মেহেরপুর জেলা প্রেসক্লাবের ক্যারাম প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ন তোজাম্মেল- রুপক জুটি

মেহেরপুর জেলা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠার ৭ বছর উপলক্ষে ক্যারাম প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তোজাম্মেল আযম- মতুর্জা ফারুক রুপক জুটি। নক আউট পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগীতার ফাইনাল খেলায় সিরাজুদ্দোজা পাভেল-শাকিল রেজা জুটিকে পরাজিত করে।

শুক্রবার দিন ব্যাপী মেহেরপুর জেলা প্রেস ক্লাবে এ প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগীতায় ১৬ জন খেলোয়াড় ৮টি দলে বিভক্ত হন লটারির মাধ্যমে। প্রতিযোগীতার প্রথম পর্বে খেলা হয় ৪টি ম্যাচ। চার ম্যাচর বিজয়ী তোজাম্মেল-রুপক, মাসুদ-শাহিন, শাকিল-পাভেল, রাফি-সোমেল জুটি অংশ নেন সেমিফাইনাল পর্বে। সেমিফাইনালে বিজয়ী হয়ে তোজাম্মেল-রুপক জুটি এবং শাকিল-পাভেল জুটি বিজয়ী হয়ে ফাইনাল খেলার সুযোগ লাভ করে।

খেলায় মেহেরপুর অন্যদের মধ্যে ঢাকা মেইলের প্রতিনিধি তোফায়েল ও মাইটিভির গাংনী প্রতিনিধি মাসদ রানা, মেহেরপুর প্রতিদিনের সম্পাদক ও কালের কন্ঠ প্রতিনিধি ইয়াদুল মোমিন ও মেহেরপুর প্রতিদিনের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মাহাবুব চান্দু, বাংলা টিভি প্রতিনিধি আক্তারুজ্জামান ও সাংবাদিক এস এম তারেক, বাসস প্রতিনিধি দিলরুবা ও মেহেরপুর প্রতিদিনের নিজস্ব প্রতিনিধি উবাইদুল্লাহ সাদিক অংশ নেন।

আজ শনিবার প্রেস ক্লাবের বার্ষিক সাধারণ সভা শেষে চ্যাম্পিয়ন, রানার্স আপ ও অংশগ্রহনকারীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।




লড়াই, সংগ্রাম, সাফল্য ও উন্নয়নের পথিকৃৎ শেখ হাসিনা

লড়াই, সংগ্রাম, সাফল্য ও উন্নয়নের নাম শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে গড়া দলটি যখন যোগ্য নেতৃত্বের সংকটে, ঠিক সেই সময় দলের ঐক্যের প্রতীক হিসেবে আবির্ভাব হয় শেখ হাসিনার। ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাঁকে সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। নির্বাচিত হওয়ার সাড়ে তিন মাসের মাথায় ওই সময়কার সরকারের রক্তচক্ষু ও নানা বাধা উপেক্ষা করে দীর্ঘ ৬ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষ করে ১৭ মে দেশে ফেরেন তিনি।

বাবা-মায়ের স্নেহের যে বাড়িতে বড় হয়েছেন, সেই ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের সেই বাড়িতে, প্রবেশে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় শেখ হাসিনার কণ্টকাকীর্ণ পথ চলা। শুরু করেন দেশের গণতন্ত্র এবং জনগণের ভাত ও ভোটের অধিকার নিশ্চিতের সংগ্রাম। আর এই সংগ্রামের পথে তাকে পার হতে হয় নানা প্রতিবন্ধকতা। কারাবরণ করতে হয় একাধিকবার। অদ্যাবধি তাঁকে হত্যার জন্য ২০বার সশস্ত্র হামলা করা হয়। অধিকার আদায়ের সংগ্রামে বারবার মৃত্যুর মুখে পড়েছেন তিনি। তবুও পিছপা হননি, লড়াই সংগ্রাম ছেড়ে দেননি শেখ হাসিনা। শত বাধা-বিপত্তি, জেল-জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন এবং হত্যার হুমকিসহ কোন কিছুই তাকে টলাতে পারেনি একবিন্দুও। বরং সাহসের সঙ্গে এগিয়ে গেছেন সামনের দিকে।

২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকারের মেয়াদ শেষ হলেও নানা রকমের টাল-বাহানা করে ক্ষমতা হস্তান্তরে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। নতুন ভোটার তালিকায় ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার অন্তর্ভুক্ত করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার ষড়যন্ত্রও করেছিল তারা। দলীয় রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকেই প্রধান উপদেষ্টার পদ দিয়ে হাস্যকর এক তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে ৬ জানুয়ারি নির্বাচনের নামে প্রহসন আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। কিন্তু সচেতন দেশবাসী এসব অনিয়ম ও ক্ষমতা কুক্ষিগত করার অপকৌশলকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে। সে সময় বিদ্যমান রাষ্ট্রীয় সংকট ও অরাজক পরিস্থিতিতে সেনা সমর্থিত আরেক নতুন ধরনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে। কিন্তু তারাও নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান না করে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করাসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়।

বিলম্বে হলেও তারা পূর্বোক্ত ভোটার তালিকা সংশোধন ও ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা তৈরির মাধ্যমে একটি সর্বজনগ্রাহ্য নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বাধ্য হয়। সেই ২০০৮ সালের নির্বাচনে “দিন বদলের সনদ”-রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন শিরোনামে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ভূমিধস বিজয় অর্জন করে।
এরপর ২০১৪ সালে “এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ” স্লোগানে সরকার গঠন করে ১০টি মেগা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করেন। ২০৪১ সালের উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ এবং ২১০০ সালে “নিরাপদ ব-দ্বীপ” প্রণয়নের রূপরেখা প্রদান করে ২০১৮ সালে “সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ” শিরোনামে আবারও সরকার গঠন করে। ফলস্বরূপ আজ অবধি দেশের মানুষ জননেত্রী শেখ হাসিনার ওপর আস্থা রেখেছে বলেই দেশের বিভিন্ন খাতে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জনের মাধ্যমে ধারাবাহিক উন্নয়নের প্রতিফলন দৃশ্যমান হচ্ছে এবং দেশের মানুষ এর সুফল ভোগ করছে।

আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে শেখ হাসিনা সরকার বিভিন্ন মেগা প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে চলেছে এবং যোগাযোগ খাতে বৈপ্লবিক উন্নয়ন হয়েছে। নদীমাতৃক বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্ন সড়ক ও রেলযোগাযোগ স্থাপনের জন্য পদ্মাসেতু, বঙ্গবন্ধু যমুনাসেতু, তিস্তাসেতু, পায়রাসেতু, দ্বিতীয় কাঁচপুরসেতু, দ্বিতীয় মেঘনা ও গোমতী সেতুসহ শত শত সেতু, সড়ক, মহাসড়ক নির্মাণ, পুনঃনির্মাণ করেছে সরকার। এছাড়া ঢাকায় হানিফ ফ্লাইওভার, তেজগাঁও-মগবাজার-মালিবাগ ফ্লাইওয়ার, কমলাপুর-শাহজাহানপুর ফ্লাইওভার, বনানী ফ্লাইওভার, টঙ্গীতে আহসানউল্লাহ মাস্টার ফ্লাইওভার, চট্টগ্রামে আক্তারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভার ও বদ্দারহাট ফ্লাইওভারসহ বহুসংখ্যক ছোট-বড় ফ্লাইওভার নির্মাণ করে যাচ্ছে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ শেখ হাসিনার হাত ধরেই নতুন যুগে প্রবেশ করেছে, স্থান করে নিয়েছে স্যাটেলাইট বিশ্বে। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ মহাকাশে উৎক্ষেপন করেছে কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপনেরও প্রস্তুতি চলছে। গভীর সমুদ্রের তলদেশে অপটিক্যাল ফাইবার নির্মাণ এবং মহাকাশে স্যাটেলাইট স্থাপনের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা সহজতর হয়েছে।
দেশে বর্তমানে প্রায় ১৮ কোটির বেশি মোবাইল ফোন ব্যবহার হচ্ছে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। একসময় দেশের টিভি চ্যানেল গুলো স্যাটেলাইট ভাড়া বাবদ বছরে ১ কোটি ৪০ লাখ ডলার ব্যয় করত। সে টাকা এখন থেকে দেশেই থেকে যাবে।
বাংলাদেশ বেতারসহ দেশের সবক’টি টেলিভিশন চ্যানেল এবং দেশের একমাত্র ডিটিএইচ অপারেটর ‘আকাশ’ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সেবা নিচ্ছে। এ ছাড়াও দেশের ৩১টি দুর্গম ও প্রত্যন্ত দ্বীপাঞ্চলের ১১২টি স্থানে টেলি যোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবা প্রদান করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশের অনেক স্বনামধন্য ব্যাংক, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সশস্ত্রবাহিনী বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ব্যবহার করে তাদের সেবা দেওয়া শুরু করেছে। ফলে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু, উপজেলা শহরে ব্যাংকের এটিএম বুথ নির্মাণসহ সহজলভ্য ইন্টারনেট সেবা এখন মানুষের দোরগোড়ায়।

শুধু দেশি সংস্থা নয়, বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্বের আরো কয়েকটি দেশের বিভিন্ন টিভি চ্যানেল বর্তমানে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট থেকে ট্রান্সপন্ডার ভাড়া নিয়ে ব্যবহার করছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দেশ গুলো হচ্ছে হন্ডুরাস, তুরস্ক, ফিলিপাইন, ক্যামেরুন ও দক্ষিণ আফ্রিকা। সরকার প্রধান শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও সুদূর প্রসারী পরিকল্পনার ফলশ্রুতিতেই এ সব কিছু বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে। শুধু তাই নয়, অর্থনৈতিক মন্দা, করোনা মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী সংকট সৃষ্টি করলেও জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ‘সতর্ক’ অবস্থানে থেকে এবং অনেক ক্ষেত্রে ‘কৃচ্ছতা’ অবলম্বনের মাধ্যমে সে সংকট এখন পর্যন্ত সফলভাবে মোকাবিলায় সক্ষমতা অর্জন করেছে।

দেশের অর্থনীতি এখনো বেগবান রয়েছে। ২০৩৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার বিশ্বের ২০তম অবস্থান অর্জন করবে বলেও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গবেষণায় সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। অথচ বিএনপি-জামায়াতসহ একদল ষড়যন্ত্রকারী বাংলাদেশকে বরাবরের মতো পিছিয়ে নেবার যারপরনাই চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাদের বিরতিহীন অপতৎপরতা, সব ষড়যন্ত্রকারী এবং “নিন্দুকের মুখে ছাই” দিয়েই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে চলেছে দুর্বার গতিতে।
তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ এখন বিশ্বে একটি উন্নয়নের রোলমডেল। এর পুরোটাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কৃতিত্ব। তার এই অনন্য কৃতিত্বে গর্বিত বাংলাদেশ, গর্বিত বাঙালি জাতি। দেশবাসীর উচিত ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য উন্নত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্রের স্বপ্ন বাস্তবায়নকে উপলব্ধি করা এবং সে মতে কার্যক্রম গ্রহণ করা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচন এলেই বিএনপিসহ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলো জনগণকে আকৃষ্ট করতে অনেক প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি দিয়ে থাকে। অতীতে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ ছাড়া বিএনপি-জাতীয় পার্টি বা অন্যান্য দল যারা বৈধ-অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেছে, তারা জনগণকে দেয়া অঙ্গীকারের ৩০ ভাগও বাস্তবায়ন করেনি। এমনকি প্রতিশ্রুতি পূরণে তেমন কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি। সেক্ষেত্রে ব্যতিক্রম একমাত্র শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ, নির্বাচনের আগে যেসকল প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা ক্ষমতায় এসেছে, তার শতভাগ পূরণ করার চেষ্টা করেছে এবং জনগণের আস্থা-বিশ্বাস আরও দৃঢ় করতে সক্ষম হয়েছে।

সরকার প্রধান শেখ হাসিনাও চলমান মেয়াদে চতুর্থ বছর পূর্তিতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছেন, “এই ১৪ বছরে আমরা দেশ এবং দেশের জনগণকে কী দিতে পেরেছি- তার বিচার-বিশ্লেষণ আপনারা করবেন”। তিনি আরও বলেন, “রূপকল্প ২০২১-এর পর আমরা রূপকল্প ২০৪১ এবং বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ প্রণয়ন করেছি। রূপকল্প ২০২১-এ আমরা অন্যান্য লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পাশাপাশি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলাম। আজ সন্তুষ্টচিত্তে বলতে পারি, আমরা সে প্রতিশ্রুতি পূরণে সক্ষম হয়েছি”। আর এই বিশাল সফলতা ও বদলে দেয়া দেশের অর্জনগুলো সামনে রেখেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ আগামী দ্বাদশ নির্বাচনে “স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ”-এর প্রতিশ্রুতিকে সামনে রেখে কাজ করে যাচ্ছে।

