যেকোনো প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে একজন নারী নিজ পায়ে দাঁড়াতে পারছে: কামারুল এমপি

কুষ্টিয়া-২(মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনের সংসদ সদস্য কামারুল আরেফিন বলেছেন, যেকোনো প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে একজন নারী নিজ পায়ে দাঁড়াতে পারছে।

তিনি বলেন, এখন আর নারীদের বসে থাকার সময় নেই, যেকোনো প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে একজন নারী নিজ পায়ে দাঁড়াতে পারছে এবং অর্থনৈতিকভাবে নিজে স্বাবলম্বী হয়ে পরিবার ও দেশের কাজে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় মহিলা সংস্থা কুষ্টিয়া জেলা কেন্দ্রের তৃণমূল পর্যায়ে অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে নারী উদ্যোক্তাদের বিকাশ সাধন প্রকল্পের আয়োজনে মিরপুর উপজেলা পরিষদের হলরুমে প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার নারীদের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করছে আর তা সুন্দরভাবে বাস্তবায়ন করে নারীরা যাতে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারে সেজন্য কাজ করে যাচ্ছে।

জাতীয় মহিলা সংস্থা কুষ্টিয়া জেলার সভাপতি জেবুন নেসা সবুজের সভাপতিত্বে এসময় মিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) আবুল কাশেম জোয়ার্দার, মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মর্জিবা খাতুন, জাতীয় মহিলা সংস্থা কুষ্টিয়া জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী কর্মকর্তাসহ তৃণমূল পর্যায়ে অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে নারী উদ্যোক্তাদের বিকাশ সাধন প্রকল্পের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা ও প্রশিক্ষণার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয় মহিলা সংস্থা কুষ্টিয়া জেলার সভাপতি জেবুন নেসা সবুজ বলেন, কুষ্টিয়ায় তৃণমূল পর্যায়ে অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে নারী উদ্যোক্তাদের বিকাশ সাধন প্রকল্পের আওতায় নারীদের বিউটিফিকেশন, ফ্যাশন ডিজাইন, ক্যাটারিং, বিজনেস ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ই-কর্মাস, ইন্টেরিয়র ডিজাইন অ্যান্ড ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এই ৫টি বিষয়ে প্রশিক্ষণ চলমান রয়েছে আর এই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে অসংখ্য নারী তাদের কর্মসংস্থানের নতুন যাত্রা শুরু করেছে। এবং এই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নারীদের দক্ষতা, আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পাচ্ছে আর ব্যবসা ও কর্মসংস্থানের কলা কৌশল শিখে তৃণমূল পর্যায়ের নারী উদ্যাক্তাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও বিকাশ সাধন তরান্বিত হচ্ছে।




চুয়াডাঙ্গায় বিএনপি-জামায়াতের ৪৭ নেতা-কর্মী কারাগারে

চুয়াডাঙ্গায় নাশকতা মামলায় বিএনপি-জামায়াতের ৪৭ নেতা-কর্মীকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। হাইকোর্ট থেকে নেওয়া আগাম জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নিম্ন আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে জেলা ও দায়রা জজ মো. জিয়া হায়দার তা নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এসময় ৩ নেতা-কর্মীর জামিন দেন তিনি।

এদিকে, একে একে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিলে হাজিরা দিতে আসা প্রায় ৫৩ জন নেতা-কর্মী আদালত থেকে পালিয়ে যান।

বিএনপি দলীয় আইনজীবী অ্যাড. শাহাজাহান মুকুল জানান, নাশকতা মামলায় হাইকোর্ট থেকে ৬ সপ্তাহের আগাম জামিনে ছিলেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। আগামী রোববার (৩১ মার্চ) আগাম জামিনের মেয়াদ শেষ হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার ১০৭ জন চুয়াডাঙ্গা জেলা জজ আদালতে হাজির হয়ে পুনরায় জামিন আবেদন করেন। এদের মধ্যে ৩ জনকে জামিন ও ৪৭ জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন জেলা ও দায়রা জজ মো. জিয়া হায়দার। এসময় আদালত থেকে ৫৩ জন নেতা-কর্মী হাজিরা না দিয়ে চলে যান। তিনি বলেন, তারা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সদস্যসচিব শরীফুজ্জামান শরীফ বলেন, বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকার বিচার বিভাগ, পুলিশ-প্রশাসনসহ সবকিছু হাতের মধ্যে নিয়ে নিয়েছে। মানুষের বিচার বিভাগের প্রতি যে আস্থা ছিল, সেটিও হারিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের নেতা-কর্মী প্রকৃত ন্যায়বিচার পাননি। আদালত ফরমায়েশিভাবে নেতা-কর্মীদের কারাগারে পাঠিয়েছেন।




সংকুচিত হচ্ছে সাংবাদিকতা ?

মফস্বল শহরে আমার সাংবাদিকতা প্রায় ২৮ বছর। এসসসি পাশের গন্ডি পেরিয়ে একাদশ শ্রেনীতে পড়াকালীন সময়ে কুষ্টিয়া জেলা শহর থেকে প্রকাশিত একটি স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা দিয়ে আমার হাতে খড়ি হয়েছিল। এরপর বেশ কয়েটি জাতীয় দৈনিক, ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও পরে অনলাইন মিডিয়া। মুলত প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন সবগুলো মিডিয়াতে কাজ করার কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে।

এর মধ্যে মেহেরপুর থেকে প্রকাশিত এ অঞ্চলের বহুল প্রচারিত দৈনিক মেহেরপুর প্রতিদিনের বার্তা সম্পাদক ও গাংনী থেকে প্রকাশিক আমাদের সূর্যোদয় পত্রিকাতে নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও কাজ করার সুযোগ হয়েছে।
সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা আমাকে অনেকটাই গ্রাস করে ফেলেছে বলা যেতে পারে। যাই হোক, সংবাদপত্র, সাংবাদিক পাঠক, রাজনীতিক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা নানাবিধ বিষয় নিয়ে আজকে দু একটি কথা লিখবো বলেই কম্পিউটার নিয়ে বসা। একজন সাংবাদিক তার দৈনন্দিন কর্মকান্ডের মধ্যে দিয়ে প্রতিনিয়ত হাজারও পাঠকের বিচারের মুখোমুখি হতে হয়। একজন পাঠক একজন সচেতন সাংবাদিকের কাছে সব সময় বিচারকের আসনে থাকেন। অর্থাত একজন সাংবাদিকদের প্রতিনিয়ত বিচারকের মুখোমুখি হয়ে থাকেন।

বিভিন্ন ঘটনাবলী, বিষয়, ধারণা, মানুষ, প্রকৃতি, পরিবেশ, সমাজ, রাষ্ট্র সম্পর্কিত প্রতিবেদন তৈরি ও পরিবেশন, যা উক্ত দিনের প্রধান সংবাদ এবং তা সমাজে প্রভাব বিস্তার করে। এই পেশায় শব্দটি দিয়ে তথ্য সংগ্রহের কৌশল ও সাহিত্যিক উপায় অবলম্বনকেই সাংবাদিকতা বোঝায়।

সাংবাদিকতা একটি মহৎ পেশা। সংবাদপত্রকে রাস্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভবলা হয়ে থাকে। সাংবাদিকদের দেশ ও জাতির বিবেক,সমাজের আয়না, দর্পণ, বিবেক, তৃতীয় চোখ নানাভাবে বিশেষায়িত করে থাকেন। সাংবাদিকতা পেশা মহৎ ও সম্মানজনক হলেও এটি এখন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

একজন “কলম সৈনিক” সাংবাদিকতা ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও পেশাগত দায়িত্ব পালন করে যান। দেশ ও মানবতার কল্যাণে কাজ করতেই সমাজের সকল বিষয়ে জাতির কাছে তুলে ধরতে সাংবাদিকরা কাজ করে থাকেন।

সাংবাদিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালন করেও কারো মনজয় করতে পারেন না, ছোট একটি ভুল করলেই সাংবাদিকদের উপর হামলা, মামলা করা হয়, এমনকি সাংবাদিককে হত্যার শিকার হতে হয়।
রাজনৈতিক দলের কতিপয় নেতা, তাদের ক্যাডার, সন্ত্রাসী ও দূর্বৃত্তদের হামলা শিকার হন হরহামেশাই। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদেরও রোশানলে পড়তে হয় মাঝে মাঝে।

সাংবাদিকরা সারাক্ষণই অসহায়, নিপিড়ীত, নির্যাতিত মানুষের খবর নেন। তাদের দু:খ কষ্টগুলো মানুষের সামনে তুলে ধরেন। কিন্তু, কেউ কি খবর নিয়েছেন, কেমন আছেন সাংবাদিকরা? জনগণের কল্যাণে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালন করছেন, এর বিনিময়ে কি পাচ্ছেন? হামলা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, হয়রানিমূলক মামলার শিকার হচ্ছেন।

