মেহেরপুরে স্কোয়াশ চাষে আর্থিক উন্নতি হয়েছে সব্জি চাষীদের
খেতে সুস্বাদু আর অল্প খরচে বেশি লাভ ও চাহিদা বেশী হওয়ায় স্কোয়াশ সবজি জাতীয় ফসলের আবাদে ঝুঁকছেন মেহেরপুর জেলার কৃষকরা। ইতোমধ্যে অনেকেই লাভবান হওয়ায় শিক্ষিত ও বেকার যুবকরা এটি আবাদে পরামর্শ নিচ্ছেন।কৃষি বিভগ বলছেন সম্ভাবনাময় এ অঞ্চলে নতুন জাতীয় সবজি স্কোয়াশ অনেক কৃষকের মাঝে সাড়া ফেলেছে। এব্যাপারে কৃষি অফিস প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সবজি চাষি জিয়াউল হক। এক বিঘা জমিতে স্কোয়াশ আবাদ করেছেন। মেহেপুরের একটি বেসরকারি এনজিও সংস্থা পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতির কাছ থেকে বিনামুল্যে পাওয়া স্কোয়াশ বীজ ও মালচিং পেপার ও পরামর্শ নিয়ে শুরু করেছিলেন সবজি জাতীয় ফসল স্কোয়াশ চাষ। চারা রোপনের তিন মাসের মধ্যে স্কোয়াশ বিক্রি শুরু করেন। ইতোমধ্যে তিনি পাইকারদের কাছে বিক্রি করছেন প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। এক বিঘা জমিতে তিনি অর্ধ লক্ষ টাকার স্কোয়াশ বিক্রি করেছেন। এখন তিনি অর্ধ লক্ষ টাকার স্কোয়াশ বিক্রি করবেন বলে আশাবাদি। প্রতি সপ্তাহে অন্তত তিন বার গাছ থেকে স্কোয়াশ বিক্রি করতে পারবেন। পানির ব্যবহার কমাতে এবং আগাছা ও রোগ বালাই থেকে গাছকে সুরক্ষা দিতে ব্যবহার করেছেন মালচিং পেপার। কীটনাশকের পরিবর্তে ফেরোমন ট্যাপ ও ইয়োলো স্টীট ব্যবহার করা হচ্ছে। যাতে কীটনাশক মুক্ত সবজি উৎপাদন করে ভোক্তা পর্যায়ে পৌছে দেয়া যায়। কীটনাশক মুক্ত থাকায় জিয়াউল হকের স্কোয়াশের বেচা বিক্রিও অনেক ভাল। শুধু জিয়াউল হকই নয়,তার দেখাদেখি কাজিপুর গ্রামের বেশ কয়েকজন কৃষক স্কোয়াশ আবাদ করে লাভবান হয়েছেন। নতুন নতুন ফসল কৃষকদের মাঝে পৌছে দেয়া এবং কৃষিতে প্রযুক্তি ব্যবহার করে অল্প সময়ে অধিক মুনাফা আয় করা যান এমন কাজটি করে চলেছেন পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) অর্থায়নে পরিচালিত পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতি।
পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতি (পিএসকেএস)’র কৃষি ইউনিটের উদ্যোগে নতুন সব্জি হিসাবে তিনি স্কোয়াশের আবাদ শুরু করেছেন। সংস্থা বিনামূল্যে স্কোয়াশের বীজ, মালচিং পেপার, ফেরোমন ফাঁদ, স্টিকিট্র্যাপ এবং জৈব ও রাসায়নিক সার প্রদান করেছে। পিকেএসএফ-এর অর্থায়নে পরিচালিত সংস্থা পিএসকেএস নিজস্ব কৃষি অফিসারের মাধ্যমে সদস্য কৃষকগণকে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ প্রদান করে থাকে। অপরিচিত ও অপ্রচলিত সব্জি হলেও এটি আবাদে কৃষকরা আর্থিকভাবে বেশী মুনাফা পাবে বলে জানিয়েছে সরকারী কৃষি বিভাগ।
স্কোয়াশ চাষি জিয়াউল হক বলেন,বিভিন্ন সবজির পাশাপাশি এক বিঘা জমিতে পরিক্ষামুলক ভাবে মালচিং পদ্ধতিতে স্কোয়াশ করে অনেক ভাল ফলন পাচ্ছি। বাজারে দামও ভাল। খরচের দিগুণ টাকা আয় করা যাবে। পিএসকেএস আমাকে বীজ এবং মালচিং পেপার দিয়ে সহায়তা করেছে। আমি ্ওই সংস্থার কৃষি অফিসারের পরার্ম অনুযায়ী আবাদ করেছি। আগামীতে আরও বড় পরিসরে স্কোয়াশ আবাদ করবো।
পুষ্টিবিদ জান্নাতুননেছা জানান,স্কোয়াশে আছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেশিয়াম, অন্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন-সি, ম্যাঙ্গানিজ, বিটা ক্যারোটিন ও লুটেইন, ফোলেট কপার, রিবোফ্লাবিন, ফসফরাস, ক্যারোটিনয়েডস ও পটাশিয়ামের মত মানব দেহের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ সমূহ। যা’ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, অ্যাজমা, ডায়াবেটিস ও হার্ট-এর রোগ থেকে রক্ষা করে। ক্যান্সার প্রতিরোধে স্কোয়াশে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা’ দেহের ফ্রি র্যাডিকেলস দূর করে এবং বিটা ক্যারোটিন ক্যান্সারের ক্ষতিকর পদার্থ থেকে দূরে রাখে আমাদের।
কৃষকদের সহায়তাকারি বেসরকারি সংস্থা পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক মুহাঃ মোশাররফ হোসেন জানান,স্কোয়াশ চাষসহ বিভিন্ন জেলার কৃষকদের নানা প্রশিক্ষণ,বীজ ও বিভিন্ন উপকরণ বিনামুল্যে বিতরনের মাধ্যমে উন্নত সবজি আবাদে সহায়তা করে আসছে পিএসকেএস। এছাড়াও কীনাশকের ব্যবহার কমিয়ে সবজিকে স্বাস্থ্য সম্মত করতে কৃষকদের দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন পরামর্শ ও ক্ষতিকারক পোকামকড় দমনে সহায়তা করা হচ্ছে। আমাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে উন্নত আবাদ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। আমাদের এমন কর্মকান্ড অব্যাহত থাকবে।