এরইমধ্যে প্রধানমন্ত্রী এ নিয়ে বিশদ বিবরণও দিয়েছেন। এ কথা আজ সর্বাংশে সত্য যে, শেখ হাসিনা তার সুচিন্তিত ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে মর্যাদার আসনে আসীন করেছেন।
বাংলার মানুষ বিশ্বাস করে একমাত্র শেখ হাসিনাই পারবেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সুখী, সমৃদ্ধিশালী সোনার বাংলা গড়তে। এজন্য শেখ হাসিনার হাতকে আরো শক্তিশালী করা দরকার। বিগত সময়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন ও সাফল্য অর্জন করছে, সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হলে আমাদের সকলের উচিত সরকারকে সকল কর্মকাণ্ডে সহায়তা ও আকুণ্ঠ সমর্থন অব্যাহত রাখা।

লেখক: প্রক্টর, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।




ভারতের বিরুদ্ধে ‘টস জালিয়াতির’ অভিযোগ করায় বিব্রত আকরাম-মালিকরা

চলমান বিশ্বকাপে একমাত্র অপরাজিত দল স্বাগতিক ভারত। সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে ৭০ রানে হারিয়ে বিশ্বকাপ এক যুগ পর ফাইনালে উঠেছে ভারত। ম্যাচের আগে ভারতের বিপক্ষে পিচ পাল্টানোর অভিযোগ তুলেছিল বৃটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল। ম্যাচের পর ভারতের বিরুদ্ধে টস জালিয়াতি করার অভিযোগ তুলেন পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার সিকান্দার বখত। তবে তার এই অভিযোগে বিব্রত হয়েছেন দেশটির কয়েকজন সাবেক অধিনায়ক।

পাকিস্তানের টিভি চ্যানেল জিও সুপারের স্পোর্টস শোতে সিকান্দার বখত বলেছিলেন, ‘আমি কি সামান্য অপকর্মকেও সমর্থন করতে পারি? টসের সময় রোহিত মুদ্রা একটু দূরে নিক্ষেপ করে, সেটি প্রতিপক্ষ অধিনায়কের নাগালের বাইরে চলে যায়। নিজের পছন্দ অনুযায়ী মুদ্রার পিঠ উঠেছে কি না, এটা যেন প্রতিপক্ষ অধিনায়ক সেখানে গিয়ে দেখতে না পারে।’

তার এমন মন্তব্যে বেশ বিব্রত হয়েছেন মঈন খান, ওয়াসিম আকরাম ও শোয়েব মালিক। পাকিস্তানি চ্যানেল ‘এ স্পোর্টসে’র বিশ্বকাপ আয়োজন ‘প্যাভিলিয়ন’- তার এমন মন্তব্য প্রসঙ্গে আকরাম বলেন, ‘কয়েন নিক্ষেপের পর কোন জায়গায় পড়বে, এটা কে নির্ধারণ করে? এই বিষয়ে আমি বিব্রতবোধ করছি। এমনকি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্যও করতে চাচ্ছি না।’

অলরাউন্ডার শোয়েব মালিক এ বিষয়ে কোন শব্দ খরচ না করে বলেন, ‘এটা নিয়ে কোনো আলোচনাই করা উচিত নয়।’

মঈন খান সিকান্দার বখতকে খোঁচা দিয়ে বলেন, ‘তিনি ভুল বলেছেন। একটা হইচই তৈরি করতে চাইছেন। আলোচনায় আসতে চাইছেন। সব অধিনায়কেরই তো কয়েন টস করার আলাদা ধরন থাকে।’

সূত্র: ইত্তেফাক




হোয়াটসঅ্যাপে এসেছে ভয়েস চ্যাট ফিচার

অবশেষে ভয়েস চ্যাট ফিচার রোল আউট হলো হোয়াটসঅ্যাপে। হোয়াটসঅ্যাপ ব্যক্তিগত চ্যাটের পাশাপাশি গ্রুপ চ্যাট তৈরির অপশন রয়েছে। দিন দিন সেই গ্রুপে ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এ অবস্থায় গ্রুপের সদস্যরা যাতে সুনিপুণভাবে যোগাযোগ করতে পারেন সেজন্য নতুন এই ফিচার যুক্ত করা।

কল করে গ্রুপের সবাইকে বিরক্ত না করার ক্ষেত্রে ফিচারটি বেশ কাজের হবে বলেই মনে করছে মেটা। হোয়াটসঅ্যাপে যে বড় গ্রুপগুলো রয়েছে তার জন্য গ্রুপ কলের ফিচার রেখেছে মেটা। কিন্তু ভয়েস চ্যাট ফিচার আসার ফলে কমিউনিকেশন আরও সহজ হবে।

এই সুবিধা সব গ্রুপে পাওয়া যাবে না বলে জানিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ। যেসব হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সদস্য সংখ্যা ৩৩ থেকে ১২৮ সেখানেই পাওয়া যাবে এই সুবিধা। অন্যদিকে গ্রুপ কল ফিচার ৩২ জন সদস্য-যুক্ত গ্রুপেই সীমাবদ্ধ।

হোয়াটসঅ্যাপ আরও জানায়, শুধু প্রাইমারি ডিভাইসেই পাওয়া যাবে এই সুবিধা। লিঙ্কড ডিভাইসে এ সুবিধা থাকবে না। আর এই ভয়েস চ্যাট অ্যান্ড-টু-অ্যান্ড এনক্রিপ্টেড। অর্থাৎ প্রাইভেসি নিয়ে নিশ্চিত থাকতে পারেন।

হোয়াটসঅ্যাপে যখন কেউ গ্রুপ কল করে তখন রিং হয় ফোন, কিন্তু ভয়েস চ্যাট হবে চুপিসারে। ব্যবহারকারী এতে বিরক্ত হবেন না। স্বল্পমাত্রার শব্দে ফোন রিং বেজে উঠবে এবং গ্রুপেই একটি ইন-চ্যাট বাবেল শো যেখানে ক্লিক করে যোগদান করতে পারবেন।

গ্রুপ কল করার সময় ইউজারকে প্রথমে কল স্ক্রিনে যেতে হয়, তারপর ‘+’ আইকনে ক্লিক করে সদস্য অ্যাড করতে হয়। বিষয়টা ঝামেলার। কিন্তু ভয়েস চ্যাটে থাকবে শুধু একটি ঢেউয়ের মতো ওয়েভফর্ম আইকন যেখানে ক্লিক করে ভয়েস চ্যাট শুরু করতে পারবেন।

সূত্র: গ্যাজেট ৩৬০




মেহেরপুরে কলাই’র বাম্পার ফলন, দামে খুশি চাষিরা

মেহেরপুর জেলার কৃষি নির্ভর এলাকাগুলোতে অল্প সময়ে ও স্বল্প খরচে অধিক মুনাফা পাওয়ায় ডালজাতীয় শস্য ‘কলাই’ এখন অর্থকরী ও লাভজনক ফসল হিসেবে চাষীদের কাছে আগ্রহের জায়গা করে নিয়েছে।

কৃষি বিভাগের মতে, অল্প সময়ে কম পরিশ্রম ও খরচের অধিক লাভ পাওয়াতে স্থানীয় কৃষকরা কলাই চাষে ঝুকছেন।

