ব্র্যান্ড পোশাক স্টোর থেকে সরিয়ে নেওয়া নতুন কিছু নয়

বিভিন্ন দেশের নামীদামী ব্র্যান্ডের পোশাক বিভিন্ন সময় স্টোর থেকে তুলে নেয়। ক্রেতাদের অভিযোগ এবং সমালোচনার মুখে বা কোন ‘ভুল বুঝাবুঝির’ পরিস্থিতি তৈরি হলেও অনেক দেশেই অনেক নামীদামী ব্র্যান্ডের পণ্য সরিয়ে নেওয়ার নজির আছে। মূলত পোশাকের ডিজাইন, লেখা এমনকি রং নিয়েও সমালোচনার মুখে পোশাক বাজার থেকে তুলে নেওয়ার ঘটনা আছে। দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সম্প্রতি বাংলাদেশের তৈরি নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের পোশাক তুলে নেওয়ার খবরে তাই উৎকণ্ঠিত হওয়ার কিছুই নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তৈরি পোশাক প্রস্তুকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্র্যান্ডের ক্রেতাদের অনেক চাহিদাপত্র থাকে। কাপড় নির্বাচন, পোশাকের আনুসাঙ্গিক উপকরণ সবই ক্রেতার সিদ্ধান্তে অনুমোদিত হয়ে থাকে। সেগুলো অনেক ক্ষেত্রেই দেশের বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়। গুণগত মান নিরীক্ষা করে, স্যাম্পলের কোয়ালিটি চেকের পর প্রডাকশনে যায় কারখানাগুলো। আর পোশাক রফতানির আগে পুনরায় কোয়ালিটি চেকের পর তা জাহাজে পাঠানো হয়। ডিজাইন থেকে শুরু করে সব কিছুই নির্ধারণ করেন ক্রেতা, সুতরাং এখানে কারখানার দায় থাকার কথা না।

আগের বেশকিছু সিদ্ধান্ত অনুসন্ধানে দেখা যায়, ক্রেতাদের অভিযোগের মুখে বিভিন্ন সময় ব্র্যান্ডের পোশাক বাজার থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে শুধু বাংলাদেশ না ভিয়েতনাম, চীন, কম্বোডিয়ার মতো দেশও আছে।

গত এপ্রিলে ওয়ালমার্টে বিক্রির জন্য জর্জ ব্র্যান্ডের টি-শার্ট এর গায়ে একটি ‘গালি’ লুকানো দেখে প্রতিষ্ঠানটি বাজার থেকে তা সরিয়ে নেয় বলে এক প্রতিবেদনে জানা যায়। ১১ এপ্রিল ডেইলি মেইলের বরাত দিয়ে ফক্স বিজনেসের একটি প্রতিবেদনে একথা বলা হয়। জর্জ ব্র্যান্ডটি ওয়ালমার্টের মালিকানাধীন।

পরিবেশপন্থী টিশার্টটি মানুষকে ‘পুনর্ব্যবহার’, ‘পুনরায় ব্যবহার’ এবং ‘পুনর্বিবেচনা’ করার আহ্বান জানাতে গিয়ে টি শার্টের গায়ে ‘আর-ই’ ব্যবহার করা হয় এবং ‘সাইকেল’ (রিসাইকেল), ‘ইউজ’ (রিইউজ), ‘নিউ’ এবং ‘থিঙ্ক’ শব্দগুলো একটু বেশি ডানে সরিয়ে দেওয়া হয়। আর এতেই ঘটে বিপত্তি। তাদের আর-ই অক্ষরগুলো ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। হিতে বিপরীত হতে দেখা যায়।

এরপর গত মে মাসের শুরুতে প্রাইড মাস উপলক্ষ্যে চালু করা ‘টার্গেট’ ব্র্যান্ডের পণ্যগুলো নিয়ে নির্দিষ্ট গ্রাহকদের প্রতিক্রিয়ার মুখে তাদের স্টোর থেকে কিছু পণ্য সরিয়ে নিতে হয়। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে একথা বলা হয়। উল্লেখ্য, প্রাইড মাস মুলত সমকামী সম্প্রদায়ের জন্য উৎসবের মাস হিসেবে উদযাপন করা হয়।

টার্গেট কর্পোরেশন (টিজিটিএন) তার ‘প্রাইড’ কালেকশনের অংশ হিসাবে পোশাক, বই, সংগীত এবং বাড়ির আসবাবপত্রসহ ২০০টিরও বেশি পণ্য সরবরাহ করছে। আইটেমগুলির মধ্যে রয়েছে “জেন্ডার ফ্লুইড” মগ, ক্যালেন্ডার এবং ‘বাই বাই, বাইনারি’, ‘প্রাইড ওয়ান, টু, থ্রি’ এবং “আমি মেয়ে নই” শিরোনামে ২-৮ বছর বয়সী শিশুদের জন্য বই।

