নীলচাষিদের আর্তনাদের স্মৃতি চিহৃ ‘আমঝুপি নীলকুঠি’

“ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর সেনাপতি রবার্ট ক্লাইভের সঙ্গে মীরজাফর ও ষড়যন্ত্রীদের শেষ বৈঠক হয়েছে এবং তার ফলে শুধু নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিপর্যয় ঘটেনি বাঙালী হারিয়েছিলো তার স্বাধীনতা।’’

এই জনশ্রতি দিয়েই ঐতিহাসিক স্থাপনা আমঝুপির নীলকুঠির কালিমা লেপে ইতিহাস বিকৃতি করা হলো ১৯৭৯ সালের ২৬ মার্চ। তৎকালীন বৃহত্তর কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আব্দুল মান্নান ভূইয়াঁর একটি ফলক নীলকুঠিতে স্থাপন করার পর থেকে এই নীলকুঠিসহ পুরোগ্রামটিকে ষড়যন্ত্রীদের অংশি হিসেবে ইতিহাসের কালো অধ্যায় রচনা করা হলো। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ইতিহাস বিকৃতি করে একটি বই লিখে তাকে সহযোগীতা করছিলেন লেখক আবুল আহসান চৌধুরী।

বিভিন্ন লেখকের বই থেকে জানা গেছে, ১৮১৮ থেকে ১৮২০ খৃস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়কালে মেহেরপুরের আমঝুপি, ভাটপাড়া, কাথুলি, বামন্দীসহ বেশকিছু স্থানে নীলকুঠি স্থাপিত হয়।

ইতিহাস বলে, ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর সেনাপতি লর্ড ক্লাবের নেতৃত্বে নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হন এবং বাংলা তার স্বাধীনতা হারায়। পলাশীর যুদ্ধে কয়েকবছর পর লর্ড ক্লাইভ ইংল্যাণ্ডে ফিরে যান এবং ১৭৭৪ সালের ২২ নভেম্বর তিনি ইংল্যাণ্ডে আত্মহত্যা করেন।

কিন্তু বিকৃত ইতিহাসে জনশ্রুতির দোহায় দিয়ে বলা হয়েছে, পলাশীর যুদ্ধের আগে মাঝে মধ্যে লর্ড ক্লাইভ আমঝুপি নীলকুঠিতে আসতেন এবং এই নীলকুঠিতে মীরজাফরের সাথে ষড়যন্ত্রের বৈঠক করে নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে হারানোর নীল নকশা করেন। যে নীলকুঠি জন্ম হয় ১৮১৮ সালে অর্থাৎ পলাশী যুদ্ধের ৬১ বছর পর। সেই নীলকুঠিকে কিভাবে লর্ড ক্লাইভ-–মীরজাফরের ষড়যন্ত্রের নীলনকশার বৈঠকখানা বলা হয় ?

আমঝুপি নীলকুঠি

নীলকুঠির ভবনের উত্তর দিক

নীলকুঠি কেন স্থাপন করা হয়

১৭৬৫ খ্রিষ্টাব্দে এ বঙ্গে কোম্পানী আইন প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই সময় মেহেরপুরসহ সমগ্র নদীয়া ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর শাষনভুক্ত হয়। পরবর্তিতে ১৭৭৮ সালে ক্যারেল ব্লুম নামের এক ইংরেজ মেহেরপুর সহ বিভিন্ন স্থানে নীল চাষ শুরু করেন। ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী তাদের ব্যবসায়ীক প্রসারের কারণে উনিশ শতকের শুরুর দিকে আমঝুপি নীলকুঠিসহ বিভিন্ন স্থানে অবকাঠামো নির্মাণ করে। ইংরেজ কুঠিয়াল কেনি, সিম্পসেন, ফার্গুসেনের সতীর্থদের অত্যাচার আর শোষণের স্থান ছিলো এই নীলকুঠি।

নীলকরদের অত্যাচার আর নির্যাতনের সাক্ষী আমঝুপি নীলকুঠি। কর পরিশোধ না করতে পারলে নীলচাষিদের উপর চলতো নানা নির্যাতন, এমনকি হত্যা করে লাশ মূত্যুকুপে নিক্ষেপ করে উল্লাস করা হতো। নীলকুঠিতে এখনো সে সকল নির্যাতনের স্মৃতি চিহৃ আকাশে বাতাসে বয়ে বেড়ায়। শুনশান নিরবতায় প্রাকৃতিক নির্জনতার প্রতিটি পরতে রয়েছে সে নির্যাতনের ক্ষত চিহৃ।

জানা যায়, অত্যধিক লাভজনক হওয়ায় ১৭৯৬ সালে মেহেরপুর অঞ্চলে নীল চাষ শুরু হয়। এ সময় বিখ্যাত বর্গী দস্যু নেতা রঘুনাথ ঘোষালির সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে গোয়ালা চৌধুরী নিহত হলে মেহেরপুর অঞ্চলে রানী ভবানীর জমিদারীভুক্ত হয়। রানী ভবানী নিহত হলে কাসিম বাজার অঞ্চলটি ক্রয় করেন হরিনাথ কুমার নন্দী। পরে হাত বদল হয়ে গোটা অঞ্চলটি মথুরানাথ মুখার্জির জমিদারীভুক্ত হয়। এক সময় মথুরানাথ মুখার্জির সঙ্গে কুখ্যাত নীলকর জেমস হিলের বিবাদ বাধে। মথুরানাথ-এর ছেলে চন্দ্র মোহন বৃহৎ অঙ্কের টাকা নজরানা নিয়ে মেহেরপুরকে জেমস হিলের হাতে তুলে দেন। চন্দ্র মোহনের ছেলে মহেষ মুখার্জি জেমস হিলের মন্ত্রী নিযুক্ত হন। ইতিহাসে ইনিই নীলদর্পণ নাটকে গুপে দেওয়ান নামে পরিচিত।

নীল গাছ পচা পানি জ্বালিয়ে তৈরি করা হতো নীল রঙ। এক বিঘা জমিতে আড়াই থেকে তিন কেজি নীল উৎপন্ন হতো- যা উৎপাদন করতে ব্যয় হতো ১২-১৪ টাকা। অথচ চাষীরা পেতো মাত্র তিন-চার টাকা। চাষীদের দাদন দিয়ে নীল চাষে বাধ্য করা হতো যাতে তারা জমিতে নীল চাষ বাদি দিয়ে অন্য চাষ না করতে পারে। ফলে বলা হয়, নীল গাছ থেকে যে রঙ তৈরি করা হতো তা ছিল চাষীদের বুকের পুঞ্জ্ভিূত রক্ত। জমাটবাঁধা ক্ষোভে নীলচাষিরা আস্তে আস্তে আন্দোলন গড়ে তোলে। এক সময় দুর্বার আন্দোলনে নীলকররা আমঝুপি ছেড়ে পালিয়ে যায়।

আমঝুপি নীলকুঠি নীলকরদের শত অত্যাচারের একটি ঐতিহাসিক স্থান। নীলকুঠিয়াল মিকেনী, সিম্পসন, ফার্গুসেন, জেমস হিল এদের আনন্দের হোলি আর কৃষকদের নির্যাতিত হওয়ার কাহিনী আমঝুপি নীলকুঠির আকাশে-বাতাসে এখনো জড়িয়ে আছে।