আর চলতি মৌসুমে কলাই চাষের জন্য আবহাওয়া উপযোগি থাকায় ফলন বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়নি। যার ফলে বাম্পার ফলন হয়েছে। এছাড়াও বতর্মান বাজারে কলাইয়ের দামও ভালো।

সরজমিনে মেহেরপুর জেলার কলাই চাষি, ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি মৌসুমের শুরু থেকে শেষ পযর্ন্ত আবহাওয়া ছিলো কালাই চাষের জন্য বেশ উপযোগী। স্থানীয় বাজারে সর্বস্তরের মানুষের কাছে ডাল জাতীয় ফসলের মধ্যে জনপ্রিয় কলাই ডাল।

শুধু ডালের জন্যই নয়, কলাই দিয়ে তৈরি হয় শীতের পিঠা, বড়িসহ নানা ঐতিহ্যবাহী খাবার। কলাই রুটি শীতের সময় দেশের বিভিন্ন এলাকাতে ঐতিহ্যবাহী খাবার হিসেবেই পরিচিত।

এ বছর কলাইয়ের দাম অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে মণ প্রতি ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

মেহেরপুর সদর উপজেলার কৃষক তৌহিদ বলেন, ‘কলাই চাষ করা তুলনামূলকভাবে অন্য যেকোনো চাষের চেয়ে সহজ। আমার এ বছর তিন বিঘা কলাই ছিলো। সব মিলিয়ে গড়ে বিঘা প্রতি ছয় মণ করে ফলন পেয়েছি অথচ গত বছর এই জমিতেই সাড়ে তিন মণ করে কলাই পেয়েছি। আবার এই বছর দামও বেশি।’

গাংনী উপজেলার কলাই চাষি একরামুল হোসেন বলেন, ‘আমি সপ্তাহখানেক আগে কলাই মাড়াই করে ঘরে তুলেছি। এবার আমার এক বিঘা কালাইয়ের আবাদ ছিলো। চাষ থেকে শুরু করে সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ২ হাজার টাকা। সেখানে ফলন পেয়েছি প্রায় ৭ মন। যার বাজার মূল্য ৩০ হাজার টাকা। খরচ বিবেচনায় এর চেয়ে কম খরচে বেশি লাভ করার মতো ফসল আর নেই।

কালাই ব্যাবসায়ী শফি আহমেদ বলেন, ‘বাজারে মাত্র নতুন কালাই আসতে শুরু করেছে। বতর্মান বাজার দর একটু বেশি। আমরা চাষিদের কাছ থেকে ভালো মানের কালাই গুলো ৪ হাজার ২০০ টাকা দরে মণ। আর গড়পড়তা মানের কালাই মন প্রতি ৪ হাজার টাকা দরে কিনছি।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ অফিসার মো. সামসুল আলম বলেন, ‘ডাল জাতীয় চাষ কলাই মেহেরপুরে বেশ জনপ্রিয়। অধিকাংশ চাষি জমি ফেলে না রেখে কলাইয়ের আবাদ করে। এতে জমির উর্বরতা বাড়ার পাশাপাশি ভালো ফলন পাওয়া যায়। শীতকাল শুরু হলেই জেলায় কলাইয়ের চাহিদা বেড়ে যায়। চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে কলাই চাষ হয়েছে।




দর্শনার পারকৃষ্ণপুরে স্বল্প মুল্যে মাছের খাদ্য তৈরিসহ মাঠ দিবস পালিত

দর্শনা পারকৃষ্ণপুরে স্বল্প ব্যায়ে মাছের খাদ্য তৈরি ও মৎস মাঠ পালিত হয়েছে। ওয়েভ ফাউন্ডশনের সমন্তিত কৃষি ইউনিটভূক্ত মৎস্য খাতের উদ্যােগে দামুড়হুদার পারকষপুর-মদনা ইউনিয়নে এ মাঠ দিবস অনুষ্টিত হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টায় হবা হালদারের সভাপতিত্বে মৎস্য জীবিদের মাছ চাষকে লাভজনক করার লক্ষ্য স্বল্প মুল্য ফিস ফিডর উদ্যাক্তা তৈরীতে মাঠ দিবস অনুষ্টিত হয়।

মাঠ দিবসে ইউনিয়নের প্রায় ছোটবড় একশত জন মৎসজীবি অংশগ্রহন করেন। মাঠ দিবস বিভিন্ন পর্যায়ের মৎস কর্মকর্তারা কিভাবে মৎসজীবিরা স্পল্প মুল্য ফিসফিড তৈরী করতে পারে তার কলা- কৌশল ও প্রক্রিয়া হাতেকলমে শিখায়ে দেয়। আধুনিক পদ্ধতিতে মাছচাষ করে কিভাবে লাভজনক হওয়া যায় সে বিষয়ে কর্মকর্তারা বিস্তারিত আলোচনা করেন।

আলোচনা শেষে মৎসজীবিদের সামনে একজন উদ্যাক্তা বড় বড় কোম্পানির উচ্চ মৃল্যর ফিস ফিড বাজার থেক না কিনে তার কেনা ছোট মেশিনে কিভাবে তিনি ফিড তৈরী করে মাছ চাষ করছেন তার ডেমী তুলে ধরেন।

মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন দর্শনা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হানিফ মন্ডল।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ওয়েভ ফাউন্ডশনের সহকারী পরিচালক কিতাব আলী, সিনিয়র সম্বয়কারী ও দর্শনা প্রেস ক্লাবের সহসভাপতি কামরুজ্জামান যুদ্ধ ও ওয়েভ ফাউন্ডশনের মৎস্য কর্মকর্তা এবিএম আরমান হুসাইন।




কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের সাথে মৌবনের নির্বাহী পরিচালকের সৌজন্য সাক্ষাৎ

কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক এহেতেশাম রেজা এর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও মতবিনিময় করেছেন মৌবনের নির্বাহী পরিচালক এবং নারী বাতায়নের সভাপতি সাফিনা আঞ্জুম জনী।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কুষ্টিয়ার কার্যালয়ে এ সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এসময় ফুলেল শুভেচ্ছা ও সাফিনা আঞ্জুম জনীর লেখা “ধুপকাঠি” বইটি জেলা প্রশাসকের হাতে তুলে দেন।

সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে ‘মৌবন’ পরিচালিত নারী বাতায়নের কর্মকান্ড নিয়ে ভুয়সী প্রশংসা করেন এবং নারীর অগ্রগামী ভুমিকা পালনের জেলা প্রশাসক সন্তোষ প্রকাশ করেন।

