শেখ হাসিনার পাশে ভারতের থাকা কেন জরুরি

ভারতে রাজনৈতিক বিবাদের শেষ নেই। রাজনৈতিক দলগুলি একশোটির মধ্যে ৯৯টি ক্ষেত্রে সহমত হতে পারে না। কিন্তু বাংলাদেশের বিপদে-আপদে বিশেষ করে শেখ হাসিনা সরকারের পাশে থাকার প্রশ্নে ভারতের ১৪০ কোটি মানুষের মধ্যে কোনও দ্বিধাদ্বন্দ্ব নেই। তার পিছনে কাজ করে একটি অকৃত্রিম কৃতজ্ঞতাবোধ।

‘বাংলাদেশে আমেরিকার দাদাগিরি, ভারত হাত গুটিয়ে থাকতে পারে না’—এই শিরোনামে গত ৪ জুন ‘দ্য ওয়াল’-এ আমার একটি লেখা প্রকাশিত হয়েছিল। দু-দেশের সম্পর্ক এবং বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতের স্বার্থের দিকটি আমি স্পষ্ট করে তুলে ধরেছিলাম এবং বলেছিলাম, ভারতের জন্য শেখ হাসিনার সরকারের কেন বিকল্প নেই। ঘুরিয়ে কথাটির অর্থ দাঁড়ায়, বাংলাদেশের মানুষ চতুর্থবারের জন্য মুজিব কন্যাকে ক্ষমতায় রেখে দিলে আমরা প্রতিবেশীরা উপকৃত হব।

তার মানে কি বাংলাদেশের মানুষ ভারতের স্বার্থের কথা বিবেচনায় রেখে সরকার নির্বাচন করবে? মোটেই এমন অন্যায় দাবি করা চলে না। কিন্তু ভারতের সঙ্গে শেখ হাসিনা সরকারের সম্পর্কের রসায়নটি সে দেশের নাগরিকদের বিবেচনায় রাখা দরকার।

একথা ঠিক নরেন্দ্র মোদী যতই তাঁর সময়ের ভারতকে ‘বিশ্বগুরু’ হিসাবে তুলে ধরুন না কেন, বাংলাদেশ বাদে বাকি নিকট প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। নেপাল-পাকিস্তান বহুদিন হল চীনের খপ্পরে পড়েছে। মালদ্বীপে হালে চিনপন্থী সরকার ক্ষমতায় এসেই নয়াদিল্লিকে চোখ রাঙাতে শুরু করেছে। ভুটানের সঙ্গেও জি শিংপিনের দেশের সখ্য বাড়ছে। এই ক্ষেত্রে ভারতের কূটনৈতিক ব্যর্থতা অবশ্যই আছে। একই সঙ্গে সত্যি বাংলাদেশে বাদে বাকিগুলিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা, অন্ধ ভারত বিরোধিতা অন্যতম কারণ। জিয়াউর রহমানের সময় থেকেই বিএনপি নিজেদের ভারত বিরোধী শক্তি হিসাবে তুলে ধরেছে। একদা শাসক দল এবং প্রথমসারির পার্টির থেকে যে কূটনৈতিক অবস্থান অপ্রত্যাশিত। তারপরও ভারত বাংলাদেশের বিরোধী দলের জন্য দরজা বন্ধ করে দেয়নি। সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দিল্লি ঘুরে গেছেন। কিন্তু একথা ভুলে গেলে চলবে না, কথা দিয়েও ঢাকা সফরে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেননি বেগম জিয়া। তারপরও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বিএনপি সুপ্রিমোর সঙ্গে দেখা করেন।

তবে এটাই ভারতের শেখ হাসিনার পাশে থাকার একমাত্র কারণ নয়। ভারতের আজকের নরেন্দ্র মোদী সরকার বলে নয়, বিগত আড়াই-তিন দশকে সব সরকারের সময়ে সম্পর্কের ধারাবাহিক অগ্রগতি পর্যালোচনা করলে লাভ-লোকসানের বিষয়টি স্পষ্ট হবে। নরেন্দ্র মোদী হামেশাই দাবি করে থাকেন, তাঁর সময়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় উঠেছে। আমি বলব, এই অনন্য সম্পর্কের ভিত গড়ে ছিলেন মনমোহন সিং তাঁর ‘লুক-ইস্ট’ পলিসির মাধ্যমে। মোদী সরকার সেই একই নীতির নাম দিয়েছে ‘অ্যাক্ট ইস্ট’।

বাংলাদেশের বিগত সাধারণ নির্বাচনের পর ভারতের একটি জনপ্রিয় ইংরেজি সংবাদ বাতায়নে দেশের হিন্দু জাতিয়তাবাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের মুখপত্র ‘অর্গানাইজার’-এর প্রাক্তন সম্পাদক সেশাদ্রি চারি লিখেছিলেন, ‘বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক ব্যবস্থা ভারতের জন্য ভাল।’ বাংলাদেশের ভূ-কৌশলগত গুরুত্বের প্রেক্ষিতে বাণিজ্যিক, নিরাপত্তা ও কৌশলগত উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেছিলেন তিনি। তাঁর কথায়, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ উদ্যোগ সফল করে তোলার জন্যও বাংলাদেশের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এই নীতির মূল কথা হল বাংলাদেশ-সহ পূর্ব ও উত্তর-পূর্বের দেশেগুলির সঙ্গেও বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তোলা।

