চুয়াডাঙ্গায় পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জের বিরুদ্ধে অর্থবাণিজ্যের অভিযোগ তদন্ত কমিটির ঘটনাস্থল পরিদর্শন

চুয়াডাঙ্গার হিজলগাড়ী ক্যাম্প পুলিশের ইনচার্জ এসআই শেখ রকিবুল ইসলামের বিরুদ্ধে মারধর ও অর্থবাণিজ্যের গুরুত্বর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের ভিত্তীত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছেন। কমিটি লিখিত স্বাক্ষতকার গ্রহণ করেছেন অনেকের। মিলতে শুরু করেছে ঘটনার সত্যতা। প্রথম থেকে শেষপর্যন্ত মধ্যস্থতাকারি সাইফুল ইসলামকে পেলে পরিষ্কার হবে ৯৫ হাজার টাকার ভাগ কে কত নিয়েছে।

চুয়াডাঙ্গার হিজলগাড়ী ক্যাম্প পুলিশের ইনচার্জ এসআই শেখ রকিবুল ইসলামের বিরুদ্ধে পিকাপভ্যানসহ ঢাকা ধামরাইয়ের ৪ জনকে আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। দীর্ঘ সময় দেনদরবার করে নেহালপুর গ্রামের সাইফুলের মাধ্যস্থতায় আটককৃতদের ছেড়ে দেবার গুরুত্বর অভিযোগ ওঠে।

এ ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজিম উদ্দিন আল আজাদ পিপিএমকে প্রধান করে এক সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠণ করেন সংশ্লিষ্ট বিভাগ।

গতকাল বুধবার ২৫ অক্টোবর বেলা ১১টার দিকে তদন্ত কমিটির প্রধান ঘটনাস্থল পরির্দশন করেন এবং অনেকের লিখিত বক্তব্য গ্রহণ করেন। যাদের মধ্যে আছেন সোরাফ হোসেন, বোন রেহেনা ওরফে জয়নব, রেহেনার মেয়ে রিক্তা খাতুন।

লিখত বক্তব্যে প্রত্যেকেই জানান, ঢাকার মেহমানরা পিকাপ নিয়ে গত শুক্রবার ৪ জন তাদের বাড়িতে বেড়াতে আসে। রাত সাড়ে ৩টার দিকে হিজলগাড়ী ক্যাম্প পুলিশের ইনচার্জ এসআই রকিবুল ইসলাম সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে তাদেরকে আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। আটক করার সময় গরুচোর অপবাদ দিয়ে মারধরও করে। তাদেরকে ছাড়াতে ডিঙ্গেদহ বাজারের ২টি বিকাশের দোকান থেকে ১ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবকিছুর মধ্যস্থতা এবং এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে গ্রামের ওয়াজেদ আলীর ছেলে সাইফুল ইসলাম।

তদন্তকমিটর নিকট রিক্তা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার আত্নীয়কে ছাড়াতে আমি ওই দারোগার পা পর্যন্ত চেপে ধরি এবং ধমকও খায়। এতকিছু করেছি কারণ ঢাকার আত্নীয়দের নেহালপুরে আমাদের বাড়িতে আমিই পাঠিয়েছি। আর আমাদের বাড়িতে এসে তারা বিপদে পড়েছে এর জন্য আমিই দায়ি।

এদিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, এরি মধ্যে হতদরিদ্র রিক্তার মা একটি গরু ৭০ হাজার টাকা দিয়ে বিক্রি করে সেই টাকা ক্ষতিপুরণ হিসাবে ঢাকাতে পাঠিয়ে দিয়েছে। এব্যাপারে তদন্ত কমিটির প্রধান কোন মন্তব্য না করলেও তদন্ত কমিটির সামনে কয়েকটি সত্যতা মিলেছে। যার মধ্যে কোন সুনিদৃষ্ট অভিযোগ ছাড়াই ৪ জনকে আটক করা। মারধর করা। কোন উর্দ্ধতম কর্মকর্তাকে না জানিয়ে দীর্ঘ সময় ক্যাম্পে আটকিয়ে রাখা। বিকাশের মাধ্যমে ১ লাখ টাকা উত্তলন করা। এখন সাইফুলকে পেলেই ৯৫ হাজার টাকা কি ভাবে কোন ক্ষাতে খরচ হয়েছে তা পরিষ্কার হবে।

ঢাকা ধামরাইয়ের আব্দুর রহমান বলেন, আমার শিশু ছেলেকে পুলিশ ধরেছে এবং মারপিট করেছে এমন সংবাদ পেয়ে হিজলগাড়ীতে ছুটে আসি। ডিঙ্গেদহ বাজারে পরিবহণ থেকে নামার সাথে সাথে গতিরোধ করে সাইফুল। সে নানা প্রকার ভয়ভীতি দেখাতে থাকলে আমি ও আমার স্ত্রী সন্তানের কথা ভেয়ে আরও ভয় পেয়ে যায়। তাই সাইফুলের কথায় রাজি হয়ে বিকাশের মাধ্যমে ১ লাখ টাকা উত্তলন করি। যার মধ্য থেকে ৫ হাজার টাকা আমাকে দেয়। বাকি ৯৫ হাজার টাকা সে নিয়ে আমাদেরকে হিজলগাড়ী ক্যাম্পে নিয়ে যায়। একপর্যায় গত শনিবার বিকাল ৪ টার দিকে আমার ছেলেসহ বাকিদের পুলিশ ছেড়ে দেয়। এদের মধ্যে আমার শিশু ছেলে ও এক ভাইকে পুলিশ মারধর করেছে। তার ছবি তদন্ত কর্মকর্তাকে দিয়েছি।

