টাকা পাচারকারীদের জন্য অশনিসংকেত: প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স

অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের (সাবেক এনআরবি গ্লোবাল) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদারকে (পি কে) ২২ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। রবিবার এই রায়ের মধ্য দিয়ে টাকা পাচারকারীদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স অবস্থান আরেকবার ব্যক্ত হলো। এর আগে বিএনপি মহাসচিব (পলাতক) তারেক রহমান ও গিয়াস আল মামুম, জি কে শামীমসহ আরও বেশকিছু টাকাপাচারের মামলার বিচার সম্পন্ন হয়েছে। রবিবারের রায় পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় আইনজীবীরা বলছেন, একের পর এক পাচারকারীদের বিচারের মুখোমুখি করার মধ্য দিয়ে একটা বার্তা দেওয়া গেছে- অর্থ পাচারের মামলায় সরকার শক্ত অবস্থান নিতে সক্ষম হয়েছে এবং পাচারকারীদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।

বাংলাদেশে ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে অর্থের অবৈধ ব্যবহারের বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি নেন প্রধানমন্ত্রী। ২০০০সালের পর থেকে অর্থের অবৈধ ব্যবহার নিয়ে প্রথম আইনটির নাম ছিল মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০০২ (২০০২ সালের ৭ নম্বর আইন)। এ আইনের বিধানাবলি অপর্যাপ্ত থাকায় ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এ লক্ষ্যে একটি অধ্যাদেশ জারি করে (অধ্যাদেশ নম্বর ১২, ২০০৮) কিছু বিষয় যুক্ত করে। পরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার অধ্যাদেশটি সংবিধানের অনুশাসন অনুযায়ী পরীক্ষা করে ২০০৯ সালে আইনে রূপান্তরিত করে। ২০০৯ সালের আইনটিও পরে বাতিল করে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ অধ্যাদেশ ২০১২ জারি করা হয়, যা পরবর্তী সময়ে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ নামেই পরিচিত। এই আইনের মাধ্যমে এখন মামলা পরিচালনা করা হচ্ছে।

এই আইনে সাজা হয়েছে তারেকেরও
এর আগে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে দুদকের মামলায় তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানকে সাজা দেয় ঢাকার সিনিয়র বিশেষ জজ আদালত ও মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান। রায়ে তারেককে ৯ বছর ও জোবাইদাকে ৩ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ১ / ১১ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের ও ব্যবসায়ীদের আটক অভিযান চালানো হয়। এর অংশ হিসেবে তারেক রহমানকে ২০০৭ সালের ৭ মার্চ গ্রেপ্তার করা হয়।

২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর সিঙ্গাপুরে অর্থ পাচারের একটি মামলায় ঢাকার একটি বিশেষ জজ আদালত তারেক রহমানকে খালাস দেন। ওই মামলায় তারেকের বন্ধু ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তারেক রহমানকে খালাস দেওয়ার রায়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) হাইকোর্টে আপিল করেন। ওই আপিল শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০১৬ সালের ২১ জুলাই বিচারিক আদালতের খালাসের রায় বাতিল করে তারেক রহমানকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন। পাশাপাশি ২০ কোটি টাকা জরিমানা করেন।

বিচার করা গেছে জি কে শামীমের
গত জুলাই মাসে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় ১৯৫ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগের মামলায় ঢাকার একটি আদালত বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা জি কে শামীমকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়- অস্ত্রবাজ, টেন্ডারবাজ ও অর্থপাচারকারীদের কোনো আদর্শ নেই। তারা কোনো আদর্শকে লালন করে না। তবে আদর্শকে ব্যবহার করে রাতারাতিভাবে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলে দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করে এবংদেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেয়। তারা দেশ ও জাতির শত্রু। দেশের চলমান উন্নয়ন ও জাতীয় স্বার্থে তাদেরকে সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করতে হবে।

২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর দুপুরে নিকেতনের নিজ বাসা থেকে শামীমকে আটক করা হয়। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় নগদ ১ কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার টাকা, আরও ৭ লাখ ৪৭ হাজার টাকার বিদেশি মুদ্রা, শামীম ও তাঁর মা আয়েশা আক্তারের নামে ১৬৫ কোটি ২৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকার এফডিআর, মায়ের নামে আরও ৪৩ কোটি ৫৭ লাখ ৪০ হাজার টাকার ব্যবসার অংশীদার এবং জি কে বি অ্যান্ড কোম্পানির শেয়ার, গাড়ি ও এফডিআর বাবদ ৩৬ কোটি ৩৫ লাখ ১৮ হাজার ৭১৯ টাকার অস্থাবর সম্পদের বৈধ উৎস পায়নি দুদক। অনুসন্ধানে শামীমের মায়ের বৈধ আয়ের উৎস খুঁজে পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ, মোট ২৯৭ কোটি ৮ লাখ ৯৯ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের সন্ধান পাওয়া যায়।

টাকা ফেরত আনতে প্রধানমন্ত্রী আত্মবিশ্বাস
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার বিভিন্ন দেশে বিএনপি (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল) নেতাদের পাচার করা অর্থ ফেরত আনার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, “বিএনপির অনেক নেতার টাকা (বিদেশি ব্যাংকে) জমে আছে। আমরা ধীরে ধীরে এগুলো ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। গত জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের বৈঠকে বক্তব্য প্রদানকালে এসব কথা বলেন। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার পরিবারের দুর্নীতির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, সড়ক খাতে দুর্নীতির কারণে বিশ্বব্যাংক বিএনপির শাসনামলে অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়। খালেদা জিয়ার দুই ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসার আগেই বিদেশিরা এবং একজন এফবিআই এজেন্ট তারেকের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং মামলায় সাক্ষ্য দেন। শেখ হাসিনা বলেন, তাদের (তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকো) বিদেশে পাচার করা অর্থ থেকে সরকার ৪০ কোটি টাকা ফেরত নিতে পেরেছে। কিন্তু সমস্যা হলো তারা টাকা যে দেশে জমা করেছে, সেখান থেকে টাকা ফেরত আনা একটি কঠিন বিষয়। দেশগুলো টাকা ছাড়তে চায় না।

অর্থপাচারের হাব সিঙ্গাপুরও নড়েচড়ে বসেছে এবার। বিভিন্ন দেশ থেকে অবৈধ অর্থের প্রবাহ রোধ করতে অভিবাসনবিষয়ক নিয়মনীতি আরও কঠোর করা হতে পারে বলে জানানো হয়েছে। সম্প্রতি দেশটির পার্লামেন্টে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেকেন্ড মিনিস্টার জোসেফিন টেও বলেছেন, অভিবাসনবিষয়ক যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া কীভাবে আরও কঠোর করা যায়, তা মূল্যায়ন করা হবে। সিঙ্গাপুরের সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর অনুসারে গত মঙ্গলবার পার্লামেন্টে মিনিস্টার জোসেফিন টেও বলেন, সিঙ্গাপুর অর্থ পাচারের ঘটনা গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। অর্থ পাচারের বিষয়ে এবারই আমরা প্রথম কোনো আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছি তা নয়। আর এটা শেষ ঘটনাও হবে না।




নিজের স্বার্থে ফিলিস্তিনিদের বিপক্ষে আমেরিকা: মানবাধিকার কোথায়?

