সুপার টাইফুন কং-রে এবং জাহাজে উদ্বেগের কিছু সময়

মেরিন একাডেমী চট্টগ্রামে একটি কথা প্রচলিত আছে মেরিনার্স ডেয়ার টু গো হোয়ার ডেথ ফেয়ারস টু গো। অর্থাৎ মেরিনাররা মৃত্যু ভয় উপেক্ষা করে পৃথিবীতে যে কোন প্রান্তে সাহসিকতার সাথে যেতে সক্ষম। আমি জাহাজ নিয়ে গত ৩১ শে অক্টোবর ২০২৪ তারিখে তাইওয়ান এর একটি পোর্ট কাউশিউং এ সুপার টাইফুন কং-রে এর কবলে পড়েছিলাম। অর্থাৎ টাইফুনটি আমাদের খুব কাছে দিয়েই পার হয়ে গিয়েছিল।

টাইফুন বা ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে সৃষ্টি হয়ে ফিলিপাইনের কোস্ট ঘেসে তাইওয়ানের ইস্ট কোস্টে আঘাত হানে এবং তারপর কিছুটা দুর্বল হয়ে চায়নার সাংহাই এর দিকে চলে যায়। আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে এখন অনেক আগে থেকেই জাহাজের ইনমারসেট,ওয়েদার ফ্যাক্স, নেভটেক্স,ইমেইলর মাধ্যমে সার্বক্ষণিক ওয়েদার ফোরকাস্ট, নেভিগেশনাল ওয়ার্নিং ছাড়াও সকল ধরনের সতর্কবাণী পাওয়া যায়। এছাড়াও জাহাজ কোম্পানির মেরিন ডিপার্টমেন্ট থেকে ওয়েদার ইনফরমেশন, ওয়ার্নিং, সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড়ের লাইভ ইমেজ পাঠানো হয় জাহাজকে সতর্ক করার জন্য।

 

সবকিছু পর‌্যবেক্ষণ করেই আমরা জাহাজকে সব সময় নিরাপদে রাখার চেষ্টা করি। লোডিং পোর্ট ব্রাজিল এর সান্তোস থেকে আমরা দ্বীপ রাষ্ট্র তাইওয়ান এর জন্য খাদ্য কর্ন নিয়ে এসেছিলাম। আমরা প্রায় ৭০ হাজার মেট্রিক টন কর্ন কার্গো নিয়ে এসেছিলাম তাইওয়ানের দুইটি বন্দর কাউশিয়ং এবং তাইচুং এর জন্য। আমরা যথারীতি প্রথম বন্দর কাউশিয়ং এ যাই কারগো ডিসচার্জ করার জন্য। ৩০ অক্টোবর ২০২৪ এর বিকেলে কিছু কারগো ডিসচার্জ করার পর বন্দর থেকে কারগো অপারেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়। আমরা ওয়েদার রিপোর্ট এর মাধ্যমে আগে থেকেই জানতাম টাইফুন কং-রে তাইওয়ানে আঘাত হানতে চলেছে। তাই অতিরিক্ত সতর্কতার জন্য বন্দর থেকে আমাদের জাহাজ সহ বাকি সব জাহাজ বার্থ বা জেটি থেকে বের করে দেওয়া হয়। আমরা সার্বক্ষণিক জাহাজ থেকে ওয়েদার রিপোর্ট চেক করতে থাকি এবং পোর্ট অথরিটি, লোকাল এজেন্ট, চার্টারার এবং কোম্পানির সাথে যোগাযোগ রক্ষা করি। আমরা প্রায় এক সপ্তাহ পূর্বেই জেনেছিলাম টাইফুনটি তাইওয়ানে আঘাত হানতে পারে। বর্তমানে ওয়েদার ফোরকাস্ট এর কল্যাণে অনেক আগে থেকেই জাহাজে সতর্কবাণী পাওয়া যায়। বন্দর এর নির্দেশ মতো আমরা জাহাজ আনমুরিং করে আউটার হারবারে ড্রিফটিং করতে চলে যাই।

বার্থ বা জেটিতে থাকা অবস্থাতেই আমরা টাইফুন এর জন্য সব রকম প্রিপারেশন নিয়ে রাখি। সবকিছু সিকিউর করে তারপরেই আমরা আউটার হারবারের দিকে রওনা হই। আউটার হারবারে আমরা জাহাজের ইঞ্জিন দিয়ে ব্যাড ওয়েদার মেনুভারিং করতে থাকি। বাতাস এবং ঢেউকে সামনে রেখে জাহাজ চালাতে থাকি বিপদজনক অবস্থা থেকে বাঁচার জন্য। রাতে ধীরে ধীরে বাতাস এবং ঢেউ বাড়তে থাকে। আমরাও সার্বক্ষণিক বাতাস এবং ঢেউ পর‌্যবেক্ষণ করতে থাকি এবং সেভাবেই জাহাজের হেডিং এডজাস্ট করতে থাকি যাতে জাহাজে খুব বেশি রোলিং পিচিং না হয়। আমরা সকলেই সুপার টাইফুন টিকে নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন ছিলাম যেহেতু টাইফুন টি খুব শক্তিশালী ছিল।

 

