সংযুক্ত আরব আমিরাতে গেল ডিসেম্বরে এশিয়া কাপ শিরোপাজয়ের পর থেকেই বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব ১৯ দল নিয়ে বয়সভিত্তিক আসন্ন বিশ্বকাপে বড় স্বপ্ন দেশের ক্রিকেট সমর্থকদের। দক্ষিণ আফ্রিকায় আগামী ১৯ জানুয়ারি থেকে বল মাঠে গড়াবে। এই আসরে অংশ নিতে আজ মধ্যরাতে দেশ ছাড়বে টাইগার যুবারা।
বাংলাদেশ প্রায় দুই সপ্তাহ আগে যাচ্ছে, যাতে কন্ডিশনের সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নিয়ে লড়তে পারে। বাকিটা বলে দেবে সময়। তার আগে গতকাল মিরপুর শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তুলেছে গ্রুপ ছবি। মাঠে স্যুট-বুটে মিনিট পাঁচেকের এই কার্যক্রমে কখনো কোচ-খেলোয়াড় সবাই মিলে তুলেছেন, আবার কখনো শুধু ১৫ জন খেলোয়াড় ছবি তুলেছেন। এটুকুতেই ক্ষান্ত থাকেননি, এরপর মাঠ ঘুরে ঘুরে গ্রুপ সেলফি, একজন আরেকজনের ছবি তুলে দেওয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন খেলোয়াড়েরা। এর ফাঁকেই গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে আসরটি নিয়ে নিজেদের পরিকল্পনা ও প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন অধিনায়ক মাহফুজুর রহমান রাব্বি ও দলের অভিজ্ঞ ক্রিকেটার আরিফুল ইসলাম।
দেশ ছাড়ার আগে হোম অব ক্রিকেটে গেল কিছুদিন ধরেই অনুশীলনে নিজেদের ব্যস্ত রেখেছিলেন ক্রিকেটাররা। এর মধ্যে গত পরশু জাতীয় দলের বড় ভাই দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল ভাইয়ের কাছ থেকে পেয়েছেন বিশ্বের সেরা কোম্পানির (সিএ) ব্যাটও। সবকিছু মিলিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জয়ের মিশনে যাওয়ার জন্য মানসিকভাবে বেশ চাঙ্গা যু্বারা।
নিজেদের লক্ষ্য নিয়ে আরিফুল ইসলাম জানান, নিজেদের ম্যাচগুলোতে বোলিং, ব্যাটিং, ফিল্ডিং—তিন ডিপার্টম্যান্টেই ভালো ক্রিকেট খেলতে চান। এরপর নিজেদের আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলেন, ‘আমাদের দলে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া ভালো। শেষ দেড় বছর ধরে আমরা একসঙ্গে আছি সবাই। আমরা যা করি একসঙ্গেই করি। একে অপরকে সম্মান করি এবং সমর্থন করি। এই বন্ডিংটা যদি ধরে রাখতে পারি, তাহলে আশা করি বিশ্বকাপে ভালো ফল আসবে।’ এ সময় বিশ্বকাপে আসরসেরা এবং ব্যাট হাতে টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হওয়ার আশা প্রকাশ করেন আরিফুল।
এদিকে বিশ্বকাপে কম ভুল করলে শিরোপা নিজেদের ঝুলিতে দেখছেন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক মাহফুজুর রহমান রাব্বি। এ সময় দলের কোন ক্রিকেটাররা পারফর্ম করলে ম্যাচের মোড় ঘুরে যেতে পারে, জানান তিনি। বলেন, ‘শিবলি-জিসান-আরিফুল-পিয়ান আর তিন পেস বোলার যদি ভালো করে, অবশ্যই আমাদের সামনে কেউ দাঁড়াতে পারবে না।’ এর আগে গত পরশু খেলোয়াড়দের সঙ্গে দেখা করে জাতীয় দলের বড় ভাই তামিম ইকবালের দিয়ে যাওয়া অনুপ্রেরণার কথা জানিয়ে বলেন, ‘উনি (তামিম ইকবাল) বলেছেন, ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলো তোমরা। উনি ওনার ক্যারিয়ারের অভিজ্ঞতা আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেছেন।’
আসন্ন বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচটাই টাইগার যুবারা খেলবেন প্রতিবেশী দেশ ভারতের বিপক্ষে। ২০২০ সালে আকবর আলীরা ঐ দক্ষিণ আফ্রিকায় এই ভারতকে হারিয়েই দেশকে প্রথম শিরোপা এনে দিয়েছিলেন। এছাড়া বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে এ দুই দেশের মুখোমুখি লড়াইয়ে সব সময়ই হাড্ডাহাড্ডি খেলা দেখা যায়। আসরের শুরুটাই এমন হাইভোল্টেজ ম্যাচ হওয়ায় দলে কিছুটা চাপে রয়েছেন কি না, অধিনায়কের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আসরে প্রতিপক্ষ ইন্ডিয়া নাকি অন্য কেউ, কোনো কিছু ম্যাটার করে না। আমাদের কাছে তারা শুধু একটা দল। প্রতিপক্ষ মানে প্রতিপক্ষ, ঐটাতে কোনো ছাড় দেওয়ার সুযোগ দেখি না।’ অধিনায়কের কাছে নিজেদের দলের বড় শক্তির জায়গা হচ্ছে নিজেদেরে খেলোয়াড়েরা এবং নিজেদের মধ্যে থাকা বন্ডিং।
অন্যদিকে আসন্ন বিশ্বকাপে টাইগার যুবাদের ভালো ফলের সম্ভাবনা দেখছেন দলের ব্যাটিং পরামর্শকের দায়িত্বে থাকা সাবেক ভারতীয় ব্যাটার ওয়াসিম জাফর। প্রায় দুই বছর ধরে এই দলের সঙ্গে কাজ করছেন তিনি। তাই যুব টাইগারদের নিয়ে তার প্রত্যাশাও বড়। বলেন, ‘দারুণ আবহ দলটার মধ্যে। ছেলেরা অনেক পরিশ্রম করে নিজেদের গড়ে তুলেছে। যে জায়গায় আমরা ওদের দেখতে চেয়েছি, সেটা হয়েছে। ওরা চাপ নিয়ে খেলুক তা চাইব না। ফল কেমন হবে তা নিয়ে যা ভাবুক। ওরা কিন্তু এভাবে খেলেই এশিয়া কাপ জিতেছে, বাংলাদেশে প্রথম কোনো দল এই অর্জন করল। আমাদের তাই ওদের ওপর আস্থা রাখতে হবে।’