বাংলাদেশে মানবাধিকারের ইস্যু তুলে বারবার সরকারকে কাঠগোড়ায় তোলার চেষ্টা করে যুক্তরাষ্ট্র। অথচ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েল আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কিছুই বলেনা আমেরিকা। ইসরায়েলের বিমান হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ২৫০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। প্রাণ গেছে শিশু-নারীদের। মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে নিশ্চুপ ওয়াশিংটন।

সমুদ্র উপকূলীয় ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজাকে দীর্ঘদিন ধরেই ইসরায়েল অবরুদ্ধ করে রেখেছে। প্রায় বিচ্ছিন্ন এই ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে সশস্ত্র গ্রুপ হামাস। হামাসের রকেট হামলার জবাবে প্রায়ই ইসরায়েলি বাহিনী স্থল ও আকাশপথে ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণ করা হামাস গ্রুপ শনিবার ভোর থেকে স্থল, জল ও আকাশপথে সমন্বিত হামলা করে ইসরায়েলে। এদিকে হামাসের হামলার পর গাজায় পাল্টা বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এ পর্যন্ত কমপক্ষে ২৫০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

ইসরায়েলে এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো। হামাসের এ হামলাকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ আখ্যা দিয়ে প্রতিরক্ষা সমর্থনের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির জাতীয় জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র অ্যাড্রিয়েন ওয়াটসন বলেন, ‘আমরা ইসরায়েলের সরকার ও জনগণের সঙ্গে আছি। এই হামলায় ইসরায়েলিদের প্রাণ হারানোর জন্য সমবেদনা জানাচ্ছি।’ হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের উপদেষ্টা জাচি হানেগবির সঙ্গে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের উপদেষ্টা জেক সুলিভান।

শনিবার বাইডেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে ফোন কল করে বলেন, ‘আমরা ইসরায়েলের সরকার ও জনগণকে সব ধরনের সমর্থন দিতে প্রস্তুত আছি।’ পরে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাস কখনই ন্যায়সংগত হতে পারেন না। ইসরায়েলের নিজেকে এবং তার জনগণকে রক্ষা করার অধিকার রয়েছে।’ এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন কোনো পক্ষ সুবিধা নিতে চায় কি না সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

১৯৬৭ সালের পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যকার সম্পর্ক দ্রুতগতিতে ঘনিষ্ঠ থেকে ঘনিষ্ঠতর হতে থাকে। ১৯৭৩ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় মার্কিনীরা ইসরায়েলের পক্ষ নেয়। এই সিদ্ধান্ত দুই দেশের সম্পর্কের মজবুত ভিত্তি রচনা করে। তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও কূটনীতিকরা বুঝতে পেরেছিলেন যে, মধ্যপ্রাচ্যে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাব কমাতে ইসরায়েল তাদের কার্যকরী এক অস্ত্র হতে পারে। সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে স্নায়ুযুদ্ধের সময় থেকেই ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র আরো ঘনিষ্ঠ হতে থাকে। এই যুদ্ধে মার্কিনরা বেশ সফলতাও অর্জন করে এবং নিজেদের বিশ্বের একমাত্র সুপারপাওয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়।

যুক্তরাষ্ট্র বুঝতে পারে, মধ্যপ্রাচ্যে তাদের এমন একটি মিত্র দরকার, যারা তাদের প্রতিরূপ হিসেবে কাজ করবে। কারণ মধ্যপ্রাচ্যের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের ভৌগোলিক দূরত্বের একটি বিষয় ছিল। সেই সমস্যা নিরসনে শক্ত ঘাঁটি বিনির্মাণের জন্যই তারা বেছে নেয় ইসরায়েলকে। যুক্তরাষ্ট্র তখন ইসরায়েলের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরির জন্য তাদের হয়ে ফিলিস্তিনের সাথে দেনদরবার করার দায়িত্ব গ্রহণ করে।

একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের আশ্বাসের কারণেই এখনো ইসরায়েল যেকোনো শান্তি আলোচনার টেবিলে বসতে রাজি হয়। বিগত তিন মার্কিন প্রেসিডেন্টই চেষ্টা করেছেন ফিলিস্তিনের সাথে ইসরায়েলের একটি সুরাহা করার। তবে এক্ষেত্রে তাদের সমর্থনের পাল্লা তেল আবিবের দিকেই বেশি থেকেছে। যুক্তরাষ্ট্র সবসময়ই ইসরায়েলের অনেক অপরাধ দেখেও না দেখার ভান করে থেকেছে, যা অব্যাহত রয়েছে বর্তমানেও। কিন্তু এর পেছনের রহস্য কী? শুধু মধ্যপ্রাচ্যের নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য তারা ইসরায়েলকে সমর্থন করে, নাকি আরো কোনো কারণ রয়েছে?

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সম্পর্ককে বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল কূটনৈতিক সম্পর্কও বলা যায়। যুক্তরাষ্ট্রে প্রভাব সৃষ্টির জন্য ইসরায়েল যেমন প্রচুর অর্থ ব্যয় করে, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রও তাদের বড় অঙ্কের আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে। তবে এরপরও দুই দেশের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে, যেখান থেকে লাভবান হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

১৯৮৫ সালে ইসরায়েলের সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর থেকে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের হার অনেক বেড়েছে। ইসরায়েলে থাকা মার্কিন দূতাবাসের তথ্যমতে, ২০১৬ সালে দুই দেশ প্রায় ৪৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ব্যবসা করেছে, যা থেকে সিংহভাগ লাভবান হয়েছে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে ইসরায়েল।

যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ইসরায়েল বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি বাজার। দেশটির বিভিন্ন রাজ্য ইহুদিপ্রধান দেশটির সাথে বিভিন্ন ব্যবসা করে আসছে, যা থেকে সামগ্রিকভাবে মার্কিন অর্থনীতি লাভবান হচ্ছে। বলা হয়ে থেকে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিকভাবে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রকে তার কল্পনার চেয়েও অনেক বেশি দিয়েছে। এর প্রতিদান অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রও কম দিচ্ছে না!

এছাড়াও আরো গভীরে গেলে দেখা যায় যে , আমেরিকার রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করে মূলতঃ কর্পোরেট হাউজগুলো। তারা প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত বানাতে পারে, সরাতে পারে। এসব কর্পোরেট হাউজগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায় এদের মালিক কিংবা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কম্পানিগুলোর মূল দায়িত্বে থাকা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা চীফ এক্সজিকিউটিভ অফিসার, সিইও হলেন ইহুদি কমিউনিটির মানুষ।

২০২০ সালে, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে ৩.৮ বিলিয়ন (৩৮০ কোটি) ডলার সাহায্য দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ওবামার শাসনামলে ইসরায়েলকে দীর্ঘমেয়াদী যে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তার অধীনেই এই সাহায্য গেছে। প্রায় পুরোটাই ছিল সামরিক সাহায্য।

