কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় দিনদিন পদ্মা নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করছে। আকস্মিকভাবে পদ্মা নদীতে ভাঙন শুরু হয়েছে। ভেঙে পড়ছে নদীর তীরবর্তী এলাকা। হুমকিতে নদী সংলগ্ন বসতভিটা ও ফসলি জমি। পদ্মার তীব্র স্রোতে দিনদিন নতুন নতুন এলাকা ভাঙছে।
ফলে ভেড়ামারা উপজেলার রায়টা বেড়িবাঁধ এখন হুমকির মুখে। ভাঙন থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরে ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় ৩ হাজার পরিবারের বাড়িঘর। অপরদিকে, বার মাইল টিকটিকি পাড়ার সামনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে কয়েকশ’ একর ফসলি জমি।
মঙ্গলবার কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনের সংসদ সদস্য কামারুল আরেফিন ভাঙ্গনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
এসময় পানি উন্নয়ন বোর্ড, পশ্চিমাঞ্চল, ফরিদপুর জোনে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. শাহজাহান সিরাজ, কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান, উপসহকারী প্রকেীশলী শ্রী অসীম কুমার ও মসফিকুর রহমান, ভেড়ামারা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হেনা মোস্তফা কামাল মুকুল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমুল ইসলাম ছানাসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
কামারুল আরেফিন বলেন, দ্রুত ভাঙন রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারাও ভাঙন রোধে পদক্ষেপ নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
বাহাদুরপুর ইউনিয়নের রায়টা বেড়িবাঁধের পাশেই রাইটা পাথর ঘাট। ভেড়ামারা থানার একটি অন্যতম সুন্দর্যময় দর্শনীয় স্থান এটি। এখানে রয়েছে পিকনিক স্পট। প্রতিদিন পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই বাঁধের কাছে এসে পানির ধাক্কা লাগছে। পানির স্রোতে ঘুরপাক ও পানির তীব্রতায় রায়টা বেড়িবাঁধ ভাঙতে শুরু করেছ। এই বাঁধ ভেঙে গেলে রায়টা নতুন পাড়া, ফয়জুল্লাপুর এই দুইটি গ্রাম আগে পানিতে ডুবে যাবে। পানিবন্দি হয়ে পড়বে প্রায় ৩ হাজার পরিবারের ঘরবাড়ি।
আষাঢ় মাসে পদ্মায় পানি তুলনামূলক কম হলে ও বন্যার পানি আসা শুরু করেছে। পদ্মায় দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের কারণেই পদ্মায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। যা দেখে স্থানীয় মানুষ হতভম্ব হয়ে পড়েছেন।
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার বার মাইল এলাকায় আবার গতকাল সোমবার (৮ জুলাই) থেকে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরইমধ্যেই নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক ফসলি জমি।
এলাকাবাসীর বলছেন, ভেড়ামারা বার মাইল এলাকায় পদ্মায় বৈধ বালুমহাল না থাকলেও প্রভাবশালীরা অপরিকল্পিতভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন করেছেন। এর ফলে পানির গতিপথ পরিবর্তন হয়ে নদী ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে এসব এলাকার একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, হাট-বাজার ও রাস্তা-ঘাট।
বাহাদুরপুর ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল রানা পবন জানান, প্রতি বছর পদ্মায় পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রায়টা বেড়িবাঁধে পানির আঘাত হানে। মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই এলাকার মানুষ। এবারও তাই হয়েছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে বাহাদুরপুর ইউনিয়নের প্রায় অর্ধেক গ্রাম ডুবে যাবে।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান বলেন, ভাঙনরোধে জরুরিভাবে বালিভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। ভাঙন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে দ্রুতই কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আকাশ কুমার কুন্ডু জানান, এখন যে ভাঙন দেখা দিয়েছে এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমাদের উদ্যোগ রয়েছে দু-একদিনের মধ্যেই ভাঙন এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলা হবে