমার বাড়ি বিদ্যালয়ের সামনেই। বিদ্যালয়টি যে সময় প্রতিষ্ঠিত সে সময় আমরা অনেক সহায়তা করেছি। সেই বিদ্যালয়ে এখন আমার ছেলে পড়াতে পারছিনা। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুর রহিমের রোষানলে পড়ে আমার ছেলের জীবন আজ শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তিনি বলেন, আমার ছেলে একদিন বিদ্যালয়ে একটু দুষ্টুমি করেছিল। এরপর ওই শিক্ষক বিদ্যালয় থেকে বের করে দেন। সে থেকে বিদ্যালয় যাওয়া বন্ধ আমার ছেলে রমজানের। এরপরও ২/৩ বার আমার স্ত্রী ও আমি ছেলেকে বিদ্যালয়ে ভর্তি নেওয়ার কথা বলেছি। তারপরও তিনি ভর্তি নেননি।

তিনি আরো বলেন, যে সময় তাঁর বিদ্যালয়ে পড়ার কথা। এখন সে বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পেরে সারাদিন ভব ঘুরের মত করে ঘুরে বেড়ান আর কোন সময় আমার কাছের সহায়তা করেন। ওই শিক্ষকের রোষানলে পড়ে আজ আমার ছেলে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আমি শিক্ষকের অপসারণ দাবী করছি। একই অভিযোগ করেছেন বিদ্যালয়ের পাশের আরেক অভিভাবক ওয়াজ উদ্দিন। সে রিয়াজ হোসেনের পিতা। তিনি বলেন,আমার ছেলেকেও ওই শিক্ষক বিদ্যালয়ে ভর্তি নেননি। আমি অনেকবার চেষ্টা করেও পারেনি ভর্তি করাতে। তিনি প্রশ্ন ছুড়ে দেন গণমাধ্যম কর্মীদের উপর।বলেন,আপনারাই বলেন বাড়ির সামনে বিদ্যালয় থাকতে কেউ ছেলে মাদ্রাসায় ছেলে মেয়ে কে ভর্তি করান। আমাকে সেটাই করতে হয়েছে। আর তা করতে হয়েছে প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিমের কারনে।

তিনি আরো বলেন, তিনি স্থানীয় শিক্ষক হওয়ায় বিদ্যালয়ে দাপট দেখান। ওনার খেয়াল খুশি মত করে বিদ্যালয় চালান। তিনি ওই শিক্ষকের অপসারণ করে বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তবে এ সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন,বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুর রহিম। তিনি বলেন, এ সব মিথ্যা কথা। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে তারা ষড়যন্ত্র করছেন বলেও দাবি করেছেন ওই শিক্ষক। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাকি সালাম বলেন,অনেকেই বিদ্যালয় ছেড়ে মাদ্রায় চলে যাচ্ছেন। আবার অনেকে ফিরে আসছেন। এর জন্য কাকে দোষারোপ করবো। এরপরও বিষয়টি নিয়ে




কোটচাঁদপুরে সাপের কামড়ে কৃষকের মৃত্যু

কোটচাঁপুরে সাপের কামড়ে আব্দুর রাজ্জাক (৫০) নামের এক কৃষের মৃত্যু হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার ১২ টার সময় স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা শুরুর আগেই মারা যান তিনি। সে তালিনা গ্রামের  মৃত আব্দুস সামাদ বিশ্বাসের ছেলে।
এলাঙ্গী ইউনিয়নের ইউপি সদস্য কামাল হোসেন বলেন,তখন বেলা ১১ টা বাজে। আব্দুর রাজ্জাক তালিনা গ্রামের মাঠে পেয়ারা গাছে ঔষধ স্প্রে করছিলেন। এ সময় সে সাপের কামড়ের শিকার হন। খবর পেয়ে তাঁর স্বজনরা আব্দুর রাজ্জাক উদ্ধার করে কোটচাঁদপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক রাফসান রহমান প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ভর্তি করান।
এরপর স্বজনরা তাকে নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপরের ওয়াডে নিয়ে যান। এর কিছুক্ষনের মধ্যে সে মারা যান। আব্দুর রাজ্জাক কে জাত সাপে কামড় দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ওই ইউপি সদস্য।  আব্দুর রাজ্জাক কোটচাঁদপুরের তালনা গ্রামের মৃত আব্দুস সামাদের ছেলে।
এ ব্যাপারে চিকিৎসক রাফসান রহমান বলেন,সাপে কাটা রোগীটির অবস্থা ভাল ছিল না। তাকে দেখে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উপরে ওয়াডে পাঠানো হয়।এর কিছুক্ষন পরই তিনি মারা যান বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
বিষয়টি নিয়ে কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুর রশিদ বলেন,ওনার স্বজনা জানিয়েছেন সাপে কামড় দিয়েছেন আব্দুর রাজ্জাক কে। সে মোতাবেক দেখে চিকিৎসা দেয়া হয়। তবে ঔষধ প্রয়োগের আগেই তিনি মারা যান।
তিনি বলেন, সাপের কামড়ে কোন রোগী এতটা খারাপ হয় না। তিনি সাপের কামড়ানোর পর ভয়ে স্ট্রোক করেছেন বলে ধারনা করা হচ্ছে।