বাংলাদেশে হাসিনার পনেরো বছর এবং ভারতে মনমোহন-মোদী সরকারের বিশ বছরের রাজত্বের তাৎপর্যপূর্ণ মিলটি হল, বৃহৎ পরিকাঠামো অর্থাৎ শিল্পতালুক, এক্সপ্রেসওয়ে, সেতু, উড়ালপুল, বন্দর, গভীর সমুদ্র বন্দর, বিমানবন্দর, আন্ডারপাস, রেল, মেট্রোরেলের প্রসার। নরেন্দ্র মোদী ভোটমুখী রাজ্যগুলিতে নিয়ম করে এই ধরনের প্রকল্পের উদ্বোধন করছেন যার অনেকগুলিই তাঁর পূর্বসূরির সময়ে শুরু অথবা পরিকল্পনা করা হয়েছিল। পরিকাঠামোর উন্নয়নে ভারতে বড় ধরনের রাজনৈতিক বিবাদ নেই।

একই সময়ে বাংলাদেশে পরিকাঠামোর রূপবদলও চমৎকৃত হওয়ার মতো। পদ্মাসেতু দু’বার চাক্ষুষ করার সুযোগ হয়েছে আমার। সেটা শুধু ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চমক নয়, প্রকল্পটির বাস্তবায়ন প্রশাসকের সাহসেরও নজির। কারণ সেতুটি নিয়ে বিবাদ, বিতর্ক, বাধা, ষড়যন্ত্র অজানা নয়। তাতে একটা বিষয় স্পষ্ট বাংলাদেশের প্রশাসনে কাঁকড়া সংস্কৃতি যে রূপ ধারণ করেছে ভারতে তুলনায় তা বেশ কম। পিছন থেকে টেনে ধরার সেই সংস্কৃতিকে পাশ কাটিয়ে পদ্মা সেতুর মতো প্রকল্পের শেষ পর্যন্ত মাথা তুলে দাঁড়াতে পারাটা অনেক বড় অসাধ্য সাধন।

সাম্প্রতিক অতীতে ঢাকায় মেট্রো রেল, এক্সপ্রেসওয়ে, উড়াল এক্সপ্রেসওয়ে, চট্টগ্রামে কর্ণফুলি নদীর তলদেশে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রথম আন্ডারপাস চালু, গভীর সমুদ্র বন্দরের শিলান্যাস দেশটির অর্থনৈতিক ভিত আরও মজবুত করবে সন্দেহ নেই। সম্প্রতি দুই প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে ৭০ বছর বন্ধ থাকা আখাউড়া-আগরতলা রেলপথটি চালু করেছেন। এই প্রকল্পটি ছিল মনমোহন সরকারের ভাবনা, যা মোদীর হাত দিয়ে বাস্তবায়িত হল। পরিকাঠামোর অগ্রগতিতে এই যৌথভাবনা তিন দশক আগে শুরু হলে দুই দেশেরই চেহারা বদলে যেত।

কলকাতা থেকে এখন ট্রেনে অসম হয়ে আগরতলা যেতে ৩৮ ঘণ্টা লাগে। আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগের ফলে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে মাত্র ১২ ঘণ্টায় আগরতলা পৌঁছানো সম্ভব। আশা করা যায় অল্পদিনের মধ্যেই দু-দেশের মানুষ এই সুবিধা পাবেন। কলকাতায় আসতে একই সুবিধা কি বাংলাদেশের পূর্বাংশের মানুষ পাবেন না?

দুর্ভাগ্যের হল, দুই দেশের মানুষের উপকৃত হওয়ার কথাটি বাংলাদেশের বহু মানুষ পাশ কাটিয়ে যান। বিশেষ করে বিরোধী দলগুলি। তারা বলে, হাসিনা প্রকল্প গড়ছেন ভারতের স্বার্থে। বর্তমান সরকার চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ভারতকে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। এরফলে ভারতের পণ্য অনেক সহজে ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে কম খরচ ও সময়ে পৌঁছে দেওয়া যাবে। আশপাশের দেশগুলিতেও সহজে ভারতীয় পণ্য পৌঁছে যাবে। বাংলাদেশে আমি বহু মানুষকে শুধু এটুকু বলেই অনুযোগ করতে শুনেছি। তারা একবারের জন্যও বলেন না কলকাতা-সহ ভারতের একাধিক বন্দর বাংলাদেশও ব্যবহারের সুযোগ পাবে।

প্রশাসনিক পরিভাষায় একে বলে ট্রানজিট। কিন্তু সুস্থ থাকার সময় খালেদা জিয়া লাগাতার প্রচার করেছেন শেখ হাসিনা ভারতকে বাংলাদেশের ভিতর ‘করিডর’ দিচ্ছেন। অর্থাৎ সেগুলি শুধুমাত্র ভারত ব্যবহার করতে পারবে। বাস্তবে, সেটা ট্রানজিট এবং এর মাধ্যমে পণ্যমাশুল এবং অন্যান্য কর বাবদ বাংলাদেশ বিপুল অর্থ উপার্জন করছে। নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার মতো বাংলাদেশ যে এখনও চীনের ঋণের জালে জড়িয়ে যায়নি তার জন্যও ভারতের কৃতিত্ব প্রাপ্য। তিস্তার জল নিয়ে সে দেশে বহু মানুষের ঘুম ছুটে গিয়েছে। তাঁরা একবারের জন্যও স্বীকার করেন না, জ্যোতি বসুর মধ্যস্থতায় হাসিনা ও দেবগৌড়ার সময় স্বাক্ষরিত গঙ্গা জল চুক্তি তিন বছর পর তিন দশর পেরবে।

