২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরে মোট ২৭টি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছিল। বিনিয়োগ প্রস্তাব ছিল ২ হাজার কোটি ডলারের। এখন পর্যন্ত মাত্র ১০টি প্রকল্প অগ্রসর হয়েছে। অর্থ ছাড় হয়েছে ৪৭ হাজার কোটি টাকা। বাকি প্রকল্পগুলো আছে প্রাথমিক পর্যায়ে। গত ৭ বছরে যে ২৭ প্রকল্পে অর্থায়ন বা ঋণ প্রদানে আগ্রহ দেখিয়েছিল চীন, তার মধ্যে ১০ টি প্রকল্প বাংলাদেশ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে ৪টির কাজ শেষ, আর প্রকল্প চলমান আছে ৬ টি।
শেষ হওয়া ৪ টি প্রকল্পের মধ্যে আছে কর্ণফুলী টানেল। মোট ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কর্ণফুলী টানেলে চীনের ঋণ থেকে অর্থায়ন করা হয়েছে ৬ হাজার ৭০ কোটি টাকা। সম্প্রতি টানেলটি খুলে দেওয়া হয়েছে। এই টানেলের মধ্য দিয়ে কক্সবাজারের সাথে এবং মাতারবাড়ি যাওয়ায় সময় করে আসায় অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে বাংলাদেশ। দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার চীনা অর্থায়নে ৩ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬২ দশমিক ২ একর জমির ওপর নির্মিত দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রতিদিন ৫০ লাখ টন পয়োবর্জ্য পরিশোধন করতে পারবে, যা ঢাকার মোট পয়োবর্জ্যের ২০ থেকে ২৫ শতাংশের মত। ঢাকার আশপাশের নদীগুলোর দূষণ কমাতে এই পয়ঃশোধনাগার একটি বড় ভূমিকা রাখবে বলে সরকার আশা করছে। ফোর টায়ার জাতীয় ডাটা সেন্টার তথ্য-উপাত্ত নিরাপদে সংরক্ষণ ও নিরবচ্ছিন্ন মানসম্মত ই-সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নির্মিত হয়েছে। এ ডাটা সেন্টার প্রতিষ্ঠার ফলে দেশের তথ্য দেশেই সংরক্ষিত থাকছে। বছরে এ কোম্পানি থেকে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা মুনাফা হবে।
জি ক্লাউড স্থাপন সম্পন্ন হলে দেশের ৪৫ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে এবং কোম্পানির আয় আরও বৃদ্ধি পাবে। এটি বিশ্বের ৭ম বৃহত্তম ডাটা সেন্টার, যেখানে ডাটা ৯৯.৯৯৫% সুরক্ষিত। এই সেন্টার নির্মাণে অর্থায়ন করেছে চীন। ডেভেলপমেন্ট অব আইসিটি ইনফ্রা-নেটওয়ার্ক ফর বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট ফেজ থ্রি প্রকল্পটি শেষ হয়েছে। এর আওতায় ২ হাজার ৬০০ ইউনিয়নে ব্রডব্যান্ড সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে দেশের ৬০ শতাংশ মানুষকে ইন্টারনেট সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারগুলোকে সংযুক্ত করতে কারিগরি জ্ঞানের আদান-প্রদান বাড়ানো ও ইউনিয়ন পর্যায়ে উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা বাড়ানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এতে খরচ হয়েছে ১৫৬ দশমিক ৫৬ মিলিয়ন ডলার। এই অর্থ পুরোটাই পাওয়া গেছে চীনের দেয়া ঋণ থেকে।
সামনে যে ছয়টি প্রকল্পের কাজ চলছে তারমধ্যে আছে পদ্মা রেল সংযোগ, চট্টগ্রামের সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং বা এসপিএম, ঢাকা আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে, পিজিসিবি’র আওতায় বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন, ডিপিডিসি’র আওতায় বিদ্যুতের বিতরণ ব্যবস্থা, রাজশাহীতে ওয়াসার ভূ-উপরিস্থ পানি সরবরাহ প্রকল্প।
এছাড়া নতুন আরও ৬টি প্রকল্প নিয়ে কাজ হবে আগামীতে। চীনের ঋণ প্রকল্পের আওতায় গ্রহণ করা ১০ টি প্রকল্প প্রায় শেষ পর্যায়ে। ২য় পর্যায়ে আরো ৬টি প্রকল্প গ্রহণ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ, যেগুলোতে চীনের ঋণ থেকে অর্থায়ন করা হবে। এগুলোর মধ্যে আছে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের জন্য ৪ টি সমুদ্রগামী জাহাজ ক্রয়, তিস্তা নদী রক্ষা, পুনরুদ্ধার ও সার্বিক ব্যবস্থাপনা প্রকল্প, চট্টগ্রামে আনোয়ারায় ইকোনমিকাল জোন, আখাউড়া থেকে সিলেট রেললাইন ডুয়েলগেজে রুপান্তর, ডিজিটাল কানেক্টিভিটি ও সকল পৌরসভার জন্য খাবার পানি সরবরাহ প্রকল্প।
সংকটময় পরিস্থিতিতে চীন সবসময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। ১১ অক্টোবর রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, আমরা বন্ধু। আমরা সবসময় একে অপরের পাশে ছিলাম। যখনই কারো সংকট হয়েছে, চীটটন বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে। তিন বছর আগে কোভিড-১৯ মহামারির সময় চীন বাংলাদেশকে সহযোগিতা করেছে। বাংলাদেশ বর্তমানে ডেঙ্গুর খারাপ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ফলে চীনের অবশ্যই তাদের জন্য কিছু করা উচিৎ। এজন্য আমরা এই ডিভাইস দিয়েছি। এটি দিয়ে ডেঙ্গু পরীক্ষা-নীরিক্ষা করা যাবে, যাতে পরিস্থিতি উন্নতি করা যায়।
তিনি আরও বলেন, চীন ও বাংলাদেশের জনগণ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মধ্য দিয়ে উন্নয়নের কাজ করে যাচ্ছে। চীন বাংলাদেশের স্বাস্থ্য, অর্থনীতিতে সবসময় সহযোগিতা করে আসছে।