২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট ওবামা ইসরায়েলের সাথে এক চুক্তি সই করেন যার অধীনে ২০১৭-১৮ সাল থেকে তার পরবর্তী ১০ বছর ইসরায়েল ৩৮ বিলিয়ন ডলার বা ৩৮০০ কোটি ডলার সামরিক সাহায্য পাবে। তার আগে দশ বছরের তুলনায় ঐ সাহায্য বেড়েছে প্রায় ছয় শতাংশ।
এ বাদেও, গত বছর ইসরায়েলে নতুন অভিবাসীদের পুনর্বাসনে যুক্তরাষ্ট্র ৫০ লাখ ডলার সাহায্য দিয়েছে। বিশ্বের যে কোনো দেশ থেকে ইহুদিরা ইসরায়েলে গিয়ে বসতি গড়তে চাইলে তাকে স্বাগত জানানোর নীতি বহুদিন ধরে সেদেশে রয়েছে।

ইসরায়েলকে অত্যাধুনিক একটি সামরিক শক্তিধর দেশ হিসাবে গড়ে তুলতে আমেরিকা বছরের পর বছর ধরে সাহায্য করছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র কেনার জন্য তহবিল যোগানো হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, ইসরায়েল আমেরিকা থেকে ৫০টি অত্যাধুনিক এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কিনেছে যা দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো যায়। প্রতিটি বিমানের দাম প্রায় ১০ কোটি ডলার। ইসরায়েল আমেরিকার কাছ থেকে ২৪০ কোটি ডলার ব্যয়ে আটটি কেসি-৪৬এ বোয়িং ‘পেগাসাস‘ বিমান কিনেছে। এই বিমান থেকে আকাশে এফ-৩৫ বিমানে জ্বালানি তেল ভরা যায়।

২০২০ সালে ইসরায়েলকে আমেরিকা যে ৩৮০ কোটি ডলার দিয়েছে, তার মধ্যে ৫০ কোটি ডলার খরচ হয়েছে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র নিরাপত্তা ব্যবস্থায়। এর মধ্যে রয়েছে ‘আয়রন ডোম‘ ক্ষেপণাস্ত্র নিরাপত্তা যা দিয়ে ইসরায়েল রকেট হামলা প্রতিহত করে। ২০১১ সাল থেকে আমেরিকা ইসরায়েলের ‘আয়রন ডোম‘ নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য ১৬০ কোটি ডলার দিয়েছে। এ ছাড়াও, গাজায় গোপন সুড়ঙ্গ শনাক্ত করা সহ বেশ কিছু সামরিক প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং তৈরিতে আমেরিকা ইসরায়েলকে তহবিল ছাড়াও বিভিন্নভাবে সাহায্য করছে। ইসরায়েলের সরকার সমরাস্ত্র কেনা এবং সামরিক প্রশিক্ষণে বহু টাকা খরচ করে যার অনেকটাই আসে আমেরিকার দেওয়া সাহায্য থেকে।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের পেছনে আমেরিকান ইসরায়েল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি (আইপ্যাক)-এর অবদানকে কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। আইপ্যাক কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়। কিন্তু এরপর তাদের যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণের উপর বড় প্রভাব রয়েছে। মার্কিন সরকারের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিভিন্ন সিদ্ধান্তে তাদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে থাকে। কিন্তু তারা এই কাজ করে কীভাবে?

‘কংগ্রেশনাল ক্লাব’ নামে আইপ্যাকের বিশেষ একটি দল আছে। এই দলের প্রত্যেক সদস্য প্রতি নির্বাচনে সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার ডলার চাঁদা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আর এই অর্থ ইসরায়েলপন্থী রাজনীতিবিদদের নির্বাচনে ব্যয় করা হয়। পরবর্তীতের এদের মধ্যে যারা জয়লাভ করে, তাদের মাধ্যমে সিনেট এবং হাউজে প্রভাব বিস্তার করে নিজেদের নীতির বাস্তবায়ন করে। তবে আইপ্যাক সামগ্রিকভাবে কত অর্থ ব্যয় করে, সেই সম্পর্কে জানা যায় না। তবে তাদের এমন কিছু সদস্য আছে, যারা এক মিলিয়ন থেকে শত মিলিয়ন পর্যন্ত অর্থ সাহায্য দিয়ে থাকে। আর এই সকল দাতাদের ধ্যান-ধারণা সবই ইসরায়েলকে ঘিরে। তারা যেকোনো মূল্যে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলকে টিকিয়ে রাখতে চান।

শুধুমাত্র ট্রাম্পের শাসনামলেই আইপ্যাক অনেকগুলো সফলতা অর্জন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণা, ইরানের সাথে করা পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বের হয়ে আসা এবং ফিলিস্তিনকে দেওয়া সাহায্য বন্ধ করা।
আইপ্যাক কতটা শক্তিশালী

আইপ্যাক সর্বশেষ ওয়াশিংটন ডিসিতে একটি বার্ষিক সম্মেলন করে, যেখানে প্রায় ২০ হাজার লোক উপস্থিত ছিলেন এবং শীর্ষস্থানীয় মার্কিন রাজনীতিবিদদের ব্যক্তিগত উপস্থিতিও ছিল সেখানে। এমনকি বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও উপস্থিত হয়েছিলেন, ছিলেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুও।

এছাড়া ইসরাইলপন্থি গোষ্ঠীগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে রাজনৈতিক প্রার্থীদের লাখ লাখ ডলার অনুদান দিয়ে থাকে। ২০২০-এর নির্বাচনে ইসরাইলপন্থি গোষ্ঠীগুলোর অনুদান বাবদ খরচ হয়েছিল ৩০.৯৫ মিলিয়ন ডলার-যার ৬৩ শতাংশ পেয়েছিল ডেমোক্র্যাট প্রার্থীরা এবং ৩৬ শতাংশ গেছে রিপাবলিকান প্রার্থীদের হাতে।

নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য বরাবরের মতো এবারও নিরীহ ফিলিস্তিনিদের বিপক্ষে গিয়ে ইসরায়েলের পক্ষ নেয় যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র ন্যাটো জোট। প্রায়ই শান্তি আলোচনার নাটক মঞ্চস্থ করলেও কখনোই সফলতা আসেনি কারন সর্বদা তারা ইসরায়েলের পক্ষে থেকেছে। তাদের অর্থ, অস্ত্র ও সর্বাত্মক সহায়তায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী জনগণ এর উপর দশকের পর দশক ধরে নিপীড়ন চালিয়ে আসছে দখলদার ইসরায়েল। এবারের সংঘাতেও তারা ইহুদিদের পক্ষ নিলো। মানবাধিকারের কথা বলে মুখে ফেনা তোলা দেশগুলোর আগ্রাসী মনোভাব, দ্বিচারিতা আর স্বার্থপরতার আরেকটি নজির হয়ে থাকবে এই সমর্থন।




শেখ হাসিনার দুরদর্শী পরিকল্পনা আর সাহসের মূর্ত প্রকাশ পদ্মা সেতু

১০ অক্টোবর পদ্মা সেতুর লিংক প্রকল্পের ৮২ কিলোমিটার রেলপথ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২১টি জেলার মানুষ সরাসরি ঢাকার সঙ্গে কানেক্টেড হবে রেলপথে যুক্ত হবে। এই রেলপথ ঢাকা থেকে খুলনার যাত্রাপথ প্রায় ২১৫ কিলোমিটার কমিয়ে আনবে। কীভাবে? ঢাকা থেকে খুলনা ট্রেনে যেতে পশ্চিমাঞ্চল ঘুরে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার পাড়ি দেয়ার এতদিনের সময় ১০-১২ ঘণ্টা। এবার নতুন রেলপথে যশোর যাওয়া যাবে ৩ ঘণ্টায়, আর খুলনা পৌঁছানো যাবে ৪ ঘণ্টায়।