আমঝুপি বাজার থেকে দক্ষিণ দিকে আধা কিলোমিটার পিচঢালা পথ যেতেই নীলকুঠির প্রধান ফটক দেখা যাবে। খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের উদ্যোগে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে ডিসি ইকোপার্ক নির্মাণের উদ্যোগে নেওয়া হয় ২০১৮ সালের দিকে। সে সময় এই ফটকটি নির্মাণ করা হয়। ইকোপার্কের জন্য নীলকুঠির স্থাপনাগুলো কিছু সংস্কার করা হয়। তবে পার্কটি শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। প্রধান ফটক পেরিয়ে সড়ক বরাবর সেই নীলকরদের শোষণের স্মৃতিচিহৃ নীলকুঠি ভবন। ভবনের আগে সড়কের দুই পাশে আম ও লিচুর বাগান। ভবনের উত্তর দিকে কাজলা নদী। কাজলা নদীর সাথে ব্রীজের মাধ্যমে ভবনের সংযোগ রয়েছে। নীল উৎপাদন করতে প্রচুর পানি লাগতো এবং যোগাযোগ সহজ করার জন্য নীলকুঠিগুলো ইংরেজরা বানিয়েছিলো নদীর পাড়ে। নীলকুঠিতে পৌছালেই এক প্রাকৃতিক নির্জনতা লক্ষ্য করা যায়। নীলকুঠির বিভিন্ন স্থানে ইংরেজদের সেই নীল গাছ চোখে পড়ে। সারি সারি নারিকেল গাছ চোখ জুড়াবে। ভবনের উত্তর-পূর্ব দিকে দুটি বড় আকারের কড়ুই গাছ পুরো নীলকুঠির সৌন্দর্য্যকে আকড়ে ধরে রয়েছে। আম, লিচুসহ বিভিন্ন গাছে পাখিদের আনাগোনা বেশ। একটু কান পাতলেই পাখিদের ডাক শোনা যায়। কখনো কখনো মনে হয় নিজর্নতায় নীলচাষীদের করুণ আর্তনাদও শোনা যাচ্ছে।

আমঝুপি নীলকুঠি

নীলকুঠি ভবন থেকে কাজলা নদীতে যাওয়ার ব্রীজ

নীলকুঠির মূল ভবনে যা আছে

আমঝুপি নীলকুঠির মূল ভবনটি আয়তাকার আকৃতির। নদীপথের যাত্রার সুবিাধায় ভননটি কাজলা নদী মুখ করে উত্তরমুখী করা হয়। তবে বর্তমানে দক্ষিনমুখী হয়ে প্রবেশ করতে হয়। ভবনটিকে দুদিক থেকেই সামনের দিকে মনে হয়। ৩৭ মিটার দৈঘ্য এবং ২২ মিটার প্রস্থের এ ভবনটিতে ছোটবড় ১৩টি কক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শয়ন কক্ষ, নাচঘর, স্নেকপ্রুফ কক্ষ, মৃত্যুকুপ। প্রচলিত আছে, ইংরেজদের মনোরঞ্জনের জন্য নতর্কীদের নাচতে হতো। কোন প্রজা খাজনা কিংবা নীলচাষে অনীহা প্রকাশ করলে তাকে হত্যা করে মূত্যুকুপে নিক্ষেপ করা হতো। স্নেকপ্রুফ কক্ষটি এত মসৃণ যে সাপ কিংবা পিপড়া চলতে পারবে না। নীলকুঠিতে আরো রয়েছে পুরাতন রেকর্ড রুম, কয়েদখানা, কাচারী ঘর, নায়েবদের আবাসন।

১৯৭৮ সালে ভবনটিকে নতুন করে ৮২ লাখ টাকা খরচ করে সংস্কার করা হয় এবং পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এলাকার উন্নয়নের নাম করে তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক আব্দুল মান্নান ভ’ইয়া ১৯৭৯ সালের ২৬ মার্চ ওই বিকৃত ইতিহাসের ফলক লাগিয়ে দেন ভবনটিতে। পরবর্তিতে ২০১৭ সালে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধিনে প্রথ্নতত্ত্ব অধিদপ্তর নীলকুঠি মূলভবন সহ ৩ একর ৬১ শতক জমি অধিগ্রহণ করে। ভবনটির ভিতরে নতুন করে কিছু সংস্কার করা হয় এবং একটি জাদুঘর করা হয়। তবে অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে বাকি ৬১ একর জমি। পরিচর্যার অভাবে বাগানের জৌলুস হারাচ্ছে।
ঐতিহাসিক এ নীলকুঠিতে প্রায় প্রতিদিন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা যান। বছরে প্রায় ২০ হাজার পর্যটক নীলকুঠি পরিদর্শন করেন। পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে নীলকুঠিকে প্রসারিত করতে হলে কিছু সুবিধা বাড়ানোর দাবী জানিয়েছেন তারা।

নীলকুঠি চত্বরে দীর্ঘদিন ধরে চায়ের টং দোকান দিয়ে ব্যবসা করছেন সামসুল হক মিলন। চা খেতে খেতে মিলনের সাথে কথা হয় নীলকুঠি সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে । মিলন বলেন, সপ্তাহে সাধারণত শুক্রবার ও শনিবার পর্যটক আসে। মহিলা পর্যটকদের জন্য অসুবিধা পড়তেই হয়। এখানে কোন টয়লেটের (ওয়াশরুম) ব্যবস্থা নেই। অনেকটা বাধ্য নীলকুঠির পাশের একটি বাড়িতে নিয়ে তাদের সে ব্যবস্থা করতে হয়। মিলন আরো বলেন, ২০১৮ সালে সরকারিভাবে একটি টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু পানির ব্যবস্থা না করতে পারায় সেটা নাকি উদ্বোধন করা গেল না।

মেহেরপুরের সাংস্কৃতিক কর্মী, সাংবাদিক, সাহিত্যিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী ও স্থানীয়রা বারবার আমঝুপি নীলকুঠির বিকৃতি ইতিহাসের ফলক মুছে সঠিক ইতিহাসে স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু আজও সে ফলক রয়ে গেছে।

আমঝুপি নীলকুঠি

নীলগাছ

কিভাবে যাবেন আমঝুপি নীলকুঠি

ঢাকাসহ দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে বাসযোগে মেহেরপুর জেলা শহওে আসতে হবে। জেলা শহর থেকে ৭ কিলোমিটার পূর্বে আমঝুপি নীলকুঠির অবস্থান। জেলা শহর থেকে রিক্সা বা ইজিবাইকে করে খুব সহজেই যেতে পারবেন নীলকুঠিতে। সপ্তাহে প্রতি রবিবার পূর্নদিবস এবং সোমবার দুপুর ২টা পর্যন্ত বন্ধ থাকে নীলকুঠির মূলভবন। অন্যান্য দিন সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ১০ টাকা প্রবেশ ফি দিয়ে ঘুরে দেখতে পারবেন ঐতিহাসিক নীলকুঠি ভবনটি।




প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে মেহেরপুরে শেষ হয়েছে দুর্গাপূজা

ঢাকের বাদ্য আর আবীর খেলার মধ্য দিয়ে মেহেরপুরে বিসর্জন হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। মহালয়ার মধ্য দিয়ে মণ্ডপে মণ্ডপে এই পূজার উৎসব শুরু হয়েছিল।

মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) সকালে বিজয়ী দশমীতে বিহিত পূজা ও দর্পণ বিসর্জনে সমাপ্তি হলো দুর্গাপূজার। বিকেল থেকে শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জন। প্রতিমা বিসর্জনকে কেন্দ্র করে যেন কোনো বিশৃঙ্খলা বা দুর্ঘটনা না ঘটে, সে জন্য যথাযথ ব্যবস্থা ছিলো মেহেরপুর জেলা প্রশাসন ও পুলিশ।

তবে প্রতিমা বিসর্জন কালে ভৈরব নদে কচুরিপানা নিয়ে সনাতন ধর্মাবলীদের মধ্যে কিছুটা চাপা অসন্তোষ লক্ষ্য করা যায়।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মেহেরপুর শহরের শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির, নায়েববাড়ি মন্দির, হরিসভা মন্দির,বকুলতলা পূজা মন্দির, হরিজন বালক পূজা মন্দির, সদর উপজেলার গোভীপুর বায়পাড়া দূর্গা মন্ডপ, গোভীপুর দাসপাড়া দূর্গা পূজা,বামনপাড়া সর্বজনীন কালী মন্দির, পিরোজপুর দূর্গা মন্দির, পিরোজপুর কালীমাতা দাসপাড়া মন্দির,মুজিবনগর উপজেলার মহাজনপুর সার্বজনীন দূর্গা মন্দির, বাবুপুর সার্বজনীন দূর্গা মন্দির, কোমরপুর সার্বজনীন দূর্গা মন্দির, মোনাখালী পূজা মন্ডপ, রতনপুর দাসপাড়া পূজা মন্ডপ, বল্লভপুর পূজা মন্ডপ, এবং দারিয়াপুর পূজা মন্ডপ মেহেরপুর ভৈরব নদে বিসর্জন দেয়া হয়। এছাড়াও গাংনীতে কাজলা নদে বিভিন্ন মন্ডলের প্রতিমা বিসর্জন করা হয়।

