মেহেরপুরে তিন বিচারকের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত

মেহেরপুর জেলা জজ আদালত ও চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে সম্প্রতি বদলি হওয়া তিন বিচারককে বিদায় সংবর্ধনা দিয়েছে মেহেরপুর বিচার বিভাগ।

মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে তিনটার সময় মেহেরপুর জেলা জজ আদালতের সম্মেলন কক্ষে জেলা জজ আদালতের সরকারি জজ আরিফা আফরিন আঁখি, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এস এম শরিয়ত উল্লাহ এবং সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ তরিকুল ইসলাম কে বদলি জনিত কারণে বিদায় সংবর্ধনা দেয়া হয়।

বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মেহেরপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারক মোঃ শহিদুল্লাহ্, চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবু বকর সিদ্দিকসহ বিচারকগণ এবং আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন।




মেহেরপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারককে সংবর্ধনা

মেহেরপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক হিসেবে কর্মস্থলে যোগদানের এক বছর পূর্তিতে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোঃ শহীদুল্লাহ কে সংবর্ধনা দিয়েছে মেহেরপুর বিচার বিভাগ ও মেহেরপুর জেলা আইনজীবী সমিতি।

মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) দুপুর তিনটায় মেহেরপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এই শুভেচ্ছা ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

এ সময় মেহেরপুর বিচার বিভাগের সকল বিচারকগণ সহ বিচার বিভাগের সকল কর্মকর্তা কর্মচারী এবং মেহেরপুর জেলা আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।




জনগণ কি আগুন সন্ত্রাস চায়?

বৈশ্বিক মন্দাবস্থা, যুদ্ধাংদেহী আবেশের মোড়কে চলমান আন্তর্জাতিক অস্থিরতা, সদ্য প্রয়াত করোনা মহামারীর প্রবল আঘাতসহ নানান প্রতিকূলতাকে তোয়াক্কা না করে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত এক যুগে বাংলাদেশের উন্নয়নের মহাসোপান যেখানে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে একটি উন্নত স্মার্ট বন্দরে সফল নোঙরের উদ্দেশ্যে, সেখানে এই অদম্য যাত্রাকে বাঁধা দিতে আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে স্বাধীনতাবিরোধী, জঙ্গিগোষ্ঠীর মদদদাতা, এবং সন্ত্রাসীগোষ্ঠী হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিএনপি- জামায়াত রাজনৈতিকি গোষ্ঠী। যেখানে চলমান আওয়ামী লীগ সরকার ‘ডিজিটাল’, ‘স্মার্ট’, ‘ভীশন’, ‘টেকসই উন্নয়ন’, ‘রূপকল্প – ২০৪১’, ‘ডেল্টা প্ল্যান – ২১০০’, ‘মহা প্রকল্প’, ‘উন্নয়নের মহাসড়ক’ ইত্যাদি ইতিবাচক শব্দগুচ্ছকে সোনার বাংলার অভিধানে যুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে, সেখানে আরেকটি দল ইতিবাচক কোন কিছু উদ্ভব করায় চরম ব্যর্থতার পরিচয় তো দিয়েছেই বরংচো বাংলার মানুষকে পরিচিত করেছে ‘আগুনসন্ত্রাস’ নামক একটি চরম নেতিবাচক শব্দের!