নারী উদ্যোক্তাদের জন্য কাজ করতে হবে বলে জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নে যুগে যুগে নারীরা বিশেষভাবে অবদান রাখছেন। বিশেষ করে দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে আমাদের নারী সমাজ নিজেদের আত্মনির্ভরশীল করার পাশাপাশি জাতীয়ভাবে অবদান রেখে যাচ্ছেন।

নারী বাতায়নের সভাপতি ও মৌবনের নির্বাহী পরিচালক সাফিনা আঞ্জুম জনী বলেন, কুষ্টিয়ায় অনেক নারী উদ্যোক্তারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। অনেক নারীই নিজেদের ইচ্ছে ও চেষ্টার একাগ্রতায় হয়ে উঠেছে সফল উদ্যোক্তা। কেউবা আবার সেই পথেই হাঁটার স্বপ্ন দেখছেন। যারা সেই স্বপ্নের পথে হাঁটার ইচ্ছে পোষন করছেন তাঁদের সাহস ও সম্মান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নারীরা শুধু তাদের নিজেদের চেষ্টা ও আগ্রহে উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন। অনেক নারী-উদ্যোক্তাদের ট্রেড লাইসেন্স থাকে না, টিন থাকে না, ব্যাংক হিসাব থাকে না। এজন্য তাদের ব্যবসা ব্যবস্থাপনার দক্ষতা উন্নয়নে নজর দেয়া প্রয়োজন।’

তাদের নিয়ে কাজ করতে সম্মিলিতভাবে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে এবং তাদের এগিয়ে নিতে সাপ্তাহিক (নারী উদ্যোক্তাদের) হলিডে মার্কেট চালু ও নারী উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিশ্চিতসহ কুষ্টিয়ার নারী উদ্যোক্তাদের জন্য উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি গঠনে জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।




মেহেরপুরে আর্থসামাজিক উন্নয়নে গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে মতবিনিময় সভা

মেহেরপুরে আর্থসামাজিক উন্নয়নে করনীয় ও গণমাধ্যমের ভূমিকা শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে মেহেরপুর জেলা প্রেসক্লাবে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। মেহেরপুর জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি তোজাম্মেল আজমের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব চান্দুর সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন অবঃ আব্দুল মালেক, মেহেরপুর সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. গাজী রহমান, মেহেরপুর সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল আমিন, কাজীপুর ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক রিয়াজ উদ্দিন, শিক্ষক হাসান রুদ্র, সাংস্কৃতিক ব্যাক্তি শামীম জাহাঙ্গীর সেন্টু, আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক খ ম ইমতিয়াজ বিন হারুন জুয়েল ও অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

মতবিনিময় সভায় বক্তরা বলেন, একজন আত্মসচেতন ও বিবেকবান সংবাদকর্মী দেশ ও জাতির জন্য পথপ্রদর্শক। আধুনিক প্রচার মাধ্যম সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটিয়ে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করতে গণমাধ্যম সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। সুবিধাবঞ্চিত জনপদ ও নাগরিকদের আধুনিক ও সমৃদ্ধ মানুষে পরিণত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। গণমাধ্যমই পারে মানুষকে নতুন নতুন চিন্তা, ধারণা ও পদ্ধতি সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টি করে উন্নত সমাজ প্রতিষ্ঠায় সহায়ক ভূমিকা পালন করতে।

মতবিনিময় সভায় মেহেরপুর জেলা প্রেস ক্লাবের সকল সদস্যের উপস্থিতিতে শামিম জাহাঙ্গীর সেন্টু বলেন, মেহেরপুরের সাংস্কৃতি খেলাধুলা লস প্রজেক্ট। মানুষের টাকা হয়েছে কিন্তু সংস্কৃতি মনা মানুষ হারিয়ে গেছে। টাকার বিনিময়ে সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়াঙ্গন বিক্রি হয়ে গেছে।’

আবদুল্লাহ আল আমিন বলেন, গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ।’

খ ম ইমতিয়াজ বিন হারুন জুয়েল বলেন, ‘গণমাধ্যমের ভূমিকার কারণেই মুজিবনগর উপজেলার মর্যাদা পেয়েছে।’

প্রভাষক রিয়াজ উদ্দিন বলে, ‘রেমিটেন্স ও কৃষিতে এখন উন্নত হচ্ছে গ্রামগুলো। তবে শিক্ষার অবস্থা খুবই খারাপ। গ্রামের ছেলেরা এখন শিক্ষা নেয়ার পরিবর্তে প্রবাসে যেতে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। শিক্ষার হার কমে যাচ্ছে। এ ব্যাপারটি নিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের মনোযোগ দেয়া উচিত। ‘

অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মেহেরপুরে নারী শিশু নির্যাতন মামলার পরিমান বেশি। সব ক্ষেত্রে অস্থিরতা ও অসহিষ্ণুতার কারনে আর্থ সামাজিক উন্নয়নের অন্তরায় হচ্ছে। স্থানীয় পত্রিকা মেহেরপুর প্রতিদিনের মত সকল গণমাধ্যম ও সংবাদ কর্মীদের পেশাদারিত্ব বজায় রাখতে হবে। ‘




গাংনী পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতি কর্তৃক উপকরণ বিতরণ

পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতি (পিএসকেএস)-এর ‘পলাশীপাড়া শাখাতে সংস্থার সমন্বিত কৃষি ইউনিট এর কৃষি খাতের আওতায়, পরিবেশবান্ধব মালচিং পেপার ব্যবহার করে উচ্চমুল্যের ফসল চাষ ওউচ্চ ফলনশীল নতুন জাতের ফসল চাষ প্রদর্শনীর আওতায় ৯ জন উপকারভোগীর মাঝে উপকরণ বিতরণ করা হয়।

বিতরণকৃত উপকরণ সমূহের মধ্যে ছিল পরিবেশবান্ধব মালচিং পেপার, ট্রাইকো-কম্পোস্ট সার, রাসায়নিক সার, কিটনাশক, মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট,গমের বীজ, ছোলার বীজ , ভুট্টার বীজ (পপকর্ন), শসার বীজ, বেগুনের চারা সহ প্রয়োজনীয় উপকরণ সাইনবোর্ড ও রেজিষ্টার খাতা বিতরণ করা হয়। পাশাপাশি উপকারভোগীদেরকে প্রদর্শনীর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসহ কিভাবে এর রক্ষণাবেক্ষন করতে হবে সে সম্পর্কে দিক নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

উপকরণ বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন মো: রমজান আলী, প্রেসিডেন্ট পিএসকেএস, পলাশীপাড়া শাখার শাখা ব্যবস্থাপক, এবং পলাশীপাড়া শাখার কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ সমন্বিত কৃষি ইউনিটের সকল কর্মকর্তাগন।




সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও অপরাজনীতি

স্বাধীন বাংলাদেশে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও অপরাজনীতির সূচনা হয়েছিলো ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে। ইতিহাসের নৃশংসতম এই ঘটনায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের দুই সদস্য শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ছাড়া বাকি সবাইকে হত্যা করা হয়। পরিবার ও পরিবারের বাইরের সদস্য মিলে মোট আঠারো জনকে হত্যা করা হয় এই দিনে, প্রায় একই সময়ে।

হত্যাকাণ্ডের পরপরই খুনিচক্র ‘বাংলাদেশ বেতার’ দখল করে। নাম পাল্টে রাখে ‘রেডিও বাংলাদেশ’। আত্মস্বীকৃত খুনিদের অন্যতম মেজর ডালিম বেতার ভাষণে বলেন – “অদ্য সকাল হতে খন্দকার মোশতাক আহমেদের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করিয়াছে। শেখ মুজিব ও তাঁর খুনি-দুর্নীতিবাজ সরকারকে উৎখাত করা হইয়াছে। এখন হইতে সারা দেশে সামরিক আইন জারি করা হইলো। আপনারা সবাই আমাদের সহিত সহযোগিতা করুন। আপনারা নিশ্চিন্তে থাকুন কোনো অসুবিধা আপনাদের হইবে না। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।”

বিশ্বাসঘাতক খন্দকার মোশতাক বেতার ভাষণে বলেন – “এক ঐতিহাসিক প্রয়োজনে আজ দেশ এবং দেশবাসীর বৃহত্তর স্বার্থের খাতিরে পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা ও দেশবাসীর উপর নির্ভর করে দেশের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব নয়া সরকারের রাষ্ট্রপতি হিসেবে আমাকে গ্রহণ করতে হয়েছে। দেশের দেশপ্রেমিক সামরিক বাহিনী এই পদক্ষেপের সাফল্যের জন্য বীরের মতন এগিয়ে এসেছে।”

২৫ আগস্টে মেজর জেনারেল কেএম শফিউল্লাহকে অপসারণ করে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব দেয়া হয় এবং সারাদেশে সামরিক বিধি জারি করে বেশ কয়েকটি সংক্ষিপ্ত সামরিক আদালত গঠন করা হয়। মুখে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বললেও দেশে চলে সামরিক শাসনের তুগলকি কাণ্ড। ৩০ আগস্ট ১৯৭৫ তারিখে এক সরকারি আদেশে সব রাজনৈতিক কর্মতৎপরতা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে সেই প্রথম রাজনীতি করার স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়। শুরু হয় অপরাজনীতির ধারা। খন্দকার মোশতাক তার অবৈধ মন্ত্রিসভায় আরও অনেককে ভয়ভীতির মুখে অন্তর্ভুক্ত করতে পারলেও চার জাতীয় নেতা, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এইচএম কামরুজ্জামানকে বশে আনতে না পেরে কারাবন্দি করে।

এরপর ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭৫ তারিখে জারি করা হয় কুখ্যাত ‘ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স’। অবৈধ রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাকের এই অধ্যাদেশের মূল উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের রক্ষা করা। অধ্যাদেশের প্রথম অংশে বলা হয় – ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে বিদ্যমান আইনের পরিপন্থী যাহা কিছুই ঘটুক না কেন, এ ব্যপারে সুপ্রিম কোর্টসহ কোনো আদালতে মামলা, অভিযোগ দায়ের করা বা কোনো আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়া যাবে না।’ অধ্যাদেশের দ্বিতীয় অংশে বলা হয় – ‘রাষ্ট্রপতি উল্লিখিত ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে যাদের প্রত্যয়ন করবেন তাঁদের দায়মুক্তি দেয়া হলো।’

চরম অস্থিতিশীল পরিস্থিতির চড়াই উতরাইয়ের উত্তাল সময়ের মধ্যে ০৩ নভম্বেরের শেষরাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সকল নিয়মনীতি ভঙ্গ করে খুনির দল কারাগারে প্রবেশ করে এবং জাতীয় চার নেতাকে ব্রাশ ফায়ারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সেই রাতেই বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে খুনিচক্রকে ব্যাংকক পাঠিয়ে দেয়া হয়। খন্দকার মোশতাকের উপর বিদেশি প্রভু এবং দেশি ষড়যন্ত্রকারীদের ন্যস্ত দায়িত্ব ছিলো এই পর্যন্তই।
নীল নকশা অনুযায়ী ৬ নভেম্বর ১৯৭৫ এ সামরিক আইনের বিধি সংশোধন করে সুপ্রিমকোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমের নিকট মোশতাক ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। ওই দিন রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণের পর প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম বেতারে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে বলেছিলেন, ‘… গত ১৫ আগস্ট কতিপয় অবসরপ্রাপ্ত এবং চাকরিচ্যুত সামরিক অফিসার এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ও তাঁর পরিবার-পরিজনদের হত্যা করে। খন্দকার মোশতাক আহমদ রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করে সামরিক আইন জারি করেন। প্রকৃতপক্ষে এই ঘটনার সঙ্গে সামরিক বাহিনী সংশ্লিষ্ট ছিল না। দেশবাসী আশা করেছিল, দেশে আইনশৃঙ্খলা ফিরে আসবে, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।

কিন্তু আমরা সবাই নিরাশ হয়েছি। দেশে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এমনকি সম্প্রতি কারাগারে অন্তরীণ কিছু বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। …দেশে সামরিক আইন জারি রয়েছে। আমি একটি নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় অন্তর্র্বতীকালীন সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছি। আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা এবং ন্যূনতম সময়ের মধ্যে অবাধ নিরপেক্ষ সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা। আমরা এই দায়িত্ব ১৯৭৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, অথবা সম্ভব হলে তার পূর্বেই পালন করতে বদ্ধপরিকর।’

৭ নভেম্বর ১৯৭৫ তারিখে জিয়াউর রহমান বন্দিদশা (খালেদ মোশাররফ কর্তৃক) থেকে কর্নেল তাহেরের আনুকূল্যে মুক্তিলাভ করেন। মুক্ত হয়েই জিয়া দ্রুত দেশি-বিদেশি শক্তির সঙ্গে সমঝোতা করে কর্নেল তাহের থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেন এবং ক্ষমতার মূল কেন্দ্রের কর্তৃত্ব নিয়ে নেন। যে কারণে প্রেসিডেন্ট সায়েম জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া দ্বিতীয় ভাষণ দিতে বাধ্য হন। এ ভাষণে তিনি বলেন, ‘… পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় প্রশাসন পরিচালনার জন্য আমরা কতিপয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।

প্রশাসনিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্যে দেশে সামরিক আইন প্রশাসন কাঠামো গঠন করা হয়েছে। এই কাঠামোতে রাষ্ট্রপতি স্বয়ং প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হবেন। এতে তিনজন উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক থাকবেন। তাঁরা হচ্ছেন সেনাবাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান, নৌবাহিনী প্রধান কমোডর মোশাররফ হোসেন খান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এমজি তাওয়াব।‘ প্রিয় পাঠক, লক্ষ্য করবেন বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দুজন রাষ্ট্রপতিই বেসামরিক হলেও তারাই হলেন প্রধান সামরিক শাসক!

