গাংনীতে পিএসকেএস কর্তৃক শেখ রাসেল দিবস পালিত

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ সন্তান শেখ রাসেলের ৬০তম জন্মদিন উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠান করেছে বেসরকারি সংস্থা পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতি।

দিবসদি পালনে পলাশী পাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতির প্রধান কার্যালয়সহ ২৬ টি শাখায় দোয়া ও আলোচনা সভা করা হয়।

বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্টে নিহত পরিবারের অন্যান্য সদস্যের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ আলোচনা ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে আলোচনা ও দোয়ার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক মুহঃ মোশাররফ হোসেন, পরিচালক মোহাঃ কামরুজ্জামান, উপ পরিচালক মোঃ কামরুল আলমসহ সংস্থার অন্যান্য কর্মকর্তা/কর্মচারীবৃন্দ।

দোয়া অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বাঁশবাড়ীয়া জামে মসজিদের ঈমাম মওলানা মোহাম¤দ বনি আমিন।




আলমডাঙ্গার গাংনী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের কর্মী সভা অনুষ্ঠিত

আলমডাঙ্গা উপজেলার ৫ নম্বর গাংনী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের উদ্যোগে কর্মী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার সকাল সাড়ে ১০ টায় আসমানখালি মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গণে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে গাংনী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু তাহেরের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়াদ্দার ছেলুন এমপি।

কর্মী সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ছেলুন জোয়াদ্দার বলেন, আগামী নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা হবে। যথা সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই সরকারের ক্ষমতায় থেকেই নির্বাচন হবে। এই কর্মী সভায় আপনারা আপনাদের মুখ দিয়ে যে উন্নয়নের কথা আসলো, এই উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে নৌকায় ভোট দিয়ে পূণরায় আওয়ামীলীগ সরকারকে ক্ষমতায় আনতে হবে। আওয়ামীলীগ যখনই ক্ষমতায় আসে দেশের উন্নয়ন হয় সাধারণ মানুষ শান্তিতে থাকে। আওয়ামীলীগ মানেই উন্নয়ন। আজ কেউ না খেয়ে নেই। মানুষের অভাব নেই, এদেশের মানুষ ভালো আছে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্নসাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম টোটন জোয়াদ্দার, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আলমগীর হান্নান, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম খাঁন, সাবেক জেলা আওয়ামীলীগ যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আরশাদ আলী চন্দন, উপ-প্রচার সম্পাদক শওকত আলী, আলমডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবু মুছা, সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী মাস্টার, সাবেক সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী লিপু মোল্লা।

চুয়াডাঙ্গা পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি আলাউদ্দিন হেলা, সাধারণ সম্পাদক আ.কাদের, সাবেক জেলা যুবলীগের সভাপতি আরেফিন রঞ্জু, সাবেক জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুর রশিদ, সাবেক জেলা কৃষকলীগের সহ-সভাপতি চন্দন,গাংনী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও চেয়ারম্যান মুন্সি এমদাদুল হক, ডা.জয়নাল আবেদিন, আ. রাজ্জার, আ. খালেক, এছার আহমেদ, সামসুর রহমান সামু, মুন্সি মজিবুল হক, চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের সদস্য জহুরুল ইসলাম, এ্যাডঃ মুন্সি সিরাজুল ইসলাম।

গাংনী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাইদ আব্দুল্লাহ’র সঞ্চালনায় আরো উপস্থিত ছিলেন ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি লিমন হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আশাবুল হক, ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি জহুরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক নওশেদ আলী, ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি আমজাদ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান, ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি বেল্টু, সাধারণ সম্পাদক কালু, ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি খাইরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মজিবুল হক। এছাড়া কর্মী সভায় ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।




আলমডাঙ্গায় ইজিবাইকের ধাক্কায় মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মৃত্যু

আলমডাঙ্গার ছত্রপাড়ায় ইজিবাইকের ধাক্কায় আফিয়া (৬) নামের এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। বুধবার বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে উপজেলার ডাউকি ইউনিয়নের ছত্রপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত আফিয়া ছত্রপাড়া গ্রামের আফজাল হোসেনের কন্যা। সে স্থানীয় নুরানি মাদ্রাসার প্রথম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল।

স্থানীয়রা জানায়, আফিয়া বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে মাদ্রাসা থেকে বাড়ি ফিরছিল। পথে রাস্তা পারাপারের সময় একটি ইজিবাইক তাকে চাপা দেয়। এ ঘটনায় স্থানীয়রা ওই ইজিবাইককে ধাওয়া করলে সে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে আলমডাঙ্গা হারদি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আফিয়াকে ভর্তি করেন। তার শারীরিক অবস্থা অবনতি হলে বিকেলে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। পথেই আফিয়ার মৃত্যু হয়। সন্ধ্যার পর পুলিশ আফিয়ার লাশের সুরতহাল রিপোর্ট সংগ্রহ করেছে।

আলমডাঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মারজাহান জানান, শিশু আফিয়ার লাশের সুরতহাল রিপোর্ট সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ঘটনায় শিশুর পিতা বাদি হয়ে আলমডাঙ্গা থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেছেন।




মেহেরপুর কারাগারে ইয়াবার চালান নেয়ার পথে আটক ২ মাদক ব্যবসায়ী

মেহেরপুরে আন্তজেলা ইয়াবা ট্যাবলেট ব্যবসায়ী চক্রের দুই সদস্যকে ৯৫০ পিস ইয়াবাসহ আটক করেছে পুলিশ।

গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১ টার সময় মেহেরপুর সদর পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ এস আই আশরাফুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম মেহেরপুর শহরের পুরাতন বাস টার্মিনাল এলাকায় চট্টগ্রাম থেকে মেহেরপুর এর উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা পূর্বাশা পরিবহনে এ অভিযান পরিচালনা করে, দুই যাত্রীকে তল্লাশি করে তাদের কাছ থেকে কাছ থেকে ৯৫০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে।

আটককৃত মাদক ব্যবসায়ীরা হলো চট্টগ্রামের ভূজপুর উপজেলার মৃত আবুল কাশেমের ছেলে দেলোয়ার হোসেন (৩২) এবং হাবিবুর রহমানের ছেলে হারুনুর রশিদ (৪০)।

পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম থেকে মেহেরপুরে ইয়াবা ট্যাবলেটের একটি বড় চালানো আসছে একটি সুত্র থেকে এমন খবরের ভিত্তিতে মেহেরপুর সদর ফাঁড়ি জেলা গোয়েন্দা বিভাগের সহায়তা নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা পূর্বাশা পরিবহনে অভিযান চালায়। এসময় যাত্রী বেশে আসা মাদক ব্যবসায়ী হারুনর রশিদ ও দেলোয়ার হোসেনকে চ্যালেঞ্জ করে তাদের শরীর ও কাছে থাকা ব্যাগ তল্লাশি করে বিস্কিটের প্যাকেট থেকে ৫৫০ পিস এবং পকেট থেকে ৪০০ পিস সহ মোট ৯৫০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত ইয়াবার বাজার মূল্য আনুমানিক ২ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা।

এদিকে, ঘটনাস্থলের একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী ও নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক কয়েকজন পুলিশ সদস্য জানান, অভিযান চলার সময় মেহেরপুর জেলা কারাগার কারারক্ষী সোহেল তাদেরকে নিতে এসেছিল কিন্তু গাড়ি থেকে নামা মাত্র পুলিশ আসামিদের আটক করায় সেখান থেকে তিনি সটকে পড়েন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে কারারক্ষী সোহেলের মাধ্যমে প্রতি সপ্তাহে মেহেরপুর জেলা কারাগারে অন্তত ২০০০ পিস ইয়াবা প্রবেশ করে। এছাড়াও সোহেল ও আকাশ নামের দুই কারারক্ষী স্থানীয় বুড়িপোতা বর্ডার থেকে নিয়মিত ফেনসিডিলের চালান এনে মেহেরপুর জেলা কারাগারের অভ্যন্তরে অবৈধ মাদক ব্যবসা করে আসছে।

অভিযানের নেতৃত্ব দেয়া মেহেরপুর সদর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আশরাফুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসা বাদে তারা সংঙ্গবদ্ধ আন্তজেলা মাদকদ্রব্য ইয়াবা ট্যাবলেট ব্যবসায়ী চক্রের সদস্য বলে স্বীকার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে মেহেরপুর সদর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে মেহেরপুর জেলা কারাগারের জেল সুপার মনির আহমেদের ফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

পরে জেলার আমানুল্লাহ সাথে ফোনে কথা হলে তিনি জানান, ‘সোহেল নামে জেলা কারাগারে তিন জন স্টাফ রয়েছে। একজনের বিরুদ্ধে কিছু অনৈতিক অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’




আলমডাঙ্গায় বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস পালিত

আলমডাঙ্গায় বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস পালিত হয়েছে। আজ সকাল ১১টায় আলমডাঙ্গা উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে উপজেলা চত্বর থেকে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালী বের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে উপজেলা চত্বরে এসে শেষ হয়।

র‍্যালী শেষে এ সময় দিবসটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরে অনুষ্ঠানে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী আব্দুর রশিদ নিজে হাত ধুয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে হাত ধোয়ার নিয়ম সম্পর্কে অবহিত করেন।

পরে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় উপজেলা নিবার্হী অফিসার স্নিগ্ধা দাসের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আইয়ুব হোসেন।

বিশেষ অতিথি ছিলেন পৌর মেয়র হাসান কাদির গনু, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার সালমুন আহমেদ ডন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজী মারজাহান নিতু, সহকারী কমিশনার (ভূমি) রেজওয়ানা নাহিদ, থানা অফিসার ইনচার্জ বিপ্লব কুমার নাথ। কলেজিয়েট স্কুলের উপাধ্যক্ষ শামীম রেজার উপস্থাপনায় বক্তব্য রাখেন সমাজসেবা অফিসার নাজমুল হোসেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জিয়াউল হক, উপজেলা শিক্ষা অফিসার শামসুজ্জোহা,আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোনায়েম হোসেন,প্রভাসক ড,মাহবুবুর রহমান, উপজেলা প্রকৌশলী আরিফুউদ্দৌলা,সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক রবিউল হক খান, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এনামুল হক, জনস্বাস্থ্য সহকারি প্রকৌশলী আব্দুর রশিদ,আবাসিক প্রকৌশলী মুন্সি জহুরুল হক,উপ-সহকারি প্রকৌশলী রোকুনুজ্জামান, তথ্য কর্মকর্তা স্নিগ্ধা দাস, আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা আজিজুল হাকিম, ইন্সট্রাক্টর জামাল উদ্দিন,বিআরডিবি কর্মকর্তা শায়লা সারমিন,আব্দুল মান্নান, ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা আল মামুন, মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারিস উদ্দিন, মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক হাসিনুর রহমান, হাটবোয়ালিয়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এর অধ্যক্ষ শামীমা নাসরিন, আলমডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি খন্দকার শাহ আলম মন্টু, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার হামিদুল ইসলাম আজম প্রমুখ। সহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।




আলমডাঙ্গায় শেখ রাসেল দিবস উদযাপন

আলমডাঙ্গা উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শেখ রাসেল দিবস উদযাপন উপলক্ষে র‍্যালি, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্টান ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়েছে।

দিবসটির শুরুতে আজ সকাল ১০টায় উপজেলা পরিষদের চত্বরে শেখ রাসেলের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন উপজেলা প্রশাসন।

পুষ্পস্তবক শেষে উপজেলা পরিষদের চত্বর থেকে একটি র‍্যালি বের হয়ে আলমডাঙ্গা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপজেলা চত্বরে এসে শেষে হয়। পরে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে শেখ রাসেলের উপর স্মৃতিচারণ করে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এতে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্নিগ্ধা দাস। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আইয়ুব হোসেন।

