মেহেরপুরে আর্থসামাজিক উন্নয়নে গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে মতবিনিময় সভা

মেহেরপুরে আর্থসামাজিক উন্নয়নে করনীয় ও গণমাধ্যমের ভূমিকা শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে মেহেরপুর জেলা প্রেসক্লাবে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। মেহেরপুর জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি তোজাম্মেল আজমের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব চান্দুর সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন অবঃ আব্দুল মালেক, মেহেরপুর সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. গাজী রহমান, মেহেরপুর সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল আমিন, কাজীপুর ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক রিয়াজ উদ্দিন, শিক্ষক হাসান রুদ্র, সাংস্কৃতিক ব্যাক্তি শামীম জাহাঙ্গীর সেন্টু, আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক খ ম ইমতিয়াজ বিন হারুন জুয়েল ও অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

মতবিনিময় সভায় বক্তরা বলেন, একজন আত্মসচেতন ও বিবেকবান সংবাদকর্মী দেশ ও জাতির জন্য পথপ্রদর্শক। আধুনিক প্রচার মাধ্যম সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটিয়ে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করতে গণমাধ্যম সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। সুবিধাবঞ্চিত জনপদ ও নাগরিকদের আধুনিক ও সমৃদ্ধ মানুষে পরিণত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। গণমাধ্যমই পারে মানুষকে নতুন নতুন চিন্তা, ধারণা ও পদ্ধতি সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টি করে উন্নত সমাজ প্রতিষ্ঠায় সহায়ক ভূমিকা পালন করতে।

মতবিনিময় সভায় মেহেরপুর জেলা প্রেস ক্লাবের সকল সদস্যের উপস্থিতিতে শামিম জাহাঙ্গীর সেন্টু বলেন, মেহেরপুরের সাংস্কৃতি খেলাধুলা লস প্রজেক্ট। মানুষের টাকা হয়েছে কিন্তু সংস্কৃতি মনা মানুষ হারিয়ে গেছে। টাকার বিনিময়ে সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়াঙ্গন বিক্রি হয়ে গেছে।’

আবদুল্লাহ আল আমিন বলেন, গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ।’

খ ম ইমতিয়াজ বিন হারুন জুয়েল বলেন, ‘গণমাধ্যমের ভূমিকার কারণেই মুজিবনগর উপজেলার মর্যাদা পেয়েছে।’

প্রভাষক রিয়াজ উদ্দিন বলে, ‘রেমিটেন্স ও কৃষিতে এখন উন্নত হচ্ছে গ্রামগুলো। তবে শিক্ষার অবস্থা খুবই খারাপ। গ্রামের ছেলেরা এখন শিক্ষা নেয়ার পরিবর্তে প্রবাসে যেতে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। শিক্ষার হার কমে যাচ্ছে। এ ব্যাপারটি নিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের মনোযোগ দেয়া উচিত। ‘

অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মেহেরপুরে নারী শিশু নির্যাতন মামলার পরিমান বেশি। সব ক্ষেত্রে অস্থিরতা ও অসহিষ্ণুতার কারনে আর্থ সামাজিক উন্নয়নের অন্তরায় হচ্ছে। স্থানীয় পত্রিকা মেহেরপুর প্রতিদিনের মত সকল গণমাধ্যম ও সংবাদ কর্মীদের পেশাদারিত্ব বজায় রাখতে হবে। ‘




গাংনী পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতি কর্তৃক উপকরণ বিতরণ

পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতি (পিএসকেএস)-এর ‘পলাশীপাড়া শাখাতে সংস্থার সমন্বিত কৃষি ইউনিট এর কৃষি খাতের আওতায়, পরিবেশবান্ধব মালচিং পেপার ব্যবহার করে উচ্চমুল্যের ফসল চাষ ওউচ্চ ফলনশীল নতুন জাতের ফসল চাষ প্রদর্শনীর আওতায় ৯ জন উপকারভোগীর মাঝে উপকরণ বিতরণ করা হয়।

বিতরণকৃত উপকরণ সমূহের মধ্যে ছিল পরিবেশবান্ধব মালচিং পেপার, ট্রাইকো-কম্পোস্ট সার, রাসায়নিক সার, কিটনাশক, মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট,গমের বীজ, ছোলার বীজ , ভুট্টার বীজ (পপকর্ন), শসার বীজ, বেগুনের চারা সহ প্রয়োজনীয় উপকরণ সাইনবোর্ড ও রেজিষ্টার খাতা বিতরণ করা হয়। পাশাপাশি উপকারভোগীদেরকে প্রদর্শনীর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসহ কিভাবে এর রক্ষণাবেক্ষন করতে হবে সে সম্পর্কে দিক নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

উপকরণ বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন মো: রমজান আলী, প্রেসিডেন্ট পিএসকেএস, পলাশীপাড়া শাখার শাখা ব্যবস্থাপক, এবং পলাশীপাড়া শাখার কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ সমন্বিত কৃষি ইউনিটের সকল কর্মকর্তাগন।




সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও অপরাজনীতি

স্বাধীন বাংলাদেশে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও অপরাজনীতির সূচনা হয়েছিলো ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে। ইতিহাসের নৃশংসতম এই ঘটনায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের দুই সদস্য শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ছাড়া বাকি সবাইকে হত্যা করা হয়। পরিবার ও পরিবারের বাইরের সদস্য মিলে মোট আঠারো জনকে হত্যা করা হয় এই দিনে, প্রায় একই সময়ে।