পদ্মা সেতু দিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে যুক্ত করা এই রেললাইন সাধারণ কোনোকিছু নয়। পদ্মা সেতু দিয়ে দুই সারি কনটেইনারবাহী মালগাড়ি রেলপথে যাওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নতুন উন্নত এই রেল নেটওয়ার্ক থেকে দেশকে লাভবান করতে আওয়ামী লীগ সরকার দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে গড়ে তুলছে প্রায় ১৮টি ইকোনমিক জোন। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে পারলে সেখানে প্রায় ৭.৫ লাখ নতুন কর্মসংস্থান হবে বলে সরকারের আশা। দেশের বিশাল এক জনগোষ্ঠীর ভাগ্য বদলে দেবে এই রেলপথ, যা সম্ভব হচ্ছে পদ্মা সেতুর কারণে।

কিন্তু দেশের গর্ব এই মেগাস্ট্রাকচারের সুফল ভোগ করার চেয়ে প্রকল্পটির খুঁত ধরতে আজও ব্যস্ত একটি গোষ্ঠী। নিজ দেশের সাফল্যে অদ্ভুতভাবে হীনমন্যতায় ভোগা এসব মানুষ পদ্মা সেতুর খরচ নিয়ে অবান্তর প্রশ্ন তোলে। তাই বারবার বলতে হয়, এই সেতু শুধু একটি সেতু নয়, বাংলাদেশকে গরিব দেশ বানিয়ে রাখার দেশি-বিদেশি সব ষড়যন্ত্রের স্রোতের বিরুদ্ধে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে দেশকে নিজের পায়ে দাঁড় করানোর মহাকাব্য মূর্ত হলে তা দেখতে পদ্মা সেতুর মতোই হয়।

দক্ষিণ এশিয়ার দীর্ঘতম সেতু ভারতের ভূপেন হাজারিকা সেতু লম্বায় ৯.১৫ কিলোমিটার আর নির্মাণ ব্যয় ৯৫০ কোটি রুপি। এই সেতুর নদী শাসনে কোনো খরচই হয়নি। অন্যদিকে পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার, বানাতে খরচ হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকা। প্রশ্ন তোলা হয়েছিলো, ভারতের সেতুটির তুলনায় ছোট হলেও পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় অনেক বেশি হলো কেন?

সব ‘কেন’র উত্তর আছে। যারা দেশের উন্নয়ন সইতে পারে না, একই মিথ্যা বারবার বলে যারা মিথ্যাকে সত্যের মতো বানিয়ে ফেলার চেষ্টা করে, ‘উন্নয়ন’ শব্দটিকে যারা ট্রলে পরিণত করেছে, তাদের সমস্যা হলো, উত্তরগুলো তারা জেনেও জানে না, শুনেও শোনে না। ভারতের আসাম রাজ্যে লোহিত নদীর ওপর নির্মিত ভূপেন হাজারিকা সেতুর প্রস্থ ১২.৯ মিটার। আমাদের পদ্মা সেতুর প্রস্থ ১৮.৯ মিটার। ভূপেন হাজারিকা সেতুর পাইল লোড নেয়ার ক্ষমতা মাত্র ৬০ টন। অন্যদিকে পদ্মা সেতুর পাইল লোড ৮ হাজার ২১০ টন। ভূপেন হাজারিকা সেতুর চেয়ে পদ্মা সেতু ১৩৩ গুণ বেশি শক্তিশালী।

ব্রহ্মপুত্রের উপনদী লোহিত নদীর তলদেশে বেডরক পাওয়া যায় পদ্মা সেতুর চেয়ে অল্প গভীরতায়। ভূপেন হাজারিকা সেতু তৈরির সময় নদীর তলদেশে এত গভীরতায় যেতে হয়নি। পদ্মা নদীর গভীরতা নদীর পৃষ্ঠ থেকে চল্লিশ মিটার, প্রায় ১৩ তলা বিল্ডিংয়ের সমান। এই ৪০ মিটার উচ্চতা পার হয়েই নদীর উপর মাথা তুলেছে, গর্বের পদ্মা সেতুর কলাম বা পিয়ারগুলো।

পদ্মা নদীর তলদেশের মাটি পাথুরে নয়। নরম কাদা আর বালুর মিশ্রণ ওই মাটি ৪২টি দানবীয় পিলারের ভার কীভাবে নিয়েছে? নরম মাটির নিচে বেডরক প্রায় ৮ কিলোমিটার নিচে বলে ধারণা। এভারেস্ট পর্বতের উচ্চতার সমান গভীরতা পর্যন্ত পিলার স্থাপন তো অসম্ভব। আর পদ্মার তলদেশের মাটি স্থির থাকে না। বর্ষাকালে অতিরিক্ত স্রোত পদ্মা নদীর তলদেশের বালির মতো সেই নরম মাটি ধুয়ে নিয়ে যায়। একে ‘স্কাওয়ার’ হওয়া বলে। দক্ষিণ আমেরিকার অ্যামাজন নদীর পর পৃথিবীর সবচেয়ে খরস্রোতা পদ্মা নদীর স্কাওয়ার হওয়ার সর্বোচ্চ রেকর্ড প্রায় ৬৫ মিটার। মানে নদীর নিচ থেকে ২১৩ ফুট মাটি ধুয়ে চলে গেছে সাগরে। প্রায় ২১ তলা উঁচু বিল্ডিংয়ের সমান উচ্চতার সেডিমেন্ট অপসারণ করার রেকর্ড অন্য কোন নদীর নেই। সেকেন্ডে দেড় লাখ হাজার ঘনমিটার পানি বয়ে যায় এই নদী দিয়ে। এই পরিস্থিতিতে সেতুর কলামগুলোর দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় ১০৫ মিটারের বেশি, মানে ৩৪ তলা বিল্ডিংয়ের সমান।

স্কাওয়ার যেহেতু নদীর সবখানে সমান নয়, তাই গড়ে ১২০ মিটার অর্থাৎ প্রায় ৪০ তলা বিল্ডিংয়ের সমান লম্বা ৩ মিটার ব্যাসের পুরু স্টিল দিয়ে তৈরি পাইল বসানো হয়েছে। এটি একটি বিশ্বরেকর্ড। পাইলগুলো পদ্মার বুকে স্থাপনের জন্য এমন হ্যামার দরকার ছিলো, যা এর আগে পৃথিবীতেই ছিলো না। তাই জার্মানির মিউনিখ থেকে ৩৮০ টন ওজনের বিশেষ হ্যামার তৈরি করিয়ে আনানো হয়, যা আরেক বিশ্বরেকর্ড। মাটিতে বসানোর পর, পাইলগুলোর ভেতরের ফাঁপা অংশ ভরাট করে দেয়া হয়েছে।