গত এক যুগে তিন দফায় নির্বাচিত আওয়ামীলীগ সরকারের সুদক্ষ পরিকল্পনায় দক্ষিন এশিয়ার অন্যতম অর্থনৈতিক হাব হয়ে ওঠা এই ৫৬ হাজার বর্গমাইলের বদ্বীপটির জনগন আজ সেই সব স্বপ্নগুলোর বাস্তব চাক্ষুষ সাক্ষী হতে পেরেছে যা হয়তো একসময় ছিল কল্পনার অতীত। আজ বাংলাদেশ এর রয়েছে দেশের দীর্ঘতম ও বিশ্বের গভীরতম পিলার বিশিষ্ট পদ্মা সেতু, দক্ষিন এশিয়া তথা দেশের প্রথম ও দীর্ঘতম সড়ক সুড়ঙ্গপথ কর্ণফুলী টানেল, দেশের প্রথম পরমানু ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, দেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, মেট্রোরেল, উড়াল সড়ক, তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র সহ আরও অনেক মহাপ্রকল্প। যেখানে ২০০৯ এ মাত্র ৪৭ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ এর আওতাভুক্ত ছিল সেখানে আজ শতভাগ মানুষ পাচ্ছে বিদ্যুৎ সুবিধা, নতুন রেলপথ নির্মিত হয়েছে ৪৫১ কিলোমিটার, পুনর্বাসিত হয়েছে আরও ১ হাজার ১৮১ কিলোমিটার রেলপথ, নির্মিত হয়েছে ৪০০ এরও বেশী রেলসেতু। এছাড়াও দেশে এক যোগে উদ্ভোদন করা হয় ১০০ এরও বেশী সড়ক সেতুর। এতসব উন্নয়নের যাত্রায় আজ মানুষ সন্ত্রাসী বিরোধী দলের ডাকা কোন হরতাল, অবরোধ, নাশকতা কিংবা অগ্নিসন্ত্রাস চায় না।

দেশের এই দুর্বার এগিয়ে চলার পথে বাঁধা দেয়ার জন্য সেই শুরু হতেই জনবিচ্ছিন্ন বিএনপি-জামায়াত জোট চালিয়ে যাচ্ছে হরতাল অবরোধের নামে তাদের আগুন সন্ত্রাস। জোটটি জানে বাংলার মানুষ তাদের অরাজকতা আর সহ্য করতে চায় না, তাই তারা বেছে নিয়েছে নৈরাজ্যের পথ। অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে ভয়ানক আগুনকে।

মূলত ২০১৩ হতে সূচিত হয় বিএনপি জামায়াত জোটের এই আগুন নিয়ে খেলা যার বিভীষিকার কথা ভুলে যায় নি বাংলার জনগন। সে সময় যারা কখনও চায় নি বাংলাদেশ নামক একটি ভূখন্ড হোক, সেই ঘাতক, পিশাচ, যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে দলটি প্রায় ৪১৯ টি পৃথক ঘটনায় ১৫ জন পুলিশ সদস্য সহ হত্যা করে ৪৯২ জন নিরপরাধ মানুষকে। এ সকল অগ্নিসংযোগ, সংঘর্ষ ও নাশকতামূলক কর্মকান্ডে আহত হয় প্রায় আড়াই হাজারের মত মানুষ। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচন কালীন সময়ে তারা দেখায় তাদের ভয়ংকরতম রূপটিকে।

এসময় তারা আগুন ধরিয়ে দেয় সারাদেশের প্রায় ৫৮২ টি ভোটকেন্দ্রে, শত শত যানবাহনে, রাস্তার পার্শবর্তী বৃক্ষরাজিতে, এমনকি বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসানালয়ে। নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয় যেনে তারা পেট্রোল বোমায় পুড়িয়ে মারে বহু নিরপরাধ সাধারন জনগনকে। অগ্নিদ্গধ অসহায় মানুষদের কান্নার আহাজারিতে প্রকম্পিত হতে থাকে সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালগুলো। নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসার সহ এই সন্ত্রাসী জোট গোষ্ঠী হত্যা করে ২৬ জন মানুষকে। একবছর পর ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারী যখন আওয়ামী লীগ সে মেয়াদ কালের তাদের প্রথম বর্ষ উদযাপন করছিল, সেদিনও আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠে আগুন সন্ত্রাসেরা। সেসময় ২ হাজার ৯০৩টি বাস-ট্রাক, ১৮টি ট্রেন, ৮ টি যাত্রীবাহী লঞ্চ, ৭ টি ভূমি অফিসসহ ৭০ টি সরকারি অফিসে পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে মারে সন্ত্রাসী সংগঠনটি। এসব ঘটনায় নিহত হয় ২৩১ জন মানুষ এবং গুরুতর আহত হয় ১ হাজার ২ শত মানুষ। এরপর থেকেই পুরোপুরিভাবে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বিএনপি-জামায়াত জোট গোষ্ঠী। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পায় সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে। সর্বশেষ চলতি বছরের ১৫ জুন কানাডার টরেন্টোর আদালতে এক মামলায় বিএনপিকে ৫ম বারের মত সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

