দর্শনা-চিলাহাটি রুটে চলছে সক্ষমতার চেয়ে বেশি ট্রেন
চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থেকে নীলফামারীর চিলাহাটি পর্যন্ত রেলপথটি বেশ পুরনো। প্রতিদিনই এ পথে চলাচল করছে সক্ষমতার চেয়েও বেশি ট্রেন। অন্যদিকে ব্যস্ত এ রেলপথ ব্যবহার করেই পশ্চিমবঙ্গের গেদে থেকে ভুটান সীমান্তবর্তী ডালগাঁও পর্যন্ত নিজেদের ট্রেন পরিচালনার সুযোগ পাচ্ছে ভারত।
নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউজে গত শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে রেল যোগাযোগ নিয়ে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়। এরপর সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা বাংলাদেশের রেলপথ ব্যবহারের বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন। তিনি জানান, বাংলাদেশ রেলওয়ের পথ ব্যবহার করে গেদে-দর্শনা থেকে হলদিবাড়ি-চিলাহাটি ক্রসবর্ডার ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্ট পর্যন্ত একটি পণ্যবাহী ট্রেনের ট্রায়াল চালানো হবে। আগামী মাসে কোনো এক সময়ের জন্য এর পরিকল্পনা করা হয়েছে। আর এটি ভুটানের সঙ্গে উপ-আঞ্চলিক সংযোগে সহায়তা করবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের ছয়টি সেকশনের মধ্যে পড়েছে দর্শনা থেকে চিলাহাটি পর্যন্ত রেলপথটি। সেকশনগুলো হলো দর্শনা-পোড়াদহ, পোড়াদহ-ঈশ্বরদী, ঈশ্বরদী-আব্দুলপুর, আব্দুলপুর-সান্তাহার, সান্তাহার-পার্বতীপুর ও পার্বতীপুর-চিলাহাটি। রেলওয়ের সর্বশেষ ৫৩তম ওয়ার্কিং টাইম টেবিল বইয়ের তথ্য অনুযায়ী, আব্দুলপুর-সান্তাহার ও সান্তাহার-পার্বতীপুরে বর্তমানে রেলপথের যে সক্ষমতা তার চেয়ে অতিরিক্ত ১৪টি ট্রেন চলছে। আর সক্ষমতার চেয়ে একটি ট্রেন বেশি চলছে পার্বতীপুর-চিলাহাটি সেকশনে।
যদি ভারতের মালবাহী ট্রেনগুলো বাংলাদেশের রেলপথের দুর্বল অংশগুলোয় গতি কমিয়ে চলে, তাহলে বাংলাদেশের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিরূপ প্রভাব পড়ার শঙ্কা রয়েছে।’ এমন প্রেক্ষাপটে ভারতকে ট্রেন চালানোর অনুমতি দেয়ার আগে বিষয়গুলো যথাযথভাবে যাচাই করার পরামর্শ দিয়েছেন এ বিশেষজ্ঞ।
দর্শনা-চিলাহাটি রুটে শুধু যে সক্ষমতার বেশি ট্রেন চলছে তা-ই নয়, এ পথে যাত্রী ও পণ্যবাহী ট্রেনের চাহিদাও ক্রমবর্ধমান। তাই ট্রেনের সংখ্যাও প্রতিনিয়ত বাড়ছে। রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ রুটের সবচেয়ে ব্যস্ততম সেকশন হলো ঈশ্বরদী-আব্দুলপুর। ২০১৭-১৮ অর্থবছর এ সেকশনে প্রতিদিন গড়ে ৪০টি যাত্রীবাহী ট্রেন ও দুটি মালবাহী ট্রেন চলাচল করেছে। ট্রেনগুলো প্রতিদিন গড়ে ৫১৫টি কোচ, ৮০টি ওয়াগন ব্যবহার করেছে। এর পরের অর্থবছরে সেকশনটিতে প্রতিদিন চলাচল করা যাত্রীবাহী ট্রেনের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪১টিতে। একই সময়ে যাত্রী ও পণ্যবাহী ট্রেনের চাহিদা বেড়েছে দর্শনা-চিলাহাটি রুটের অন্য সেকশনগুলোয়ও।
রেলপথের সক্ষমতার চেয়ে বেশি ট্রেন চলায় এবং ক্রমাগত পণ্য ও যাত্রীবাহী ট্রেনের চাহিদা বাড়তে থাকায় দর্শনা-চিলাহাটির রেলপথটির ওপর এরই মধ্যে বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের একাধিক কর্মকর্তা। এমন প্রেক্ষাপটে তাদের শঙ্কা, বিদ্যমান অবকাঠামোর উন্নতি না করে ভারতের ট্রেন চলাচলের সুযোগ দিলে এ চাপ আরো বাড়বে।
বাংলাদেশ ট্রান্স-এশিয়ান রেলপথে যুক্ত হোক কিংবা ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দিক, বিনিময়ে বাংলাদেশ যেন মুনাফার ন্যায্য ভাগ পায়, সেদিকে নজর দেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ সম্পর্কে অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারত ট্রেন পরিচালনা করলে তাদের দূরত্ব অনেকটাই কমে যাবে। তাদের পণ্য সরবরাহ সক্ষমতা বাড়বে। পণ্য পরিবহনের ব্যয় কমবে। ভারতের এ লাভ-ক্ষতির হিসাবটাও আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে।’