মেহেরপুরে ২ দোকানে ৫৪ হাজার টাকা জরিমানা আদায়

মেয়াদ উত্তীর্ণ মালামাল বিক্রি ও সংরক্ষণ করার অপরাধে ২ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মালিকের নিকট থেকে ৫৪ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার (৯ জুলাই) দুপুরে জেলা প্রশাসন ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের জেলা শাখা যৌথভাবে মেহেরপুর শহরে বড়বাজার এবং হোটেল বাজারে এই ভ্রাম্যমান অভিযান চালান।

মেহেরপুর জেলা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক সজল আহমেদের নেতৃত্বে শহরের বড় বাজার এলাকার সন্তোষ বীজ ও খাদ্য ভান্ডারে অভিযান চালান। মেয়াদ উত্তীর্ণ মালামাল বিক্রিও সংরক্ষণ করার অপরাধে সন্তোষ বীজ ও খাদ্য ভান্ডারের মালিক রিপন কুমার সাহার নিকট থেকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৩৭ ও ৫১ ধারায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এর আগে শহরের হোটেল বাজারের রিতা স্টোরের মালিক শাহিনের নিকট থেকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৩৮ ও ৪৫ ধারায় ৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

মেহেরপুর জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবির হোসেন ও মোঃ সাজেদুল ইসলাম অভিযান পরিচালনা করেন।

এসময় উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর তরিকুল ইসলাম ও পুলিশের একটি টিম।




ঝিনাইদহে মিন্টু’র মুক্তির দাবীতে মানববন্ধন

ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর মুক্তির দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে শহরের পোস্ট অফিস মোড়ে এ কর্মসূচীর আয়োজন করে জেলার সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। এতে ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে বাংলাদেশ গণশিল্পী সংস্থা, স্বাধীনতা সাংস্কৃতিক পরিষদ, ঝংকার শিল্পী গোষ্ঠী, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক ফোরাম, কেসি কলেজ থিয়েটার, সচেতন নারী সমাজ, ঝংকার শিল্পী গোষ্ঠী, নবগঙ্গা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, জাগরণ সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর সদস্যসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ অংশ নেয়।

ঘন্টাব্যাপী চলা এই কর্মসূচীতে স্বাধীনতা সাংস্কৃতিক পরিষদের আহ্বায়ক দীপ্তি রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক শান্ত জোয়ার্দ্দার, হাসিবুর রহমান শিপন, পৌর স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহানাজ পারভীন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাংগঠনিক সম্পাদক অমিয় মজুমদার অপু, জাতীয় মহিলা সংস্থার সমস্য নাজমা সাজেদসহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন।
সেসময় বক্তারা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে দাবী করে অবিলম্বে তার মুক্তির দাবী জানান।

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যা ঘটনার দায়েরকৃত অপহরণ মামলায় গত ১১ জুন সাইদুল করিম মিন্টুকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। পরে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।