শেখ হাসিনার সময়ে বাংলাদেশে জঙ্গি দমন অভিযানের মাধ্যমেও ভারত উপকৃত হয়েছে। সেশাদ্রি চারির কথার প্রতিধ্বনি শোনা গেছে ভারতের এক গুরুত্বপূর্ণ মুখ্যমন্ত্রীর মুখে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারত বিরোধী শক্তিকে দমনে শেখ হাসিনার সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন উত্তর-পূর্ব ভারতের বৃহত্তম রাজ্য তথা দেশের ওই প্রান্তে শাসক দল বিজেপির প্রধান মুখ এবং নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহদের কাছের মানুষ অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। গত সেপ্টেম্বরে জি-২০ সম্মেলনে শেখ হাসিনার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর একান্ত বৈঠকের পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রক কর্তৃক প্রচারিত প্রেস নোটে বলা হয়, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী সে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিদ্যমান শান্তিপূর্ণ অবস্থা নিশ্চিতকরণে অবদান রাখার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।’

অন্যদিকে, সেই বৈঠক নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলায় টুইট সেইজঙ্গি দমনের প্রসঙ্গে ফিরি। এই ব্যাপারে ভারতের লাভ নিশ্চয়ই হাসিনা সরকারের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল না। আসলে মৌলবাদী শক্তি এবং জঙ্গি দমন করা না গেলে সে দেশে আজকের উন্নয়ন যাত্রা সম্ভব হত না। সেই অভিযান ছিল বিএনপি জমানার জঞ্জাল মুক্ত করা। তবে বাংলাদেশ ফের মৌলবাদীদের প্রতি দুর্বল কোনও শক্তির হাতে পড়লে বিপদ গোটা উপমহাদেশের। মৌলবাদীদের দেশ, ধর্ম বলে কিছু হয় না। বাংলাদেশে মৌলবাদী শক্তি মাথাচাড়া দিলে ভারতে প্রতিস্পর্ধী মৌলবাদীরা আরও ফনা তুলবে। তাতে দুপারেই সংখ্যালঘুরা বেশি বিপন্নতার শিকার হবেন। এই কারণেও বাংলাদেশের ভোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে এপারের মানুষও ভাবিত।

নির্বাচন নিয়ে কোনও দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর প্রশ্ন ওঠে না। গত শুক্রবার ভারতের বিদেশ সচিব বিনয় কোয়াত্রা এই ব্যাপারে নয়াদিল্লির অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। একই কথা মার্কিন বিদেশমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকেও জানিয়ে দিয়েছেন যাঁর দেশ বাংলাদেশে ভিসা নীতি প্রয়োগ-সহ একাধির বিধিনিষেধ প্রয়োগ করে সরাসরি নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করছে।

তবে একথা সকলেই মানবেন, চলমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে কোনও দেশের নির্বাচনের ঘাত-প্রতিঘাত শুধুমাত্র সে দেশের ওঠাপড়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। চলমান বিশ্ব পরিস্থিতির কথা বিবেচনায় রেখেই প্রতিবেশী হিসাবে বাংলাদেশকে নিয়ে ভারত হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারে না।

ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে জনমানসে যে আবেগ বহমান, শেখ মুজিবুরকে সপরিবারে হত্যা, সামরিক শাসকদের স্বৈর শাসন, মৌলবাদী শক্তির উত্থান এবং ধারাবাহিক রাজনৈতিক বৈরিতার কারণেই বছর দশ-পনেরো আগেও দেখেছি, সাধারণ বাংলাদেশিদের অনেকের মধ্যেই দেশ নিয়ে ছিঁটেফোটা গর্ববোধ নেই। এমন দেশে উন্নয়ন ঘিরে দুর্নীতি, অগণতান্ত্রিক পরিমণ্ডল, ভোটে অনিয়ম, দাদাগিরি, সিন্ডিকেটরাজের সংস্কৃতি মাথা তোলা অস্বাভাবিক নয়। নির্বাচন বয়কট, খুনখারাবি, জন-সম্পত্তি বিনষ্ট সেই অগণতান্ত্রিক পরিমণ্ডলকে আরও শক্তিশালী করে।

লক্ষণীয়, বাংলাদেশের এই অন্ধকারাচ্ছন্ন পর্ব নিয়ে আমেরিকা বরাবর চুপ থেকেছে। তারা হঠাৎ গেল গেল রব তুলেছে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের নির্বাচন এগিয়ে আসতে। আন্তরিক সম্পর্কই ইঙ্গিত করেছিল। খেয়াল রাখতে হবে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মাতৃভাষা গুজরাতি এবং ভারত সরকারের কাজের ভাষা হিন্দি ও ইংরেজি।

লেখক: ভারতীয় লেখক ও সাংবাদিক; এক্সিকিউটিভ এডিটর, দ্য ওয়াল, কলকাতা; বাংলাদেশ বিষয়ক পর্যবেক্ষক।