৩১ ডিসেম্বর ১৯৭৫এ দালাল আইন বাতিল করে দেয়া হয়। এতে সমস্ত যুদ্ধাপরাধীদের কারাগার এবং অভিযোগ থেকে মুক্ত করে দেয়া হয়। শহীদদের রক্তস্নাত বাংলাদেশে বুক ফুলিয়ে চলতে শুরু করে রাজাকার, আলবদর, আল শামস্ বাহিনীর সদস্যরা। ৩ মে ১৯৭৬ তারিখে সরকারি এক অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে সংবিধানের ৩৮নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল করে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। যে কারণে মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলাম, পিডিপি, নেজামে ইসলামসহ অপরাপর ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলসমূহ আবার তাদের তৎপরতা শুরু করে। রাষ্ট্র-সমাজ আর রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হয় যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত রাজাকার, আলবদর, আল শামস্ বাহিনীর সদস্যরা।

১৭ জুলাই ১৯৭৬ এ এক বিশেষ সামরিক আদালতে ‘সরকার উৎখাত ও সেনাবাহিনীকে বিনাশ করার চেষ্টা চালানোর’- অভিযোগে জাসদনেতা সেক্টর কমান্ডার কর্নেল তাহেরকে মৃত্যুদণ্ড এবং এমএ জলিল, আ.স.ম আবদুর রব, শাজাহান সিরাজ, হাসানুল হক ইনু, তাত্ত্বিক নেতা সিরাজুল আলম খান সহ আরও অনেককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদের শাস্তি দেয়া হয়। ২১ জুলাই ১৯৭৬ তারিখে আন্তর্জাতিক সকল আইনকানুন লঙ্ঘন করে পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল তাহেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়।

২৮ জুলাই ১৯৭৬ তারিখে বিচারপতি সায়েমের সামরিক সরকার রাজনৈতিক দলবিধি জারি করে। আওয়ামী লীগ তাদের সিনিয়র সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন আহমদকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করে। খুনি খন্দকার মোশতাকের নবগঠিত ডেমোক্র্যাটিক লীগ এবং স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সরকারি অনুমোদন পেলেও আওয়ামী লীগ নিয়ে টালবাহানা শুরু হয়। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটি বাদ দেয়ার জন্য পত্র দেয়া হয়।

শেষ পর্যন্ত বিচারপতি সায়েমের সরকার ১৯৭৬ সালের ৪ নভেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল হিসেবে অনুমোদন দেয়। বিএনপির নেতৃবৃন্দ প্রায়ই বলে থাকেন, জেনারেল জিয়া বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা এবং আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল করার অনুমতি দাতা। এ কথাটি সর্বৈব মিথ্যা। কারণ, সে সময় রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ছিলেন বিচারপতি সায়েম।

১৯৭৬ সালের ২৯ নভেম্বর, সেনাপ্রধান ও উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল জিয়া প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক পদ গ্রহণ করেন। গ্রেফতার করা হয় আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মালেক উকিল, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাজেদা চৌধুরী, আবদুল মোমেন তালুকদার, সালাউদ্দিন ইউসুফ, মোজাফফর হোসেন পল্টু, রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া এবং ন্যাপ নেতা মতিয়া চৌধুরীসহ আরও অনেককে।

লন্ডনের বিখ্যাত ‘গার্ডিয়ান’ পত্রিকায় বলা হয়, ‘প্রশাসন ক্ষেত্রে সায়েমের (প্রেসিডেন্ট) কোন ভূমিকা ছিল না এবং কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে পরামর্শও করা হতো না। নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তিনি পীড়াপীড়ি করছিলেন এবং শাসনক্ষমতা থেকে সামরিক বাহিনীকে বিদায় দেয়ার জন্য তিনি ঘরোয়াভাবে শলা-পরামর্শ শুরু করেছিলেন। এখন তাঁকে ছুড়ে ফেলে দেয়া হবে। সায়েমকে অসামরিক প্রেসিডেন্ট হিসেবে এতদিন রাখা হয়েছিল জিয়ার সামরিক শাসনের চেহারা ঢেকে রাখার জন্য।’

১৯৭৭ সালের ২১শে এপ্রিল বিচারপতি সায়েম পদত্যাগে বাধ্য হন এবং জেনারেল জিয়া রাষ্ট্রপতি হন। প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব ছেড়ে দেয়া প্রসঙ্গে বিচারপতি সায়েম বলেন ‘যেহেতু জিয়া প্রেসিডেন্ট হতে চেয়েছেন, এবং আমার মনে হয়েছে যে, উপদেষ্টা কাউন্সিলের অধিকাংশ সদস্যই তাঁকে সমর্থন করেছেন, তাই আমি তাঁকে আবার জিজ্ঞেস করি যে তিনি নিজে কোন হুমকির সম্মুখীন না হয়ে প্রেসিডেন্টের দায়িত্বাবলী সামলাতে পারবেন কি না’ তিনি হ্যাঁ সূচক জবাব দেন। … প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার আগ মুহূর্তে আমি জিয়াকে বলি, আমি যেহেতু নির্বাচন করে যেতে পারলাম না, তাই আপনার প্রতি অনুরোধ করবো নির্বাচন আয়োজনের। তিনি আমাকে নিশ্চয়তা দিয়ে বলেন, তিনি নির্বাচন করবেন। শুনে আমি খুশি হই। কিন্তু আমি তখন বুঝতে পারিনি যে, নির্বাচনে তিনি নিজেই অংশ নেবেন। সেরকম ক্ষেত্রে সেনাপ্রধান থাকা অবস্থাতেই এবং সামরিক আইনের অধীনে প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবেও, অর্থাৎ ক্ষমতাসীন হয়েই তিনি নির্বাচন করবেন এবং সেই নির্বাচনে নিজে অংশগ্রহণ করবেন এমন চিন্তা তখন আমার মাথায় আসেনি।’