ঝিনাইদহে বিএম সভা অনুষ্ঠিত

ঝিনাইদহের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আশার ব্রাঞ্চ ম্যানেজারদের নিয়ে এসএমএপি প্রকল্পের আওতায় টিএসএস পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য দিন ব্যাপী বিএম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার জেলা শহরের এইড কমপ্লেক্সের কনফারেন্স রুমে আশার ডিস্ট্রিক ম্যানেজার হাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে বিএম সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আশার ডেপুটি ডিরেক্টর (কৃষি) মোঃ খুরশীদ আলম। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডপুটি ডিরেক্টর (কৃষি উইং) আবু সাঈদ, সদরের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার আবু সামা প্রমুখ। অনুষ্ঠানে প্রশিক্ষক ছিলেন ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ষষ্টি চন্দ্র রায় ও জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ সুব্রত কুমার।

প্রশিক্ষণে বাংলাদেশের কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির সম্ভাবনা ও ব্যাবহার গাভী পালনে বাসস্থান খাদ্য ব্যাবস্থাপনা, পোল্টি খামার ব্যাবস্থাপনা, মাশরুম চাষ, বায়োগ্যাশ, ভার্মি কম্পোষ্ট, কৃষি বিষয়ক ওয়েবসাইট সহ ৩১ জন ব্রাঞ্চ ম্যানেজরাবৃন্দ কৃষকদের কি ভাবে সমস্যার সমাধান দিবে সেই বিষয়ে আলোচনা হয়।




নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তায় করণীয়

মানুষের ৪টি মৌলিক চাহিদার মধ্যে অন্যতম হলো খাদ্য। বিশেষ করে মানব দেহের বৃদ্ধি গঠন ও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে খাদ্য অপরিহার্য।

তবে চলমান শতাব্দীতে সবচেয়ে বড়ো চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মানুষের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তা ছাড়া সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা ও দেহকে কর্মক্ষম, চলনসই রাখার জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবারের বিকল্প নেই। তাই সকলের উচিত খাদ্য তালিকায় আমিষ, শর্করা, স্নেহ, ভিটামিন, খনিজ লবণ ও পানি এই সবগুলো উপাদান নিশ্চিত করা।

যাকে বলা হয় সুষম খাবার। তাই শুধু পেট ভরার জন্য খাওয়া এই ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে নিরাপদ ও পুষ্টিমান সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে হবে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে জলবায়ু পরিবর্তন,দেশে দেশে যুদ্ধ, সংঘাত, মরুময়তা,লবণাক্ততায় বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপদনে সংকটকাল অতিবাহিত করছে। তাছাড়া করোনা অতিমারির ভয়াবহতা, চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতে মূল্যস্ফীতি, জ্বালানি সংকটে বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্ব দুঃসহ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। বৈশ্বিক খাদ্য সংকটে বিশ্বের অনেক দেশ বিপর্যস্ত। উৎপাদন পরিস্থিতি বিবেচনায় এবং চলমান সংকটের কারণে ২০২৩ সালে সারা বিশ্বে খাদ্য সংকট বা দুর্ভিক্ষ অত্যাসন্ন বলেছেন সংস্থা। বাস্তবে সুদান, সোমালিয়াসহ বিশ্বের বেশ কয়েটি দেশে খাদ্যের জন্য মানুষের আহাজারি, নারী শিশুর মৃত্যু প্রত্যক্ষ করেছে বিশ্ব।

অবশ্য খাদ্য সংকটের বৈশ্বিক অবস্থার সঙ্গে বাংলাদেশে মিল নেই। জনগণের মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে খাদ্য অন্যতম এবং এটা মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু এ অধিকার ভোগের ক্ষেত্রে নানা মুখীসংকট বিরাজ করছে। এরমধ্যেও গত কয়েক দশকে পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে চাষযোগ্য জমি সংরক্ষণ, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, কৃত্রিম বনায়ন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি কর্মকা মাধ্যমে বিশ্বের সব দেশ ব্যস্ত খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। এমন এক প্রেক্ষাপটে সারা বিশ্বে পালিত হয় বিশ্ব খাদ্য দিবস। বিগত সময়ে করোনাভাইরাস মহামারিতে কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থা ব্যাহত করেছে এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা সৃষ্টি করেছে। ফলে জীবিকা ও আয় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা ও
বৈষম্যও বেড়েছে। এই প্রেক্ষাপটে উন্নত উৎপাদন, উন্নত পুষ্টি, উন্নত পরিবেশ ও উন্নত জীবনযাত্রার জন্য আরো দক্ষ, অন্তর্ভুক্তিমুলক, স্থিতিশীল ও টেকসই কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থায় রূপান্তরের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো, যাতে কেউ পিছিয়ে না থাকে। আমাদের কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থাও এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন সবার জন্য পর্যাপ্ত সাশ্রয়ী, পুষ্টিকর ও নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।