বিশেষ অতিথি ছিলেন পৌর মেয়র হাসান কাদির গনু, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার সালমুন আহমেদ ডন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজী মারজাহান নিতু, সহকারী কমিশনার (ভূমি) রেজওয়ানা নাহিদ, থানা অফিসার ইনচার্জ বিপ্লব কুমার নাথ। কলেজিয়েট স্কুলের উপাধ্যক্ষ শামীম রেজার উপস্থাপনায় বক্তব্য রাখেন সমাজসেবা অফিসার নাজমুল হোসেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জিয়াউল হক, উপজেলা শিক্ষা অফিসার শামসুজ্জোহা, উপজেলা প্রকৌশলী আরিফুউদ্দৌলা, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এনামুল হক, জনস্বাস্থ্য সহকারি প্রকৌশলী আব্দুর রশিদ,আবাসিক প্রকৌশলী মুন্সি জহুরুল হক, তথ্য কর্মকর্তা স্নিগ্ধা দাস, আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা আজিজুল হাকিম, ইন্সটেক্টর জামাল উদ্দিন, ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা আল মামুন, মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারিস উদ্দিন, মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক হাসিনুর রহমান, হাটবোয়ালিয়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এর অধ্যক্ষ শামীমা নাসরিন, আলমডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি খন্দকার শাহ আলম মন্টু, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার হামিদুল ইসলাম আজম প্রমুখ।




দর্শনায় গাঁজা ও বাংলামদসহ ৪ যুবক গ্রেফতার

দর্শনা থানা পুলিশ পৃথক পৃথক অভিযান চালিয়ে ২০ লিটার বাংলামদ ১ কেজি গাঁজাসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ।

জানাগেছে আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ বিপ্লব কুমার সাহা’র নেতৃত্বে অভিযান চালায় বিভিন্ন এলাকায়,পুলিশ দর্শনা থানার বেগমপুর ইউনিয়ের আকন্দবাড়িয়া আবাসন প্রকল্পের সামনে।

এ সময় দর্শনা থানার এস আই ফাইম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সঙ্গীয় ফোর্সসহ অভিযান চালায় আকন্দবাড়িয়া আবাসনের পাকা রাস্তার উপর। এ সময় পুলিশ দক্ষিন চাঁদপুর স্টেশনপাড়ার মৃত ঠান্ডু শেখের ছেলে সুজন হোসেন ওরফে রানা (২৫)কে ৫শ গ্রাম গাঁজাসহ আটক করে। অপরদিকে গতকাল মঙ্গলবার রাত ১১ টার দিকে দর্শনা রেল বাজারে দর্শনা থানা পুলিশ মাদক বিরোধী অভিযান চালিয়ে ২০ লিটার বাংলামদসহ দর্শনা ইসলামবাজার পাড়ার শহিদুল ইসলামের ছেলে সোহেল রানা (৩৬) কে গ্রেফতার করেছে।

পুলিশ সুত্রে জানাগেছে গতকাল মঙ্গলবার রাত ১১ টার দিকে দর্শনা রেল বাজার কাঁচা বাজারের ইউনুচের দোকানের সামনে অভিযান চালায় দর্শনা থানার এস আই টিপু সুলতান। পুলিশ দোকানের সামনে থাকা ড্রামভর্তি ২০ লিটার বাংলামদসহ দীর্ঘদিনের মদ ব্যাবসায়ী সোহেল রানাকে গ্রেফতার করে। এদিকে একই দিন অভিযান চালায় দর্শনা পৌরসভার ঈশ্বরচন্দ্রপুর ঈদগা পাড়ায়। পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৫শ গ্রাম গাঁজাসহ ২ জনকে গ্রেফতার করেছে।

পুলিশ জানায় গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে ঈশ্চরচন্দ্রপুর ঈদগাহপাড়ার বাঁশের তৈরি দক্ষিন দুয়ারী রান্না ঘরের ভিতর থেকে মৃত্য আমজাদ মন্ডলের ছেলে গাঁজা ব্যাবসায়ী সোহাগ মন্ডল (৩৭) ও শ্যামপুর গ্রামের নুর ইসলামের ছেলে আব্দুল মোতালেবকে (৩০)গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে দর্শনা থানায় নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। গতকালই তাদেরকে মাদক আইনে মামলাসহ চুয়াডাঙ্গা কোর্ট হাজতে প্রেরন করেছে।




গণমাধ্যমকর্মীদের কল্যাণে কী করেছে আওয়ামী লীগ?

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে গণমাধ্যমের ভূমিকা অনস্বীকার্য। দেশের যুদ্ধপীড়িত জনগণের মনোবল চাঙ্গা রাখতে অনুপ্রেরণামুলক পরিবেশনা রেডিওতে প্রচার করা হতো। রেডিও এর মাধ্যমেই সাধারণ জনগণ স্বাধীনতা যুদ্ধের খবর জানতেন। এছাড়া বিশ্ব জনমত তৈরি করতে বাংলাদেশের পাশাপাশি উন্নত বিশ্বের গণমাধ্যম উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নৃশংসতা বিশ্ববাসীর কাছে তুলেই ধরে গণমাধ্যম।

বাংলাদেশে একটা সময় গণমাধ্যম ও সরকার একে অন্যের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল ছিল । কিন্তু দিন দিন সরকার ও গণমাধ্যমের মধ্যে দূরত্ব বৃদ্ধি পায়। দূরত্ব বৃদ্ধিতে সরকারের যেমন দায় ছিল তেমনি দায় ছিল নির্দিষ্ট কিছু গণমাধ্যমের । বিশেষ করে ৭৫ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। জাতির পিতার হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হওয়ার পর দেশে গণমাধ্যম চাইলে অনেক কিছু করতে পারতো কিন্তু তারা তৎকালীন সামরিক সরকারের সাথে আপোষ করে নেয়। তাদের এই আপোষ করার মানসিকতাকে পুঁজি করে গণমাধ্যমের বাক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে সামরিক শাসক জিয়া, এরশাদ ও বিএনপি।

বাংলাদেশে গণমাধ্যম শুরু থেকেই মিশ্র অবস্থার মধ্য দিয়ে গেছে। সাংবাদিকরা কেমন থাকবে এটা নির্ভর করে ক্ষমতায় কোন দল আছে তার উপর। সামরিক শাসনের সময় সাংবাদিকতা সবচেয়ে কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে গেছে। সার্বিক তথ্য উপাত্ত দেখলে জানা যায় অন্যান্য শাসনামলের চেয়ে আওয়ামী লীগের সময় সাংবাদিকরা বেশি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে।