তদন্ত কমিটির সামনে সোরাফ হোসেন আরও জানায়, আটক এবং টাকা পয়সা লেনদেনর বিষয়টি জানাজানি হয়ে পড়লে ওই দারোগা গত রোববার বেলা ১১টার দিকে আমি একটি মাঠে কাজ করছিলাম সেখানে আসে এবং আমাকে ধমক দিয়ে ধরে নেবার চেষ্টা করে ও শাসাতে থাকে। মাঠের লোকজন এর প্রতিবাদ করলে দারোগা চলে যায়।




মেহেরপুরে কর্মীসমর্থক নিয়ে মুজিব সিনেমা দেখলেন অ্যাড. আব্দুস সালাম

মুজিব সিনেমা দেখার পর মেহেরপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আবেগ জড়িত কন্ঠে ও অশ্রুসিক্ত নয়নে বলেন,’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে যারা পৃথিবীর কলঙ্কিত ইতিহাস তৈরি করেছে সমগ্র জাতি তাদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করবে।’ প্রায় শতাধিক দলীয় ও ব্যক্তিগত কর্মী সমর্থকদের নিয়ে মুজিব সিনেমা দেখার পর মেহেরপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট আব্দুস সালাম এ কথা বলেন।

বুধবার ২৫ অক্টোবর সন্ধ্যায় মেহেরপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শতাধিক নেতাকর্মীর বহর নিয়ে মেহেরপুর সিনেমা হলে “মুজিব—একটি জাতির রুপকার” বায়োপিকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাস্তব জীবনের ঘটনা সম্বলিত সিনেমা দেখতে উপস্থিত হন।

এ সময় তার সাথে আওয়ামী লীগ ও তাতী লীগের নেতাকর্মীসহ নিজস্ব প্রায় শতাধিক কর্মী সমর্থক উপস্থিত ছিলেন।




বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানী খাতের উন্নয়নে ৪০০ মিলিয়ন ইউরোর চুক্তি

ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (ইআইবি) এবং বাংলাদেশ দেশের বিদ্যুৎ খাতের টেকসই সবুজ রূপান্তরে অবদান রাখতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পের জন্য ৪০০ মিলিয়ন ইউরোর চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এটি দেশের জলবায়ু প্রশমন লক্ষ্যমাত্রা পূরণের লক্ষ্যেও করা হয়েছে।

আজ বুধবার (২৫ অক্টোবর) ব্রাসেলসে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এসময় ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েন এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামে ইইউ ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক সম্প্রসারণ ও উন্নয়নে একটি নতুন অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা চুক্তির বিষয়ে আলোচনা শুরু করেন।

চুক্তি অনুযায়ী, ৩৫০ মিলিয়ন ইউরো নবায়নযোগ্য জ্বালানীখাতে প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং বিনিয়োগসহ ৪৫ মিলিয়ন ইউরোর সহায়তা প্যাকেজ দ্বারা পরিপূরক। এর মধ্যে, ১২ মিলিয়ন ইউরোর গ্রিন এনার্জি ট্রানজিশন প্রকল্প, যার মধ্যে ৭ মিলিয়ন ইউরো জার্মানির সহ-অর্থায়নে পরিচালিত হবে। এর লক্ষ্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সবুজ শক্তি রূপান্তরকে সহজতর করার জন্য নীতি, আইনী কাঠামো এবং বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরিতে কাজ করা।

প্রকল্পগুলো মূলত ইউটিলিটি স্কেল সৌর ফোটোভোলটাইক এবং উপকূলীয় বায়ু প্রকল্প এবং সম্ভাব্য শক্তি স্টোরেজ সিস্টেমের সমন্বয়ে সমগ্র বাংলাদেশ জুড়ে জ্বালানি এবং গ্রামীণ উন্নয়নে সহজলভ্য করতে অবদান রাখবে। এই কার্যক্রম বাংলাদেশে আনুমানিক ৭৫০ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানি সক্ষমতা স্থাপনে অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

চুক্তি অনুযায়ী, বিনিয়োগগুলো বিদ্যুৎ বিতরণ এবং বিকেন্দ্রীকরণের উন্নতি করবে, জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে সংযোগ এবং স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি করবে। কারিগরি সহায়তার অংশ হিসাবে ইইউ একই জমিতে শক্তি উৎপাদন এবং খাদ্য উৎপাদন, সৌর, হাইব্রিড সৌর / বায়ু এবং ব্যাটারির সঙ্গে সৌর একত্রিত করার উপায়সহ প্রকল্প প্রস্তাবগুলো নিরীক্ষা করতে সহায়তা করবে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে সৌর প্রকল্প ও উপকূলীয় বায়ু প্রকল্প জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে। গ্রিন এনার্জি ট্রানজিশনের জন্য এই অংশীদারিত্ব একটি বাংলাদেশী আইনি কাঠামো তৈরিতে সহায়তা করবে যা অন্তর্ভুক্তিমূলক সবুজ শক্তি রূপান্তরের জন্য বিনিয়োগকে উৎসাহিত করবে এবং জ্বালানি খাতে প্রফেশনাল নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগও বৃদ্ধি করবে।

গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামে ইইউ এবং বাংলাদেশের মধ্যে শিক্ষা খাতের (৩০ মিলিয়ন ইউরো), শালীন কাজের এজেন্ডা প্রচার, সবুজ নির্মাণ, কার্যকর ডিজিটাল গভর্নেন্স জোরদার এবং দেশের পাবলিক স্পেসে লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা রোধে (প্রতিটি ক্ষেত্রে ১০ মিলিয়ন ইউরো) সহযোগিতার জন্য অতিরিক্ত ৭০ মিলিয়ন ইউরোর একটি প্যাকেজ স্বাক্ষরিত হয়।