উল্লেখ্য এই বছর মেহেরপুর জেলায় মোট ৪৩ টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে মেহেরপুর সদর উপজেলায় ১৪ টি, গাংনীতপ ২২ টি এবং মুজিবনগর উপজেলায় ৭ টি মণ্ডপ ছিল। কোনরকম বিশৃঙ্খলা ছাড়াই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দুর্গাপূজার সম্পন্ন হওয়ায় মেহেরপুর জেলা পূজা উদযাপন কমিটির পক্ষ থেকে জেলা বাসি ও জেলা প্রশাসন সহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি কত জ্ঞাপন করেছে।




এখন আনন্দে লেখাপড়া শুরু হচ্ছে শিশুদের

শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ শিশুর মৌলিক অধিকার । এটা শিশুর সুপ্ত প্রতিভা বিকাশ করে। এজন্য শিক্ষাকে জাতির মেরুদণ্ড বলা হয়। আর প্রাথমিক শিক্ষা হচ্ছে তার ভিত্তি। কাজেই সব শিশুর শিক্ষা গ্রহণের অধিকার রয়েছে। বৃটিশ আমল থেকে পাকিস্তান আমল পর্যন্ত এদেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা খুবই অবহেলিত ছিল। ১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিসংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা লাভের পর বঙ্গবন্ধুর সরকার শত প্রতিকুলতা সত্ত্বেও প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করে ৩৬,১৬৫টি প্রথমিক বিদ্যালয়কে ১,৫৬,৭২৪ জনবলসহ জাতীয়করন করেন। শিক্ষার ইতিহাসে এ ছিল এক যুগান্তকারী ঘটনা। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা ছাড়া একটি দেশের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন।

শিক্ষার সার্বিক মানোন্নয়ন এবং যুগোপযোগী কৌশল ও পরিকল্পনা গ্রহণ করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু বিখ্যাত বিজ্ঞানী ড. কুদরাত-এ-খুদার নেতৃত্বে ১৯৭২ সালের ২৬ জুলাই শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। শুধু তাই নয়, সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানের ১৭ নম্বর অনুচ্ছেদে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর সরকারের পর তাঁরই যোগ্য উত্তরসুরী শেখ হাসিনার সরকার ২০১৩ সালে ২৬,০০০ বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে জনবলসহ একযোগে জাতীয়করণ করেন।

প্রাথমিক শিক্ষার মধ্যমেই আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সূচনা। মৌলিক পাঠদানও শুরু হয় প্রাথমিক থেকে। যে কারনে প্রতিটি শিশুর বিদ্যালয়ে উপস্থিতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য প্রাথমিক শিক্ষায় সকল শিশুর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা ও শিক্ষায় সকল শিশুর শতভাগ উপস্থিতি এবং ঝরে পড়ার হার হ্রাস করার জন্য ১৯৯০ সালে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা আইন পাশ করা হয়। অন্যদিকে ২০১০ সালে শিক্ষাক্ষেত্রে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে “শিক্ষাকে দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রধান হাতিয়ার” বিবেচনায় বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের নিয়ে প্রথম একটি পরিপূর্ণ শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয় ।

শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এর সুপারিশ অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তোলার জন্য পাঠ্যবইয়ে আনা হয়েছে নানা পরিবর্তন। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরকে বিদ্যালয়ে ধরে রাখা এবং যুগোপযোগী পাঠদান কার্যকর করার লক্ষ্যে বিদ্যালয়গুলোতে আইসিটি উপকরণ বিতরণ, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের প্রচলন, শিক্ষকদের আইসিটির উপর প্রশিক্ষণ, বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণসহ নানাবিধ প্রচেষ্টা গ্রহণ করায় শিক্ষার গুণগত মান যেমন বেড়েছে তেমনি শিক্ষার্থীর উপস্থিতিও বেড়েছে।

এতোসব উদ্যগের ফলে বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশু ভর্তির শতকরা হার ৯৭.৫৬ যদিও তা ২০০৫ সালে ছিল ৮৭.২০ শতাংশ। অন্যদিকে ইউনিসেফের ২০০৪ সালের হিসাবে বাংলাদেশে স্বাক্ষরতার হার ছিল প্রায় ৪০.৫ শতাংশ। এর মধ্যে পুরুষদের স্বাক্ষরতার হার ৫০ শতাংশ এবং নারীদের মধ্যে ৩১ শতাংশ। ২০২২ সালের হিসাব মতে দেশে বর্তমানে স্বাক্ষরতার হার ৭৪.৬৬ শতাংশ এর মধ্যে পুরুষের স্বাক্ষরতার হার ৭৬.৫৬ শতাংশ এবং নারীদের স্বাক্ষরতার হার ৭২.৮২ শতাংশ। ২০০৪ সালের তুলনায় স্বাক্ষরতার হার বেড়েছে প্রায় ৩৪ ভাগ। বিশেষ করে নারীদের স্বাক্ষরতার হার বৃদ্ধি এক উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ইংগিত বহন করে।

শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করা এবং ঝরে পড়ার হার রোধ করতে বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে রঙিন বই তুলে দেওয়া, উপবৃত্তি কার্যক্রম, স্টুডেন্ট কাউন্সিল গঠন প্রভৃতির উপর জোর দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ ও খেলাধুলার প্রতি আগ্রহী করে তোলার পাশাপাশি বিদ্যালয়ে তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি চালুকরণ, আকর্ষণীয় শিক্ষা উপকরণ, বিনোদনের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা, লেখাপড়ার মাঝে খেলা ও ছবি আঁকার বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত করে পাঠদান করানো শিক্ষার্থীদের পাঠে অংশগ্রহণ যেমন বেড়েছে তেমনি ঝরে পড়ার হারও কমেছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে স্থানীয় জনসমাজের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করার ফলে বিদ্যালয়ে শতভাগ শিক্ষার্থী ভর্তি করানো ও তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে। ব্যানবেইস এর তথ্যমতে ২০০৫ সালে যেখানে শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ঝরে পড়ার হার ছিল ৪৭.২% সেখানে ২০২২ সালে ১৩.৯৫% নেমে এসেছে।

ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের পুনরায় বিদ্যালয়মুখী করার জন্য সরকারের একটি অন্যতম উদ্যোগ ছিল রিচিং আউট অব স্কুল চিল্ড্রেন (রস্ক) নামক একটি প্রকল্প যা ‘আনন্দ স্কুল’ নামে পরিচিত। এ বিদ্যালয়ের মাধ্যমে শিশুরা ২য় বারের মতো প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করা সুযোগ পায়। প্রথমে যদিও এ বিদ্যালয়গুলোর যাত্রা শুরু হয় গ্রামে তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতার কারণে এসডিজির মূল স্লোগান খবধাব হড় ড়হব ইবযরহফ সামনে রেখে আনন্দ স্কুল সম্প্রসারিত হয় শহরের বস্তি এলাকায়। ফলে বস্তির সুবিধা বঞ্চিত শিশুরাও প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে। শুধু তাই নয় প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের বিদ্যালয়ে অবস্থান নিশ্চিত করতে অ্যাসিস্টিভ ডিভাইস বিতরণসহ সুবিধা বঞ্চিত গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট আইন ২০১২ প্রণয়ন করা হয়।

করোনা পরিস্থিতিতে নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত থেকে হতদরিদ্রের কাতারে দাঁড়ানো পরিবারের শিক্ষার্থীদের খাতা-কলমসহ সব ধরনের শিক্ষা উপকরণ বিনামূল্যে সরবরাহ এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে উপবৃত্তির টাকা যথাসময়ে পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি স্কুল ক্যাচমেন্ট এলাকা ভিত্তিক জরিপের মাধ্যমে প্রতিটি শিশুর ভর্তি নিশ্চিত করা, নিয়মিত মা সমাবেশ, উঠান বৈঠক ইত্যাদি কারনে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকার্যক্রমে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং ঝরে পড়ার হার কমেছে। ঝরে পড় রোধে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘মিড ডে মিল’ প্রকল্প দারুন ভূমিকা রেখেছে। শিক্ষার্থীদের পুষ্টি নিরাপত্তায় সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের মতো বেসরকারি সংস্থা যা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।

লেখক- চেয়ারম্যান, শিক্ষাবিভাগ ও ডিন, শিক্ষা বিজ্ঞান অনুষদ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) শিক্ষক সমিতি ২০২৩।