আওয়ামী লীগ সরকার সরকারে থাকুক কিংবা না থাকুক গঠনমূলক সমালোচনা মেনে নেয়। যা তাদের রাজনৈতিক সহিষ্ণুতার বহিঃপ্রকাশ। আওয়ামী লীগের সময় গণমাধ্যমের বিকাশ চোখে পরার মতো। সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণের যে স্বপ্ন দেখছে তা বাস্তবায়নে গণমাধ্যমের ভুমিকা গুরুত্বপূর্ণ হবে। সরকার এবং জনগণের মাঝে সেতু বন্ধন হিসেবে কাজ করে গণমাধ্যম ।

১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল বিএনপি। এসময়ে সরাদেশে অন্তত ২০ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়। আর ৪৫০ জন সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হন। শুধুমাত্র ২০০২ ও ২০০৩ সালের মধ্যে ১৫৮ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়৷ কুষ্টিয়ায় মানবকণ্ঠের এক সাংবাদিকের আঙুল কেটে নেওয়া হয়েছিল৷ ইকবাল সোবহান চৌধুরীর নেতৃত্বে হওয়া সাংবাদিকদের এক সমাবেশে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়েছিল৷ বিএনপি আমলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল একুশে টিভি, এই চ্যানেলের চট্টগ্রাম স্টেশনে ছাত্রদলের ক্যাডাররা ঢুকে সাংবাদিকদের পিটিয়েছিলো। বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর বাসসের ৪০ জন সাংবাদিকের চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে। রেডিও, টেলিভিশনের অনেক সাংবাদিককে চাকুরি ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিলো।
সেসময়ে কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপির আমলে ২০০১ সালে দক্ষিণাঞ্চলে কোনো সাংবাদিক যেতে পারতো না। কোনো সংবাদ পরিবেশন করতে পারতো না। একমাত্র জনকণ্ঠ পত্রিকা জোর করে কিছু সংবাদ পরিবেশন করতো। তাদের কিছু সাংবাদিক গোপনে যেত এবং তথ্য আনতো। পরবর্তীতে তাদের দেখাদেখি অনেক পত্রিকা সংবাদ পরিবেশন শুরু করে। এটা হলো বাস্তবতা। গৌরনদী থেকে একটা গ্রুপ কোটালিপাড়ায় এসে আশ্রয় নিয়েছে ৭১’ এর মতো। বিএনপির নির্যাতনের সঙ্গে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেই নির্যাতন চালিয়েছিল শুধু সেটার সঙ্গেই তুলনা করা যায়।’

শাহরিয়ার কবির বাংলাদেশে মানবাধিকার বিষয়ক সাংবাদিক হিসেবে বহু বছর ধরে লেখালেখি করছেন। সরকার কর্তৃক বেআইনি আক্রমণ বলে অভিহিত করা হলেও ২০০০-এর দশকের শুরুর দিকে তাকে দুবার গ্রেপ্তার করা হয়। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এর খালেদা জিয়া সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০১ সালের নভেম্বরে তিনি প্রথম গ্রেপ্তার হন। তিনি ২০০১-এর অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর হামলার তদন্ত করছিলেন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যুদ্ধাপরাধে অংশ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মন্ত্রীকে অভিযুক্ত করলে সরকার তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ এবং “সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার” অভিযোগ আনে। অতঃপর ২০০২ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি জামিনে মুক্তি পান। পরের মাসে ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে তার জন্য আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বোমা নিক্ষেপ করা হলে এক প্রত্যক্ষদর্শী নিহত হয়।

বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর বাসসের ৪০ জন সাংবাদিককে বিনা নোটিশে চাকরিচ্যুত করেছিল, বিএনপির আমলেই খুলনায় হুমায়ন কবির, মানিক, হারুনসহ অনেক সাংবাদিক খুন হয়েছেন এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। জিয়া-খালেদাসহ যারাই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলো সবার আমলেই সাংবাদিকরা নির্যাতিত এবং খুন হয়েছেন। তাদের সময় সাংবাদিকদের কোনো স্বাধীনতা ছিলো না।

২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন করে এবং তথ্য কমিশন প্রতিষ্ঠা করে। যুগান্তকারী এ উদ্যোগের মাধ্যমে কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে গণমাধ্যমকর্মীসহ আপামর জনসাধারণের জন্য চাহিদা অনুযায়ী তথ্য পাওয়ার একটি আইনি কাঠামো প্রতিষ্ঠিত হয়। সরকারি-বেসরকারি অফিসে আইনে বেঁধে দেয়া সময়সীমার মধ্যে সাংবাদিকদের চাহিদা মোতাবেক তথ্য দিতে বাধ্য। এভাবে আইনটি এসব অফিসের কার্যক্রম পরিচালনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।

দুর্নীতি দমনে গণমাধ্যমের ভূমিকাকে আরও শক্তিশালী করতে সরকার পেনাল কোড সংশোধন করেছে। সংশোধিত পেনাল কোডের অধীনে সম্পাকদের বিরুদ্ধে কোনো মানহানি মামলায় আদালতের সমন ছাড়া শুধু পুলিশি ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করা যায় না। এ ধরনের আইনি সুরক্ষা দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখতে ভূমিকা রাখছে। সাংবাদিকরা এখন একেবারে নির্ভয়ে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। সাংবাদিক, লেখক ও ব্লগারদের ওপর কুচক্রীমহল, সাম্প্রদায়িক অপশক্তি ও জঙ্গিদের হামলার ঘটনায় কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাগ্রহণের প্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের ওপর এ ধরনের হামলা অনেক কমে এসেছে। পত্রপত্রিকা সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে নিয়ে গঠিত বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল সংবাদপ্রকাশের প্রেক্ষিতে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। সংবাদপত্রের মালিকরা বিদেশ থেকে বিনাশুল্কে নিউজপ্রিন্ট ও অন্য প্রিন্টিং সামগ্রী আমদানি করতে পারেন।