চুক্তি প্রসঙ্গে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েন বলেন, ‘ইইউ ও বাংলাদেশ ৫০ বছর ধরে নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত অংশীদার। এখন, গ্লোবাল গেটওয়ের অধীনে সবুজ রূপান্তরের সুযোগগুলো কাজে লাগাতে আমরা এই অংশীদারিত্বকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। ইউরোপীয় কমিশন, ইআইবি এবং বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি সহায়তা এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় একযোগে কাজ করবে। এই ৪০০ মিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ বাংলাদেশের জনগণ ও অর্থনীতিতে পরিবর্তন আনবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্ক নিয়ে আলাপ করেছি। আমরা গণতন্ত্র, মূল্যবোধ, মানবাধিকার, আইন নিয়ে আমাদের পরস্পরের ভাবনা তুলে ধরেছি। এই বছর বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের অংশীদারিত্বের ৫০ তম বার্ষিকী। আমরা আনন্দিত যে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক অংশীদার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ই ইউ’র গ্লোবাল গেটওয়ে উদ্যোগকে স্বাগত জানায়। আমরা ইইউ’র সঙ্গে বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষর করতে যাচ্ছি। এর মধ্যে আছে ইউরো ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের সঙ্গে ৩৫০ মিলিয়ন ইউরোর চুক্তি। আমাদের সঙ্গে জলবায়ু ও নবায়নযোগ্য জালানি খাতে অংশীদার হওয়ার জন্য আমরা সাধুবাদ জানাই।

এ বছর ইইউ-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী। এই সময়ে ইইউ বাংলাদেশের বিশ্বস্ত উন্নয়ন, বাণিজ্য ও মানবিক অংশীদার হয়েছে। গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরাম প্রথমবারের মতো ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং বিশ্বব্যাপী সরকারের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি বেসরকারি খাত, সুশীল সমাজ, চিন্তাবিদ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ স্টেকহোল্ডারদের একত্রিত করে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এবং বিশ্বব্যাপী টেকসই প্রবৃদ্ধি এবং স্থিতিস্থাপকতা অর্জনের জন্য অবকাঠামোতে বৈশ্বিক বিনিয়োগকে উৎসাহিত করে।

গ্লোবাল গেটওয়ে বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগের ব্যবধান হ্রাস এবং ডিজিটাল, জ্বালানি এবং পরিবহন খাতে স্মার্ট, পরিষ্কার এবং সুরক্ষিত সংযোগ বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং গবেষণা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইতিবাচক প্রস্তাব। গ্লোবাল গেটওয়ে কৌশলটি একটি টিম ইউরোপ পদ্ধতির প্রতীক যা ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইইউ সদস্য রাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় উন্নয়ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে একত্রিত করে।

একইসাথে, তারা ২০২১ থেকে ২০২৭ সালের মধ্যে সরকারী ও বেসরকারী বিনিয়োগে ৩০০ বিলিয়ন ইউরো সংগ্রহ করার লক্ষ্য নিয়েছে, নির্ভরতার পরিবর্তে প্রয়োজনীয় সংযোগ তৈরি করবে এবং বৈশ্বিক বিনিয়োগের ব্যবধান বন্ধ করবে।




এলডিসির পরও জিএসপি প্লাস সুবিধা অব্যাহত রাখার আহ্বান শেখ হাসিনার

এলডিসি থেকে উত্তরণের পরও বাংলাদেশের জিএসপি প্লাস সুবিধা অব্যাহত রাখতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার ব্রাসেলসে ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (ইআইবি) এবং বাংলাদেশ দেশের বিদ্যুৎ খাতের টেকসই সবুজ রূপান্তরে অবদান রাখতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পের জন্য ৪০০ মিলিয়ন ইউরোর চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তিনি এই আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রায় সবকিছুই ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশকে দিয়েছে যা বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভুমিকা রাখছে। আমি আশা করি যে ২০২৬ সালে বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণের পর আমাদের উন্নয়নে সহায়তার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশকে জিএসপি প্লাস সুবিধা দেবে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে আশ্রিত প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য ইইউ’র মানবিক সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানাই। রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে নিরাপদ এবং টেকসই প্রত্যাবর্তনই এই সংকটের একমাত্র সমাধান। আমি খুব দ্রুত এই সংকটের সমাধান খোঁজার জন্য ইইউ’র প্রতি আহ্বান জানাই।

তিনি আরও বলেন, আমরা অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার এবং নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসনের নিশ্চিতে আমাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছি। আমরা কৌশলগত বিষয়বস্তু নিয়ে ইইউ’র ভবিষ্যৎ অংশীদার হওয়ার পরিকল্পনা করছি। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, আমরা এই নতুন অংশিদারিত্ব নিয়ে আলোচনা করেছি এবং এই সংক্রান্ত একটি চুক্তি শিগগিরই করা হবে। এটি আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি নতুন দ্বার উন্মোচন করবে।




মেহেরপুরে ডা. সাগরের সৌজন্যে মুজিব চলচ্চিত্র প্রদর্শনী

মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক এবং মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ডা. এ এস এম নাজমুল হক সাগরের সৌজন্যে তার কর্মী সমর্থকদের জন্য মেহেরপুর সিনেমা হলে মুজিব একটি জাতির রূপকার চলচ্চিত্রটি প্রদর্শনের আয়োজন করা হয়।