দামুড়হুদায় ডিবি পুলিশের অভিযানে কেরুর ট্রাকে বাংলামদ সহ আটক ৩

দামুড়হুদা দর্শনা মহা সড়কের মাঝামাঝি স্হান থেকে জেলা ডিবি পুলিশের অভিযানে বাংলাদেশ কেরু এন্ড কোম্পানীর ট্রাকে বাংলামদ ও চালক সহ ৩ জনকে আটক করেছে জেলা ডিবি পুলিশ। আজ মঙ্গলবার দুপুরে আসামীদের কে জেল হাজতে প্রেরন করা হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা ডিবি পুলিশের ওসি ফেরদৌস ওয়াহিদ জানায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর ছিল যে কেরুর ওয়্যার হাউজ শান্তাহার থেকে চুরি করে ট্রাকে মদের একটি বড় চালান আসছে।সে খবর পাওয়ার পর দামুড়হুদা ফিলিং স্টেশন ও ফায়ার সার্ভিসের মাঝামাঝি স্হানে ডিবি পুলিশের একটি টহলদল এম্বুস করে।রাত নয়টার দিকে গাড়িটি পুলিশ বেরিকেট পার হওয়ার চেস্টা করলে গাড়িটি আটক করা হয়।

যে ট্রাকে কেরুর শানতাহার পন্যাগার থেকে কেরুর ট্রাকে চুরি করা মদ নিয়ে দর্শনায় ফিরে আসা হচ্ছে, যা পুজার বাজারে দর্শনা এলাকায় অনেক টাকায় বিক্রি করা হবে। রাতেই ট্রাকটি তল্লাশী করে ১০ লিটার মদ সহ চালক মনিরুল ইসলাম,হেলফার সানোয়ার হোসেন ও বাপ্পারাজকে আটক করা হয়।পরে কেরুর নিজস্ব ট্রাক (নম্বর চুয়াডাঙ্গা-হ ১১০০০৯) ডিবি হেফাজতে রেখে বাংলামদ সহ গতকাল মঙ্গলবার আসামীদেরকে চুয়াডাঙ্গা কোটে চালান করা হয়েছে।

চিনিকলের পরিবহন বিভাগের অফিস জানান গত ২২ অক্টোবর কেরুর ডিস্টিলারির উৎপাদিত পন্য নিয়ে ট্রাকটি কেরুর শানতাহার ওয়্যার হাউজে যায় এবং মালামাল রেখে গতকাল ২৩ অক্টোবর রাতে ট্রাকটি ফিরে আসার সময় পুলিশের কাছে আটক হয়। কেরু চিনিকলের জি এম (প্রশাসন) মোঃ ইউসুপ আলি জানান ঘটনাটি শুনেছি আজ মঙ্গলবার সরকারি ছুটি বুধবার অফিস যথারিতি চলবে, অভিযুক্তদের বিষয়ে খোজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।




মোড়লের ক্ষমতা আর নেই, বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

ইতিহাস বলছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বিস্তারের স্বভাব বেশ পুরনো। বিভিন্ন দেশে জাতি গঠনের নামে যুক্তরাষ্ট্র স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নিজের কাঁধে দায়িত্ব নিতো। ২০০১ সালে সন্ত্রাসী হামলার পর এই মোড়লের হাতে নতুন হাতিয়ার তুলে দেওয়া হয়। আর তাতে আফগানিস্তান মিশনের নামে বিভিন্ন দেশে সামরিক অভিযান চালায় যুক্তরাষ্ট্র। অবশ্য সেখানে টানা ২০ বছর লিপ্ত থেকে বিফল হওয়ার পর তার আর জাতিগঠনে দায়িত্ব পালন করে না। তবে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নামে বিভিন্ন দেশে আগ্রাসনে সহায়তা দেয়। তবে তাতেও এখন পর্যন্ত সফলতার মুখ দেখেনি যুক্তরাষ্ট্র। তার অন্যতম উদাহরন ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ।

১৯৯১ সালে স্নায়ু যুদ্ধের পর একক পরাশক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে এই সময়ের মধ্যে বড় কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়নি। বরং এ সময়ে দেশটি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশের দাবিকৃত ‘নতুন বিশ্বব্যবস্থা’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দেশে দেশে ক্ষমতার পরিবর্তনে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের এমন উদ্যোগের বলি হয়েছে ইরাক, সাবেক যুগোস্লাভিয়া, লিবিয়া, আফগানিস্তান এবং সিরিয়া। এর বাইরে এমনও অনেক দেশ রয়েছে যেখানে যুক্তরাষ্ট্র পরোক্ষভাবে সরকার, শাসনক্ষমতা বদলে দিয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন বৈশ্বিক সংগঠনের ওপর প্রভাব বিস্তার করে ওয়াশিংটনের ইচ্ছার বাইরে কাজ করা বিভিন্ন দেশকে শায়েস্তা করতে চেয়েছে এবং করেছে। যেমন জাতিসংঘকে ব্যবহার করে ইরান এবং উত্তর কোরিয়ার ওপর অবরোধ আরোপ করেছে।

ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধের সরাসরি ব্যয় প্রায় দুই ট্রিলিয়ন ডলার বলে অনুমান করা হয়। এর বাইরে যুদ্ধ দুটিতে অংশ নেয়া সেনাদের চিকিৎসাসেবা ও বিকলাঙ্গ ভাতা পরিশোধ করার জন্য আরও কয়েক ট্রিলিয়ন যোগ হয়েছে। ফল হিসেবে অবিজয়যোগ্য দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ দুটি মার্কিন সামরিক বাহিনীকে মাটিতে নামিয়ে এনেছে এবং ক্লান্ত করে দিয়েছে। পরিপূর্ণভাবে বিদ্রোহীদের পরাজিত করা এবং বিচ্ছিন্নতাবাদ দমনে তাদের অক্ষমতার প্রমাণও দিয়েছে ইরাক ও আফগান যুদ্ধ। এমনকি বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ও ব্যয়বহুল সামরিক বাহিনীর সীমাবদ্ধতা এবং মার্কিন বাহিনীর অনৈতিকতার প্রমাণও হয়ে পড়েছে এ দুটি যুদ্ধ।

একই সঙ্গে বুশ প্রশাসনের বেপরোয়া ও উদ্ধত একতরফা (তুমি হয় আমাদের সঙ্গে, না হয় বিপক্ষে) মিত্রদের মাঝে বিরোধ তৈরি করেছে এবং বিশ্বব্যাপী জনমতকে অবজ্ঞা করেছে। বুশ প্রশাসনের বিদায়ের পর পছন্দের রেটিংয়ে বিশ্বজুড়ে দেশটির অবস্থান ছিল একেবারে তলানিতে। যুদ্ধের সময় প্রকাশিত হয়ে পড়া যুক্তরাষ্ট্রের ঘৃণ্য আচরণ (আবু গারিব কারাগার, নির্যাতন, গুয়ান্তানামো বে কারাগার ইত্যাদি) আল-কায়দাকে চরমপন্থায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার রসদ সরবরাহ করেছে। এর জন্য আফগানিস্তানে হলেও আমেরিকাবিদ্বেষী ঘৃণা অনেক দেশে স্থানান্তরিত হয়েছে এবং ছড়িয়ে পড়েছে। এ ছাড়া আমেরিকার সামরিক বাহিনীর দুর্বল ও ক্ষয়িষ্ণু হয়ে পড়াটা একসময় নিজেদের প্রভাব বিস্তারের জন্য সাহসী থাকা দেশটির আঞ্চলিক শক্তিগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত ও বহুমুখী উত্থানের অক্ষমতার অভূতপূর্ব পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

দীর্ঘদিন ধরে চলমান ইসরাইল-ফিলিস্তিনের সংকট নিরসনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত ছিল দুই পক্ষের জন্য আলাদা দুটি রাষ্ট্র। আর এই দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের তত্ত্বটি এসেছিলো ১৯৯৩ সালে অসলো শান্তি আলোচনার মাধ্যমে এবং দু’পক্ষই তাতে সম্মত হয়েছিল। ১৯৯৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর হোয়াইট হাউসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের মধ্যস্থতায় ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাত ও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী আইজাক রবিনের মধ্যে অসলো চুক্তি সই হয়। এই চুক্তি স্বাধীন ফিলিস্তিনের স্বপ্ন দেখালেও চুক্তির ৩০ বছর ঘিরে ইজরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ হয়নি বরং আরও বেড়েছে।