ডেক এবং ইঞ্জিন ডিপার্টমেন্ট থেকেও যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছিল। নির্ঘুম কেটেছিল আমাদের সমস্ত নাবিকের রাতটি। এই অবস্থায় জাহাজের ক্যাপ্টেন এর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জাহাজের সকল নাবিকের মনোবল ধরে রেখে সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে জাহাজ কে নিরাপদে রাখা এ সময় ক্যাপ্টেন এর প্রধান দায়িত্ব। কোম্পানির অফিস জাপান থেকেও আমাদের কাছে সতর্কবার্তা দিয়েছিল যাতে আমরা কোন নিরাপদ জায়গায় অবস্থান করি। আমরা একটু পরপরই কোম্পানির কাছে আমাদের অবস্থান জানিয়েছিলাম। ৩১শে অক্টোবর ২০২৪ খুব সকালে থেকেই লক্ষ্য করলাম বাতাস আস্তে আস্তে আরো বেড়ে গেল। বাতাসের গতি ৬০/৭০ নটস বা ঘন্টায় ১১১/১২৯ কিলোমিটার এবং সেই সাথে ঢেউ এর উচ্চতা প্রায় ৭/৮ মিটার হয়ে গেল। জাহাজের স্টিয়ারিং এবং ইঞ্জিন দিয়ে নিরাপদ অবস্থানে থাকার চেষ্টা করলাম। আমাদের মত অনেক জাহাজই এভাবে ব্যাড ওয়েদার মেনুভারিং এ ছিল সে সময়।

সুপার টাইফুন টি ৩১ শে অক্টোবর দুপুরেই তাইওয়ানের ইস্ট কোস্টে ঘন্টায় প্রায় ২৫০ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানে। আমরা তাইওয়ানের ওয়েস্ট কোষ্ট এ ছিলাম এবং টাইফুন টি আমাদের থেকে প্রায় একশ কিলোমিটার দূর দিয়ে পার হয়ে যায়। জানা যায় গত ৫০ বছরের মধ্যে এটি ছিল তাইওয়ান এ আঘাত হানা সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড়। এরফলে বেশ কিছু হতাহতের খবর পাওয়া গিয়েছিল। এছাড়াও বিদ্যুৎবিহীন ছিল সেখানকার কয়েক লক্ষ মানুষ। প্রাণ হানি এড়াতে সেখানকার সরকার টাইফুন আসার পূর্বেই সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছিল। তাইওয়ান এর সিভিল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন থেকে জানানো হয়েছিল প্রায় ৩০০ টিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। সুপার টাইফুন কং-রে তাইওয়ানের পূর্ব উপকূলে আঘাত হেনে আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে যায় এবং প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। পূর্বাঞ্চলের কোন কোন জায়গায় আকস্মিক বন্যা এবং ভূমিধসের সৃষ্টি হয়েছিল। টাইফুনটি কিছুটা উত্তর দিকে যেয়ে দিক পরিবর্তন করে চায়নার সাংহাই এর দিকে চলে যায়। এক সময় সমুদ্রের অবস্থা স্বাভাবিক হয়ে যায় এবং আমরা জাহাজে ইনেস্পেকশন করি।

 

মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে এবং সকল নাবিকের একাগ্রচেষ্টায় এবং সহযোগিতায় আমরা বিপদ হতে মুক্ত হই। জাহাজ, নাবিক এবং লোডেড কার্গোর কোন ক্ষয়ক্ষতি ঘটেনি। যদিও একদিনের অধিক সময় আমাদের খুব উৎকণ্ঠায় কেটেছিল। আমার সী ক্যারিয়ারে এটি ছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি ঘূর্ণিঝড়ের মুখোমুখি হয়েছি যার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এক্ষেত্রেও আমরা নিরাপদে উৎকণ্ঠার সময়গুলো পার করেছি।

সমুদ্রে বাতাসের গতি এবং ঢেউ স্বাভাবিক হয়ে গেলে আমরা পোর্ট কন্ট্রোলের সাথে যোগাযোগ করি এবং তারা কনফার্ম করলে আমরা আবারো বন্দরের ভিতরে প্রবেশ করি এবং বাকি কারগো ডিসচার্জ করে পরবর্তী গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হই।

লেখক: মাস্টার মেরিনার (এ এফ এন আই), এক্স ক্যাডেট, বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি চট্টগ্রাম।




ফরহাদ ও মৃদুলের তিন দিন , বাবলু বিশ্বাসের দুই দিনের রিমাণ্ড

সন্ত্রাস দমন আইন মামলায় সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ও মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরহাদ হোসেন দোদুল ও তাঁর ছোট ভাই সরফরাজ হোসেন মৃদুলের তিন দিন করে এবং ও অপর একটি মামলায় ভগ্নিপতি আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাসের দুই দিন রিমাণ্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

সোমবার সকাল ১১ টা থেকে শুরু হয়ে ঘন্টাব্যাপী শুনানী শেষে মেহেরপুরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের বিচারক শারমিন নাহার এ আদেশ দেন।