বর্তমান অবস্থার প্রতিপ্রেক্ষিতে ও আন্তর্জাতিক খাদ্যবাজারে অস্থিরতা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় সংকটকালে খাদ্যনিরাপত্তা অর্জনের জন্য কৃষিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, অভ্যন্তরীণ খাদ্য উৎপাদন, সংরক্ষণ ও সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং জনসচেতনতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। আমাদের খাদ্য আমাদেরই উৎপাদন করতে হবে। দেশের মাটি, পানি, প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার এবং নিজস্ব প্রচেষ্টার মাধ্যমেই তা করতে হবে। পরিবর্তিত জলবায়ুতে খাপ খাইয়ে উৎপাদন নিশ্চিত করতে হবে।

একটি দেশের স্থিতিশীলতার জন্য খাদ্যমূল্য নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে। আবার সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রতিটি মানুষের প্রয়োজন বিশুদ্ধ ও পুষ্টিকর খাদ্য। আর এ বিশুদ্ধ খাদ্যই যদি অখাদ্যে রূপান্তরিত হয়, তা গ্রহণের পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। এ খাদ্য যদি আমাদের জীবন-জীবিকার অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে আমরা যে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির শিকার হব তা কিন্তু যুদ্ধ ও মহামারীর ভয়াবহতার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। কাজেই এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজে বের করা এখন সময়ের দাবি।

প্রসঙ্গত: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গত দেড় বছর ধরে বিশ্ব সর্বোচ্চ খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। এমনি অবস্থায় জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক প্রদত্ত খাদ্য সংকটের ইঙ্গিত তাৎপর্যপূর্ণ। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থাসহ সবাই একযোগে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন, ফিলিস্তিনে ইসরাইলে আগ্রাসনের কারণে হতে যাওয়া এ ভয়াবহ খাদ্য সংকটের ফলে শুধু ইউক্রেন,ফিলিস্তিনই নয়; হাজার হাজার মাইল দূরবর্তী দেশগুলোর মানুষেরও মৃত্যুর আশঙ্কা করছে এসব আন্তর্জাকিত সংস্থাসমূহ। গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সংশোধিত বার্ষিক পূর্বাভাসে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পাশাপাশি নানাবিধ কারণে বর্তমান বৈশ্বিক অর্থব্যবস্থা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। ফলে সংস্থাটি ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য কমার ইঙ্গিত দিয়েছে,যা বর্তমানেও অব্যাহত রয়েছে। উপরন্তু জ্বালানি, খাদ্য ও সারের আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়া বিশ্বজুড়ে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশগুলোর ঋণ
সংকট বাড়াচ্ছে।

অন্যদিকে, জানুয়ারিতে জার্মানির বার্লিনে অনুষ্ঠিত ১৫তম কৃষিমন্ত্রীদের সম্মেলনে বিদ্যমান খাদ্য সংকট পরিস্থিতিতে সংকটকালীন খাদ্যব্যবস্থা, জলবায়ু সহনশীল খাদ্য, জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং টেকসই বৈশ্বিক খাদ্যব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। তাতে আরো বলা হয়, অদূর ভবিষ্যতে একটি অত্যন্ত দুর্যোগময় সময় এগিয়ে আসার এবং বিশ্বে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। ‘ঘূর্ণিঝড় রিমাল পরবর্তী খাদ্য নিরাপত্তা : আশু করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বাপা’র পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে খুলনা সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলায় ৬১ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ওই বাঁধগুলি মেরামত করতে হবে।