হত্যাকাণ্ডের পরপরই খুনিচক্র ‘বাংলাদেশ বেতার’ দখল করে। নাম পাল্টে রাখে ‘রেডিও বাংলাদেশ’। আত্মস্বীকৃত খুনিদের অন্যতম মেজর ডালিম বেতার ভাষণে বলেন – “অদ্য সকাল হতে খন্দকার মোশতাক আহমেদের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করিয়াছে। শেখ মুজিব ও তাঁর খুনি-দুর্নীতিবাজ সরকারকে উৎখাত করা হইয়াছে। এখন হইতে সারা দেশে সামরিক আইন জারি করা হইলো। আপনারা সবাই আমাদের সহিত সহযোগিতা করুন। আপনারা নিশ্চিন্তে থাকুন কোনো অসুবিধা আপনাদের হইবে না। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।”

বিশ্বাসঘাতক খন্দকার মোশতাক বেতার ভাষণে বলেন – “এক ঐতিহাসিক প্রয়োজনে আজ দেশ এবং দেশবাসীর বৃহত্তর স্বার্থের খাতিরে পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা ও দেশবাসীর উপর নির্ভর করে দেশের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব নয়া সরকারের রাষ্ট্রপতি হিসেবে আমাকে গ্রহণ করতে হয়েছে। দেশের দেশপ্রেমিক সামরিক বাহিনী এই পদক্ষেপের সাফল্যের জন্য বীরের মতন এগিয়ে এসেছে।”

২৫ আগস্টে মেজর জেনারেল কেএম শফিউল্লাহকে অপসারণ করে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব দেয়া হয় এবং সারাদেশে সামরিক বিধি জারি করে বেশ কয়েকটি সংক্ষিপ্ত সামরিক আদালত গঠন করা হয়। মুখে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বললেও দেশে চলে সামরিক শাসনের তুগলকি কাণ্ড। ৩০ আগস্ট ১৯৭৫ তারিখে এক সরকারি আদেশে সব রাজনৈতিক কর্মতৎপরতা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে সেই প্রথম রাজনীতি করার স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়। শুরু হয় অপরাজনীতির ধারা। খন্দকার মোশতাক তার অবৈধ মন্ত্রিসভায় আরও অনেককে ভয়ভীতির মুখে অন্তর্ভুক্ত করতে পারলেও চার জাতীয় নেতা, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এইচএম কামরুজ্জামানকে বশে আনতে না পেরে কারাবন্দি করে।

এরপর ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭৫ তারিখে জারি করা হয় কুখ্যাত ‘ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স’। অবৈধ রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাকের এই অধ্যাদেশের মূল উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের রক্ষা করা। অধ্যাদেশের প্রথম অংশে বলা হয় – ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে বিদ্যমান আইনের পরিপন্থী যাহা কিছুই ঘটুক না কেন, এ ব্যপারে সুপ্রিম কোর্টসহ কোনো আদালতে মামলা, অভিযোগ দায়ের করা বা কোনো আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়া যাবে না।’ অধ্যাদেশের দ্বিতীয় অংশে বলা হয় – ‘রাষ্ট্রপতি উল্লিখিত ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে যাদের প্রত্যয়ন করবেন তাঁদের দায়মুক্তি দেয়া হলো।’

চরম অস্থিতিশীল পরিস্থিতির চড়াই উতরাইয়ের উত্তাল সময়ের মধ্যে ০৩ নভম্বেরের শেষরাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সকল নিয়মনীতি ভঙ্গ করে খুনির দল কারাগারে প্রবেশ করে এবং জাতীয় চার নেতাকে ব্রাশ ফায়ারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সেই রাতেই বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে খুনিচক্রকে ব্যাংকক পাঠিয়ে দেয়া হয়। খন্দকার মোশতাকের উপর বিদেশি প্রভু এবং দেশি ষড়যন্ত্রকারীদের ন্যস্ত দায়িত্ব ছিলো এই পর্যন্তই।
নীল নকশা অনুযায়ী ৬ নভেম্বর ১৯৭৫ এ সামরিক আইনের বিধি সংশোধন করে সুপ্রিমকোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমের নিকট মোশতাক ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। ওই দিন রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণের পর প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম বেতারে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে বলেছিলেন, ‘… গত ১৫ আগস্ট কতিপয় অবসরপ্রাপ্ত এবং চাকরিচ্যুত সামরিক অফিসার এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ও তাঁর পরিবার-পরিজনদের হত্যা করে। খন্দকার মোশতাক আহমদ রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করে সামরিক আইন জারি করেন। প্রকৃতপক্ষে এই ঘটনার সঙ্গে সামরিক বাহিনী সংশ্লিষ্ট ছিল না। দেশবাসী আশা করেছিল, দেশে আইনশৃঙ্খলা ফিরে আসবে, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।

কিন্তু আমরা সবাই নিরাশ হয়েছি। দেশে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এমনকি সম্প্রতি কারাগারে অন্তরীণ কিছু বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। …দেশে সামরিক আইন জারি রয়েছে। আমি একটি নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় অন্তর্র্বতীকালীন সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছি। আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা এবং ন্যূনতম সময়ের মধ্যে অবাধ নিরপেক্ষ সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা। আমরা এই দায়িত্ব ১৯৭৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, অথবা সম্ভব হলে তার পূর্বেই পালন করতে বদ্ধপরিকর।’

৭ নভেম্বর ১৯৭৫ তারিখে জিয়াউর রহমান বন্দিদশা (খালেদ মোশাররফ কর্তৃক) থেকে কর্নেল তাহেরের আনুকূল্যে মুক্তিলাভ করেন। মুক্ত হয়েই জিয়া দ্রুত দেশি-বিদেশি শক্তির সঙ্গে সমঝোতা করে কর্নেল তাহের থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেন এবং ক্ষমতার মূল কেন্দ্রের কর্তৃত্ব নিয়ে নেন। যে কারণে প্রেসিডেন্ট সায়েম জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া দ্বিতীয় ভাষণ দিতে বাধ্য হন। এ ভাষণে তিনি বলেন, ‘… পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় প্রশাসন পরিচালনার জন্য আমরা কতিপয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।

প্রশাসনিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্যে দেশে সামরিক আইন প্রশাসন কাঠামো গঠন করা হয়েছে। এই কাঠামোতে রাষ্ট্রপতি স্বয়ং প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হবেন। এতে তিনজন উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক থাকবেন। তাঁরা হচ্ছেন সেনাবাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান, নৌবাহিনী প্রধান কমোডর মোশাররফ হোসেন খান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এমজি তাওয়াব।‘ প্রিয় পাঠক, লক্ষ্য করবেন বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দুজন রাষ্ট্রপতিই বেসামরিক হলেও তারাই হলেন প্রধান সামরিক শাসক!