মামলায় সরকারি পক্ষে পাবলিক প্রসিকিউটর আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিম, কামরুল হাসান, কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক মানষ রঞ্জন ঘোষম সদর থানার ওসি জাহাঙ্গীর সেলিম এবং আসামি পক্ষে শফিকুল আলম, ইব্রাহিম শাহীন, কাজী শহিদুল হক আইনজীবীর দায়িত্ব পালন করেন।

এদিকে, সাবেক মন্ত্রী, তাঁর ভাই ও ভগ্নিপতিকে আদালতে হাজির করার খবর পেয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী আদালত চত্বর ঘিরে রেখেছে। আদালত্ব চত্বরে অতিরিক্ত পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওপর হামলায় একটি মামলার আসামি হিসেবে তিন জনের ৫ দিন করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সেলিম জাহাঙ্গীর।

আদালতে রিমান্ড শুনানির সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পাবিলক প্রসিকিউটর (পিপি) আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিম, অ্যাড. কামরুল হসান, মারুফ আহম্মেদ বিজন এবং মোখলেছুর রহমান স্বপন উপস্থিত ছিলেন। একইসাথে আসামি পক্ষের আইনজীবী হিসেবে রিমান্ড না দেওয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরেন অ্যাড. খন্দকার আব্দুল মতিন, একেএম শফিকুল আলম,  ইব্রাহিম শাহীন।

এদিকে রিমান্ড শুনানিকালে আদালত প্রাঙ্গেণে বিক্ষোভ করেন বৈষ্যম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিএনপি নেতাকর্মীরা। আসামিদের বিভিন্ন অপকর্ম তুলে ধরে দৃষ্টান্তমূলক সাজা দাবি করেন তারা।

গত ৫ আগষ্ট মেহেরপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওপর হামলার ঘটনায় সদর উপজেলার দরবেশপুর গ্রামের রাশেদুল ইসলাম সন্ত্রাস বিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। ওই মামলার প্রধান আসামি হিসেবে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখিয়ে ২৯ জানুয়ারি রাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মেহেরপুর নিয়ে আসা হয় ফরহাদ হোসেনকে। ১৪ সেপ্টম্বর রাতে রাজধানীর ইস্কাটন এলাকা থেকে হত্যা মামলায় তাকে আটক করেছিল র‌্যাব। তার নামে রাজধানী ঢাকাতে বেশ কয়েকটি হত্যা মামলা রয়েছে। এছাড়াও মেহেরপুরে রয়েছে আরও কয়েকটি মামলা।

এর আগে গত ৩০ জানুয়ারি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উপর হামলার দুটি মামলায় তাঁকে জেল গেটে শোন এ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে এবং একটি মামলায় রিমাণ্ডের আবেদন জানালে বিজ্ঞ বিচারক জেল গেটে দুই দিনের রিমাণ্ড মঞ্জুর করেছিলেন। ২ দিনের রিমান্ড শেষ ফের আদালতে তোলা হলে আদালত আবারও তিন দিনের রিমান্ড দেই।




তামাকে গিলছে ভর্তুকির সার

মেহেরপুরে তিব্র রাসায়নিক সার সংকট তৈরি হয়েছে। সার পেতে কৃষকদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। তবে এই সার সংকট তৈরি হয়েছে অতিমাত্রার তামাক চাষ ও অত্যাধিক ডিএডপি সার ব্যবহারের কারণে বলে জানিয়েছে কৃষি অধিদপ্তর ।

চলতি রবি মৌসুমে মেহেরপুরে ২৫ হাজার হেক্টর কৃষি জমিতে তামাক চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গত বছরেও ২৬ হাজার হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছিলো। পরিবেশবান্ধব টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) সারে ভর্তুকি দেওয়া হলেও সেই সুবিধা নিচ্ছে তামাক কোম্পানিগুলো। কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে বাড়তি সুবিধা পাওয়ায় তামাক চাষে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছেন কৃষকরা।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি কেজি ইউরিয়া সারের বর্তমান দাম ৪৮ টাকা, ডিএপি ৭০, টিএসপি ৫০, এমওপি ৬০ টাকা। ৫ টাকা দাম বৃদ্ধির পরও সরকারকে এখন প্রতি কেজি ইউরিয়ায় ২১ টাকা, ডিএপিতে ৪৯ টাকা, টিএসপিতে ২৩ টাকা ও এমওপিতে ৪০ টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার রাধাগোবিন্দপুর ধলা গ্রামের বাসিন্দা কৃষক মোফাজ্জেল হোসেন । চলতি মৌসুমে তিনি ১১ বিঘা জমিতে তামাক চাষ করছেন। মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, “আমি দুটি তামাক কোম্পানির তালিকাভুক্ত চাষি। প্রতি বিঘা জমিতে তামাক চাষের জন্য কোম্পানি থেকে আমাদের শুধুমাত্র রাসায়নিক সার হিসাবে সালফেট অব পটাশ (এস ও পি) ও বাজার থেকে অন্যান্য সার কেনার জন্য নগদ টাকা দেওয়া হয়েছে। আমার ১১ বিঘা জমিতে ১১০ বস্তা ডিএপি, ২২ বস্তা এমপি, ২২ বস্তা ইউরিয়া, ১১ বস্তা সালফেট প্রয়োজন পড়বে।