জনগণকে সম্পৃক্ত করে জনগণের মালিকানায় বাঁধ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করতে হবে। প্রয়োজনে নীতি ও কৌশল পরিবর্তন করতে হবে। তারা বলেন, ‘সুন্দরবন বুক পেতে যদি আমাদের রক্ষা না করতো তাহলে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি আরো বেশি হতো। সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করছে; সুন্দরবনকে রক্ষা করবে কে? সুন্দরবনের উপর যদি মানুষ অত্যাচার না করে তাহলে সুন্দরবন নিজ থেকেই এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠবে বলে বিশ্বাস করি।, ঘূর্ণিঝড় প্রভাবে উপকূলে সুপেয় পানির সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। আগামীতে আমন ধান চাষ, পাট ও শাক সবজি চাষে ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে।

বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থার জন্য নতুন মাত্রায় সংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে দেশের উপকূলীয় জেলা উপজেলা সমুহে পানিতে অধিক মাত্রায় লবণাক্ততা,আবার কোথাও কোথাও মরুময়তা। এমনি অবস্থায় বাংলাদেশে সকলের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত চ্যালিঞ্জিং। অবশ্য সকলের জন্য খাদ্য নিশ্চিত করতে সরকার ইতোমধ্যে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এমনি অবস্থায় সরকারের পক্ষে সম্ভাব্য খাদ্যসংকট মোকাবিলা করে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সমুদ্র উপকূলবর্তী মিঠাপানির জলাশয় থেকে দ্রুত লবণাক্ত পানি অপসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, সদ্য ঘূর্ণিঝড় রিমালে দেশের সমুদ্র উপকূলে আঘাত হানার পর থেকে প্রায় ৫০ ঘণ্টা অবস্থান করেছে। এতে বাঁধ উপচে লোকালয়ে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করেছে। তাছাড়া সমুদ্রের জোয়ারের পানিতে লবণ বয়ে এনে তা উপকূলের পুকুরে,জলাশয়ের পানিকে লবণাক্ত করে তোলে। যা খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবং খাদ্য সংকটের বৈশ্বিক সমস্যার সঙ্গে বাংলাদেশে এই
পরিস্থিতিকে আরো সংকটে ফেলছে।

দেশের সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলের পানিতে ,মাটিতে অধিক মাত্রায় লবণাক্ততা এবং দেশের উত্তরাঞ্চেলের ১৬ জেলায় বিরাজমান মরুময়তা। কারণ উপকূলের মাটি পানিতে লবণাক্ততায় খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হয় মারাত্মক ভাবে। একই ভাবে দেশের উত্তরাঞ্চেরের ১৬ জেলায় গ্রীষ্মে অতিমাত্রায় মরুময়তায় খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হয় সমভাবে। অবশ্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একাধিক স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ফোরামে বক্তব্য কালে সম্ভাব্য এ বৈশ্বিক মন্দা বা দুর্যোগ মোকাবিলায় দেশবাসীকে প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছিলেন খাদ্য চাহিদা পূরণ ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অনাবাদি সব জমিকে আবাদের আওতায় আপনা,উৎপাদনস বৃদ্ধি,উৎপানে বৈচিত্র্য আনায়নের। এমনি অবস্থায় , দেশের খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় ১৭টি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহায়ক হবে এমনি প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট মহলের।

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষিমন্ত্রণালয় তার আওতাধীন সংস্থাসমূহের মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন খরচ কমানো, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, আবাদি জমি বাড়ানো, প্রাকৃতিক দুর্যোগ সহনশীল ফসলের জাত উদ্ভাবন, জলবায়ু পরিবর্তন উপযোগী প্রযুক্তি ও ফসল উদ্ভাবন, আন্তফসল, মিশ্র ফসল, রিলেফসল, রেটুন ফসল চাষ করা, সেচের জমি বৃদ্ধি করা, উফশী ও হাইব্রিড ফসল চাষ করা, শস্য বহুমুখীকরণ করা, জৈব প্রযুক্তির মাধ্যমে দ্রুত ও প্রচুর চারা উৎপাদন করা, রোগবালাই দমন করা। প্রতি ইঞ্চি জমি চাষ করা। ধানক্ষেতে মাছ চাষ, পুকুরে মাছ-মুরগি-হাঁসের সমন্বিত চাষ করা, রোগ ও পোকা দমনে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা, সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া, পশুপাখির জন্য জৈব নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ভর্তুকি বাড়ানো, সংরক্ষণাগার বাড়ানো, কৃষি উপকরণ সরবরাহ, শস্যবিমা চালু করা ও পতিত জলাশয়ে মাছ চাষের বহুমুখী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রত্যাশা সরকারি উদ্যোগে গৃহীত এসব কর্মসূচি পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন এবং খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, রিনাপদ খাদ্যেও নিশ্চয়তা করণীয় সম্পর্কে ব্যাপক হারে জনসচেতসতা সৃষ্টি,খাদ্যের অপচয় রোধে সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে যথাযথ ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। তাহলেই সম্ভব সকালের জন্য খাদ্যের নিশ্চয়তা এবং নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তার বিধান করা।