আজ বুধবার (২৫ অক্টোবর) রাতে মেহেরপুর সিনেমা হলে গাংনী আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ এবং কর্মীদের নিয়ে একসঙ্গে প্রদর্শিত সিনেমাটি উপভোগ করেন।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা উপ-কমিটির সদস্য ও মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ডা. এ এস এম নাজমুল হক সাগর এর নেতৃত্বে সকলকে নিয়ে “মুজিব-একটি জাতির রুপকার” বায়োপিকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাস্তব জীবনের ঘটনা সম্বলিত সিনেমা দেখতে মেহেরপুর সিনেমা হলে এসময় উপস্থিত ছিলেন, সংরক্ষিত আসন-৩০৭ এর সাবেক সংসদ সদস্য সেলিনা আক্তার বানু, বীর মুক্তিযোদ্ধা মরজেম আলি,এজের আলি,আনারুল হোসেন, সানাউল্লাহ, খালেদা খানম ফেন্সি, মোঃ নিজাম উদ্দিন, সভাপতি ২ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, ৫নং মটমুড়া ইউনিয়ন শাখা, গাংনী উপজেলা কৃষকলীগের সাবেক সভাপতি, মোশারফ হোসেন, ৫নং ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ চঞ্চল, ৪নং বামুন্দি ইউনিয়ন কৃষকলীগের সভাপতি জিয়াউল হক, গাংনী উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি জিয়াউর রহমান, গাংনী উপজেলা শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শাহাজাহান আলী, হুমায়ন কবির, উপ গন যোগাযোগ ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক, জয় আহমেদ, গাংনী উপজেলা উপজেলা ছাত্রলীগের সহ- সম্পাদক আবদুল্লাহ আসিল, সহ-সভাপতি, তেীফিক আজিজ মুন্না, সহ-সভাপতি রিদয় আহমেদ, উজ্জ্বল হোসেনসহ আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ ও ছাত্র লীগের শতাধিক নেতাকর্মী।




আলমডাঙ্গা বণিক সমিতির নির্বাচনে উৎসবের আমেজ; নেতৃত্ব পরিবর্তনের গুঞ্জন

আলমডাঙ্গা উপজেলার বৃহত্তর ব্যবসায়ী সংগঠন বণিক সমিতির ত্রি-বার্ষিক নির্বাচন আর মাত্র ১ দিন পর শনিবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

আগামী শনিবার সকাল ৮ থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। থানা পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা ও সাংগঠনিক নীতিমালা অনুযায়ী ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রচারণা। ভোটের সময় যত ঘনিয়ে আসছে প্রচারণার মাত্রাও নতুন রূপ নিচ্ছে। এবার নেতৃত্ব পরিবর্তন আসার গুঞ্জন চলছে। একই পরিবারের দুই ভাই সভাপতি প্রার্থী হওয়ায় ভোট ভরাডুবির কবলে বিজয়ী মালা পড়তে পারেন সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব মকবুল হোসেন এমনটাই আশঙ্কা করছে ভোটাররা। বণিক সমিতির নির্বাচনকে ঘিরে পোস্টারে ছেয়ে গেছে আলমডাঙ্গা পুরো শহর। বাজারের অলিগলিতে প্রার্থীদের পদচারণায় মুখর।

প্রার্থীদের সমর্থনে গভীর রাত পর্যন্ত প্রচারণা চলছে। এ নির্বাচনকে ঘিরে মাইকিং নিষিদ্ধ থাকলেও পায়ে হেটে ভোটারগণের দারস্থ হচ্ছেন প্রার্থীরা। বর্তমান ও সাবেক দায়িত্বরত ব্যাক্তিরাই আবারো প্রার্থী হয়েছেন। নানান অভিযোগের মধ্যেও নিজেকে উদীয়মান ও গ্রহণ যোগ্য নেতৃত্বের প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলছে প্রচারণা। এ নির্বাচনকে ঘিরে আলমডাঙ্গা বাজারের সর্বত্রই এখন বইছে উৎসবের আমেজ। ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখন উৎসবের ভোটের প্রতীক্ষায় আছেন তারা। দীর্ঘ ৩ বছর পর নির্বাচন হওয়ায় প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। নির্বাচনে বিভিন্ন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২৪ জন।

প্রার্থীরা হলেন-সভাপতি পদে আরেফিন মিঞা মিলন (ছাতা),আলহাজ্ব মকবুল হোসেন (দোয়াতকলম) ও সাইফুল ইসলাম লিটন (চাকা)।সহসভাপতি পদে কামরুল ইসলাম হীরা (মাছ) ,হাফিজুর রহমান (চশমা), রফিকুল আলম (দেয়াল ঘড়ি) ও আব্দুল হামিদ (বটগাছ)। সাধারণ সম্পাদক পদে কামাল হোসেন (আনারস), খন্দকার আব্দুল্লাহ আল মামুন (বাই সাইকেল)। সহ সাধারণ সম্পাদক পদে শরিফুল ইসলাম (বাঘ), বাবুলুর রহমান (ডাব), বদর উদ্দিন (হাঁস), জাহাঙ্গীর আলম (গোলাপ ফুল)। কোষাধ্যক্ষ পদে আলাউদ্দিন (মোরগ) সোহানুর রহমান বাবুল (হাতী)। সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল লতিফ (মই), আমিরুল ইসলাম লিটন (চেয়ার)। ধর্মীয় সম্পাদক রেজাউল করিম কাবিল (মিনার) আসাদুল হক (তাঁরা)। দপ্তর সম্পাদক শফিউল হাসান মিলন (কলম) ইফতেকার আহমেদ (টিয়াপাখি)। ক্রীড়া সম্পাদক পদে মাসুদ রানা মাসুম (ফুটবল) ও হাবিবুর রহমান (আম) প্রতিক।