একই এলাকার কৃষক জহুরুল ইসলাম বলেন, আমার ৬ বিঘা জমিতে ফুল কপির চাষ করেছি। এই ৬ বিঘা জমিতে টিএসপি, ৬ বস্তা, ডিএপি ৬ বস্তা, এমপি ৩ বস্তা, ইউরিয়া ৩ বস্তা। কিন্তু চলতি মৌসুমে চাহিদা অনুযারী কোন সার পাওয়া যায়নি। সারের অভাবে ফুল কপি সময়মত বৃদ্ধি পাচ্ছে না। এবারে বড় আকারের লোকশানে পড়তে হবে।
গত বছরে নভেম্বর মাসে ডিএপির মোট বরাদ্দ ছিলো ১ হাজার ৯৯৩ মেট্রিকটন। চলতি মৌসুমে ১ হাজার ৫১৭ মেট্রিকটন।
জানতে চাইলে বিসিআইসির ডিলার মিরাজুল হক বলেন, কৃষকেরা সবজি চাষের নামে তামাক চাষে ডিএপি ব্যবহার করছে। এই কারণে ডিএপি সারের সংকট দেখা দিয়েছে। সবজি চাষে তামাক চাষের মত অতিরিক্ত সারের প্রয়োজন পড়ে না। কোন কৃষক কোন ধরনের ফসলের চাষ করছেন তা জানার উপায় থাকে না।

একই এলাকার কৃষক ছাদের আলী । তিনি বলেন, “ডিএপি সার হলো তামাকের প্রাণ। এটি ব্যবহার না করলে তামাকের ভালো ফলন পাওয়া যায় না।” তামাক কোম্পানিগুলো এর আগে সব রকমের সার দিতো। বর্তমানে শুধু মাত্র এস ও পি সার সরবারহ করে। এমওপি, ডিএপি সার এলাকার ডিলারদের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে হয়। বর্তমানে বিশেষ করে ডি এপি সারের চরম সংকট তৈরি হয়েছে। একজন কৃষককে ৫০ কেজির বেশি ডিএপি সার দেওয়া হচ্ছে না। সারের যোগান দিকে কৃষকদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ সামছুল আলম বলেন, মেহেরপুরে তামাকের চাষ হচ্ছে দির্ঘদিন থেকে। সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে তামাক চাষে কৃষকদের অনুৎসাহিত করার জন্য। কিন্তু তামাক কোম্পানির নানান সুবিধার জন্য কৃষকদের মধ্যে তামাক চাষ কমানো সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে ডিএপি সারের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুন শুধুমাত্র তামাক চাষের কারণে।

সবজি,ধান,পাট, গম,পেঁয়াজ, রসুন, আলু চাষে নির্দিষ্ট পরিমানে সার ব্যবহার হয়। অন্যদিকে শুধুমাত্র তামাক চাষে বিঘা প্রতি ৫০০ কেজি ডিএপি সার ব্যবহারের প্রবনতা তৈরি হয়েছে কৃষকদের মাঝে। একারণে অন্যান্য ফসলের জন্য সার পাচ্ছেন না কৃষকেরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বিদেশি তামাক কোম্পানির প্রতিনিধি বলেন, তামাক কোম্পানি কৃষকদের তামাক চাষে সুবিধবার জন্য এসওপি সার বিদেশ থেকে আমদানি করে সরবারহ করে। ডিএপি, এমওপি, ইউরিয়া, জিপসাম সার বাইরে থেকে কেনার জন্য নগদ টাকা দেওয়া হয় ।

সরকারি সার সুপারিশ নির্দেশিকাতে বলা হয়েছে, এক বিঘা ফুল কপির জমিতে ২৯ কেজি ইউরিয়া, ৩৩ কেজি টিএসপি, ১২ কেজি এমওপি সার ব্যবহার করতে হবে। অন্যদিকে একই জমিতে যদি তামাক চাষ করা হয় সেখানে কৃষকেরা বিঘা প্রতি জমিতে শুধুমাত্র ডিএপি ৫০০ কেজি ব্যবহার করছেন। ইউরিয়া ৫০ কেজি, এমওপি ৫০ কেজি ব্যবহার করতে হচ্ছে।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারি ভর্তুকির সার চলে যাচ্ছে তামাক চাষে। অন্যান্য গুরুত্বপর্ণ ফষলের জন্য সার মিলছে না বাজারে। সরকারি ডিলারদের বরাদ্দের চেয়ে বেশি পরিমানে সারের প্রয়োজন পড়ছে শুধুমাত্র তামাক চাষের জন্য। কিন্তু সরকার তামাক চাষের জন্য কোন প্রকারের সারের বরাদ্দ দেয়না।
জেলা সার ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাফিজুর রহমান বলেন, মেহেরপুরে রবি মৌসুমে তামাক চাষের কারণে সার সংকট তৈরি হয়। তামাকে অধিকমাত্রায় সার ব্যবহারের কারণে সবজিসহ অন্যান্য ফসলের জন্য কৃষকদের সার পেতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ করা গেলে সার সংকট তৈরি হবে না।

জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মাসে বিএডিসি ও বিসিআইসি থেকে জেলাতে ইউরিয়া বরাদ্দ ছিলো ৩ হাজার ৯৬৪ মেট্রিকটন, টিএসপি ১ হাজার ৭৮১ মেট্রিকটন, ডিএপি ২ হাজার ৪৫২ মেট্রিকটন, এমওপি সার বরাদ্দ ছিলো ১ হাজার ৮২৪ মেট্রিকটন। চলতি মৌসুমে ভুট্টার চাষ হয়েছে ১৭ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে, গম ১ হাজার ৩৬৫ হেক্টর, বোরো ধান রয়েছে ১৯ হাজার ২৬৫ হেক্টর, পেঁয়াজ রয়েছে ৪ হাজার ৫৬৫ হেক্টর, বিভিন্ন সবজি ৩ হাজার ৫৬০ হেক্টর জমিতে।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এ বছর ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে তামাক চাষ ছলছে। যা গত বছরে ছিলো ২৬ হাজার হেক্টর।

সদর উপজেলার শোলমারি গ্রামের বাসিন্দা প্রান্তিক কৃষত হাসেম মিয়া বলেন, আমাদের এই এলাকায় সবজি চাষ বেশি হয়ে থাকে। ঠিক এই সময়ে এসে তিব্র সারের সংকট দেখা গেছে। আমার ৫ বিঘা ফুল কপি আর বাধাকপি রয়েছে। সারের সংকটে এখনো চাহিদা মোতাবেক সার সংগ্রহ করতে পারিনি। যদিও এলাকার কয়েকটি দোকানে বেশি দামে সার পাওয়া যাচ্ছে।

একই এলাকার বাসিন্দা কৃষক মাজেদুল ইসলাম বলেন, ডিলারের দোকানে গেলে বলে সার নেই। এলাকার দোকানে ১ হাজার ৫০ টাকার ডিএপি সার ১ হাজার ৫০০ টাকা দামে কিনতে হচ্ছে। গত ১৬ বছর ধরে একই রকম দামে আমাদের সার কিনতে হচ্ছে।
সদর উপজেলার কুলবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা সারাফাত হোসেন বলেন, “এলাকায় খুচরা পর‌্যায়ে সার পাওয়া যায়। তবে ফসফেট, পটাশ, ড্যাপের দাম বস্তাপ্রতি ৩০০ টাকা বেশি পড়ে। চলতি মৌসুমে দাম বেশি দিয়ে ও সার পাওয়া যাচ্ছে না”।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেন বলেন, “কৃষি কর্মকর্তারা কখনোই তামাক চাষে কৃষকদের পরামর্শ দেন না। বরং তামাক চাষ থেকে কৃষকদের বের করে আনার পরামর্শ দেন। প্রতি বিঘা জমিতে তামাক চাষে কী পরিমাণ সার ও কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে সেই পরামর্শ তামাক কোম্পানির কৃষিবিদরা দিয়ে থাকেন।” তামাক চাষের কারণে সবজি সহ অন্যান্য ফসলের সার পেতে কৃষকদের ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছ “।

জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরে উপপরিচালক বিজয় কৃঞ্চ হালদার বলেন, “ তামাক চাষ কৃষি জমি ও পরিবেশের জন্য মারাত্তক হুমকি। তামাক চাষে কৃষকদের নানাভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়।




মেহেরপুর জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি পূনর্বিবেচনার দাবিতে গণমিছিল

মেহেরপুর জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি পূনর্বিবেচনার দাবিতে গাংনীতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও গণমিছিল করেছে বিএনপির একাংশ।
আজ রবিবার (২ ফেব্রুয়ারী) বিকাল ৫ টার দিকে গাংনী হাসপাতাল বাজার বিএনপির অফিসের সামনে থেকে গণমিছিলটি শুরু হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়।

বিএনপির মেহেরপুর জেলা আহবায়ক কমিটির সদস্য ও গাংনী উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবলুর নেতৃত্বে গণমিছিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মাসুদ অরুন।

অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক জাহাঙ্গীর বিশ্বাস, মেহেরপুর জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি মতিয়ার রহমান মোল্লা, গাংনী পৌর জাসাসের সাধারণ সম্পাদক সুলেরী আলভী, মেহেরপুর জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি নাজমুল হোসাইন, মেহেরপুর জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি মফিজুল ইসলাম, যুবদল নেতা শাহিবুল ইসলাম ও মেহেরপুর জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি রেজওয়ানুল হক ইমন প্রমুখ।

গণমিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাসুদ অরুণ বলেন, বর্তমান কমিটি অবৈধ। এই অবৈধ কমিটি যদি জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন কমিটি তৈরি করে তাহলে আমরা তা মানবো না। আমরাও নতুন কমিটি ঘোষণা করবো। আগামী ৭ তারিখ মেহেরপুর জেলার ৩টি উপজেলায় বর্তমান কমিটির বিপক্ষে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।

উল্লেখ্য, ২ ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির যুগ্ম মহাসচীব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী স্বাক্ষরিত ৩১ সদস্য বিশিষ্ট মেহেরপুর জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করেছে। আহবায়ক কমিটির আহবায়ক শিল্পপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টন ও সদস্য সচীব হয়েছেন অ্যাডভোকেট কামরুল হাসান।