আমরা রাজধানীতে নিজ বাসায় দূর্বৃত্তদের নারকীয় হত্যাকান্ডের শিকার সাগর রুনির কথা না হয় বাদ দিলাম। তাদেরকে নিয়ে শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোও অনেক কথা বলেছে। এই নির্মম হত্যাকান্ডের বিচার দাবিতে দেশব্যাপী মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছেন সাংবাদিকরা। মামলাটি তদন্ত চলছে বছরের পর বছর। তদন্ত রিপোর্ট প্রদানের জন্য শতাধিকবার সময় নেয়া হয়েছে কিন্তু এখনো অধরা রয়ে গেছে এই হত্যাকান্ডের আসল ঘটনা।

নিশ্চয় মনে আছে, জামালপুরে নিহত সাংবাদিক গোলাম রব্বানি নাদিমের কথা। গত বছরের ১৪ জুন রাত সোয়া ১০টার দিকে একদল সন্ত্রাসীর এলোপাতাড়ি মারধরে মারাত্মক আহত হন এবং পরের দিন ১৫ জুন ময়মনসিংহ মেডিকেল মারা যান।

সাম্প্রতিক সময়ে সাংবাদিকদের উপর হামলা, মিথ্যা মামলায় জেল জরিমানা ও অব্যাহত হুমকির বিষয়টি সাংবাদিকদের আবারও ভাবিয়ে তুলছে।

চিটাগং এর একটি আবাসিক হোটেলের মাদক ব্যবসা নিয়ে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের এনসিএ ভিত্তিক অনুষ্ঠান “তালাশ” টিমের সিনিয়র প্রতিবেদক নাজমুল সাঈদ ও তার সহকর্মী ক্যামেরা পার্সনের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। কয়েকদিন পর ঢাকা তিতুমীর কলেজের এক অনুষ্ঠানে ছাত্র লীগের এক নেতা ও তার সহকর্মীদের হামলার শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন সময়ের আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক সাব্বির হোসেন, দৈনিক খোলা কাগজ পত্রিকার কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের স্থানীয় প্রতিনিধি সেলিম রেজা রনির উপর হামলা করে সন্ত্রাসীরা। শুধু সেলিম রেজা রনি নয়, তার মাকেও রক্তাক্ত করা হয়। কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে দূর্বৃত্তদের হামলার শিকার হন বেসরকারি টিভি এটিএন বাংলার প্রতিবেদক তুহিন ও তার ক্যামেরা পার্সন। এর আগে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে দূর্বৃত্তদের হামলার শিকার হন বেসরকারি টিভি চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের মেহেরপুর জেলার স্টাফ রিপোর্টার রাশেদুজ্জামান ও জবাবদিহি পত্রিকার মেহেরপুর জেলা প্রতিনিধি সিরাজুদ্দোজা পাভেল নামের দুই সাংবাদিক। কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার একটি গ্রামে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে এলাকার চিহ্নিত একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের হামলার শিকার হন বেসরকারি টিভি চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি শরিফ বিশ্বাস, কালবেলা পত্রিকার সাংবাদিক এসআই সুমন সাংবাদিক খন্দকার বিদ্যুৎ। পাবনার সাথীয়া উপজেলার একটি গ্রামে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হন কালবেলার সাংবাদিক মানিক মিয়া, সংবাদ প্রতিদিনের সাংবাদিক খালেকুজ্জামান পারভেজ, আরটিভির প্রতিনিধি তাইজুল ইসলাম, মোহনা টিভির প্রতিনিধি ইকবল হোসেন,আনন্দ টিভির মনোয়ার হোসেন ও মানবকন্ঠের জেলা প্রতিনিধি এমজে মুলক।

এইগুলো ছিল দূর্বৃত্তদের দ্বারা সাংবাদিক নিগৃহীতের ঘটনা। প্রশাসনের কাছেও হেনস্তার শিকার হচ্ছেন সাংবাদিকরা। সাম্প্রতিক সময়ে লালমনির হাটের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল নোমানের কাছে তথ্য চাওয়ায় পাঁচ সাংবাদিককে আটকে রেখে নানাভাবে গালাগালি ও ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে জেলে দেওয়ার হুমকি দেন। সাংবাদিকরা হলেন, মাইটিভি ও অবজারভার প্রতিনিধি মাহফুজ সাজু, কালবেলা প্রতিনিধি এসকে সাহেদ, এশিয়ান টিভির প্রতিনিধি নিয়ন দুলাল, সাংবাদিক ফারুক হোসেন ও আবরদুল মান্নান। পরে ওই জেলার এডিসি এসে তাদের মুক্ত করেন।

তবে এর মধ্যে সবচেয়ে দু:খজনক ঘটনা ঘটেছে শেরপুরের নকলা উপজেলায়। শেরপুরের নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া উম্মুল বানিনের কাছে তথ্য চেয়ে আবেদন করার ঘটনায় এক সাংবাদিককে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

গত ৫ মার্চ নকলা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী হাকিম মো. শিহাবুল আরিফ তাকে এ দণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। দণ্ড পাওয়া শফিউজ্জামান রানা দৈনিক দেশ রূপান্তরের নকলা উপজেলা সংবাদদাতা।

এর আগে কুড়িগ্রামের নিজ বাড়ি থেকে ঢাকা ট্রিবিউন সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে তুলে নিয়ে একবছরের জেল দেন জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট।

রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় ডিসি অফিসের দুই-তিনজন ম্যাজিস্ট্রেট ও বেশ কয়েকজন আনসার সদস্য। তিনজন ম্যাজিস্ট্রেটসহ ১৫-১৬ জন আনসার সদস্য দরজা ভেঙে তার বাড়ির ভেতর ঢুকে আরিফুলকে মারতে থাকে এবং একপর্যায়ে তাকে তুলে নিয়ে যায় সাংবাদিকদের উপর হামলা মালা, নির্যাতন ও হত্যা নতুন কোনো ঘটনা নয়।

অপরাধবিষয়ক যে কোনো সংবাদ, বিশেষ করে যেখানে রাজনৈতিক, সামাজিক ও আর্থিকভাবে ক্ষমতাবানরা যুক্ত আছেন, তাদের বিষয়ে অনেক অভিযোগ পেলেও এখন আর সেসব অনুসন্ধানে খুব বেশি উৎসাহ পান না সাংবাদিকরা। কারণ অনুসন্ধান করে রিপোর্ট প্রকাশ করলেও ওই রিপোর্টের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তাকে ফাঁসানো হতে পারে—এমন ভয়ে থাকেন। অর্থাৎ একধরনের স্বনিয়ন্ত্রণ বা সেলফ সেন্সরশিপ সাংবাদিকদের আঁকড়ে ধরছে। এখন কম ঝুঁকিপূর্ণ বা ঝুঁকিমুক্ত রিপোর্ট করবেন।

বস্তুত ‘সাংবাদিকতা’ করা এখন আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে কঠিন। বিশেষ করে ঢাকার বাইরে। ‘সাংবাদিকতা’ শব্দটিকে বন্ধনীর ভেতরে রাখার কারণ এখানে সাংবাদিকতা বলতে প্রকৃত সাংবাদিকতাকে বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ যে সাংবাদিকতার মানে দল-মত-আদর্শ ও ভয়-ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে ফ্যাক্ট অনুসন্ধান করে নির্মোহভাবে সঠিক তথ্য বের করে আনার চেষ্টা। যে সাংবাদিকতায় প্রশংসার চেয়ে প্রশ্ন বেশি। যে সাংবাদিকতায় প্রশংসা থাকলেও সেখানে যৌক্তিক সমালোচনা, প্রশ্ন ও সংশয় প্রকাশেরও সাহস থাকে। সেই সাংবাদিকতা করা এখন কেন অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে কঠিন। কেন কঠিন—তার উত্তর খোঁজার জন্য এই লেখা।

রাষ্ট্রের সাধারণ ও নিরীহ মানুষ কাউকে হত্যা করতে পারে না। হত্যা করতে হিম্মত লাগে। সাহস লাগে। হত্যা করার পরে পার পেয়ে যাওয়ার মতো রাজনৈতিক, সামাজিকও আর্থিক সক্ষমতা লাগে। যে সক্ষমতার কারণেই প্রায় এক যুগেও সাগর-রুনির হত্যাকারীদের ধরা সম্ভব হয়নি। এমনকি কারা তাদের খুন করলো সেটিও অধরা।

মেহেরপুর-২ আসনের সাবেক সাংসদ মকবুল হোসেন দীর্ঘদিন যাবৎ একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। ওই বাড়ির মালিকের অভিযোগ ছিলো এমপি মকবুল হোসেন অনেকটা জোর করে বাড়িট দখলে রেখেছেন। তাকে বাড়ি দেওয়া হচ্ছে না। বাড়ির মালিকের অভিযোগের ভিত্তিতে মেহেরপুর প্রতিদিনে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। ক্ষিপ্ত হয়ে মকবুল হোসেনের নিকট আত্মীয় পত্রিকাটির প্রকাশক এমএএস ইমন, সম্পাদক ইয়াদুল মোমিনসহ প্রতিনিধি আলামিন হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা ঠুকে দেন।
এদিকে সম্প্রতি মেহেরপুর প্রতিদিনের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মাহবুব চান্দু মেহেরপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র মোতাচ্ছিম বিল্লা মতুর পরিচালিত ক্লিনিকের তথ্য অনুসন্ধান করতে গিয়ে মেয়র মতুর রোশানলে পড়েন। তার উপর হামলা করা হয়েছে। শুধু হামলার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, মতু তার ক্লিনিকের ম্যানেজারকে বাদী করে সাংবাদিক মাহবুব চান্দুর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে মামলা ঠুকে দেন।

