কার্যাদেশের সাড়ে চার বছর অতিবাহিত হলেও আজও জমি অধিগ্রহণের কারণে কাজ শুরু হয়নি মেহেরপুরের মুজিবনগর মডেল মসজিদের। জেলা, সদর উপজেলা ও গাংনী উপজেলা মডেল মসজিদ নির্মাণ শেষ হলেও অধরা যেন মুক্তিযুদ্ধেও স্মৃতিবিজড়িত মুজিবনগরের মডেল মসজিদটি।
মডেল মসজিদ প্রকল্পের বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, “প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন” প্রকল্পের আওতায় মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলা মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ প্রদান করা হয় ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর। যার স্মারক নমং-১৭৫৯। এর আগে ওই বছরের ২০ জুন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গ্যালাক্সি এ্যাসোসিয়েটসের সাথে বাস্তবায়নাধিন প্রতিষ্ঠান মেহেরপুর গণপূর্ত বিভাগ চুক্তি সম্পাদন করে। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ১২ কোটি ৫৯ লাখ ১৬ হাজার ৪২১ টাকা। চুক্তি মোতাবেক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিরাপত্তা অর্থ বাবদ ৬২ লাখ ৯৫ হাজার ৮২১ টাকা জমা প্রদান করেন।
জমি অধিগ্রহণের জন্য তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো: আতাউল গনি ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর একটি পত্র দেন। পত্রে উল্লেখ করেন, অধিগ্রহণ কার্যক্রমের জন্য প্রস্তাবিত জমি মসজিদ নির্মানের জন্য নির্ধারিত না হওয়ায় একই মৌজায় ৫০০ ও ৩৬৪ খতিয়ানভুক্ত ৩৬৭ দাগের ০৭.২৫ শতক ও ৩৬৬ দাগের ৩৫.৬৭ মিলে ৪২.৯২ শতক জমা পাওয়া যাচ্ছে বলে স্কেচ ম্যাপ পাঠিয়ে তা অনুমোদনের জন্য আবেদন করেন। পরে সাবেক জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান ২০২১ সালের ২৪ অক্টোবর অধিগ্রহণের প্রস্তাবিত ৪২.৯২ শতক জমি বাবদ ১ কোটি ৮৭ লাখ ৩৬ হাজার ৪২২ টাকা বরাদ্দ চেয়ে প্রকল্প পরিচালকের কাছে আবেদন করেন। এবং ২০২২ সালের ৩০ জানুয়ারি টাকা পেয়েছেন উল্লেখ করে প্রকল্প পরিচালকের কাছে প্রাপ্তী স্বীকার পত্র পাঠান।
তথ্য উপাত্ত জানা গেছে, জমি অধিগ্রহণের টাকা বরাদ্দ হলেও কার্যাদেশ প্রদানের সাড়ে চার বছর এবং বরাদ্দ প্রাপ্তির প্রায় আড়াই বছর হতে চললেও এষনও পর্যন্ত সে জমি অধিগ্রহণ করা হয়নি। ফলে মুজিবনগরবাসী অপেক্ষায় আছেন কবে হবে মডেল মসজিদ।
অপরদিকে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আর্থিক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। বারবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেছেন কাজটি দ্রুত শুরু করার জন্য। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের আবেদনের প্রেক্ষিতে গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়ে তাগাদা দিয়েছেন। তবুও কোন অগ্রগতি মেলেনি।
এ বিষয়ে মেহেরপুর ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের উপপরিচালক এ জে এম সিরাজুম মুনীর বলেন, মুজিবনগর মডেল মসজিদ স্থাপনের লক্ষ্যে জমি অধিগ্রহণের জন্য জমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা, ইউএনও এবং নিজে প্রতিবেদন প্রস্তুত করে ফাইল পাঠানো হয়েছে। কিন্তু অধিগ্রহণের জন্য ৪ ধারার যে নোটিশ জারি হয় কি কারণে সে নোটিশ জেলা প্রশাসক মহোদয় কেন দেননি তার সদুত্তর আমার কাছে নেই।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গ্যালাক্সি এ্যাসোসিয়েটসের প্রতিনিধি জাকির হোসেন খাঁন বলেন, মুজিবনগর মডেল মসজিদের কাজ চুক্তি হওয়ার পর পাঁচ বছর কেটে গেলো। প্রয়োজনীয় প্রতিটি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। জমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় কাজটি শুরু করা যাচ্ছে না। ফলে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বারবার আবেদন করে কোন সুফল মিলছে না।
হাসানুজ্জামান লাল্টু তিনি স্থানীয় একজন উদ্যোক্তা। তিনি বলেন, মুজিবনগর বাংলাদেশের অন্যতম গুরত্বপূর্ণ একটি উপজেলা। গুরত্বপূর্ণ বিবেচনায় এখানকার মডেল মসজিদটি সবার আগে নির্মাণ হওয়া উচিৎ ছিলো। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিভাগের উদাসিনতায় এখনো জমি অধিগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি বলে জানতে পেরেছি। যা খুবই দু:খজনক। আশা করবো দ্রুত সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্টরা এই মসজিদটি নির্মাণের সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
স্থানীয় ইয়ামিন হাসান বলেন, চার বছর ধরে শুনছি মুজিবনরে মডেল মসজিদ হবে। শুনতে শুনতে জেলা শহরসহ অন্যদুটি উপজেলায় হয়ে গেছে। কিন্তু মুজিবনগরে নাকি এখনো জমি নিতেই পারেনি। জেলা প্রশাসন আন্তরিক হলে অনেকই আগেই এর নির্মাণ কাজ শুরু হতো। আমাদের দাবি দ্রুত জমি অধিগ্রহণ কওে মসজিদটি নির্মাণ করা হোক।
জেলা প্রশাসক মো: শামীম হাসান বলেন, প্রস্তাবিত জমির দুইজন মালিকের একজন মামলা করেছেন এবং একজন অধিগ্রহণ না করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। এ সংক্রান্ত জটিলতায় জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া আটকে আছে। ফলে মডেল মসজিদের কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।
প্রকল্প পরিচালক মো: নজিবর রহমান বলেন, জেলা প্রশাসক জমি অধিগ্রহণ করে দিলেই কাজ শুরু হয়ে যাবে। আমরা জমি অধিগ্রহণের টাকাও দিয়ে দিয়েছি। বারবার তাগাদা দিচ্ছি জমি অধিগ্রহণের জন্য। গত ২২ এপ্রিল এনিয়ে পুনরায় মিটিং করে তাগাদা দেওয়া হয়েছে।