উল্লেখ্য, নির্বাচনে ২১ পদের বিপরীতে ৩৬ জন মনোনয়ন পত্র উত্তোলন করেন। এর মধ্যে ২ জন সদস্য প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করলে কার্যনির্বাহী সদস্য পদে ১০ জন বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হয়। বণিক সমিতির ভোটার সংখ্যা হলো ১ হাজার ৫৬ জন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা- সিরাজুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে উৎসব বিরাজ করছে। এখন পর্যন্ত কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। আগামি শনিবার সকাল থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।




দর্শনা ওয়াল্টন প্লাজার আর্থিক সহায়তা প্রদান ও দোয়া মাহফিল

দর্শনা ওয়াল্টন প্লাজার পণ্যক্রয় করে মারা যাওয়া একটি পরিবারকে আর্থিক সহায়তা ও মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্টিত হয়েছে।

আজ বুধবার বিকাল ৪ টায় দর্শনা বাসস্ট্যান্ড পাড়ায় এ আর্থিক সহায়তা প্রদান ও দোয়া মাহফিল অনুষ্টিত হয়।

দর্শনা বাসস্ট্যাান্ড পাড়ার মৃত আব্দুস ছাত্তার মাষ্টারের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৪৫) দর্শনা ওযালটন প্লাজা থেকে ৫ হাজার ৬৪০ টাকা মূল্যের একটি ব্লেন্ডার কিস্তিতে ক্রয় করেন। এ মাল ক্রয়ের পর দুটি কিস্তি দেওয়ার পরে তিনি মৃত্যু বরণ করেন।

এ বিষয়ে দর্শনা ওয়ালটন প্লাজা থেকে কিস্তিতে পণ্য ক্রয় করে মারা যাওয়ার পর কিস্তি ক্রেতা ও পরিবার সুুরক্ষা নীতির আওতায় মৃত সাইফুল ইসলামের পরিবারেেক আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। দর্শনা ওয়ালটন প্লাজার আর্থিক ৫০ হাজার টাকার সহায়তা গ্রহণ করেন মৃত সাইফুল ইসলামের স্ত্রী। মৃত বরণকারী সাইফুল ইসলামের বড় ভাই ফরহাদ হোসেনের উপস্থাপনায় উপস্থিত থেকে আলোচনা করেন, ঝিনাইদহ জোনের জোনাল সেলস ম্যানেজার সাব্বির হোসেন, জোনাল ক্রেডিট ম্যানেজার জুনায়েদ নোমানী, দর্শনা ওয়ালটন প্লাজার ম্যানেজার বেনজীর আহাম্মেদ।

এসময় জোনাল ক্রেডিট ম্যানেজার জুনায়েদ নোমানী বলেন,বিশ্বে একমাত্র ইলেকট্রিক এ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স কোম্পাানী ওয়ালটনই সর্বপ্রথম কিস্তি ক্রেতা ও পরিবার সুুরক্ষা নীতির আওতায় অনাদায়ী কিস্তির টাকা মওকুফ সহ মৃত ব্যক্তির পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা প্রদান করছে এবং পরবর্তীতে এই সহায়তা আরো বাড়ানো হবে বলে জানান তিনি।

জীবননগর ওয়ালটন প্লাজার ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ সহ উক্ত প্লাজার কর্মচাারীবৃন্দ। এসময় অনুষ্ঠানে দোয়া পরিচালনা করেন দর্শনা বাসস্ট্যান্ড জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাও. ওসমানন গণি।




মেহেরপুর জেলা ছাত্রলীগের বর্ণাঢ্য র‍্যালি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের সাফল্য ও উন্নয়নের বার্তা পৌঁছে দিতে মেহেরপুর জেলা ছাত্রলীগের বর্ণাঢ্য র‍্যালির আয়োজন করেছে মেহেরপুর জেলা ছাত্রলীগ।

বুধবার বিকেলে মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বর থেকে মেহেরপুর জেলা ছাত্রলীগের বর্ণাঢ্য র‍্যালি বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বড়বাজার চৌরাস্তার মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।

মেহেরপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুস সালাম বাঁধনের নেতৃত্বে মেহেরপুর সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার জুলকার নাইম বাইজিদ, গাংনী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসিফ ইকবাল অনিক, বারাদি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আল মামুন, মহাজনপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইমাম হোসেন ইমন, শ্যামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান সহ জেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের বিভিন্ন নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।




খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ গঠনে শেখ হাসিনা সরকারের অবদান