প্রতি কলামের নিচে স্থানভেদে ৬টি বা ৭টি করে পাইল বসানো হয়েছে। তবে সেতুর দুই প্রান্তের দুটি কলামের নিচে আছে ১৬টি করে পাইল। মাকড়শা যেভাবে ৮টি পা ৮দিকে ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, সেভাবেই এই পাইলগুলো স্রোতের ধাক্কা সামলে কলামগুলোর ভারসাম্য রক্ষা করছে। এই ভারসাম্য রক্ষা করতে পাইলগুলো ভার্টিক্যালি মাটিতে গাথা হয়নি। মাকড়শার পায়ের মতোই বাঁকা করে, ইনক্লাইন্ডভাবে স্থাপন করা হয়েছে। ইনক্লাইন্ডভাবে থাকায় কলামগুলোর পক্ষে ভার নেয়ার ক্ষমতাও বেড়ে গেছে। ৬টি বা ৭টি পাইলের মাথায় আছে কংক্রিটের পাইল ক্যাপ, যা পানির উপরে দৃশ্যমান।

কিছু পিলারের পাইলিংয়ের কাজে পর্যাপ্ত মাটি না পাওয়ায় প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞরা ‘স্ক্রিন গ্রাউটিং’ নামের এক বিরল পদ্ধতি ব্যবহার করে পদ্মা সেতুর ওই পিলারগুলো স্থাপন করেন। এই পদ্ধতিতে পাইলের সঙ্গে স্টিলের ছোট ছোট পাইপ ওয়েল্ডিং করে দেয়ার পর পাইপের ভেতর দিয়ে এক ধরনের কেমিক্যাল পাঠিয়ে দেওয়া হয় নদীর তলদেশের মাটিতে। কেমিক্যালের প্রভাবে তখন তলদেশের সেই মাটি শক্ত হয়ে ওঠে। এভাবে সেই মাটি পাইলের লোড বহনে সক্ষম হয়ে ওঠে। পৃথিবীর আর কোনো সেতু তৈরিতে পদ্মা নদীর মতো এত গভীরে গিয়ে নদীর তলদেশে পাইল গাথতে হয়নি।

কলামগুলোর ওপরে দৃশ্যমান প্রতিটা স্প্যানের দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার, ওজন ৩ হাজার ২০০ টন। পানিপথে তা পিলারের উপর স্থাপন করতে তৈরি করা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে ভারবাহী ক্রেন। Warren type steel truss girder and concrete on upper deck টাইপের স্প্যানগুলো মিলে গড়ে তুলেছে ৬.১৫ কিলোমিটার লম্বা পদ্মা সেতু। দুই তলা এই ব্রিজের still truss এর মধ্য দিয়ে ট্রেনের লাইন। ডুয়াল গেজ এই রেললাইন দিয়ে ব্রড গেজ, মিটার গেজ দুই ধরনের ট্রেনই পদ্মা সেতু পার হতে পারবে। এখানে ইমার্জেন্সি একসেস পয়েন্ট থাকছে। ট্রেনে কোনো সমস্যা হলে, মানুষ নামিয়ে তাদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া যাবে। দুইতলা পদ্মা সেতুর উপরে আছে কংক্রিটের ছাদ, যার উপর দিয়ে বর্তমানে গাড়ি চলছে। ২২ মিটার চওড়া এই রাস্তা চার লেনের।

আগেই বলেছি দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করতে পদ্মা সেতু দিয়ে কেমন হেভিওয়েট ট্রেন চলবে। সেই ব্যবস্থা করার জন্য মূল সেতুর লোড নেয়ার ক্ষমতা বাড়াতে হয়েছে। এজন্য পাইলগুলোকে বেশি মজবুত করে বানাতে হয়েছে, ফলে খরচ বেড়েছে।

পদ্মা সেতুর স্প্যান বসানোর আগে এগুলোর ও পিলারের মাঝে সিসমিক আইসোলেশন বিয়ারিং ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে ভূমিকম্প যে এনার্জি নিয়ে এই স্ট্রাকচারকে আঘাত করবে, তা কমে যাবে। ভূমিকম্প হলে সেতুর ফাউন্ডেশন নড়লেও উপরের সেতুটি নড়বে না। কারণ এই সেতুতে আছে পেনডুলাম বিয়ারিং। এসব বিয়ারিংয়ের ভার বহনের ক্ষমতা ১০ হাজার মেট্রিকটন। এগুলোও পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী বিয়ারিং। রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পও সামলাতে পারবে এগুলো।

পদ্মা সেতুর সাথে যে রাস্তাগুলো এখন আছে সেই রাস্তার সাথে সেতুর সংযোগ দিতে তৈরি করা হয়েছে অ্যাপ্রোচ রোড। এই অ্যাপ্রোচ রোড সেতুর চেয়ে দ্বিগুণ লম্বা, ১২ কিলোমিটার। এই পথ দিয়ে জাজিরা থেকে জাতীয় সড়কের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। একইভাবে মাওয়ার কাছাকাছি যে রাস্তা ছিল সেটাকে আন্তর্জাতিক মানে তোলা হয়েছে। ভবিষ্যতে বন্যা হলে রাস্তা যেন পানির উপরে থাকে, তা মাথায় রেখে অ্যাপ্রোচ রোড তৈরি করা হয়েছে। জাজিরার রাস্তার এলাকাটা একসময় চর এলাকা ছিল। এত নরম মাটির ওপর দিয়ে রাস্তা করার জন্য মাটি ফেলে বাঁধের মত উঁচু জায়গা বানানো হয়েছে। এরপর রাস্তার নিচের মাটির ঘনত্ব বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে। অ্যাপ্রোচ রোডের নিচের মাটির ঘনত্ব বাড়াতে স্যান্ড কমপ্যাকশন পাইল মেশিন আনতে হয়েছে জার্মানি থেকে। এটি দিয়ে নরম মাটির স্তরে বালু পাঠিয়ে মাটির ঘনত্ব বাড়ানো হয়েছে।

পদ্মা সেতু বানানোর জন্য মাওয়া আর জাজিরা প্রান্তে দুটি বিশাল কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড বানানো হয়েছিলো। বিশাল কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড আর অ্যাপ্রোচ রোড নির্মানের জন্য বিশাল পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য ৭টি রিসেটেলমেন্ট এরিয়া বরাদ্দ দেয়া হয়েছে নদীর দুই ধারে। সেখানে তাদের ঘরবাড়ি, মসজিদ, স্কুল, বাজার এগুলো সবই বানিয়ে দেয়া হয়েছে।

পদ্মা সেতু প্রকল্পে খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল নদীশাসন। নদীশাসন বলতে বোঝায়, নদীর গতিপথ ও তীর রক্ষার জন্য যে স্ট্রাকচারাল কাজ করা হয়। এই কাজের মধ্যে আছে নদী ড্রেজিং করা। নদীর পাড় পানির নিচে কেমন ঢালু হবে, তা নির্ধারণ করতে জিপিএস কন্ট্রোলড স্পেশাল ড্রেজার ব্যবহার করা হয়েছে, যা পানির নিচের মাটি নিজেই হিসাব করে কেটেছে। নদীশাসনের আর একটা অংশ হিসেবে চলছে নদীর কিনারার দিকে পাথর, কংক্রিট ব্লক আর জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে।

