৫ম দফার অবরোধ সমর্থনে মেহেরপুরে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল

বিএনপি’র ডাকা অবরোধের পঞ্চম ধাপের প্রথম দিনে অবরোধের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে মেহেরপুর জেলা বিএনপি।

 বুধবার সকাল ছয়টার সময় মেহেরপুর শহরের কাথুলি রোডে জেড কে ফিলিং স্টেশনের সামনে থেকে ঝটিকা মিছিলটি শুরু হয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে কাথুলি বাস স্ট্যান্ড এলাকায় যেয়ে শেষ হয়।

পৌর বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর বিশ্বাস মিছিলটির নেতৃত্ব দেন। অবরোধের কারণে সকাল থেকেই সীমিত আকারে আন্ত: জেলা বাস চলাচল করলেও মেহেরপুর থেকে ঢাকা গামী পরিবহন ছেড়ে যায়নি। তবে ব্যক্তিগত ও আভ্যন্তরিন যান চলাচল রয়েছে।




মেহেরপুর জামায়াতের আমির তাজ উদ্দিনকে মাদ্রাসা থেকে সাময়িক বরখাস্ত

কারা অন্তরিন মেহেরপুর জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা তাজ উদ্দিন খাঁনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে মানিকনগর ডিএস আমিনিয়া আলিম মাদ্রাসা।

গত ১২ নভেম্বর মাদ্রাসার গভর্ণিং বডির সভায় তাকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আসাদুল্লাহ আল গালিব। মাওলানা তাজ উদ্দিন খান মুজিবনগরের মানিকনগর ডিএস আমিনিয়া আলিম মাদ্রাসার সহকারী মৌলভী (শিক্ষক)। তিনি মুজিবনগর উপজেলার বল্লভপুর গ্রামের মৃত আবুল হোসেন খাঁনের ছেলে।

মাওলানা তাজ উদ্দিনকে গত ১ নভেম্বর মুজিবনগর থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। এর পর থেকে তিনি কারাগারে হাজত বাস করছেন। তার বিরুদ্ধে নাশকতা, বিষ্ফোরক দ্রব্যসহ বিভিন্ন আইনে মেহেরপুর সদর থানায় দুটি, গাংনী থানায় এবং মুজিবনগর থানায় ৬টিসহ ৯টি মামলা রয়েছে। সবগুলো মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

মাওলানা তাজউদ্দিনের বিরুদ্ধে ৯টি মামলার অধিকাংশ মামলা নাশকতা ও বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনে। মাদ্রাসার গভর্ণিং বডির শিক্ষক প্রতিনিধি শহিদুল ইসলাম ও নজির আহমেদ জানান, সহকারী মৌলভী তাজ উদ্দিন খাঁনের নামে অনেকগুলো মামলা চলমান থাকায় তাকে মাসের অনেক দিন আদালতে হাজিরা দিতে হয়। একই সঙ্গে আদালতে হাজিরার দিনও তিনি মাদ্রাসাতেও হাজিরা দেন। এনিয়ে অন্যান্য শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। অন্যান্য শিক্ষকরা প্রতিদিন যথানিয়মে মাদ্রাসা হাজিরা দিলেও মাওলানা তাজ উদ্দিন খান মামলার হাজিরা দেখিয়ে অনেক দিন মাদ্রাসাতে দুপুরে হাজিরা দেন।

মাদ্রাসা শিক্ষকদের দাবী, তিনি ছুটি নিয়ে আদালতে হাজিরা দেবেন। একই ব্যক্তি একই দিনে দু যায়গায় হাজিরা দিতে পারেন না।

মুজিবনগর থানা সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালে ১৩ ফেব্রয়ারি গাংনী থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি ( যার নম্বর -১১/৩০), সদর থানায় ২০১২ সালের ১৩ নভেম্বর একটি (যার নম্বর-৫) এবং চলতি বছরের ৩০ জুলাই বিশেষ ক্ষমতা আইনে আরও একটি মামলা দায়ের হয় (যার নম্বর-৪৮)। এই মামলায় বর্তমানের তিনি হাজত বাস করছেন।

মুজিবনগর থানায় চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা (যার নম্বর -১১), ২০২১ সালের ১ এপ্রিল বিষ্ফোরক আইনে একটি মামলা যার নম্বর-১/৩৩, ২০১৮ সালের ২ নভেম্বর (যার মামলা নম্বর-১), ১৩ সেপ্টেম্বর (যার মামলা নম্বর-৫), ৭ ফেব্রুয়ারি যার মামলা নম্বর-২) এবং ২০০৭ সালের ১৩ এপ্রিল একটি মামলা হয় (যার মামলা নম্বর-৫)।

মুজিবনগর থানার ওসি মেহেদী রাসেল বলেন, সুনির্দিষ্ট মামলার আসামি হিসেবে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বর্তমানে ৯টি মামলা চলমান রয়েছে। নাশকতা, বিষ্ফোরক দ্রব্যসহ মারামারির মামলাও রয়েছে।