অসলো চুক্তি অনুযায়ী, ফিলিস্তিনি মুক্তি সংস্থা (পিএলও) ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয় এবং পক্ষান্তরে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ অবিভক্ত ফিলিস্তিনের ৭৮ শতাংশ ভূমির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। বাকি থাকা ২২ শতাংশ ভূমি নিয়ে সম্ভাব্য স্বাধীন ফিলিস্তিনকেও স্বীকৃতি দেয়নি তেল আবিব। যুক্তরাষ্ট্রের ফর্মুলা অনুযায়ী ‘দুই রাষ্ট্র’ সমাধানের বিষয়ও সামনে এগিয়ে যায়নি। ইসরায়েলও এটি নিয়ে এখন কোনো কথা বলছে না। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্ততায়ও ভেস্তে গেছে সেই চুক্তি।

অসলো চুক্তি সইয়ের পর ইসরায়েলি প্রশাসন তাদের ভূমি দখল অব্যাহত রেখেছে। আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষের সমালোচনা উপেক্ষা করে এখন পর্যন্ত তারা এটি জারি রেখেছে। ২০০৩ সালে পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি আগের তুলনায় দ্বিগুণ হয়। ২০২৩ সালে এসে সেই হার চার গুণেরও বেশি হয়েছে। বর্তমানে পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ২৭৯টি অবৈধ বসতিতে সাত লাখ ইহুদির আবাস গড়ে তুলেছে ইজরায়েলি প্রশাসন। এ ছাড়া ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি ক্রমেই জোরালো হয়েছে।

গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজার চারপাশের বাধা বেড়া ভেঙে ইসরায়েলি শহর ও কিববুৎজে তাণ্ডব চালিয়ে হাজার হাজার মানুষ নিহত হওয়ার পর গাজা শাসনকারী হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার অঙ্গীকার করেছে ইসরায়েল। এরপর থেকে ইসরাইল আকাশ থেকে গাজায় হামলা চালায় এবং ছিটমহলটি পুরোপুরি অবরোধ করে রাখে।

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, চার হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। জাতিসংঘ বলছে, ১০ লাখেরও বেশি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে।

অন্যদিকে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে টেকসই এবং দৃঢ় প্রতিক্রিয়ার জন্য ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রচুর প্রশংসা করা হয়েছে, বেশিরভাগ অভিনন্দন আলোচনা রাশিয়ার ক্ষতিকে কেন্দ্র করে। কিয়েভের পশ্চিমা মিত্ররা ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীকে জ্যাভলিন এবং স্টিংগার ক্ষেপণাস্ত্র, রকেট আর্টিলারি এবং সম্প্রতি আধুনিক ট্যাঙ্ক সরবরাহ করেছে। তবুও, ২০২২ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়াকে প্রতিহত করার জন্য খুব কম প্রচেষ্টা করেছিল, যদিও যথেষ্ট প্রমাণ ছিল যে তারা আক্রমণ করতে চেয়েছিল।

অ্যাডলফ হিটলারের ইচ্ছাশক্তি, বিশাল সামরিক শক্তি দ্বারা সমর্থিত, ব্রিটেনের নেভিল চেম্বারলাইন এবং অন্যান্য ইউরোপীয় নেতাদের তার প্রাথমিক দাবির কাছে মাথা নত করতে বাধ্য করেছিল এই আশায় যে, এটি তার বৃহত্তর উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণ করবে। ২০০০ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে চার জন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি অদ্ভুত ভয় ও আকর্ষণ প্রকাশ করেছেন। পুতিনের আগ্রাসী উদ্যোগের প্রতি পশ্চিমা নীতির প্রতিক্রিয়ার কার্যকারিতা এই স্থিরকরণ গুরুতরভাবে হ্রাস করেছে।

নেটিজেনরা মনে করেন, পরিস্থিতি এখন অনেকটাই বদলে গেছে এবং এক সময়ে ইসরায়েলের সাথে বৈরি সম্পর্ক ছিলো এমন কয়েকটি মুসলিম দেশ এখন ইসরায়েলের সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক তৈরি করেছে। আবার অসলো শান্তি আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী আমেরিকা সবসময় দ্বি-রাষ্ট্র তত্ত্বের কথা বললেও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুসালেমে সরিয়ে আনার পর ওই তত্ত্বের অপমৃত্যুই হয়েছে বলে মনে করেন অনেকে। যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত ফিলিস্তিনিদের মারাত্মকভাবে ক্ষুব্ধ করেছিলো। যুক্তরাষ্ট্র সেদিন জেরুসালেমে তাদের দূতাবাস উদ্বোধন করছিল সেদিন গাজা পরিণত হয়েছিল এক রক্তাক্ত প্রান্তরে। সেদিন গাজায় নিহত হয় ৫৮ জন, আর আহত হয় আরও প্রায় তিন হাজার।
তিনদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইজারায়েল আর ইউক্রেন নিয়ে মার্কিন নাগরিকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছে। তার আগে তিনি ইজরায়েল সফর করে এসেছেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, হামাস এবং পুতিন মার্কিনীদের জন্য হুমকি। তারা উভয়েই প্রতিবেশী গণতন্ত্রকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করতে চায়। হামাসের বিদ্যমান উদ্দেশ্য হচ্ছে ইজরাইল রাষ্ট্রের ধ্বংস এবং ইহুদিদের হত্যা করা। হামাস ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না। হামাস ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের মানব ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে এবং নিরীহ ফিলিস্তিনি পরিবারগুলি তাদের কারণে ব্যাপকভাবে ভুগছে।

বাইডেন গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার বৃহত্তর সংগ্রামের অংশ হিসেবে ইসরায়েল ও ইউক্রেনের সংঘাতকে এক করে দেখছেন।
বাইডেন বলেন, এই বৈশ্বিক সংকটে মার্কিন নেতৃত্ব যুক্তরাষ্ট্রকে নিরাপদ করে তুলবে। ইউক্রেন ও ইসরায়েলের জন্য ‘নজিরবিহীন’ সহায়তা প্যাকেজ পাস করার জন্য কংগ্রেসের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি আমেরিকানদের বলেন, এই নিরাপত্তার মূল্য দিতে হবে। তবে তিনি আমেরিকানদের আরও বলেছিলেন যে, এই যুদ্ধগুলো থেকে দূরে সরে যাওয়ার ব্যয় অনেক বেশি হবে।

তিনদিন আগে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো রাশিয়া, চীন এবং কিছু উন্নয়নশীল দেশ কর্তৃক পশ্চিমাদের দীর্ঘদিনের সমালোচনাকে শক্তিশালী করেছে এবং মানবাধিকার ও মানবিক আইনের সাথে সম্পর্কিত ইস্যুগুলোর জন্য ওয়াশিংটনের তাৎক্ষণিক সমর্থন অর্জনের ক্ষমতাকে আবারও বাধাগ্রস্ত করতে পারে বলে মনে করেন অনেকেই। ২০১৭ ও ২০১৮ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্র ইজরাইলকে রক্ষার জন্য দুটি ভেটো দিয়েছিল, যা জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের সংস্কারের মার্কিন অভিযানকে জটিল করে তুলেছিল। সমর্থনের অভাবে ওয়াশিংটন শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়ে দেয়।
কিন্তু ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন আক্রমণের কারণে জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্যের সাধারণ পরিষদে সফলভাবে এবং বারবার রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করার পরে, ওয়াশিংটনকে ভবিষ্যতে কোনও পদক্ষেপের জন্য সমর্থন তৈরির জন্য তদবির করতে আরও কঠোর পরিশ্রম করতে হতে পারে।

জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস ওয়াচের পরিচালক লুই চারবোনেউ বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা সরকার যদি বাকি বিশ্বকে বোঝাতে চায় যে তারা মানবাধিকার ও যুদ্ধআইন, ইউক্রেনে রুশ নৃশংসতা এবং ইসরায়েলে হামাসের নৃশংসতার ক্ষেত্রে যথাযথভাবে প্রযোজ্য নীতিগুলো নিয়ে সিরিয়াস, তাহলে গাজায় বেসামরিক জীবনের প্রতি ইসরায়েলের নৃশংস অবহেলার ক্ষেত্রেও তাদের প্রয়োগ করতে হবে।

