বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বলেন, মুজিবনগর সরকার স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার। যারা ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবসকে মানেনা, তারা মুক্তিযুদ্ধ ও এই স্বাধীন রাস্ট্রকেও মানেনা। তারা আজও পাকিস্থানের দোষর হিসেবে কাজ করে।
আজ ১৭ এপিল দুপুরে মুজিবনগর আম্রকাননের শেখ হাসিনা মঞ্চে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয় ও মেহেরপুর জেলা প্রশাসন আয়োজিত মুজিবনগর দিবসের বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাসিম এমপি’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি। বক্তব্য রাখেন জনপ্রশাসন মন্ত্রী ও মেহেরপুর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ফরহাদ হোসেন এমপি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কাজী জাফরুল্লাহ আরও বলেন, এই দেশ যতদিন থাকবে আওয়ামীলীগ ততদিন এই মুজিবনগর দিবস পালন করবে। আগামীতে মুজিবনগর দিবসটি আরও আড়ম্বরভাবে উথযাপন করা হবে। এক সময়কার বৈদ্যনাথতলাকে মুজিবনগর নামকরণ করার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল সেটি বঙ্গবন্ধুরই অবদান। মেহেরপুর জেলার মানুষ এই দিবসটিকে কৃতজ্ঞতার সাথেই স্বরণ করে আসছে।
তিনি আরও বলেন, দু:খজনক হলেও সত্য আগে দেশব্যাপি ১৭ এপ্রিল দিবসটি উৎযাপন করা হতো সেভাবে এখন উৎযাপন করা হয়না। আগামীতে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলাতে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস পালন ছড়িয়ে দিতে হবে। যাতে করে নতুন প্রজন্ম ও দেশের সকল মানুষ স্বাধীনতার পরবর্তি প্রথম সরকারকে স্বরণ করে রাখে।
প্রধান বক্তা আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, যারা স্বাধীনতাকে অস্বীকার করে। যারা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে সব ধরনের শক্তি যুগিয়েছিল। পাকিস্থানি হানাদার বাহিনীর পক্ষ নিয়েছিলো, তাদেরই মদদে বিগত দিনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে তারা বানচাল করার চেষ্টা করেছে। ৭১ সালের সেই পরাজিত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরাজিত শক্তির মদদে ও উস্কানিতে তারা এতদিন এটা করেছিল। আজকে এটা পরিস্কার হয়েছে। এটা স্বীকার করে ’মির্যা ফকরুল’ বলেছেন আমরা আর বিদেশীদের উপর নির্ভর করতে চাইনা।
তিনি বলেন, আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিশ্বাস করি, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ৭০ সালে যেমনি ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম, আজ বঙ্গবন্ধুর কন্যার নেতৃত্বে এখনো সেভাবে ঐক্যবদ্ধ থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলবো।
মন্ত্রী আরও বলেন, ৭০ এর নির্বাচনে এদেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে বঙ্গবন্ধু ও তার দল আওয়ামীলীগকে ম্যান্ডেড দিয়েছিল। সেই মেন্ডেডে তিনি এককভাবে বাঙ্গালী জাতীর নেতা পরিণত হয়েছিলেন। তারপরেও পাকিস্থানী সামরিক জান্তা বাঙ্গালীদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি। তার বাঙ্গালীর নেতৃত্ব স্বীকার করতে চাইনি। ক্ষমতা হস্তান্তর না করে আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আমরা মুক্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হই। তারই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর পরিকল্পনামতে ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়। ১৭ এপ্রিল এই ঐতিহাসিক স্থানে বিপ্লবী সরকার মুজিবনগরকে প্রথম রাজধানী হিসেবে তার কার্যক্রম শুরু করে।
তাই ঐতিহাসিক এই মুজিবনগর স্মৃতিকেন্দ্রকে আন্তর্জাতিক মানের এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সূতিকাগার হিসেবে গড়ে তুলতে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। অচিরেই এই কার্যক্রম শুরু হবে। যাতে সারা বিশ্ববাসি ও দেশের অগনিত জনগণ এখানে এসে সেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে পারে। জানতে পারে ৯ মাসের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস।
জনসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, রাজশাহী সিটি মেয়র এ এইচ এম খাইরুজ্জামান লিটন, বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সিমিন হোসেন রিমি এমপি, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ এমপি, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন এমপি।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানের সভাপতি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাসিম এমপি।
বিশেষ বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডাক্তার সৈয়দা জাকিয়া নুর (লিলি) এমপি, পারভীন জামান কল্পনা এমপি, নির্মল কুমার চ্যাটার্জি এমপি, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান, মেহেরপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও গাংনী উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ খালেক, মেহেরপুর-২ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য ডাক্তার এএসএম নাজমুল হক সাগরসহ জাতীয় ও স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় করেন, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক এমপি।
এর আগে জাতীয় নেতৃবৃন্দ মুজিবনগর স্মৃতিশৌধে পুস্পা মাল্য অর্পন করেন। এছাড়া অতিথিদের গর্ড অব অনার প্রদান করেন পুলিশ, আনছার ও ভিডিপি, বিএনসিসি, গার্লস গাইড সদস্যরা । সকাল ১০ টায় গীতিনাট্য “জল, মাটি ও মানুষ” উপস্থাপন করা হয়।
সকাল ৯ টার দিকে ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়েছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক মোজাম্মেল হক সর্বপ্রথম মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে পুষ্প মাল্য অর্পণ করেন।
এরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রী ও মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরহাদ হোসেন, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, সংসদ সদস্য ডাঃ সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি,বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে জেলা শাখার পক্ষে জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফারহাদ হোসেন, মেহেরপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষে জেলা প্রশাসক মোঃ শামীম হাসান, জেলা পুলিশের পক্ষে পুলিশ সুপার এস এম নাজমুল হক, মেহেরপুর জেলা আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পুষ্প মাল্য অর্পণ করা হয়।
মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ চত্বরে শেখ হাসিনা মঞ্চের সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।
মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জাতীয় সংগীতের সুরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী সিসিম হোসেন রিমি দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এ সময় সেখানে মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ প্রদর্শন করা হয়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা, বাংলাদেশ পুলিশ, বিজিবি, আনসার ব্যাটালিয়ান, মেহেররপুর সরকারি কলেজ ও মেহেরপুর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের বিএনসিসি, মেহেরপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় এবং মেহেরপুর সরকারি শিশু পরিবারের সদস্যরা মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ প্রদর্শন করেন। প্রধান অতিথি সালাম গ্রহণ করেন। মেহেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল) আব্দুল করিম প্যারেড পরিচালনা করেন।