২০১৭ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে গুলিতে নিহত হন দৈনিক সমকালের শাহজাদপুর প্রতিনিধি আবদুল হাকিম শিমুল। শোনা যায়, শিমুল দুই গ্রুপের সংঘর্ষের সময় অস্ত্র মহড়ার ছবি তোলার সময় পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা হালিমুল হক মিরুর অস্ত্রহাতে ছবি তুলছিলেন, এতে পৌর মেয়র মিরু রাগে সাংবাদিক শিমুলকে লক্ষ্য করে গুলি করেন। যেভাবেই হোক ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ফলেই এ ঘটনা, এটিই সত্য। সেই খুনের তালিকায় যুক্ত হয়েছে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরের প্রতিনিধি গোলাম রব্বানি নাদিমের নাম।

গত বছরের ১৪ জুন রাত সোয়া ১০টার দিকে একদল সন্ত্রাসীর এলোপাতাড়ি মারধরে তিনি নিহত হন।
এই হত্যাকাণ্ডের জন্য পরে সাধুরপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু গ্রেফতার হন। তিনি মাহমুদুল আলম সাধুরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগেরও সাধারণ সম্পাদক।
সিরাজগঞ্জের সাংবাদিক শিমুল হত্যার আসামিরা কিছুদিন জেল খেটে বেরিয়ে এসেছেন। সাংবাদিক হত্যা কিম্বা নির্যাতন যাইহোক, সাগর-রুনির মতো এসব মামলাগুলোও বছরের পর বছর ঝুলতে থাকবে। স্বজন ও সহকর্মীরা প্রতি বছর বিচারের দাবিতে রাস্তায় মানববন্ধন করবেন। প্রকৃত সাংবাদিকতা করা দিনদিন যেকোনো সময়ের চেয় কঠিন হয়ে পড়ছে।

এবার আসি, সরকারি অফিস থেকে তথ্য পাওয়া প্রসঙ্গে। সরকারি অফিসে তথ্য পাওয়া এখন খুবই কঠিন। যদিও দেশে তথ্য অধিকার আইন পাশ হয়েছে। তথ্য অধিকার আইন সাংবাদিকের তথ্য পাওয়ার পথ আরও কঠিন করে তুলেছে বলে মনে করেন সাংবাদিকরা।

এই আইন পাশ হওয়ার পর ছোটখাটো কোনো তথ্যের জন্য গেলেও সরকারি কর্মকর্তারা নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে বলেন। আবেদন করার পর নানা কারন দেখিয়ে দিনের পর দিন ঘুরাতে থাকেন। এক পর্যায়ে তারা জানিয়ে দেন যে, তথ্যটি সন্নিবেশিত নেই। অথবা কোনো উত্তরও দেবেন না। এর বিরুদ্ধে আপিল এবং তথ্য কমিশনে যাওয়ার জন্য যে ধৈর্য ও সময় লাগে, সেটি অনেকের পক্ষেই ব্যয় করা সম্ভব হয় না। অর্থাৎ আইনি কাঠামোই সাংবাদিকতাকে কঠিন থেকে কঠিনতর করে তুলেছে।

কোনো ঘটনার ছবি তুলতে গেলে সেখানে পুলিশ বা সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা এসে বাধা দিচ্ছেন, এরকম অভিযোগ নিয়মিতই শোনা যায়।

অবশ্য সাংবাদিকতার প্রধান শত্রু এখন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। এ আইনের এমনই সব ধারা রয়েছে যেগুলো দিয়ে যে কোনো একটি টেলিভিশন বা পত্রিকা কোনো একটি সংবাদ প্রকাশ বা প্রচার করলেই মামলা করার সুযোগ রয়েছে। অবশ্য একটু ঘুরিয়ে সুযোগটা রাখা হয়েছে। ছাপা পত্রিকা বা টেলিভিশনের খবরের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দেওয়া যায় না, কিন্তু ওই খবরটিই যদি কেউ ফেসবুকে শেয়ার করেন বা ওই টেলিভিশন বা পত্রিকার অনলাইন মাধ্যমে প্রকাশিত হয়, তাহলে ডিজিটাল আইনে মামলা করা যায়। অথচ সংবাদটি ভুল হলে তার বিরুদ্ধে পত্রিকায় প্রতিবাদ পাঠানো, প্রেস কাউন্সিলে অভিযাগ দায়ের এমনকি মানহানির মামলা করারও সুযোগ আছে। কিন্তু ক্ষমতাবানরা এখন আর ওইসব ভদ্রোচিত পথে যেতে নারাজ। তারা চান তাৎক্ষণিক শাস্তি এবং এমন একটি ভয়ের পরিবেশ জারি রাখতে যাতে কেউ ক্ষমতাবানদের নিয়ে কোনো ধরনের সমালোচনামূলক লেখা, অপরাধের অনুসন্ধান করার সাহস না করে। কারণ ডিজিটাল আইনে মামলা দিলে তাতে সাংবাদিকদের হয়রানি ও নাজেহাল করা অনেক সহজ। এর শাস্তিও কঠিন। সাধারণত এই মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হলে সহজে জামিনও মেলে না। এই আইনটি পাস হওয়ার পরে এ পর্যন্ত সাংবাদিকতার প্রধান শত্রু এখন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন।

একটি অনলাইন পত্রিকার এক তথ্যে জানা গেছে, ২০১৮ সালে এই আইনটি পাস হওয়ার পর ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সারাদেশে ৭ হাজার ১টি মামলা হয়েছে। যেটি জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন খোদ আইনমন্ত্রী আনিসুল হক নিজেই। আর এসব মামলার বিরাট অংশেরই ভিকটিম হয়েছেন সাংবাদিকরা। এটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নয়, বরং গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ আইন। ক্ষমতাবানরা গণমাধ্যমকে ‘সাইজ’ করার জন্য এই অস্ত্রটি ব্যবহারেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

সব আমলে সব সরকারই চায় গণমাধ্যম বা সাংবাদিকরা তার পক্ষে থাকবে। প্রশ্ন বাদ দিয়ে শুধু প্রশংসা করবে। (অসমাপ্ত)

লেখক: মেহেরপুর প্রতিদিনের জৌষ্ঠ প্রতিবেদক




মেহেরপুর মাটি বহনকারি ট্রলির চাপায় শিশুর মৃত্যু

মেহেরপুরের গাংনী পৌর এলাকার চৌগাছায় মাটি বহনকারি শ্যালো ইঞ্জিন চালিত ট্রলির চাপায় সোহাগ হোসেন (৫) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে। সোহাগ চৌগাছার গোলাম আলীর ছেলে।

নিহত সোহাগ হোসেনের স্বজনরা জানান, সোহাগ একটি সজনে গাছের পাতা পাড়তে রাস্তা পার হচ্ছিল। এসময় পিছন দিক থেকে একটি দ্রুতগামী মাটি বহনকারি ট্রলি তাকে চাপা দেয়। এসময় সোহাগ হোসেনকে মূমুর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আব্দুল্লাহ আল মারুফ তাকে মৃত ঘোষনা করেন। শিশু সোহাগের মৃত্যুর খবর শুনে সোহাগের পিতা গোলাম হোসেন ও মাতা রেজিয়া খাতুন বার বার মুর্ছা যাচ্ছিলেন।

গাংনী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি ) তাজুল ইসলাম বলেন, ট্রলি চাপায় এক শিশুর মৃত্যুর খবর শুনে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে এবং ট্রলি চালককে আটকের চেষ্টা চলছে। তিনি আরও বলেন, নিহত শিশুর পরিবার থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।




আমঝুপিতে ত্রৈ-মাসিক অগ্রগতি পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত

‘‘সবারজন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরা, ঝরে পড়া রোধ ও বাল্যবিবাহ রোধে ইয়ুথ ফোরাম নানা ভাবে কর্মসূচী গ্রহন ও বাস্তবায়ন করছে”।  আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে মানব উন্নয়ন কেন্দ্র (মউক) এর হলরুমে ইয়ুথ ফোরাম এর দায়-দায়িত্ব বিষয়ক প্লানিং ও ত্রৈ-মাসিক অগ্রগতি পর্যালোচনা সভার আয়োজন করা হয় ।

গনসাক্ষরতা অভিযান এর সহায়তায় মানব উন্নয়ন কেন্দ্র মউক এ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে।

এই সভায় সভাপতিত্ব করেন মানব উন্নয়ন কেন্দ্র (মউক) এর নির্বাহী প্রধান আশাদুজজ্জামান সেলিম। সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন মানব উন্নয়ন কেন্দ্র (মউক) এর ডেপুটি মনিটর নাফিজ আহম্মদ। সভায় মেহেরপুর জেলার সার্বিক শিক্ষার সুযোগ, শিক্ষার বাস্তবতা, ঝরেপড়া রোধ, শিশুদের বিদ্যালয়ে আনন্দঘন পরিবেশে পাঠদান, বিদ্যালয়ে স্বচ্ছতা, দিহিতা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে এবং বাল্যবিবাহ রোধে ইয়ুথদের ভূমিকা বিষয়ে বিশদ ভাবে আলোচনা করা হয়।

