চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনার ঐতিহ্যবাহী কেরু চিনিকল এলাকায় ইক্ষু রোপন ভরা মৌসুমে টিএসপি সার ও বীজ, মাটিশোধন, কীটনাশক চরম সংকট, সার না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে এলাকার কৃষকরা।
আজ সোমবার (২১ অক্টোবর) সকাল ১১ টার দিকে কেরু সার গোডাউন এলাকায় সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় আখ রোপনের জন্য অর্ধশতাধিক কৃষক সার না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছে। এরপরেও ২০/২৫ জন কৃষক সার আসবে ভেবে আলমসাধু ইজিবাইক ও পাখিভ্যান নিয়ে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। এ আখ রোপন ভরা মৌমুমে হঠাৎ হঠাৎ বৃষ্টির কারনে আখ রোপন ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে কেরু চিনকলের গোডাউন থেকে সার না পাওয়াই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে কৃষকরা।
এ বিষয়ে আখচাষী জিরাট গ্রামের মহাসিন আলী ২ একরসহ ও অন্যান্য গ্রামের কৃষক উজলপুরের রেজাউল ও বাদশা মিয়া ১ একর,আকন্দবাড়িয়া গ্রামের আব্দুল ২ একর ও একই গ্রামের গোলাম আলী ১ একর ,দক্ষিনচাদপুর গ্রামের বকুল হোসেন ৩ একর ,দর্শনা পারকৃষ্ণপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলাম ১ একর আখ লাগাবেন বলে সাংবাদিকদের জানান।
এছাড়া এ সব কৃষকরা জানান একটু সুষ্ক মৌসুম পেলেই আমরা জমি প্রস্তুত করে রেখেছি। কিন্তু কেরু এ্যান্ড কোম্পানীতে সার নিতে এসে সার পাচ্ছি না। আমরা সার না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে। এর ফলে আমরা আখচাষীরা ইক্ষু রোপন উপযুক্ত সময় হারিয়ে ফেলছি। ফলে একদিকে ব্যায় বেড়ে যাচ্ছে অন্যদিকে মাঠের কাজ আমাদের ব্যাহত হচ্ছে। এই কারনে একদিকে আমাদের ব্যায়ভার বাড়ছে। অন্যদিকে ইক্ষু রোপনের আগ্রহ পাচ্ছিনা এবং আখ লাগাতে মন চাচ্ছে না।
আখচাষীরা অভিযোগ করে আরও বলেন, প্রতিটা সারের বস্তায় ১কেজি ২ কেজি সার কম দিচ্ছে। ২০২১-২২ সালের পর থেকে আখ চাষ প্রায় ৫ গুন কমে গেছে। পাঁচটি কারণে আখ চাষ কমে যাচ্ছে। সময় মতো মিল থেকে চাষিদের মধ্যে সার বীজ সরবরাহ না করা, মিলে সিডিএ সংকট, বর্তমান বাজার দরের চেয়ে আখের মূল্য কম, উন্নত জাতের আখ না দিয়ে পুরাতন একই জাতের আখ সরবরাহ করা, অন্যদিকে ধান, পাট, ভুট্টার ভালো দাম পাওয়ায় চাষিরা আখ চাষ কমিয়ে দিয়েছে। ফলে আগামী মাড়াই মৌসুমে মিলটি মারাত্মক আখ সংকটে পড়তে পারে বলে কর্তৃপক্ষ মনে করছেন।
মিল সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২০-২১ থেকে ২০২৪-২৫ এ পর্যন্ত আখ রোপণ অর্ধেকে নেমে এসেছে। ২০২১ থেকে রোপন মৌসুমে মোট ৪ হাজার ৬২৭ একর জমিতে আখ রোপণ করা হয়েছে। এর মধ্যে চিনিকলের ১০টি কৃষি ও পরীক্ষামূলক খামারে মাত্র ৯৮৯ একর জমিতে আখ রোপণ করা হয়েছে। বাকি মিলজোন এলাকার চাষিরা রোপণ করেছে ৩ হাজার ৬৩৮ একর। যেখানে গত রোপণ মৌসুমে চিনিকল কর্তৃপক্ষ ও মিলজোন এলাকার আখচাষিরা মিলে ৮ হাজার ৫৩২ একর জমিতে আখ রোপণ করেছিল। যা এ রোপণ মৌসুমের চাইতে ৩ হাজার ৯০৪ দশমিক ৫০ একর জমিতে কম আখ চাষ হয়েছে।
আখ চাষ কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে কেরু চিনিকল আখচাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি আব্দুল হান্নান, সহ-সভাপতি ওমর আলী জানান, প্রতিমণ আখের মূল্য ৩০০ টাকা না করলে আখ চাষ সম্ভব না। তাছাড়া গত রোপণ মৌসুমে চাষিরা সময় মতো সার না পাওয়ায় আখ রোপণ অর্ধেকে নেমেছে। এরপর কেরুর কৃষি খামারের জমি কর্তৃপক্ষ আখ রোপণ না করে সাধারণ কৃষকের কাছে লিজ দিয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর কেরুতে এবারই প্রথম আখচাষ কম হলো বলে তারা জানালেন।
২০২৪-২৫ মাড়াই মৌসুমে আখ রোপনের টার্গেট নিয়ে মাঠে নেমেছে ৬ হাজার মেট্রিক টন। তার বীপরীতে দণ্ডায়মান আখ আছে কেরুর নিজস্ব জমিতে ২৭ হাজর মেট্রিক টন,পাবলিক আখচাষীদের দণ্ডায়মান আখ আছে ৪৩ হাজার মেট্রিক টন। মোট ৭০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই হবে জানায় জি এম কৃষি আশরাফুল আলম ভৃইয়া।
এবার কেরু এ্যান্ড কোম্পানী আখের মৃল্য নিধারন করেছে করেছে মন প্রতি ২শ ৪০ টাকা। বর্তমানে সবচেয়ে আখের মৃল্য কম বলে আখ চাষিরা জানায়। চাষীরা আরও বলেন আখের মন যদি ৩শ টাকা করে তাহলে চাষিরা আবার আখ লাগাবে।যদি আখের মৃল্য বৃদ্ধি না করে তাহলে চাষীরা আখ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।
এ বিষয়ে কেরু সার গোডাউন ইনচার্জ মাহাবুবুর রহমান বলেন, টি এস পি সার ও বীজ, মাটিশোধন কীটনাশক সংকট রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার অন্যান্য সারের সাথে ১শ বস্তা টি এসপি বিতরণ করেছি। সার ও কীটনাশক সংকট থাকায় আজ কৃষকদের সার দিতে পারছিনা। তবে সার আশার অপেক্ষায় আছি।
এদিকে জিম কৃষি আশরাফুল হক ভৃইয়ার নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষটি আমরা দেখছি। সার চাহিদার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যে কোন মুর্হতে সার লে আসবে।
এ বিষয়ে কেরু এ্যান্ড কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসান বলেন, টি এসপিসারের চাহিদা ডিডি করেছি। খুলনা থেকে জানালে আমরা গাড়ি পাঠিয়ে দিবো। তিনি আরও বলেন, বীজ ও মাটিশোধন কীটনাশক চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন সরবারহ করে। আশা করছি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পৌছে যাবে।