দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বানচালের উদ্দেশ্যে গত ২৯ অক্টোবর থেকে সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত টানা হরতাল-অবরোধ ডাক দিয়েছে বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো। কর্মসূচি সফল করতে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর নেতা কর্মীরা একের পর এক চোরাগোপ্তা হামলা করছে যানবাহনগুলোতে। শতশত যানবাহনে পেট্রোল বোমা মেরে পুড়িয়ে দিচ্ছে তারা, যা জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি করছে। শুধু পরিবহন সেক্টরেই নয়, হরতাল অবরোধের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দেশের প্রতিটি সেক্টরে। আর এতে ধীরে ধীরে ফুঁসে উঠছে দেশের সাধারণ মানুষ। বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ বিএনপির ডাকা হরতালের প্রতিবাদে নেমে আসছে রাজপথে।
তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে রবিবার ও সোমবার হরতালের দ্বিতীয় দিনে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, সাত মসজিদ রোড, আসাদগেট, মিরপুর সড়ক, সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়, নিউমার্কেট, শাহবাগ, মৎস্যভবন মোড়, প্রেস ক্লাব, পল্টন, কাকরাইল, গুলিস্তান, দৈনিক বাংলা মোড়সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে প্রতিটি সড়কেই যানবাহনের তীব্র চাপ। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টের কোথায় হরতাল সমর্থকদের পিকেটিংয়ে দেখা যায়নি। রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে কোনো রকম বাধা ছাড়াই যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে।
শিকড় পরিবহনের চালক সেলিম জানান, তার গাড়ি মিরপুর থেকে আসছে। গাড়ি ভর্তি যাত্রী। কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি। তবে যাত্রীদের মধ্যে এক ধরণের ভয়, আতঙ্ক আছে।
মোহাম্মদপুর থেকে ছেড়ে আসা গুলিস্তান অভিমুখী সিটি বাসের চালক মনির বলেন, বসিলা থেকে গাড়ি নিয়ে আসছি। রাস্তায় অনেক যাত্রী। গাড়িতেও যাত্রী আছে। মনির বলেন, `গতকালের তুলনায় আজকে বাস বেশি চলছে।‘ হরতালের সমালোচনা করে তিনি বলেন, `যারা হরতাল ডাকে তারা রাস্তায় থাকে না। কিন্তু হরতালের আগের রাতে গাড়িতে আগুন দিয়ে সবার মধ্যে ভয় ঢুকিয়ে দেয়। আমরা গরীব মানুষ, এই হরতালে গাড়ি বন্ধ থাকলে খাবো কিভাবে, সেজন্য গাড়ি নিয়ে বের হই।‘
বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় হরতাল ও অবরোধকে ‘অযৌক্তিক বর্ণনা করে ইতোমধ্যে পথে নেমেছে শিল্পী সমাজ, পেশাজীবী নানা সংগঠন। এমনকি বার্ষিক পরীক্ষার এই সময়ে হরতালের মতো কর্মসূচি দিয়ে শিক্ষাজীবনকে হুমকির মুখে ফেলার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন অভিভাবকবৃন্দও।
হরতালে উদ্বিগ্ন অভিভাবক সমাজ
সংসদ নির্বাচনের জন্য ৩০ নভেম্বরের মধ্যে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছিল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। কিন্তু গত ২৯ অক্টোবর থেকে টানা হরতালে উত্তপ্ত সারাদেশ। প্রতিদিনই দেশজুড়ে সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণ, গাড়িতে আগুন দেয়ার মতো ঘটনা ঘটছে। আবার নির্দেশনামতো এমন পরিস্থিতিতেই পরীক্ষা নিতে হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর। এতে সন্তানের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা। এমন পরিস্থিতিতে গত ১৮ নভেম্বর রাজধানীর ভিকারুন্নেসা স্কুল এন্ড কলেজের সামনে এক মানববন্ধনের মাধ্যমে উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন অভিভাবকরা।
সহিংসতা বন্ধে শাহবাগে মানববন্ধন
হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির প্রতিবাদে গত ১৮ নভেম্বর শাহবাগ জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন করেন দেশের শিল্পী সমাজ। ‘’ধ্বংসের বিরুদ্ধে শিল্পীসমাজ” এর ব্যানারে শিল্পীরা বিএনপির চলমান হরতাল অবরোধের নামে যে ধ্বংসাত্বক কর্মকান্ডকে ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করেন। শিল্পীদের ভাষ্যমতে, হরতাল অবরোধের মতো কর্মসূচি অভিধান থেকে হারিয়ে গিয়েছিল,সেগুলোকে আবার ফিরিয়ে এনেছে বিএনপি।
দেশের শিক্ষকসমাজের বিবৃতি
বিএনপি জামাতের অবৈধ হরতালের বিপক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিতযথা শিক্ষকবৃন্দ । শিক্ষকদের দাবি, হরতালের মতো কর্মসূচি দিয়ে বিএনপি জামাত শুধুমাত্র দেশের মানুষের ভোগান্তি সৃষ্টি করছে। তারা যেনো অনতিবিলম্বে হরতালের মতো নাশকতামূলক কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে এসে গণতান্ত্রিক উপায়ে দেশের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করে সে আহ্বান করেছেন শিক্ষকসমাজ।
দেশের সকল শ্রেণীপেশার মানুষ হরতালের বিপক্ষে, তারপরও কেনো বিএনপির এই হরতাল অবরোধ খেলা জানতে চেয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আনিসুর রহমান বলেন, সরকার পতনের আন্দোলনের নামে সারা দেশে হরতাল অবরোধের মতো কর্মসূচি দিয়ে দিনের পর দিন মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলছে বিএনপি। তারপরও কেনো এই হরতাল, কেনো এই অবরোধ। আমাদের মতো জনগনের কাছে এটা ‘অযৌক্তিক’।
বিএনপির অবরোধ অবরোধ কর্মসূচি ইতোমধ্যে ব্যর্থ হয়েছে দাবি করে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহ্মুদ বলেছেন, ‘রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম হয়েছে। মানুষ অবরোধ পালন করছে না, বরং ভয়ের ভাবটাও কেটে যাচ্ছে।’ বিএনপি নেতারা নিজেরা আত্মগোপনে থেকে কর্মী ও সন্ত্রাসীদের টাকা দিয়ে গাড়ি পোড়ানো, মানুষের ওপর হামলা পরিচালনা করাই তাদের অবরোধ কর্মসূচি। এগুলো কোনও রাজনৈতিক দলের কাজ না, সন্ত্রাসী সংগঠনের কাজ।