মানব উন্নয়ন কেন্দ্র (মউক) এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোছাঃ কাজল রেখা, প্রকল্পের সহকারী প্রোগ্রাম অফিসার আশিক বিল্লাহ ও চাঁদ তারা সূর্য, গণমাধ্যম কর্মীসহ মেহেরপুর সদর উপজেলার আমদহ, আমঝুপি ও বারাদী ইউনিয়নের যুব প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।




মানুষের গল্প

প্রতিদিন নতুন গল্পের গন্ধের জন্য বাতাস হাতড়াই
নতুন প্রেম, নতুন বিরহ নতুন বিদ্রোহ বিপ্লবের গল্প
কবিতার মত কঠিন- গভীর কিছু আসেনা মাথায়
কিন্তু এলোমেলো হাওয়ায় হারিয়ে যায় গল্পগুলোও
প্রেম প্যাচপেচে পচা পাতার মত পায়ের তালুতে
বিরহ খুনির রক্তবর্ণ ভীষণ চোখের সকেটে সেঁটে আছে
ভালোবাসার আলোর স্নিগ্ধতা দেখিনা কোথাও
আগুনের আভাস দেখি, পোড়া গন্ধ আসে নাকে
শরীরী নারীর কাছে শুনি অলৌকিক প্রেমের গান
পাশেই এলিয়ে থাকে টাকাওয়ালার ক্লান্ত তৃপ্ত শরীর
বিপ্লবের পতাকায় বানানো অন্তর্বাস পরে পরম আরামে
প্রাসাদে ঘুমায় একদা তুখোড় তুবড়ি ছোটানো বিপ্লবী
বিদ্রোহের মিছিলে মুষ্টিবদ্ধ হাত উত্তোলিত হয় না আর
ক্ষমতার কালো কাপড়ে মোড়ানো হাত পাতে ভিখিরি তারুণ্য
খুন হতে দেখে ক্ষিপ্র পায়ে পালায় মানবাধিকার নেতা
পড়ে থাকা আহত মানুষ লাফিয়ে ডিঙ্গায় মানবতাবাদী লেখক।
আমার গল্পের জন্য গোছানো কোন কাহিনি পাইনা
সফল-সুন্দর চরিত্রের বিকাশ ঘটাতে পারি না কিছুতেই
আমার গল্পের প্লট দখল করে থাকে অবাঞ্ছিত কাহিনি
আমার গল্পের জমি দখল করে দাবড়ে বেড়ায় ইঁদুর- ছুঁচো
আমার আর কোনদিন গল্প লেখা হলো না, মানুষের গল্প।




খেজুর কাহিনী

এই ছেলে তুমি চললে কোথায়?
–মসজিদে যাই,
এক বড়লোক ইফতারিতে খেজুর দেবে তাই!
ও…আচ্ছা,
তোমার বাড়ির ইফতারিতে বুঝি খেজুর নাই?
–না গো বাবু না! আমার আব্বা কি করে খেজুর কিনবে বলো?
খেজুর যে হাজার টাকা কেজি!বাপটা আমার মুনিশ খেটে খায়,
খেজুর কেনার মত টাকা বাপের কাছে নাই!
বাবু,,,বাপটা আমার বড্ড নিরুপায়!
আচ্ছা বাবু, তুমি কি জানো, খেজুর খাওয়া হালাল না হারাম?
–কেন,তুমি জানোনা খেজুর খাওয়া তো হালাল!
খেজুর খাওয়া হারাম হতো যদি!
মনটা খারাপ করতো না মা হাসতো নিরবধি!

লেখক: ছড়াকার, মেহেরপুর প্রতিদিন।




ট্রুকলার নম্বর লুকিয়ে রাখার কিছু সহজ উপায়

ট্রুকলার বর্তমান সময়ে ব্যবহারকারীদের কাছে জনপ্রিয় মাধ্যম। এ মাধ্যমে অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসলে সহজেই পরিচিতি জানা যায়। ফলে কলটি রিসিভ করা কতটা জরুরি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন ব্যবহারকারী। এ ছাড়াও স্প্যাম কলগুলো করা যায় ব্লক।

যদিও গোপনীয়তাসংক্রান্ত কারণে অনেকেই নিজের ট্রুকলার অ্যাকাউন্ট নিয়ে চিন্তিত থাকেন। অপরিচিত যে কারও কাছে নিজের নাম ও প্রোফাইল দেখাতে চান না। তাদের জন্য আজকের আয়োজন। আপনি চাইলে কিছু সেটিংস পরিবর্তন করে সহজে ট্রুকলার থেকে নিজের নাম ডিলিট করতে পারবেন।

অ্যান্ড্রয়েড ফোন থেকে ট্রুকলার অ্যাকাউন্ট ডিলিট করবেন যেভাবে:

প্রথমে ফোন থেকে ট্রুকলার অ্যাপটা খুলতে হবে।
উপরের বাম দিকে থাকা ৩টি ডটে ট্যাপ করতে হবে।
এবার সেটিংসে যেতে হবে।
সেখানে থাকা বিকল্পগুলোর মধ্যে থেকে প্রিভেসি সেন্টার খুঁজে নিতে হবে।
ডিঅ্যাক্টিভেট অ্যাকাউন্টের ওপর ক্লিক করতে হবে।
স্ক্রিনে ভেসে ওঠা গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা অথবা মেসেজ পড়ে নিয়ে তারপর কনফার্ম করতে হবে।

আইফোন থেকে ট্রুকলার অ্যাকাউন্ট ডিলিট করবেন যেভাবে:

ফোনে প্রথমে ট্রুকলার অ্যাপ খুলতে হবে।
একেবারে উপরের ডান দিকের কোণে গিয়ার আইকনের ওপর ট্যাপ করতে হবে।
অ্যাবাউট ট্রুকলারে ক্লিক করতে হবে।
এরার স্ক্রল করে নিচে নেমে ডিঅ্যাক্টিভেট অ্যাকাউন্টের ওপর ক্লিক করতে হবে।
স্ক্রিনে ভেসে ওঠা গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা অথবা মেসেজ পড়ে নিয়ে তারপর কনফার্ম করতে হবে।

ট্রুকলার থেকে ফোন নম্বর ডিলিট করবেন যেভাবে:

প্রথমে অফিসিয়াল ট্রুকলার ওয়েবসাইটে যেতে হবে।
ট্রুকলারে গিয়ে ফোন নম্বর পেজ আনলিস্ট করতে হবে।
কান্ট্রি কোডসহ নিজের ফোন নম্বর দিতে হবে।
যে কারণে নিজের অ্যাকাউন্ট রিমুভ করতে চাইছেন, তার ব্যাখ্যা দিয়ে অপশনের ওপর ক্লিক করতে হবে।
এবার ক্যাপচা কোড দিতে হবে।
প্রাপ্ত অপশন থেকে উনলিস্টের ওপর ক্লিক করতে হবে।
এভাবে সহজেই ট্রুকলার থেকে অ্যাকাউন্ট এবং নিজের ফোন নম্বর ডিলিট করা সম্ভব।




সংস্কার ও মানবিকতার দ্বন্দ্ব: মতি নন্দীর ‘বিজলিবালার মুক্তি’

মানবজীবন দ্বন্দ্বমুখর। ভালো-মন্দ, ধর্ম-অধর্ম, সংস্কার-যুক্তির প্রতিনিয়ত সংঘর্ষ চলছে সেখানে। এই সংঘর্ষ, চুড়াই-উৎরাইয়ের মধ্যে থেকেই সে তার অস্তিত্ব স্থাপন করে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এই দ্বন্দ্ব নেতিবাচক হলেও কখনও কখনও তা ইতিবাচক ভূমিকা নিয়ে মানবচেতনার উত্তরণ ঘটায়। এই উত্তরণের পথ সহজ নয়। নানা পারিপার্শ্বিক টালমাটাল এসে তাকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে। তা থেকেই বেড়িয়ে এগিয়ে চলেছে মানব-সঞ্চরণ। তার অগ্রগতির পথে পাশে পেয়েছে বিশ্বায়ন, রেনেসাঁ। এ শুধু দু’টি শব্দমাত্র নয় জাতির উন্নয়নের মাপকাঠি। বিশ্বায়ন, রেনেসাঁর প্রভাবে মানবপ্রযুক্তির উন্নয়ন তো হয়েছেই। কিন্তু তার চিন্তা-চেতনার সনাতনী ভাবমূর্তির বদল কি ঘটেছে, সে প্রশ্ন থেকেই যায়। পরিচিত গণ্ডী থেকে বের হতে চাইলেই বের হওয়া যায় না। গণ্ডী অতিক্রমের জন্য শুধু পারিপার্শ্বিক সমাজ কিংবা পরিস্থিতি নয়, তাদের সংস্কারের দেয়ালও সামনে এসে দাঁড়ায়, তারা নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে পড়ে। আত্মদ্বন্দ্বে ক্ষতবিক্ষত হয়ে নিজেই নিজের উত্তরণের পথ বের করে খুঁজে আনে।

