সৌখিন প্রজাতির বিদেশী পাখি পালন শিক্ষিত বেকার যুবক ও স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের আয়ের উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে মেহেরপুরে। সখ পুরুনের পাশাপাশি বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও বেকার যুবকদের আয়ের অন্যতম উৎস এখন বিদেশী সৌখিন প্রজাতির পখি পালন। ইতোমধ্যে জেলার কয়েক হাজার যুবক বিদেশী প্রজাতির সৌখিন পাখি বিক্রি করে বাড়তি আয়ের সুযোগ পাচ্ছেন। অনেকেই আবার পাখি পালন সম্পর্কে পরামর্শ নিচ্ছেন উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে। প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর বলছেন সৌখিন প্রজাতির পাখি পালন বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের অন্যতম মাধ্যম। এব্যাপারে আগ্রহীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আর বন বিভাগ অধিদপ্তর বলছেন, পাখি পালন করতে হলে সরকারি বিধি মোতাবেক করতে হবে।
মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার নওযাপাড়া গ্রামের যুবক পালু মিয়া সখ করে বছর পাঁচেক আগে কয়েক প্রজাতির সৌখিন পাখি কিনে বাড়িতে পালন শুরু করেন। কয়েকমাস পর ওই পাখি গুলো ডিম পেড়ে বাচচা ফুটায়্। এভাবে পর্যায়ক্রমে বংশবৃদ্ধি করতে থাকে। এখন তিনি বাড়িতেই গড়ে তুলেছেন একটি সৌখিন পাখির পারিবারিক খামার। খামারে রয়েছে লাভবার্ড, ককোটেলবার্ড, বাজেরিকা, প্রিন্স বার্ড, ডায়মন্ড ঘুঘু, অস্ট্রেলিয়া ঘুঘুসহ মোট ১৫ প্রজাতির পাখি। এলাকায় বিভিন্ন মানুষের কাছে পাখি বিক্রি করে বছরে আয় করেন লক্ষাধিক টাকা।
পাখি পালনকারি পালু মিয়া বলেন, আমি প্রথমে সখ করে পাখি পালন শুরু করি। এলাকায় সৌখিন পাখির ব্যপাপক চাহিদা থাকায় আমি অনেক পাখি বিক্রি করি। এতে প্রতি বছর খরচ বাদি দিয়ে লক্ষাধিক টাকা আয় করি। যা আমার সংসাওে এটি একটি বাড়ি আয়। আমার কাছে অনেক শিক্ষার্থীরা পাখি কিনতে আসে। আমি তাদের পাখির পরিবেশ ও খাবার সরবরাহ বিষয়ে পরামর্শ দিই। হাঁস মুরগি পালনের পাশাপাশি সৌখিন প্রজাতির পাখি পালনও হতে পারে আয়ের একটি অন্যতম মাধ্যম।
সৌখিন খামারি মেহেরপুরের পাভেল মাহমুদ বলেন, ককাটেল জাতের পাখির অনেক দাম এবং চাহিদা অনেক বেশি। এক জোড়া ককাটেল পাখির দাম ৪০০০ থেকে ৫০০০ টাকায় বিক্রি হয়॥ এবং বাজরকা জাতের পাখি বিক্রি হয় ৫০০ টাকা জোড়া তবে মজার বিষয় হলো এ প্রজাতির পাখি বছরে চারবার ডিম দেয়। প্রতিবারে ৫ থেকে ৮টি করে বাচ্চা দেয়। যার বানজ্যিক খামার করতে পারলে মোটা টাকা আয় করা সম্ভব।
কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী সাহারবাটি গ্রামের সুমন আহমেদ বলেন, আমার এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে দেখেছিলাম বাড়ির ছাদে বিদেশী পাখি পালন করেছে। আমারও সখ হয়। বন্ধুর পরামর্শে আমিও পাখি পালন করি। এখন আমার বাড়িতে প্রায় ১০ প্রজাতির পাখি আছে। পাখির কিচিরমিচির ডাকে সকালে আমাদের ঘুম ভাঙ্গে। অনেকেই আমার পাখি দেখেতে আসে। কয়েক প্রজাতির পাখি বছরে তিন বার ডিম দেয়। আমি প্রতিমাসে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার পাখি বিক্রি করি। এতে আমার পড়ালেখার খরচ পরিবারের কাছ থেকে নিতে হয়না। উপরন্ত আমি অনেক সময় পরিবারে আর্থিক ভাবে সহায়তা করতে পারছি।
সৌখিন পাখির বানিজ্যিক খামারি আকবর আলি জানান, স্বল্প জায়গা আর অল্প টাকায় সৌখিন পাখির খামার করা যায়। বাড়িতে যেভাবে হাঁস,মুরগিপালন করে,পাশাপাশি সৌখিন পাখি পালন করেও অনেকেই সংসারে বাড়তি আয় করছে। আমার খামার থেকে বিশেষ করে যবক ও স্কুল শিক্ষার্থীরা বেশি পাখি কিনে অনেকেই এখন সাবলম্বী।
গাংনীর জিয়ারুল ইসলাম বলেন, কয়েকজন প্রতিবেশি বাড়ির উঠান কিংবা ছাদের ওপর বিদেশি পাখি পালন দেথে আমি উদ্বুদ্ধ হই। তিন বছর যাবত আমি পাখি পালন করছি। এসকল পাখি আমার বাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করছে অন্য দিকে আর্থিক ভাবেও সহায়তা পাচ্ছি।
মেহেরপুর বার্ড ক্লাবের সদস্য মাজেদুল হক বলেন, সৌখিন প্রজাতির পাখি পালন করে অনেক যুবক তাদের বেকারত্বের হতাশা দুর করছেন। অনেক শিক্ষার্থী পড়া লেখার খরচ যোগাচ্ছেন। তবে পাখি পালনের যে বিধি রয়েছে তা মেনে পাখি পালন করতে হবে। এজন্য তিনি এসকল উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ্এবং বন বিভাগ থেকে লাইসেন্স নিয়ে পাখি পালনের পরামর্শ দেন তিনি।
মেহেরপুর জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা বলেন, সৌখিন প্রজাতির পাখি পালন বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের অন্যতম মাধ্যম। এব্যাপারে আগ্রহীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
জেলা বন বিভাগ কর্মকর্তা হামিম হায়দার বলেন, পাখি পালন করতে হলে সরকারি বিধি মোতাবেক করতে হবে। খামারীদের অবশ্যই লাইন্সে নিতে হবে। এবং খেয়াল রাখতে হবে বিদেশী সৌখিন পাখির সাথে কোন ক্রমেই দেশীয় পাখি পালন বা ক্রয় বিক্রয় করা যাবেনা। আমরা সৌখিন পাখি পালনকারিদের তালিকা করে লাইসেন্স করার জন্য ইতোমধ্যে তাগিদ দিচ্ছি।