সাংবাদিকদের ওয়েজবোর্ডের ঘোষণা অনুযায়ী বেতন-ভাতা দিয়ে থাকেন মালিকরা। সরকার, সাংবাদিক ও মালিক প্রতিনিধিদের নিয়ে ইতোমধ্যে নবম ওয়েজবোর্ড গঠন করা হয়েছে। সরকার বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোর সাংবাদিক, ক্যামেরাপারসন ও অন্য সহযোগী কর্মীদের ওয়েজবোর্ডে অন্তর্ভুক্তির কথা ভাবছে।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় গণমাধ্যমকে আরও গণমুখী করতে জাতীয় অনলাইন নীতিমালা অনুসরণে এ পর্যন্ত ৮৫টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং দেশের প্রতিষ্ঠিত ৯২টি পত্রিকার অনলাইন নিউজ ভার্সনকে অনুমোদন দিয়েছে। তথ্য অধিদফতর মন্ত্রণালয় অনুমোদিত এসব অনলাইন নিউজ সার্ভিসের নিবন্ধন তদারকি করছে। এ ধরনের আরও অনলাইন গণমাধ্যম অনুমোদন দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এসব অনলাইন গণমাধ্যম দেখভালের দায়িত্বে থাকবে জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা ২০১৪ অনুসরণে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের আওতায় প্রতিষ্ঠিতব্য স্বাধীন সম্প্রচার কমিশন।

সরকারের গণমাধ্যমবান্ধব নীতির সুবাদে সারাদেশে বিপুল সংখ্যক পত্রপত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে। চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী দেশে মিডিয়াভুক্ত পত্রপত্রিকার সংখ্যা সাতশোর বেশি। এদের মধ্যে দৈনিক পত্রিকা ৫৬০টি, যার মধ্যে ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয় ২৫৫টি। শেখ হাসিনার সরকার ঘোষিত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ দেশে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রসারে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। রাষ্ট্রপরিচালিত বাংলাদেশ টেলিভিশনের পাশাপাশি বিটিভি ওয়ার্ল্ড, বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্র (সিটিভি) ও সংসদ টেলিভিশন সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সিটিভির অনুসরণে অন্যসব বিভাগে পর্যায়ক্রমে টিভিকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।

বাংলাদেশ বেতার ১২টি আঞ্চলিক কেন্দ্রের মাধ্যমে সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের পাশাপাশি সরকার এ পর্যন্ত ৪৫টি বেসরকারি টিভি চ্যানেল, ২৭টি এফএম বেতার ও ৩১টি কমিউনিটি বেতারকে লাইসেন্স প্রদান করেছে। এর মধ্যে ৩১টি বেসরকারি টিভি চ্যানেল, ২২টি এফএম বেতার ও ১৭টি কমিউনিটি বেতারকেন্দ্র বর্তমানে সম্প্রচারে রয়েছে এবং অন্যরা সম্প্রচারের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাংলাদেশ টেলিভিশনের অনুষ্ঠান ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ থেকে দূরদর্শন ফ্রি ডিসের মাধ্যমে সারা ভারতে সম্প্রচার করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর উৎক্ষেপণ দেশের গণমাধ্যম অঙ্গনকে শক্তিশালী করেছে। দেশে টিভি চ্যানেলগুলো এখন অনেক কম খরচে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ব্যবহার করে সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপেণ করা হলে এ সুবিধা আরও বৃদ্ধি পাবে।

দেশে ক্রমবর্ধমান গণমাধ্যম অঙ্গনের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে আওয়ামী লীগ সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পেশাগত মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে সারাদেশে সাংবাদিকদের জন্য প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোত সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম বিষয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারীরা বিভিন্ন মিডিয়া হাউজে কাজের সুযোগ পাচ্ছেন। ইলেকট্রনিক মিডিয়ার জন্য দক্ষ জনবল তৈরি করতে ২০১৪ সালে সরকার বাংলাদেশ সিনেমা এবং টেলিভিশন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশিক্ষণে নিয়োজিত প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ ও জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের সম্প্রসারণ করা হয়েছে।

গণমাধ্যমকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের লক্ষ্যে রাজধানীর সার্কিট হাউজ রোডে ১০৪ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৬ তলাবিশিষ্ট তথ্যভবন নির্মাণ করা হয়েছে। জেলা পর্যায়ে অত্যাধুনিক তথ্য কমপ্লেক্স নির্মাণে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। সাংবাদিকদের পেশাগত সহায়তা প্রদানকারী শীর্ষ সরকারি সংস্থা- তথ্য অধিদফতর সিলেট, বরিশাল, ময়মনসিংহ ও রংপুরে বিভাগীয় অফিস স্থাপন করছে। এর মাধ্যমে সকল বিভাগে তথ্য অধিদফতরের কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হয়।

প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া- উভয় গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা তাদের নিজেদের কর্মস্থলে চাকরির অনিশ্চয়তায় ভোগেন, আর তাও স্বাধীন গণমাধ্যমের জন্য হুমকি। তাদের চাকরির এ অনিশ্চয়তা দূর করতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় প্রণয়ণ করতে যাচ্ছে গণমাধ্যমকর্মী (চাকরির শর্তাবলি) আইন যা বর্তমানে অনুমোদনের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। সাংবাদিকদের আবাসনের জন্য বিশেষ প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন গণমাধ্যমবান্ধব বর্তমান সরকারের আরেকটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। সরকারি অনুদানে পরিচালিত এ ট্রাস্টের আওতায় ২০১১-১২ সাল থেকে পাঁচ হাজার ২৬৩ জন অসচ্ছল সাংবাদিককে ১৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে।

করোনা মহামারিতেও সাংবাদিকদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন। করোনাভাইরাস মহামারিতে আক্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত প্রতি সাংবাদিক পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে মোট তিন কোটি ৬৬ লাখ ১০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে। করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত সাংবাদিকদের জন্য বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টকে ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুদান হিসেবে ১০ কোটি টাকা প্রদান করেন, যা বর্তমানে বিতরণ করা হচ্ছে।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী।




বাংলাদেশের উন্নয়ন ও রেমিট্যান্স: দৃষ্টিভঙ্গি এবং চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। বাংলাদেশ গত কয়েক দশক ধরে একটি উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এই রূপান্তরের পেছনে অন্যতম চালিকাশক্তি হল বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসীদের কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে রেমিট্যান্স প্রবাহ।

প্রবাসী শ্রমিকদের অর্জিত অর্থ এবং তা নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ফলে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে । বিদেশে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি কর্মরত রয়েছে।