৩১ ডিসেম্বর ১৯৭৫এ দালাল আইন বাতিল করে দেয়া হয়। এতে সমস্ত যুদ্ধাপরাধীদের কারাগার এবং অভিযোগ থেকে মুক্ত করে দেয়া হয়। শহীদদের রক্তস্নাত বাংলাদেশে বুক ফুলিয়ে চলতে শুরু করে রাজাকার, আলবদর, আল শামস্ বাহিনীর সদস্যরা। ৩ মে ১৯৭৬ তারিখে সরকারি এক অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে সংবিধানের ৩৮নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল করে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। যে কারণে মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলাম, পিডিপি, নেজামে ইসলামসহ অপরাপর ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলসমূহ আবার তাদের তৎপরতা শুরু করে। রাষ্ট্র-সমাজ আর রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হয় যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত রাজাকার, আলবদর, আল শামস্ বাহিনীর সদস্যরা।

১৭ জুলাই ১৯৭৬ এ এক বিশেষ সামরিক আদালতে ‘সরকার উৎখাত ও সেনাবাহিনীকে বিনাশ করার চেষ্টা চালানোর’- অভিযোগে জাসদনেতা সেক্টর কমান্ডার কর্নেল তাহেরকে মৃত্যুদণ্ড এবং এমএ জলিল, আ.স.ম আবদুর রব, শাজাহান সিরাজ, হাসানুল হক ইনু, তাত্ত্বিক নেতা সিরাজুল আলম খান সহ আরও অনেককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদের শাস্তি দেয়া হয়। ২১ জুলাই ১৯৭৬ তারিখে আন্তর্জাতিক সকল আইনকানুন লঙ্ঘন করে পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল তাহেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়।

২৮ জুলাই ১৯৭৬ তারিখে বিচারপতি সায়েমের সামরিক সরকার রাজনৈতিক দলবিধি জারি করে। আওয়ামী লীগ তাদের সিনিয়র সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন আহমদকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করে। খুনি খন্দকার মোশতাকের নবগঠিত ডেমোক্র্যাটিক লীগ এবং স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সরকারি অনুমোদন পেলেও আওয়ামী লীগ নিয়ে টালবাহানা শুরু হয়। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটি বাদ দেয়ার জন্য পত্র দেয়া হয়।

শেষ পর্যন্ত বিচারপতি সায়েমের সরকার ১৯৭৬ সালের ৪ নভেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল হিসেবে অনুমোদন দেয়। বিএনপির নেতৃবৃন্দ প্রায়ই বলে থাকেন, জেনারেল জিয়া বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা এবং আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল করার অনুমতি দাতা। এ কথাটি সর্বৈব মিথ্যা। কারণ, সে সময় রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ছিলেন বিচারপতি সায়েম।

১৯৭৬ সালের ২৯ নভেম্বর, সেনাপ্রধান ও উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল জিয়া প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক পদ গ্রহণ করেন। গ্রেফতার করা হয় আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মালেক উকিল, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাজেদা চৌধুরী, আবদুল মোমেন তালুকদার, সালাউদ্দিন ইউসুফ, মোজাফফর হোসেন পল্টু, রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া এবং ন্যাপ নেতা মতিয়া চৌধুরীসহ আরও অনেককে।

লন্ডনের বিখ্যাত ‘গার্ডিয়ান’ পত্রিকায় বলা হয়, ‘প্রশাসন ক্ষেত্রে সায়েমের (প্রেসিডেন্ট) কোন ভূমিকা ছিল না এবং কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে পরামর্শও করা হতো না। নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তিনি পীড়াপীড়ি করছিলেন এবং শাসনক্ষমতা থেকে সামরিক বাহিনীকে বিদায় দেয়ার জন্য তিনি ঘরোয়াভাবে শলা-পরামর্শ শুরু করেছিলেন। এখন তাঁকে ছুড়ে ফেলে দেয়া হবে। সায়েমকে অসামরিক প্রেসিডেন্ট হিসেবে এতদিন রাখা হয়েছিল জিয়ার সামরিক শাসনের চেহারা ঢেকে রাখার জন্য।’

১৯৭৭ সালের ২১শে এপ্রিল বিচারপতি সায়েম পদত্যাগে বাধ্য হন এবং জেনারেল জিয়া রাষ্ট্রপতি হন। প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব ছেড়ে দেয়া প্রসঙ্গে বিচারপতি সায়েম বলেন ‘যেহেতু জিয়া প্রেসিডেন্ট হতে চেয়েছেন, এবং আমার মনে হয়েছে যে, উপদেষ্টা কাউন্সিলের অধিকাংশ সদস্যই তাঁকে সমর্থন করেছেন, তাই আমি তাঁকে আবার জিজ্ঞেস করি যে তিনি নিজে কোন হুমকির সম্মুখীন না হয়ে প্রেসিডেন্টের দায়িত্বাবলী সামলাতে পারবেন কি না’ তিনি হ্যাঁ সূচক জবাব দেন। … প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার আগ মুহূর্তে আমি জিয়াকে বলি, আমি যেহেতু নির্বাচন করে যেতে পারলাম না, তাই আপনার প্রতি অনুরোধ করবো নির্বাচন আয়োজনের। তিনি আমাকে নিশ্চয়তা দিয়ে বলেন, তিনি নির্বাচন করবেন। শুনে আমি খুশি হই। কিন্তু আমি তখন বুঝতে পারিনি যে, নির্বাচনে তিনি নিজেই অংশ নেবেন। সেরকম ক্ষেত্রে সেনাপ্রধান থাকা অবস্থাতেই এবং সামরিক আইনের অধীনে প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবেও, অর্থাৎ ক্ষমতাসীন হয়েই তিনি নির্বাচন করবেন এবং সেই নির্বাচনে নিজে অংশগ্রহণ করবেন এমন চিন্তা তখন আমার মাথায় আসেনি।’