মেহেরপুরে তিনটি ইটভাটায় ৪ লাখ টাকা জরিমানা আদায়

পরিবেশের ছাড়পত্র না থাকা, ইটভাটায় জ্বালানি কাঠ ব্যবহার ও পোড়ানোসহ ইনভাটার লাইসেন্স না থাকায় মেহেরপুরে তিনটি ইটভাটার মালিককে ৪ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেছে জেলা প্রশাসন পরিচালিত ভ্রাম্যমান আদালত।

আজ রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) বিকালের দিকে মেহেরপুর জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর মেহেরপুর জেলা কার্যালয়ের যৌথ অভিযানে সদর উপজেলায় ৩টি ইট ভাটায় এই অভিযান পরিচালনা করা হয়।

মেহেরপুর জেলা প্রশসানের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাইরুল ইসলামের নেতৃত্বে যাদবপুর বুড়িপোতা সড়কের তিনটি ইটভাটাতে এই অভিযান চালানো হয়।

ইটভাটায় জ্বালানি কাঠ ব্যবহার ও পোড়ানোসহ ইনভাটার লাইসেন্স না থাকায় ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ (সংশোধনী-২০১৯) লংঘন করায় গোলাম রহমান ইটভাটা, ছেলে শোয়েব রহমান, আজিমুদ্দিনের ছেলে সাইদুল ইসলাম, নজরুল ইসলামের ছেলে লিজনের নিকট থেকে ৪ লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সময় মেহেরপুর জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোঃ মোজাফফর খান প্রসিকিউটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

এসময় মেহেরপুর সদর থানা পুলিশের একটি ভ্রাম্যমান আদালতকে সহযোগিতা করেন ।




মেহেরপুরে নাশকতার অভিযোগে করা মামলায় ৫৪ জন আসামি বেকসুর খালাস

বিগত সরকারের আমলে পুলিশের দায়ের করা মিথ্যা মামলায় জামায়াতের ৫৪ জন নেতাকর্মীকে বেকসুর খালাস দিয়েছে আদালত।
আজ রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে মেহেরপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক নুর নবীর আদালতে আসামি পক্ষের আইনজীবি মামলার যৌক্তিতা তুলে ধরে তাদের বেখসুর খালাসের আবেদন করলে মামলার ৫৪ জন আসামিকে বেকসুর খালাস দেন বিজ্ঞ বিচারক।

মামলার বিবরণে জানা গেছে ২০১৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সদর উপজেলার রাজনগর গ্রামে নাশকতার অভিযোগ এনে ১৯৭০ সালের স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট এর ১৫, ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক উপাদানবলি আইনের ৪/৫ ধারায় জামায়াতের ৫৪ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন পুলিশ।

মামলায় আসামি করা হয়েছিল জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী সেলিম রেজা, নুরুল ইসলাম, গাংনী উপজেলা জামায়াতের আমির রবিউল ইসলাম, জামায়াত কর্মী রিয়াজুল ইসলাম, মোফাজ্জেল হোসেন, আহাদ আলী, আজগর আলী, নুরুল ইসলাম, আলহাজ্ব হোসেন আলী, হিমু, বিমল হোসেন, মতিয়ার রহমান, হালিম, হাবিবুর রহমান, হাফিজুল, সাবদার আলী, শাহজাহান, হুমায়ূন কবীর, মোহাম্মদ আল-আমিন, মোহাম্মদ রাজন, সোহেল রানা, ইসমাইল হোসেন জমিদার, মোল্লা মোহাম্মদ নাজমুল হোসেন, তোজাম্মেল হক, খান

 

জাহান আলী, শেখ সাঈদ আহমেদ, আবুল হাসান, জাফর আলী আইনুদ্দিন, মোঃ নজরুল ইসলাম, ইমরান হোসেন, মনিরুজ্জামান, আব্দুস সালাম, শামসুল আলম, মহসিন আলী, আব্দুস সামাদ, আমিরুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম, শাজাহান খান, আবু ইউসুফ মিরন, সামাদুল ইসলাম, আব্দুল জাব্বার মাস্টার, সাইফুল ইসলাম, কামাল শেখ, মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ, শাহাবুদ্দিন, আলামিন ওরফে বকুল, ইসরাইল, আব্দুল মতিন, ফারুক ওরফে আব্দুল বারী, সোহেল রানা ডলারকে আসামি করা হয়। দীর্ঘদিন পর রবিবার মামলার সকল আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।

জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা তাজ উদ্দীন খান বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার সরকারের আমলে জামায়াত ইসলামীর প্রায় ১ হাজার নেতাকর্মীদের নামে ৮৬টি মিথ্যা মামলা দায়ের করেছিল। মামলায় শত শত নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ ও রিমান্ডের নামে নির্যাতন করা হয়েছে। শুধু পুরুষকে নয় মামলায় আসামি করা হয়েছিল আমাদের সংগঠনের বোনদের। এসব মামলার মধ্যে ইতোমধ্যে ২৪ টি মামলায় জামায়াতের নেতাকর্মী বেকসুর খালাস পেয়েছেন।

