সৃজনশীলতায় টিকটক
ডিজিটাল জগতে নানান প্ল্যাটফর্ম তৈরি হওয়ার সাথে সাথে এসব মাধ্যমে সুযোগ বাড়ছে সৃজনশীলতা প্রকাশের। নিজের সৃজনশীলতা তুলে ধরতে নতুন প্রজন্মের কাছে অন্যতম একটি জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম হলো টিকটক। স্মার্টফোন ব্যবহার করে নিজের মতো কনটেন্ট তৈরি করাকে আরও সহজ করে তুলেছে টিকটক। তাই যে কেউ কনটেন্ট বানাতে বেছে নিচ্ছে এই প্ল্যাটফর্মকে।
টিকটকে ভিডিও তৈরির পদ্ধতি সহজ হওয়ায় প্ল্যাটফর্মের ইউজাররা কনটেন্ট তৈরি করতে উৎসাহিত হয়। টিকটক অ্যাপের বিল্ট-ইন এডিটিং টুলস, ফিল্টার এবং ইফেক্ট এমনভাবেই ডিজাইন করা যা ইউজাররা খুব সহজেই তাদের ভিডিওতে ব্যবহার করতে পারে। তাই তাদের কনটেন্টেও দেখা যায় নতুনত্ব। এমনকি যাদের ভিডিও বানানোর কোনও পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই তারাও এই ফিচারগুলো ব্যবহার করে ভিডিও বানাতে পারছে। টিকটকের “ফর ইউ” পেইজটি ভিউয়ারদের পছন্দের ভিত্তিতে কনটেন্ট দেখায়, ক্রিয়েটরদের ফলোয়ারের সংখ্যার ভিত্তিতে নয়। তাই নতুন বা কম পরিচিত ক্রিয়েটরদের ভিডিও পরিচিত ক্রিয়েটরদের মতোই টিকটকে জনপ্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা রাখে।
টিকটকের জনপ্রিয়তার একটি কারণ হলো শর্ট ভিডিও ফরম্যাটে দ্রুত কনটেন্ট তৈরি করার সুবিধা। একইসাথে এতে মিউজিক বা সাউন্ড যুক্ত করার সুযোগ থাকায় টিকটকের কনটেন্টেও হয়ে উঠে আকর্ষণীয়। যেখানে প্ল্যাটফর্ম ইউজাররা কেবল কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই তাদের আইডিয়া, কিংবা কোন মেসেজ এখানে তুলে ধরছে। টিকটকের ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট, আর উদ্ভাবনী এডিটিং ফিচার ব্যবহারের মাধ্যমে কনটেন্টের গল্পগুলো উঠে আসছে নতুন রূপে। টিকটকের এমন একটি অভিনব ফিচার হলো “চ্যালেঞ্জ”।
বাংলাদেশে টিকটকের চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি হলো বাংলা অ্যালফাবেট চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জে প্রায় ৪৯ হাজার ৭ শত ভিডিও বানিয়েছে টিকটক ইউজাররা। মূলত ডিজিটাল স্পেসে বাংলা ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপন করতে এই চ্যালেঞ্জটি শুরু হয়। বাংলাদেশে পরিচিত হয়ে ওঠা আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো টেন মিনিটস স্কুলের ‘একশতে একশ’ চ্যালেঞ্জ। গণিত, ইংরেজি বা অন্য যে কোনও বিষয়ে প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যায় এই চ্যালেঞ্জে। এমন চ্যালেঞ্জগুলো একাডেমিক বিষয়বস্তুগুলোকে টিকটকে তুলে ধরতে উৎসাহ দেয়। অন্যদিকে, এই চ্যালেঞ্জগুলো খুবই সহজে অংশগ্রহণ করা যায় বলে ক্রিয়েটর-ভিউয়ার সকলেই যুক্ত হচ্ছে।
