মাদ্রিদ না লন্ডন, শিরোপার গন্তব্য কোথায়?
শেষ হচ্ছে ২৪ দল নিয়ে প্রায় এক মাস ধরে চলতে থাকা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের মহারণ। পুরো আসরেই ছিল টানটান উত্তেজনা, মিশে ছিল নানান তর্কবিতর্ক। আজ রাতে স্পেন-ইংল্যান্ডের ফাইনাল ম্যাচ দিয়ে পর্দা নামবে টুর্নামেন্টের ১৭তম আসরের। এই ম্যাচ শুধু দুটি দেশের শিরোপালড়াই নয়, এই ম্যাচে একাধিক খেলোয়াড়ের মধ্যেও দেখা যাবে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা।
যুদ্ধ হবে হ্যারি কেইন বনাম রদ্রির, জুড বিলিংহ্যাম বনাম লামিন ইয়ামালের। পাশাপাশি লড়াই সাউথগেটের মস্তিকের সঙ্গে লুইস দে লা ফন্তের অভিজ্ঞতার। আজ রাত ১টায় অলিম্পিয়াস্টাডিয়ন বার্লিন স্টেডিয়ামে হবে এমন রোমাঞ্চকর লড়াই।
এই প্রথম বিদেশের মাটিতে ফাইনাল খেলবে ইংল্যান্ড। এছাড়া গেল আসরে প্রথম বারের মতো ইউরোর ফাইনাল খেললেও শিরোপা ছুতে পারেনি তারা। এসব নজিরের সামনে দাঁড়িয়ে এক অবাক বিস্ময় ব্রিটিশদের মধ্যে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২০-এর হতাশা ভুলিয়ে বার্লিন থেকে কাপ নিয়ে ফিরবেন বিলিংহাম, সাকা ও ওয়াকাররা। এছাড়া ১৯৬৬ সালে ফিফা বিশ্বকাপ জয়ের পর এখন পর্যন্ত কোনো শিরোপার স্বাদ পায়নি ইংল্যান্ড। তাই বলা যায়, ইংলিশরা এই ম্যাচে নিজেদের সামর্থের সবটুকু দিয়ে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের দিকেই ছুটবেন। তবে কাজটা মোটেও সহজ হবে না।
কেননা, স্পেনও এই শিরোপার জন্য মরিয়া। প্রায় এক যুগ ধরে শিরোপার দেখা পায়নি স্প্যানিশরা। সবশেষ ২০১২ সালে ইউরো শিরোপা জিতেছিল তারা। এরপর আর সুবিধা করতে পারেনি দলটি। তবে এবার যেন অন্য আত্মবিশ্বাসেই ছুটছে লা রোজারা। সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে, যেমন তাদের শিবিরে রয়েছে তরুণদের জাদু, তেমনি রয়েছে অভিজ্ঞদের সহায়তা। সব মিলিয়ে যেন এবারের শিরোপা নিজেদের ঘরে তোলার পণ করেই জার্মানে পা রেখেছেন লামিন-মোরাতারা। এতে বলাই যায়, ফাইনাল বিশ্ব ফুটবলে ছড়াবে অন্যরকম রোমাঞ্চ। মাঠে কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলবে না।
একনজরে স্পেনের এবারের ইউরো
এবারের আসরে এখনো পর্যন্ত অপরাজিত লা রোজারা। আর এতে ১২ বছর পর ফের ইউরো কাপের ফাইনালে উঠেছে স্পেন। গ্রুপ পর্যায়ে এবার স্পেন শুরু করেছিল লুকা মদ্রিচের ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে। ৩-০ গোলে জিতে এবার ইউরো শুরু করেছিলেন লা ফন্তের শিষ্যরা। এছাড়া গতবারের ইউরো চ্যাম্পিয়ন ইতালির বিরুদ্ধেও স্পেনের জয় ১-০ গোলে। একই ব্যবধানে হারিয়েছে ২০১৬ সালের পর এবারে ইউরো খেলতে আসা আলবেনিয়াকেও।