বাংলাদেশ আয়তনে ছোট এবং অধিক ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হলেও স্বাধীনতা পরবর্তী ৫২ বছরে সারা বিশ্বের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গৌরবোজ্জ্বল ও ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন। জাতির সংকটকালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি উন্নয়নে যে রূপ রেখা দিয়েছিলেন পরবর্তীকালে তার সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা তা বাস্তবে রূপান্তর করে বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে প্রকট খাদ্য সমস্যা দেখা দেয় এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সেই সংকট অবশ্য প্রথম বছরেই কাটিয়ে উঠে বাংলাদেশ। তারপর বিভিন্ন সময় পাকিস্তানি ভাবধারার বেশ কয়েকটি সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনায় বাংলাদেশ আবারও পথ হারায়। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর খাদ্য সংকট নিরসনে কাজ শুরু করে। অতঃপর খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য শেখ হাসিনার সরকার দক্ষ হাতে দেশ পরিচালনা করতে থাকেন । এরই ধারাবাহিকতায় আবারও প্রাণ ফিরে পায় দেশের কৃষিতে এবং শুরু হয় খাদ্য উৎপাদনে সবুজ বিপ্লব। এরফলে ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। এজন্য জননেত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) কর্তৃক মর্যাদাপূর্ণ সেরেস পদকও পান। কিন্তু ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত জামায়াত-বিএনপি জোট সরকারে শাসনামলে সেই স্বপ্নগুলো আবারও ধাক্কা খায়। পুনরায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে ২৬ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতিসহ সরকার পরিচালনা শুরু করেন। ২০১৩ সালে এসে আবারও দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। সে বছর খাদ্য উদ্বৃত্তও হয়। এর পরের বছর থেকে দেশের চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত চাল বিদেশেও রফতানি শুরু হয়। শেখ হাসিনা সরকারের সাফল্যের ধারাবাহিকতা কৃষিতে কৃতিত্ব এবং খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পরিসংখ্যানেই পরিলক্ষিত হয়।

স্বাধীনতার ৫০ বছরে কৃষিতে বাংলাদেশ ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। একদিকে কৃষিজমি কমেছে, অন্যদিকে কয়েকগুণ বেড়েছে জনসংখ্যা। তবুও খাদ্যের কোনো অভাব নেই। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ের খাদ্য সঙ্কটের বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের রোল মডেল।

খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য এক নজরে সরকারের অবদানগুলো:

১.খাদ্যশস্য উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের স্থান দশম। এক ও দুই ফসলি জমিগুলো অঞ্চল বিশেষে প্রায় চার ফসলি জমিতে পরিণত করা হয়েছে এবং দেশে বর্তমানে ফসলের নিবিড়তা ১৯৪ শতাংশ।

২.২০১৮ সালে সার খাতে ৫৮ হাজার ৯ শত ৪৫ কোটি টাকা আর্থিক সহযোগিতা দেয়া হয়েছে।

৩.২০০৮-০৯ অর্থবছর হতে কৃষি প্রণোদনা/পুনর্বাসন কর্মসূচির মাধ্যমে ৮২৭ কোটি ১৭ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে, যার মাধ্যমে ৭৪ লাখ ৫৪ হাজার ৩১৩ জন কৃষক উপকৃত হয়েছে।

৪.প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া এবং বিভিন্ন ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।

৫.২ কোটি ৮ লাখ ১৩ হাজার ৪৭৭ জন কৃষককে কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড প্রদান করেছে।

৬.১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ করে দেয়ায় ১ কোটি ১ লাখ ১৯ হাজার ৫৪৮টি ব্যাংক হিসাব খোলা সম্ভব হয়েছে।

৭.ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে চতুর্থ। লবণাক্ততা, খরা, জলমগ্নতা সহনশীল ও জিংকসমৃদ্ধ, ধানসহ এ পর্যন্ত ধানের ১০৮টি উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে।

৮নিবিড় সবজি চাষের মাধ্যমে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১ কোটি ৫৯ লাখ ৫৪ হাজার মেট্রিক টন সবজি উৎপাদন করে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।

৯.আম উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে সপ্তম। দেশে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১২.৮৮ লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদিত হয়েছে।

১০.কৃষি পণ্য রফতানি থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৬ শত ৭৩ দশমিক ৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে।

১১.২০০৮-০৯ অর্থবছরে ধান, গম, পাট, ভূট্টা, আলু, সবজি, তৈল ও মসলাসহ বিভিন্ন ফসলের গুণগত মানসম্মত বীজ সরবরাহের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৯৯ হাজার ৮ শত ৭৪ মেট্রিক টন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তা দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ২৯ হাজার ৯ শত ২২ মেট্রিক টনে।

১২.২৮ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ১২টি আলুবীজ হিমাগার নির্মাণ এবং ৪টি টিস্যু কালচার ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়েছে।

১৩.২০১৭-১৮ অর্থবছরে মোট ১৪ হাজার ৫ শত ২০ দশমিক ৪২ কোটি টাকার কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।

১৪.বর্তমানে ৬.৪০ লাখ মেট্রিক টন ধারণক্ষমতার আধুনিক খাদ্য গুদাম/সাইলো নির্মাণের লক্ষ্যে কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।

১৫.দেশের উত্তরাঞ্চলে ১.১০ লাখ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন খাদ্যগুদাম নির্মাণ করা হয়েছে।

১৬.সারাদেশে ১০০০ মেট্রিক টন ধারণক্ষম ৭০ টি গুদাম এবং ৫০০ মেট্রিক টন ধারণক্ষম ১৩০টি গুদাম নির্মাণ।

১৭.মংলা বন্দরে ৫০ হাজার মেট্রিক টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন কনক্রিট গ্রেইন সাইলো নির্মাণ।

১৮.ভিজিডি, ভিজিএফ, জিআর ইত্যাদি খাতে ২০১৬-১৭ অর্থ-বছরে ৮.৩৭ মেট্রিক টন পরিমাণ খাদ্যশস্য সরবরাহ।

১৯.২০১৫ সালে শ্রীলংকায় ২৫ হাজার মেট্রিক টন চাল রপ্তানি।

২০.২০১৬ সালে নেপালে ২০ হাজার মেট্রিক টন চাল সাহায্য হিসেবে প্রেরণ।

২১. ২০১৬ সাল হতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ৫০ লাখ হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে ১০ টাকা কেজিতে বিতরণের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চলমান রয়েছে।

