মেহেরপুরে তীব্র তাপদাহে ঝরে পড়ছে আম-লিচুর গুটি
তীব্র তাপপ্রবাহ ও অতিখরায় পুড়ছে মেহেরপুর। অসহনীয় গরমে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে মানুষসহ প্রাণীকুল। শুধুমাত্র মানুষ ও প্রাণিকুলই নয়, তাপপ্রবাহের প্রভাব পড়েছে ফসলের উপর।
তীব্র তাপের কারণে বোটার রস শুকিয়ে ঝরে যাচ্ছে আম ও লিচুর গুটি। সু-স্বাদু লিচু ও আমের জন্য বিখ্যাত মেহেরপুর হলেও এবছর আম ও লিচুর মুকুল এসছে। সে মুকুল এখন পরিনত হয়েছে গুটি আকৃতিতে। মুকুল থেকে গুটি আসার সময় অনাবৃষ্টি আর তাপদাহের কারনে পুড়ে যাচ্ছে লিচু ও আমের মুকুল। সেই সঙ্গে ঝরে পড়ছে আম ও লিচুর গুটি।
আরো পড়ুন: গাংনীতে টিউবওয়েলে উঠছে না পানি!
প্রাকৃতিক এই বিরুপ আচরনে চরম দুশ্চিন্তায় জেলার লিচু ও আম চাষিরা। এঅবস্থায় লিচু আর আম বাগানে সেচসহ বিভিন্ন পরিচর্যা করে গাছের লিচু ও আমের গুটি রক্ষায় আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন বাগান মালিকরা। কৃষি বিভাগ বলছেন, আবহাওয়ার প্রতিকুলতার মোকাবিলা করে গাছের গুটি রক্ষায় চাষিদের সব ধরনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
মেহেরপুর জেলরা কৃষি অফিসের তথ্যানুযায়ি, জেলায় লিচুর বাগান রয়েছে ৮০০ হেক্টর জমিতে। এসকল বাগানে ,আটি লিচু,বোম্বাই,চিলি বোম্বাই,আতা বোম্বাই ও চায়না-থ্রি জাতের লিচু উৎপাদন হয়ে থাকে। চলতি বছরে জেলায় সাড়ে ৮ হাজার টন লিচুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যা দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করে অধিক মুনাফা আয় করার আশায় বুক বেঁধেছেন বাগান মালিকরা। কিন্তু গুটি ঝরতে শুরু করায় চাষিদের কপালে এখন চিন্তারভাজ।
এবং আমের বাগান রয়েছে ৩ হাজার ৩৩৬ হেক্টর আম বাগান রয়েছে। গেলো বছর উক্ত বাগানের উৎপাদিত ৪১ হাজার ৩০ মেট্রিক টন আাম উৎপাদন হয়েছিল। যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে বাইরের জেলায় ব্যপক চাহিদা পুরুন করা হযেছে। একই সাথে ইউরেরাপের বিভিন্ন দেশেও মেহেরপুরের আম রপপ্তানি করে অধিক মুনাফা আয় করেছেন আম বাগান মালিকরা। ল্যাংড়া, বোম্বাই, হিমসাগর, ফজলী, আম্রপালী, গোপালভোগ, হাড়িভাঙ্গাসহ বেশ কয়েকটি জাতের আম বাগান রয়েছে। মেহেরপুরের আম ও লিচু জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করা হয়ে থাকে। এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও প্রতি বছর পাঠানো হয় আম ও লিচু। এ দুটি মৌসুমি ফল বিদেশে রপ্তানি করে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা আয় হলেও এবছর উৎপাদনে পড়েছে ভাটা।
মেহেরপুর সদর উপজেলার কালিগাংনী গ্রামের চাষি আব্দুল মান্নান বলেন, নিজ মাঠে তার ২ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের আমবাগান রয়েছে। এ বছর দীর্ঘমেয়াদী শীত ও ঠান্ডা হওয়ায় আম বাগানে এখনো মুকুল আসেনি। আবশেষে কয়েকটি গাছে মুকুল এসে গুটিতে পরিনত হয়েছে। কিন্তু অতিমাত্রায় রোদের কারনে প্রতিনিয়ত গুটি ঝরে পড়ছে। কিৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী বাগানে সেচ দিচ্ছি এবং ওষুধ স্প্রে করলেও তাতে উপকারর হচ্ছেনা।
মেহেরপুর সদর উপজেলার ঝাউবাড়িয়া গ্রামের লিচু বাগান মালিক তোজাম্মেল হক জানান, সাড়ে তিন বিঘা জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। বাগানে আগাম জাতের আটি লিচু রয়েছে দেড় বিঘা। আটি লিচু গাছের ডগায় ডগায় মুকুলে ছেয়ে গেছে। বাকি জমিতে রয়েছে আতা বোম্বাই লিচুর গাছ। সেগুলিতেও মুকুল দেখা দিয়েছে। কিন্তু সব গাছেই এখন লিচুর গুটি। গুটি গুলোর ডগা শুকিয়ে যাচ্ছে এবং একটু বাতাস হলেই ঝরে পড়ছে। এবছর লিচুর ফলন বিপর্যয় ঘটবে।
আম ব্যবসায়ি হেমায়েতপুরের আনারুল বলেন, গাছে মুকুল আসার সাথে সাথে মেহেরপুরের বিভিন্ন এলাকার অন্ততঃ ২০ বিঘা জমির আমবাগান ও ১০ বিঘা জমির লিচুর বাগান কিনেছেন। দুই বছরের জন্য বাগান কিনতে হয়। গেল বছর মুকুল এসেছিল কিন্তু ঝড়ে আম পড়ে যাওয়ায় বেশ লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছিল। এবছর সেই লোকসান পুসিয়ে নেয়ার আশায় বিভিন্ন ধরনের বালাই নাশক স্প্রে করেছি। কিন্তু আমের তেম মুকুল না আসলেও লিচু গাছে ব্যাপক মুকুল এেিসছল। তাপদাহে সেই গুটি শুকিয়ে ঝরে যা্েচ্ছ। এর প্রতিকার না পেলে লোকসানে পড়তে হবে।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষণ কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান জানান, মেহেরপুর জেলায় এবছর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এবং দীর্ঘদিন থেকেইে অনাবৃষ্টি। এর প্রভাব ফসলের ওপরে পড়ছে। তবে এমন পরিস্থিতি কবে নাগাত সিথিল হবে তা বলা যাচ্ছেনা।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ সামসুল আলম বলেন, ‘তীব্র তাপের কারণেই আমের গুটিঝরে যাচ্ছে। কৃষিবিভাগের পক্ষ থেকে চাষিদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। যেসব বাগানে আম ও লিচুর গুটি ঝরে যাচ্ছে, বিকেলের দিকে পরিমিত মাত্রায় বোরন স্প্রে করলে গুটি ঝরা রোধ করা যাবে।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু তাপমাত্রা বেশি তাই গাছের গোড়ায় পানি দিতে হবে। তাহলে গুটিঝরা রোধ হয়ে যাবে। এতে কিছুটা হলেও উপকার পাওয়া যাবে । এছাড়াও নিয়মিত সেচ দেয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।