তীব্র তাপপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। মাঠে রোদে পুড়ে কৃষকের ফসল নষ্ট হচ্ছে। পেটের দায়ে যারা কাজ করতে বের হচ্ছেন তারা সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছেন। শিশুরাসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
এ ছাড়া তীব্র তাপপ্রবাহ থেকে রক্ষা পেতে এবং বৃষ্টির প্রত্যাশায় প্রায় প্রতিদিনই জেলার বিভিন্ন স্থানে ইসতিসকার নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিরা।
বৈশাখ মাসের শুরুতেই সূর্যের উত্তাপ বেড়েছে। গরম সহ্য করতে না পেরে অনেকেই ঘন্টার পর ঘন্টা পুকুর ও ক্যানাল পানিতে গোসল করার পরেও গরমে অস্থির হয়ে যাচ্ছে। আবার অনেকেই তৃষ্ণা মেটাতে বিভিন্ন ধরনের শরবত পান করছেন। এই গরমে খেটে খাওয়া মানুষের সাথে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পোল্ট্রি ব্যবসায়ী ও কৃষকেরা।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় কুষ্টিয়ায় ৪২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এটি এই মৌসুমে এই জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড বলছে স্থানীয় আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ অফিস।
কুমারখালী আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মামুন অর রশিদ বলেন, কুষ্টিয়ায় এ মৌসুমে আজকে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৫ ডিগ্রি। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, আগামি তিন দিনের মধ্যে বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই বলেও জানান তিনি।
এদিকে দিকে কুষ্টিয়ায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ৩৪ ফুট নিচে নেমে গেছে। পানির স্তর নেমে যাওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষের পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য। স্থানীয়রা বলছেন, আরও কয়েকদিন এই তাপদাহ অব্যাহত থাকতে পারে। সূর্যের প্রখর তাপে সাধারণ মানুষের জীবন পুরোপুরিভাবে বিপর্যয় হয়ে পড়েছে। কালবৈশাখীর মৌসুমেও প্রায় এক মাস বৃষ্টির দেখা নেই।
সদর উপজেলার জগতি এলাকার কৃষক নুর ইসলাম বলেন, ১২বিঘা জমি বর্গা নিয়ে ধান ও ভুট্টা লাগিয়েছি। জমি চাষাবাদ ও সেচে কয়েক লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখন আর টাকা দিলেও পানি যাওয়া যাচ্ছে না। তীব্র তাপদাহে ভুট্টার গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। ধানের শীষ আসা অবস্থায় গাছ নুয়ে পড়ছে। কিছু গাছে শীষ বের হলে সব চিটা হয়ে যাচ্ছে। ফসল ঘরে তুলতে না পারলে নিঃস্ব হয়ে যাব বলেও তিনি জানান।
একদিকে জিকে ক্যানালে পানি নেই, অন্যদিকে পানির স্তর ক্রমশ নিচে নামছে। স্যালোতে উঠছেনা প্রয়োজনীয় পানি। মাঠের মধ্যে অকেজো হয়ে পড়ে আছে অধিকাংশ পাম্প। দীর্ঘদিন নষ্ট হয়ে বন্ধ রয়েছে জিকে প্রকল্পের তিনটি পাম্পই। একারণে শুকিয়ে খাঁ খাঁ করছে জিকে ক্যানেল।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পাটিকাবাড়ী এলাকার কৃষক ইজাবুল হক বলেন, জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করছি। দুই বিঘা জমিতে সবজি ও কলা গাছ রয়েছে। জমির পাশে জিকে ক্যানাল থাকলেও পানি নেই। জমির সঙ্গে বোরিং বসিয়েও কাজ হচ্ছেনা। পানির অভাবে ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আর কয়েক দিন গেলে সব শুকিয়ে যাবে।
জেলা বিভিন্ন উপজেলায় সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর শুকিয়ে গেছে। পানির স্তর নেমে যাওয়ায় বেশিরভাগ গভীর ও অগভীর নলকূপ ও সেচ পাম্পে পানি উঠছে না। অতি তীব্র তাপপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে উঠছে। মাঠে রোদে পুড়ে কৃষকের ফসল নষ্ট হচ্ছে। পানির অভাবে মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। তাপ প্রবাহের মধ্যে পেটের দায়ে যারা কাজ করতে বের হচ্ছেন, তারা সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছেন। শিশুরাসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের ধারণ ক্ষমতা থেকে প্রায় চার থেকে পাঁচ গুণ রুগীর চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে। সেখানে বর্তমানে হাসপাতলে রোগীর চাপে তিল পরিমান জাগা অবশিষ্ট নেই।
এদিকে অতিরিক্ত গরমের কারণে ডাবের চাহিদাও বেশ অনেক বেশি। ওরস্যালেন বিক্রির চাপ বেড়েছে অনেক বেশি। চলমান তাপপ্রবাহে সবচেয়ে কষ্টে পড়েছে খেটে খাওয়া দিনমজুর, রিকশা-ভ্যানচালক ও কৃষকরা। তীব্র রোদে মাঠে টিকতে পারছে না কৃষক ও দিনমজুর। রাস্তায় ভাড়া মারতে পারছে না রিকশা-ভ্যানচালকরা। প্রতিদিন সেচ দিতে হচ্ছে বোরো ধান ও সবজি ক্ষেতে। এতে হাঁপিয়ে উঠছে কৃষকরা। এছাড়াও ঠিক মতন কাজ করতে পারছে না বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ।
কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুফি রফিকুজ্জামান বলেন, পানি সংকটের কারণে বোরো আবাদ ব্যাহত হয়েছে। আউশ উৎপাদনেও প্রভাব পড়বে। পানি সংকটের কারণে উৎপাদনে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। বৃষ্টি হলেই সংকট কেটে যাবে।