অপরদিকে সংস্কার মানবজীবনের ফুসফুস। সংস্কারহীন মানবজীবন যেন নিরুদ্যাম প্রবাহ, রসহীন। সৃষ্টির আদি থেকে ধর্মের লাল চোখের কষাঘাতে সে সংস্কার অনেকবারই ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে। সে ক্ষতস্থানে প্রলেব দিয়েছে মানবিকতাবোধ, মনুষ্যত্ব। মানবিকতার কাছে পৃথিবীর সমস্ত সংস্কারপূর্ণ দ্বিধা-দ্বন্দ্ব হয়ে ওঠে অচেনা। মতি নন্দী ‘বিজলিবালার মুক্তি’ সেরকমই এক সংস্কারপূর্ণ বাতবরণে দ্বান্দ্বিক মনুষ্যত্বের জয়গানের প্রতিভাস।

হুগলি জেলার ভেনিয়াপুর গ্রামের বিজলিবালা তেতাল্লিশ বছর আগে হাতিবাগানে বিবাহ করে আসার পর থেকে প্রতি বছরই গিয়েছেন উত্তর কলকাতার চৌধুরীদের রাধাবল্লভ ঠাকুরবাড়ির ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রার রথের রশিতে টান দিত। প্রথমে যেতেন শাশুড়ীর সাথে, শাশুড়ীর মৃত্যুর পর স্বামী কৃষ্ণকিশোরের সাথে। সময় থেকে না থাকলেও সংস্কার থেকে যায়। এরপর স্বামীও মারা যান, তবুও বিজলিবালার রথের রশিতে টান দেওয়া থেমে থাকে না। সংস্কারের বশে একাই চলে যান রথের রশিতে টান দিত।

বাঙালীর প্রতিটি উৎসবের সাথে জড়িয়ে রয়েছে বিশেষ কিছু খাদ্য। সেটিও তার সংস্কারের মধ্যে পড়ে। বিজলিবালাই বা বাদ যেতে যাবেন কেন; রথের দিন পাঁপড় ভাজা খাওয়ার সংস্কার তার মধ্যেও রয়ে গিয়েছে। “রথের দিন পাঁপড় খাওয়ার ইচ্ছেটা ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে মহেশের রথ দেখতে গিয়ে মনের মধ্যে সেই যে ঢুকে গেল তারপর এই পঞ্চাশ বছরে দু’-তিনবার ছাড়া সব বছরই মেনেছি।”১ সংস্কার তার এতটাই তীব্র যে পাঁপড় না খাওয়ার কারণটাও তার মনে রয়েছে- প্রথমবার শশুরের মৃত্যু, দ্বিতীয়বার শাশুড়ির অম্লশূলের ব্যথার জন্য হাসপাতালে শাশুড়ির বেড়ের পাশে। এমনকি রথ দেখে ফেরার পথে রিকশা উল্টে পা ভেঙে যাওয়াতে তার তো পাঁপড় খাওয়া না হলেও তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াতে সহায্যকারী ক্লাবের ছেলেগুলোকে পাঁপড় খাওয়াতে ভোলেন না। “পদ্ম, যাবার সময় পাঁপড় কিনে নিয়ে যাবি। এদের খাওয়াবি তুইও খাবি। পলাশ তোমার ক্লাবের ঘরে এখন থাকবে তো, পদ্ম পাঁপড় ভেজে দিয়ে আসবে, রথের দিনে একটু মুখে দিয়ো।”২ পৌষপার্বণে যেমন পিঠে, জন্মদিনে পায়েস, তেমন রথে পাঁপড় না খেলেই যেন নয়।

পা ভেঙে পড়ে থাকাতে বিজলিবালার পুজো হচ্ছে না। পুজোর ব্যাপারে তিনি ভীষণ নিষ্ঠাবান ও সচেতন যাকে তাকে দিয়ে তিনি তার ঠাকুরদের পুজো নিবেদন করাতে পারেন না- “এসব হল হিন্দুদের আচার প্রথা নিয়ম।… হাজার হাজার বছর আগে মুনিঋষিরা এসব বিধান দিয়ে গেছেন। ওনারাই ঠিক করে দিয়েছেন সমাজে কারা উঁচু, কার নিচু, সেই ভাবেই মানুষ ভাগ রা।”৩ ধর্ম-বর্ণভেদকারী গ্রন্থাদিতে এই শ্রেণীবিভাগ যতটা ছিল বাঙালি তাকে আরও পুষ্ট করেছে। “…বর্ণ বিন্যাস ভারতীয় সমাজ বিন্যাসের ভিত্তি। খাওয়া-দাওয়া এবং বিবাহ-ব্যাপারের বিধিনিষেধের উপর ভিত্তি করিয়া ঢালিয়া সাজাইয়া নূতন করিয়া গাড়িয়াছি।”৪ বর্ণভেদের সেই পুষ্ট রূপ দেখি এখানে। বিজলিবালাকে দেখাশোনা করে পদ্ম। পদ্ম বামুন না, কিন্তু অলকাকে দিয়ে তো বিজলিবালা পুজো করাতেই পারে। পুজোর সময় নতুন শাড়ী পড়ে ঠাকুর দেখতে বের হলেও অলকা প্রতিমাকে প্রমাণ করে না, শাঁখা-সিঁদুর পড়ে না। ‘বামুন ’ হলেও তাই অলকাকে দিয়ে পুজো করানো যায় না- “বামন বামুন ব্রাহ্মণ নয় রে ব্রাম-হো। ওরা ঠাকুর দেবতা মানে না, পুজোআছ্রা করে না, ওদের ধর্ম আমাদের মতো নয়। ওদের বিয়েতে হোম যজ্ঞটজ্ঞ হয় না, পিণ্ডি দেয় না শ্রাদ্ধে।”৫

আপদমস্তক সংস্কারপূর্ণ বিজলিবালা শুধু ইহকাল নয়, পরকালের চিন্তাও করে। বিজলিবালার মৃত্যুর পর পদ্ম বিজলিবালার শ্রাদ্ধের দায়িত্ব না নিতে চাইলে বিজলিবালা গর্জে ওঠে- “তার মানে তুই বলছিস আমার শ্রাদ্ধ হবে না! আমার আত্মার গতি হবে না? আমি প্রেত হয়ে ঘুরে বেড়াব?”৬ ভালোভাবে শ্রাদ্ধকার্য সম্পন্ন করার জন্য বিজলিবালার পোস্টাপিসে আর ব্যাঙ্কে যত টাকা আছে সব পদ্মকে দিয়ে যাবে। পুনর্জম্মে বিশ্বাসী বিজলিবালার ভয় পাচ্ছে তাকে কুকুর, ছারপোকা হয়ে না জন্মাতে হয়। রাজার ঘরে জন্ম হলেও তো আবার সেই মানবজন্মের দুঃখষ্ট ভোগ করা তাই তাকে যেন আর জন্মাতে না হয় পদ্ম যেন সেই ব্যবস্থা করে- “পদ্ম একটা কথা দে, গয়ায় গিয়ে আমার পিণ্ডি দিবি। নয়তো আমার মুক্তি ঘটবে না রে, আবার তা হলে আমাকে জন্মাতে হবে!”৭

বাড়িতে ভাড়াটে বামুনের বউ হাসিকে নিজের এগারো বছরের পুরোনো গরদের থানা পড়িয়ে, পুজোর নিয়ম বলে পড়িয়ে নেয় গত পঁয়তাল্লিশ বছরে প্রায় দু’হাজার বার পড়া মুখস্থ পাঁচালি-
“নারায়ণী বলে শুনো আমার বচন।
আত্মহত্যা মহাপাপ নরকে গমন।।”৮

হাসিকে অত্যন্ত আগ্রহভরে পরিচয় করিয়ে দেয় নিজের রোজকার সকালের ঘন্টা-ভরে কাটানো-শাশুড়ীর থেকে পাওয়া নারায়ণ শিলা যেটি শাশুড়িও পেয়েছিলেন তাঁর শাশুড়ির থেকে, কালীঘাট থেকে আনা গাছকৌটো, পুরী থেকে আনা পাথরের জগন্নাথ সুভাদ্রা বলারাম মূর্তি, তারকেশ্বর থেকে আনা তারকনাথ, গায়ত্রীদেবী, গণেশবাবাজী, বালগোপালোর সাথে। এইসব ঠাকুরদেরতাই যেন বিজলীবালার আত্মার সাথী।

বাড়ির ভাড়াটে হাসি ক্যান্সাররোগে মারা গেলে মন খারাপ হলেও নিয়মগুলো রক্ষা করতে ভোলে না বিজলিবালা। “শ্মশান থেকে ফিরল ওদের জন্য নিমপাতা, মটরডাল, লোহা, ঘুঁটের আগুন সদর দরজায় রাখতে হবে, এসব তো হিন্দুদের সংস্কার, মানা উচিত।৯ কিন্তু এহেন বিজলিবালার সংস্কারের কাছে হার মানে স্নেহত্ব। পদ্ম যখন মৃত হাসির ছেলে ভুটুর গলায় চাবি পড়াতে যায় বিজলিবালা বলে- “ওসব নিয়মটিয়ম রাখ তো। …ও তো এক মিনিটেই গলা থেকে খুলে ফেলবে নয়তো মুখে পুরে দেবে। কাণ্ডজ্ঞান মেনে তো নিয়ম মানবি।১০