তারা যে অর্থ দেশে পাঠায় তা দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। রেমিট্যান্স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশের মাথাপিছু আয় এবং মোট জিডিপিও বৃদ্ধি পায়। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। প্রবাসী আয়ের অর্থ দেশের দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য নিরাপত্তা, শিশুর পুষ্টি ও শিক্ষার ক্ষেত্রেও অবদান রাখছে।

বিভিন্নি দেশে বসবাসরত রেমিট্যান্স যোদ্ধারা ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ হাজার ৮২০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন, যা বিগত বছরগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। করোনা মহামারির কারণে রেমিট্যান্স কমে যাবে বলে ধারণা করা হলেও তা হয়নি। সরকারের নানামুখী তৎপরতার কারণে প্রবাসীদের একমাত্র ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে হয়। যার ফলে ২০২০-২১ অর্থবছরে সব মিলিয়ে প্রবাসী আয় এসেছিল প্রায় ২ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার, যা পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৩৬ শতাংশ বেশি।

এই তহবিলগুলি প্রায়শই স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, আবাসন এবং ছোট ব্যবসায় বিনিয়োগের মতো প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া, রেমিট্যান্স পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে অবদান রাখে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বিভিন্ন সময় প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্দাদেরকে, হুন্ডির পরিবর্তে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিটেন্স পাঠাতে এবং দেশে বিনিয়োগ করতে আহ্বান করেছেন। প্রবাসী আয় বৃদ্ধিপেলে ব্যবসার বৃদ্ধি ঘটবে , কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং অর্থনৈতিক প্রসার ঘটবে যা বাংলাদেশের সামগ্রীক উন্নয়নে ভূমিকা পালন করবে। এছাড়াও রেমিট্যান্স দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকেও শক্তিশালী করবে যা স্থানীয় মুদ্রায় স্থিতিশীলতা প্রদান এবং বাণিজ্য ঘাটতি মোকবেলায় সহায়তা করবে।

রেমিট্যান্স নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য একটি আশীর্বাদ। তবে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জও রয়েছে যা মোকাবেলা করা প্রয়োজন। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে এবং রেমিট্যান্স যেন বৈধ পথে আসে তার ব্যবস্থা করতে হবে। আরেকটি চ্যালেঞ্জ রেমিট্যান্স তহবিলের কার্যকর ব্যবহার। এই তহবিলগুলি অর্থনীতির উত্পাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করা হয় তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর পাশাপাশি সঞ্চয়কে উৎসাহিত করা, আর্থিক সাক্ষরতার প্রচার করা এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং ছোট ব্যবসায় বিনিয়োগের জন্য আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া রেমিট্যান্সের ইতিবাচক প্রভাবকে সর্বাধিক করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।

টেকসই উন্নয়নের জন্য রেমিট্যান্সের পূর্ণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে বাংলাদেশ বেশ কিছু কৌশলগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। প্রথমত, শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগ অত্যাবশ্যক। কর্মশক্তির দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে, বাংলাদেশ নিশ্চিত করতে পারে যে তার প্রবাসী শ্রমিকরা বিদেশে উচ্চ বেতনের চাকরি নিশ্চিত করতে পারে, যার ফলে রেমিটেন্স বৃদ্ধি পায়। তদুপরি, দক্ষ শ্রমিকরা তাদের ফিরে আসার পরে দেশের অর্থনীতিতে অর্থপূর্ণ অবদান রাখার সম্ভাবনা বেশি।

দ্বিতীয়ত, উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য একটি সক্ষম পরিবেশ তৈরি করতে হবে যোতে করে রেমিট্যান্সের টাকা দেশীয় বিনয়োগে প্রভাব রােখতে সক্ষম হয়। অনেক রেমিট্যান্স গ্রহণকারী পরিবার তাদের নিজস্ব ব্যবসা শুরু করতে চায়। তাদের আর্থিক সংস্থান, মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম এবং বাজারের সংযোগে অ্যাক্সেস প্রদান করা তাদের সফল উদ্যোগ প্রতিষ্ঠার ক্ষমতা দিতে পারে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের উদ্যোগ (এসএমই) সমর্থন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে পারে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করতে পারে এবং দারিদ্র্য হ্রাস করতে পারে।

তৃতীয়ত, দেশের আর্থিক অবকাঠামো শক্তিশালী করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রেমিট্যান্স লেনদেনের জন্য আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহারে উৎসাহিত করা স্বচ্ছতা বাড়াতে পারে, খরচ কমাতে পারে এবং তহবিলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। বৈদেশিক মুদ্রার সংকট কাটানোর অন্যতম সহজ উপায় রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানো। আর বৈধ উপায়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে প্রবাসীদের জন্য রেমিট্যান্স পাঠানো সহজ করতে হবে। তবে সুবিধাভোগীদের কাছে তা নিরাপদে ও তাৎক্ষণিকভাবে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্লাটফর্মই হতে পারে সবচেয়ে ভালো মাধ্যম। আর্থিক অন্তর্ভুক্তির উদ্যোগ, যেমন মোবাইল ব্যাঙ্কিং এবং ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমগুলি, বিশেষ করে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য ব্যাঙ্কিং পরিষেবাগুলিতে সহজে অ্যাক্সেসের সুবিধা দিতে পারে।

সর্বশেষ, সামাজিক কল্যাণমূলক কর্মসূচিতে বিনিয়োগ অভিবাসী শ্রমিকদের পরিবারের মুখোমুখি হওয়া আর্থ-সামাজিক চ্যালেঞ্জগুলিকে প্রশমিত করতে পারে। সাশ্রয়ী মূল্যের স্বাস্থ্যসেবা, মানসম্পন্ন শিক্ষা এবং সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী রেমিট্যান্স গ্রহণকারী পরিবারের সামগ্রিক যেমন উন্নত করতে পারবে টিক তেমনি, দারিদ্র্যের দুষ্ট চক্র ভেঙ্গে এবং আরও ন্যায়সঙ্গত সমাজ গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।

উদ্ভাবনী বাংলাদেশ বিনির্মাণে জনগণের দোরগোড়ায় সহজে, দ্রুত ও স্বল্প ব্যয়ে সরকারি সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ৪৫০১টি ইউনিয়নে একযোগে ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্র উদ্বোধন করেন যা বর্তমানে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (UDC) নামে সুপরিচিত।

