মাইশা খাতুন নামের এক শিশুর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় আলমডাঙ্গা থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, মাইশার বিদ্যুৎস্পৃষ্টে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তবে ঘটনার দু’ মাস পর ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেয়ে পুলিশ জানতে পারে মাইশার মৃত্যু বিদ্যুৎস্পৃষ্টে হয় নি। বরং তাঁকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।
নিহত মাইশা খাতুন (৭) মিরপুর উপজেলার আসাননগর গ্রামের সাইফুল ইসলামের মেয়ে। মা-বাবার বিচ্ছেদের পর তাঁর মায়ের সাথে আলমডাঙ্গা উপজেলা ভাংবাড়িয়া ইউনিয়নের ভোগাইলবগাদী গ্রামে নানা শহিদুল ইসলামের বাড়িতে থাকতো। নিহত মাইশা ভোগাইল বগাদী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টার দিকে সাত বছরের এক শিশু বিদ্যুৎস্পর্শে মারা যায় বলে সবাই জানলেও ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে আসার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই শিশুটির হত্যা রহস্য উদঘাটন করেছেন চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান নিজেই।
ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেয়ে খুব সকালে পুলিশ সুপার নিজে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে (পিও ভিজিট) যান। এরপর কৌশলে খুনি মাকে এসপি নিজের গাড়িতে করেই পুলিশ হেফাজত নিয়ে আসেন। তারপর প্রমাণ হয় চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার ভোগাইলবগাদি গ্রামের শিশু মাইশা খাতুন (৭ বছর) বিদ্যুত স্পর্শে মারা যায়নি। তাকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে বলে জানান পুলিশ । ময়না তদন্তের মাধ্যমে এ রহস্য উন্মোচন হয়েছে। মাইশাকে অন্য কেউ নয়, তার নিজের মা তাকে গলা টিপে হত্যা করে। ঘাতক মা পপি খাতুনকে (২৫) পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
পপি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন।
গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান এসব তথ্য সাংবাদিকদের জানান।
তিনি জানান, শিশু মাইশা তার মায়ের সাথে আলমডাঙ্গার ভোগাইলবগাদী গ্রামে বসবাস করতো। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টার দিকে মাইশার মা পপি খাতুনের চিৎকারে প্রতিবেশিরা ছুটে আসে। সেসময় মাইশার গলায় মোবাইলফোনের চার্জারের তার জড়ানো ছিল। পপির প্রতিবেশিদের জানায়, তার মেয়ে মাইশা বিদ্যুত স্পর্শে মারা গেছে। প্রতিবেশিরা মাইশাকে দ্রুত নিয়ে যায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসকরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে মাইশা মারা গেছে বলে জানান। পাশাপাশি চিকিৎসকরা নিহত মাইশার গলায় দাগ থাকার কথাও পুলিশকে বলেন।
পুলিশ লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে ময়না তদন্ত সম্পন্ন করে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, নিহত মাইশা খাতুন বিদ্যুত স্পর্শে মারা যায়নি। তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।
বিষয়টি পুলিশ নিহতের পরিবারকে জানালে মাইশার নানা ভোগাইলবগাদী গ্রামের মৃত নূর হোসেনের ছেলে শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি উল্লেখ করে গত ৩ মে আলমডাঙ্গা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলা দায়েরের পর পুলিশ তদন্ত শুরু করে এবং ২৪ ঘন্টার মধ্যে রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়।
পুলিশ সুপার জানান, মাইশাকে তার মা পপি খাতুন গলা টিপে হত্যা করেছে। গত ৫ মে পপি খাতুনকে আলমডাঙ্গার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জহুরা বেগমের আদালতে হাজির হয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে। পুলিশ পপি খাতুনকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে।
পুলিশ সুপার জানান, পপি খাতুনের বিয়ে হয়েছিল কুষ্টিয়া জেলার মীরপুর থানার ঝুটিয়াডাঙ্গা গ্রামের সাইফুল ইসলামের সাথে। স্বামীর সাথে দাম্পত্য কলহের কারণে আগেই তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছিল এবং পপি খাতুন তার মেয়ে মাইশাকে নিয়ে নিজের বাবার বাড়ি আলমডাঙ্গার ভোগাইলবগাদী গ্রামে বসবাস করছিল।
পপি খাতুন পুলিশের কাছে মেয়েকে হত্যার কথা স্বীকার করে বলে, মেয়ে মাইশা নাবালিকা। তার বাবা হয়তো আরেকটি বিয়ে করবো। পপিরও অন্য জায়গায় বিয়ে হতে পারে। তখন মাইশাকে দেখার কেউ থাকবে না। মাইশার জীবন কাটবে কষ্টে। প্রতিবেশিদের একটি মেয়েকে এভাবে বড় হতে দেখেছে পপি। এসব চিন্তাভাবনা করে মা পপি খাতুন মেয়ে মাইশাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে বলে পপি পুলিশকে জানিয়েছে।
এই সমাজে কখনো মা হত্যা করছে সন্তানকে আবার সন্তান হত্যা করছে মা কে। তাই এই রকম ঘটনা টা পরে যাতে না হয় সেজন্য সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
এ ঘটনায় সমাজের সচেতন মহল বলছেন-সামাজিক অবক্ষয় ও নৈতিকতা এমন পর্যায়ে পৌছেছে যে, মা তার সন্তানকে হত্যা করতে দ্বিধাবোধ করছে না।
সংবাদ সম্মেললে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান লালন, ডিআই-১ ইন্সপেক্টর জিহাদ খান, পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) বিকাশ দাসসহ উর্ধতনরা উপস্থিত ছিলেন।