সংস্কার-সম্পূর্ণা বিজলিবালার মানবিকতার ছোঁয়া পুরো কাহিনি জুড়েই রয়েছে। স্বামীগৃহে অত্যাচারিতা পদ্মকে আশ্রয় দিয়েছে। রথ দেখে ফেরার পথে রিকশা থেকে পড়ে যাওয়াতে সে রিকশাকে তো ভাড়া দেওয়া হয়ই না, উপরন্ত পিটুনি মারা হয়- এতে বিজলিবালা প্রশ্ন তোলে। অসহায় তপতীকে কাজ খুঁজে দেয়, সেই কাজে টান এলে টাকা দিয়ে নতুন কাজের ব্যবস্থা করে উৎসাহিত করে। প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্ত ভাড়াটে হাসির অসুস্থতার খরর নিয়েছে। হাসির সন্তান ভুটুর যত্ন-আত্তির করেছে। ভুটু পড়ে গেলে ভাঙা পা নিয়ে হামা দিয়ে এসে দেখেছে- “কী করবো ভাই ছেলেটাকে তো দেখতে হবে। একটা অসহায় বাচ্চা, ভিখিরির ছেলে তো নয় ভদ্র বামুনের ঘরের ছেলে।”১১

বিজলিবালার ধ্যানধারণাতে ছেদ পড়ে যখন হাসিনা বানোর নামে চিঠি আসে বাড়ির লেটার বক্সে। মনে প্রশ্ন জাগে ভাড়াটে হাসি আর হাসিনা এক নয় তো? মনে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। হাসির গলার পাঁচালির সুর কানে ভেসে ওঠে, সে সুর কোনো হিন্দুকণ্ঠী মেয়ের ছাড়া অপরের হতে পারে না ভেবে নিজেকে আশ্বস্ত করে। মনে পড়ে ভাড়া দেওয়ার সময় কি জাতি তারও খোঁজ নিয়েছিল বিজলিবালা, চক্রবর্ত্তী ব্রাহ্মণ বলেই থাকতে দিয়েছিল। বিজলিবালার নিষ্ঠান্বিত সংস্কারের জোয়ারে টান পড়ে, হাসির স্বামী জ্যোতির্ময় চক্রবর্তী জানায় তার স্ত্রী হাসিই হল হাসিনা বানো। জ্যোতির স্ত্রী মুসলিম বলে তারা এতোদিন ঘরভাড়া পায়নি। হাসি বিজলিবালার ঠাকুর ছুঁয়েছে, পাঁচালি পড়ে দিয়েছে। প্রভিডেন্ট ফান্ডের চিঠির খামের ওপর লেখাটা দেখাটার আগে পর্যন্ত যে ধারণা ছিল বিজলিবালা যেন সেটাই বজায় রাখে।

কিন্তু বিজলিবালার পক্ষে তা সম্ভব নয়। তার লালিত নিষ্ঠবোধ এক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। তাকে প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। মুসলমানের মেয়ে হাসি শুধু ঠাকুরের সিংহাসনই ধরেনি; লক্ষ্মীর পাঁচালীও পড়েছে, হাসির ছেলে ভুটু নারায়ণ শিলা মুখে দিয়েছিল ওটাই বা কী করবে বিজলিবালা। এক কঠিন দ্বন্দ্ব তার সামনে এসে দাঁড়ায়। শিলাটি শুধু তার গর্ব না, পরিবারের সূত্র স্থাপনকারী ঐতিহ্য। সংস্কারের কাছে তার মানবিকতা পিছিয়ে পড়ে। সবার আগে সদ্য স্ত্রীবিয়োগে শোকাচ্ছন্ন এবং মুসলমান নারীর স্বামী জ্যোতি আর তার সদ্য মা-হারা ছেলে ভুটুকে বাড়ি থেকে বের করার কথা ভাবে সে। তার সংস্কারবোধ তাকে তীব্র আঘাত করে- “…যে আঁচড় আমার বুকে পড়ল তার ঘা তো আর শুকোবে না…আমার এত দিনের ঠাকুর তাকে কত যত্নে আগলে রেখেছি, আমার এত দিনের পুজো এত দিনের ভক্তি সব তোমরা মিথ্যে করে দিলে নস্যাৎ করে দিলে।১২

মানবপ্রেমের কাছে সংস্কার হার মানে। জ্যোতি বাড়ি ছাড়লেও বিজলিবালা ভুটুকে রাখে। মা-হারা ভুটু কোথায় সঠিক যত্ন পাবে সে বিষয়ে জ্যোতিকে পরামর্শ দেয়। হাসির বাবার চিঠি খুঁজে পায় বিজলিবালা। হিন্দু ছেলেকে বিবাহ করার জন্য তারা হাসির সঙ্গে যোগাযোগ রাখেনি, বিজলিবালার মনে হয় ‘জাত ধর্মটাই বড় হল’। সংস্কার, স্নেহ-মমতার কাছে এসে হার মানে। মমত্ববোধের কাছে বিজলিবালার সংস্কার বিলীন হয়ে যায়। সে উপলব্ধি করে ভালোবাসার কাছে ধর্ম হেরে যায়; মনুষ্যত্বের জয় হয়। ‘…হাসি নিছকই মুসলমান মেয়ে নয়, হিন্দুর বউও নয়, ও একটা মানুষ।’ ভুটুকে তার পরিবারের কাছ, আপনজনদের কাছে ফেরাতে চেয়েছিল, কিন্তু জ্যোতির পরিবার মুখ ফিরিয়ে নেয়।

এরপরে বিজলিবালার মধ্যে এক অন্য মানবতাবোধ দেখা দেয়। সংস্কার আর মানবিকতার দ্বন্দ্ব নয় এ; দুটো সম আসনে উপস্থিত হয়েছে। ছোট্টো ভুটু আবার বিজলিবালার সিংহাসন তছনছ করেছে, নারায়ণ শিলা খাটের তলায়, রাধাকৃষ্ণ মেঝেতে পড়ে। বিজলিবালা মুসলিম মায়ের সন্তান এসব করেছে বলে এবারে আর সেসব ঠাকুর বিসর্জন দেওয়ার কথা ভাবে না। ভুটুকে নিজের উত্তরসূরি ভাবে। পদ্মকে জানায় “তোকে আর গয়ায় গিয়ে পিণ্ডি দিতে হবে না, মুক্তি দেবার লোক আমি পেয়ে গেছি।”১৩

একজন সংস্কার-পরিপূর্ণা নারীর কাছে তার নিয়ম-কানুন, নিষ্ঠার মূল্য অনেকটা। তার সেই নিষ্ঠাতে আঁচড় লাগতে সেই আঘাত সাধারণত সে সহ্য করতে পারে না। আর প্রসঙ্গ যখন ধর্ম, শিক্ষিত আধুনিক-মনস্ক চেতনাও সেখানে চাপা পড়ে যায়। ধর্মের সংকীর্ণ আবৃত্ত থেকে একমাত্র মানবিকতাই পারে ধর্মকে কোণঠাসা করতে- “মনুষ্যত্ব বুঝিলে ধর্ম্ম সহজে বুঝিতে পারিবে।”১৪ ধর্মকে লেখক এখানে একপাশে সরিয়ে দিয়েছেন। সংস্কারের দ্বন্দ্বে মানবিকতার কণ্ঠরোথ না করে, দ্বন্দ্ব মাথা চাড়া দিতেই সংস্কারের শ্বাসরোধ করেছেন । কাহিনীতে এই দ্বন্দ্বের প্রয়োজন ছিল। নয়তো সংস্কারই একাধিপত্য করত। সংস্কারের আবরণ উন্মোচন করে মানবিকতার উত্তরণ হয়েছে।

তথ্যসূত্র:
১। মতি নন্দী: ‘বিজলিবালার মুক্তি’ (ডিসেম্বর ২০০২), সুবর্ণসংগ্রহ উপন্যাস চতুর্থ খণ্ড, আনন্দ পাবলিশার্স,
দ্বিতীয় মুদ্রণ নভেম্বর ২০০৮, পৃ ৩
২। তদেব
৩। নীহাররঞ্জন রায়, রাঙ্গালীর ইতিহাস আদি পর্ব, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা ০৭৩, চতুর্থ সংস্করন অগ্রহায়ণ
১৪১০, পৃ ১৬
৪। মতি নন্দী: বিজলিবালার মুক্তি’ (ডিসেম্বর ২০০২), সুবর্ণসংগ্রহ উপন্যাস চতুর্থ খণ্ড, আনন্দ পাবলিশার্স,
দ্বিতীয় মুদ্রণ নভেম্বর ২০০৮, পৃ ১৩
৫। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়: ‘বঙ্কিম রচনাবলী- দ্বিতীয় খণ্ড’, ‘বিবিধ প্রবন্ধ’, ‘বঙ্গদর্শনের পত্র-সূচনা’, প্রথম
প্রকাশ, শুভম প্রকাশনী, ৭ শ্যামাচরণ দে স্ট্রীট, কলকাতা-০৭৩, ২০১২, পৃ ৭০৫