টিকটক প্ল্যাটফর্মে বিশ্বের এক প্রান্তের ট্রেন্ড, মিউজিক, অথবা চ্যালেঞ্জ দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে অন্য প্রান্তে। তাই টিকটক কেবল এখন সৃজনশীলতার একটি প্ল্যাটফর্ম নয়; এটি হয়ে উঠেছে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের জায়গা। এই বিনিময়কে ত্বরান্বিত করতে টিকটকের সম্প্রতি একটি উদ্যোগ ছিল দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ট্র্যাভেল ক্রিয়েটরদের সাথে হ্যাশট্যাগ #DiscoverWithTikTok ক্যাম্পেইন। এই ক্যাম্পেইনে ক্রিয়েটররা নেপাল, শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশের স্থানগুলো এবং সেখানে তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছে টিকটকে।
সংস্কৃতির ধারক হলো নতুন প্রজন্ম। আর এই নতুন প্রজন্মকে উৎসাহিত করার মধ্য দিয়ে ডিজিটাল দুনিয়ায় উঠে আসছে দেশ-বিদেশের সাংস্কৃতিক দিকগুলো। যেখানে #DiscoverWithTikTok হ্যাশট্যাগে ভ্রমণপ্রিয় অনির্বাণ কায়সার তুলে ধরেছে শ্রীলঙ্কার সৌন্দর্য। অন্যদিকে, টুহালাল এর ফুড ভ্লগার জাওয়াদ কাজী শেয়ার করেছে তার নেপাল যাত্রা। এই ধরনের কনটেন্টগুলোর মধ্য দিয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, নানান দেশের রীতিনীতি এবং ঐতিহ্য সম্পর্কে মানুষ জানতে পারছে। এমনকি বিভিন্ন সমাজের সমস্যা এবং সচেতনতা সম্পর্কেও কথা বলছেন এই ক্রিয়েটররা।
ডিজিটাল জগতে নতুনত্ব যোগ করেছে টিকটক। সৃজনশীলতা, অ্যাক্সেসযোগ্যতা এবং উদ্ভাবনের উপর প্ল্যাটফর্মটি গুরুত্ব দেয়। যার মধ্য দিয়ে টিকটক ইউজাররা সুযোগ পাচ্ছে নিজেদের নতুন করে প্রকাশ করার। গান, নাচ, কমেডি বা শিক্ষা — বিভিন্ন বিষয়ে কনটেন্ট তৈরি হচ্ছে এই প্ল্যাটফর্মে। সম্প্রতি উদ্যোক্তারাও তাদের ব্যবসা এবং কাজগুলো ডিজিটাল মাধ্যমে তুলে ধরতে বেছে নিচ্ছে টিকটক। বাংলাদেশেও এখন যারা ব্যবসা শুরু করছে অথবা কোন স্টার্টআপে যুক্ত হয়েছে, তাদের অনেকে টিকটক ব্যবহার করছে। তেমনই একজন উদ্যোক্তা হলো লাবিবা ইবনাথ যিনি তার গ্রাহকদের জন্য কিভাবে কাস্টমাইজড জুতা তৈরি করেন সেটি তার টিকটক অ্যাকাউন্টে তুলে ধরেন। আরেকজন পেশাদার, চিত্রশিল্পী শ্বেতা তার ফলোয়ারদের সাথে শেয়ার করেন তার আর্ট প্রজেক্ট আর নতুন কাজ। এমন উদ্যোক্তাদের কনটেন্ট আরও তুলে ধরতে টিকটক এখন গুরুত্ব দিচ্ছে এসএমবি (ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা) ব্যবসাগুলোর উপর।
কনটেন্ট বানানোকে টিকটক যেমন সহজ করেছে তেমনি কনটেন্টে সৃজনশীলতা বজায় রাখতেও প্ল্যাটফর্মটি নিয়ে আসছে নিত্যনতুন সব ফিচার। ফলে কনটেন্ট ক্রিয়েটররাও এখন আরও উৎসাহিত হচ্ছে ভিন্ন ধরনের সব বিষয়বস্তু তুলে ধরতে। যা টিকটককে জনপ্রিয় করে তুলছে আরও বড় পরিসরের দর্শকদের কাছে।
সূত্র: ইত্তেফাক