এতকিছুর পড়েও আগুন নিয়ে খেলা পুরোপুরি শেষ হয় নি দলটির। ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর ঢাকায় উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে এবং ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর ডাকা সমাবেশে ঢাকা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশে অগ্নি সংযোগ ঘটায়। কিন্তু বাংলাদেশের সচেতন জনগন তাদের এসব নৈরাজ্য ও অরাজকতাকে তুমুলভাবে প্রত্যাখান করে। বাংলাদেশের মানুষ এখন এগিয়ে যাওয়ার পথে, তারা শুধু স্বপ্ন দেখে উন্নত এক ভবিষ্যৎ এর। এই পথে এই দেশের জনগন কখনো মেনে নেয় নি এবং মেনে নেবেও না আগুন সন্ত্রাসকে।

লেখক: অধ্যাপক, ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন সাইন্স বিভাগ এবং প্রক্টর, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
বিশ্ববিদ্যালয়।




পর্যটনের নতুন দিগন্তে পদ্মা সেতু

পদ্মা সেতুতে রেল চলাচল শুরু হওয়ায় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগের নবদিগন্ত উন্মোচিত হলো এবং বর্ণিল সাজে সজ্জিত হয়েছে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে এলাকা। পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচল করছে। পর্যটন সম্ভাবনার বৃহৎ উৎসস্থল হলো পদ্মা সেতু।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাংলার মানুষের বহুল প্রতীক্ষিত স্বপ্ন পূরণের অনন্য উদাহরণ। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ের সাথে শরীয়তপুর জেলার জাজিরাসহ দক্ষিণাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যান্য জেলার সাথে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এক যোগসূত্র স্থাপন হবে।

এই যোগসূত্র স্থাপনের ফলে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও শিল্প বিকাশের অনন্য অবদান রাখবে। পদ্মা সেতু দেশের পরিবহন নেটওয়ার্ক এবং আঞ্চলিক উন্নয়নের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে পদ্মা সেতুর দুই পাড় পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক পদ্মার দুই পাড়ে নান্দনিক সৌন্দর্য দেখার জন্য ঘুরতে যায়। মাওয়া ও শরীয়তপুর প্রান্তে রেস্টুরেন্ট, রিসোর্ট, হোটেল-মোটেলসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট নানাবিধ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।

বাংলাদেশে তিনটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট রয়েছে তন্মধ্যে ষাট গম্বুজ মসজিদ ও ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন এই দুইটি হেরিটেজ দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত তবে অতীতে ওই অঞ্চলের যাতায়াত ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক পর্যটকদের পছন্দের পর্যটন কেন্দ্র হওয়া স্বত্বেও ভ্রমণে আগ্রহ ছিল কম। পদ্মা সেতুর ফলে দেশের অভ্যন্তরীণ পর্যটকদের মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের পর্যটন আকর্ষণগুলোতে ভ্রমণে আগ্রহ বাড়বে।

পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সাথে সংযোগ স্থাপন করবে। এই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন বাস্তব। ঢাকার সাথে মংলা বন্দর, বরিশাল, কুয়াকাটা, পায়রা বন্দর, খুলনা, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যান্য জেলার অর্থনৈতিক খাতে এক নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে।

এই পদ্মা সেতুর ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ৩ কোটি মানুষ প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হবে। দেশের অর্থনীতিতে পদ্মা সেতুর ভূমিকা নিয়ে এর আগে বিশ্বব্যাংক বলেছিল, সেতু বাস্তবায়িত হলে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ১ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে যাবে। আর প্রতি বছর দারিদ্র্য নিরসন হবে শূন্য দশমিক ৮৪ ভাগ।

দক্ষিণাঞ্চলের পর্যটন আকর্ষণগুলোর মধ্যে ভাসমান পেয়ারা বাজার, ঐতিহাসিক দুর্গা সাগর, কবি কৃষ্ণচন্দ্র ইন্সটিটিউট, খান জাহান আলী সেতু, খুলনা বিভাগীয় জাদুঘর, জাতিসংঘ পার্ক, দক্ষিণডিহি রবীন্দ্র কমপ্লেক্স, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের মাজার, রূপসা নদী, শহীদ হাদিস পার্ক, খানজাহান আলী কর্তৃক খননকৃত বড়দীঘি, খুলনা শিপইয়ার্ড, গল্লামারী স্মৃতিসৌধ ও বধ্যভূমি, জাহানাবাদ বনবিলাস চিড়িয়াখানা ও শিশুপার্ক, পিঠাভোগ, প্রেম কানন বকুলতলা, মংলা পোর্ট, রাড়ুলী, রেলস্টেশনের কাছে মিস্টার চার্লির কুঠিবাড়ি, সোনাডাঙ্গা সোলার পার্ক ও অন্যান্য পর্যটন আকর্ষণগুলোর চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে।