লেখক: সহকারী অধ্যপক, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, সাউথইস্ট বি¬শ্ববিদ্যালয়




মাটি ও মানুষের সম্পর্ক সুন্দর হোক

আমাদের মেহেরপুরের সীমান্ত গ্রাম হরিরামপুর। গ্রামটিতে প্রবেশ মুখে ফসলের জমিন দেখে অনেকদিন আগে দেখা একটি বিখ্যাত তামিল মুভির কাহিনী স্মৃতিতে ভেষে উঠলো। মুভিটির নাম কোনভাবেই মনে করতে পারছিনা। কহিনীটা এমন- নিউইয়র্কে ম্যানহটনের ৭০ তলায় উচ্চপদে চাকুরি করা গ্রামের এক যুবক ফিরে আসে দেশের নিজ গ্রামে। বিকেলে গ্রামে ঘুরতে দেখতে পান বয়োবৃদ্ধ এক কৃষক জমিতে কাজ করছেন। ওই কৃষকের কাছে যুবক জানতে চান- সকলেই কৃষি কাজ ছেড়ে দিয়েছে। আপনি এই বয়সেও কাজ করছেন কেন? বৃদ্ধের সগর্ভ উত্তর। জমিতে ফসল উৎপাদনের কাজ করছি বাবা। কৃষিকাজ ছেড়ে দিয়ে কী খাবো। পরিবারের মানুষকে কী খাওয়াবো। যারা কাজ ছেড়ে দিয়েছে তারা আশা হারিয়ে ছাড়েনি। ক্লান্ত হয়ে ছেড়েছে। তারা যদি ফের জমিনে আসে তবে জমিন তাদের কাছে টেনে নেবে। আমি এই জমিনে জন্মেছি। আর এই জমিনেই মরবো। যুবক গ্রামের বাড়ি ফিরে আসে। একদিন জেলার সরকারি কর্মকর্তাসহ গ্রামের সকলকে একত্রিত করে কৃষিতে মনোনিবেশ করতে বলেন। জানান নিউইয়র্কে ম্যানহটনের ৭০ তলায় বসে বসে তিনি কৃষি নিয়ে ভাবতেন। এই জন্মভূমিতে পা ফেলেই বুঝতে পেরেছি পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের এই কৃষি কাজের সাথে সম্পর্ক আছে। একজন কোটিপতি মানুষের সকালের জ্যাম জেলি পাওরুটি থেকে শরু করে গরিবের জাও ভাত। যাদের বেঁচে থাকার জন্য খাবার দরকার তাদের এই কৃষিকাজের সাথে সম্পর্ক আছে। যাঁরা আমাদের জন্য ফসল ফলাচ্ছে তাদের ও এই কৃষি কাজের সাথে সম্পর্ক ছাড়া আমরা বেঁচে আছি।

এক সরকারি কর্মকর্তা জানতে চান কিসের সম্পর্ক । কৃষক কৃষি কাজ করে। আমরা আমাদের কাজ করি। কৃষক টাকার জন্য, আমরাও টাকার জন্য কাজ করি।

যুবক বলেন- আপনারা বেতনের টাকা না পেলে কী করবেন?
জমানো টাকা থেকে খরচ করবো।
যদি জমানো টাকা ফরিয়ে যায়, ছমাস বেতন না দেয় দখন কী করবেন?
এই চাকুরি ছেড়ে দিয়ে আর একটি চাকরি খুঁজবো।

যদি কৃষকরা তাই ভাবে তখন কী হবে? প্রতিদু‘বছর পর বেতন বৃদ্ধি না হলে আমরা আন্দোলন করি। কিন্তু কৃষকরা বছরের পর বছর ফসল ফলালেও লাভের মুখ না দেখলেও সে তার বপন করা বীজে সারাজীবন সফলতার আশা খুঁজতে থাকে। এমন কৃষক আর আমরা কী ভাবে এক হতে পারি।

কী করবো তাহলে, চাকরি ছেড়ে কী চাষাবাদ শুরু করবো?
চাষাবাদ কাপড় বদলাবার মতো এমন সহজ না। এটা মাটি আর মানুষের সুন্দর সম্পর্ক। এটা এমন এক বিজ্ঞান যা বিজ্ঞানীরাও বুঝতে পারেনা। শুধু কৃষকই তা বুঝতে পারে। একজন কৃষক আত্মহত্যা করলেও আমরা পরোয়া করিনা। এটা সংবাদপত্রে মামলি খবরে পরিণত হয়। একজন কৃষকের মৃত্যুতে যে কী পরিমান ক্ষতি হয় তা আমরা বুঝতেও পারিনা। বর্তমানে কৃষি জমির পরিমান কমে যাচ্ছে। আর ভোক্তার সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে। যার ফলে দ্রব্যমূল্যে বৃদ্ধির সাথে সাথে খাদ্যে ভেজাল হচ্ছে। আর এভাবে যদি চলতেই থাকে তাহলে আমাদের ভবিষৎ প্রজন্রে হাসপাতালের খরচটাও জুটবেনা। জমির দাম বাড়ছে আর কৃষকের দাম কমছে। জমির দাম বৃদ্ধির সাথে যদি আমরা ভবন নির্মাণ করতে থাকি তাহলে আমরা বাঁচার জন্য খাব কী? এজন্য কৃষক তার কৃষির জন্য ছেলেকে কৃষক বানাতে চাইনা। আমাদের নতুন প্রজন্ম জানেই না কৃষিকাজ কী? ভবিষৎ প্রজন্ম শুধু কৃষিকাজ দেখতে পাবে বইয়ের পাতায়। কৃষকরা একসময় সাহস নিয়ে বেঁচে থাকতো। কিন্তু এখন তারা ভয় নিয়ে বেঁচে থাকছে। সে ফসল ফলাতে ভয় পায় সার, পানি াষাবাদ উপকরণ আশংকায়। ওপর বৃষ্টি নেই। ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিক। এরমধ্যেই কৃষক কস্টের ফসল ঘরে তোলে। সেই ফসল রক্ষা করতে ভয় পায়। সেই একই ভয় নিয়ে নামমাত্র দামে বিক্রি করে। আর মহাজনেরা দশগুণ লাভে বিক্রি করে। যার ফলে যে কৃষক উৎপাদন করছে তার ক্ষতি হচ্ছে। খাদ্যের ভোক্তা সেটা কিন্তু আমরা সবাই। আমরা ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে। আপনারা জানেন কেন এমন হচ্ছে। কারণ আমরা কৃষকদের সাথে সম্পর্ক ছাড়া বেঁচে আছি। কৃষককে বাঁচাবার দায়ীত্ব শুধু সরকারের না। আমাদের সকলের। এই কারণে কৃষকদের সুরক্ষার জন্য আমি আমার উপর্জনের ৯০ ভাগ কৃষকদের উন্নয়নে দান করেছি। যাতে গ্রামে গ্রামে গড়ে ওঠে ফসল সংরক্ষনাগার। যেখানে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল সংরক্ষন করবেন। এখানেই মুভির যবনিকা নামে।

এমন যুবকের এখন আমাদের বড় প্রয়োজন। মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার তারানগরসহ বিভিন্ন গ্রামবাসীর কাছে পানি মানেই মরণ। তারানগর গ্রামের পানিতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের তথ্যে ৯৩দশমিক ৫০ ভাগ আর্সেনিক। সীমান্তবর্তী গ্রামটিতে আড়াই হাজার মানুষের বসবাস। আর্সেনিক আক্রান্ত হয়ে এই গ্রামের একই পরিবারের কিতাব আলী মল্লিক, ছেলে রবজেল মল্লিক, রিতাজ মল্লিক, মাহমুদ মল্লিক, ভাবি সোনাভানু, চাচা নুর মোহাম্মদ মল্লিকসহ গ্রামের ৫০জনেরও বেশী মানুষ মারা গেছে (গ্রামবাসীর দাবি)। গ্রামের ১৬৫টি টিউবয়েলের মধ্যে ১৬০টিতেই অতিরিক্ত মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক সনাক্ত হয়েছে। জেলার মানুষ পানির সাথে প্রত্যক্ষভাবে এবং পরোক্ষভাবে জেলায় উৎপাদিত সবধরণের খাদ্যসামগ্রির সাথে আর্সেনিকোসিস পান করছি।

মেহেরপুর জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের গত এপ্রিল ২০২৩ শেষ হওয়া এক জরিপে জেলার ১৮টি ইউনিয়নে ৩০ হাজার টিউবয়েলের পানি পরীক্ষা করে ৩ হাজার ৮০৬টি টিউবয়েলের মাত্রাত্রিরিক্ত আর্সেনিক পেয়েছেন।

