ক্লিনিকের নানা অনিয়ম ও জণগনের ক্ষতি হবে জেনেও সেটি করার অপরাধে মেহেরপুরে এক ক্লিনিক মালিককে জেল ও জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
দন্ডিত ওই ক্লিনিক মালিকের নাম সাইদুল ইসলাম ওরফে বিদ্যুৎ। তিনি গাংনী উপজেলার বামন্দী করবি এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক ও আওয়ামীলীগ নেতা হাজী ইছার উদ্দীনের ছেলে।
ক্লিনিক মালিক সাইদুল ইসলাম বিদ্যুৎ এর আগেও ভূঁয়া প্রতিষ্ঠানের নামে প্রতারণা মামলায় দীর্ঘদিন স্বস্ত্রীক জেল খেটেছেন।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫ টার সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে তাকে জেল ও জরিমানা আদায় করা হয়।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও গাংনী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাদির হোসেন শামীম এই দণ্ডাদেশ দেন।
এসময় গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কর্মকর্তা ডাক্তার সুপ্রভা রানী উপস্থিত ছিলেন।
ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাদির হোসেন শামীম জানান, জণগনের ক্ষতি হবে জেনেও সেটি করার অপরাধে “ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৫২ ধারায় করবি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক জাহিদুল ইসলাম ওরফে বিদ্যুৎকে এক বছর বিনাশ্রম কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পরে তাকে মেহেরপুর জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
এর আগে দুপুরের দিকে এ উপজেলার কল্যাপুর গ্রামের কালিতলা পাড়া এলাকার গার্মেন্টস ব্যবসায়ী পিংকু হোসেনের স্ত্রী রিভা খাতুনকে সিজারিয়ান অপারেশন করার সময় নবজাতকটি ওটি কক্ষেই মারা যায়। রিভা খাতুন প্রসব বেদনা নিয়ে সকালের দিকে ভর্তি হয়েছিলেন বলে জানান করবি ক্লিনিকের স্যাকমো মিলন আলী।
স্যাকমো মিলন বলেন, সকালে প্রসব বেদনা নিয়ে ভর্তি হলেও দুপুর পর্যন্ত ডাক্তার পাওয়া যায়নি। এই ৬ ঘন্টা তাকে নরমাল ডেলিভারির চেষ্টা চালানো হয়েছিল। দুপর দেড়টার দিকে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্েরর মেডিকেল অফিসার ডাক্তার বোধা দীপ্ত দাস পিকলু (বিডি দাশ) সিজার করেন। এসময় কোনো এনসথেসিয়া ছিলেন না। বিডি দাশ একাই সিজার করেন বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, বাচ্চা অ্যাবসট্রাক্টেড লেবার (বাচ্চা আটকে যাওয়া) গিয়ে মারা গেছে নবজাতকটি।
এদিকে পরিবারের লোকজন জানতে পারেন সিজারিয়ান অপারেশন করার পরপরই নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। নবজাতকের মৃত্যুর পরপরই ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক জাহিদুল ইসলাম বিদ্যুৎ তড়িঘড়ি করে রোগী ও মৃতু নবজাতককে ক্লিনিক থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে। এসময় রোগীর স্বজনরা ওই ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অবস্থান নেন।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান গাংনী উপজেলা সরকারি কমিশনার ভূমি নাদির হোসেন শামীম ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার সুপ্রভা রানী। ক্লিনিকে গিয়ে নানা অনিয়ম ও ক্লিনিকটির কোনো কাগজপত্র সঠিক না পেয়ে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন।
এ বিষয়ে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাক্তার বোধা দীপ্ত দাসের (বিডি দাস) মুঠোফোনে একাধিক বার কল দিলেও তার ফোনটি খোলা পাওয়া যায়নি।
তবে, গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুপ্রভা রানী জানান, চিকিৎসক আসার অজুহাতে ওই সিজারিয়ান রোগীকে প্রায় ছয় ঘণ্টা ক্লিনিকে আটকে রাখার অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি।
এছাড়া ক্লিনিকটির বৈধ কোনো কাগজপত্রও পাওয়া যায়নি। মান্ধাতা আমলের পুরানো লক্কর ঝক্কর যন্ত্রপাতি ও নিম্নমানের সার্জারি ইকুপ্টমেন্ট দিয়ে রোগী সিজার করা হয়েছে। যে কারণে একটি ফুটফুটে সুন্দর শিশু প্রাণ হারিয়েছে।
সরেজমিনে ক্লিনিকটিতে দেখা গেছে, এখানে একজন মেডিকেল অফিসার দিয়ে সার্বক্ষনিক সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও সেখানে কোনো মেডিকেল অফিসার নেই। এখানে নেই কোনো ডিপ্লোমা করা সিস্টার। ওটি রুমে দেখা গেছে মান্ধাতা আমলের লক্কর ঝক্কর মার্কা পুরানো যন্ত্রপাতি। ছোট ছোট রুমেই গাঁদাগাদি ঠাঁসা ঠাসি করে দেওয়া হয়েছে দুইটি আবার তিনটি করে বেড। পর্যাপ্ত পরিমাণ আয়া বা অন্যান্য জনবল নেই ক্লিনিটিতে।
এদিকে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্েরর মেডিকেল অফিসার বোধা দীপ্ত দাস পিকলু (বিডি দাস) বিরুদ্ধে মাদক গ্রহণসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। ২০১৭ সালের ১২ জুলাই রাতে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আবুরী এলাকা থেকে ডাঃ বোধা দীপ্ত দাস পিকলু (বিডি দাস) সহ ৪ জনকে আটক করার খবর প্রকাশ হয়েছিল পত্রিকায়। একটি স্থানীয় পত্রিকায় চিকিৎসক বিডি দাসের বিরুদ্ধে মাদককান্ড নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছি। তবে পুলিশ তাঁকে অজ্ঞাত কারনে ছেড়েও দিয়েছিল বলে ওই পত্রিকাটি খবর দিয়েছিল।
এদিকে ওই নবজাতকের মৃত্যু ও ক্লিনিকটিতে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানের পরপরই ডাক্তার বোধা দীপ্ত দাস পিকলু (বিডি দাস) গাঁ ঢাকা দিয়েছেন। তাঁর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিয়েও তাঁকে পাওয়া যায়নি।