মাওয়া প্রান্তে নদীশাসনের কাজ হয়েছে ১.৬ কিলোমিটারজুড়ে, আর জাজিরা প্রান্তে ১২.৪ কিলোমিটার। জাজিরা প্রান্তে এত বেশি কাজ হওয়ার কারণ হল, পানিপ্রবাহ উত্তর পশ্চিম থেকে প্রচণ্ড বেগে এসে জাজিরা সাইডে ধাক্কা দেয়। মাওয়া সাইটে মাটি কিছুটা ক্লে বা এঁটেল মাটি। দক্ষিণ দিকে জাজিরার সাইটে ক্লে নেই, সেখানে পলি, বালু এবং বেলে-দোআঁশ মাটি। স্রোত বেশি এলে এই মাটি ক্ষয় হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। জাজিরা প্রান্তে তাই নদীশাসন করা হয়েছে বেশি। আবার নিচ থেকে মাটি ধুয়ে উপর থেকে পাড় ভেঙে পড়া ঠেকাতে অনেক নিচে থেকে ১ হাজার কেজি ওজনের পাথর, কংক্রিট ব্লক আর কিছুটা নতুন প্রযুক্তির ৮০০ কেজি ওজনের জিও টেক্সটাইল ব্যাগ ব্যবহার করা হয়েছে।

এই নদীশাসন, প্রতি বছর বন্যার আশঙ্কা, ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা, ডিপ পাইল ফাউন্ডেশন, নদীর নরম তলদেশ, এক্সট্রিম স্কাওয়ার ডেপথ, জমি অধিগ্রহণ আর এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসন, পরিবেশ রক্ষা করা, এই মেগা প্রকল্প সমন্বয়, সর্বোপরি নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরি করার মেগা চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে সফল হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি শুধুই মেগাস্ট্রাকচার তৈরিতে সাফল্যের গল্প নয়। সর্বগ্রাসী এই পদ্মা নদী পাড়ি দিতে গিয়ে প্রতিবছর কয়েকশ’ মানুষের মৃত্যু ঠেকিয়ে দিয়েছেন তিনি।

অসহনীয় যানজটে আটকে মালামাল নষ্ট হওয়া আর পরিবহনে দুর্ভোগের গল্প বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে এখন অতীত। রোগী পারাপার পদ্মার তীরের মানুষের কাছে আর দুঃস্বপ্ন নয়। তাদের বছরের পর বছর যে দুর্ভোগ, তার অবসান ঘটেছে। কীর্তিনাশা পদ্মার দুই পাড়ের যত জীবনের গল্প জোড়া লেগেছে, সামনে আরও তৈরি হবে জীবন বদলানো অনেক গল্প, সেসবের দাম ওইসব মানুষদের কাছে ৩০ হাজার কোটি টাকার চেয়েও বেশি।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী।




মেহেরপুরে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় প্রাণ গেল বৃদ্ধের

মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কে সদর উপজেলা আমঝুপি হাটে বাজার করে সড়কে ওঠার সময় দ্রুতগামী মোটরসাইকেলের ধাক্কায় প্রাণ গেল কসম আলী (৮০) নামের এক বৃদ্ধের।

রবিবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত কসম আলী সদও উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের মৃত মোহন আলীর ছেলে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কসম আলী আমঝুপি সাপ্তাহিক হাট থেকে বাজার করে মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা মহাসড়কে উঠছিলেন। এসময় চুয়াডাঙ্গা থেকে মেহেরপুরগামী একটি দ্রুতগামী মোটরসাইকেল কসম আলীকে ধাক্কা দেয়। এত কসম আলী সড়কে ছিটকে পড়ে। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসসক মৃত ঘোষণা করেন। তবে, দ্রুতগামীর ওই মোটরসাইকেলটি ধরতে পারেনি স্থানীয়রা।




ঝিনাইদহে ৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নতুন ভবন উদ্বোধন

ঝিনাইদহে ৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নতুন ভবনর উদ্বোধন করা হয়েছে। রোববার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি)’র বাস্তবায়নে প্রায় ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নতুন একাডেমিক ভবনের উদ্বোধন করেন ঝিনাইদহ-২আসনের সংসদ সদস্য তাহজিব আলম সিদ্দিকী সমি।

উদ্বোধন করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে সদর উপজেলার উদয়পুর মতিয়ার রহমান মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ফজর আলী গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ, আব্দুর রকিব মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, লাউদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, লাউদিয়া পীর দেওয়ান দাখিল মাদ্রাসা ও মুক্তিযোদ্ধা মশিউর রহমান ডিগ্রি কলেজ।

সেসময় উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া জেরিন, সংসদ সদস্য তাহজিব আলম সিদ্দিকী সমি’র সহধর্মী, সংসদ সদস্যের পিএস রওশন আলী, রোকনুজ্জামান রিপন, ইউপি চেয়ারম্যান কামাল হোসেন, জেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহবায়ক রাজু আহমেদ, সদর থানা যুবলীগের সাবেক আহবায়ক শাহ্ মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল রাজা, উদয়পুর মতিয়ার রহমান মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সভাপতি এড. শেখ সেলিম, আব্দুর রকিব মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সভাপতি রবিউল ইসলামসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ।

এসময় প্রধান অতিথি সংসদ সদস্য তাহজিব আলম সিদ্দিকী সমি বলেন, দেশে বর্তমান সরকারের আমলেই সর্বোচ্চ উন্নয়ন হয়েছে। এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আওয়ামীলীগ সরকারের কোন বিকল্প নেই। তাই আগামী নির্বাচনে আবারো শেখ হাসিনার সরকারকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করতে সকলের প্রতি আহবান জানান।




ঝিনাইদহে আব্দুর রউফ কলেজে নবীন বরণ ও উদ্বোধনী ক্লাস অনুষ্ঠিত

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার আব্দুর রউফ ডিগ্রি কলেজে নবীন বরণ ও ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষের একাদশ শ্রেণীর উদ্বোধনী ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ (৮ অক্টোবর) রবিবার সকালে কলেজের শেখ কামাল অডিটরিয়ামে এই উদ্বোধনী ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়।

কলেজের অধ্যক্ষ জে.এম. রবিউল ইসলামের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন উপাধ্যক্ষ বিবেকানন্দ তরফদার, সহকারী অধ্যাপক খুরশীদ মোহাম্মদ সালেহ, জিন্নাত জেসমিন, ইসরাইল হোসেন, মোদাচ্ছের আলী, মোঃ শাহানুর আলম প্রমূখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক মোঃ জাহাঙ্গীর আনাম। অনুষ্ঠানের শুরুতে ২০২৩-২০২৪ শিক্ষা বর্ষের একাদশ শ্রেণীর নবাগত শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়।

উদ্বোধনী ক্লাসে বক্তারা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে এবং স্বনির্ভর জাতি গঠনের জন্য সময়োপযোগী ভূমিকা রাখার জন্য ছাত্রদেরকে বিভিন্ন দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন।

বক্তারা আরও বলেন আজকের ছাত্ররা আগামী দিনের দেশ পরিচালনার নেতৃত্ব দেবে এজন্য তোমাদের সময় উপযোগী প্রযুক্তি নির্ভর মানবিক জ্ঞান অর্জণ করতে হবে। আগামী দিনে তোমাদের হাত ধরেই বাংলাদেশ উন্নত ও কল্যাণ রাষ্ট্রে উপনিত হবে আর তোমরা হয়ে উঠবে এক একজন স্মার্ট নাগরিক।




