জ্ঞাত আয় বর্হিভূত ১ কোটি ১০ লাখ ১৫ হাজার ৫৩৬ টাকা সম্পদ অর্জনের প্রাথমিক তথ্য পাওয়ায় গাংনী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজের প্রধান শিক্ষক (অধ্যক্ষ) আফজাল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদক সমন্বিত কুষ্টিয়া কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক নীল কমল পাল বাদি হয়ে গত বুধবার দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় মামলাটি দায়ের করেন।
দুদক সমন্বিত কুষ্টিয়া কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক নীল কমল পাল জানান, প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেন দুদকের অনুসন্ধান দলের কাছে তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের যে বিবরণী দাখিল করেছেন তার সাথে বাস্তব সম্পদ অসামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি যে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তার দুদকের কাছে লুকিয়েছেন। দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদ অর্জন করে প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেন দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। যে কারনে বিচারের লক্ষ্যে মামলাটি দায়ের করেছে দুদক।
দুদকের দায়ের করা মামলার অভিযোগের বিবরণীতে জানা গেছে, আফজাল হোসেন তার নিজের আয়ের টাকা দিয়ে ২০১০ সালে গাংনী পৌর এলাকার বাঁশবাড়ীয়া মৌজায় স্ত্রী সেলিনা আক্তারের নামে ৮.২৫ শতক জমি ক্রয় করেন। জমির দলিল মূল্য দেখানো হয় মাত্র ৪০ হাজার টাকা। ওই জমিতে ২০১২ সালে তিনি নির্মান করেছেন একটি দৃষ্টিনন্দন দ্বিতল ভবন।
আফজাল হোসেন দুদকে যে আয়ের বিবরণী দিয়েছেন তাতে বাড়ি নির্মান ব্যয় দেখানো হয়েছে ২৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা। পরে গণপূর্ত অধিদপ্তরের দুজন প্রতিনিধি আফজাল হোসনকে সাথে নিয়ে প্রকৃত নির্মান ব্যয় নির্ধারণ করেছেন ৬৪ লাখ ৩৩ হাজার ৭২৩ টাকা। অর্থাৎ বাড়ি নির্মান কাজের প্রকৃত ব্যয় তিনি গোপন করেছেন।
এদিকে সম্পদের বিবরণীতে আফজাল হোসেন তার নিজ নামীয় ব্যাংক একাউন্টে টাকা জমার তথ্য গোপন করেছেন। গাংনীর দুটি ব্যাংকে তার একাউন্টে পাওয়া গেছে ১ লাখ ৯২ টাকার স্থিতি।
আফজাল হোসেন ও তার ছোট মেয়ে সুজানা পারভীনের নামে মেহেরপুর প্রধান ডাকঘরে ২০ লাখ টাকার পারিবারিক সঞ্চয়পত্র রয়েছে। দুদুককে দেওয়া তথ্য বিবরণীতে এতথ্যও গোপন করেছেন তিনি।
আফজাল হোসেন স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের যে বিবরণী দাখিল করেছেন তাতে গোপন করা হয়েছে ৩৮ লাখ ৬৫ হাজার ৭৪৯ টাকা।
মামলার আর্জিতে সার্বিক পর্যালোচনায় বলা হয়েছে আফজাল হোসেনের মোট অর্জিত সম্পদের পরিমাণ ২ কোটি ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৪৮০ টাকা। তার চাকুরির বেতন ভাতাদিসহ আর্থিক সুবিধা আয়, গৃহসম্পতি আয় ও কৃষি আয় রয়েছে। যার মাসিক আয় হিসেব করে জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদের টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ১ কোটি ১০ লাখ ১৫ হাজার ৫৩৬ টাকা। এ সম্পদের বিষয়ে দুদকের অনুসন্ধান টিমের কাছে প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেন কোন প্রকার সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। এ টাকার সম্পদ অর্জন করে তিনি দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। যে কারনে বিচারের লক্ষ্যে মামলাটি দায়ের করেছে দুদক।
এদিকে গতকালই মামলাটি রেকর্ড করেছেন দুদক সমন্বিত কুষ্টিয়া জেলা কার্যালয়ের উপসহকারি পরিচালক সৈয়দ মাইদুল ইসলাম। দুদক আইনে মামলাটির বিচার কার্যক্রম গাংনী পাইলট স্কুল এন্ড কলেজের একটি বিশ্বস্থ্য সূত্রে জানা গেছে, আফজাল হোসেন গাংনী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় এন্ড কলেজের প্রধান হিসেবে যোগদানের পরপরই শুরু করেন শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ বাণিজ্য।
সূত্রমতে, কলেজ শাখায় শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন ২১ জন, কাম কম্পিউটার অপারেটর ২ জন, হিসাব রক্ষক ১ জন, অফিস সহায়ক (পিয়ন) ৩ জন। বিদ্যালয়ের জেনারেল শাখায় বিকেল শিফটের জন্য ব্যাক ডেটে নিয়োগ দিয়েছেন ৭ জন, কোনো পদ না থাকলেও অতিরিক্ত অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ দিয়েছেন ৫ জনকে। অফিস সহায়ক পদের একজন প্রার্থী সিয়াম হোসেনকে নিয়োগ দিয়ে বিদ্যালয়ে যোগদান করতে না দেওয়ায় সম্প্রতি গাংনী হাসপাতাল বাজারে প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। পর্যাপ্ত পরিমাণ শিক্ষার্থী না থাকলেও নিয়মবহির্ভূতভাবে শিফট খুলে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ১৫ জন শিক্ষক মাধ্যমিক পর্যায়ের সকাল শিফটের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৩ জন শিক্ষক। ওই সুত্রটি জানায়, এসব শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে নেওয়া হয়েছে মোটা অংকের ডোনেশন। যেখানে নতুন শিক্ষকদের জন্য ১৫ থেকে ১৮ লাখ এবং পুরাতন শিক্ষকদের নেওয়া হয়েছিল ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা।
জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেন ইতোমধ্যে গাংনী উপজেলা পরিষদের পাশে একটি বাড়ি, বাঁশবাড়িয়াতে সোয়া ৮ শতক জমির উপর পৌণে এক কোটি টাকা খরচ করে একটি বাড়ি ও কুষ্টিয়া জেলা শহরের র্যাব ক্যাম্পের পেছনে প্রায় কোটি টাকা মূল্যের জমিসহ একটি একতলা বাড়ি কিনে দোতালায় পরিণত করেছেন। এছাড়া শহরের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে একাধিক জমির প্লট ও মাঠান জমি।