# পিআইডি ফিচার

লেখিকা : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত।




মাদক ও তামাক নির্মূল করতে প্রতিরোধে জোর দিতে হবে

মাদকের আগ্রাসনে তরুণ সমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সুস্থ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে মাদক নির্মূলের বিকল্প নেই। কিশোর-তরুণদেরকে মাদক ও তামাকের নেশা থেকে দুরে রাখতে প্রতিরোধ কর্মসূচি জোরালো করতে হবে। মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার বিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস-২০২৪ উপলক্ষ্যে ০৯ জুলাই ২০২৪, সকালে বারডেম হাসপাতাল মিলনায়তনে মানস- মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা, এমপি। তিনি বলেন, কোন বাবা-মা চান না তার সন্তান বিপথগামী হোক। পরিবারে একজন মাদকাসক্ত থাকলে পুরো পরিবার ধ্বংস হয়ে যায়। সমাজ তাদেরকে ভিন্ন চোখে দেখে। একটা সময় ছিলো যখন পথশিশু, ছিন্নমুল মানুষদের মধ্যে মাদকাসক্তি বেশি ছিলো। কিন্তু, বর্তমানে আমাদের শিক্ষিত শ্রেণীর মধ্যে মাদকাসক্তি সমস্যা বাড়ছে। মাদকের নেতিবাচক প্রভাব পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সবখানেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এজন্য প্রত্যেক স্কুল, কলেজ, বিশ^বিদ্যালয়ে মাদক বিরোধী প্রচারণা বাড়াতে হবে, প্রতিরোধে জোর দিতে হবে। দেশে মাদকের চিকিৎসায় উন্নতমানের রিহ্যাব সেন্টারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এটাও লক্ষণীয় যে, চিকিৎসা নিয়ে অনেকে পূণরায় মাদকে আসক্ত হচ্ছে। তাই নিজেদের পরিবার ও সমাজ থেকে তামাক, মাদক সরিয়ে নিতে পারলে সমস্যা নিরসন সহজতর হবে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এ সকল কাজে সহায়তা করবে।

সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খোন্দকার মেস্তাফিজুর রহমান, এনডিসি, ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল ইউনিট এর প্রিন্সিপাল অধ্যাপক নাজমা হক, এবং ইউনাইটেড নেশনস অফিস অন ড্রাগস এন্ড ক্রাইম (ইউএনওডিসি) এর ন্যাশনাল প্রোগ্রাম কোর্ডিনেটর (ড্রাগস এন্ড এইচআইভি/এইডস) মো: আবু তাহের। মানস এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন ও সভাপতিত্ব করেন এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাংগঠনিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান তালুকদার। ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন মাহি খন্দকার। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ‘মানস’ এর প্রকল্প সমন্বয়কারী উম্মে জান্নাত এবং সভা আয়োজনে সহায়তা করে ইব্রাহীম মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল ইউনিট।