মানিকনগর ডিএইচএস ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আসাদুল্লাহ আল গালিব বলেন, গত ১২ নভেম্বর মাদ্রাসার গভর্ণিং বডির সভায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বরখাস্তের চিঠি পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

তিনি আরও বলেন, মানবিক কারণে তাকে আদালতে হাজিরার দিনগুলোতে একটু ছাড় দেওয়া হয়। আমি ২০১৮ সালে যোগদান করার পর এবার দিয়ে তাকে দুই বার সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।




কার্পাসডাঙ্গায় মাদক বিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ১

কার্পাসডাঙ্গা পুলিশ ফাঁড়ির মাদক বিরোধী অভিযানে ৫০০ গ্রাম গাঁজা সহ ঠাকুরপুর গ্রামের রাজেন সালেহ গ্রেফতার।

চুয়াডাঙ্গা জেলার পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ্ আল-মামুনের সার্বিক দিকনির্দেশনায় অফিসার ইনচার্জ দামুড়হুদা মডেল থানা মোঃ আলমগীর কবিরের নেতৃত্বে কার্পাসডাঙ্গা ক্যাম্পের এসআই (নিঃ) ইমরান হোসেন, সঙ্গীয় অফিসার ও ফোর্সসহ মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযান পরিচালনা কালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল আনুমানিক ০৭: ৪০ মিনিটের সময় দামুড়হুদা মডেল থানাধীন কার্পাসডাঙ্গা গ্রামস্থ কাপাসডাঙ্গা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় এর সামনে পাকা রাস্তার উপর থেকে আসামী দামুড়হুদা উপজেলার ঠাকুরপুরের মোঃ ইদ্রিস আলীর ছেলে মোঃ রাজিন সালেহ (২৫) কে ৫০০ (পাঁচশত) গ্রাম অবৈধ মাদকদ্রব্য গাঁজা সহ হাতেনাতে গ্রেফতার করে।

পরে গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে দামুড়হুদা মডেল থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়।




দর্শনায় দুইদিন ব্যাপী তাবুবাস ও দীক্ষা অনুষ্ঠান-২০২৩ অনুষ্ঠিত

দর্শনায় দুইদিন ব্যাপী তাবুবাস ও দীক্ষা অনুষ্ঠান-২০২৩ অনুষ্ঠিত হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলার ১১টি সরকারী ও বেসরকারী কলেজ থেকে শতাধিক নারী-পুরুষ রোভার এ সমাবেশে অংশ নেয়। গত ১৩ ও ১৪ নভেম্বর দর্শনা সরকারী কলেজ রোভার স্কাউট গ্রুপ এর আয়োজনে এ তাবুবাস ও দীক্ষা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

গতকাল মঙ্গলবার রাত ৮টায় ও ক্যাম্প ফায়ার অনুষ্ঠানে দর্শনা সরকারী কলেজের রোভার স্কাউটদের আয়োজনে নানা অনুষ্ঠান পরিবেশনের মাধ্যমে দুইদিন ব্যাপী অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়। সন্ধায় ক্যাম্প ফায়ারের কাঠের কুনডুলিতে অগ্নি সংযোগ করেন, প্রধান অতিথি অধ্যক্ষ আব্দুস ছাত্তার। ক্যাম্প ফায়ারের পূর্বে সকাল থেকে সারাদিন হাইকিং ও দর্শনা কেরু চিনিকল ও ডিষ্টিলারী পরিদর্শন, সন্ধায় তাবু জলসা।

তাবু জলসা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, বড় সলুয়া নিউ মডেল ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুস ছাত্তার তিনি তার বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, রোভার স্কাউট একটি স্বেচ্ছাসেবী দল। দেশের যে কোন দুযোর্গে সেবা দিয়ে থাকেন। নীতি নৈতিকতা ও সমাজে সৃজনশীল কার্যক্রমের মাধ্যমে একটি সুস্থ সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সহায়তা আসছে রোভার স্কাউট।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন স্কাউট ব্যক্তিত্ব মাহফুজুর রহমান। এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন, বড় সলুয়া মডেল ডিগ্রী কলেজের সিনিয়ার প্রভাষক আব্দুল করিম, দর্শনা ডিএস মাদ্রাসার রোভার ইউনিট লিডার প্রতিনিধি মনজুর আহম্মেদ ও জয়নগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী লিডার টেইনার খুলনা অঞ্চলের সুর্পনা দাস ও দর্শনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আওয়াল হোসেন। প্রথম দিনের অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন, দর্শনা সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ রেজাউল করিম ও ক্যাম্প চীফ ড. মফিজুর রহমান।