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এবং একই সঙ্গে সেনাবাহিনীপ্রধান জেনারেল জিয়া জিয়াউর রহমান তার ওপর জনগণের আস্থা আছে কি না তা যাচাইয়ের জন্য ৩০ মে ১৯৭৭ দেশব্যাপী গণভোট অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন। সে সময় দেশে ভোটারের সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৮৩ লাখ ৬৩ হাজার ৮৫৬ জন। অবিশ্বাস্যভাবে সরকারি ঘোষণায় বলা হয় ৮৮.৫% ভোটার গণভোটে অংশ নিয়েছেন এবং জিয়াউর রহমানের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ সূচক ভোট পড়েছে ৯৮.৮৮%। এ নির্বাচন প্রসঙ্গে বিচারপতি সায়েম বলেন – “বস্তুত জিয়া তাঁর অবস্থান সংহত করার উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যে একটা গণভোট করে ফেলেন। তাঁর প্রতি এবং তাঁর ঘোষিত নীতি ও কর্মসূচীর প্রতি ভোটারদের আস্থা আছে কি না তাই ছিল গণভোটের বিষয়। কিন্তু সেই গণভোটে হ্যাঁ বাক্সে এত বেশি ভোট পড়ে যে, জনগণ সেই ফলাফলকে হাস্যকরভাবে অবিশ্বাস্য মনে করে।” আওয়ামী লীগ এবং জাসদ ‘হ্যাঁ-না’ ভোট বর্জন করে।

১৯৭৮ সালের ৫ এপ্রিল জেনারেল জিয়ার সরকার বাংলাদেশ নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে এক অধ্যাদেশ জারি করে। এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে স্বাধীনতা বিরোধীদের এবং বিদেশে পালিয়ে থাকা আলবদর-রাজাকারদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। ২৮ এপ্রিল ১৯৭৮ জেনারেল জিয়ার নেতৃত্বাধীন সামরিক সরকার একটি নতুন অধ্যাদেশ জারি করে। এতে বলা হয়, সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে একমাত্র সেনাবাহিনীপ্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমান রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে পারবেন এবং রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন।

বন্দুকের জোরে গণতন্ত্রের নামে ক্ষমতার অপব্যবহারের এ ধরনের নজির সারা বিশ্বে বিরল। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর সকল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে জিয়া নতুন রাজনৈতিক দল ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল’ সংক্ষেপে বিএনপি গঠন করেন। একই সঙ্গে দলের চেয়ারম্যান পদ গ্রহণ করেন। তখনো দেশে কোনো সাধারণ নির্বাচন হয়নি বা জিয়া সামরিক বাহিনী থেকে পদত্যাগ করেনি।

১৫ ডিসেম্বর ১৯৭৮ প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়া এক ফরমান জারি করে রাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন এনে প্রেসিডেন্টের হাতে প্রায় সকল ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করেন। ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পর নির্বাচনী প্রচারের স্বল্প সুযোগ দিয়ে ২৭ জানুয়ারি ১৯৭৯ বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষিত হয়। আওয়ামী লীগসহ বিরোধী দলসমূহ আপত্তি জানায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন এক ঘোষণায় ২৭ জানুয়ারির পরিবর্তে ১৮ ফেব্রূয়ারি ১৯৭৯ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পুনঃতফসিল ঘোষণা করে।

সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ায় এবং নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে দেয়ায় বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহ নির্বাচনে অংশ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। শুরু থেকেই নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় থাকলেও সামরিক সরকারের মুখোশ উন্মোচন এবং আন্দোলনের অংশ হিসেবেই আওয়ামী লীগসহ অপরাপর রাজনৈতিক দলসমূহ এ নির্বাচনে অংশ নেয়। ক্ষমতাসীন জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন নবগঠিত বিএনপি দুই-তৃতীয়াংশ আসন লাভ করে।

অপরাজনীতির মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা পাকাপোক্ত করার পর ১৯৭৯ সালের ৬ এপ্রিলে সংসদের প্রথম অধিবেশনেই জারি করা হয় কুখ্যাত ‘ইনডেমনিটি এক্ট’ । এটি মোশতাকের ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সের চেয়ে আরও ভয়াবহ, আরও অনেক বেশি নির্মম। এই আইনে বলা হলো – “১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হইতে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল তারিখের (উভয় দিনসহ) মধ্যে প্রণীত সকল ফরমান, ফরমান আদেশ, সামরিক আইন প্রবিধান, সামরিক আদেশ, কাজকর্ম, ব্যবস্থা বা কার্যধারাসমূহ ১) এতদ্বারা অনুমোদিত ও সমর্থিত হইলো, ২) ওই সকল আদেশ, কাজকর্ম, ব্যবস্থা বা কার্যধারাসমূহ এতদ্বারা বৈধভাবে প্রণীত, কৃত ও গৃহীত হইয়াছে বলিয়া ঘোষিত হইল, এবং ৩) তৎসম্পর্কে কোন আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা কর্তৃপক্ষের নিকট কোনো কারণেই কোন প্রশ্ন উত্থাপন করা যাইবে না।“

এই আইনের অর্থ দাঁড়ালো এরকম – ‘৭৫ এর ১৫ আগস্টে সংঘটিত বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা, শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশু রাসেল সহ ১৮ জনের হত্যা বৈধতা পেলো এবং বলে দেয়া হলো কোথাও এর কোনো বিচার চাওয়া যাবে না’ ১৯৭৫ এর ০৩ নভেম্বরে জাতীয় চার নেতার জেল হত্যা বৈধতা পেলো এবং বলে দেয়া হলো কোথাও এর কোনো বিচার চাওয়া যাবে না, ‘৭৫ এর ৩১ ডিসেম্বরে বাতিলকৃত দালাল আইন বাতিলই থাকবে, ফিরিয়ে আনা যাবে না, ১৯৭৬ সালের ০৩ মে এ সংবিধানের ৩৮ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল করে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করার সুযোগ করে দেয়ার বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না, খুনিচক্রকে বিদেশে পাঠানো এবং বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেয়ার বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না।

খালেদ মোশাররফ হত্যার বিচার, কর্নেল তাহের হত্যার বিচার, সেনা ক্যুতে নিহত হাজার হাজার সামরিক সদস্যদের বিচার বহির্ভূত হত্যার বিচার – কোনো কিছুর ব্যপারেই বিচার চাওয়াতো দূরের কথা, মামলা পর্যন্ত করা যাবে না, ‘৭৭ এর প্রহসনের হাঁ – না গণভোটকে বৈধতা দেয়া হলো’ সবচেয়ে বড় কথা – অসাংবিধানিক উপায়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের প্রক্রিয়াকে বৈধতা দেয়া হলো! জিয়াউর রহমানের এই ইনডেমনিটি আইনের চেয়ে বড় ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের’ উদাহরণ পৃথিবীর ইতিহাসে আর একটিও খুঁজে পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতির বীজ বপন করা হয়েছিলো ১৯৭৯ সালের এই ইনডেমনিটি আইনের মাধ্যমেই – যার খেসারত আমরা আজও দিয়ে চলছি।

লেখক: উপ-উপাচার্য, বুয়েট।