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এবং একই সঙ্গে সেনাবাহিনীপ্রধান জেনারেল জিয়া জিয়াউর রহমান তার ওপর জনগণের আস্থা আছে কি না তা যাচাইয়ের জন্য ৩০ মে ১৯৭৭ দেশব্যাপী গণভোট অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন। সে সময় দেশে ভোটারের সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৮৩ লাখ ৬৩ হাজার ৮৫৬ জন। অবিশ্বাস্যভাবে সরকারি ঘোষণায় বলা হয় ৮৮.৫% ভোটার গণভোটে অংশ নিয়েছেন এবং জিয়াউর রহমানের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ সূচক ভোট পড়েছে ৯৮.৮৮%। এ নির্বাচন প্রসঙ্গে বিচারপতি সায়েম বলেন – “বস্তুত জিয়া তাঁর অবস্থান সংহত করার উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যে একটা গণভোট করে ফেলেন। তাঁর প্রতি এবং তাঁর ঘোষিত নীতি ও কর্মসূচীর প্রতি ভোটারদের আস্থা আছে কি না তাই ছিল গণভোটের বিষয়। কিন্তু সেই গণভোটে হ্যাঁ বাক্সে এত বেশি ভোট পড়ে যে, জনগণ সেই ফলাফলকে হাস্যকরভাবে অবিশ্বাস্য মনে করে।” আওয়ামী লীগ এবং জাসদ ‘হ্যাঁ-না’ ভোট বর্জন করে।

১৯৭৮ সালের ৫ এপ্রিল জেনারেল জিয়ার সরকার বাংলাদেশ নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে এক অধ্যাদেশ জারি করে। এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে স্বাধীনতা বিরোধীদের এবং বিদেশে পালিয়ে থাকা আলবদর-রাজাকারদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। ২৮ এপ্রিল ১৯৭৮ জেনারেল জিয়ার নেতৃত্বাধীন সামরিক সরকার একটি নতুন অধ্যাদেশ জারি করে। এতে বলা হয়, সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে একমাত্র সেনাবাহিনীপ্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমান রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে পারবেন এবং রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন।

বন্দুকের জোরে গণতন্ত্রের নামে ক্ষমতার অপব্যবহারের এ ধরনের নজির সারা বিশ্বে বিরল। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর সকল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে জিয়া নতুন রাজনৈতিক দল ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল’ সংক্ষেপে বিএনপি গঠন করেন। একই সঙ্গে দলের চেয়ারম্যান পদ গ্রহণ করেন। তখনো দেশে কোনো সাধারণ নির্বাচন হয়নি বা জিয়া সামরিক বাহিনী থেকে পদত্যাগ করেনি।

১৫ ডিসেম্বর ১৯৭৮ প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়া এক ফরমান জারি করে রাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন এনে প্রেসিডেন্টের হাতে প্রায় সকল ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করেন। ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পর নির্বাচনী প্রচারের স্বল্প সুযোগ দিয়ে ২৭ জানুয়ারি ১৯৭৯ বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষিত হয়। আওয়ামী লীগসহ বিরোধী দলসমূহ আপত্তি জানায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন এক ঘোষণায় ২৭ জানুয়ারির পরিবর্তে ১৮ ফেব্রূয়ারি ১৯৭৯ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পুনঃতফসিল ঘোষণা করে।

সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ায় এবং নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে দেয়ায় বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহ নির্বাচনে অংশ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। শুরু থেকেই নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় থাকলেও সামরিক সরকারের মুখোশ উন্মোচন এবং আন্দোলনের অংশ হিসেবেই আওয়ামী লীগসহ অপরাপর রাজনৈতিক দলসমূহ এ নির্বাচনে অংশ নেয়। ক্ষমতাসীন জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন নবগঠিত বিএনপি দুই-তৃতীয়াংশ আসন লাভ করে।

অপরাজনীতির মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা পাকাপোক্ত করার পর ১৯৭৯ সালের ৬ এপ্রিলে সংসদের প্রথম অধিবেশনেই জারি করা হয় কুখ্যাত ‘ইনডেমনিটি এক্ট’ । এটি মোশতাকের ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সের চেয়ে আরও ভয়াবহ, আরও অনেক বেশি নির্মম। এই আইনে বলা হলো – “১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হইতে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল তারিখের (উভয় দিনসহ) মধ্যে প্রণীত সকল ফরমান, ফরমান আদেশ, সামরিক আইন প্রবিধান, সামরিক আদেশ, কাজকর্ম, ব্যবস্থা বা কার্যধারাসমূহ ১) এতদ্বারা অনুমোদিত ও সমর্থিত হইলো, ২) ওই সকল আদেশ, কাজকর্ম, ব্যবস্থা বা কার্যধারাসমূহ এতদ্বারা বৈধভাবে প্রণীত, কৃত ও গৃহীত হইয়াছে বলিয়া ঘোষিত হইল, এবং ৩) তৎসম্পর্কে কোন আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা কর্তৃপক্ষের নিকট কোনো কারণেই কোন প্রশ্ন উত্থাপন করা যাইবে না।“