অ-মুক্তিযোদ্ধাকে মুক্তিযোদ্ধা বানানোর প্রক্রিয়া আমরা মানবো না- ক্যাপ্টেন আব্দুল মালেক

‘আমরা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাভুক্ত করার প্রতিবাদ করছি না। প্রতিবাদ করছি যারা কোন কাগজ না থাকা সত্ত্বেও অনলাইনে (ক) তালিকাভুক্ত হয়েছেন তাদের ব্যাপারে। এভাবেই কিছুদিন আগে একজন অমুক্তিযোদ্ধাকে মুক্তিযোদ্ধা বানানোর চেষ্টার প্রতিবাদ করতে যেয়ে ইউএনও অফিসে আমি হেনস্থার শিকার হয়েছি।‘

মেহেরপুরে ৪৫ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার অংশগ্রহনে অনুষ্ঠিত শান্তি সম্মেলনে কথাগুলি বলেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা অবঃ ক্যাপ্টেন আব্দুল মালেক।

এ সময় তিনি আরো বলেন, ‘২০১৭ সালে মেহেরপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের জেলা ও উপজেলা কমান্ড ভেঙ্গে দেওয়া হয়। এরপর থেকে জেলা প্রশাসক ভারপ্রাপ্ত জেলা কমান্ডার এবং ইউএনও ভারপ্রাপ্ত উপজেলা কমান্ডার হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। সেই থেকে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনটি পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। কোন মুক্তিযোদ্ধা সেখানে প্রবেশ করতে পারে না। অমুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযোদ্ধা বানালে, আর তারা আমাদের সামনে এসে চেয়ারে বসলে সেটা আমরা মেনে নেব না। ব্যাপারটি নিয়ে আমি আগেও প্রতিবাদ করেছি, ভবিষ্যতেও এর প্রতিবাদ করব।‘

গতকাল মঙ্গলবার সকাল এগারটায় মেহেরপুর সদর উপজেলার সাধু বার্নবার চার্চে মিলনায়তনে কোরআন তেলয়াত, গীতা পাঠ ও আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অংশগ্রহনে এই শান্তি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ক্যাপ্টেন আব্দুল মালেকের (অবঃ) সভাপতিত্বে ও ইঞ্জিঃ মোঃ নুরুল ইসলামের সঞ্চালনায় শান্তি সম্মেলনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা বক্তব্য রাখেন।

সম্মেলনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা অভিযোগ করে বলেন আমরা দেশকে স্বাধীন করেছিলাম শুধু ভালোবেসে। পাকিস্তানের শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে নিয়েছিলাম। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে এই দেশ স্বাধীন করেছিলাম, আজ সেখানে আমরাই পরাধীন। যারা মুক্তিযুদ্ধ করেনি, তারাই আজ বড় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তারা ভাতা পায়। বড় বড় চেয়ার পায়। সরকারি দলের নেতাদের আশ্রয় প্রশ্রয়ে থাকে। তাদের মতের বিরুদ্ধে কথা বললে যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছে, শহীদ হয়েছে তাদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জামায়াত-শিবির আক্ষায়িত করে কটাক্ষ ও অপমানিত করে।

মুক্তিযোদ্ধা মোঃ সুলতান আহমেদ বলেন, আজ স্বাধীনতার ৫২ বছর পর যদি নতুন নতুন পদ্ধতিতে মুক্তিযোদ্ধা তৈরি করা হয় তবে কিয়ামত পর্যন্ত একই পদ্ধতিতে মুক্তিযোদ্ধা তৈরি হতেই থাকবে।‘

মুক্তিযোদ্ধা জিল্লুর রহমান বলেন, ‘কোন নেতার ডাকে আমি মুক্তিযুদ্ধে যায়নি। শান্তি ও স্বাধীনতার জন্য আমরা যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। ২০ হাজার টাকা ভাতা পেতে আমি মুক্তিযুদ্ধ করিনি। এই ভাতার জন্যই এখন মেহেরপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ৩-৪ টি দল হয়ে গেছে।‘

শান্তি সম্মেলনে আলোচনা সভার সঞ্চালক ইঞ্জিঃ মোঃ নুরুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অনেক কিছুই করেছে, ভবিষ্যতে আরও করবে। বিষয়টা আমাদের মাথায় রাখতে হবে।আমরা কোন নেতার পক্ষ নেব না। যে নেতা নৌকা নিয়ে আসবে তার পক্ষেই থাকবো। কিন্তু আফসোস আজ পর্যন্ত মেহেরপুরের কোন এমপি বা মন্ত্রি আমাদের ডেকে, একসাথে বসে কখনো কথা বলেনি। এমনকি আমাদের সমস্যার কথা শোনার ইচ্ছাও পোষণ করেনি।‘