অন্যদিকে আফ্রিকা, এশিয়া, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের জ্যেষ্ঠ কূটনীতিকরা যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো দেয়ার পর রয়টার্সের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তারা সবাই কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষার জন্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

ভেটো দিয়ে তারা বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। ইউক্রেনের জন্য যা যথেষ্ট তা ফিলিস্তিনের জন্য যথেষ্ট নয়। এক আফ্রিকান কূটনীতিক বলেন, “ভেটো আমাদের বলেছে যে ফিলিস্তিনিদের চেয়ে ইউক্রেনের জীবন বেশি মূল্যবান।

একজন জ্যেষ্ঠ আরব কূটনীতিক বলেছেন, বৈশ্বিক পরাশক্তিগুলো আন্তর্জাতিক আইনকে ‘বেছে বেছে প্রয়োগ’ করছে বলে মনে হচ্ছে।

কূটনীতিকরা বলেন, আমরা ইউক্রেনকে রক্ষা করার জন্য জাতিসংঘ সনদের নীতিগুলি আহ্বান করতে এবং ফিলিস্তিনের জন্য এটি উপেক্ষা করতে পারি না। এই দ্বৈত মানদণ্ড কেবল অন্যায়ই নয়, বিশ্বকে আরও বিপজ্জনক জায়গায় পরিণত করেছে।

লেখক-সাংবাদিক




ব্রাসেলস সম্মেলন: টেকসই উন্নয়নের পথে বাংলাদেশ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫ তারিখ থেকে শুরু হতে যাওয়া গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামের প্রথম বৈঠকে অংশ নিতে বেলজিয়াম রওনা হয়েছেন। এরইমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) একটি কৌশলগত ও রাজনৈতিক অংশীদারিত্বের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামের প্রথম বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগদান সেই লক্ষ্যে একটি সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ। এবারই এই ফোরাম প্রথমবারের মতো গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা করতে বসছে। ফোরামের প্রথম বৈঠকের প্রতিপাদ্য উল্লেখ করা হয়েছে ‘টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে একসঙ্গে শক্তিশালী হওয়া’।

উল্লেখ্য, চীনের ‘রোড এন্ড বেল্ট ইনিশিয়েটিভ’ এর প্রতিক্রিয়া হিসাবে ২০২১ সালে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন গ্লোবাল গেটওয়ে চালু করে। এর লক্ষ্য ল্যাটিন আমেরিকা, আফ্রিকা এবং এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অবকাঠামো নির্মাণের জন্য তহবিল সংগ্রহ করা।

দুইদিনের এই অনুষ্ঠানে সেনেগাল, নামিবিয়া ও মলদোভাসহ মোট বিশটি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানগণ আমন্ত্রিত হয়েছেন। শেখ হাসিনা তাঁদের মধ্যে একজন। বৈঠকে ইইউ এবং জোটের অংশীদার আমন্ত্রিত কয়েকটি দেশের সরকার প্রতিনিধিদের সাথে ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংক (ইআইবি), সংস্কার এবং উন্নয়নবিষয়ক ইউরোপীয় ব্যাংক (ইবিআরডি), বেসরকারি খাত, নাগরিক সমাজ, নেতৃস্থানীয় চিন্তাবিদ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদেরকে একত্রিত করবে।

গ্লোবাল গেটওয়ের অধীনে অবকাঠামো এবং সংযোগ, অভিবাসন, সবুজ জ্বালানি, জলবায়ু পরিবর্তন, সুনীল অর্থনীতি (ব্লু ইকোনমি), সমুদ্র সম্পর্কিত সহযোগিতা, নিরাপত্তা, পারস্পরিক স্বার্থের আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক কৌশলগত বিষয় নিয়ে অংশীদারেরা কাজ করবে। ইতিপূর্বে বড় বড় বৈশ্বিক দাতা সংস্থা বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণে অর্থ দিয়েছে, কিন্তু সেগুলো সবসময় টেকসই বা ফলপ্রসূ হয়ে উঠতে পারেনি।

বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কোনদিকগুলো বলতে গিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় সূত্র বলছে, বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি উৎপাদনে সহযোগিতায় জোর দিচ্ছে ইইউ। এরই অংশ হিসেবে ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংক থেকে সৌরবিদ্যুৎ এবং বায়ুবিদ্যুতে বাংলাদেশকে ৩৫ কোটি ইউরো ঋণ এবং সাড়ে ৪ কোটি ইউরো মঞ্জুরি হিসেবে দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামে এ বিষয়ে চুক্তি সই হবে। ব্রাসেলসে বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশকে দেয়া ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের এটিই প্রথম ঋণ। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এখন বাংলাদেশে আসতে আগ্রহী, একইভাবে আমরাও আগ্রহী। ভালো প্রকল্পের নকশা করতে পারলে আমরা অনেক তহবিল পাবো।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফোরামের উদ্বোধনী অধিবেশন বক্তৃতা করতে পারেন। কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, দুই দিনের এ আলোচনায় গ্লোবাল গেটওয়ের আওতায় ৮৯ প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে ঘোষণা দেওয়া হবে। এই সফরকালে ৩ বিষয়ের উপর অগ্রাধিকার দিবে বাংলাদেশ- ৩৫ কোটি ইউরো ঋণ ও সাড়ে ৪ কোটি মঞ্জুরি পাওয়ার চুক্তি সই; ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে সম্পর্কের ভবিষ্যৎ রূপরেখা নিয়ে আলোচনা। সম্পর্কের পরের ধাপে পারস্পরিক অংশীদারত্বকে উন্নয়ন সহযোগিতা থেকে কৌশলগত সহযোগিতায় উত্তরণ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকেদের মতে, গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামের ফাঁকে বাংলাদেশের নির্বাচনসহ সুশাসন ও মানবাধিকারের বিষয়ে সরকারের অবস্থান ইউরোপীয় নেতাদের কাছে তুলে ধরার জন্য প্রধানমন্ত্রীর ব্রাসেলস সফর তাৎপর্যপূর্ণ। এ ছাড়া ইউরোপের বাজারে অগ্রাধিকার বাজারসুবিধা (জিএসপি) ২০২৬ সাল পর্যন্ত পাবে বাংলাদেশের পণ্য।




জীবননগরে একসাথে চার নবজাতকের জন্ম; খাদ্য ও শুভেচ্ছা সামগ্রী দিলেন পুলিশ সুপার

জীবননগরে একসাথে জন্ম নেয়া ৪ নবজাতক শিশু ও তার বাবা-মাকে পুলিশ সুপার মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা, খাদ্য ও শুভেচ্ছা সামগ্রী প্রদান করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার তাদের নিজ বাড়ি জীবননগর উপজেলার বাকা ইউনিয়নের সুটিয়া গ্রামে উপস্থিত হয়ে নবজাতক ৪শিশুর পরিবারের হাতে আর্থিক সহায়তা, বাচ্ছাদের খাদ্য ও শুভেচ্ছা সামগ্রী পৌঁছে দেন পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুনের পক্ষে সহকারী পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা –জীবননগর সার্কেল) জাকিয়া সুলতানা।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন  জীবননগর থানার অফিসার ইনচাজ (ওসি) এসএম জাবীদ হাসান।

উল্লেখ্য গত (৪ অক্টোবর) চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার বাকা ইউনিয়নের সুটিয়া গ্রামের জিয়াউর রহমানের স্ত্রী মোছা: তহমিনা খাতুন(২৪)-এর সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে যশোর আদ্বদীন হাসপাতালে একই সাথে ০২(দুই) পুত্র ও ০২(দুই) কন্যা সন্তানসহ মোট ০৪ (চার) জন সন্তান জন্মগ্রহণ করে এবং শিশুদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিশ্চিত করতে গতকাল পর্যন্ত যশোরে হাসপাতালেই অবস্থান করেন। নবজাতকদের চার ভাইবোনের নাম রাখা হয় যথাক্রমে জুমান, জুবায়ের, জুনিয়া ও জিনিয়া।

