মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার মড়কা জাগরণ কলেজ থেকে এবছরের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় কোন শিক্ষার্থীই পাস করেনি। এর আগেও এই কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অধিকাংসই পাস করতে পারেনি।
জানা যায়, মড়কা জাগরণ কলেজ থেকে এ বছর ৫ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে কেউই পাস করতে পারেনি। এর আগে, ২০২২ সালে একই প্রতিষ্ঠান থেকে ৭ জন অংশ নিয়ে ৩ জন, ২০২২ সালে ৬ জন পরীক্ষা দিয়ে ২ জন এবং ২০২১ সালে ১৩ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কেউই পাস করতে পারেনি।
কোন পরীক্ষার্থী পাস না করা এবং প্রতিবার এতো কম সংখ্যক পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানার জন্য কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুস সালামের মোবাইলে একাধিকবার কল করে তাকে কলেজের আসার অনুরোধ করা হলেও তিনি প্রথমে জানান গ্রামের বাড়ি জুগিরগোফাতে আছেন। পরে তার গ্রামে গিয়ে ফোন দিলে তিনি জানান এইমাত্র মেহেরপুর শহরে এসেছেন।
তবে, তিনি আমার কলেজের একাদশ শ্রেনীতে ৫২ জন ও দ্বাদশ শ্রেনীতে ৬২ জন ছাত্র ছাত্রী ভর্তি রয়েছেন। নিয়মিত ক্লাশ করানো হয়। এতো ছাত্র ছাত্রী অধ্যায়নরত থাকলেও পরীক্ষায় অংশ নেন ৫ জন, ৭ জন, ৬ কেনো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, কলেজের ভর্তি হলেও শেষ অবধি লেখাপড়া ছেড়ে চলে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
গত বৃহস্পতিবার বিকালে কলেজে গিয়ে দেখা গেছে, কলেজটি বন্ধ। কলেজের বিল্ডীং আঙিনায় ময়লার স্তুপ। কক্ষগুলো বহুদিন না খোলার কারণে শ্রেনীকক্ষে ময়লা জমে রয়েছে।
এলাকার কিছু যুবক কলেজ মাঠটিতে ফুটবল খেলা করছেন। তাদের সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই যুবকরা জানান, কলেজটি শুরুর দিকে প্রচুর শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিল। কিন্তু বিগত বছরগুলোতে কলেজটি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এখানে শিক্ষার্থীরাও নেই কলেজও খোলা থাকেনা। কয়েকজন শিক্ষক মাঝে মধ্যে এসে কলেজ খুলে কিছু সময় কাটিয়ে চলে যান।
জানা গেছে, ২০০১ সালে মড়কা জাগরণ কলেজটি স্থাপিত হয়। কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন রোকনুজ্জামান টিপু। শুরুর দিকে কলেজটি জাঁকজমকভাবে শুরু হয়। প্রচুর পরিমাণ ছাত্র ছাত্রী ভর্তি হয়। কয়েক বছর যেতে না যেতেই শুরু হয় একটি মহলের ষড়যন্ত্র। কলেজের অধ্যক্ষ রোকনুজ্জামান টিপু ছাত্র শিবিরের রাজনীতি করার কারণে তাকে ষড়যন্ত্র করে বের করে দেন। তারপর থেকেই কলেজের অবস্থা লেজে গোবরে হয়ে পড়ে। এখানে কোনো ছাত্র ছাত্রী ভর্তি হয়না। শিক্ষক স্বল্পতার কারণে এখানে ক্লাসও হয়না। এখানে কিছু ছাত্র ছাত্রী ভর্তি দেখানো হয়ে থাকে। তাদের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তারা অধিকাংশই ব্যবসা বা মাঠে ঘাটে কাজ ও গৃহণী। যে কারণে, এখানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পাওয়া যায়না।
বিষয়টি নিয়ে গাংনী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হোসনে মোবারকের সাথে কথা হলে তিনি প্রথমেই বলেন এধরণের অবস্থা চলতে থাকলে কলেজটি অল্পদিনেই বন্ধ হয়ে যাবে। এমপিওভূক্ত হওয়ার তো প্রশ্নই আসেনা।
তিনি বলেন, কলেজ এমপিওভূক্ত হওয়ার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। পৌরসভা এলাকার বাইরে কোনো কলেজকে এমপিওভূক্ত করতে হলে কমপক্ষে ৩০ জন শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করতে হবে এবং পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে কমপক্ষে ২৫ জন। পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৭০ শতাংশ পাশ করতে হবে। এমনিভাবে পৌরসভা এলাকার বাইরে কোনো কলেজের এমপিওভূক্তকরণের জন্য ৪০ জন শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। সেখানে পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে ৩৫ জন। পাশের হার ৭০ শতাংশ থাকতে হবে। অথচ, মড়কা জাগরণ কলেজে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কলেজটি থেকে এযাবৎ পর্যন্ত শিক্ষা বোর্ডের এই শর্ত পুরণ করতে পারেনি। তারপরেও কলেজটি চলছে কিভাবে সেটা খুঁজে বের করতে হবে।
এ ব্যাপারে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহা বলেন, যশোর বোর্ডের আওতায় এইএসসি পরীক্ষার ফলাফলে গাংনী উপজেলার কলেজগুলোর ফলাফলের অবস্থা সর্বনিম্ন পর্যায়ে আছে। যেটা আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক। আমি এসএসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে পর্যায়ক্রমে বসেছি। আগামি সপ্তাহ থেকে কলেজগুলোর অধ্যক্ষদের ডাকা হবে। ফলাফল বিপর্যের কারণগুলো খুঁজে বের করা হবে। আসলে এতো খারাপ ফলাফলের জন্য আমরা কেউ দায় এড়াতে পারিনি।