কোটচাঁদপুর ঔষধ প্রশাসনের অবহিত করন সভা অনুষ্ঠিত

ঔষধ ও কসমেটিকস আইন ২০২৩ অনুসারে রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতিত প্রশাসন ও এন্টিবায়োটিক বিক্রি শাস্তির বিধান এবং এন্টিবায়োটিকের মোড়কে লাল রঙের সনাক্ত করন বিষয়ক অবহিত করন সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।আজ সোমবার দুপুরে কোটচাঁদপুর মুক্তি যোদ্ধা কমপ্লেক্সে এ সভা করা হয়।
কোটচাঁদপুর ড্রাগিষ্ট এন্ড কেমিস্ট সমিতির সভাপতি কামরুল হাসান খান খোকনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঝিনাইদহ ঔষধ প্রশাসন কর্মকর্তা সিরাজুম মনিরা।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন,জেলা বিসিডিএসের সভাপতি রফিকুল করিম সোম,কোটচাঁদপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক( ওসি) সৈয়দ আল- মামুন, সাবেক মুক্তি যোদ্ধা কমান্ডার তাজুল ইসলাম সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তাকিবুর রহমান ঝন্টু, সহসভাপতি হান্নান মিয়া,সোহরাব হোসেন,সিনিয়র সহসভাপতি কাজী হাসানুজ্জামান হাসান, সহসভাপতি হাসানুজ্জান ডাবলু,হুমায়ুন কবির।

এসময় ঔষধ ও কসমেটিকস আইন ২০২৩ অনুসারে রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতিত এন্টিবায়োটিক বিক্রি শাস্তির বিধান এবং এন্টিবায়োটিকের মোড়কে লাল রঙের সনাক্ত করন বিষয় নিয়ে উপস্থিত, কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিষ্ট সমিতির সভাপতি সম্পাদক সহ সদস্যদেরকে সচেতন মূলক বক্তব্য রাখেন।




কোটচাঁদপুরে প্রবীন সাংবাদিক খোন্দকার শামসুজ্জামানের ইন্তেকাল

কোটচাঁদপুরের প্রবীন সাংবাদিক খোন্দকার শামসুজ্জামান (৬৫) মারা গেছে। তিনি ছিলেন,প্রেস ক্লাব কোটচাঁদপুরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। রবিবার গভীর রাতে শ্বাসকষ্ট জনিত কারণে মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন মৃতের পরিবার।

জানা যায়, প্রবীন সাংবাদিক শামসুজ্জামান বেশ কিছু যাবত শ্বাসকষ্ট জনিত কারণে অসুস্থ্য ছিলেন। গতকাল রবিবার রাতে হঠাৎ করে গুরুতর অসুস্থ্য হয়ে পড়েন তিনি। এ সময় ওনার ছেলে আব্দুল্লাহ বাশার কোটচাঁদপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে দেখে চিকিৎসা শুরুর আগে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন, প্রবীন এ সাংবাদিক। সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন,না ফেরার দেশে।  মৃত্যুর সময় তিনি এক মেয়ে এক ছেলে,স্ত্রীসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।

এদিকে প্রবীন সাংবাদিকের মৃত্যুর খবরে সোমবার সকালে তাঁকে এক নজর দেখতে কোটচাঁদপুর কলেজ বাসস্ট্যান্ডের খোন্দকার পাড়ার বাসায় ছুটে আসেন শত শত শুভাকাংক্ষি।
আজ সোমবার যোহর বাদ সরকারি কে,এম,এইচ ডিগ্রি কলেজ মাঠে মরহুমের জানাজার নামাজ শেষে সাংবাদিক খোন্দকার শামসুজ্জামানকে খোন্দকার পাড়ায় পারিবারিক করব স্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়।

তিনি ছিলেন, প্রেস ক্লাব কোটচাঁদপুরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি,বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা,কোটচাঁদপুর উপজেলা শাখার সহ সভাপতি,বাজেবামনদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির প্রাক্তন সদস্য ও সভাপতি, কোটচাঁদপুর মডেল পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির প্রাক্তন সদস্য,ঢাকা আহসানিয়া মিশন পরিবেশ (আপস) এর মাস্টার ট্রেইনার।

সাংবাদিক শামসুজ্জামান কোটচাঁদপুর খোন্দকার পাড়ার মৃত রহমতউল্লার বড় ছেলে। তিনি ছিলেন,দৈনিক বীর জনতা পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক আব্দুল্লাহ বাশারের পিতা।

সাংবাদিক শামসুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন, কোটচাঁদপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি অশোক দে, সাধারণ সম্পাদক সুব্রত কুমার,সহসভাপতি আব্দুল খালেক বিশ্বাস, যুগ্ন সম্পাদক মনোজ মালাকার, প্রচার সম্পাদক রাম জোয়াদ্দার,সদস্য আকিমুল ইসলাম, রোকুনুজ্জামানসহ শোক প্রকাশ করেছেন, সাংবাদিক মঈন উদ্দিন।