জেএমবি’র হামলায় নিহত ২ বিচারককে স্মরণ করলো মেহেরপুর বিচার বিভাগ

ঝালকাঠিতে ২০০৫ সালের ১৪ নভেম্বর জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) বোমা হামলায় নিহত সিনিয়র সহকারী জজ শহীদ সোহেল আহম্মেদ ও জগন্নাথ পাঁড়েকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করলো মেহেরপুরের বিচার বিভাগ।

আজ মঙ্গলবার ১৪ নভেম্বর বিকাল সাড়ে ৩ টায় মেহেরপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নবনির্মিত সম্মেলন কক্ষে বিচার বিভাগ মেহেরপুরে কর্মরত বিচারকবৃন্দ, মেহেরপুর জেলা আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ এবং আদালতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতিতে নিহত ২ বিচারকের স্মরণে শোকসভা, নীরবতা পালন ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এর আগে আদালত প্রাঙ্গণে অস্থায়ীভাবে স্থাপিত নিহত দুই বিচারকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।

আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে মেহেরপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোঃ শহিদুল্লাহ্ জানান, নিহত বিচারকদের স্মৃতি অম্লান রাখার জন্য ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত ভবন মিলনায়তনের নাম ‘জগন্নাথ-সোহেল স্মৃতি মিলনায়তন’ রাখা হয়েছে।

এসময় তিনি আরো বলেন, ‘মামলাটি বিচারকালে ৪৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয় এবং এজারভুক্ত সকল আসামীকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করা হয়। বিচারক হত্যা মামলার মামলার পিপি মোঃ হায়দার হোসেনকেও পরবর্তীতে জেএমবি’র সদস্যরা হত্যা করে। যার প্রেক্ষিতে আরেকটি মামলা দায়ের হলে সেই মামলাতেও ৫ জন আসামীকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়।’

আলোচনা সভায় মেহেরপুর জেলা সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোঃ শহিদুল্লাহ্’র সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ রিপতি কুমার বিশ্বাস, চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আবু বকর সিদ্দিক, যুগ্নু জেলা ও দায়রা জজ-১ম শাহিনুর রহমা, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ-২য় এইচ এম কবির হোসেন, সিনিয়র সহকারী জজ মেহেদী হাসান মোবারক মুনিম ও মোঃ নাহিদ হোসেন, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শারমিন নাহার, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আল-আমীন জয় ও মোঃ জাহিদুর রহমান, মেহেরপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট কামরুল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খ.ম. ইমতিয়াজ বিন হারুন জুয়েলসহ মেহেরপুর জেলা জজ আদালত ও চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সকল কর্মকর্তা কর্মচারীগণ।




প্রেসক্রিপশনের “শর্তহীন সংলাপ”- কার সঙ্গে কে করবে?

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনীতিতে নতুন মার্কিন উদ্যোগ শুরু হয়েছে। সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বাংলাদেশের প্রধান তিন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে চিঠি দিয়েছেন শর্তহীন সংলাপে বসার আহবান জানিয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠছে, আসলে কি এবার শর্তহীন সংলাপ নিয়ে ভাববে এই তিন দল? তবে, তফসিল ঘোষণার এক দুইদিন আগে হাসের এ ধরনের উদ্যোগকে “কিছুটা লোক দেখানো” মনে করছেন রাজনীতিবিদরা। তাদের প্রশ্ন- সংলাপ কার সঙ্গে কে করবে?

সোমবার হাসের সঙ্গে বৈঠক শেষে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু সাংবাদিকদের বলেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত তাদের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী মন্ত্রী ডোনাল্ড লুর লিখিত একটি চিঠি নিয়ে এসেছেন। চিঠিতে শর্তহীন সংলাপের আহ্বান জানানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করে যুক্তরাষ্ট্র যা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী বলেন, সংলাপের কথা যে বলছেন, কার সঙ্গে সংলাপ হবে? ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার পরে যারা বলেছেন এটা আওয়ামী লীগ নিজে করেছে, তাদের সঙ্গে কী নিয়ে আলোচনা করবে? আর ২৮ অক্টোবরে মহাসমাবেশের নামে যে হামলা যে নারকীয় কাণ্ড ঘটানো হয়েছে, এরপরে কিসের আলোচনা করতে বলবেন পিটার হাস?

যুগপৎ আন্দোলনের সিনিয়র নেতা সাইফেল হক মনে করেন যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা থেকে সংলাপের মধ্য দিয়ে বের হতে হবে। গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির মধ্য দিয়ে সংলাপ শুরু করে সৃষ্ট পরিবেশের দিকে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার বিকল্প নেই।