দীর্ঘ পাসওয়ার্ড কতটা সুরক্ষিত

মেইল বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্ট হ্যাক হবে—এমন জটিলতা নিয়ে অনেকেই চিন্তিত। ফিশিং লিংক বাদেও আপনার ফোনে ম্যালওয়ার এলেই হলো। আর এসবের দায় অনেক সময় মেইল, ফেসবুক বা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের অনলাইন সার্ভিসের ত্রুটি বা নিরাপত্তা ঘাটতির কারণে হয়। আবার অনেক সময় আপনার নিজের অসাবধানতাও দায়ি।

সংঘবদ্ধ চক্র হাতিয়ে নেয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও অর্থ। তাই হ্যাকিং থেকে রক্ষা পেতে অনেকে দীর্ঘ পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেন। মেইল সার্ভিসগুলোও আপনাকে একই কথা বলবে। কিন্তু এই দীর্ঘ পাসওয়ার্ড আপনায় কতটা নিরাপত্তা দিতে পারে? প্রযুক্তি গবেষণাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান স্পেকপস আপনাকে সে উত্তরই দিয়েছে।

তাদের মতে, দীর্ঘ পাসওয়ার্ড ছোট পাসওয়ার্ডের চেয়ে বেশি সুরক্ষা দেয়। তবে দীর্ঘ পাসওয়ার্ড হ্যাকড হয়ে যাওয়ারও অনেক ঘটনা আছে। স্পেকপস সম্প্রতি ৮০ কোটির বেশি হ্যাকড পাসওয়ার্ড নিয়ে গবেষণা করেছে। এসব পাসওয়ার্ডের নানা দিক খতিয়ে দেখা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে দেখা গেছে, ৮০ কোটির মধ্যে ২১ কোটি ২৫ লাখ পাসওয়ার্ডের ক্যারেক্টর ছিল আটটি। তার অর্থ হলো, হ্যাকড হয়ে যাওয়া পাসওয়ার্ডগুলোর প্রায় ৮৫ শতাংশ ১২ ক্যারেক্টরের কম।

মাইক্রোসফটের সিস্টেম সফটওয়্যার বা অ্যাকটিভ ডিকশনারিতে আট ক্যারেক্টরের পাসওয়ার্ডকে ডিফল্ট পাসওয়ার্ড হিসেবে দেখা হয়। অর্থাৎ এটা একটা দুর্বল পাসওয়ার্ড, যা যে কোনো সময় হ্যাকড হতে পারে। স্পেকপস ১২ ক্যারেক্টরের বেশি দীর্ঘ পাসওয়ার্ডকে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড মনে করে। কিন্তু এই ধরনের পাসওয়ার্ড খোয়া যাওয়ার শঙ্কাও অনেক বেশি। গবেষণা প্রতিবেদন জানাচ্ছে, হ্যাকড হয়ে যাওয়া পাসওয়ার্ডগুলোর মধ্যে ১২ কোটি ১৫ লাখ পাসওয়ার্ড ছিল ১২ বা তার বেশি ক্যারেক্টরের। অন্যদিকে ১৬ ক্যারেক্টরের বেশি দীর্ঘ হয়েও হ্যাকড হয়েছিল প্রায় ৩ কোটি ১১ লাখ পাসওয়ার্ড।

দীর্ঘ পাসওয়ার্ড হ্যাকড হওয়ার ঝুঁকি থাকলেও তা আপনার অ্যাকাউন্টকে এখনো ছোট পাসওয়ার্ডের তুলনায় বেশি সুরক্ষা দেয়। স্পেকপসের জ্যেষ্ঠ্য প্রোডাক্ট ম্যানেজার ড্যারেন জেমস বলেন, দীর্ঘ পাসওয়ার্ড তুলনামূলকভাবে ভালো। এটা আইটি বিশেষজ্ঞদের জন্য নতুন কোনো খবর নয়। তবে, দীর্ঘ পাসওয়ার্ড সত্ত্বেও বিভিন্ন ধরনের টোপ (ফিশিং) আপনার সুরক্ষিত ইমেইলে ঢুকে পড়তে পারে। এটাকে ব্যবহার করে আপনার পাসওয়ার্ড হ্যাকড হয়ে যেতে পারে।

সূত্র: স্পেকপস




ইসরাইলে আটকা পড়েছেন বলিউড অভিনেত্রী নুসরাত, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

হাইফা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিতে ইসরাইলে গিয়েছিলেন বলিউড অভিনেত্রী নুসরাত ভারুচা। সেই দেশে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের হামলা চালানোর পর থেকেই অভিনেত্রীকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন তার টিম, পরিবার ও ভক্তরা।

জানা গেছে, সেখানে আটকা পড়েছেন এই বলিউড অভিনেত্রী। অভিনেত্রীর টিমের সঙ্গে সর্বশেষ যোগাযোগে একটি বেসমেন্টে আশ্রয় নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন নুসরাত ভারুচা। কিন্তু তার পর থেকে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না তার সঙ্গে। খবর ইন্ডিয়া টুডের।

নুসরাত ভারুচার টিমের এক সদস্য সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, নুসরাত দুর্ভাগ্যবশত ইসরাইলে আটকা পড়েছেন। হাইফা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দিতে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। শেষবার আজ (শনিবার) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে যখন আমি তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছিলাম, তখন তিনি একটি বেসমেন্টে নিরাপদে ছিলেন। নিরাপত্তার জন্য আর বিস্তারিত প্রকাশ করা যাবে না। তার পর থেকে আমরা সংযোগ করতে পারছিলাম না। তাকে নিরাপদে ভারতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি এবং আশা করি তিনি সুস্থ ও অক্ষত অবস্থায় ফিরে আসবেন।’

গতকাল সকালে দক্ষিণ ইসরাইলের বিস্তীর্ণ এলাকায় হামলা চালায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। প্রথম দফায় ৫ হাজার রকেট ছোড়া হয় বলে দাবি করে হামাস। ইসরাইলে ঢুকে পড়েন হামাসের বন্দুকধারীরা।

এদিকে হামাসের আকস্মিক হামলার পর ইসরাইল গাজা উপত্যকায় একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে। এ পর্যন্ত কমপক্ষে ২৫০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ হাজারের বেশি গাজাবাসী। বড় যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি হিসেবে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী বিপুলসংখ্যক সৈন্য জড়ো করেছে। ইসরাইলি সেনাবাহিনী দীর্ঘ অবরুদ্ধ গাজার সাতটি ভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের তাদের বাড়িঘর ছেড়ে শহরের কেন্দ্রে চলে যাওয়া কিংবা আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে বলেছে।

বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, হামাসের হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ২৫০ জন ইসরাইলি নিহত হইছেন। অন্যদিকে ইসরাইলের পালটা হামলায় গাজায় ২৩০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।




মেহেরপুরে অস্ত্রসহ ভিডিপি মৌলিক প্রশিক্ষণের শুভ উদ্বোধন

বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, মেহেরপুর কর্তৃক আয়োজিত জেলা ভিত্তিক ২১ দিন মেয়াদি অস্ত্রসহ ভিডিপি মৌলিক প্রশিক্ষণ (পুরুষ- ৪র্থ ধাপ) এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ রবিবার (০৮ অক্টোবর) দুপুর ২টার সময় জেলা কার্যালয়ের প্রশিক্ষণ শেডের শ্রেণি কক্ষে এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।