এই আইনের অর্থ দাঁড়ালো এরকম – ‘৭৫ এর ১৫ আগস্টে সংঘটিত বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা, শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশু রাসেল সহ ১৮ জনের হত্যা বৈধতা পেলো এবং বলে দেয়া হলো কোথাও এর কোনো বিচার চাওয়া যাবে না’ ১৯৭৫ এর ০৩ নভেম্বরে জাতীয় চার নেতার জেল হত্যা বৈধতা পেলো এবং বলে দেয়া হলো কোথাও এর কোনো বিচার চাওয়া যাবে না, ‘৭৫ এর ৩১ ডিসেম্বরে বাতিলকৃত দালাল আইন বাতিলই থাকবে, ফিরিয়ে আনা যাবে না, ১৯৭৬ সালের ০৩ মে এ সংবিধানের ৩৮ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল করে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করার সুযোগ করে দেয়ার বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না, খুনিচক্রকে বিদেশে পাঠানো এবং বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেয়ার বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না।

খালেদ মোশাররফ হত্যার বিচার, কর্নেল তাহের হত্যার বিচার, সেনা ক্যুতে নিহত হাজার হাজার সামরিক সদস্যদের বিচার বহির্ভূত হত্যার বিচার – কোনো কিছুর ব্যপারেই বিচার চাওয়াতো দূরের কথা, মামলা পর্যন্ত করা যাবে না, ‘৭৭ এর প্রহসনের হাঁ – না গণভোটকে বৈধতা দেয়া হলো’ সবচেয়ে বড় কথা – অসাংবিধানিক উপায়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের প্রক্রিয়াকে বৈধতা দেয়া হলো! জিয়াউর রহমানের এই ইনডেমনিটি আইনের চেয়ে বড় ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের’ উদাহরণ পৃথিবীর ইতিহাসে আর একটিও খুঁজে পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতির বীজ বপন করা হয়েছিলো ১৯৭৯ সালের এই ইনডেমনিটি আইনের মাধ্যমেই – যার খেসারত আমরা আজও দিয়ে চলছি।

লেখক: উপ-উপাচার্য, বুয়েট।




সংসদ নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের উদ্বেগ

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একটি আন্তর্জাতিক মহলের ‘অযাচিত’ হস্তক্ষেপে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের পাঁচশ’র বেশি শিক্ষক গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ, জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যায়ের সদস্য সচিব অধ্যাপক বশির আহমেদ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি চলমান অবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত সব ধরনের শিষ্টাচার লঙ্ঘন করে, সে দেশের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বাংলাদেশের তিনটি রাজনৈতিক দলকে নিঃশর্ত সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে চিঠি দিয়েছে। আসন্ন নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক করার সব ধরনের উদ্যোগ নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে, সেই সময়ে এই ধরনের চিঠি বিতরণ এবং হস্তক্ষেপ শিষ্টচার বহির্ভূত। রাষ্ট্রদূতের পাঠানো চিঠিতে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাদানকারীদের ওপর ‘ভিসা নীতি’ প্রয়োগের পুরোনো হুমকি ব্যক্ত করা হয়েছে। হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির নামে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, শিল্প-কলকারখানা ভাঙচুর, পুলিশ ও সাধারণ পথচারী হত্যা, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ভাঙচুর ও ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করলেও তথাকথিত মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের ফেরিওয়ালা রাষ্ট্রটি এ বিষয়ে কোনো কথা বলেনি, এমনকি সুষ্ঠু নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ করার দায়ে তাদের উপর ভিসা নীতিও প্রয়োগ করেনি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বিবৃতিতে বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন সরকার ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিদের পক্ষাবলম্বন করে অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে গণহত্যায় সহযোগিতা করেছিল। একই ধারাবাহিকতায় বিএনপি-জামায়াত সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনে জনসমর্থন না পেলেও ওই দেশের রাষ্ট্রদূতের পক্ষপাতমূলক আচরণে উৎসাহিত হয়ে তারা আন্দোলনের নামে সহিংসতা চালিয়ে যাওয়ার প্রয়াস পাচ্ছে। ’

বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ মনে করে একটি সার্বভৌম দেশের নাগরিক হিসেবে এদেশের জনগনের নিজস্ব স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং স্বাধীনভাবে নিজের ভোট দেয়ার অধিকার রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের এ ধরণের পদক্ষেপ এদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি এবং দেশের মান মর্যাদা ক্ষুন্ন করেছে। স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের প্রতি সম্মান জানিয়ে, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন ও সরকারের প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানোনো হয়।




মেহেরপুরে ইক্-র নূরানী বয়ষ্ক কুরআন শিক্ষা কেন্দ্র ছাত্রদের বিদায় অনুষ্ঠান

ইক্-র নূরানী বয়ষ্ক কুরআন শিক্ষা কেন্দ্র প্রথম ব্যাচের ছাত্রদের বিদায় ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে মেহেরপুরের বোস পাড়া বায়তুস সালাম জামে মসজিদে প্রথম ব্যাচের ছাত্রদের বিদায় ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

ইক্-র নূরানী বয়ষ্ক কুরআন শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষক মুহাঃ রফিকুল ইসলাম নূরানীর সভাপতিত্বে ইক্-র নূরানী বয়ষ্ক কুরআন শিক্ষা কেন্দ্রের পরিচালক মোঃ সাজু শেখের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মুফতি হাফিজুর রহমান।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মোঃ সিরাজউদ্দিন।

অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর জেলা ইমাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান, পেয়াদাপাড়া জামে মসজিদের ইমাম মুফতি নুরুল ইসলাম, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডঃ মোঃ রবিউল ইসলাম আবির, পবিত্র কুরআন শিক্ষার আশর ও প্রান্ত মেমোরিয়াল ট্রাস্টের পরিচালক আশরাফুল আলম বাচ্চু, মেহেরপুর ইসলামিক ফাউন্ডেশন মডেল কেয়ারটেকার মোঃ আব্দুল ওহাব, বোস পাড়া বায়তুস সালাম জামে মসজিদে সভাপতি আব্দুল বারী সহ ইক্-র নূরানী বয়ষ্ক কুরআন শিক্ষা কেন্দ্র প্রথম ব্যাচের বিদায়ী ছাত্র এবং নতুন ছাত্ররা উপস্থিত ছিলেন।




