কেরুজ চিনিকলে ২০২৩-২৪ মৌসুমে আখ মাড়াই উপলক্ষে চিনিকলের বয়লিং হাউজে স্লো-ফায়ারিং দেওয়া হবে আজ শুক্রবার দুপুর ৩ টায় বয়লিং হাউজের সামনে। স্লো-ফাযারিং উপলক্ষে আজ শুক্রবার দুপুরে মিল হাউজের বয়লার বিভাগে এক আলোচনা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
দোয়া শেষে বয়লারে ২০২৩-২৪ মাড়াই মৌসুমের অগ্নিসংযোগের মধ্য দিয়ে স্লো-ফায়ারিং উদ্বোধন করবেন দর্শনা কেরু এ্যান্ড কোম্পানীর ব্যাবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন।
১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত চুয়াডাঙ্গা জেলার ঐতিহ্যবাহী দর্শনায় অবস্থিত এশিয়া মহাদেশের মধ্যে দ্বিতীয় ও দেশের একমাত্র ভারী চিনিশিল্প প্রতিষ্ঠান দর্শনা কেরু এ্যান্ড কোং (বাং) লিঃ। এ চিনিকল আজ নানা সমস্যায় জর্জরিত। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া মিলটির যেন সারা ঘায়ে পরিণত। প্রতিবছর এ মিল থেকে সরকার কোটি, কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করলেও যন্ত্রাংশ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ছিলো উদাসীন। কেরুজ চিনিকলটি আধুনিকায়ন করণে মিলের শ্রমিক-কর্মচারী ও এলাকাবাসীর কাংঙ্খিত দাবি বারবার হয়েছে উপেক্ষিত। চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগর মহতি উদ্যোগে মিলটিকে আধুনিকায়নের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রালয় থেকে সাড়ে ৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দের ব্যবস্থা করেন।
পরবর্তীতে আধুনিকায়ন কাজের জন্য ডিষ্টিলারী সহ বিভিন্ন উন্নয়নে মোট ১০০ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়। তারই আপ্রাণ প্রচেষ্টায় মিলটি আধুনিকতার ছোঁয়া পেলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কচ্ছপ গতিতে কাজ চলায় দীর্ঘ ১০ বছর অতিবাহিত হলেও পূরোপুরি আধুনিকায়নে রুপ নিতে পারেনি।
এদিকে বয়সের ভারে নুয়ে পড়া মিলটি প্রতি বছরেই পুরোনো যন্ত্রাংশ জোড়াতালি ও ঝালাই-মেরামত করে আখমাড়াই কার্যক্রম শুরু করতে হয়। যার ফলে শুরু থেকেই নানা রকম সমস্যার মোকাবেলার মধ্যদিয়ে টেনেহেঁচড়ে মাড়াই মৌসুম শেষ করতে হয় চিনিকলটির। ফলে লোকসান গুনতে হয় কোটি, কোটি টাকা। বর্তমানে আধুনিকায়নে বয়লিং, কেইন কেরিয়ার ও মিলহাউজের কাজ চলছে।
এরমধ্যে কিছু কাজ সম্পন্ন হলেও বেশির ভাগ কাজ অসম্পন্ন থাকায় মিলটি সম্পন্ন আধুনিকায়নে আরও এক,দুই বছর সময় লেগে যেতে পারে বলে একটি বিশ্বস্ত সুত্রে জানাগেছে। এ মৌসুমে লোকসান কাটিয়ে মুনাফা অর্জনের জন্য মিল কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করেছে নানামুখি পদক্ষেপ। আখচাষিদের সুবিধা নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি, শ্রমিক-কর্মচারীদের দিকেই খেয়াল রাখা হচ্ছে।
তবে বর্তমান প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন তিনি প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে যোগদানের পর থেকে পূর্বের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দর্শনা কেরুজ চিনিশিল্পকে লাভজনক স্থানে নিতে ও চিনিকলকে বাঁচিয়ে রাখতে আখ চাষ বৃদ্ধির লক্ষে কেরুজ মিল জোন এলাকায় ছুটছেন চাষিদের দ্বারে,দ্বারে। তেমনি প্রতিদিন কোন না কোন এলাকার চাষিদের সঙ্গে উঠান বৈঠক সহ সোজন্য মূলক আলোচনায় বসছেন। তিনার এমন উদ্দ্যগে এলাকার চাষিরা আখ চাষ করার কথা ব্যাক্ত করেছেন। সেই সাথে ২০২৩-২৪ মাড়াই মরসুমে প্রতিষ্ঠানটিকে কোন ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটির মধ্যে পড়তে না হয় সেদিক লখ্য রাখছেন। সেই সাথে মাড়াই মরসুম সফল করতে ওয়াটারট্রাইল সম্পন্ন সহ মিল হাউজ ও কেইন কেরিয়ার ট্রাইল দেওয়া হয়েছে।
এরমধ্যে ছোট খাটো ত্রুটির সন্ধান মিললে তা সারিয়ে নেয়া হবে। এ বছর মাড়াই মৌসুমে ১ লাখ ৫৪ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৪ হাজার মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। চিনিকলের নিজস্ব ১ হাজার ৫৫০ একর জমিতে ২৪ হাজার মেট্রিক টন আখ উৎপাদন করেছিল। এবং কৃষকের ৬ হাজার ৯৮২ একর জমির ৯৪ হাজার মেট্রিক টন আখ লাগিয়েছিলো। কিন্তু এবার মাত্র ৪৫ দিবসে আখ মাড়াই কার্যক্রম শেষ হয়ে যাবে। চলতি মাড়াই মৌসুমে কেরু চিনিকল ১ লাখ ৫৪ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৯ হাজার ৬২৫ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলো।
এ বিষয়ে কেরু এ্যান্ড কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বলেন, ২০২৩-২৪ মাড়াই মৌসুমে বড় ধরনের কোন যান্ত্রিক সমস্যার সম্মূখীন হতে না হয় সেজন্য সকল যন্ত্রাংশ ট্রাইল দেওয়া হচ্ছে পাশাপাশি কোন সমস্য আছে কিনা সেটিও দেখা হচ্ছে। তবে মিলটি মাড়াই মরসুম সুন্দর ও সুষ্ঠ ভাবে সম্পন্ন করতে সকল ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আশা রাখি সকল প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে মাড়াই মরসুম সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। সেই সাথে সকলের প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা সম্ভব হবে। তবে চিনি উৎপাদনের একমাত্র কাচামাল হচ্ছে আখ। তিনি এতদ্বা অঞ্চলের চাষিদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আরও বলেছেন, দেশের ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান, জেলার ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান কেরুজ চিনিকলকে রক্ষা করতে বেশি বেশি করে আখ চাষের কোনো বিকল্প নেই ।