ইউনিয়ন পর্যায়ে UDC গুলো নাগরিকবৃন্দের জীবনমান পরিবর্তনে ইতিবাচক অবদানের ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে দেশের ৩২৮টি পৌরসভায় পৌর ডিজিটাল সেন্টার (PDC) এবং ১১টি সিটি কর্পোরেশনের ৪৬৫টি ওয়ার্ডে নগর ডিজিটাল সেন্টার (CDC), ২০১৮ সালে বিশেষ জনগোষ্ঠীর চাহিদার আলোকে ৬টি স্পেশালাইজড ডিজিটাল সেন্টার (SDC) (গার্মেন্টস কর্মীদের জন্য গাজীপুরে ৫টি এবং মৎসজীবী শ্রমিকদের জন্য খুলনার রুপসায় ১টি) এবং সৌদি আরবে ১৫টি এক্সপাট্রিয়েট ডিজিটাল সেন্টার (EDC) চালু করা হয়েছে।

বর্তমানে দেশব্যাপী ৮২৯৭ টি ডিজিটাল সেন্টারে কর্মরত ১৬০৮৭ জন উদ্যোক্তা ব্যাংকিং এবং ই-কমার্স সেবাসহ ৩২০ -এর অধিক সরকারি-বেসরকারি সেবা প্রদান করছেন। ডিজিটাল সেন্টার থেকে ২০২০ সাল নাগাদ মোট সেবা প্রদান করা হয়েছে ৬৮.৪ কোটি। সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে নাগরিকদের ১.৬৮ বিলিয়ন সমপরিমাণ কর্ম ঘন্টা, ৯.২৫ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ খরচ এবং ০.৫ বিলিয়ন সমপরিমাণ যাতায়াত সাশ্রয় হয়েছে। নাগরিকদের জীবনমান পরিবর্তনে ইতিবাচক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ডিজিটাল সেন্টার ২০১৪ সালে ই-গভর্নমেন্ট ক্যাটাগরিতে জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (ITU)-এর ওয়ার্ল্ড সামিট অন ইনফরমেশন সোসাইটি (WSIS) অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছে। এই ডিজিটাল সেন্টার গুলোকে যথাযথবাবে কাজে লাগাতে পারলে রেমিট্যান্স আসা যেমনন সহজতর হবে ঠিক তেমনি বাংলাদেশের উন্নতির পথ ও সুগম হয়ে উঠবে।

বাংলাদেশের উন্নয়নে রেমিট্যান্স নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এতদসংশ্লিষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং রেমিট্যান্সের ইতিবাচক প্রভাব সর্বাধিক করার জন্য প্রয়োজন কৌশলগত পরিকল্পনা, উদ্ভাবনী সমাধান এবং শক্তিশালী কাঠামো, এবং অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যতা । বিশ্ব বাজারে শ্রমিকের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রবাসী আয় আরো বৃদ্ধি করা সম্ভব। সরকার প্রবাসী আয়ে প্রণোদনার পরিমাণ আরো বাড়াতে পারে। এটি অনানুষ্ঠানিক মাধ্যমে অর্থ প্রেরণ কমাতে সাহায্য করবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশীয় শ্রমিকের বড় একটি অংশ যেহেতু অদক্ষ, তাদের দক্ষ করে তুলতে হবে যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে। তাহলে অভিবাসী শ্রমিকরা শ্রমের যথাযথ মূল্যায়ন পাবেন— রেমিট্যান্স বাড়বে। রেমিট্যান্স বাংলাদেশের জন্য যে সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে; সরকার রেমিট্যান্স খাতে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে এ খাতকে আরো প্রসারিত করতে পারে।

লেখক: প্রভাষক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।




সমুদ্র সম্পদের ঝাঁপি খুলছে সরকার, নানা পর্যায়ে চলছে গবেষণা

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরিতে অর্থনীতির প্রধান হাতিয়ার হতে পারে মেরিটাইম বা সমুদ্র সম্পদের খাত। এই খাত পুরোপরি কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশের রিজার্ভ দাঁড়াতো ২০০ বিলিয়ন ডলারে।

খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ব্লু ইকোনোমি সেলের গবেষণায়ও আসছে নানান সম্ভাবনার তথ্য। শুরুতেই তারা বলছে, ভূরাজনৈতিকভাবে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র বঙ্গোপসাগরে অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে ব্লু ইকোনমি কান্ট্রির এলিট ক্লাবে। এতে সমুদ্রে লুকিয়ে থাকা অপরিমেয় সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের সামনে তৈরি হয়েছে অর্থনৈতিক উন্নয়নের অমিত সম্ভাবনা।

গবেষণা বলছে, ঐতিহাসিকভাবেই বিশ্বে গুরুত্ব পায় বঙ্গোপসাগর। এর নিচে রয়েছে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের বিশাল মজুত। এরই মধ্যে মিয়ানমারের আরাকান উপকূলীয় এলাকায় বড় বড় অনেক গ্যাস ক্ষেত্রের সন্ধান মিলেছে। এরইমধ্যে এই সমুদ্র অঞ্চলের সম্পদ আহরণে আগে প্রয়োজনীয় জরিপ, অনুসন্ধান ও গবেষণা করা হয়েছে। নিবিড়ভাবে কাজ করছে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ বানৌজা অনুসন্ধান এবং বিএনটি খাদেম। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, সমুদ্রসীমা বিজয়ের মাধ্যমে ব্লু ইকোনমির ক্ষেত্রে সমুদ্রে প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ দুই ধরনের সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ পেয়েছে বাংলাদেশ। এরই ধারাবাহিকতায় প্রায় দুবছর গবেষণার পর বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের একান্ত সমুদ্র এলাকায় বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান উদ্ভিজ এবং প্রাণিজ সম্পদের খোঁজ পায়।

এ গবেষণায় যুক্ত ছিলো যুক্তরাজ্য ও নেদারল্যান্ডসের প্রতিষ্ঠান। এতে দেখা গেছে, বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় বিপুল পরিমাণ গ্যাস হাইড্রেট ছাড়াও ২২০ প্রজাতির সি-উইড বা শ্যাওলা, ৩৪৭ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, ৪৯৮ প্রজাতির ঝিনুক, ৫২ প্রজাতির চিংড়ি, ৫ প্রজাতির লবস্টার, ৬ প্রজাতির কাঁকড়া এবং ৬১ প্রজাতির সি-গ্রাস রয়েছে।