এই মামলাটি ৮৬ টি মামলার মধ্যে ২৪ তম রায়। বাকী মিথ্যা মামলাগুলোও বিজ্ঞ আদালত বেকসুর খালাস পাবো বলে আশা করছি।




মুজিবনগরে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় প্রাণ হারালেন কৃষক

মুজিবনগরে বেপরোয়া গতির মোটরসাইকেলের ধাক্কায় প্রাণ হারালেন জিল্লুর রহমান (৫৭) নামের এক কৃষক। এঘটনায় মোটরসাইকেল চালক স্কুলছাত্র রিমন (১৭) আহত হয়েছেন।

রবিবার বিকালে মেহেরপুর-মুজিবনগর সড়কের মুজিবনগর উপজেলার গৌরীনগর মোড়ে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত জিল্লুর রহমান মুজিবনগর উপজেলার গৌরীনগর গ্রামের সাত্তার গাজীর ছেলে, সে পেশায় কৃষক। আহত রিমন মেহেরপুর সদর উপজেলার শালিকা গ্রামের মোঃ ইমরান হোসেনের ছেলে। মুজিবনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয়দের বরাত দিয়ে ওসি মিজানুর রহমান জানান, স্কুল ছাত্র রিমন হোসেন কেদারগঞ্জ মোড় থেকে জিগছার মডেলের একটি মোটরসাইকেলবেপরোয়া গতিতে চালি শালিকাতে আসছিলেন। গৌরিনগর নামক স্থানে এসময় কৃষক জিল্লুর রহমান রাস্তা পার হচ্ছিলেন। এসময় মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাঁকে স্বজোরে ধাক্কা মারে। এতে দুজনই রাস্তার উপর ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন।

স্থানীয়রা তাদের দুজনকে উদ্ধার করে প্রথমে মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে তাদের অবস্থার অবনতি হয়। পরে তাদেও গুরুতর অবস্থায় মেহেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জিল্লুর রহমানকে মৃত ঘোষণা করেন।

মুজিবনগর থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, এখন পর্যন্ত পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ দেইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে দুর্ঘটনাকবলিত মোটরাসাইকেলটি থানা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।




মেহেরপুরে বিএনপি’র শীতবস্ত্র বিতরণ

“এসো দূর করি শীতার্ত মানুষের কষ্টের কালো রাত, তাদের হাতে রাখি সহানুভূতির আপন হাত” স্লোগানে মেহেরপুর সদর উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র উদ্যোগে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়।

রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টার দিকে শ্যামপুর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড নীলমনি পাড়া বিএনপি’র অফিসের সামনে ২ শত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরন করা হয়।

শ্যামপুর ইউনিয়ন বিএনপি নেতা ফজলুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির যুগ্ন আহবায়ক ফয়েজ মোহাম্মদ।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্যামপুর ইউনিয়ন বিএনপি নেতা আবুল হাসেম, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আজমুল হোসেন মিন্টু, জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি আনিসুল হক লাভলু।

জেলা বিএনপির সাবেক সহ সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী মিজান মেননের সঞ্চালনায় এসময় শ্যামপুর ইউনিয়ন বিএনপি নেতা শামসুর রহমান সুইট, আমিরুল ইসলাম, মিলন হোসেন, মিরাজুল ইসলাম, সাহারুল ইসলাম, কালাম হোসেন, রুহুল আমিন, মোমিনুল ইসলাম, খোকন হোসেন, আব্দুল মান্নান, আব্দুল জলিলসহ শ্যামপুর ইউনিয়ন স্থানীয় নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।




মেহেরপুরে সালোম চার্চের এরিয়া ম্যানেজারের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন

মেহেরপুর জেলা প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সালোম চার্চ অব বাংলাদেশের বল্লভপুর শাখার সাবেক ক্রেডিট অফিসার মোঃ রাজু আহম্মেদ এরিয়া ম্যানেজার রোমিও পিন্টু মন্ডলের বিরুদ্ধে অমানবিক নির্যাতন ও প্রতারণার অভিযোগ উত্থাপন করেছেন।

রাজু আহম্মেদ জানান, তিনি ব্যক্তিগত কারণে চাকরি থেকে পদত্যাগ করেন। কিন্তু তার বেতন, পিএফ-এর টাকা এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আটকে রাখা হয়ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ তারিখে মেহেরপুর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি পিডিশন মামলা (মামলা নং ২৮/২০২৫) দায়ের করেন।

তার আগে মোঃ রাজু আহমেদের নামে একটি লিগাল নোটিশ পাঠানো হয়। অভিযোগ অনুযায়ী, নোটিশে রাজুকে বিভিন্ন আর্থিক অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। রাজুর দাবি, এই নোটিশ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং তার নামে মিথ্যা অভিযোগ তুলে তাকে হয়রানি করার চেষ্টা করা হয়েছে।

রাজু আহম্মেদ তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, আমি ২০১৯ সালের ২ অক্টোবর সালোম চার্চ অব বাংলাদেশের বল্লভপুর শাখায় ফিল্ড অফিসার পদে যোগদান করেন। চাকরিতে যোগদানের সময় আমার কাছ থেকে একটি ফাঁকা স্বাক্ষর করা চেক এবং আমার বাবার স্বাক্ষর করা ৩০০ টাকার ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্প জমা নেয়া হয়। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় যে, চাকরি শেষে এসব আমাকে ফেরত দেওয়া হবে।