এর আগে ৩১ অক্টোবর বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন প্রশ্নে বিরোধী দলগুলোর সাথে সংলাপের প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ”যেদিন ট্রাম্প আর বাইডেন ডায়ালগ করবে, সেদিন আমিও ডায়ালগ করব।” সেদিন বিকেলে বেলজিয়াম সফর নিয়ে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। সেইদিনই সকালের দিকে নির্বাচন কমিশনের সাথে বৈঠক শেষে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বাংলাদেশের সব পক্ষকে শর্তহীন সংলাপে বসার অনুরোধ জানান। গণভবনের সংবাদ সম্মেলনে পিটার হাসের এমন বক্তব্য উল্লেখ করে এক সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “যারা খুন করছে তাদের সাথে ডায়লগ করতে বলে, ট্রাম্প সাহেবের সাথে কী বাইডেন ডায়লগ করছে? যেদিন ট্রাম্প সাহেব আর বাইডেন ডায়লগ করবে, সেদিন আমিও ডায়ালগ করবো।”




আগুন সন্ত্রাসের ছোবলে বার্ন ইন্সটিটিউটে কাতরাচ্ছে নিম্ন আয়ের সাতজন

রিকশাচালক আব্দুল জব্বার দিনভর রিকশা চালিয়েও সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছিলেন। তার বড় ভাইয়ের পরামর্শে পরিবারকে পাঠিয়ে দেন নারায়ণগঞ্জে কাজের উদ্দেশ্যে। সারাদিন রিকশা চালিয়ে পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে রাতে নারায়ণগঞ্জ যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসে রওনা হলে যাত্রাবাড়ী এলাকায় আগুন সন্ত্রাসের কবলে পড়েন তিনি। আর নিমিষেই ঘুরে দাঁড়ানোর সব স্বপ্ন ধুলোয় মিশে যায়। রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটের বিছানায় এখন কাতরাচ্ছেন তিনি। তার শরীরের ২০ শতাংশ পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

জব্বারের মতো বিএনপি ও সমমনাদের ডাকা চলমান অবরোধে আগুনে পুড়ে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে চিকিৎসাধীন আছেন সাতজন। তারা সবাই নিম্ন আয়ের মানুষ। কেউ পেশায় পোশাকশ্রমিক, পরিবহন শ্রমিক কিংবা দিনমজুর। আগুন সন্ত্রাসের কবলে পড়ে যারা চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা কেউই শংকামুক্ত নন বলে জানিয়েছেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ণ ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা সামন্ত লাল।

আগুনে পুড়ে হতাহতরা হচ্ছেন- পোষাক শ্রমিক মো: মাহমুদ হাসান (২৩), মেরাদিয়ার পরিবহন শ্রমিক সবুজ মিয়া (৩০), কালীগঞ্জে কাভার্ডভ্যানে অবস্থানরত বিপ্রজীদ ভাওয়ালী (২০), কাকরাইলে শ্রমিক শাখাওয়াত হোসেন (২৮), ডেমরায় বাসে ঘুমন্ত থাকা হেলপার মো. রবিউল ইসলাম রবি (২৫) এবং মানিক দাস (৪৫) নামে বিমানের এক ক্লিনার।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক তরিকুল ইসলাম জানান, পেট্রোলে দগ্ধের কারণে তাদের শরীরে ক্ষতগুলো গভীর। তাদের অনেকেরই অপারেশনের প্রয়োজন হচ্ছে। তাদের মধ্যে অনেকের চামড়া লাগাতে হচ্ছে। আমরা তাদের চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি।

দগ্ধদের মধ্যে, জব্বারের ২০ শতাংশ, হাসানের ১১ শতাংশ, সবুজের ২৮ শতাংশ, বিপ্রজীত এর ৭ শতাংশ, শাখাওয়াত এর ১০ শতাংশ, রবির ১৭ শতাংশ দগ্ধ এবং মানিক দাসের ৫ শতাংশ পুড়ে গেছে।

যাত্রাবাড়ীতে গত শনিবার (১১ নভেম্বর) রাতে অনাবিল পরিবহনের বাসে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে বাসযাত্রী দগ্ধ রিকশা চালক আব্দুল জব্বার ও গার্মেন্টেস কর্মী মাহমুদ হাসান দগ্ধ হন। ওই রাতেই তাদের বার্ন ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়। জব্বারের বড় ভাই জিকরুল ইসলাম জানান, জব্বার রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতে পারতো না। সংসারে অভাব লেগেই থাকতো। তাই শনিবার তার পরিবারকে কাজের উদ্দেশ্যে সকালে আমার বাসায় নারায়ণগঞ্জ নিয়ে আসি। জব্বার তার কাজ শেষ করে রাতে আমার বাসার উদ্দেশে বাসে চড়ে। পথে যাত্রবাড়ীতে আগুনে দগ্ধ হয়।

তিনি বলেন, আমরা গরিব মানুষ নিজের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। এর মধ্যে আবার ভাই দগ্ধ হয়েছে। তার চিকিৎসা করার জন্য আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে সাহায্য সহযোগিতায় চিকিৎসা চালাতে হচ্ছে।