জেলা কমান্ড্যান্ট প্রদীপ চন্দ্রদত্ত প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এর শুভ উদ্বোধন করেন।

এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রদীপ চন্দ্রদত্ত বলেন, প্রশিক্ষিত জনবল সমাজ ও দেশের সম্পদ। এ ধরনের প্রশিক্ষণ বাহিনীর এক চলমান প্রক্রিয়া। তৃণমূল পর্যায়ে বাহিনীর সদস্যরা প্রশিক্ষণ লব্ধ জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে নিজেরা যেমন কর্মসংস্থানের মাধ্যমে নিজেদের আত্মনির্ভরশীল করছে পাশাপাশি দেশের প্রয়োজনে বাহিনীর ডাকে সাড়া দিয়ে বিভিন্ন সামাজিক ও জনহিতকর কর্মকান্ড এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় অনন্য ভূমিকা রাখার মাধ্যমে বাহিনীর সুনাম বয়ে আনছে। উক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রশিক্ষণার্থীরা নিজেদের দক্ষ ও যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলবে এবং আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে, অদূর ভবিষ্যতে দেশের যেকোন প্রয়োজনে বাহিনীর আহবানে সাড়া দিয়ে নিজেদের আত্মনিয়োগ করবে বলে আশাব্যক্ত করেন।

এ সময় কোর্সের সাথে সংশ্লিষ্ট কোর্স অ্যাড জুট্যান্ট গাংনী উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা সাইদুর রহমান, প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মুজিবনগর উপজেলা আনসার কর্মকর্তা মিরাজুল ইসলাম, কোয়ার্টার মাস্টার সিএ মোঃ আল মামুন, সদর টিআই সাগর আহমেদসহ অন্যান্য প্রশিক্ষকগণ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গত ৪ অক্টোবর গঠিত কমিটি কর্তৃক বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জেলার তিনটি উপজেলা হতে ৬৮ জনযোগ্য ও নির্বাচিত প্রশিক্ষণার্থী উক্ত প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে। ৮ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই প্রশিক্ষণ চলবে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত।




৪৫ জনকে নিয়োগ দেবে টিআইবি

জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। প্রতিষ্ঠানটি ফাইন্যান্স অ্যাসিস্ট্যান্ট (শর্ট টার্ম) পদে নিয়োগ দেবে। আগ্রহী যোগ্য প্রার্থীরা ইমেইলে আবেদন করতে পারবেন।

পদের নাম

ফাইন্যান্স অ্যাসিস্ট্যান্ট (শর্ট টার্ম)

পদসংখ্যা

এই পদে সর্বমোট ৪৫জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।

শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা

আগ্রহী প্রার্থীরা যেকোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় হতে বাণিজ্য শাখায় স্নাতক পাস হতে হবে। তবে বাণিজ্য শাখায় (হিসাববিজ্ঞান) মাস্টার্স হলে অগ্রাধিকার পাবেন। শিক্ষা জীবনের কোনো পর্যায়ে তৃতীয় বিভাগ অথবা জিপিএ ২.৫ এর কম (৪ এর মধ্যে)/জিপিএ ৩.০ এর কম (৫ এর মধ্যে) গ্রহণযোগ্য নয়। বয়স সর্বোচ্চ ৩৫ বছর

তত্ত্বাবধান ও মেয়াদ:

ফাইন্যান্স অ্যাসিস্ট্যান্ট (শর্ট টার্ম) এর প্রশাসনিক কাজ তত্ত্বাবধান করবেন সংশ্লিষ্ট এরিয়া কোঅর্ডিনেটর – সিভিক এনগেজমেন্ট এবং হিসাব ও আর্থিক কাজ তত্ত্বাবধান করবেন ডেপুটি কোঅর্ডিনেটর (অর্থ ও হিসাব) – ফিল্ড অফিস সাপোর্ট।

উক্ত পদের মেয়াদ হবে নিযুক্ত হওয়ার দিন হতে ১০ (দশ) মাস। উল্লেখ্য যে, প্যাক্টা প্রকল্পের প্রয়োজন ও ব্যক্তিগত পারফরমেন্স এর উপর ভিত্তি করে মেয়াদ নবায়ন (রিনিউ) করা যেতে পারে।

কর্মস্থল, কর্মঘণ্টা ও ছুটি:

ফাইন্যান্স অ্যাসিস্ট্যান্ট (শর্ট টার্ম) এর কর্মস্থল হবে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) কার্যালয়। উক্ত পদের কর্মঘণ্টা হবে প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা (সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা)।

কর্মদিবস ও সরকারি ছুটিসমূহ টিআইবি কর্মীর ন্যায় একইভাবে চর্চা করবেন। সুপারভাইজারের অনুমোদন সাপেক্ষে প্রতি মাসে সর্বোচ্চ ১.৫ দিন করে নৈমেত্তিক ছুটি উপভোগ করতে পারবেন।

অন্যান্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা:

ন্যূনতম ০১ (এক) বছর সংশ্লিষ্ট কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে।

কম্পিউটার ব্যবহারের মৌলিক জ্ঞানসহ এমএস ওয়ার্ড ও এক্সেল বিষয়ে ব্যবহারিক জ্ঞান থাকতে হবে, বাংলা ও ইংরেজি টাইপিং এর দক্ষতা থাকতে হবে এবং ই-মেইল, জুম ইত্যাদি ব্যবহারে অভিজ্ঞ হতে হবে। প্রত্যক্ষভাবে অর্থ ও হিসাব সংক্রান্ত কাজের অভিজ্ঞতাকে অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে।

পেশাদারিত্ব, সুন্দর বাচনভঙ্গি, যোগাযোগ দক্ষতা, কাজের প্রতি একনিষ্ঠতা প্রার্থীর বিশেষ যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হবে।

ফাইন্যান্স অ্যাসিস্ট্যান্ট (শর্ট টার্ম) হিসেবে দায়িত্ব পালনের বিশেষ শর্তাবলি:

টিআইবির নৈতিক আচরণবিধি, যৌন হয়রানির অভিযোগ ও প্রতিকার নীতিমালা এবং সুরক্ষা নীতিমালা পালন বাধ্যতামূলক। নিয়োগের পর থেকে অবশ্যই ১০ মাসের জন্য দায়িত্ব পালনের প্রস্তুতি রাখতে হবে। যেকোনো ধরনের সুপারিশ প্রার্থীর অযোগ্যতা হিসেবে গণ্য হবে।

কর্মস্থল

বাংলাদেশের যেকোনো স্থানে

বেতন

ফাইন্যান্স অ্যাসিস্ট্যান্ট (শর্ট টার্ম) হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য মাসিক ২২,০০০ টাকা (বাইশ হাজার টাকা মাত্র) ভাতা হিসেবে প্রদান করা হবে। দায়িত্ব পালনের জন্য সকল প্রকার যাতায়াত ও অন্যান্য প্রশাসনিক ব্যয় ব্যতীত অন্য কোনো ভাতা প্রযোজ্য হবে না।

আবেদন প্রক্রিয়া

প্রার্থীরা জীবনবৃত্তান্ত যেখানে পাঠাবেন  vacancy1@ti-bangladesh.org

আবেদনের শেষ তারিখ

১৬ অক্টোবর ২০২৩

সূত্র: বিডিজবস।