বাংলাদেশ আবারও ইউনেস্কোর নির্বাহী বোর্ডের সদস্য নির্বাচিত

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সংস্থার (ইউনেস্কো) কার্যনির্বাহী বোর্ডের সদস্য হিসেবে আবারও নির্বাচিত হয়েছে বাংলাদেশ। ১৫ নভেম্বর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ইউনেস্কো সদর দপ্তরে সংস্থাটির সদস্য রাষ্ট্রসমূহের ভোটে বাংলাদেশ সদস্য নির্বাচিত হয়।

বাংলাদেশ ২০২৩-২০২৭ মেয়াদের জন্য ইউনেস্কোর নির্বাহী বোর্ডের সদস্য নির্বাচিত হলো। নির্বাচনে বাংলাদেশ ১৮৪ ভোটের মধ্যে মধ্যে ১৮১ ভোট লাভ করে।

নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণার পর ইউনেস্কোর মহাপরিচালক অঁদ্রে আজুলে বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে অভিনন্দন জানান এবং উভয়ে একযোগে আগামীদিনেও কাজ করবার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

ভোটের ফল প্রকাশের ফ্রান্স থেকৈ শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, এই নির্বাচনী জয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে প্রাণঢালা অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই। তাঁর প্রাজ্ঞ, দূরদর্শী, সাহসী নেতৃত্বে অগ্রগামী বাংলাদেশ আজ বিশ্বসভায় সবার প্রশংসা ও আস্থা অর্জন করেছে।

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ইউনেস্কোর সম্মেলনে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অন্যদের মধ্যে ইউনেস্কোর স্থায়ী প্রতিনিধি এ্যাম্বাসেডর খন্দকার মো. তালহা, দূতাবাসের প্রথম সচিব ওয়ালিদ বিন কাসেমসহ উপস্থিত ছিলেন।




আলমডাঙ্গার হারদী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের কর্মী সভা

আলমডাঙ্গার হারদী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের উদ্যোগে কর্মী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় হারদী মীর সামছদ্দীন আহম্মেদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এ কর্মি সভার আয়োজন করা হয়।

কর্মী সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন।

প্রধান অতিথির বক্তব্য এমপি ছেলুন জোয়ার্দ্দার বলেন,আওয়ামী লীগ হলো উন্নয়নের সরকার।আওয়ামীলীগ যখনই ক্ষমতায় আসে দেশের উন্নয়ন হয়। দেশের মানুষের কল্যাণে বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা কাজ করে যাচ্ছেন। আর বিএনপি হলো অগ্নি সন্ত্রাসের দল। দেশে কোন উন্নয়ন তারা করেনি। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তারা সন্ত্রাসীদের লালন পালন করেছে। মানুষ ঘরে ঘুমাতে পারেনি। গরু বিক্রি করা টাকা সন্ত্রাসীরা নিয়ে গেছে।
রাত বাহিনীর লোকজনকে বাড়ির ছাগল মুরগি জবাই করে খেতে দিতে হয়েছে। চাঁদা দিতে হয়েছে। এই অঞ্চলের মানুষ দুূর্বিসহ জীবন কাটিয়েছে।

বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় আমাদের নেত্রীকে হত্যার জন্য আর্জেস গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল। এই বোমা বাইরে পাওয়া যায়না। আপনারা আপনাদের লোককে এই বোমা সরবরাহ করেছেন। আল্লাহ’র রহমতে সেদিন নেত্রী প্রাণে বেঁচে গেছে। দেশের মানুষের উপর অত্যাচার নির্যাতন করেছেন। দেশের কোন উন্নয়ন করেননি।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই সন্ত্রাস দমন করেছে। তৎকালিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছিলেন সন্ত্রাসীরা যদি মাটির নীচে থাকে সেখান থেকে তুলে নিয়ে আসবো। আজকে সন্ত্রাস দমন করেছে আওয়ামীলীগ সরকার। মানুষ আজ সুখে শান্তিতে বসবাস করছে। ফের যদি বিএনপি কোন ভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসে ওই সন্ত্রাসীরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। মানুষকে আবারও বিপদগ্রস্ত হতে হবে। সেজন্য এই কথাগুলো আমাদের মাথায় রাখতে হবে।

তিনি বলেন,বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা এই ১৫ বছরে দেশের মানুষের জন্য যে উন্নয়ন করেছে,তা আর কেউ করে নাই। আমাদের সরকারের আমলে, সারের জন্য কৃষককে লাইন দিতে হয়না। গুলি খেয়ে মরতে হয়না। গ্রামে গ্রামে রাস্তা করে দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের মানুষের চিকিৎসার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক করে দেওয়া হয়েছে। ফ্রী ঔষধ দেওয়া হচ্ছে। যে ক্লিনিক বিএনপির আমলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সেখানে আজ মানুষ চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন। পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে,কর্ণফুলি ট্যানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে,মেট্রোরেল চালু হয়েছে। মানুষ সুবিধা ভোগ করছে। প্রত্যেক উপজেলায় মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। এই রাস্তাঘাট স্কুল কলেজ,মসজিদ মাদ্রাসা, ইলেকট্রিসিটিসহ সব ধরনের সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন।

আজকে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে শেখ হাসিনাকে আবারও ক্ষমতায় আনতে হবে। নৌকা প্রতিককে বিপুল ভোটে বিজয়ী করতে হবে।