২০২১ সালে আমাকে কোনো পূর্ব নোটিশ ছাড়া বল্লভপুর শাখা থেকে গাংনী শাখায় বদলি করা হয় এবং সহকারী ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে আমি ব্যক্তিগত কারণে চাকরি থেকে পদত্যাগ করি। দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার পরও আমি পিএফের টাকা এবং কাগজপত্র ফেরত পাইনি।

২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে রোমিও পিন্টু মন্ডল আমাকে ফোন করে গাংনী অফিসে ডেকে নেন। সেখানে আমাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে এবং শারীরিক নির্যাতন করে তার ফাঁকা চেকে ২০ লক্ষ টাকা এবং স্ট্যাম্পে ২০,৪৫,৭৩০ টাকার দেনা লিখিয়ে নেয়া হয়।

পরবর্তীতে, সালোম চার্চের ম্যানেজার রোমিও পিন্টু মন্ডল রাজুর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করি। এ নিয়ে মেহেরপুর সদর থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করা হয়। সালোম কেন্দ্রীয় অফিসের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বিষয়টি থানায় আলোচিত হলেও কোনো সমাধান হয়নি।

তিনি আরো বলেন, এরিয়া ম্যানেজার রোমিও পিন্টু মন্ডল ও সালোমের কিছু কর্মকর্তার দুর্নীতির প্রমাণ কাছে রয়েছে, যা আড়াল করতেই তাকে হয়রানি করা হচ্ছে। আমি চাকরি ছাড়ার পরও আমার পিএফ, কাগজপত্র এবং জমাকৃত চেক-স্ট্যাম্প ফেরত পাচ্ছি না।

সংবাদ সম্মেলনে রাজু আহম্মেদ সালোম চার্চের এই অনিয়ম ও দুর্নীতির সুষ্ঠু তদন্ত এবং তার পাওনা ফেরত দেওয়ার দাবি জানান।




অস্তিত্ব বাঁচাতে লড়ছে টিকটক

হোস্টিং প্ল্যাটফর্ম টিকটক। গত বছরের এপ্রিলে বাইডেন সরকার প্রণীত নতুন আইন অনুযায়ী আমেরিকার বাজারে নিষিদ্ধ ঘোষিত হতে পারে প্ল্যাটফর্মটি।

টিকে থাকতে হলে আগামী ৯ মাসের মধ্যে বাইডেন সরকার অনুমোদিত কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে টিকটকের মালিকানা হস্তান্তর করতে হবে বর্তমান মালিক চীনের বাইটড্যান্সকে। নতুন এই আইন দেশটির সংবিধান পরিপন্থী উল্লেখ করে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন টিকটকের আইনজীবীরা।

টিকটক নিষিদ্ধ করার পেছনে আমেরিকা সরকারের মূল দাবি হচ্ছে দেশটির জনগণের ব্যক্তিগত তথ্য প্ল্যাটফর্মটির মালিক বাইটড্যান্সের কাছ থেকে চীন সরকারের কাছে বেহাত হয়ে যেতে পারে। ফলে বাইটড্যান্সের মালিকানাধীন টিকটক দেশটির জাতীয় সুরক্ষার জন্য হুমকি স্বরূপ বলে মনে করছেন সরকারের কর্তাব্যক্তিরা।

যদিও মার্কিন সরকার এই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে নাকচ করে দিয়েছে বাইটড্যান্সকে। প্রসঙ্গত, ১৭ কোটিরও বেশি মার্কিন নাগরিক বর্তমানে টিকটক ব্যবহার করেন। বিশ্বব্যাপী প্ল্যাটফর্মটির ব্যবহারকারী সংখ্যা ১০০ কোটিরও বেশি।

এপ্রিলে বাইডেন সরকার নতুন আইন প্রণয়নের পর গত মে মাসে আইনটিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করে বাইটড্যান্স। মামলার আর্জিতে দাবি করা হয় আমেরিকা সরকার কোনো প্রকার প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও টিকটকের মালিকানার বিষয়টিকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখাতে চাইছে যাতে করে সংবিধানের প্রথম সংশোধনীকে এড়িয়ে যাওয়া যায়। উল্লেখ্য, আমেরিকার সংবিধানের প্রথম সংশোধনীতে বাস্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মতো আরো কিছু বিষয়কে জনগণের অধিকার হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

সরকারের নতুন আইনটিকে ‘স্পষ্টতই অসাংবিধানিক’ উল্লেখ করে বাইটড্যান্স আদালতে আরো জানায়, টিকটকের মালিকানা নিয়ন্ত্রণ করার উপায় হিসেবে সরকার উক্ত আইনটিকে উপস্থাপন করেছে।

টিকটকের মালিকানায় সরকারের এই হস্তক্ষেপকে অনেকেই বাইডেন সরকারের কর্তৃত্ববাদী আচরণ হিসেবে দেখছে। অনেকেই নতুন আইনটিকে সরকারের স্বৈরাচারী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ হিসেবেও গণ্য করছে।

সূত্র: ইত্তেফাক