দামুড়হুদায় আইন-শৃংখলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত

দামুড়হুদায় আইন-শৃংখলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে । আজ সোমবার সকাল ১০টায় উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনা সভায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোকসানা মিতা’র সভাপতিত্বে অতিথি ছিলেন দামুড়হুদা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সজল কুমার দাস, দামুড়হুদা মডেল থানার প্রতিনিধি এস আই তৌহিদুল ইসলাম,দর্শনা থানার প্রতিনিধি এস আই আব্দুর রহমান ,দর্শনা কোম্পানী কমান্ডার সুবেদার জহির উদ্দিন বাবর , মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কর্মকর্তা হোসনে জাহান,হাউলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ভারপ্রাপ্ত নিজাম উদ্দিন, দামুড়হুদা মডেল মসজিদের পেশ ঈমাম মুফতি মামুনুর রশীদ, দামুড়হুদা প্রেসক্লাব সভাপতি এম নুরুন্নবীসহ উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও সাংবাদিক বৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সভায় বক্তারা দামুড়হুদা উপজেলায় আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রনের পাশাপাশি মাদক-জুয়া,চুরি-ডাকাতি, বাল্যবিবাহ, যৌতুক, নারী-নির্যাতন, ইভটিজিংও আইনশৃংখলা বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন।

এসময় ইউএনও রোকসানা মিতা বক্তব্য বলেন, বর্তমান সরকার দেশের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বদ্ধ পরিকর। তাই অপরাধ প্রবণতা বন্ধে ও আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নের পাশাপাশি সকল নাগরিককে ভূমিকা রাখতে হবে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান জানান।




ফের রগ কাটার রাজনীতি: যুবলীগ নেতাকে হাত-পায়ের রগ কেটে হত্যা

বিএনপি ও জামায়াত-শিবির আবারও রগ কাটার রাজনীতি শুরু করেছে। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে যুবলীগ নেতার হাত-পায়ের রগ কেটে হত্যা করেছে তারা। এসময় আরেকজনকে আহত করা হয়। এই সুন্দরগঞ্জে ২০১৩ সালে জামায়াত নেতা সাঈদীর ফাঁসির রায়কে কেন্দ্র করে তাণ্ডব চালিয়েছিল তারা। ওই সময় চার পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা করেছিল জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সোনারায় ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম এক সঙ্গীকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। রবিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তারা বামনডাঙ্গা-সুন্দরগঞ্জ সড়কের শাখামারা ব্রিজ এলাকায় তার উপর হামলার শিকার হন। প্রথম ৭-৮ জন হঠাৎ রশি টেনে মোটরসাইকেল গতিরোধ করে। এরপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে জাহিদুলের দুই হাত ও দুই পায়ের রগ কেটে দেয় এবং মাথাসহ শরীরে একাধিক কোপ দেয়। লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করা হয় তার সঙ্গে থাকা কবিরকে। পরে স্থানীয় লোকজন রক্তাক্ত অবস্থায় তাদেরকে উদ্ধার করে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। এরপর জাহিদুলকে দ্রুত রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে রাত পৌনে ৩টার দিকে মারা যান তিনি।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আশরাফুল আলম সরকার লেবু বলেন, ‘ঘটনাটি পরিকল্পিত। হামলার সময় জাহিদুল কয়েকজনকে চিনতে পেরেছিলেন। এদের মধ্যে মুছা, সামু, ইমতিয়াজ ও খাদেমুল জামায়াত, শিবির ও বিএনপি কর্মী। অন্য হামলাকারীরা জামায়াত-শিবিরের কর্মী।’

সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি কে এম আজমিরুজ্জামান বলেন, ‘গুরুতর আহত অবস্থায় জাহিদুলকে যখন হাসপাতালে আনা হয় তখন তিনি হামলাকারী কয়েকজনের নাম বলেছেন। এরমধ্যে মুছা, সামু, ইমতিয়াজ ও খাদেমুল জামায়াত-শিবির কর্মী। তাদের ধরা গেলে অন্য হামলাকারীদের চিহ্নিত ও গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।’

২০১৩ সালে ২৮ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা দেলওয়ার হোসেন সাঈদীর ফাঁসির আদেশের পর সুন্দরগঞ্জে জামায়াত-বিএনপির নেতা-কর্মীরা তাণ্ডব চালায়। দফায়-দফায় হামলা, অগ্নিকাণ্ড আর লুটপাট চালানো হয় বামডাঙ্গা রেল স্টেশন, আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়, মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয় ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে। এক পর্যায়ে কুপিয়ে হত্যা করা পুলিশ সদস্য তোজাম্মেল হক, নজিম উদ্দিন, বাবলু মিয়া ও হযরত আলীকে।

আশির দশকের গোড়ার দিকে রগ কাটার সন্ত্রাস শুরু করেছিল জামায়াত-শিবির। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্য মতের ছাত্র নেতাদের হাত-পায়ের রগ কাটা, গান পাউডার ব্যবহার করে পুড়িয়ে মারা এবং খুনের পর ম্যানহোলে লাশ ফেলে দিতো শিবির। পরবর্তীতে তারা সারাদেশে এই অপকর্ম চালিয়েছে।




সার উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়ল বাংলাদেশের

কৃষি নির্ভর বাংলাদেশে বর্তমানে ইউরিয়া সারের চাহিদা বছরে ২৬ লাখ টন। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী (বিসিআইসি) এতদিন আমাদের দেশি কারখানায় সার উৎপাদন হতো ১০ লাখ টন। বাকিটা আমদানি করতে হতো। রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করলেন, নরসিংদীর ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা। প্রকল্প পরিচালক রাজিউর রহমান মল্লিক বললেন, দৈনিক ২ হাজার ৮০০ টন এবং বছরে প্রায় ১০ লক্ষ টন সার উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে এই কারখানার। এখানে পুরোপুরি উৎপাদন শুরু হলে দেশে সার উৎপাদন বেড়ে দাঁড়াবে ২০ লক্ষ টন। প্রকল্পের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার দুই মাস আগেই কাজ শেষ হয়েছে। এরই মধ্যে পরীক্ষা মূলক উৎপাদনও শুরু হয়েছে।