হারদী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান আশিকুজ্জামান ওল্টুর সভাপতিত্বে কর্মী সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্নসাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম টোটন জোয়াদ্দার, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সী আলমঙ্গীর হান্নান, মাসুদুজ্জামান লিটু বিশ্বাস,সাবেক বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদব শহিদুল ইসলাম খান, জেলা আওয়ামীলীগ নেতা শওকত আলী,আলমডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবু মুছা, সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী, চুয়াডাঙ্গা পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি আলাউদ্দিন হেলা, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের, জেলা যুবলীগের সাবেক আহবায়ক আরেফিন আলম রঞ্জু, আলমডাঙ্গা পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন,সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান ফারুক, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সহসভাপতি আলহাজ্ব লিয়াকত আলী লিপু মোল্লা, হারদী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আইনাল হক, আলমডাঙ্গা উপজেলা সাবেক প্রচার সম্পাদক মাসুদ রানা তুহিন, পৌর যুগ্ম সম্পাদক সাইফুর রহমান পিন্টু,কালিদাসপুর ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুল হক মিকা,ভাংবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান সোহান,ডাউকি ইউপি চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলাম।

সাংগঠিনক সম্পাদক হেলাল মাণ্টারের উপস্থাপনায় আরও উপস্থিত ছিলেন হারদী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহসভাপতি আব্দুর রউফ শিলু,বীর মুক্তিযোদ্ধা লাল মোহাম্মদ জোয়ার্দ্দার,ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামীলীগের সভানেত্রী বীরমুক্তিযোদ্ধা মোমেনা খাতুন,বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক,বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সাঈদ,বীর মুক্তিযোদ্ধা শুকুর মোহাম্মদ,বীর মুক্তিযোদাধা মারফত আলী,বীর মুক্তিযোদ্ধা বজলুর রহমান,আওয়ামীলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন বেল্টু,মজিবুর রহমান,ময়নাল ইসলাম,মিন্টু,আব্দুল গাফ্ফার,তানসেন আলী ফারুক হোসেন টিপু প্রমুখ।




আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজে নবাগত অধ্যক্ষের যোগদান

আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজের উদ্যোগে নবাগত অধ্যক্ষ প্রফেসর ডক্টর জেএম আব্দুর রকীবের যোগদান উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে সরকারি কলেজের মিলনায়তনে আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল মোনায়েম।

প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সদ্য যোগদান কারী অধ্যক্ষ প্রফেসর ডক্টর জে এম আব্দুর রকীব। এ সময় তিনি বলেন, আমাকে আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দিলে আমি ও আমার স্ত্রী যোগদান করব কিনা দ্বিধাদন্দে ছিলাম। পরে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে আমার সহকর্মী বৃন্দ যোগদান করতে উৎসাহ দেন। কেউ কেউ বলেছে এই এলাকা খুব একটা ভাল না। তারপরও আমার সহকর্মীদের কথায় আলমডাঙ্গা সরকারি ডিগ্রি কলেজে যোগদান করতে এসে, আপনাদের আতিথেয়তায় আমি ও আমার সহকর্মিরা মুগ্ধ হয়েছি। আমি কথা দিলাম আপনাদের সহায়তায় কলেজকে একটি মডেল কলেজে পরিনত করব। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বিল্ডিং এর জন্য চেষ্টা করব। কলেজে লেখাপড়ার মান ফিরিয়ে আনতে সর্বচ্য চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। তবে এক্ষেত্রে আপনাদের সহযোগীতা বিশেষ প্রয়োজন। মনে রাখবেন শুধু অধ্যক্ষের রুম ও শিক্ষকদের রুম সাজিয়ে রাখলেই কলেজের উন্নতি হবে না। সব জায়গা সাজাতে হবে। এরপর আমি আপনাদের সাথে পুনঃরায় বৈঠক করব। শিক্ষার্থীদের সাথেও মতবিনিময় করব, শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য।

সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আব্দুল মালেক, সহকারী অধ্যাপক সাইফুজ্জামান, সহকারী অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক শেখ শফিউজ্জামান, সহকারী অধ্যাপক মহিতুর রহমান, সহকারি অধ্যাপক সাইদুর রহমান লিটন, আলমডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি খন্দকার শাহ আলম মন্টু, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার হামিদুল ইসলাম আজম।

আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজের প্রভাষক ডক্টর মাহবুব আলমের উপস্থাপানায় বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক খন্দকার ইকবাল হাসান, তাপস রশিদ, সিনিয়র প্রভাষক শরীয়ত উল্লাহ, প্রভাষক আমিরুল ইসলাম জয়।

আলোচনা সভার পূর্বে নবাগত অধ্যক্ষ দুপুর ১ টায় কলেজে যোগদান শেষে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল মোনয়েম এর কাছ থেকে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। পরে নবাগত অধ্যক্ষকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান শিক্ষক পরিষদের সদস্যবৃন্দ। এর আগে নবাগত অধ্যক্ষ ড. আব্দুর রকিব কলেজে অধ্যক্ষের রুমে বসলে কলেজ ছাত্রলীগের সদস্য বৃন্দ তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।




নির্বাচনে হস্তক্ষেপ প্রশ্ন: বাংলাদেশে বাইডেনের “ভিন্ননীতি”

এ যেন এক মুখে দুই কথার সমান। বাংলাদেশে আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অযাচিত’ হস্তক্ষেপ দেখছে গোটা দেশসহ সারা বিশ্ব। ঠিক সেই সময়ে চীনকে তাইওয়ানের আসন্ন নির্বাচনে হস্তক্ষেপ না করার জন্য সতর্ক করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বুধবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর এই সতর্কতার কথা জানান তিনি। শি’র সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে বাইডেন বলেন, ‘আমি স্পষ্ট করে দিয়েছি যে আমি কোনো হস্তক্ষেপ আশা করিনা ।’