এই ইউরোতে স্পেন একমাত্র দল, যারা গ্রুপের ম্যাচে দল নিয়ে নানা পরীক্ষা করেছে। বিশ্বকে উপহার দিয়েছে তাদের নতুন তিকিতাকা, যার উদাহরণ প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে জর্জিয়া ম্যাচ। জর্জিয়া এবারের আসরের সবচেয়ে দ্রুত ফুটবল খেললেও স্পেনের কাছে এসে করেছে আত্মসমর্পণ। হেরেছে ৪-১ গোলের ব্যবধানে। পরে এবারের আসরের দুই শিরোপার দাবিদারদেরও উড়িয়েছে তুমুল লড়াই করেই। কোয়ার্টার ফাইনালে স্বাগতিক জার্মানি ও সেমিফাইনালে ফ্রান্সকে হারিয়েছে ২-১ গোলের ব্যবধানে। তাতে দুই আসর পর ফের ফাইনালে উঠেছে স্পেন।
একনজরে ইংল্যান্ডে এবারের ইউরো
শিরোপার নেশায় বুঁদ এখন লন্ডন। তবে আসরের শুরু থেকেই তাদের পারফরম্যান্স ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম ম্যাচে সার্ভিয়ার বিপক্ষে জয় তুলে নেওয়ার পর থেকেই তারা একের পর এক ধাক্কার মুখোমুখি হচ্ছিল। দ্বিতীয় ম্যাচে ডেনমার্কের বিরুদ্ধে হারা ম্যাচ বাঁচিয়ে ড্র। আর স্লোভেনিয়ার বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্র করে আরো লজ্জা নিয়ে মাঠছাড়া। এর নকআউটের দৌড়েও প্রথম ম্যাচে স্লোভাকিয়ার বিরুদ্ধেও কোনো রকমে হার বাঁচিয়েছে ইংরেজরা, জিতেছিল ২-১ গোলে।
১ গোলে পিছিয়ে থাকা অবস্থায় দেশকে জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছেন হ্যারি কেন এবং সেই জুড। কোয়ার্টার ফাইনালে আরো কঠিন লড়াই। প্রতিপক্ষ সুইজারল্যান্ড। ১২০ মিনিট পর্যন্ত ম্যাচের ফল ১-১। এরপর ইংলিশ গোলকিপার জর্ডন পিকফোর্ডের হাতে স্বস্তি। সেমিফাইনালে ডাচদের বিপক্ষেও হামাগুড়ি দিয়েছিলেন গ্যারেথ সাউথগেটের শিষ্যরা। ম্যাচের শুরুতেই গোল হজমের পর সমতায় ফেরে হ্যারি কেনের পেনালটি থেকে। তারপর একবারে শেষ মুহূর্তে সুপার সাব ওলে ওয়াটকিন্সের গোলে টানা দ্বিতীয় বারের মতো ফাইনাল নিশ্চিত করে ইংলিশরা।
ফাইনালে আলাদা নজর থাকবে যাদের ওপর
ইংল্যান্ড-স্পেন দুই দলেই তারকায় ঠাসা। তবে তাদের মধ্য থেকেও সমর্থকদের আলাদা প্রত্যাশা থাকবে তরুণ বেশ কিছু ফুটবলারের ওপর, যাদের মধ্যে রয়েছে স্পেনের লামিন ইয়ামাল, দানি ওলমো। এছাড়া ইংল্যান্ডে রয়েছে জুড বেলিংহাম ও ফিল ফোডেন। এতে করে ফাইনালে এই তরুণ ফুটবলারদের মধ্যেও হবে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা। জুড ও ওলমো দুই জনেই দুই দলের মাঝমাঠের প্রাণ। ফুটবল ম্যাচ জেতার জন্য মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অধিকাংশ আক্রমণ তৈরি হয় মাঝমাঠ থেকে। আবার প্রতিপক্ষের আক্রমণ সেখানেই নিষ্ক্রিয় করে দেওয়ার চেষ্টা করে যে কোনো দল।
তাই বলাই যায়, ফাইনালে বার্লিনে বাড়তি দায়িত্ব থাকবে এই দুই জনের ওপরই। এছাড়া আক্রমণভাগে দুই দলের হয়ে ত্রাস সৃষ্টি করবে লামিন ও ফোডেন। এ দুই তরুণেরই দক্ষতা রয়েছে গোল করে এগিয়ে যাওয়ার। এবারের আসরে এ দুই ফুটবলার রয়েছেন দারুণ ছন্দেও। তাই বলা যায়, এ দুই উঙ্গার পরীক্ষা নিতে পারে দুই দলের গোলরক্ষকদের।
সূত্র: ইত্তেফাক