এক বিবৃতিতে টার্গেট বলেছে, ‘এই বছরের পণ্যগুলো বাজারজাত করার পর থেকে আমরা আমাদের কর্মীদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও সুস্থতার বিষয়গুলো হুমকির মুখে পড়েছে।

এরপর গত আগস্টে কেনিয়ায় তৈরি শিশুদের প্রায় ৯৭ হাজার পিস জিন্সের প্যান্ট যুক্তরাষ্ট্রের স্টোর থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় শিশুদের নিরাপত্তার স্বার্থে। সেদেশের গণমাধ্যম বলছে, প্যান্টের কাপড় থেকে শিশুদের শরীরের খোঁচা অনুভব হচ্ছে- এমন অভিযোগে সেসব তুলে নেওয়া হয়। একই অভিযোগে পণ্যগুলো কানাডার বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

ফাঙ্গাসের উপস্থিতির কারণে কানাডার টাইগার ব্র্যান্ডের কিছু পণ্য যেমন স্লিপওয়্যার, প্যান্ট এবং স্কি প্যান্ট প্রত্যাহার করা হয় গত জানুয়ারি মাসে। বানকি বার, বেলা অ্যান্ড বার্ডি, মাউন্টেন রিজ, সারভাইভাল গিয়ার এবং ক্যারিশমার মতো স্লিপওয়্যারগুলো প্রত্যাহার করা হয়। এছাড়াও পুরুষদের শেরপা পোশাক, পাজার স্কি প্যান্ট এবং পুরুষদের স্কি প্যান্ট ছিলো প্রত্যাহার করা পোশাকের তালিকায়।

হেলথ কানাডা ভোক্তাদের অবিলম্বে ক্ষতিগ্রস্থ পণ্যব্যবহার বন্ধ করতে এবং পুরো অর্থ ফেরতের জন্য জায়ান্ট টাইগারের কাছে ফেরত দিতে বলে।

গ্রাহকদের উদ্দেশ্যে এক বার্তায় জায়ান্ট টাইগার বলেছে, ‘যেহেতু আমাদের গ্রাহকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা আমাদের এক নম্বর অগ্রাধিকার, তাই আমরা এ বিষয়ে আমাদের বিক্রেতা এবং হেলথ কানাডার সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করছি।

বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা সামগ্রী প্রত্যাহার করা হলে সেটির তথ্য প্রকাশ করে ওইসিডি প্ল্যাটফর্ম। সেখানে গত অক্টোবর মাসে চীনের তৈরি শিশু পোশাক প্রত্যাহার করা হয় যুক্তরাষ্ট্র থেকে। পোশাকটির সমস্যা হসিএবে উল্লেখ করা হয়েছে- লেবেল থেকে ত্বকে খোঁচা লাগতো।

বাংলাদেশের ঘটনাকে আলাদা করে উল্লেখ করার মতো কোন বিষয় নেই। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ জানান, বাংলাদেশ সব সময় বায়ারের মানদণ্ড অনুযায়ী পোশাক বানায়। কিন্তু অভিযোগ বা মানদণ্ডগুলো সবই উক্ত পোশাকের ডিজাইন যারা করেছে, বা বিবরণ যারা ঠিক করেছে তাদের বিষয়। বাংলাদেশে বায়ারের সকল নির্দেশনা মেনে, বেধে দেওয়া মানদণ্ড মেনে পোশাক তৈরি করা হয়েছে। তৈরি করা পোশাক তৃতীয় পক্ষের ইন্সপেকশন আর ল্যাব টেস্ট পাশ করার পরেই রপ্তানি করা হয়েছে। তাই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পণ্যের চাহিদামাফিক মান রক্ষা করেই রপ্তানি করা হয়েছে।




ঝিনাইদহে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে তিন সদস্য গ্রেপ্তার

ঝিনাইদহে ডাকাতির প্রস্তুতি কালে ডাকাতদলের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল রবিবার রাত দেড়টার দিকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হলিধানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের দক্ষিণ সাইডের বাথরুমের পাশ থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

আজ সোমবার (৬অক্টোবর) দুপুরে ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, রবিবার দিবাগত রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ইন্সপেক্টর আক্তারুজ্জামান লিটনের নেতৃত্বে এস আই বনি আমিন ও এসআাই মমিনুর রহমান সঙ্গীয় ফোর্সের সহায়তায় সদর উপজেলার হলিধানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের দক্ষিণ সাইডের বাথরুমের পাশ হতে ডাকাতির প্রস্তুতি কালে ডাকাতদলের তিন জনকে গ্রেপ্তার করে। ওই দলের অজ্ঞাতনামা আরও ৫/৭ জন কৌশলে পালিয়ে যায়।

গ্রেপ্তারকৃত আসামীরা হলেন শৈলকুপা উপজেলার চর বাখরবা গ্রামের আক্কাস আলীর ছেলে রইচ (২৫), একই গ্রামের বারেক বিশ্বাসের ছেলে সাগর বিশ্বাস (২৫) এবং বিত্তিপাড়া গ্রামের মৃত রবিউলের ছেলে বাবু (৪২)। গ্রেপ্তারকালে তাদের নিকট থেকে ১টি রামদা, ১টি চাপাতি, ২টি হাতুড়ি ও লোহার পাইপ পাওয়া গেছে। ডাকাতি ছাড়াও এদের বিরুদ্ধে গরুচুরিসহ বিভিন্ন অভিযোগে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলেও জানান।




‘বাংলাদেশে অস্থিরতা তৈরি করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র’

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ইস্যু করে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চায় বলে মনে করছেন ঢাকায় নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ এসওয়াই রামাদান। তার মতে, যুক্তরাষ্ট্র চায় বাংলাদেশে তার নিয়ন্ত্রণ। এখানে সুষ্ঠু বা অবাধ নির্বাচন হলো কি না সে বিষয়ে আগ্রহ নেই তাদের। একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

তবে কোনো দেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র এমন আগ্রহকে প্রশ্নের চোখে দেখছেন ইউসুফ এসওয়াই রামাদান। তিনি বলেন, ‘আমি সোজা সাপ্টা একটা কথা বলতে চাই। যুক্তরাষ্ট্র আসলে এদেশে অস্থিরতা তৈরি করতে চায়। নির্বাচন সুষ্ঠু হলো কি হলো না তাদের কাছে এটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। এটা একটি সতর্কতা।’

নিজের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে ইউসুফ বলেন, ‘ভৌগলিকভাবে ভারত ও চীনের মত শক্তিশালী দেশের মধ্যে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। মূল সংকট হলো যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান শক্র চীন, তাদের আপত্তি চীনের উদয়মান অর্থনীতি। তাদের অনুদানের সক্ষমতাসহ, চীনের গোটা অবস্থান যুক্তরাষ্ট্র মেনে নিতে পারছে না। আর সেজন্যই যুক্তরাষ্ট্র চায় চীনের ডানা কেটে দিতে এবং যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে বাংলাদেশ চীনের সেই ডানার একটি ছোট অংশ।’

যুক্তরাষ্ট্র মনে করে- তার চেয়ে চীন, ভারত ও রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বেশি ঘনিষ্ঠ, যা ওয়াশিংটনের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যোগ করেন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত।

ইউসুফ এসওয়াই রামাদান বলেন, ‘জনসংখ্যা দিক দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। এটা একটা বড় মার্কেট। এত বড় মার্কেটে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য কম কেন? তাদের কাছ থেকে বাংলাদেশ কেন অস্ত্র কিনছে না? কেন শুধু চীন বা রাশিয়া বা কোন কোন ক্ষেত্রে ভারত থেকে অস্ত্র কিনছে? কোয়াডের কথাই বলি বা যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোট, কেন বাংলাদেশ তার সদস্য হচ্ছে না? বাংলাদেশ কেন তাদের নেতৃত্বধীন জোটে যেতে অস্বীকার করেছে? ’

ইউসুফ বলেন, ‘কেন বাংলাদেশ তার ভূখণ্ডের একটি অংশে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বা নৌ ঘাঁটি স্থাপনের জন্য দিতে চায় না। বাংলাদেশকে কে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘না’ বলতে শিখিয়েছে? বাংলাদেশের না – বলা মেনে নিতে পারছে না যুক্তরাষ্ট্র।’

শক্তিশালি দেশের অপশন না মানলে কি হবে তাও জানান ইউসুফ এসওয়াই রামাদান। তিনি বলেন, ‘যখন বাংলাদেশ না বলবে তখন তাকে মূল্য দিতে হবে। বাংলাদেশকে দুটো অপশন দেয়া হয়েছে, হয় তুমি যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের পক্ষে অবস্থান নেবে, না হয় বাকি দেশগুলোকেও না বলে দেবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের হাতের পুতুল হবে।’

ফিলিস্তিনি দূত বলেন, ‘আর দ্বিতীয় অপশনটি হলো যুক্তরাষ্ট্রকে না বলে নিজের স্বাধীন সাবভৌমত্ব ধরে রাখবে এবং বলবে বাংলাদেশ তার মান মর্যাদা ধরে রেখে জনগণের পক্ষে থাকবো এবং স্বাধীনভাবে নিজের সিদ্ধান্ত নিবে। দুটোর জন্যই মূল্য দিতে হবে।’

ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূতের পর্যবেক্ষণ, পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো নিজেদের শক্তিধর মনে করে এবং বিশ্বাস করে বিশ্বের তৃতীয় পর্যায়ের দেশগুলো তাদের হুকুম মেনে চলতে বাধ্য।

