২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আমি জাহাজ নিয়ে চায়না থেকে লং বিচ পোর্টে যাই। লং বিচ সমুদ্র বন্দরটি আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে অবস্থিত। আমার সী ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো আমি ক্যালিফোর্নিয়াতে যাই। যদিও প্রায় প্রতিবছরই জাহাজে কারগো বা মালামাল লোডিং বা ডিসচার্জিং করার জন্য একাধিকবার আমেরিকার বিভিন্ন পোর্টে যেতে হয়। আমাদের জাহাজটি আয়রন ওর লোডিং করার জন্য আমেরিকার লং বিচ পোর্ট এ গিয়েছিল। সমুদ্র বন্দরটিতে আমরা প্রায় ৫ দিন অবস্থান করেছিলাম। লোডিং একটু ধীর গতিতে হওয়াই আমরা একাধিকবার লস অ্যাঞ্জেলেস শহরটি ঘুরে দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম।
লস অ্যাঞ্জেলেস শহরকে সিটি অফ অ্যাঞ্জেলেস বা দেবদূতের শহর বলা হয়। এটি বিশ্বের বিনোদন রাজধানী হিসেবেও পরিচিত। বহু বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন গনমাধ্যমে প্রচারিত চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন অনুষ্ঠানের সুবাদে শহরটির এক ধরনের গৌরবময় ও চাকচিক্যমন্ডিত মূর্তি সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে। বৃক্ষ সৌভিত রাজপথ, মহাসমুদ্র পারের বেলাভূমি ও হলিউডের সব তারকাদের শহর লস অ্যাঞ্জেলেস কোটি কোটি মানুষের কাছে স্বপ্নের শহর।
লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে গুরুত্বপূর্ণ টুরিস্ট স্পট গুলোর অন্যতম হলো হলিউড সাইন, ইকোপার্ক, অলভেরা স্ট্রিট, অ্যাঞ্জেলেস নগর ভবন, গৃফিত মানমন্দির,ভেনিস সৈকত ইত্যাদি।
নাগরিক কেন্দ্রের ১১ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে হলিউড এলাকাটি অবস্থিত যেখানে মার্কিন চলচ্চিত্র শিল্পের প্রাণকেন্দ্র। এখানকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর মধ্যে ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া, অক্সিডেন্টাল কলেজ এবং ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া এট লস অ্যাঞ্জেলেস উল্লেখযোগ্য। শহর কেন্দ্র থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত লস অ্যাঞ্জেলেস ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট বিশ্বের চতুর্থ ব্যস্ততম বিমানবন্দর।
লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং ওয়ার্ল্ড ফেমাস টুরিস্ট স্পট হলো হলিউড সাইন। আমার সেখানে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। হলিউডের অনেক মুভিতেই এই বিখ্যাত হলিউড সাইনটি দেখানো হয়। যাওয়ার সময়েই দেখতে পাই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে অনেক দর্শনার্থী এসেছে। ২০২৩ সালে হলিউড সাইন এর ১০০ বছর পূর্ণ হল। হলিউড সাইন্ টি ১৯২৩ সালের ৮ই ডিসেম্বর প্রথম স্থাপিত হয়েছিল। ইংরেজি বড় অক্ষরে সাদা রং এ হলিউড লেখা। এর একটি অক্ষর উচ্চতায় ৫০ ফিট এবং লেখাটি ৪৫০ ফিট লম্বা। এটি স্টিল কাঠামোতে নির্মিত। হলিউড সাইন টি সানতা মনিকা পর্বতের মাউন্ট লি তে অবস্থিত একটি দর্শনীয় স্থান।
লং বিচ সমুদ্র বন্দর থেকে হলিউড সাইন এর দূরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার। লং বিচ থেকে হলিউড যাওয়ার পথে রাস্তায় আমাদের একটি সাইনবোর্ড চোখে পড়ে সেখানে ইংরেজিতে লেখা লিটল বাংলাদেশ। জানতে পারি এই এলাকাতে বাংলাদেশী কমিউনিটির লোকজন বসবাস করে। যার জন্য স্থানীয় সরকার এলাকারটির নাম দিয়েছে লিটল বাংলাদেশ। সুদূর প্রবাসে বাংলাদেশের নামটি দেখে খুবই ভালো লেগেছিল। এলাকাটি লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের আলেকজান্দ্রিয়া ও নিউ হেমপসায়ার এভিনিউ এর মধ্যে অবস্থিত একটি লোকালয়। এর চারপাশে অবশ্য কোরিয়া টাউন রয়েছে।
লস অ্যাঞ্জেলেস শহরটি তার বিশাল আয়তন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, রৌদ্রজ্জ্বল নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু, মার্কিন চলচ্চিত্র শিল্পের প্রাণ ভোমরা হলিউড ও বিনোদন শিল্পের জন্য সুপরিচিত। জনসংখ্যার বিচারে এটি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক মহানগরের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহানগর। শহরটি প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলে একটি প্রশস্ত সমতল ভূমিতে এবং মেক্সিকো সীমান্তের কাছে অবস্থিত।
ভ্রমণের সময় অনুভব করলাম আশেপাশের পরিবেশ অনেক স্বাস্থ্যসম্মত। সুন্দর একটা পরিকল্পিত শহর। আমেরিকার অনেক সিটিতেই গিয়েছি তবে লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের পরিবেশটা সত্যিই মনমুগ্ধকর, যদিও এখানে জীবন যাত্রার ব্যয় আমেরিকার অন্যান্য স্টেটের থেকে অনেক বেশি।
লেখক: মাস্টার মেরিনার, এক্স ক্যাডেট, বাংলাদেশ মেরিন একাডেমী চট্টগ্রাম।