মেহেরপুরে লিচু উৎপাদন কম হলেও দামে খুশি বাগানিরা
মেহেরপুরের বিভিন্ন বাগানের লিচু গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে লাল সবুজ রংয়ের লিচু। সুস্বাদু এ লিচু প্রতিবছরই জেলার চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি হয় রাজধানী শহর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। ইতোমধ্যে আটি জাতের লিচু বাজারজাত শুরু হয়েছে। জেলা জুড়ে চলছে লিচু বিক্রির মহাউৎসব। লিচু বাজারজাত করনে ব্যাস্ত সময় পার করছেন লিচু চাষিরা।
অনাবৃষ্টি,তাপদাহ ও বৈরী আবহাওয়ায় লিচুর উৎপাদন কম হলেও দামে পুসিয়ে নিচ্ছেন বাগান মালিকরা। আটি লিচু বিক্রি শুরু হলেও বোম্বাই,আতা বোম্বাই ও চাইনা থ্রী জাতের লিচুর পরিচর্যায় ব্যাস্ত চাষিরা। সুস্বাদু হওয়ায় এজেলার উৎপাদিত লিচুর চাহিদা সারা দেশেই। বিভিন্ন পাইকাররা আসছেন বাগান কিনতে। কৃষি বিভাগ বলছেন লিচুর ন্যায্য দাম পাচ্ছেন চাষিরা। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ক্ষতি পুসিয়ে লাভবান হবেন চাষিরা।
জেলা কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্যমতে , প্রায় ৮০০ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। উক্ত বাগানে লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে ৬ হাজার টন ।
মেহেরপুর সদর উপজেলার ঝাউবাড়িয়া গ্রামের লিচু চাষি মজিবর রহমান জানান, দুই বিঘা জমিতে আটি ও বোম্বাই লিচুর বাগান রয়েছে। উক্ত বাগানে গাছ রয়েছে ৪৫টি। সব গাছে এবার লিচু হয়নি। যে গাছে লিচু হয়েছে তা অতিমাত্রায় তাপদাহে গুটি ঝরে পড়ে উৎপাদন কম। তবে এবার লিচুর দাম ভাল পেয়ে কিছুটা হলেও ক্ষতি পুসিয়ে নিতে পারবেন।
বাগানমালিক আজগর আলী বরেন, প্রতি বছরেই মেহেরপুরের লিচুর চাহিদা দেশব্যাপী। প্রতিবছর আমাদের উৎপাদিত লিচু জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়ে থঅকি। কিন্তু এবছর উৎপাদন কম হওয়ায় জেলার চাহিদা পুরুন হয়ে বাইরের জেলাতে পাঠানো যাচ্ছেনা। তাছাড়া বাইরের জেলায় লিচুর যে দাম তা আমাদের জেলাতেই পাওয়া যাচ্ছে। বৈরী আবহাওয়াতে লিচুর ফলন কম হলেও দাম ভাল পচ্ছি॥ খরচ বাদ দিয়ে লাভবান হওয়ার আশা তার।
গাংনী উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের লিচু বাগান মালিক হিরোক আলী বলেন, এবছর লিচুর দাম ভাল। ১০০ লিচু বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা এসে ২৫০ টাকা শ’ কিনছেন। এক কাউন লিচুর বর্তমান বাজার মুল্য ২৫০০ টাকা েেথ ২৭০০ টাকা। ফলন বিপর্যয় হলেও লিচু বিক্রি করে লাভবান হচ্ছি।
বারিশাল থেকে লিচু কিনতে আসা পাইকার ব্যবসায়ী হাফিজুল ইসলাম জানান, লিচুর গুটি দেখে ৭টি বাগান কিনে ছিলাম। অতিরিক্ত রোদের কারনে লিচুর গুটি ঝরে গেছে। পরে লোকসান হবে ভেবে বাগানমালিকরা আমাদের কিছু টাকা ফেরত দিয়েছেন। তবে লিচুর পরিচর্যা,গাছ থেকে লিচু সংগ্রহের শ্রমিক খরচ ও পরিবহন খরচ বাদ দিয়ে লাভ থকাছে কম। তবুও তিনি ২০ বছরের ব্যবসা ধরে রাখার কারনে এবারও ব্যবসা করতে হচ্ছে।
লিচু সংগ্রহে নিয়োজিত শ্রমিক সাগর আহাম্মেদ জানান, প্রতি বছর এসময় লিচুর বাগানে কাজ করেন। সকাল ৬টা থেকে দুটুর ১টা পর্যন্ত কাজ করে মজুরি পান ৫০০ টাকা। এভাবে এক মাস যাবত একাজ চলমান থাকবে। আটি লিচু বিক্রি শেষ হলে বোম্বাই ও চাইনা থ্রি লিচু বিক্রি শুরু হবে। শুধু সাগর আহম্মেদ নয় বিভিন্ন লিচু বাগানে কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন কয়েক হাজার শ্রমিক।
মেহেরপুর বাজারের লিচু ব্যবসায়ী মহন আলী জানান, প্রতিদিন তার আড়ৎ থেকে ২ হাজার কাউন লিচু বিক্রি হচেছ। অন্যান্য বছরে তার আড়ৎ থেকে ৪/৫ হাজার কাউন লিচু বিক্রি হতো। এবার লিচু বাজারে কম আসছে।
মেহেরপুর জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার বলেন, মেহেরপুরে প্রায় ৮০০ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। উক্ত বাগানে লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে ৬ হাজার টন । কৃষকরা প্রতি কাউন লিচু বিক্রি করছেন ২৫০০ টাকা থেকে ২৭০০ টাকা দরে। বর্তমানে আটি লিচু বিক্রি শুরু হয়েছে। এরপর বোম্বাই ও আতা বোম্বাই এবং চাইনা থ্রি লিচু বিক্রি শুরু হবে। জেলার চাহিদা পুরুনের পাশাপাশি বিভিন্ন জেলায় লিচু বিক্রি করে চাষিরা লাভবান হচ্ছেন॥ কৃষি বিভিগারে পক্ষ থেকে লিচু সংগ্রহের কৌশল,বাজারজাত করনের পদ্ধতি এবং পরিচার্যা বিষয়ক সকল ধরনের পরামর্শ দেয়া অব্যাহত রেখেছি।