পর্যটকেরা কুয়াকাটা সমুদ্রের নান্দনিক সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে এবং খুব কম সময়ে সুন্দরবনের অন্যতম আকর্ষণীয় স্পট-কচিখালী, কটকা সৈকত, জামতলা সী-বিচ, সুন্দরবন সংলগ্ন সাগরে জেগে ওঠা দ্বীপ পক্ষীর চর, ডিমের চর ঘুরে দেখার অপার সুযোগ সম্প্রসারিত হবে। কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত, সুন্দরবন, পায়রা বন্দরকে ঘিরে পর্যটন সম্ভাবনার নতুন দ্বার খুলবে পদ্মা সেতু এবং মাত্র ৬ ঘণ্টায় উপরের উল্লেখিত পর্যটন আকর্ষণগুলোতে পর্যটকেরা যেতে পারবে।

অন্যদিকে কুয়াকাটার গা ঘেঁষে অবস্থিত ফাতরার চর, লাল কাকড়ার চর, শুঁটকি পল্লী, লালদিয়ার চর, চর বিজয়, ফকিরহাট, সোনার চর, ক্র্যাব আইল্যান্ড বা কম কী? একটি স্পট থেকে আরেকটি স্পট নান্দনিক এছাড়াও রয়েছে ভিন্ন রকম জীব-বৈচিত্র্যর সমারোহ। দারুণ সময় কাটাতে চাইলে এসব পর্যটন স্পটের জুড়ি পাওয়া কঠিন। রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা স্বল্প সময়ে পণ্য পরিবহন করে মংলা বন্দরের মাধ্যমে আমদানি ও রপ্তানি গতিশীল হবে এবং রপ্তানি আয় বৃদ্ধি হবে। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত (যেখানে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত অবলোকন করা যায়), ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন সংলগ্ন ছোট ছোট দ্বীপগুলোকে মালদ্বীপের ন্যায় পর্যটন আকর্ষণ তৈরি করা সম্ভব এবং সুন্দরবন ঘিরে ওয়াইল্ড লাইফ ট্যুরিজম উন্নয়নের অনন্য সুযোগ রয়েছে।

প্রতিবছর পর্যটকবাহী ৪৫টি ক্রুজ ভারতে কুচবিহার-চেন্নাই-গোয়া হয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারে চলে যায়। তবে এই ক্রুজগুলো যদি পায়রা বন্দরে আকৃষ্ট করা যায় তবে আন্তর্জাতিক পর্যটক উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। পদ্মা সেতু গতিশীল করবে মংলা ও পায়রা বন্দরকে যা সুনীল অর্থনীতিতে অনন্য অবদান রাখবে। বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল যেমন কুয়াকাটা, মংলা বন্দর ও পায়রা বন্দর কেন্দ্র করে সমুদ্র পর্যটনের সম্ভাবনার নতুন ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। নদীভিত্তিক ও সমুদ্রভিত্তিক পর্যটনে সময়োপযোগী সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য মাত্রা বাস্তবায়নের পাশাপাশি তৈরি করবে কর্মসংস্থান সুযোগ, শক্তিশালী হবে জাতীয় অর্থনীতি। তবে আন্তর্জাতিক পর্যটক আকর্ষণের জন্য পদ্মা সেতুর ও দক্ষিণাঞ্চলের পর্যটন আকর্ষণগুলো ছোট ছোট প্রমো তৈরি করে ডিজিটাল ব্র্যান্ডিং করা প্রয়োজন।

লেখক: চেয়ারম্যান, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।




দর্শনায় পৃথক অভিযানে রেকক্টিফাইড স্পিরিটসহ গ্রেফতার ১

চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর পৃথক দুটি মাদক বিরোধী অভিযান চালিয়ে ১শ৩০ লিটার রেকক্টিফাইড স্পিরিট উদ্ধার করেছে।

