চেক ডিজঅনার হওয়াতে উকিল নোটিশ পাঠানোর পর দেবাশীষ কুমার বাগচির বিরুদ্ধে উল্টো চেক চুরির মামলা করেছিলেন শহীদ সরফরাজ হোসেন মৃদুল। এছাড়া আগেই চেক উদ্ধারের জন্য ফৌঃ কাঃ বিঃ আইনের ৯৮ ধারাতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পিটিশন ৪৯২/২০২৩ নং মামলাটি করেছিলেন তিনি। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে সদর থানার ওসি তদন্তকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
গত বুধবার (২০ ডিসেম্বর) পুলিশের পক্ষ থেকে তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে সার্চ ওয়ারেন্ট সম্পন্ন করে চেক পাওয়া যায় নাই মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করে। এসময় মৃদুল তার আইনজীবের মাধ্যমে পুলিশ প্রতিবেদনের প্রতি নারাজি জানান।
এসময় আদালতে মৃদুলের পক্ষে আইনজীবী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এডভোকেট খন্দকার আব্দুল মতিন, কে এম নুরুল হাসান, নাজমুল হুদা ও এস এম আমানুল্লা আল আমান। এবং দেবাশীষ বাগচীর পক্ষে আইনজীবী হিসেবে ছিলেন খ ম ইমতিয়াজ বিন হারুন জুয়েল।
মৃদুলের আইনজীবীরা আদালতে বলেন ‘আমরা চেক উদ্ধারের মামলা করেছি, প্রথমে এই বিষয়ে তদন্ত হবে। তারপর তদন্ত প্রতিবেদন আসলে সার্চ ওয়ারেন্টের আদেশ হবে। তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত না করে সার্চুয়ার ইন করে এই প্রতিবেদন দেয়ায় প্রতিবেদনটি সঠিক হয় নাই। ঘোড়ার আগে গাড়ি চলে গেছে। এজন্য আমরা পূর্ণ তদন্ত দাবি করছি।’
এ সময় দেবাশীষের আইনজীবী খ ম ইমতিয়াজ বিন হারুন জুয়েল সময়ের আবেদন করে বলেন তার মক্কেল অনিবার্য কারণবশত আদালতে হাজির হতে পারেন নাই। তিনি সময় প্রার্থনা করেছেন। এবং মৌখিকভাবে বলেন যে চেকটি উদ্ধারের জন্য মামলা করা হয়েছে সেটি দিয়ে মেহেরপুর সদর আমলি আদালতে এন আই এক্টের ১৩৮ ধারাতে একটি মামলা করা হয়েছে। তাই ওই চেক উদ্ধারের জন্য এই মামলা করে কোন লাভ নাই।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মুঃ তানভীর হাসান রুমান এ সময় উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনে মৃদুলের আবেদন মঞ্জুর করে পুনরায় অন্য কোন কর্মকর্তা দ্বারা তদন্ত করতে পুলিশকে নির্দেশ প্রদান করেন।
ইতোপূর্বে গত ৫ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১১টায় মেহেরপুরের সোডাপ মিলনায়তনে জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শহীদ সরফরাজ হোসেন মৃদুলের বিরুদ্ধে করা সংবাদ সম্মেলনে পাওনা টাকা ও ন্যায়বিচার না পেলে পরিবারসহ আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছিলেন মেহেরপুর জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য দেবাশীষ কুমার বাগচি মনু।
সে সময় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে দেবাশীষ কুমার বাগচি মনু বলেছিলেন, ‘আমি আওয়ামী পরিবারের সন্তান এবং আমি নিজেও বর্তমানে মেহেরপুর জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। পারিবারিক সূত্রে বহু বছর যাবৎ ঠিকাদারি ব্যবসা করে আসছি। সে ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ও মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেনের ছোট ভাই জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শহীদ সরফরাজ হোসেন মৃদুলের সঙ্গে যৌথভাবে ঠিকাদারি ব্যবসা শুরু করি।
২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত গণপূর্ত, জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা প্রকৌশলী, এলজিইডিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩০ থেকে ৩৫টা নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ করেছি। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ২৫ থেকে ২৭ কোটি টাকা। ২০২১ সালের প্রথম দিকে যৌথ ঠিকাদারি ব্যবসা পরিসমাপ্তি ঘটালে তার সঙ্গে আমার মূলধন ও লভ্যাংশসহ আনুমানিক দুই কোটি ৫০ লাখ টাকার বেশি পাওনা হয়। প্রাপ্য টাকা না পেয়ে আমি, আমার ও তার পরিবারের লোকজনসহ জেলা যুবলীগের অন্যান্য নেতৃবৃন্দকে অবহিত করি।
এক সময় সবার হস্তক্ষেপে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে আমার সঙ্গে হিসাব করতে রাজি হয়। আমি হিসাবে বসতে বললে বিভিন্ন অজুহাতে সময় ক্ষেপণ করে। একপর্যায়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললে তখন সে মৌখিকভাবে এক কোটি ৮০ লাখ টাকা দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মীমাংসা করে এবং আমাকে চলতি বছরের জুলাই মাসের ১৬ তারিখে ঢাকায় যেতে বলে। ঢাকার আদাবরে তার বাসার সামনে গেলে রিংরোড সাহাবুদ্দিন প্লাজার ওসিস কফিশপে বসে আমাকে ২৪ জুলাই তারিখ দিয়ে রূপালি ব্যাংক মেহেরপুর শাখার এক কোটি ৮০ লাখ টাকার একটি চেক প্রদান করে। আমি চেকে দেওয়া তারিখ অনুযায়ী ২৪ জুলাই টাকা উত্তোলনের জন্য অগ্রণী ব্যাংকে চেক জমা করি। এক সপ্তাহ পর ব্যাংক থেকে চেক ডিজঅনার দেখিয়ে সার্টিফিকেট প্রদান করে।
যেখানে লেখা আছে, গত ৪ এপ্রিল ২০২১ তারিখে অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওই চেক ব্যাংকে জমা দেওয়ার দিনই চেকদাতা শহীদ সরফরাজ মৃদুল চেকটি হারিয়ে গেছে বলে মেহেরপুর থানায় একটি মিথ্যা জিডি করে, যার নম্বর ১২৭৫। এর পর থেকে সে আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদান করে এবং আমি সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের হওয়ায় জাত তুলে গালাগাল করে। আমি নিরুপায় হয়ে গত ৩০ আগস্ট শহীদ সরফরাজ হোসেন মৃদুলের নামে একটি আইনি নোটিশ পাঠাই। একই দিন আমার বিরুদ্ধে সে আদালতে একটি পিটিশন মামলা করে। ওই মামলার কারণে ১ সেপ্টেম্বর আমার বাড়িতে পুলিশ তল্লাশি চালায়।
বর্তমানে আমি ও আমার পরিবার হুমকির মধ্যে রয়েছি। আমি সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ হিসেবে আমাকে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে মানসিকভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। আমাকে দেওয়া চেক ছিনিয়ে বা প্রশাসনিক ক্ষমতায় নিয়ে নেওয়া হলে এবং আমি ন্যায়বিচার না পেলে পরিবারসহ আত্মহত্যা করা ছাড়া আমার কোনো উপায় থাকবে না।’
উক্ত সংবাদ সম্মেলনটিতে মেহেরপুর জেলায় কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।