মূল্যবান হাইড্রেট বা মিথেন গ্যাস সম্পর্কে পরারাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও জানায়, বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় এর জমাট স্তর পাওয়া গেছে। যা ১৭-১০৩ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফুট প্রাকৃতিক গ্যাস মজুতের সমান। এ বিপুল পরিমাণ গ্যাস হাইড্রেট-এর উপস্থিতি ও মজুতের সম্ভাবনা আগামী শতকে বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের সামগ্রিক চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশে গভীর ও অগভীর সমুদ্রসীমায় মোট ২৬টি ব্লক রয়েছে। সেসব ব্লকে তেল ও গ্যাস রয়েছে কিনা, সেজন্য বাংলাদেশের বাপেক্স ও কয়েকটি বিদেশি কোম্পানি অনুসন্ধান করছে।

১৯৯৬ সালে সমুদ্রের নয় নম্বর ব্লকে সাঙ্গু গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করে গ্যাস উত্তোলন শুরু করেছিল কেয়ার্নস এনার্জি। তবে গ্যাস ফুরিয়ে যাওয়ায় ২০১৩ সালে সেটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। তেল-গ্যাস ছাড়াও বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশে সালফার, মেটালিক মডিউল ও কোবাল্ট পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরে তেল গ্যাস অনুসন্ধানে প্রায় সোয়া তিন লাখ কোটি টাকা বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের তেল-গ্যাস অনুসন্ধানকারী কোম্পানি এক্সন মবিল। প্রতিষ্ঠানটি জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের কাছে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিয়েছে। সমুদ্রে প্রায় সাত হাজার মিটার পর্যন্ত গভীরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের অভিজ্ঞতা ও সক্ষমতা আছে এক্সন মবিলের। এক্সন দক্ষিণ আমেরিকার দেশ গায়ানাতে মবিল তেল অনুসন্ধান ও উত্তোলন করেছে। এর মাধ্যমে গায়ানা এখন পৃথিবীর অন্যতম তেলসমৃদ্ধ দেশে পরিণত হয়েছে।
প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেল ছাড়াও চুনাপাথর ও মূল্যবান খনিজ বালু; যেমন জিরকন, রোটাইল, সিলিমানাইট, ইলমেনাইট, ম্যাগনেটাইট, গ্যানেট, কায়ানাইট, মোনাজাইট, লিক্লোসিন ইত্যাদি এ রকম ১৭ ধরনের খনিজ বালু রয়েছে বঙ্গোপসাগরে। এ সবের মধ্যে মোনাজাইট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া সিমেন্ট বানানোর উপযোগী প্রচুর ক্লে রয়েছে সমুদ্রের তলদেশে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুসারে, বিশ্বে প্রতিবছর ৮ কোটি ৪৪ লাখ টন খাদ্যের যোগান দেয় সমুদ্র। বিশ্বে মানুষের গ্রহণ করা ক্যালরির ২ ভাগ ও প্রোটিনের ১৫ ভাগের যোগান দিচ্ছে সামুদ্রিক মাছ, উদ্ভিদ ও জীবজন্তু। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘সেভ আওয়ার সি’র তথ্য অনুসারে, প্রতিবছর বঙ্গোপসাগর থেকে ৬০ লাখ টন মাছ ধরা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের জেলেরা ধরতে পারছেন মাত্র ৭ লাখ টন মাছ। বাংলাদেশের জেলেরা সমুদ্র থেকে মূলত বিভিন্ন ধরনের মাছ ও চিংড়িই বেশি ধরেন। কারণ খাবার হিসাবে বাংলাদেশিদের ভেতরে এগুলোর চাহিদাই বেশি।

বাংলাদেশের স্থানীয় বাজারে তেমন একটা চাহিদা না থাকলেও অক্টোপাস, কাঁকড়া বা স্কুইডের মতো বিভিন্ন সামুদ্রিক জলজ প্রাণীও প্রচুর পরিমাণ ধরা হয়। বিদেশে প্রচুর চাহিদা থাকায় এসব মাছ রপ্তানি হয়। বাংলাদেশের সমুদ্র থেকে লাক্ষা, রূপচাঁদা ও কালোচাঁদা, টুনা, ম্যাকারেল, লইটা, চ্যাপা, সামুদ্রিক রিটা, শাপলা পাতা মাছ, তাইল্লা, পোয়া, সুরমা, ইলিশ, ছুরি, ফাইস্যা, সামুদ্রিক বাইন ও কই মিলিয়ে খাদ্য হিসেবে ২শ প্রজাতির মাছ ও চিংড়ি নিয়মিত ধরেন বাংলাদেশের জেলেরা।

সমুদ্র অর্থনীতির সর্বোচ্চ সুফল কাজে লাগাতে সমুদ্রজ্ঞানসমৃদ্ধ প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তি তৈরির জন্যে পাঁচটি সরকারি মেরিন একাডেমি কাজ করছে। রয়েছে বেসরকারি আরও কয়েকটি মেরিন একাডেমি। এনিয়ে বিশেষায়িত জ্ঞান আহরণের জন্য রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি। জাহাজ নির্মাণ শিল্পেও বাংলাদেশের সাফল্য ঈর্ষনীয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইদানিং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বলেন, বাংলাদেশ ‘পূর্ব এশিয়া, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পশ্চিমে চীন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মাঝামাঝি হওয়ায় ভারতীয় অঞ্চলসহ আন্তর্জাতিক ব্যবসা বাণিজ্যের অন্যতম ক্ষেত্র হতে পারে। ভূমিকা রাখতে পারে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক হাব হিসেবে। তিনি আরও বলেন ২০৪১ সালের ভেতর উন্নত বাংলাদেশ এবং স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হবে। বাংলাদেশ যদি প্রতি বছর অযাচিত খরচগুলো কমাতে পারে তাহলে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৯৫ বিলিয়ন ইউএস ডলারে উন্নীত করা বেশি কষ্টের বিষয় নয়। সমুদ্র সীমা এবং সমুদ্র বন্দরের আয় কেক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী।