মেহেরপুর নবাগত জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সিফাত মেহনাজ বলেছেন, দূর্ণীতির উর্দ্ধে থেকে সরকারি দফতর সমূহে সকল কার্যক্রম সততা ও নিষ্ঠার সাথে করা হবে। স্বচ্ছভাবে নেওয়া হবে সকল উন্নয়ন প্রকল্প। এলাকার দুস্কৃতিকারী ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধেও নেওয়া হবে প্রশাসনিক ব্যবস্থা। গাংনীতে উপজেলা পর্যায়ের কর্মকতার্ ও সুধীবৃন্দের সাথে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
গাংনী উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে আজ বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪ টার সময় নবাগত জেলা প্রশাসকের আগমন উপলক্ষ্যে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে গাংনী উপজেলা প্রশাসন।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন গাংনী উপজেলা নিবার্হী অফিসার প্রীতম সাহা। এ সময় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, গাংনী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাদ্দাম হোসেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুপ্রভা রানী, উপজেলা কৃষি অফিসার ইমরান হোসেন, গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলম সোনাসহ শিক্ষানবিশ ম্যাজিস্ট্রেটবৃন্দ প্রমুখ।
গাংনী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হোসনে মোবারকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, কাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মু. আলম হুসাইন, সিএফএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আল হেলাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক, গাংনী বাজার কমিটির সভাপতি সালাউদ্দীন শাওন, খৃষ্টান সম্প্রদায়ের নেতা রেভারেন্ট বেনজামিন মন্ডল, গাংনী উপজেলা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি আমিরুল ইসলাম অল্ডাম, মেহেরপুর প্রতিদিনের বার্তা সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিক জুলফিকার আলী কানন, গাংনী উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এমএন পাভেল, গাংনী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মুজাহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডিসি সিফাত মেহনাজ আরও বলেন. এলাকায় মাদক ও ইভটিজিং এর ব্যাপারে কোনো ছাড় দেওয়া হবেনা। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগে সব সময় সোচ্ছার। এলাকায় ইভটিজিং ও মাদকের কোনো ঘটনা ঘটলে সাথে সাথে প্রশাসনকে জানানোর অনুরোধ জানান তিনি।
সেবা প্রার্থীদের সরাসরি তার কাছে যাওয়ার জন্য আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, জেলার উন্নয়নসহ অন্যান্য বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও সাধারণ মানুষের মাঝে তৃতীয় কোনো পক্ষের কাজ করার সুযোগ থাকবেনা। সেবা প্রত্যাশীদের কোনো কোনো ধরনের সেবা আমি আইনগত ভাবে দিতে না পারলে তাদের বুঝিয়ে বলছি।
কাজলা ও সেউটি নদী খনন ও দখলমুক্ত করা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের মতামত সমন্ধে জেলা প্রশাসক বলেন, নদী দুটি খননের জন্য অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
এককভাবে শিক্ষার মান উন্নয়ন করা সম্ভব নয় বলে মত তুলে ধরে তিনি বলেন, শিক্ষা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমরা সবাই কোনো না কোনোভাবে শিক্ষার সাথে জড়িত। আমরা কেউ শিক্ষক, অভিভাবক নইতো ছাত্র। শিক্ষার মান উন্নয়নে সবাইকে এক সাথে কাজ করতে হবে। ছাত্রকে বুঝতে হবে শিক্ষার গুরুত্ব-শিক্ষককে বুঝতে হবে তার পেশার দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং অভিভাবকদের বুঝতে হবে সন্তানের সুশিক্ষার দরকার আছে। ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকদের সমন্বয়ে শিক্ষার মান গড়ে তুলতে হবে।
ডিসি বলেন, জেলার সাধারণ মানুষের চিকিৎসার মান বৃদ্ধিতে ইতোমধ্যে সিভিল সার্জন ও মেহেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়কের সাথে কথা হয়েছে। মেহেরপুরের এই হাসপাতালটি ১০০ শয্যা থেকে আড়াই’শ শয্যায় উন্নতি করা হয়েছে। এখানে জনবলসহ বিভিন্ন সংকটের কারণে স্বাস্থ্য সেবা পূর্ণাঙ্গভাবে দিতে না পারলেও যে সামর্থ্য রয়েছে সেটা দিয়েই সেবার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বাকিগুলো সমাধানের জন্য স্বাস্থ্যে কর্মকর্তারা উপর মহলের সাথে যোগাযোগ করছেন। অচিরেই স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে কিছু সমাধান হয়ে যাবে।
বিগত দিনগুলোতে জেলার উন্নয়নে সুসম বন্টন হয়নি এমন অভিযোগের ভিত্তিতে ডিসি বলেন, জেলায় বরাদ্দকৃত অর্থ এখন থেকে জনসংখ্যা এবং আয়তনের ভিত্তিতে দেওয়া হবে।
মাদক নিয়ন্ত্রণে ছাত্রদের ভূমিকা নেওয়ার আহবান জানিয়ে ডিসি সিফাত মেহনাজ বলেন, সীমান্তবর্তি এই জেলায় মাদক নিয়ন্ত্রণে সবাইকে সচেতন করে তুলতে হবে। এছাড়া মাদক নিয়ন্ত্রণে কঠোরভাবে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মেহেরপুর একটি কৃষি সমৃদ্ধ জেলা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এজেলার মাটিকে রক্ষা করতে হবে। ইটভাটার জন্য টপসয়েল কেটে নিলে মাটির বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে। তাই মাটির টপসয়েল রক্ষা করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এতে সবার সহযোগীতা চান তিনি।
জেলায় দিন দিন জমি সংক্রান্ত বিরোধ বাড়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জমি সংক্রান্ত বিরোধ মেটাতে গ্রাম আদালত জোরালো ভূমিকা রাখতে পারে। তাই গ্রাম আদালতকে সক্রিয় করে জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিস্পত্তি করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে জেলার বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষকে নিয়ে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে ওয়াইফাই কর্ণার সামাজিক ব্যধিতে পরিণত হয়েছে। এক্ষেত্রে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সচেতন করে তুলতে হবে। এলাকার লাইব্রেরীগুলোর বর্তমান অবস্থান জানার জন্য স্থানীয় ছাত্র সমন্বয়কদের ভূমিকা নিতে হবে। লাইব্রেরীগুলোকে সচল করে এই প্রজন্মের মানুষকে নতুন করে জ্ঞানমুখী ও বইমুখী করে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, আবহানকাল থেকে এদেশে হিন্দু, মুসলমান, বৈদ্ধ খ্রষ্টান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সাথে বসবাস করে আসছেন। বিভিন্ন কঠিন সময়ে সেই উদাহরণ বাংলাদেশে আছে। আমরা পারস্পারিক সম্প্রীতির সাথে বসবাস করি। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই ধারা যেভাবে অব্যাহত আছে সেটা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, সনাতন ধর্মালম্বীদের স্বারদীয় দূর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সনাতন ধর্মালম্বীদের এই উৎসব জেলার প্রতিটিস্থানে সুন্দর ও সুশৃংখলভাবে উৎযাপিত হওয়ার জন্য সকল ধর্মের লোকজনকে সহযোগীতা করার অনুরোধ জানান।
ডিসি বলেন, সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীরা অনেক দুর থেকে এসে কাজ করেন। তারা এলাকাকে সর্ব্বোচ্চটা দিয়েই সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তাই স্থানীয় প্রশাসনকে সহযোগীতা করার জন্য স্থানীয়দের আহবান জানান। প্রশাসন ও স্থানীয়রা এক সাথে কাজ করলে জেলার সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্তি হবে।
এর আগে নবাগত জেলা প্রশাসক মতবিনিময় সভায় আগমন করলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহা ও অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ।
মতবিনিময় সভায় প্রশাসনের কর্মকর্তা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, সাংবাদিক, বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকবৃন্দ, এনজিও কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।