আজ মঙ্গলবার সকাল ৮ টার দিকে চুয়াডাঙ্গা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো:শরিয়তউল্লাহ’র নেতৃত্বে অভিযান চালায় দর্শনা থানার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে দর্শনা আজিমপুর মিল গেট এলাকার মৃত্য হারুনের বাড়িতে।

এ সময় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর বসত বাড়ির ভিতর থেকে কন্টিনেটারে রাখা ১শ লিটার রেকক্টিফাইড স্পিরিট উদ্ধার করে। এ ঘটনায় মারুফ খান অন্তর কৌশলে পালিয়ে রক্ষা পায়।তবে অন্তরকে আটক করতে না পারলেও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর বাদি হয়ে পলাতক হিসাবে দর্শনা আজিমপুর কেরু মিলগেট এলাকার মৃত্য হারুনের ছেলে আসামি মারুফ খান অন্তরকে (২৪)নিয়মিত মামলা দায়ের করেছে।

অপরদিকে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে পাঠান পাড়ার অভিযান চালিয়ে বাবু মিয়ার বাড়ি থেকে কন্টিনেটারসহ ৩০ লিটার রেকক্টিফাইড স্পিরিট উদ্ধার করে। পরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর দর্শনা রেল কোলনী পাঠান পাড়ার মৃত্য হামিদ মিয়ার ছেলে বাবু মিয়াকে (৫৮) গ্রেফতার করে।

এ ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রনের উপ পরিদর্শক আকবর হোসেন মামলার বাদী হয়ে মাদক আইনে দর্শনা থানায় দুজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে।

আজ তাদের দুজনকে মাদক মামলসহ চুয়াডাঙ্গা কোর্ট হাজতে প্রেরন করেছে পুলিশ।




শৈলকুপায় স্বামীর হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবীতে স্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার আবাইপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা রিপন হত্যার মুল পরিকল্পনাকারী বিশ্বাস বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নজরুল ইসলাম দুলাল ও তার ভাই ইউপি চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন বিশ্বাসসহ জড়িতদের ফাঁসির দাবীতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার (০৭ অক্টোবর) সকালে ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন করে নিহত রিপনের স্ত্রী তানিয়া খাতুন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করে বলেন, বিশ্বাস বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নজরুল ইসলাম দুলাল ও তার ভাই ইউপি চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন বিশ্বাস এলাকায় রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের জন্য এই হত্যাকান্ড করিয়েছে। দুলাল বিশ্বাস প্রত্যক্ষ মদদে এই হত্যা।

তানিয়া খাতুন তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, হত্যার পর হত্যাকারীরা এলাকায় এসে উল্লাস করে বেড়াচ্ছে। আমরা যাতে বিচার না পাই, মামলা যেন তুলে নিই এ কারণে হত্যাকারীরা আমাদের হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। হত্যার পর তারা উল্লাস করে আমার স্বামীর সমর্থকদের অন্তত ৪০/৫০ টি বাড়ী-ঘর ভাংচুর করে।

তিনি আরও বলেন, খুন করার পর খুনিরা বিশ্বাস বিল্ডার্সের মালিক দুলাল বিশ্বাসের ঢাকার অফিসে আশ্রয় নেয়। তার অফিসের সামনে থেকে ৪ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বাকী আসামীদের দুলাল বিশ্বাস আশ্রয় দিয়ে ও টাকা দিয়ে হাইকোর্ট থেকে জামিন করিয়ে আনে। জামিন করার পর দুলালের অফিসে তারা ভুড়িভোজ ও আনন্দ উল্লাস করে। খুনিরা খুন করার পর যেভাবে উল্লাস করছে তাতে আমি ও আমার পরিবার শংকিত। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ জানায় এই হত্যার মুলহোতা দুলাল বিশ্বাস, হেলাল বিশ্বাসসহ জড়িত সকলের দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির ব্যবস্থা যেন করেন।