এদিকে সম্প্রতি এইচএসসির প্রকাশিত ফলাফলগুলোতে দেখা গেছে একমাত্র গাংনী সন্ধানী স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রতিবারের মত তাদের সাফল্য এবারও ধরে রেখেছে। কলেজটি থেকে ৯১ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল। পাশ করেছে ৮৮ জন। পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে ৫ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৮ জন শিক্ষার্থী। কলেজটির পাশের শতকরা হার ৮৮.৮৮ শতাংশ। গাংনী সরকারি ডিগ্রী কলেজ থেকে পরীক্ষায় নিয়েছিল ৪২৬ জন শিক্ষার্থী। এখানে মোট পাশ করেছে ১৯৬ জন। অকৃতকার্য হয়েছে ২৩০ জন শিক্ষার্থী। এখানে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৩ জন। পাশের শতকরা হার ৪৬.০৩ শতাংশ। গাংনী মহিলা ডিগ্রী থেকে ২৬৯ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাশ করেছে ১২৩ জন। জিপিএ৫ পেয়েছে ৮ জন। কলেজটি থেকে অকৃতকার্য হয়েছে ১৪৬ জন। এখানে শতকরা ৪৫.৭২ শতাংশ পাশ করেছে। করদি ডিগ্রী কলেজ থেকে ১৫০ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাশ করেছে ৫৪ জন। কলেজটির ফলাফল শতকরা হার ৩৬.০০ শতাংশ। কাজিপুর ডিগ্রী কলেজ থেকে ২১৮ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাশ করেছে ৬৮ জন। কলেজের ফলাফল ৩১.১১ শতাংশ।তেরাইল জোড়পুকুরিয়া ডিগ্রি কলেজ থেকে ৮২ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাশ করেছে মাত্র ২৪ জন। কলেজটি থেকে অকৃতকার্য হয়েছে ৫৮ জন শিক্ষার্থী। এখানে ১ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। কলেজটির ফলাফল ২৯.৬২ শতাংশ। বিএন কলেজ থেকে ২৬ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাশ করেছে মাত্র ৫ জন। কলেজ থেকে অকৃতকার্যের সংখ্যা ২১ জন। পাশের মথকরা হার মাত্র ১৯.২৩ শতাংশ। গাংনী পাইলট স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ২০৫ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাশ করেছে ৬৮ জন। এখানে অকৃতক্র্য হয়েছে ১৩৭ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩ জন। পাশের শতকরা হার ৩৩.১৭ শতাংশ। বামন্দী নিশিপুর স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ১৬০ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাশ করেছে ৬১ জন। এখানে অকৃকার্য হয়েছে ৯৯ জন। এখানে পাশের শতকরা হার ৩৮.১২ শতাংশ। কুতুবপুর স্কুল এন্ড কলেজ থেকে পরীক্ষায় ৩৮ জন অংশ নিয়ে পাশ করেছে ২১ জন। এখানে অকৃতকার্য হয়েছে ১৭ জন। এখানে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩ জন। পাশের শতকরা হার ৫৫.২৬ । বিএম শাখায় গাংনী সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে ৮৭ জন অংশ নিয়ে ৭৮ জন পাশ করেছে। এখানে ফেল করেছে ৯ জন। পাশের শতকরা হার ৮৯.৬৫ শতাংশ। তেরাইল-জোড়পুকুরিয়া ডিগ্রি কলেজ থেকে ৬৯ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাশ করেছে ১৭ জন শিক্ষার্থী। কলেজের শতকরা পাশের হার ২৪.৬৩ শতাংশ। গাংনী পাইলট স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ১১৪ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাশ করেছে ১০০ জন। এখানে অকৃতকার্য হয়েছে ১৪ জন শিক্ষার্থী। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫ জন শিক্ষার্থী। পাশের শতকরা হার ৮৮.১৭ শতাংশ। গাংনী টেকনিকেল এন্ড বিএম কলেজ থেকে পরীক্ষায় ৪৩ জন অংশ নিয়ে ৩২ জন পাশ করেছে। ফেল করেছে ১১ জন। পাশের শতকরা হার ৭৪.৪১ শতাংশ। ধানখোলা টেকনিকেল এন্ড বিএম কলেজ থেকে ৩৮ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাশ করেছে ২৯ জন। কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ১ জন ও অকৃতকার্য হয়েছে ৯ জন শিক্ষার্থী। এখানে পাশের শতকরা হার ৭৬.৩১ শতাংশ। হাড়াভাঙ্গা ডিএইচ ফাজিল মাদ্রাসা থেকে ২৯ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাশ করেছে ২০ জন। এখানে ৯ অকৃতকার্য হয়েছে। পাশের শতকরা হার ৬৮.৯৬ শতাংশ।
এদিকে গাংনী সিদ্দিকিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা থেকে ২৪ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাশ করেছে ২৩ জন। এখানে অকৃতকার্য হয়েছে মাত্র ১ জন শিক্ষার্থী। জিপিএ৫ পেয়েছে ১ জন। পাশের শতকরা হার ৯৫.৮৫ । হাড়াভাঙ্গা ডিএইচ ফাজিল মাদ্রাসা থেকে পরীক্ষায় ১৬ জন অংশ নিয়ে ১৫ জন পাশ করেছে। এখানেও ফেল করেছে মাত্র ১ জন শিক্ষার্থী। পাশের শতকরা হার ৯৩.৭৫ জন। মানিকদিয়া ১১ পাড়া আলীম মাদ্রাসা থেকে ১৮ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাশ করেছে ১৫ জন। এখানে অকৃতকার্য হয়েছে ৩ শিক্ষার্থী। পাশের শতকরা হার ৮৩.৩৩ শতাংশ।