বিসিআইসির চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, দেশের কৃষি খাতের মোট চাহিদার এক তৃতীয়াংশ ইউরিয়া সার উৎপাদন করবে ঘোড়াশাল-পলাশ সার কারখানা। দেশি সার দিয়ে মোট চাহিদা পূরণের বিষয়টি এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। ঘোড়াশাল-পলাশ সার কারখানায় পুরোপুরে উৎপাদন শুরু হলেই আমদানি নির্ভরতা চোখে পড়ার মত কমে যাবে। বিসিআইসির এই কারখানায় প্রতিবছর প্রায় ৯ লাখ ২৪ হাজার টন ইউরিয়া সার উৎপাদন হবে। যা দেশের মোট ইউরিয়া চাহিদার ৩৫ শতাংশ।

সাইদুর রহমান আরো জানান, ঘোড়াশাল-পলাশ সার কারখানাটি পুরোদমে চালু হলে দেশে ইউরিয়া সারের উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে ২০ লক্ষ মেট্রিক টন হবে। এতে করে আমদানি নির্ভরতা পাঁচ ভাগের এক ভাগে নেমে আসবে। এর ফলে বিদেশ থেকে সার আমদানিতে যে টাকা ব্যয় হয়, সেখান থেকে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার সাশ্রয় হবে। ইউরিয়া সার আমদানিতে ভর্তুকি দিতে হবে না । এখন পর্যন্ত সরকারকে ইউরিয়া আমদানিতে প্রতি বছর ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়। কারখানাটি দেশের কৃষি উৎপাদন, কৃষি অর্থনীতি, ব্যবসা বাণিজ্যে এবং সর্বোপরি দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে । এছাড়া কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা বৃদ্ধি পাবে এবং দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

কারখানার প্রকল্প পরিচালক জানান, এই কারখানাটিকে গ্রিন ফার্টিলাইজার প্রকল্পও বলা হচ্ছে। এখানে পরিবেশ দূষণ হওয়ার সুযোগ নেই। পরিবেশ দূষণের যে কার্বনডাইঅক্সাইড গ্যাস বের হবে তা ধরে রেখে আবার ব্যবহার করে ১০ শতাংশ উৎপাদন বাড়ানোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আধুনিক যে প্রযুক্তি এখানে যুক্ত করা হয়েছে তা দেশি প্রকৌশলীরা চালাবেন। বর্তমানে জাপানি কনসালটেন্টদের মাধ্যমে দেশের প্রত্যেকটা কর্মকর্তা ও অপারেটরকে ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে। এখন দেশি কর্মীরাই অপারেশন সিস্টেম চালাচ্ছে আর বিদেশিরা পর্যবেক্ষণ করছে। কোনোরকম ভুল হলে তারা সেটা ধরিয়ে দিচ্ছে। পাশাপাশি হাতে-কলমে প্রশিক্ষণও দিচ্ছে।

প্রকল্প পরিচালকের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, কারখানাটির প্রযুক্তি অত্যন্ত জ্বালানি সাশ্রয়ী। পলাশ ও ঘোড়াশালের পুরোনো দুটি কারখানায় আগে যে পরিমাণ গ্যাস লাগত, একই পরিমাণ গ্যাস দিয়ে নতুন কারখানায় আগের চেয়ে তিনগুণ উৎপাদন করতে পারবে। বর্তমানে কারখানা চালু রাখতে দৈনিক বিদ্যুৎ দরকার হবে ২৮ মেগাওয়াট। যেখানে ৩২ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ২টি অত্যাধুনিক স্টিম গ্যাস জেনারেটর রয়েছে। জেনারেটর দুটি সবসময় ৫০ শতাংশ লোডে চলবে। তাই এই কারখানাটির ২টি স্টিম গ্যাস জেনারেটর ১০০ শতাংশ লোডে চালিয়ে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

কারখানায় উদ্বৃত্ত সার মজুদ করার জন্য থাকছে ১ লক্ষ মেট্রিক টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন অত্যাধুনিক বাল্ক স্টোরেজ। এমনকি বেঁচে যাওয়া এমোনিয়া স্টোরেজের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে অত্যাধুনিক স্টোরেজ ট্যাঙ্ক । লিকেজ এবং দুর্ঘটনা প্রতিরোধের জন্য কারখানাটিতে রয়েছে সয়ংক্রিয় ওয়াটার পন্ড এবং ওয়াটার কার্ডেন।

বিসিআইসির নথি বলছে, দেশের ইউরিয়া সারের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে ১৯৭০ সালে বার্ষিক ৩ লাখ ৪০ হাজার এবং ১৯৮৫ সালে ৯৫ হাজার টন উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন যথাক্রমে ঘোড়াশাল এবং পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা স্থাপিত হয়। কারখানা দুটি অত্যন্ত পুরোনো হওয়ায় উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস এবং ডাউন টাইম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কারখানা দুটির স্থানে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন, শক্তি সাশ্রয়ী, পরিবেশ বান্ধব ও আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর একটি সার কারখানা নির্মাণের নির্দেশ দেন। কৃষকের কাছে ন্যায্যমূল্যে সার পৌঁছানোর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার ২০১৮ সালের ২৪ অক্টোবর দুটি কারখানা একত্র করে নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।