সংবাদ সম্মেলনের নিহতের স্ত্রী তানিয়া খাতুন ছাড়াও, পিতা আবুল কালাম আজাদ, চাচা জাফর বিশ্বাস, খালাতো ভাই নাসির বিশ্বাস, ভগ্নিপতি জাহাঙ্গীর ইসলাম শলক, শৈলকুপা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিয়ার রহমান বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক ও শৈলকুপা উপজেলা চেয়ারম্যান এম আব্দুল হাকিম আহমেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম হোসেন মোল্লা, জেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক হাফিজুর রহমান, শফিকুল ইসলাম শিমুল জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সজিব হোসেন, নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দিন বিশ্বাস, আবাইপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান উকিল মোল্লা, যুবলীগ নেতা শহিদুল ইসলাম, স্থানীয় মাতব্বর মাসুদ বিশ্বাস, মুন্নু বিশ্বাস, সুজন বিশ্বাসসহ পরিবারের সদস্যরা।

উল্লেখ্য, গত ১৬ অক্টোবর রাত দেড়টার দিকে মোটর সাইকেল যোগে বাড়ি ফিরছিলো রিপন। পথে মীনগ্রাম মাঠের মধ্যে পৌঁছালে দুলাল ও হেলালের লোকজন তার গতিরোধ করে কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর যখম করে। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।




ঝিনাইদহে বিপুল পরিমান মাদক ও নগদ অর্থসহ ৩ যুবক আটক

ঝিনাইদহে বিপুল পরিমান মাদকদ্রব্যসহ ৩ যুবককে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার মধ্যরাতে সদর উপজেলার হাটগোপালপুর এলাকা থেকে তাদেরকে আটক করা হয়।

ঝিনাইদহ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর আবিদুর রহমান জানান, ঝিনাইদহ সদর থানার পুলিশ গোপন সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারে হাটগোপালপুর বাজার এলাকায় একটি চক্র মাদক কেনা-বেচা করছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে সদর থানার অফিসার ইনর্চাজ (ওসি) শাহীন উদ্দিন ্এর নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে আটক করে। আটককৃতরা হলো- মাদক ব্যবসায়ী দীপ্ত কুমার বিশ্বাস, জাকারিয়া হোসেন ও এনামুল হক। তাদের বাড়ী সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বলে পুলিশ জানায়। এসময় তাদের কাছ থেকে ১২০ বোতল ফেন্সিডিল, ৩০ পিস ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট, ৩ টি মোটরসাইকেল, ১ টি ল্যাপটপ, ১০ টি স্মার্ট মোবাইল ফোন ও মাদক বিক্রির নগদ ৯০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে হাটগোপালপুর এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসা করে আসছে বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে।




বিএনপি নেতার নির্দেশনায় পুলিশ হত্যা: সিটিটিসি

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনায় পুলিশ সদস্য আমিরুল হক পারভেজকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। মঙ্গলবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিটিটিসি প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।

সিটিটিসি জানায়, গত ২৮ অক্টোবর বিএনপি এবং ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে সমাবেশের দিন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সদস্য সচিব আমান উল্লাহ আমান তার অনুসারীদের নিয়ে নয়াপল্টন কেন্দ্রিক মঞ্চের পাশে অবস্থান নেয়। মঞ্চে অবস্থিত বিএনপির এবং ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনা ছিল পুলিশের ওপর বর্বরোচিত ও নৃশংস হামলার মাধ্যমে পুলিশের মনোবল ভেঙ্গে দেওয়া। প্রয়োজনে এক বা একাধিক পুলিশ সদস্যকে হত্যার মাধ্যমে দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করা, যাতে করে একটি নতুন ইস্যুর সৃষ্টি হয়।

সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘কাকরাইলে সমাবেশে উপস্থিত বিএনপি কর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা করলে পুলিশ এবং বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। কাকরাইলে সংঘর্ষের সুযোগ নিয়ে বিএনপি ও ছাত্রদলের হাইকমান্ড নেতাদের নির্দেশে নয়াপল্টনের বিএনপি পার্টি অফিসের পাশে ভিক্টরি হোটেলের পাশের গলি দিয়ে গ্রেপ্তার আমান ছাত্রদলের একটি বড় অংশ নিয়ে পুলিশের ওপরে হামলা করার জন্য এগিয়ে যায়। সমাবেশে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের অবস্থান সম্পর্কে আগে থেকেই তাদের জানা ছিল। সে তার দলবল নিয়ে সামনের দিকে এগোতে থাকে।

পল্টন টাওয়ারের সামনে এসে ওই দলের একটি অংশ বক্স কালভার্ট রোডের পশ্চিম প্রান্তে বিজয় নগর পানির ট্যাংকির দিকে যায় এবং অপর অংশটি তার নেতৃত্বে বক্স কালভার্ট রোডের আগের প্রান্তের দিকে এগিয়ে যায়। বক্স কালভার্ট রোডের পশ্চিম প্রান্তে পৌঁছানোর পরে ছাত্রদলের কর্মীরা সেখানে দায়িত্ব পালনরত পুলিশ সদস্যদের ওপরে অতর্কিত হামলা করে। এ হামলার পরিপ্রেক্ষিতে বক্স কালভার্টের পশ্চিম প্রান্তে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদেরকে সাহায্য করার উদ্দেশে আগের প্রান্তে পুলিশ সদস্যরা বক্স কালভার্ট রোডের পশ্চিম দিকে এগিয়ে যায়। পশ্চিম দিকে এগিয়ে যাওয়া পুলিশ দলটির ওপরে আমানের নেতৃত্বে ও নির্দেশনায় হামলা শুরু হয়।’

সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান আরও বলেন, ‘ছাত্রদলের এই অংশটি আমানের নেতৃত্বে পুলিশদের ওপরে ইট- পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। আত্মরক্ষার জন্য পুলিশ সদস্যরা টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে ছাত্রদলের আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করে। জানমাল রক্ষা ও ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য পুলিশ সদস্যরা অস্ত্র ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকে এবং সর্বোচ্চ সহনশীলতার পরিচয় দেয়।’

তিনি বলেন, এই পর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের একটি বড় অংশ বক্স কালভার্ট রোডের পূর্ব দিকে অবস্থিত ডিআর টাওয়ার ও আশেপাশের স্থাপনায় অবস্থান নেয়। এ অবস্থায় আমানের নেতৃত্বে তার অনুসারীরা পুলিশ সদস্যদের হামলা করার জন্য ক্রমাগত ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। বিক্ষিপ্ত ইটের আঘাতে পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজ রাস্থায় লুটিয়ে পড়ে যায়। এমন সময় নৃশংসভাবে হত্যা করার উদ্দেশ্যে লাঠি দিয়ে ক্রমাগত আঘাত করতে থাকে।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, ‘এসময় কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজ জ্ঞান হারিয়ে ফেলে এবং রক্তাক্ত অবস্থায় নিথর দেহটি রাস্তায় পড়ে থাকে। পুলিশ সদস্য আমিরুল ইসলাম পারভেজের মাথা থেকে পা পর্যন্ত সারা শরীর গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়। বিক্ষোভকারীরা মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য কনস্টেবল পারভেজের নিথর দেহের ওপরে বর্বরভাবে আঘাত করতে থাকে। পরে কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজের মৃত্যু নিশ্চিত করার পরে আমান তার অনুসারীদেরকে নিয়ে বক্স কালভার্ট রোডের পশ্চিম দিক দিয়ে চলে যায়।’

সোমবার (৬ নভেম্বর) রাতে মহাখালী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকা থেকে পুলিশ সদস্য আমিরুল হক পারভেজ হত্যা মামলার প্রধান নেতৃত্বদানকারী আমান উল্লাহ আমানকে গ্রেপ্তার করেছে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।




পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বাড়ল ৫৬.২৫ শতাংশ

পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বাড়িয়েছে সরকার। ৮ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২ হাজার ৫০০ টাকা করা হয়েছে। মজুরি বাড়ানোর লক্ষ্যে গঠিত নিম্নতম মজুরি বোর্ডের ৬ষ্ঠ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। আগামী ডিসেম্বর মাস থেকে এই মজুরি কার্যকর হবে এবং জানুয়ারি থেকে নতুন কাঠামোতে বেতন পাবেন পোশাক শ্রমিকরা।

সর্বশেষ ২০১৮ সালে পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেই অনুযায়ী, পোশাক শ্রমিকরা ৮ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি পাচ্ছিলেন। সেই হিসেবে আগের তুলনায় ন্যূনতম মজুরি বেড়েছে ৪ হাজার ৫০০ টাকা। মজুরি বৃদ্ধির হার ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ।

মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) সচিবালয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ তথ্য জানান শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই আমরা তৈরি পোশাক শ্রমিকের নূন্যতম মজুরি ঘোষণা করছি। তাদের তম মজুরি ৫৬ দশমিক ২৫ বাড়বে । শ্রমিকদের পক্ষে রেশনের দাবি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন একটা ফ্যামিলি কার্ড দেওয়ার কথা। পরবর্তী সময়ে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা হবে।’

এর আগে বেলা সাড়ে ১২টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় মজুরি বোর্ডের সভাকক্ষে এ সংক্রান্ত আলোচনা শুরু হয়।

এতে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি ছিলেন জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক-কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি। অন্যদিকে মালিকদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি ছিলেন তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি ও স্টার্লিং গ্রুপের চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান।

বৈঠক শেষে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আগামী বছরের জানুয়ারি মাস থেকে মজুরি কার্যকর করা হবে। অর্থাৎ, ডিসেম্বর থেকে নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন হবে।’

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সচিব রাইসা আফরোজ, নিরপেক্ষ সদস্য অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দীন এবং শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্বকারী সদস্য ও জাতীয় শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুলতান আহম্মদ। এ সভায় মালিকপক্ষ মজুরি বোর্ডের সভায় শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দেয়।




আর একদিনও অবরোধ চায় না জনগণ, দুইদিনে ২১ যানবাহন পুড়ে ছাই

বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর ডাকা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচিতে ২১টি বাসে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। এদিকে রাজনৈতিক আন্দোলনের নামে আগুন সন্ত্রাস দেখতে চায় না দেশের মানুষ। এব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

ঢাকার তিনটি প্রধান পয়েন্ট ফার্মগেট, কারওয়ানবাজার ও গুলিস্তান এলাকায় গাড়ি পোড়ানোর পরপরই বিভিন্ন পেশাজীবীর সাথে কথা বলে তীব্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। বাংলা মোটরে গাড়ি পোড়ানোর একঘন্টা পরে ওই এলাকায় কথা হয় হারুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, চোখের সামনে গাড়ি থেকে লোক নামায়ে পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। এরকম দেখতে চাই না।

বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত রকিবুল ইসলাম বলেন, ‘অর্থনীতি এবং মানুষকে জিম্মি করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটার অধিকার কারও নেই। এটা বুঝতে পারলে ভালো। রাজনীতিতে অধিকার আদায়ের আন্দোলনের বিকল্প খুঁজতে হবে। আমরা যারা চাকরি করি তাদের জন্য হরতাল অবরোধ খুব শঙ্কার। একটা গোষ্ঠী ক্ষমতায় থাকবে, আরেকটা বিরোধী অবস্থানে থাকবে এটা মেনে দেশের জন্য কাজ করবে।’

সোমবার (৬ নভেম্বর) ছিল অবরোধের দ্বিতীয় দিন। এরপরপরই সন্ধ্যায় বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ৮ ও ৯ নভেম্বর নতুন করে অবরোধ ডাকা হয়েছে। একের পর এর অবরধে অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়বে।

এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে অর্থনীতিতে ভয়ানক বিপদ ডেকে আনবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক দাবি-দাওয়ার অংশ হিসেবে হরতাল, অবরোধ জ্বালাও-পোড়াও, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, যান চলাচল ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং ভাঙচুরের ঘটনার প্রভাব ব্যবসায়ী ও সাধারণের আয় রোজগারের ওপর সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। হরতাল অবরোধে বহুমুখী ক্ষতির সম্মুখীন হয় দেশ।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, হরতাল অবরোধ এভাবে চলতে থাকলে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যিক পণ্যের আনা-নেওয়া এবং আমদানি-রফতানি প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হবে। এমন পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরাও বিনিয়োগ করবেন না। তারা হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন। রাজনৈতিক এই অস্থিরতার সুযোগে অনেকেই টাকা পাচার করবেন। তাতে ডলার সংকট আরও  প্রকট আকার ধারণ করবে। এর নেতিবাচক প্রভাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও কমে যাবে।