জনস্বাস্থ্য বিভাগের মতে মেহেরপুর সদর উপজেলার হরিরামপুর, মনোহরপুর, উজ্জলপুর, কুলবাড়িয়া, তেরঘরিয়া, শোলমারি এলাকার মাঠে সেচনির্ভর জমিগুলোতে এমন আর্সেনিকের স্তর চোখে পড়ার মতো। জেলায় মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে সদরে আমঝুপি, বেলতলাপাড়া, বুড়িপোতা, শোলমারি, উজ্জলপুর, সুবিদপুর, গাংনী উপজেলার ভোলাডাঙ্গাও তেতুলবাড়িয়ায়, মুজিবনগর উপজেলার জয়পুর ও তারানগর গ্রামে। সবচেয়ে বেশী ভয়াবহতা গাংনীর ভোলাডাঙ্গা ও মুজিবনগর উপজেলার তারানগর ও জয়পুর গ্রামের ভূগর্ভস্থ পানিতে। এসব এলাকার জমিতে সেচ দেয়ার পর আর্সেনিকের লাল স্তর ভাবিয়ে তুলেছে মানুষকে। এই আর্সেনিক উৎপাদিত ফসলের মাধ্যমে সচেতনতার অভাবে মানুষ খেয়ে ফেলছে। জেলার জন প্রতিনিধি, বেসরকারি এনজিওর প্রতিবেদন অনুয়ায়ী দুই শতাধিক মানুষ আর্সেনিকোসিস রোগে মৃত্যুবরণ এবং দশ সহস্রাধিক মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। মেহেরপুর জনস্বাস্থ্য বিভাগ নিরাপদ পানি পেতে গ্রামে গ্রামে নিরাপদ পানির প্লান্ট স্থাপন ও রিং টিউবয়েল স্থাপন করেছেন। গ্রামবাসীদের বিদ্যুৎ বিল দিতে হবে বলে পানির প্লান্ট ব্যবহার না করায় অকেজো হয়ে পড়ে আছে সেসব পানির প্লান্ট।

কৃষি নির্ভর মেহেরপুর জেলা। জেলায় উচ্চ ফলনশীল ধানসহ সেচনির্ভর সারাবছর সবজি চাষ হয়। উচ্চ ফলনশীল ধান ও সবজি চাষে প্রচুর পানি সেচ দিতে হয়। আর এ পানির অধিকাংশই আসে অগভীর নলকূপ থেকে। মাটির তলদেশে এত পরিমান আর্সেনিক যে- সেচ দেয়া জমির ওপরাংশ শুকিয়ে গেলেই চোখে পড়ে জমিতে কী পরিমান তলদেশ থেকে আর্সেনিক উঠে এসেছে। কারণ সেচের ওই জমিতে মাটির উপরাংশ আর্সেনিক স্তর পড়ে লাল হয়ে যাচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে আর্সেনিকযুক্ত পানি দিয়ে জমিতে চাষ হচ্ছে বিভিন্ন ফসল। আর সেসব ফসল বিভিন্ন সুপারশপ ও খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে।

প্রাকৃতিকভাবে পানির প্রাপ্যতা কমে যাওয়ায় সেচ নির্ভর চাষাবাদ এখন শতভাগ জমি। এর ফলে মাটির অনেক নিচ থেকে তুলে আনা পানির সঙ্গে আসছে আর্সেনিক। আর এ পানি দিয়ে চাষাবাদের ফলে ফসলেও মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকের উপস্থিতি ভাবিয়ে তুলেছে কৃষি বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকদের। চিকিৎসকদের মতে অন্যান্য খনিজ পদার্থের মতো আর্সেনিকও মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য সামান্য পরিমাণ প্রয়োজন। আর এই সামান্য পরিমাণ আর্সেনিক প্রতিদিন শাক-সবজিসহ বিভিন্ন উদ্ভিদ জাতীয় খাবারের মাধ্যমে মানুষ পেয়ে থাকে। কিন্তু এর পরিমাণ একটু বেশি হলেই স্বাস্থ্যের জন্য ভয়ঙ্কর বিপদ। কৃষি বিশেষজ্ঞদের দাবি, নদী-নালা, খাল-বিলে পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করে শীত মৌসুমে ফসলি জমিতে সেচে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে।

সদর উপজেলার হরিরামপুর গ্রামের আবদুর রহমান একজন কৃষক। তার সবজি চাষের জমিতে দেখা যায় গভির নলকুপ মাধ্যমে সেচ দেয়াতে মাটির ওপর মোটা আস্তরণ পড়েছে আর্সেনিকের। রহমানের মতে জমি চাষ দিলেই এসব রং হারিয়ে যায়। তিনি জানেন না এই আর্সেনিক উৎপাদিত সবজির মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করছে।

একজন কৃষি বিজ্ঞানী বলছেন- কৃষি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত সেচের কারনে ব্যাপক ভিত্তিতে ভূগর্ভস্থ্য পানি উত্তোলন হচ্ছে। ফলে সেচের পানি এবং ফসলে আর্সেনিকের উপস্থিতি বাড়ছে। বেশকিছু গ্রামে মারাত্মক ভয়াবহতা দেখা দিয়েছে। বছরের পর বছর ধরে আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করে শত শত মানুষ চর্মরোগ, কিডনি. যকৃত, হার্টের প্রদাহ, স্নায়বিক রোগ, স্থির জন্ম এবং ক্যান্সারসহ মারাত্বক জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

জেলার অধিকাংশ মানুষের ভরসা যেখানে জমি, সেখানে মাটির এমন হাল কেন? বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনায় তিনটি কারণ সামনে এসেছে। প্রথম, অতিরিক্ত পরিমাণে রাসায়নিক সার প্রয়োগ। এছাড়া জৈব সারের প্রয়োগ কমিয়ে দেওয়া ও সারা বছর ধরে বিরামহীন চাষও মাটিতে অম্লত্ব বাড়ার কারণ। বিশেষজ্ঞেরা জানান, জেলায় সবথেকে বেশি তামাক, ধান, কফি ও আলু চাষ হয়। প্রতি বছরই উৎপাদন বাড়াতে রাসায়নিক সারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিচ্ছেন চাষিরা। ফলে ধান, আলু উৎপাদনের ব্লকগুলিতেও জৈব কাবর্নের পরিমাণ কমে আসছে। হারিয়ে যাচ্ছে উপকারী জীবাণুও।

এনিয়ে কিছুদিন আগে কথা হলো কৃষি বিজ্ঞানী শঙ্কর কুমার মজুমদারের সাথে। তিনি জানালেন- ‘‘মাটিকে বলা হয় খাদ্য শস্যের ভান্ডার। মাটিতে খাদ্যশষ্য জন্মায় এবং সেই খাদ্য মানুষের স্বাস্থ্যের পুষ্টি ও শক্তি জোগায়। মাটির উপকারী জীবাণু বেঁচে থাকে জৈব কাবর্নের উপর নির্ভর করে। যে ব্লকগুলিতে সব্জি চাষ হয়, রাসায়নিক সার কম প্রয়োগ হওয়ায় সেখানে জৈব কাবর্নের পরিমাণ ভাল। মাটি যত অম্ল হচ্ছে তত হারিয়ে যাচ্ছে উপকারী জীবাণু।” তিনি আরও বলেন ‘বারবার করে বলা সত্ত্বেও চাষিদের বেশিরভাগই মাটি পরীক্ষা না করে চাষাবাদ করেন। কোনও বছর ফসল কম হলে পরের বছর স্বাভাবিক ভাবেই সারের পরিমাণ বাড়িয়ে দেন তাঁরা। ফলে দু’দিক থেকেই ক্ষতি হয়। একদিকে চাষের খরচ বাড়ে, অন্যদিকে মাটিতে অম্লত্ব বেড়ে হ্রাস পায় উর্বরতা। তিনি স্বীকার করেন- কৃষি বাঁচাতে মাটির তলদেশ থেকে পানি সেচ হিসেবে ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। নাহলে আমাদের পানি নিয়ে যুদ্ধ কয়েক কদম দুরে। আর জেলার মাটির তলদেশে আর্সেনিকোসিসের আঁধার। যা উৎপাদিত খাদ্যশষ্য, ফলমূলের মাধ্যমে মানুষকে খেতে হচ্ছে মৃত্যুকে কাছে পেতে।

১৯৮০ সালের গোড়ার দিকে মেহেরপুর সীমান্তের ওপারে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে প্রথম আর্সেনিক দূষণের কথা সবার নজরে আসে। আমাদের দেশের কৃষিবিভাগ ও সরকার সেসময় তৎপর হয়। কিন্তু এই সমস্যা সমাধানে একেবারেই উদাসীন। আর এর জের টানতে হচ্ছে গ্রামীণ এই দরিদ্র জনগোষ্ঠীসহ সব শ্রেণির মানুষকে। প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে পানি ও আর্সেনিকযুক্ত উৎপাদিত খাদ্য গিলতে হচ্ছে আমাদের। এছাড়া আর বিকল্প কিছুই নেই। জেনে শুনে এই বিষপান বন্ধে রাস্ট্রিয়ভাবে আগেই ব্যবস্থা নেয়া দরকার ছিল। এখনও সময় আছে। নাহলে মেহেরপুরের মানষের মৃত্যুই হবে সাথী। মাটি ও মানুষের সম্পর্কর হবে চরম অবনতি। নাহলে হারিয়ে যাবে মাটি ও মানুষের সুন্দর সম্পর্ক।

তোজাম্মেল আযম
লেখক ও সাংবাদিক