বাংলাদেশের মতোই আগামী জানুয়ারিতে তাইওয়ানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যা চীনের সঙ্গে দ্বীপটির সম্পর্কের ভবিষ্যত সম্পর্কে অতিরিক্ত অনিশ্চয়তা তৈরি করতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে। তাইওয়ান বেইজিং-ওয়াশিংটনের মধ্যে উত্তেজনার একটি প্রধান উৎস। তাইওয়ান প্রণালী এবং দক্ষিণ চীন সাগরে চীন আগ্রাসী কৌশল অবলম্বন করেছে, যা আগামী বছরগুলোতে দ্বীপটিতে সম্ভাব্য আগ্রাসনের আশঙ্কা তৈরি করেছে।

বাইডেন অতীতে বারবার বলেছিলেন যে তাইওয়ানে আক্রমণ করা হলে যুক্তরাষ্ট্র সামরিকভাবে তাইওয়ানকে রক্ষা করবে, যা মার্কিন সরকার বছরের পর বছর ধরে বজায় রাখা কৌশলগত অস্পষ্টতার সাথে সাংঘর্ষিক। অর্থাৎ মার্কিন স্বার্থে বাইডেনের এই হস্তক্ষেপ না করার হুঁশিয়ারি। তবে বাইডেনের মতে, তার প্রশাসন ‘চীন নীতি’ পরিবর্তন করতে চাচ্ছে না। আবার চীন থেকে আলাদা ভূখণ্ড হিসেবে তাইওয়ানকে স্বীকৃতি দিচ্ছে না।

বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। নির্দিষ্ট দেশের উপর এমন আলাদা ভিসানীতি নিয়ে সমালোচনা আছে বিশ্বজুড়েই। অনেকেই বলছেন- এই ভিসানীতির আইনি ভিত্তি নেই। আবার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মার্কিন রাষ্ট্রদুত পিটার হাসের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দৌরঝাপ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। আবার অনেকেই তার ভুমিকাকে ভিয়েনা কনভেনশনের বরখেলাপ বলে জানিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের অযাচিত হস্তক্ষেপের আরেক উদাহরণ তৈরি করেছেন আন্ডার সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু’। পিটার হাস যখন প্রভাব খাটিয়ে ব্যর্থ হচ্ছিলেন সরকারকে চাপে ফেলতে , তখন তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দলের কাছে ভিসা নীতির হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠান। চিঠিতে তিনি নিঃশর্ত সংলাপে বসার আহ্বান জানান। যদিও তফসিল ঘোষণার আগ মুহূর্তে সংলাপের সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

নিঃশর্ত এই সংলাপের প্রস্তাব এসেছিল আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে। যদিও সেখানে সাড়া না দিয়ে শর্ত জুড়ে দেয় বিএনপি। ২৮ অক্টোবর সমাবেশ বিফলে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে ‘প্রেসক্রিপশন’ আসে নিঃশর্ত সংলাপের। আর তাতে তখন সংলাপে বসার জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠে বিএনপি।

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কিছু রাজনীতিবিদের ভূমিকাকে নব্য ঔপনিবেশবাদ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে রাশিয়া। মস্কো মনে করে, এ ধরনের পদক্ষেপ একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ‘নির্লজ্জ হস্তক্ষেপের’ চেষ্টা। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক্স-এ (সাবেক টুইটার) একথা জানায়।

গত এপ্রিলে সংসদে এক বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র যে কোনো দেশে ক্ষমতা ‘উল্টাতে পারে, পাল্টাতে পারে’। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এক প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার কাছে একটা বড় প্রশ্ন হল, কেন তারা নিষেধাজ্ঞা জারি করল? যখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশের সন্ত্রাস মোকাবেলার জন্য কাজ করছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তখন তারা লঙ্ঘনকারীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, যারা ভুক্তভোগী, তাদের পক্ষে নয়।’




ফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়ে ব্যাটিংয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা

বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে স্বাগতিক ভারত। ফাইনালে ভারতের সঙ্গী হতে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মাঠে নামছে অস্ট্রেলিয়া। বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) কলকাতার ইডেন গার্ডেন স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রোটয়ারা।

বিশ্বকাপে টানা দুই জয় দিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপর নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে হারে বড় অঘটনের শিকার হয়েছিল তারা। এরপর টানা চার জয় পায় প্রোটিয়ারা। তবে চলতি বিশ্বকাপে উড়তে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা নিজেদের সর্বশেষ ম্যাচে স্বাগতিক ভারতের কাছে হোঁচট খায়।

পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয়স্থানে থেকে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে প্রোটিয়ারা। এবার সেমিফাইনালে জিতে ‘চোকার্স’ তকমা থেকে বের হতে চায় তারা। এই ম্যাচে দুই পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামছে দক্ষিণ আফ্রিকা।

অপরদিকে, টানা দুই হার দিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করেছিল পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। এরপর টানা সাত ম্যাচ জিতে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে অজিরা। এই ম্যাচ জিতে হেক্সা জয়ের মিশনে আরেক ধাপ এগিয়ে যেতে চায় তারা। অস্ট্রেলিয়াও দুই পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামছে। একাদশে ফিরেছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।

দক্ষিণ আফ্রিকা একাদশ: টেম্বা বাভুমা (অধিনায়ক), কুইন্টন ডি কক (উইকেটরক্ষক), রাসি ভ্যান ডার ডুসেন, এইডেন মার্করাম, হেনরিখ ক্লাসেন, ডেভিড মিলার, কেশব মহারাজ, জেরাল্ড কোয়ের্টজে, কাগিসো রাবাদা, মার্কো জানসেন ও তাবরিশ সামশি।

অস্ট্রেলিয়া একাদশ: ডেভিড ওয়ার্নার, ট্রাভিস হেড, স্টিভেন স্মিথ, মার্নাস লেবুশানে, জশ ইঙ্গলিস, মিচেল মার্শ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, প্যাট কামিন্স (অধিনায়ক), মিচেল স্টার্ক, জস হ্যাজেলউড, অ্যাডাম জ্যাম্পা।

সূত্র: ইত্তেফাক