প্রবন্ধে অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী বলেন, অনেক ধরনের নেশা আছে। মাদকের নেশা ভয়ঙ্কর। মাদকের ফলাফল কখনোই ভালো হয় না। তামাক ও ধূমপান দিয়ে মাদকাসক্তির শুরু হয়। মাদকাসক্তের মধ্যে ৯৮% ধূমপায়ী। মাদক তিলে তিলে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত করে। হত্যা, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতিসহ বিভিন্ন সামাজিক অপরাধের পেছনে বড় কারণ মাদক। বাংলাদেশ মাদকে সয়লাভ হয়ে গেছে দেশ। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন মাদক দেশে ঢুকছে যা আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ১ কোটি মাদকাসক্ত রয়েছে এবং তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশই কিশোর-তরুণ! এদের ৬০ শতাংশ অপরাধের সঙ্গে জড়িত, যা অত্যন্ত আতঙ্ক ও ভয়ের কারণ। মাদক নির্মূলে মাদকের সহজলভ্যতা রোধ, আইনের যথাযথ প্রয়োগ, সচেতনতা বৃদ্ধি করা, মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্বারোপ, মাদকাসক্তদের প্রতি বন্ধুত্বসূলভ আচরণ প্রদর্শন ও চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তির নিশ্চিত করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি এবং ২০৪০ সালের মধ্যে ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। দেশে মাদক নির্মূলে কঠোর আইন প্রণীত হয়েছে। মাদকাসক্তি একটি মানসিক রোগ তাই ঘৃণা নয়, ভালোবাসা দিয়ে মাদকাসক্তদের সারিয়ে তুলতে হবে এবং মাদক গ্রহণ প্রতিরোধ করতে হবে। মাদক নির্মূলে তামাক অর্থাৎ- ধূমপানে নিয়ন্ত্রণে কাজ জোরালো করতে হবে।

খোন্দকার মেস্তাফিজুর রহমান, এনডিসি বলেন, মাদক আসক্তিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা আমাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব। বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারেও মাদক নিয়ন্ত্রণ যুক্ত রয়েছে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি উল্লেখ করেছেন। বিজিবি, কোস্টগ্রার্ড, পুলিশসহ অনেকগুলো সংস্থার সমন্বয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কাজ করছে। মাদকের বিরুদ্ধে জোরালো অভিযান চলমান থাকবে। কারণ, আমাদের মোট জনসংখ্যার মধ্যে তরুণ-যুবক বেশি, যা ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট’ বলা হয়। এই জনগোষ্ঠির জন্য অর্থ ব্যয় করলে আগামী দিনে সুস্থ মানবসম্পদ গড়ে তোলা সম্ভব হবে। জাতীয় পত্রিকার তথ্য তুলে ধরে তিনি আরো বলেন, জেলখানায় মাদকের ৪০ ভাগ মাদকাসক্ত। দেশে দৈনিক ২০ কোটি টাকার মাদক সেবন হয়। মাদক ব্যবসায় ২০০ এর বেশি গডফাদার রয়েছে। এদের আইনের আওতায় আনা জরুরি। অনুষ্ঠানে মাদক চোরাকারবারীদের ধরতে সহায়তাকারীকে নগদ অর্থ পুরস্কারের ঘোষণা দেন তিনি।

অধ্যাপক নাজমা হক বলেন, সেরা জীব হিসেবে আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। ধূমপান, মাদক দিয়ে আমরা জীবনটা ধ্বংস করে দিচ্ছি। সব দায়িত্ব সমাজ ও রাষ্ট্রের উপর অর্পণ করে দিয়ে বসে থাকলে হবে না বরং নিজের দায়িত্ব পালন করতে হবে। চলচ্চিত্রে নায়কদের ধূমপান দেখে মানুষ উৎসাহিত হয়। এ ধরনের মাদক, তামাকের হাতছানি বন্ধ করতে হবে। তরুণরাই সমাজের সম্ভাবনাময় ও যোগ্য প্রতিনিধি। একজন মা হিসেবে তরুণদেরকে মাদকমুক্ত থাকার আহ্বান জানাতে চাই।

মো: আবু তাহের বলেন, মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্বারোপ করতে হবে। কারণ মানসিক স্বাস্থ্য ভালো না থাকলেই মানুষ মাদকে উৎসাহিত হয়। এখন নারীদের মধ্যেও মাদক ব্যবহার বাড়ছে। বর্তমানে ঢাকা, নারায়নগঞ্জসহ কয়েকটি জেলায় মাদকাসক্তদের মধ্যে এইচআইভি এইডস্ রোগ বাড়ছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক! অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের একটা বড় মাধ্যম মাদক বেচাকেনা। অর্থের প্রলোভনে রাজনৈতিক ছত্রছায়া, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রভাবশালীদের দ্বারা মাদকের বিস্তার ঘটছে। মাদকদ্রব্যের আগ্রাসন প্রতিরোধে সচেতনতা ও চিকিসায় সেবা সহজলভ্য ও মান বাড়ানো এবং এসব খাতে অর্থ বরাদ্দের জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