ইউসুফ এসওয়াই রামাদান বলেন, ‘আমাদের বেলায় পশ্চিমারা তিনটি অপশন রেখেছে। তাদের ভাষ্য হলো আমরা ইসরায়েলি দখলদারিত্বের অধীনে থাকলে শান্তি আসবে কিন্তু তাতে আমাদের মান মর্যাদা বিসর্জন দিতে হবে। অথবা আমরা আমাদের ভূমি ছেড়ে চলে যাব যার ফলে ইসরায়েলের আয়তন আরো বাড়বে, তারা আমাদের বাড়ি ঘর দখল করে নেবে।’

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আরেকটা বিকল্প হচ্ছে আমাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া, এক্ষেত্রে পশ্চিমারা আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে না, দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে তারা কথা বলবে না, বরং তারা আমাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তারা আমাদের প্রভু, প্রভুর কথা অনুযায়ীই চলতে হবে, এটাই তাদের বিশ্বাস।’




যেমন হবে স্মার্ট বাংলাদেশের রূপরেখা

আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে “স্মার্ট বাংলাদেশ” স্লোগান নিয়ে ইশতেহার প্রস্তুত করছে আওয়ামী লীগ। এজন্য চারটি বিষয়কে গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি। স্মার্ট বাংলাদেশের বিনির্মাণে চারটি মূল লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট সোসাইটি এবং স্মার্ট ইকোনমি। তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের জনগণ সবচেয়ে বেশি সরকারের সেবা পাবে এবং নিজেরাও আধুনিকে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাবে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।

ইশতেহার প্রণয়ন উপকমিটির আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। অতীতে আমরা কী কী করেছি, আমাদের কী কী অর্জন রয়েছে, সেগুলো পর্যালোচনা করা হয়। তার আলোকে নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন করি আমরা।’

তিনি আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশের পরিকল্পনা পূর্বের বাস্তবায়িত ডিজিটাল বাংলাদেশের পরিকল্পিত রূপান্তর। যা হচ্ছে বিশ্বয়ানের যুগের সমস্ত আধুনিক প্রযুক্তি আর সুবিধাদির সমন্বয়ে তৈরি। ডিজিটাল বাংলাদেশ ২০০৯ সালে বাংলাদেশকে ডিজিটালাইজ করার জন্য নতুন নীতি ঘোষণা করেছিলো। বর্তমানে বাংলাদেশের অধিকাংশ পাবলিক সার্ভিসকে ডিজিটালাইজ করা হয়েছে এবং দ্রুততার সাথে প্রতিটি মানুষের জীবনকে ডিজিটাল টুল দিয়ে চালনার একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে, যদিও গ্রামীণ এলাকায় ডিজিটাল সেবা পৌঁছানো কঠিন। এই ডিজিটাল বাংলাদেশ ১৪ বছরের ব্যবধানে জীবনযাত্রার মানের ব্যাপক পরিবর্তনে অবদান রেখেছে।

ইশতেহার প্রণয়ন উপকমিটির সদস্যসচিব এবং আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ জানান, অনেকের কাছে ‘ডিজিটালাইজেশন’ নীতির সুবিধা ভোগ করে তা অস্বীকার করা বর্তমানে কঠিন হয়ে গিয়েছে। টেলিযোগাযোগ, ইন্টারনেট সংযোগ, ডিজিটাল পরিষেবা, ডিজিটাল ফাইন্যান্স এবং ই-কমার্সের মতো বেশ কয়েকটি সেক্টরে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। ডিজিটালাইজেশনের প্রথম ধাপের সাফল্যের ওপর ভর করে, শেখ হাসিনা এখন বাংলাদেশিদের স্মার্টনেসের নতুন যাত্রা শুরু করতে অনুপ্রাণিত করছেন।

আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ নীতি এজেন্ডার বেশিরভাগ প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছে। সরকার বেশিরভাগ সেবা ডিজিটালাইজড করেছে। ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে ১৩ কোটির একটি স্থিতিশীল ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে। মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) ১৯ কোটিরও বেশি গ্রাহক রয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন, ডিজিটালাইজেশন-সফলতা স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, বাণিজ্য, এবং সামাজিক সুরক্ষা নেট পেমেন্টে পরিষেবার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এখন স্মার্ট-এজেন্ডা একটি উন্মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং জ্ঞান-প্রযুক্তি-চালিত সমাজ তৈরির আরও বেশি সুযোগের প্রতিশ্রুতি দেয়।