এই প্রকল্প নিয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা, জানান, দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় ইউরিয়া সার কারখানা এটি। এর নির্মাণ ব্যয় ১৫ হাজার ৫শ কোটি টাকা। কয়েকটি বিষয় মাথায় রেখে প্রধানমন্ত্রী এই প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করতে বলেন, এগুলো হচ্ছে, দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় সারের চাহিদা মেটানো, সুলভ মূল্যে কৃষকদের কাছে সার সরবরাহ, আমদানি কমিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি। মোট ব্যায় মেটাতে সরকারি তহবিল থেকে ৪ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। বাকি ১০ হাজার ৯২০ কোটি টাকা বাণিজ্যিক ঋণ।

এর আগে ২০১৬ সালে, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে শক্তিসাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির শাহজালাল সার কারখানা উদ্বোধন করা হয়। এটির উৎপাদন ক্ষমতা ৫ লাখ ৮০ হাজার ৮শ মেট্রিক টন। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের অক্টোবরে নরসিংদী জেলায় ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানার কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু করোনার কারণে ২০২০ সালে এই কাজ সাময়িক ধীরগতি আসে। ৪৩৬ একর জমির ওপর নির্মিত হয়েছে এই কারখানা । এর মধ্যে শুধু ১১০ একর জমির ওপর কারখানাটির মেশিনারিজ বসানো হয়েছে। বাকি ৩২৬ একর জমির ওপর অফিস, শ্রমিকদের আবাসন প্রকল্পসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ছেলেমেয়েদের খেলার মাঠ ও রাস্তাঘাট নির্মাণ করা হবে।




অবরোধ উপেক্ষা করে সড়কে যানবাহনের চাপ, স্কুলে শুরু বার্ষিক পরীক্ষা

সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা চতুর্থ দফার অবরোধের দ্বিতীয় দিনে সড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। কোথাও কোথাও তৈরি হয়েছে যানজটও। এদিকে অবরোধ উপেক্ষা করে স্কুলগুলোতে শুরু হয়েছে বার্ষিক পরীক্ষা। প্রতিটি স্কুলেই ছিল শিক্ষার্থীদের উপচে পড়া ভিড়।

সোমবার সকালে রাজধানীর নিউমার্কেট, ধানমন্ডি, আসাদগেট ও মহাখালী এলাকার প্রতিটি রাস্তায় ছিল যানবাহনে ভিড়। এসব এলাকার অধিকাংশ বাস স্টপেজগুলোতেই যাত্রীরা সকাল থেকে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। ঢাকা জেলার ভেতরে ও বাইরে চলাচল করা স্বল্প দূরত্বের মিনি বাসগুলো ছিল যাত্রীতে ঠাসা। পাশাপাশি বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হওয়ায় স্কুলগুলোর সামনে ছিল শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের ভিড়।

রাজধানীর বেইলি রোডের ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের সামনে কথা হয় পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীর অভিভাবক সাইফুল ইসলামের সাথে। তিনি জানান, অবরোধের নামে কতোদিন ঘরে থাকবে মানুষ। সাধারণ জনগণ রাজনীতির নামে সহিংস কর্মসূচি চায় না। কিছুটা আতঙ্ক থাকলেও মানুষ ঘর থেকে বের হওয়া শুরু করেছে। তাছাড়া ছেলে মেয়েদের লেখাপড়াও জরুরি। স্কুলে যথাসময়ে বার্ষিক পরীক্ষাও শুরু হয়েছে।

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রের অভিভাবক আকবার হোসেন বলেন, ‘ভয় দেখিয়ে জনগণকে ঘরে বন্দি রাখা যায় না, রাজনৈতিক দলের নেতাদের এটা বোঝা উচিত। আন্দোলনের প্রতি জনসমর্থন থাকলে কেউ বাইরে বের হতো না। সবার আগে মানুষের কথা ভাবা উচিত। আমরা চাই ১৫ বছর যেভাবে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল, সেটিই যেন থাকে।’

ফার্মগেট এলাকার বাস চালক মো. মামুন বলেন, ‘বাস পুড়ানোর ঘটনায় কিছুটা আতঙ্ক আছে। তবে পরিবারের জন্য আয়ও করতে হবে, তাছাড়া আমরা খাবো কি? রাস্তায় যাত্রী আছে। তাই গাড়ি নিয়ে বের হয়েছি। আশাকরি সরকার আমাদের নিরাপত্তা দিবে।’

আমিনুল ইসলাম নামে এক যাত্রী বলেন, ‘বেলা বাড়ার সাথে সাথে মানুষের চাপও বাড়ে। তখন বাসে উঠতে আরও কষ্ট হয়। সেজন্য আমি প্রতিদিন একটু সকালেই বাইরে বের হই। এ সময় রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকে ফলে পৌঁছানো যায় দ্রুত। অবরোধের প্রভাব তেমন একটা নেই।’

মহাখালীর আমতলী বাসস্ট্যান্ডে রাবেয়া বসরী নামের এক যাত্রী বলেন, ‘রাস্তার হালচাল কিছু বুঝি না। হঠাৎ দেখি গাড়ির পরিমাণ বেশি। আবার দেখি নেই। এখানে অনেকক্ষণ ধরে বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। কোনো বাসে উঠতে পারছি না। সবগুলো বাসের গেট পর্যন্ত একেবারে ঠাসা।’