একই বাসে দগ্ধ হওয়া যাত্রী মাহমুদুল হাসান জানান, আমার এক বন্ধুর মোবাইল ফোন কিনতে বসুন্ধরা মার্কেটে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে তাকে দিয়ে কমলাপুর থেকে বাসে উঠে মাঝামাঝি বসেছিলাম। যাত্রাবাড়ী এলাকায় বাসটি আসার পর হঠাৎ দেখি আমার পায়ের নিচ দিয়ে আগুন লেগে গেছে। পরে দ্রুত ওই সিট থেকে কোনরকমে বের হয়ে যাই। ততোক্ষণে আমার দুই পা ও ডান হাত ঝলসে গেছে।

অন্যান্যদিনের মতোই রমজান পরিবহনের বাস চালক সবুজ মিয়া অছিম পরিবহনে করে বাসা থেকে কাজের উদ্দেশ্যে বেরিয়েছিলেন। পথে মেরাদিয়া বাঁশপট্টির কিছু আগে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে ঝলসে যান তিনি। তাকে উদ্ধার করে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে নিয়ে আসা হয়। শরীরে পোড়া ক্ষত নিয়ে শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের শয্যায় এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কাতরাচ্ছেন সবুজ মিয়া। সংসারে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বলতে তিনিই আছেন বলে জানান তার স্ত্রী। কিন্তু রোজগার বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়ে স্বজন আর পরিচিতজনদের কাছে হাত পাততে হচ্ছে। কবে সুস্থ হয়ে গাড়ির স্টিয়ারিং হাতে নিতে পারবেন এবং আয়ে ফিরবেন সেই দুশ্চিন্তায় দিন পার করতে হচ্ছে তার পরিবারকে।
গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ কর্মসূচিকে ঘিরে সংঘর্ষের পর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজনৈতিক পরিস্থিতি। এরপর থেকে হরতাল এবং দফায় দফায় ডাকা অবরোধে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, পেট্রোল ঢেলে আগুন দেওয়া শুরু হয়। ফায়ার সার্ভিসের হিসাবে ২৮ অক্টোবর থেকে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৫০টিরও বেশি যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়েছে।

বাসে আগুনের ঘটনায় একজন পরিবহনকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। গত ২৯ অক্টোবর ভোরে ডেমরার দেইল্লা বাস স্টেশনে রাস্তার পাশে রাখা অছিম পরিবহনের একটি বাসে দুর্বৃত্তরা আগুন দেয়। এতে ঘুমন্ত অবস্থায় পুড়ে মারা যান ওই বাসের হেলপার নাঈম। ওই ঘটনায় দগ্ধ হন নাঈমের বন্ধু আরেকটি বাসের হেলপার রবিউল ইসলাম রবি।

অন্য দিকে, গত ৮ নভেম্বর ভোরে গাজীপুরের কালীগঞ্জে কাভার্ডভ্যানে আগুন দেন দুর্বৃত্তরা। ওই ভ্যানে থাকা বিপ্রজীত ভাওয়ালী ও আনোয়ার নামে দুইজন দগ্ধ হন। তাদের উদ্ধার করে প্রথমে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নিয়ে আসা হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে আনোয়ার বাসায় চলে যান। বিপ্রজীত চিকিৎসাধীন আছেন। পরে তাকে বার্ন ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করা হয়।

বার্ণ ইনস্টিটিউটে তার মা স্বপ্না ভাওয়ালী তার পাশে বসে থাকেন। বিপ্রজীত ভাওয়ালী জানান, তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। বগুড়ায় তাদের কোম্পানির গাড়ির সমস্যা হয়। তাই সেখানে গিয়েছিলেন, সেখানে গাড়ির কাজ শেষ করে একই কোম্পানির একটি কাভার্ডভ্যান যোগে ফেরার পথে, কালিগঞ্জ এলাকায় রাস্তায় ৯/১০ জন তাদের গাড়িটিকে পথরোধ করে ভাঙ্গচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। গাড়ি থেকে নামতে নামতে শরীরের আগুন ধরে যায়।

রবিবার (১২ নভেম্বর) রাতে দগ্ধ হন বিমানের ক্লিনার মানিক দাস। রাজধানীর বনানী এলাকায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি স্টাফ বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। তাতে তিনি দগ্ধ হন। তিনি জানান, রাতে এয়ারপোর্টে ডিউটি শেষে ২০-২৫ জন কর্মী বিমানের স্টাফ বাসে করে বাসায় ফিরছিলেন। এয়ারপোর্ট থেকে বনানীতে ঢোকার সময় জানালা দিয়ে তরল পদার্থ ছুড়ে মারা হয়। এতে গাড়িতে আগুন ধরে গেলে তার ডান হাত ও বাম পা দগ্ধ হয়। পরে ওই বাসে থাকা তপু নামে এক সহকর্মী তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে।

তিনি আরও জানান, এই ঘটনায় ওই বাসে থাকা আরও পাঁচ ছয় জন আহত হয়েছে। তবে কোথায় তাদের চিকিৎসা চলছে তা বলতে পারেননি।

ডা সামন্ত লাল সেন বলেন, কয়েকজনের ২৭-২৮ শতাংশ পুড়ে গেছে। পেট্রোলের কারনে বাকিদের ক্ষত বেশি। তাদের অপারেশনেরও প্রয়োজন আছে। তারা সবাই নিম্নআয়ের মানুষ। তারা তো সহজে সুস্থ হবে না। তাদের অন্তত মাসখানেক কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে।




শর্তহীন সংলাপের প্রস্তাবে কেন ভিসানীতির হুমকি?