স্মার্ট বাংলাদেশের মূল বৈশিষ্ট্য
স্মার্ট বাংলাদেশে লক্ষ্য হলো- মাথাপিছু আয় হবে কমপক্ষে ১২৫০০ ডলার; ৩%-এরও কম মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকবে; চরম দারিদ্র্য শূন্যে নামিয়ে আনা হবে। আর স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি মূল উপাদান রয়েছে- ১. স্মার্ট নাগরিক, ২. স্মার্ট সরকার, ৩. স্মার্ট সোসাইটি, এবং স্মার্ট ইকোনমি।

কেমন হবে স্মার্ট বাংলাদেশ
স্মার্ট বাংলাদেশ চারটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ফোকাস করবে। সেগুলো হলো- সংযোগ, ই-গভর্নেন্স, উদ্ভাবন এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন। স্মার্ট বাংলাদেশ ন্যায়সঙ্গত অগ্রগতি ঘটাবে যেখানে প্রযুক্তি মূল সক্ষমতার ভূমিকা পালন করবে।
ইন্টারনেট অফ থিংস, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক্স এবং বিগ ডেটা অ্যানালিটিক্সের ব্যবহার প্রযুক্তি ইকোসিস্টেমকে রূপান্তরিত করবে। স্মার্ট বাংলাদেশ একটি টেকসই পরিবেশ তৈরির জন্য নবায়নযোগ্য শক্তি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং দক্ষ পরিবহনের ওপরও জোর দেয়। স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্য সাশ্রয়ী, সহজলভ্য, গ্রাহককেন্দ্রিক, কাগজবিহীন এবং নগদবিহীন জনসেবা প্রদান করা।

শূন্যের কাছাকাছি বৈষম্য
সব ক্ষেত্রে ডিজিটাল বিভাজন এর সেতু করে বৈষম্য দূর করতে চায় সরকার। স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় সরকার সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবে। এটি একটি প্রযুক্তি-সক্ষম স্মার্ট অর্থনীতি এবং সমাজের সুবিধা প্রদানের জন্য একটি নতুন পথরেখার সুচনা। দেশের গ্রামগুলোকে শহরের মতো আধুনিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে গড়ে তোলার নীতিমালা ইতিমধ্যেই চলছে।

অন্তর্ভুক্তি ক্ষমতায়ন
নতুন দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে একটি স্মার্ট জাতির জন্য স্মার্ট নাগরিক তৈরি করা এই নীতির উদ্দেশ্য। প্রযুক্তির পাশাপাশি মানবিক দক্ষতা নাগরিকদের ক্ষমতায়ন করবে। নাগরিকরা সমস্যা সমাধানকারী হিসাবে বড় হবে যারা সমাধানের জন্য কোন উচ্চতর কর্তৃপক্ষের উপর নির্ভর করবে না। এটি একটি প্রগতিশীল সমাজের কল্পনা করে যেখানে সমস্ত সদস্য অন্তর্ভুক্তির সুবিধা ভোগ করবে। সোসাইটি তার সদস্যদের উদ্ভাবক হতে উৎসাহিত করবে। “কেউ পিছিয়ে নেই” মন্ত্র নীতিনির্ধারণকে গাইড করবে।

তারুণ্যকে অগ্রাধিকার
বাংলাদেশে তারুণ্যের স্ফীতি আছে। আগামীতে দেশকে এগিয়ে নিতে আজকের তরুণরা স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে। স্মার্ট বাংলাদেশ তরুণ প্রজন্মের চালিকাশক্তি হওয়ার সুযোগ তৈরি করবে। চতুর্থ শিল্প বিল্পব ইতিমধ্যেই চলছে যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ল্যান্ডস্কেপ পুনর্নির্মাণ শুরু করেছে। তরুণদের উন্নত দক্ষতা ও উদ্যোক্তা মানসিকতা গ্রহণের জন্য প্রস্তুত করতে হবে। বাংলাদেশের স্মার্ট-এজেন্ডা তৈরি হচ্ছে তার তরুণদের গতিশীলতার দ্বারা।




ঝিনাইদহে বিদেশী পিস্তল ও ২ রাউন্ড গুলিসহ আটক ১

ঝিনাইদহে গোয়েন্দা পুলিশের বিশেষ অভিযানে ১টি বিদেশী পিস্তল, ১টি ম্যাগজিন ও ২রাউন্ড গুলিসহ একজনকে আটক করেছে।

আজ সোমাবার (৬অক্টোবর) সকাল সাড়ে দশটার দিকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের বিশেষ অভিযান চালিয়ে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার দিঘীরপাড় গ্রামের শরিফুল ইসলামের দোকানের সামনের পাকা রাস্তার উপর থেকে তাকে আটক করা হয়।

ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার আজিম-উল- আহসান সোমাবার দুপুরে পুলিশ সুপারের এর কার্যালয়ে প্রেসব্রিফিং করে এসব তথ্য জানান। প্রেসব্রিফিং এ তিনি আরও জানান একটি গোপন তথ্যের ভিত্তিতে সোমাবার সকালে জেলা গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শক (ওসি) মোহাম্মদ জুয়েল ইসলাম এর নেতৃত্বে সঙ্গীয় অফিসার এস আই আবু সায়েম, এএসআই জাহিদ হাসানসহ একদল ফোর্স নিয়ে অভিযান পরিচালনা করে। এসময় আভিযানিক দলটি ১টি বিদেশী পিস্তল, ১টি ম্যাগজিন ও ২ রাউন্ড গুলিসহ আসামী ইজাহারকে গ্রেপ্তার করে। ইজাহার মাগুরা জেলার খিলগাতি বাজার এলাকার মৃত আঃ লতিফ মোল্লার ছেলে।

প্রেসব্রিফিং আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান জাকারিয়া, মীর আবিদুর রহমান, ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহীন উদ্দিন, ডিবি’র ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুয়েল ইসলাম প্রমুখ।




কোটচাঁদপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক গ্রেফতার

কোটচাঁদপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক( ৬২)কে গ্রেফতার করেছেন, থানা পুলিশ। রবিবার রাতে তাকে মহেশপুর থেকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আল মাসুদ মিয়া।

জানা যায়,কোটচাঁপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক। তিনি উপজেলার ফাজিলপুর গ্রামের মৃত দলিল উদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে। আব্দুর রাজ্জাক গেল ১ নভেম্বর কোটচাঁদপুর থানার নাশকতা মামলার আসামি। মামলা হওয়ার পর তিনি মহেশপুর উপজেলার একতাঁরপুর গ্রামে লেন্টু মেম্বরের বাসায় ছিলেন।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রবিবার রাতে তাকে মহেশপুরের ওই বাসা থেকে গ্রফতার করেন। সোমবার সকালে তাকে আদালতে পাঠিয়েছেন থানা পুলিশ।

এ ব্যাপারে কোটচাঁদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আল মাসুদ মিয়া বলেন,নাশকতা মামলায় রবিবার রাতে
বিএনপির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি মহেশপুর উপজেলা একতাঁরপুর গ্রামের লেন্টু মেম্বরের বাসায় পালিয়ে ছিলেন।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।

তিনি বলেন,উপজেলা বিএনপির সভাপতি সহ ওই মামলায় আজ পর্যন্ত ১০ জন গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের ধরতে অভিযান অব্যহত রয়েছে।




নাট্যব্যক্তিত্ব আলী যাকেরের ৭৯তম জন্মদিন আজ

নাট্যব্যক্তিত্ব আলী যাকেরের ৭৯তম জন্মদিন আজ। ১৯৪৪ সালের আজকের দিনে চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন জনপ্রিয় এ অভিনেতা। ১৯৭২ সালের আরণ্যক নাট্যদলের ‘কবর’ নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে পথচলা শুরু করেন আলী যাকের। ১৯৭৩ সাল থেকে কাজ করছেন নাগরিক নাট্যসম্প্রদায় নিয়ে।

‘বহুব্রীহি’, ‘তথাপি পাথর’, ‘আজ রবিবার’ এর মতো টিভি নাটকে অভিনয় করেও তিনি প্রশংসা পেয়েছেন। ‘অচলায়তন’, ‘বাকী ইতিহাস’, ‘সৎ মানুষের খোঁজে’, ‘তৈল সংকট’, ‘এই নিষিদ্ধ পল্লীতে’, ‘কোপেনিকের ক্যাপ্টেন’সহ বেশ কয়েকটি মঞ্চ নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন আলী যাকের। বেতারে অর্ধশতাধিক নাটকে কাজ করেছেন এ কিংবদন্তি।

দীর্ঘ কর্মজীবনে নাটকে অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে তিনি একুশে পদকে ভূষিত হন। এছাড়া বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী পদক, নরেন বিশ্বাস পদকসহ বিভিন্ন সম্মাননা পেয়েছেন আলী যাকের।

আলী যাকের ১৯৭৭ সালে অভিনেত্রী সারা যাকেরের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের দুই ছেলেমেয়ে ইরেশ যাকের ও শ্রিয়া সর্বজয়াও অভিনয়শিল্পী।

২০২০ সালের ২৭ শে নভেম্বর ৭৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন গুণী অভিনেতা আলী যাকের।

সূত্র: ইত্তেফাক




লিরিক্স স্টিকার এলো ইনস্টাগ্রামে

আরেকটি নতুন ফিচার। ইনস্টাগ্রামের রিলসে গান প্লে হলে এখন লিরিক দেখা যাবে। লিরিক স্টিকার নামে নতুন এই ফিচারটি সম্প্রতি সংযুক্ত হয়েছে। অনেকটা ফেসবুকের স্টোরির মতো ফিচার। তবে ইনস্টাগ্রামের নতুন ফিচারে আরো কাস্টোমাইজেশন সুবিধা পাওয়া যাবে।