এর মধ্যে গত (২২ শে অক্টোবর) জিনিয়া অসুস্থতাজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন। বতমানে জীবিত তিন শিশু সুস্থ আছে। এদিকে নবজাতক তিন শিশুকে দেখতে এলাকার সাধারন মানুষ জিয়াউর রহমানের বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছে।




পশ্চিমা গণমাধ্যম বাকস্বাধীনতার নামে ইসরায়েলের পক্ষপাত করছে

বিস্মিত হতে হয় পশ্চিমা গণমাধ্যমে ইসরাইলের পক্ষে প্রচারণা দেখে। চলমান ফিলিস্তিন–ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে পশ্চিমা গণমাধ্যমের একতরফা প্রতিবেদনে হতবাক ও ক্ষুব্ধ যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাবিদেরাও। তাদের ক্ষোভের কারণ, গণমাধ্যমগুলো কেবল ইসরায়েলের বয়ান তুলে ধরছে। সেইসব প্রতিবেদনে ফিলিস্তিনের কথা নেই। এসব নিয়ে প্রায় ৩১৩ শিক্ষাবিদ পশ্চিমা গণমাধ্যমের উদ্দেশে একটি খোলাচিঠিও লিখেছেন।

কারা এই শিক্ষক? তারা কিন্তু ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে নেই। এই দেশগুলো ফিলিস্তিনিদের ওপর হওয়া এই জঘন্য অপরাধের বিরুদ্ধে মুখ খুলছে না। সম্প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে যারা বিবৃতি দিয়েছেন তারা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। এবং তাঁদের বেশির ভাগই ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলি বংশোদ্ভূত। এই চিঠির অন্যতম স্বাক্ষরকারী ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার অধ্যাপক ইভলিন আলসুলতানি ১৭ অক্টোবর তাঁর এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) চিঠিটি শেয়ার করেছেন।

যেসব দেশ গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে পরিচিত ও যারা মানবাধিকার সমুন্নত রাখার জন্য বিশ্বের অন্যান্য দেশকে বুদ্ধি-পরামর্শ দেয় তাদের গণমাধ্যম একটি যুদ্ধের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে পারছে না। পশ্চিমের মেইনস্ট্রিম মিডিয়া দেখলে ইসরাইলের অত্যাচারের কোন চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায় না বলেই গণমাধ্যম বিশ্লেষকরা বলছেন- এই যদি হয় পরিস্থিতি, তবে তারা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে কোন মানবাধিকার ও বাকস্বাধীনতার কথা শেখায়।

পশ্চিমা গণমাধ্যমের দৃষ্টিভঙ্গি ও নিশ্চুপতার প্রতি প্রশ্ন তুলে তারা বলেন, আপনাদের সন্দেহ করার মতো সেই দৃষ্টিভঙ্গি আজ কোথায়। কেনো আমরা গাজায় যুদ্ধাপরাধকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের প্রচারিত বানোয়াট ও ভিত্তিহীন দাবিকে প্রশ্নের মুখে ফেলছি না? যুদ্ধে সাংবাদিক মৃত্যুর কথা উল্লেখ করে যুদ্ধ বন্ধের জন্য আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে, এ মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি কাজ হচ্ছে, যুদ্ধের ডামাডোল আরও বাড়িয়ে না তুলে শিগগিরই এসব বন্ধ করা। কারণ, এভাবে চলতে থাকলে সব পক্ষের জন্য গণবিধ্বংসী যুদ্ধ ডেকে আনতে পারে। ৭ অক্টোবর থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত আপনাদের ১১ ফিলিস্তিনি সাংবাদিক সহকর্মীকে ইসরায়েলিরা হত্যা করেছে।

কোন ইস্যুকে ধরে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোর পক্ষপাতিত্ব ও অর্থের বিনিময়ে এজেন্ডা বাস্তবায়নের নজির বহু পুরনো। এই চিঠি প্রমাণ করে যে, পশ্চিমা গণমাধ্যমের আচরণে পশ্চিমা জনগণই ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত।

যে পশ্চিম সবসময় মানবাধিকার ও বাক স্বাধীনতার কথা বলে তাদের গণমাধ্যমে একপাক্ষিক উপস্থাপনা বিষয়ে জানতে চাইলে সিনিয়র সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, মিডিয়ার নিয়ন্ত্রণ যার হাতে তার পলিসিই সেই মিডিয়ার পলিসি। কোনো দেশের ছোট পরিসরে গণমাধ্যম কোন দলের নিয়ন্ত্রণে সেই আলাপ হয়, বৈশ্বিকভাবে বড় পরিসরে সেটা কেউ ইসরাইল কেউ হামাস এর পক্ষে কথা বলছে, এভাবেই দেখতে হবে। আমি মনে করি মাঠের প্রতিবেদক সবসময় সঠিক তথ্যটা দেন। কিন্তু সেটা নিয়ন্ত্রণ করে তার নিউজরুম ও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের মালিকানা যার তিনি। বিবিসি যখন এধরনের পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ উপস্থাপন করবে তখন তার সরকারের বাইরে গিয়ে অবস্থান নিতে পারবে না, সিএনএন এর ওপর সরকারের মালিকানা না থাকলেও যে বড় ব্যবসায়ীরা এটার অর্থায়নে আছে তারা সরকারের অবস্থানের বাইরে যাবে না। ফলে কোথাও না কোথাও মিডিয়া শৃঙ্খলিত।




নির্বাচনকে সামনে রেখে কৌশল ঠিক করছে তৃণমূলের বিএনপি নেতারা

নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপিতে বিরোধ এখন তুঙ্গে। দলটির ভিতরে এক পক্ষ চায় নির্বাচনে অংশ নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে অন্যপক্ষ চায় নির্বাচন বর্জন করতে। এরই মধ্যে বিএনপির একাধিক নেতা যারা দীর্ঘদিন ধরে দলের ভিতরে কোণঠাসা তারা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। প্রয়োজনে তারা দল থেকে বের হয়ে অন্য কোনো রাজনৈতিক দলে যোগদান করে কিংবা স্বতন্ত্র অবস্থান থেকে নির্বাচনে প্রার্থী হওযার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। যদিও কেউ প্রকাশ্যে এখনও এই আলাপ করতে চান না।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিএনপিতে বছরের পর বছর অবহেলার শিকার, বঞ্চিত, বিভিন্ন সময়ে দল থেকে নানা অজুহাতে বহিস্কার হওয়া, ওযান ইলেভেনের সময় সংস্কারপন্থি হওয়া , হতাশ সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা ইতিমধ্যে নতুন দলে যোগ দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন। কেউ কেউ নতুন দলে যোগ দিয়ে নেতৃত্বেও চলে আসছেন। বিশেষ করে প্রয়াত ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা হাতে গড়া দল তৃণমূল বিএনপির নেতৃত্বে এসেছেন বিএনপির সাবেক দুই প্রভাবশালী নেতা শমসের মবিন চৌধুরী এবং তৈমুর আলম খন্দকার। এখন তাদের দেখানো পথ অনুসরণ করার জন্য প্রস্তুত নিচ্ছেন অনেক নেতা।

সূত্র জানায়, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে বিএনপির একটি বড় গ্রুপ আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। মেজর হাফিজের সঙ্গে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এহছানুল হক মিলন, কুমিল্লার সাবেক মেয়র বিএনপি থেকে বহিস্কৃত মনিরুল হক সাক্কুসহ আরও বেশ কয়েকজন গুরুত্ত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় নেতা রয়েছেন। যারা এখনই তাদের নাম প্রকাশ করতে চাচ্ছেন না। তবে একাধিক নেতা বলেছেন, সময় সবকিছু বলে দিবে।

বিএনপির ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, যারা বিএনপি ছেড়ে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাদের বেশিরভাগই নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনকৃত রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে পারেন। যাতে করে নির্বাচন করতে কোনোরকম ঝক্কিঝামেলা না হয়। আবার নিজ নিজ এলাকায় প্রভাবশালী এমন নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থীও হতে পারেন।

