কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি দ্রুত বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। মেশিন মেয়াদোত্তীর্ণ ও ব্যয়বহুল হওয়ায় দ্রুত স্থায়ীভাবে বন্ধের জন্য কেন্দ্রটিতে দায়িত্বরত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এখানে কর্মরত জনবল অন্য কেন্দ্রে বদলি করতে বলা হয়েছে। গত বুধবার (১৭ জানুয়ারি) বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এ নির্দেশ দেয়।
আজ শনিবার (২০ জানুয়ারি) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিদ্যুৎকেন্দ্রের উপব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান।
ভেড়ামারা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, ডিজেলে চলা ৬০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের মেশিন মেয়াদোত্তীর্ণ, জরাজীর্ণ, অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় ২০২২ সালে দুটি ইউনিট বন্ধ করা হয়। ইউনিটগুলোর মেয়াদকাল ধরা হয় ১৫ বছর। অথচ এক ও দুই নম্বর ইউনিট ৪৬ বছর ধরে চলার পর বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর ৩ নম্বর ইউনিটটি ৪৪ বছর ধরে সচল আছে। সেটিও স্থায়ীভাবে বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এক ও দুই নম্বর ইউনিট বন্ধের পর প্রায় ২০০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রে বদলি করা হয়েছে। তিন নম্বর ইউনিট এখনো সচল রাখা হয়েছে। সেখানে ৭৫ জন কর্মরত রয়েছেন। তবে ২০২২ সাল থেকে তিন নম্বর ইউনিট থেকে কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় না। অথচ কেন্দ্রটি রক্ষণাবেক্ষণ, ডিজেল খরচ, কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন ভাতা বাবদ ২০২২ সালে সরকারের খরচ হয়ে গেছে ৮ কোটি টাকা। ২০২০ সালে ১৩ কোটি, ২০২১ সালে ১২ কোটি, ২০২২ সালে ৮ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।
জানা গেছে, ভেড়ামারার ঐতিহ্যবাহী তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি ১৯৭৬ সালের ২৭ এপ্রিল জার্মানির এজি কার্নিস কোম্পানির প্রযুক্তিতে একটি জিট ইউনিট নিয়ে প্রথম উৎপাদনে আসে। একই বছরের ২৮ জুলাই দ্বিতীয় ইউনিট চালু হয়। সে সময় ২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিট থেকে মোট ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো। চাহিদার কারণে ১৯৮০ সালের ১৯ জানুয়ারি জাপানের হিটাসি কোম্পানির প্রযুক্তিতে ২০ মেগাওয়াটের আরেকটি ইউনিট চালু করা হয়। তখন মোট সক্ষমতা দাঁড়ায় ৬০ মেগাওয়াট। কিন্তু মেয়াদোত্তীর্ণ, জরাজীর্ণ আর অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় দুই বছর আগে এক ও দুই নম্বর ইউনিটটি বন্ধ করে দেয় সরকার। তবে এখনো প্রস্তুত রাখা হয়েছে তিন নম্বর ইউনিটটি।
ভেড়ামারা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের উপব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান বলেন, তিন নম্বর ইউনিটটি দ্রুত বন্ধের জন্য গত বুধবার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড আমাদের নির্দেশ দিয়েছে। বর্তমানে ৭৫ জন কর্মরত রয়েছেন। তাদের বদলি করার জন্য লিখিতভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যতদ্রুত সম্ভব বন্ধ করতে হবে। কেন্দ্রের জনবল অন্যত্র বদলি করতে ও মেশিনটি বন্ধ করতে বলা হয়েছে।
এর আগে ২০২২ সালে মেয়াদোত্তীর্ণ, জরাজীর্ণ, অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় এক নম্বর ইউনিট ও দুই নম্বর ইউনিট বন্ধ করে দেওয়া হয়। তিন নম্বর ইউনিট থেকে ২০২২ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করা হলেও মেশিনটি সচল রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে যে কোনো মুহূর্তে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। তবে এটি বন্ধ করে অকশন দিয়ে জায়গাটি ক্লিয়ার করতে হবে। এখানে ৮ মেগাওয়াটের সোলার প্যানেল (সোলার বিদ্যুৎকেন্দ্র) বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ ও ব্যয়বহুল হওয়ায় বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে যে ইউনিটটি সচল আছে সেটি খুবই ভালো। এটি জাপানি মেশিন। মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও খুব ভালো আছে, একদম ফ্রেশ আছে, যে কোনো সময় আমরা পাওয়ার দিতে পারব। ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন মেশিন এটি। সারাদেশে বিদ্যুৎ অফ হয়ে গেলে তখন কাজে লাগবে। তেলের দাম বেশি, উৎপাদন ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। ইমার্জেন্সি লাগলে, উৎপাদন করা যাবে। এটি সচল রাখতে মেশিন চালু রাখতে হয়। চালু রাখতে বছরে এক থেকে দেড় লাখ টাকার তেল খরচ হয়। যন্ত্রাংশ কেনা লাগে না, খরচ খুবই সীমিত। ২০২৩ সালে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন, ডিজেল, মেডিকেল, স্কুলসহ মোট সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। বর্তমানে ৭৫ জন কর্মরত আছেন। তাদের মাসিক বেতন বাবদ ব্যয় হয় ২৫ লাখ টাকা। ২০২২ সালে তিনটি ইউনিটে কর্মরত ছিলেন ২৭০ জন। ২০২২ সালে প্রায় ৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। সর্বমোট ২০২৪ সালে দুই কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে।
এ বিষয়ে ভেড়ামারা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ২০২২ সালে দুটি ইউনিট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তিন নম্বর ইউনিটটিও বন্ধ হয়ে যাবে। এ অবস্থায় ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং পররর্তীতে ২২৫ মেগাওয়াট ডুয়েল ফুয়েল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হলে খুব সহজেই এটি পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণ সম্ভব। তিন নম্বর ইউনিটের খরচে নতুন কেন্দ্রের পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণ সম্ভব হবে। কেননা, নতুন কেন্দ্র নির্মাণ এবং পরিচালনার জন্য জায়গা, পানিসহ যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি প্রয়োজন তার সবটাই এখানে রয়েছে।