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করার পর আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে শর্তহীন আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়ে চিঠি দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। পাশাপাশি যারা গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করবে তাদের বিরুদ্ধে পূর্বঘোষিত মার্কিন ভিসানীতি (থ্রিসি) কার্যকর হবে বলে হুমকি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

সোমবার ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র স্টিফেন ইবেলি এক বিবৃতিতে জানান, ‘যুক্তরাষ্ট্র শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বাংলাদেশে একটি অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়। আমরা সব পক্ষকে সহিংসতা পরিহার এবং সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাই। যুক্তরাষ্ট্র কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না।’বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির বিষয়টি মনে করিয়ে বলা হয়, যারা গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করবে তাদের বিরুদ্ধে পূর্বঘোষিত মার্কিন ভিসানীতি (থ্রিসি) কার্যকর হবে।

এরআগে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে ভারত। গত শনিবার ভারত নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দেয়, যা আমেরিকার সম্পূর্ণ ভিন্ন। ভারতের বিদেশ সচিব বিনয় কোয়াত্রা জানিয়ে দেন, মার্কিন প্রশাসনকে তাঁরা বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের অভিমত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ভারত মনে করে বাংলাদেশের নির্বাচন সে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। অন্য কোনও দেশের সেখানে হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই।’ শুধু সংবিধান ও আইন অনুযায়ীই বাংলাদেশে নির্বাচন চায় চীন। আর ওই নির্বাচন নিয়ে বাইরের কারো হস্তক্ষেপ চায় না দেশটি। চীন নিজেও অন্য দেশে হস্তক্ষেপ করে না। ৯ নভেম্বর বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি পাঁচতারা হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। এমনকি বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু রাশিয়াও বাইরের হস্তক্ষেপের চায় না বলে জানিয়ে দিয়েছে।

এর আগেও দলগুলোর মধ্যে শর্তহীন সংলাপের প্রস্তাব দিয়েছিলেন ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। জবাবে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়ে দেন, বিএনপি সন্ত্রাসী দল। তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রশ্নই ওঠে না। তিনি পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, ‘জো বাইডেন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প কি কথা বলেন, মুখোমুখি বসে বৈঠক করেন? ওঁরা যেদিন করবেন, সেদিন আমি করব।’একই ভাবে সোমবার খুলনায় আওয়ামী লীগের জনসভায় শেখ হাসিনা জানিয়ে দেন, ‘বিএনপি মুন্ডুহীন দল। তাদের এক নেতা পলাতক আসামি, এক নেতা কারাগারের আসামি। সেই দল দেশে নির্বাচন হতে দিতে চায় না। অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে, কেউ যদি গাড়িতে আগুন দিয়ে পোড়াতে চেষ্টা করে, ওই হাত ওই আগুনে পুড়িয়ে দেবেন, উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে দেবেন, যেন আর কেউ সাহস না পায় দেশের মানুষের ক্ষতি করতে।’

প্রধানমন্ত্রীর কথায় পরিস্কার বিএনপির সাথে কোনো সংলাপে বসবে না আওয়ামী লীগ। যদিও এই প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিষয়ে অনেকটা নমনীয় ছিল। দাবি আদায়ে বিএনপি যদি কার্যালয় ঘেরাও করতে চায়, তাহলে তাদের চা খাওয়ানোর কথা জানিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যদিও প্রধানমন্ত্রীর এই আমন্ত্রণ নিয়ে তাচ্ছিল্য করেছিল বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, ‘চা খাওয়ার আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার মেনে নেওয়ার কথা বলুন।’

বিএনপি বরাবরই বলে আসছে, শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে অবিচল দলটি। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের কথা বললেও বিএনপি তার আগে একটি শর্ত জুড়ে দিয়ে এসেছে। স্বভাবতই এখন প্রশ্ন উঠেছে- এতো দিন যে দলটি শর্তহীন সংলাপ বসতে চায়নি, সেই দলটি লুর কথায় সংলাপে বসবে? সংলাপে বসা ছাড়া বিএনপির সামনে সত্যিই কী আর কোনো পথ খোলা আছে? বিএনপি সংলাপ চাইলেও আওয়ামী লীগ কি তাদের সাথে সংলাপে বসতে রাজি হবে? সংলাপে বসে হবে টা কী? তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্র কেন সংলাপের কথা বলছেন? বাংলাদেশ নিয়ে তাদের এতো আগ্রহ কেন? কেনই বা তারা সংলাপের আহবান জানানোর পাশাপাশি ভিসানীতির হুমকি দিয়েছে?