তবে নির্বাচনকে সামনে রেখে যারা বিএনপি ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাদের বেশির ভাগই নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল তৃণমূল বিএনপি বা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে (বিএনএম) যোগ দিতে পারেন। বিএনপির সাবেক নেতা ও মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার হাতে গড়া তৃণমূল বিএনপি কয়েক মাস আগে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পায়। কিন্তু এর কয়েক দিন আগেই মারা যান নাজমুল হুদা। এরপর দলটির হাল ধরেন তার কন্যা। সম্প্রতি দলটির নেতৃত্বে এসেছেন বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক কূটনীতিক শমসের মবিন চৌধুরী এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার। তারা নেতৃত্বে আসার পর তেকেই আলোচনায় ওঠে এসেছে তৃণমূল বিএনপির নাম। দলের বর্তমান নেতৃত্ব দলকে সংগঠিত করার চেষ্টা করছে।

এরই লক্ষ্য ধরে বিএনপির বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে তৃণমূল বিএনপির নেতাদের কথা হয়েছে। যাদের মধ্যে অনেকেই তৃণমূল বিএনপিতে যোগদানের কথা ভাবছেন। তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগও রাখছে তৃণমূল বিএনপি।

সূত্র জানায়, বিএনপি থেকে তৃণমূল বিএনপি কিংবা বিএনএম এ যোগদানের জন্য কমপক্ষে অর্ধশত নেতা পাইল লাইনে রয়েছেন।

তৃণমূল বিএনপির নেতারা মনে করেন, বিএনপির যেসব নেতা নানাভাবে দলে উপেক্ষিত তাদেরকে দলে ভিড়াতে পারলে সাধারণ মানুষের মধ্যে তৃণমূল বিএনপির গ্রহণযোগত্যা আরও বাড়বে। সে লক্ষ্যে নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন তৃণমূল বিএনপি নেতারাও সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। তারা আগামী নির্বাচনের জন্য সৎ যোগ্য এবং জনপ্রিয় প্রার্থীর সন্ধান করছেন। যারা নির্বাচনে জয়ী হয়ে আসতে পারবেন।

তৃণমূল বিএনপির মত বিএনএম- এর নেতারাও তৎপরতা শুরু করেছেন নির্বাচনকে সামনে রেখে। তারাও চাচ্ছেন বিভিন্ন দল থেকে পদ বঞ্চিত যোগ্য নেতাদের নিজেদের ভিড়াতে। এই দলেও বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকে দেখা যেতে পারে। তবে কারা কবে যোগ দিবেন সে বিষয়ে এখনই কারো নাম প্রকাশ করতে চাচ্ছেন না দলটির নেতারা।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি ছেড়ে ‘তৃণমূল বিএনপি বা বিএনএম-এ তে যোগদান করতে পারেন এমন নেতাদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ, দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এহছানুল হক মিলন, যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক সংসদ সদস্য মজিবর রহমান সরোয়ার, বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সাবেক সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী, খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও দলের খুলনা মহানগরের সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু, সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিত সাবেক সংসদ সদস্য সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল, আলী নেওয়াজ খৈয়াম, ডা. জিয়াউল হক মোল্লা, নূরুল ইসলাম মনি, নজির হোসেন, কুমিল্লার সাবেক মেয়র মনিরুল ইসলাম সাক্কু সহ আরও অনেকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেছেন, বিএনপিতে এখন চরম সংকট যাচ্ছে। ভিতরে ভিতরে একাধিক গ্রুপ সক্রিয়। একটা বড় অংশ নির্বাচনে অংশ নিতে চায়। আবার আরেক অংশ চায় আন্দোলন। এ নিয়ে বিরোধ এখন তুঙ্গে। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসতে এই সংকট আরও প্রকট আকার ধারণ করবে। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত কি হয় সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

অপর একজন নেতা বলেন, দল দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে। কর্মীদের ধরে রাখা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় নির্বাচনে যাবার কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচনের বিষয়ে দল যদি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে আগামীতে এর চড়া মূল্য দিতে হবে। এজন্য দলের নেতৃত্বকেই দায়ি করেন এই নেতা। তিনি বলেন, এখন রাজনীতির যে পরিস্থিতি তাতে নির্বাচনে যাওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। কারণ আন্দোলন করে সরকার পতন করা যাবে না। এর প্রধান কারণ ১৭ বছরেও বিএনপি আন্দোলনে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ঘটাতে পারেনি। আবার বিদেশীরা যে ক্ষমতায় বসিয়ে দিবে এমনটা ভাবারও কোনো কারণ নেই। বরং নির্বাচনে না গেলে দল হিসেবে বিএনপির অস্তিত্ব হুমকির মধ্যে পড়বে।

এই নেতা আরও বলেন, দলের ভিতরে কেন্দ্র থেকে মাঠ পর্যায়ে একাধিক নেতা রয়েছেন যারা নির্বাচনে যাওয়ার জন্য মুখিয়ে আছেন। এই অবস্থায় দল কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখার বিষয়।

এদিকে তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার জানিয়েছেন, তাদের দলে যোগদানের জন্য বিএনপিসহ বিভিন্ন দল ও শ্রেণি-পেশার অনেক নেতাকর্মী ও সমর্থকরা যোগাযোগ করছেন। বিএনপি থেকে অন্তত অর্ধশত নেতা যোগ দিতে পারেন শিগগির। যাদের প্রায় প্রত্যেকেই এমপি প্রার্থী হওয়ার লাইনে আছেন।

আর বিএনএমের আহ্বায়ক অধ্যাপক আবদুর রহমান জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচনে তারা ৩০০ আসনে প্রার্থী দিবেন। এরমধ্যে বিএনপিসহ বিভিন্ন দল থেকে যারা বিএনএম-এতে যোগ দিতে চাচ্ছেন তাদেরকেও স্বাগত জানানো হবে।

অবশ্য বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন ভিন্ন কথা। তার মতে, বিএনপির কোনো ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মী কোনো ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দেবেন না। তার দাবি, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি ঐক্যবদ্ধ।




আদর-পূজা জুটির হ্যাটট্রিক

‘নাকফুল’, ‘লিপস্টিক’ এর পর এবার ‘দরদিয়া’ সিনেমায় জুটি বাঁধতে চলেছেন আদর আজাদ ও পূজা চেরি। এরমধ্য দিয়ে হ্যাটট্রিক পূরণ হতে যাচ্ছে এই জুটির। এখনো বড় পর্দায় এই জুটিকে দেখা না গেলেও একে একে তিনটি সিনেমায় জুটি বেঁধে ফেলেছেন তারা।

এই জুটির আলোক হাসান পরিচালিত ‘নাকফুল’ সিনেমাটি রয়েছে মুক্তির অপেক্ষায়। কামরুজ্জামান রোমানের ‘লিপস্টিক’ সিনেমাটির শুটিং চলছে। এরই মধ্যে একই পরিচালকের নতুন আরেকটি সিনেমা ‘দরদিয়া’তে চুক্তিবদ্ধ হলেন আদর আজাদ ও পূজা চেরি।

গত রোববার (২২ অক্টোবর) রাতে তারা দুজনই চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন সিনেমাটিতে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ‘দরদিয়া’র শুটিং শুরুর কথা রয়েছে। নব্বইয়ের দশকের রোমান্টিক প্রেমের গল্পে নির্মিত হবে সিনেমাটি।

সিনেমাটি প্রসঙ্গে একটি গণমাধ্যমকে পূজা বলেন, ‘প্রায় তিন বছর আগে এই গল্প জেনেছি। অসাধারণ একটি গল্পের সিনেমা হবে এটি। চুক্তির আগে অন্য কোনো সিনেমার গল্প শুনতে বসে এতটা মুগ্ধ হইনি আমি। আমি যে চরিত্রটি করব, দারুণ একটি চরিত্র। ঠিকমতো করতে পারলে সুপারহিট হয়ে যেতে পারে ছবিটি।’ তিনি আরও বলেন, ‘“লিপস্টিক” ছবিতে যে টিমের সঙ্গে কাজ করছি, এটিও সেই একই টিমের কাজ। এ সিনেমার পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার ও নায়ক একই।’

আদর আজাদের সঙ্গে কাজ প্রসঙ্গে পূজা বলেন, ‘কাজের ব্যাপারে দারুণ আন্তরিকতা আদর ভাইয়ের। ভালো কাজের ব্যাপারে খুব চেষ্টা আছে। তাঁর সঙ্গে এর আগে একটি কাজ শেষ করেছি। আরেকটির শুটিং চলছে। সহশিল্পী হিসেবে আদর ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করতে বেশ সহজ লাগে।’