সভায় সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ, ইব্রাহীম মেডিকেল কলেজ এর শিক্ষকবৃন্দ ও শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।




কুষ্টিয়ায় কবরস্থান থেকে মরদেহ চুরির অভিযোগ

কুষ্টিয়ার মিরপুরে একটি কবরস্থান থেকে তিন মাস আগে দাফন করা এক নারীর মরদেহ চুরির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আজ মঙ্গলবার সকালে উপজেলার আমলা ইউনিয়নের কচুবাড়িয়া গ্রামের কবরস্থানের একটি কবর খোড়া দেখতে পান স্থানীয়রা। সেখানে পাওয়া যায়নি দাফন হওয়া নারীর মরদেহ।

কবরটি ছিল ওই এলাকার গার্মেন্টস ব্যবসায়ী রমজান আলীর মায়ের। তিনি বার্ধক্যজনিত কারণে তিন মাস আগে মারা যান।

রমজান আলী জানান, সকালে মায়ের কবর খোড়া দেখে স্থানীয়রা আমাদের খবর দেয়। গিয়ে দেখি কবর খোড়া এবং ভেতরে মায়ের মরদেহ নেই।’

কবর থেকে মরদেহ চুরিঘটনাকে ন্যাক্কারজনক উল্লেখ করে স্থানীয় ইউপি সদস্য মুন্সি মো. মাসুদ রানা জানান, ‘এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন।’

মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তফা হাবিবুল্লাহ জানান, ‘ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিস্তারিত পরে জানানো যাবে।’




অনন্ত-রাধিকার গায়ে হলুদে তারকাদের বিশেষ লুক

আম্বানিবাড়িতে বিয়ের ঢাক বাজছে বেশ কয়েকদিন ধরেই। আগামী শুক্রবার অনন্ত আম্বানি ও রাধিকা মার্চেন্ট বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন। তাদের বিয়ের সপ্তাহ শুরু হয়েছে সোমবার গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। এদিন সালমান খান, রণবীর সিং, জাহ্নবী কাপুর, সারা আলি খান এবং অনন্যা পান্ডেরা হলদে বেশে সামিল হন হলুদ জশন-এ।

হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অনন্ত-রাধিকার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে সালমান খান হাজির হয়েছিলেন কালো রঙের কুর্তায়। এমন আনন্দের উৎসবে সালমানের ওই পোশাক একটু ম্যাড়ম্যাড়ে দেখাচ্ছিল।

এমনিতে ফ্যাশন সচেতন নন সালমান। তবে আম্বানির বাড়ি পৌঁছে দ্রুত সেই পোশাক ছেড়ে মানানসই হলুদ কুর্তা পরেন ভাইজান।

এদিকে হলুদ কুর্তা ও ঢিলাঢালা পাজামা পরে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে হাজির হন রণবীর সিং। এদিন অবশ্য পাশে ছিলেন না দীপিকা।

বলিউডের সুন্দরী নায়িকারাও এদিন কোনো অংশে কম ছিলেন না। অভিনেত্রী জাহ্নবী কাপুরের পাশাপাশি সারা আলি খান এবং অনন্যা পান্ডেও এদিন হাজির হয়েছিলেন।

সারাকে দেখা যায় একটি লাল রঙের লেহেঙ্গায়। পিচ রঙা স্লিভলেস আনারকলি সালোয়ার এবং সোনালি বর্ডারের সাথে ম্যাচিং দুপট্টায় ঝলমলে ছিলেন অনন্যা।

অন্যান্য বলিউড সেলিব্রিটিদের মধ্যে ছিলেন মানুশি চিল্লার, রাহুল বৈদ্য, দিশা পারমার, ওরহান আওয়াত্রামণি ওরফে ওরি, চলচ্চিত্র নির্মাতা অ্যাটলিও পৌঁছেছিলেন হলুদের অনুষ্ঠানে।

ঐতিহ্যবাহী হিন্দু বৈদিক রীতিনীতি মেনে ১২ জুলাই বিয়ের অনুষ্ঠান হবে অনন্ত-রাধিকার।

সূত্র: ইত্তেফাক