ড. মোঃ আশরাফুজ্জামান জাহিদ,সহযোগী অধ্যাপক, পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগ যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়




বিদেশে কৃষি পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশের সাফল্য

সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা বাংলাদেশকে প্রকৃতির লীলানিকেতন বলা যায়। অপূর্ব সৌন্দর্যে, শস্য-সম্পদে ও নানা প্রকার প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ভরা এইরূপ দেশ পৃথিবীতে বিরল। ফুলে-ফলে ও সৌন্দর্যে ভরা বাংলাদেশের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে মুগ্ধ হয়ে দ্বিজেন্দ্রনাথলাল রায় লিখেছিলেন-
“ ধনধান্য পুষ্প ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা
তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা,
ও সে স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা।
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি
ও সে সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি।“

যে জাতি হাজার বছর ধরে পরাধীনতার গ্লানি লালন-পালন ও বহন করে আসছিল , সেই জাতিকে সুসংগঠিত করে একখণ্ড স্বাধীন ভূমি উপহার দেন- জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। গর্বের আত্মপরিচয় হিসেবে জাতি লাভ করে, লালসবুজ পতাকা- জাতীয় সঙ্গীত-রণ সঙ্গীত। সেই মহানায়ক পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১০ জানুয়ারি, ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে পা রাখেন। স্বাভাবিকভাবেই দেশ শাসনের ভার জাতি তাঁর ওপর অর্পণ করে। সদ্য স্বাধীন রক্তঝরা, মুক্তিযুদ্ধে বিধ্বস্ত একটি দেশ। হাজারো সমস্যা, আর্থিক দৈন্যতা, নেই মূলধন, নেই বৈদেশিক মুদ্রা। অপরদিকে পরাজিত শক্তির উৎকট ঝামেলা, দেশ-বিদেশের গভীর ষড়যন্ত্র।

সকল প্রতিহিংসা উপেক্ষা করে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২-৭৩ আর্থিক বছর প্রথম বাংলাদেশের বাজেট পেশ করেন। বাজেটে ৫০০ কোটি টাকা উন্নয়ন খাতের মধ্যে ১০১ কোটি টাকা রাখেন কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে। সেই বাজেট কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নের মাইলফলক।বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার অন্যতম ভিত্তি ছিল কৃষি।তাই তো স্বাধীনতার ঊষালগ্নে কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে তিনি দেশে সবুজ বিপ্লবের/ কৃষি বিপ্লবের ডাক দেন।শুরু হয় কৃষিতে গ্রামীণ উন্নয়ন আর আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার।মওকুফ করেন ২৫ বিঘা পর্যন্ত খাজনার দায়।প্রত্যাহার করেন লাখ লাখ কৃষি ঋণের সার্টিফিকেট মামলা,ভূমিহীন কৃষকের নামে বিতরণ করা হয় খাসজমি।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশে সরকার গঠনের পরপরই কৃষিকে অগ্রাধিকারভুক্ত খাত হিসেবে চিহ্নিত করেন। সদ্য স্বাধীন দেশের ৩০ লাখ টন খাদ্য ঘাটতি পূরণে বঙ্গবন্ধু তাৎক্ষণিক আমদানির মাধ্যমে এবং স্বল্প মেয়াদে উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদ, উন্নত বীজ, সেচ ও অন্যান্য উপকরণ সরবরাহ করে এবং কৃষিঋণ মওকুফ, সার্টিফিকেট মামলা প্রত্যাহার ও খাসজমি বিতরণ করে কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে খাদ্যে স্বনির্ভরতা অর্জনের চেষ্টা করেন। বঙ্গবন্ধু বলতেন, ‘একটা স্বল্প সম্পদের দেশে অনবরত কৃষি উৎপাদন-হ্রাসের পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে না। দ্রুত উৎপাদন বৃদ্ধির সকল প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে। চাষিদের ন্যায্য ও স্থিতিশীল মূল্য প্রদানের নিশ্চয়তা দিতে হবে।’

১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়,ময়মনসিংহে বঙ্গবন্ধুর বজ্রকন্ঠে ঘোষিত হয়- কৃষিবিদদের আর্থ-সামাজিক মর্যাদার স্বীকৃতি -প্রথম শ্রেণির পদ মর্যাদা।সেদিন বাকৃবির আকাশে -বাতাসে ভেসে ওঠে “বঙ্গবন্ধুর অবদান,কৃষিবিদ ক্লাসওয়ান।”বঙ্গবন্ধু সেদিন বলেছিলেন, ‘আমি তোদের পদমর্যদা দিলাম, তোরা আমার মান রাখিস’। তখন থেকে কৃষিবিদরা প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা লাভ করেন। শিক্ষার্থীদের সেদিন কাগজ কলম বইয়ের পাশাপাশি প্যান্ট- কোট খুলে গ্রামে কৃষকদের সঙ্গে কাজ করার আহবান জানিয়েছিলেন। তিনি স্পষ্টভাবে সেদিন বলেছিলেন সবুজ বিপ্লব ব্যতিত দেশের অগ্রগতি সম্ভব নয়।