নতুন এই ফিচার ব্যবহার করতে হলে আপনাকে শুধু রিলসে গান যুক্ত করে লিরিক্স স্টিকার সিলেক্ট করতে হবে। স্ক্রিনে তখন গানের লিরিক্সগুলো দেখতে পারবেন।

তারপর পছন্দমতো লিরিক্সের ফন্ট, টেক্সট কাস্টোমাইজ করে নিন। নতুন আপডেট এখন থেকেই রোল আউট করা শুরু হয়েছে।

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস




মেহেরপুরে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি গ্রেফতার

মেহেরপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আমজাদ হোসেনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে উপজেলার পোড়াপাড়া নামক স্থানে অভিযান চালিয়ে গাংনী থানার এস আই হাফিজুর রহমান সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে তাকে গ্রেফতার করে।

গাংনী থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা এস আই আব্দুল মতিন জানান, গত রবিবার দায়ের করা নাশকতা মামলার আসামি হিসেবে তাকে আটক করা হয়েছে। আটকের পর আদালতে পাঠানো হয়েছে।




সংলাপ নয় সংঘাতেই বিএনপির ভরসা

রাজনীতির মাঠে সংলাপ শব্দটি আবারও ঘুরতে শুরু করেছে। বহুল আলোচিত ২৮ অক্টোবরের পর এবার শর্তহীন সংলাপের বিষয়টি সামনে এনেছেন আরেক আলোচিত কূটনীতিক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির সহিংসতার পর মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস হরতাল অবরোধের মধ্যেই নির্বাচন কমিশন ভবনে গিয়ে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের সাথে বৈঠক করলেন। যদিও বৈঠকটি পূর্ব নির্ধারিত ছিলো না। সিইসির সঙ্গে বৈঠক সেরে বেরিয়ে এসে নিজেই সাংবাদিকদের সামনে এসে কথা বললেন। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পুরোনো কথাগুলো বললেন। শেষ দিকে এসে বললেন গণতান্ত্রিক নির্বাচনে কোনো পক্ষের রাজনৈতিক সহিংসতার কোনো স্থান নেই। তার আশা সব পক্ষ শর্তহীনভাবে সংলাপে বসে সামনের দিকে এগোবে। পিটার হাসের সাথে সুর মিলিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরাও শর্তহীন সংলাপের বিষয়টি আলোচনায় এনেছেন। ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতও সরকারের মন্ত্রীদের সাথে দেখা করে শর্তহীন সংলাপের প্রসঙ্গটি তুলেছেন।

এতো গেলো মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও তাদের সঙ্গী সাথীদের কথা। এখন প্রশ্ন হলো বিএনপি কি সংলাপে বিশ্বাসী? এ প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ বা না এরকম এককথায় না দিয়ে একটু বিশ্লেষণে আসা যাক। দলটি কখনোই যে কোনো সংলাপ করেনি তা কিন্তু নয়। তারা যে সংলাপগুলো করেছে তা সফল হয়নি কারণ তারা সব সময়ই শর্ত জুড়ে দিয়েই আলোচনার টেবিলে যেতে চায়। আমরা ২০০৬ সালে আব্দুল জলিল ও মান্নান ভূঁইয়ার সেই সংলাপের কথা কিন্তু আমরা ভুলে যায়নি। সংলাপটি কেনো ভেস্তে গিয়েছিলো তা কিন্তু পরে আমরা পরিস্কার হয়েছি। দুই নেতাই সে সময় প্রায় একটা সমাধানে চলে এসেছিলেন কিন্তু খালেদা জিয়ার গ্রিন সিগন্যাল না থাকায় সেসময় দুজনের সংলাপটি ভেস্তে যায়। তার পরের রাজনীতির চিত্র আমরা দেখেছি।

২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা খালেদা জিয়াকে ফোন করে আলোচনার জন্য ডেকেছিলেন। খালেদা জিয়া সেসময় সাড়া দেননি। এরপর তো সবাই জানেনই বিএনপি তার সঙ্গী স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতকে সাথে নিয়ে অবরোধের নামে বেছে নিলো আগুন সন্ত্রাসের পথ। বহু নিরপরাধ মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করেছে বিএনপি-জামাতের সন্ত্রাসীরা।

২০১৮ সালেও ড.কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপি জোট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সংলাপে বসেছিলো। তারা সেই নির্বাচনেও অংশ নিয়েছিলো। এক একটি আসনে একাধিক প্রার্থী দেয়ার পাশাপাশি মনোনয়ন বাণিজ্য সামনে আসায় নির্বাচনের পর থেকেই শুরু হয় মিথ্যাচারের রাজনীতি।

