সবজিভান্ডার খ্যাত মেহেরপুরের সবজি যায় সারা দেশে। অথচ, সেই জেলার সবজির বাজারে এখন আগুন। সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা কেজি। সবজি বাজারে গিয়ে নিম্নবিত্ত মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত সবারই অবস্থা এখন নাজেহাল।
সপ্তাহের ব্যবধানে লাগামহীনভাবে দাম বাড়ার কারণে স্বস্তি ফিরছে না কিছুতেই। কাঁচাবাজার নিয়ে এমনটাই অভিযোগ ভোক্তাদের। বাজার মনিটরিং না থাকার কারনে সবজির বাজার অস্থির বলে মনে করছেন ক্রেতারা। বাজার মনিটরিং এর জোর দাবি জানান ভোক্তারা।
সাপ্তাহিক হাটের দিনে গতকাল মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) সকালে গাংনী সবজি বাজার ও গত সোমবার গাঁড়ডোব পুড়াপাড়া সাপ্তাহিক হাট, মেহেরপুর শহরের কাঁচাবাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি গোল বেগুন ১২০ টাকা, লম্বা বেগুন ১০০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, ঢেঁড়শ ৬০ টাকা, মুলা ৭০, পটোল ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি পেঁপে ৩০ টাকা, কচুর মুখী ৭০, টমেটো ১৬০, শিম ২০০ ও শসা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।
প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকায়, প্রতি পিস লাউয়ের জন্য গুনতে হচ্ছে ৫০ টাকা। এদিকে পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১১০ টাকা, রসুন ২৪০ টাকা, কলা (ইরি) ৩০ টাকা, কাঁচ কলা ৮০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, লতি (প্রতি আটি) ৮০ টাকা, কুমড়ার জালি (প্রতি পিচ) ৫০ টাকা, বরবটি প্রতি কেজি ১০০ টাকা, ঢেঁড়স ৭০, ঝিঙা ৬০ টাকা, ওল ৮০ টাকা, শসা ৪০ টাকা, মাটির নিচের আলু (হরিনপেয়ি) ২০০ টাকা, মাটির নিচের আলু (তিনপাতা) ৮০ টাকা, জলপাই ৬০ টাকা, ধুন্দল ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০ টাকা, ফুলকপি ১০০ টাকা, আদা ৩৪০ টাকা, করল্লা ৬০ টাকা।
এছাড়া লালশাকের আঁটি ২০ টাকা, প্রতি কেজি পুঁইশাক ৩০ টাকা, লাউশাক (প্রতি আটি) ৩০ টাকা, মুলাশাক (প্রতি আটি) ৩০ টাকা, ডাটাশাক (প্রতি আটি) ৩০ টাকা, কলমিশাক (প্রতি আটি) ১০-১৫ টাকা ও পালংশাক ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গাঁড়াডোব পুড়াপাড়া বাজারের সবজি ব্যবসায়ী মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, টানা বৃষ্টির কারণে মাঠকে মাঠ সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। যে কারণে, গত ১৫ দিন যাবৎ সবজির এই দাম বৃদ্ধি হয়েছে। তবে, এখন থেকে কমতে শুরু কেেরছে।
মেহেরপুর শহরের বড় বাজারের সবজি ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম ও জুলহাস হোসেন জানান, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সবজির দাম হঠাৎ করে ফড়িয়া আড়তদাররা বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাই বাজারে সবজি বিক্রি কমে গেছে।
নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েরই। ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পান।
আর বিক্রেতারা বলছেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমবে।
গাংনী উপজেলার সবজি গ্রাম সাহারবাটির সবজি চাষি মহিবুল ইসলাম, কামাল হোসেনসহ বেশ কয়েকজন চাষি জানান, এবার ১০ বিঘা, ৫ বিঘা ৩ বিঘা জমিতে কাঁচা মরিচ চাষ করেছেন। ঢাকা, চিটাগাং, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা এখানে এসে ট্রাক বোঝায় করে সাড়ে ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা কেজি দরে জমি থেকে কাঁচা মরিচ পাইকারি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এবার কাঁচা মরিচ উৎপাদন করে লাভবান হয়েছেন এলাকার চাষিরা। কিন্তু বাজারে এর দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় কৃষকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি লাভবান হচ্ছেন মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়া আড়তদারেরা।
মেহেরপুর বড় বাজারের আড়তদার আবুল বাশার খোকন বলেন, ‘মাঠ থেকে কাঁচা মরিচসহ অন্যান্য সবজি বাইরের ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তাই মাঠের ঝাল বাজারে এসে আরও ঝাঁজালো হচ্ছে। সবজির চাহিদা থাকায় এবার কৃষক ও ব্যবসায়ী উভয়ই লাভবান হচ্ছেন।’
মেহেরপুর তহবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবু হানিফ জানান, টানা অতিবৃষ্টির কারণে এবার জেলার বিস্তির্ণ সবজি ফসল নষ্ট হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানেও সাম্প্রতিক বন্যা অতিবৃষ্টির কারণে অন্যান্য ফসলসহ সবজি নষ্ট হয়েছে। ফলে আমাদের জেলার সবজির ওপর বাইরের চাপ বেড়েছে। বর্তমান বাজারে বাইরের ক্রেতাদের সংখ্যাও অনেক বেশি। তারা সরাসরি মাঠ থেকে সবজি কিনে ট্রাকে করে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিন ৩৫-৪৫ ট্রাক সবজি সারা দেশে বিক্রির উদ্দেশ্যে চলে যায়। যে কারণে স্থানীয় বাজারেও সবজির দাম বেড়েছে।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার জানান, মেহেরপুর জেলা সবজিখ্যাত। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও কৃষকরা সবজি চাষ করেছেন। সাম্প্রতিক টানা বর্ষণে সবজি খ্যাত কিছুটা নষ্ট হলেও উৎপাদন খুব একটা খারাপ হয়নি। এবার চাষিরা তাদের উৎপাদিত সবজি ফসলের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে বর্ষায় প্লাবিত হয়ে সবজি খেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মেহেরপুরের সবজির দাম ঢাকার সমান হয়ে গেছে। এবার সাড়ে ৪ হাজার ২৪১ হেক্টর জমিতে সবজির চাষ হয়েছে এবং ফলনও খুব ভালো হয়েছে। তবে বাজার ব্যবস্থাপনার সুষ্ঠু বণ্টন করতে পারলে সবজিসহ সব পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
মেহেরপুর জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজ বলেন, সবজি বাজার নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি সার্বিক) কে আহবায়ক করে টাস্কফোর্স গঠণ করা হয়েছে। যেখানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রয়েছে। বাজার মনিটারিং কমিটি বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে ইতোমধ্যে অভিযান শুরু করেছেন। আমরা আশা করছি দ্রুতই সব জিনিসের দাম সহনশীল পর্যায়ে পৌছাবে।