যে দলটির জন্য যুক্তরাষ্ট্র শর্তহীন সংলাপের আহবান জানিয়েছে, সেই দলটি কখনই সুস্থ রাজনৈতিক ধারায় বিশ্বাসী ছিলোনা। ফলে আজ পর্যন্ত কোনো সংলাপেই সফলতা আসেনি। যখনই সংলাপের কথা এসেছে, তখনই হয় সংলাপ বর্জন করেছে অথবা শর্ত জুড়ে দিয়ে তা বানচাল করে দিয়েছে তারা। এবারের মতো ২০১৪ তেও সংলাপে অংশ নেয়নি, আর ২০০৭ ও ২০১৮ তে সংলাপে বসলেও শর্ত জুড়ে দিয়ে ও মিথ্যাচার করে সংলাপগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছ। এছাড়া নির্বাচন কমিশন যত বারই আলোচনার জন্য বিএনপিকে ডেকেছে, তারা যোগদান করেনি। গত বছরেও একই কাজ করেছে দলটি। যদিও তাদের প্রভুর আহবানে ‘আত্মগোপনে’ থাকা দলটি সংলাপে বসতে পারে। কিন্তু বিএনপি আলোচনা বসতে চাইলে যে সংলাপ হবে এমনটি নয়। কারণ সংলাপের ট্রেন হাতছাড়া করেছে বিএনপি। কারণ আওয়ামী লীগ শর্তহীন সংলাপের কথা এতো দিন বলে এসেছিল। সেই আহবানকে কোনো পাত্তাই দেয়নি বিএনপি। এখন আওয়ামী লীগ কী তাদের সাথে সংলাপে বসবে? এটাই এখন বড় প্রশ্ন।

প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়েছেন ‘খুনি দলের সাথে কিসের সংলাপ।’ কিন্তু রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রীকে ভয় দেখিয়ে কোনো কাজ করানো যায়না। তবে ভালোবাসায় তাকে জয় করা সম্ভব। এমন উদাহরণ ভুরিভুরি আছে। খালেদা জিয়াকে মুক্তির জন্য টানা আন্দোলন করেছিল বিএনপি। তবুও প্রধানমন্ত্রীকে এক চুলও নড়াতে পারেনি তারা। অথচ খালেদা জিয়ার ভাই শামিম ইস্কান্দারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কারাগারের পরিবর্তে বেগম জিয়াকে বাসায় থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকার উৎখাতের হুমকি দিয়ে যাকে টলানো যায়নি অথচ তিনিই মানবতার জন্য আবেদনে সাড়া দিয়েছেন।

এই খালেদা জিয়া কিন্তু শেখ হাসিনার মুখের সামনে তার বাড়ির দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। অথচ ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর খালেদা জিয়াকে শান্তনা দিতে ওই বাসায় গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খালেদার বড় ছেলের পরিকল্পনায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা হয়েছিল, জিয়াউর রহমানের মদদে ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়েছিল। তবুও বয়স্ক খালেদা জিয়ার প্রতি সহানুভুতি দেখিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেমন কঠিন, তেমনি মহানুভবও। তাই ভয় দেখিয়ে নয়, ভালোবেসে খুব সহজে তাকে জয় করা সম্ভব।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী।




ঝিনাইদহের মহেশপুরে লিটন হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবীতে মানববন্ধন

ঝিনাইদহের মহেশপুরে কৃষক লিটন হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার সকালে উপজেলার শ্রীরামপুর বাজারে এ কর্মসূচীর আয়োজন নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী। এতে ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে নিহতের পরিবারের সদস্য, জনপ্রতিনিসহ স্থানীয়রা অংশ নেয়।

ঘন্টাব্যাপী চলা এই কর্মসূচীতে নিহতের পিতা আজিজুল ইসলাম, চাচাতো ভাই মজনুসহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন। সেসময় বক্তারা কৃষক লিটনকে পিটিয়ে হত্যার সাথে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবী জানান। পরে সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শ্রীরামপুর বাজার থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়।

গত ১০ নভেম্বর রাতে জমির ক্ষেত তছরূপ করাকে কেন্দ্র করে লিটনকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে মালেক ও তার পরিবারের লোকজন। পরে সেখান থেকে তাকে উদ্ধার প্রথমে মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করে।

এ ঘটনায় লিটনের চাচাতো ভাই মজনু বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। তবে আসামিদের এখনো আটক করতে পারিনি পুলিশ।