বাংলাদেশ বর্তমানে খাদ্যে স্বয়ংসস্পূর্ণতা অর্জন করেছে। তার শুরুটা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু এবং তার অসমাপ্ত কাজটুকু সম্পন্ন করেছেন তারই সুযোগ্য উত্তরসূরী কৃষকরত্ন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ শুধু খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণই নয়, বরং আজ কৃষি পন্য বহিবিশ্বে রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। আজ কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথ ধরে তাঁর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন দীর্ঘ ২১ বছর পর সরকার গঠন করে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাকে সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার কর্মসূচি হিসেবে চিহ্নিত করেন। তখন দেশে খাদ্য ঘাটতি ছিল প্রায় ৪০ লাখ মেট্রিক টন। বাজেটে কৃষি গবেষণার জন্য একটি পয়সাও কোনো বরাদ্দ ছিল না। সে বছর ১২ কোটি টাকা শুধু কৃষি গবেষণার জন্য বরাদ্দ করা হয় এবং পরবর্তী বাজেটে ১০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ পায় কৃষি এবং আইসিটি এই দুই সেক্টর। শুরু থেকেই কৃষি গবেষণাকে সরকার সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়। ফলে পরবর্তী পাঁচ বছরে উন্নয়ন-অর্থনীতি ও সামাজিক ক্ষেত্রে অর্জিত হয় চমকপ্রদ সাফল্য। প্রথমবারের মতো দেশ খাদ্যে নির্ভরশীলতা অর্জন করে।

২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত বিএনপি-জামাত জোট সরকার ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আবারো দেশের কৃষিতে স্থবিরতা নেমে আসে। ২০০২ সালে দানাজাতীয় খাদ্যের উৎপাদন ২ কোটি ৬৮ লাখ টন থেকে নেমে আসে ২ কোটি ৬১ লাখ টনে। আবারো শুরু হয় নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির ধারা।২০০৯ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বে যখন দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে তখন খাদ্য ঘাটতি ছিল ২৬ লাখ মেট্রিক টন। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই নির্বাচনী ইশতেহার ‘দিন বদলের সনদ’ অনুযায়ী ‘রূপকল্প ২০২১’ প্রণয়ন করা হয়। পাশাপাশি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয় কৃষি ও খাদ্য উৎপাদনে।

আওয়ামীলীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে কৃষি যান্ত্রিকীকরণে ভর্তুকি প্রদান, ১০ টাকায় কৃষকের জন্য ব্যাংক হিসাব চালুকরণ, সেচ সুবিধা বৃদ্ধি, কৃষিতে প্রণোদনা প্রদান, সার বিতরণ ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাসহ নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ফলশ্রুতিতে ২০১৩ সালে এসে দেশ শুধু খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতাই অর্জন করেনি, খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে পরিণত হয়। এসডিজি কে সামনে রেখে ২০০৯ সালে উন্নয়নের যে অভিযাত্রা শুরু হয়েছিল তার গতি ও পরিধি সরকারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় মেয়াদে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়।

দ্বিতীয় মেয়াদে প্রণীত হয় (২০১৪-১৮) সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। এরই অংশ হিসেবে রূপকল্প ২০২১ এবং রূপকল্প ২০৪১ এর আলোকে জাতীয় কৃষিনীতি, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট, ডেল্টাপ্লান ২১০০সহ নানা কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বর্তমান সরকার। দেশের ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর পুষ্টি চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্যমোচন ও রপ্তানি আয়ে মৎস্য খাতের অবদান আজ সর্বজনস্বীকৃত। জিডিপিতে মৎস্য খাতের অবদান ২ দশমিক ৪৩ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ মৎস্য উৎপাদন করেছে ৪৭ দশমিক ৫৯ লাখ টন। এ সময় ৭৪ হাজার ৪২ টন মৎস্য পণ্য রপ্তানি করে ৫ হাজার ১৯১ কোটি টাকা সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। মৎস্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে বর্তমান প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ২০৪১ সালে দেশে মাছের উৎপাদন দাঁড়াবে ৯০ লাখ টন।

বাংলাদেশ হতে নানাবিধ কৃষিপণ্যসমূহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এরমধ্যে পাট ও পাটজাত দ্রব্য, চা পাতা, আম, কাঁঠাল, লেবু, লিচু, লটকন, আমড়া, পেয়ারা, শুকনা বরই, হিমায়িত সবজি আলু, কচু, পটল, মুখীকচু, লাউ, পেঁপে, শিম, করলা, কাকরুল, চিচিঙ্গা, মিষ্টি কুমড়া, গুড়া মসলা, কালিজিরা, হলুদেপরীক্ষাগারের অভাব, বিমানবন্দরে হিমাগারের পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকা, বিভিন্ন কৃষিপণ্যের কাক্সিক্ষত জাতের অভাব, ফাইটোস্যানিটারি সার্টিফিকেট প্রাপ্তি সহজীকরণ ইত্যাদি। গুণগত মানসম্পন্ন ও নিরাপদ সবজি ফল উৎপাদন, শ্যামপুরস্থ প্যাক হাউজের কার্যকর ব্যবহার, বিমানে কৃষিপণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে স্পেস বৃদ্ধি, কৃষিপণ্যর জন্য বিমান বন্দরে পৃথক গেট ও স্ক্যানার মেশিন স্থাপন করা, বিমানবন্দরে ইঅউঈ-এর ক্লোড বেটারেজের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ, বিমান ভাড়া যৌক্তিক পর্যায়ে আনা, কৃষিপণ্য পরিবহনের সুবিধা বৃদ্ধি, পণ্য রপ্তানির জন্য প্যাকেজিং এর মান বৃদ্ধি, আলুর উন্নত জাতের সরবরাহ বৃদ্ধি, বিদেশস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তা বৃদ্ধি, দেশে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন পরীক্ষাগার তৈরি ইত্যাদি বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি এদেশের কৃষিপণ্য রপ্তানীতে এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন করতে পারে।

লেখক- সহকারী অধ্যাপক,ফিশারিজ বিভাগ ও প্রভোস্ট (ভারপ্রাপ্ত),মির্জা আজম হল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়