এবার আসা যাক সাম্প্রতিক পরিস্থিতির দিকে। শর্তহীন সংলাপের কথা পিটার হাসই যে নতুন বললেন তা কিন্তু নয়। ২৮ অক্টোবর বিএনপির তাণ্ডবের আগে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব না দিলেও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শর্তহীন সংলাপের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বিএনপি একেবারে শুরুতেই তা নাকচ কওে দেয়। মির্জা ফখরুল সাহেব থেকে শুরু করে দুদু-রিজভীরা শর্তজুড়ে দিয়ে বলতে থাকলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকার মানলেই কেবল সংলাপ। এভাবে শর্ত দিয়ে কি সংলাপ হয়? আপনারা শেখ হাসিনার পদত্যাগ চান তাহলে সংলাপ করবেন কার সাথে?

এবার আরেকটু পিছনের দিকে যাই গত বছরের জুলাই মাসে নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও অংশীজনদের সাথে সংলাপে বসেছিলো। কিন্তু বিএনপি সে সংলাপে যায়নি। শুধু বিএনপিই নয় তাদের সমমনা দলসহ ৯টি দল সংলাপে যায়নি। এমনকি ইসি গঠনে মহামান্য রাষ্ট্রপতির সংলাপে এর আগে দু’বার গেলেও শেষবার তারা গর হাজির। তাদের অভিযোগ ছিলো ইসি গঠনে তাদের কোনো মতামতই নাকি রাখা হয়না। যদিও বর্তমান সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের নামের প্রস্তাবক বিএনপিরই ঘনিষ্ঠ প্রয়াত ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

এবার আবারো আসি সাম্প্রতিক ঘটনাবলীতে। হাস সাহেবরা সংলাপের প্রসঙ্গটি সামনে আনার পর ঠিক সংলাপ আকারে না হলেও নির্বাচন কমিশন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করছে তাদের প্রস্তুতি জানাতে। কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোকে এজন্য আগেভাগেই চিঠিও পাঠিয়েছে। বিএনপির চিঠি পৌঁছেছে পল্টনের কার্যালয়ে। তবে সেখানে চিঠি সংগ্রহ করার মতো কেউ ছিলেন না। চিঠিটি পড়ে আছে কলাপসিবল গেটের ভিতরে একটি চেয়ারে। চিঠি যাওয়ার খবর শুনে অজ্ঞাত স্থান থেকে রুহুল কবির রিজভী বরাবরের মতোই এ নির্বাচন কমিশনের আলোচনায় যাবেন না বলে জানিয়ে দেন।

এতোদিন বিএনপি যাদের ওপর নির্ভর করেছিলো, যে পিটার হাসকে অবতার ভাবতে শুরু করেছিলেন বিএনপির নেতারা এখন তার প্রস্তাব করা সংলাপেও ভরসা রাখতে পারছে না দলটি। আসলে দলটি কি চায়? তারা তো সংলাপ চায় না। সংলাপ চাইলে কি ২০১৪ সালে খালেদা জিয়া শেখ হাসিনার সংলাপের প্রস্তাবটি অসৌজন্যমূলকভাবে প্রত্যাখান করতে পারতেন?

বিএনপি তার পুরোনো অবস্থান থেকে একচুলও সরেনি। সংলাপে নয় অবরোধের আগুনেই ভরসা রাখছে তারা। বিএনপি যে সহিংস সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে তার প্রমাণ তারা প্রতি পদে পদেই দিচ্ছে। আসলে তারা কোনোকালেই জনতায় ভরসা রাখতে পারেনি। তারা চিনেছে শুধু ক্ষমতা তাও আবার পেছনের দরজা দিয়ে। মিলিটারি ডিক্টেটর জিয়াউর রহমান পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা দখল করে বিএনপির জন্ম দিয়েছিলেন। হ্যাঁ-না ভোট, ২০০১ সালের কারচুপির নির্বাচন, ২০০৭ সালে ক্ষমতা ছাড়তে টালবাহানার পর এখন সহিংসতার পথে রক্তপাত ঘটিয়ে ক্ষমতা চায় দলটি।

বিএনপিকে বলবো যাদের ওপর আশা করে আছেন, যাদের মুরুব্বি মেনেছেন, যাদের প্রভু ভাবছেন তাদের কেউই আপনাদেরকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিতে পারবে না। তাই আগুন সন্ত্রাসের পথ ধরে ক্ষমতায় যাওয়ার আশা ছেড়ে জনতায় ভরসা রাখুন। এখানে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি হলো- দলটি কি পারবে লন্ডনি প্রেসক্রিপশন থেকে বেরোতে? যদি না পারে তাহলে ওই প্রবাদটিই সত্য বলে ধরে নিতে হবে ‘চোরাই না শোনে ধর্মের কাহিনী’।

লেখক: সাংবাদিক ও সাবেক ছাত্রনেতা।