মতিঝিল এলাকার বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা আদিলুর রহমান বলেন, ‘অবরোধ চলছে। কিন্তু কেউ তা মানছে না। মিরপুর থেকে মেট্রো ট্রেনে মতিঝিল এসে অফিস করছি। কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’

সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিএনপি-জামায়াতের ৪র্থ দফার ৪৮ ঘণ্টার এই অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয় রোববার ভোর ৬টা থেকে। গত বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) বিকেলে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।




চুয়াডাঙ্গা ২-আসনের স্বতন্ত্র এমপি প্রার্থী জাহাঙ্গীরের পথসভা ও লিফলেট বিতরণ

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের স্বতন্ত্র এমপি প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম পথসভা ও লিফলেট বিতরণ অব্যাহত রেখেছেন। আজ সোমবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে হাউলী ইউনিয়নের ডুগডুগী বাজারে বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা ভোটারদের সাথে দোয়া প্রার্থনা ও লিফলেট বিতরণ করেন।

গনসংযোগ কালে তিনি বলেন, আমি যদি এমপি হতে পারি তাহলে আপনাদের সেবক হিসেবে মুরুব্বিদের দিক নির্দেশনায় চুয়াডাঙ্গা -২ আসনের এলাকা বাসীর ভাগ্য উন্নয়নের লক্ষ্যে সর্বদাই জনগনের পাশে থেকে কাজ করে যাবো। চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের এলাকাবাসীর ভাগ্য উন্নয়নের লক্ষ্যে সর্বদাই জনগণের পাশে থেকে কাজ করে যাবো। তাই আপনাদের দোয়া ও সমর্থন কমনা করছি। আমি নির্বাচনী এলাকার অসহায় ও সাধারণ মানুষের পাশে সব সময় আছি এবং থাকবো। আপনারা দোয়া করবেন যেনো চুয়াডাঙ্গা -২ আসনে বিজয়ী মালা এনে দিতে পারি।এবারের নির্বাচনে সাধারন মানুষের ব্যাপক সাড়া ও ভালোবাসা পাচ্ছি।

সাধারন জনগন বলেন, এই নির্বাচনে বর্তমান সময়ে জাহাঙ্গীর আলমের জনস্রোত নেমেছে। এবং তিনি রেকর্ড পরিমান ভোট পেয়ে জনতার এমপি নির্বাচিত হবেন। তিনি যে এলাকায় যাচ্ছেন তাকে দেখার জন্য সাধারন জনগন লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকছে। স্থানীয় তরুণ প্রজন্মের জনগণ তাকে এমপি হিসেবে দেখতে চায়। চুয়াডাঙ্গা -২ আসনের প্রতিটা স্থানে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে তার হাত দিয়েই।




ঋতু বদলে সর্দি-কাশি সারাবে মধু

ঋতু বদলাচ্ছে। এই সময় সর্দি-কাশি লেগে যাওয়া খুব স্বাভাবিক। অসুস্থ হয়ে যাওয়ার কঠিন সময়ে মধু হতে পারে সবচেয়ে বড় সমাধান। কিন্তু সর্দি কাশি সাড়াতে সরাসরি মধু খেলে তো আর হবে না। খেতে হবে সমন্বয়ে। শীতে সর্দি-কাশি থেকে রেহাই পেতে মধুর ব্যবহার করুন এভাবে:

চা ও মধু
শীতে রঙ চা খাওয়াই ভালো। রঙ চায়ে চিনির বদলে মধু মিশিয়ে নিন। সর্দি-কাশি দূর করতে মধু অনেক উপকারি।

লেবু ও মধু
লেবু আর মধু দুটোই সর্দির সময় কার্যকর। চায়ের সঙ্গে লেবু আর মধু যুক্ত করে খেলে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের গুণ ভালোভাবে পাচ্ছেন। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।

মধু ও পানি
সর্দি ও কাশির সমস্যা বেশি হলে আর রাতে কফ বাড়লে গরম পানির সঙ্গে মধু মিশিয়ে ফেলুন। এতে আরাম পাবেন।

সূত্র: ইত্তেফাক




কুষ্টিয়ায় ইয়াবাসহ ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার

কুষ্টিয়ায় ১ হাজার ৬শ পিস ইয়াবাসহ নাজিম উদ্দিন (৪২) নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গতকাল রবিবার কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং নিশান মোড় এলাকার একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কুষ্টিয়া জেলা খ, সার্কেল কর্মকর্তাগণ।

আটককৃত মাদক ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দিন শহরের কালিশংকরপুর এলাকার মতলব হোসেনের ছেলে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং নিশান মোড় এলাকার একাট তিনতলা বাড়ির দ্বিতীয় তলায় অভিযান পরিচালনা করে। এসময় ঘরের মধ্য থেকে ১ হাজার ৬‍‍`শ পিস ইয়াবাসহ নাজিমুদ্দিনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। গ্রেপ্তারকৃত নাজিমুদ্দিন ওই বাড়ি থেকে দীর্ঘ দিন মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন।

আটককৃত মাদক ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ এর ৩৬/১-১০ ক ধারায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ পরিদর্শক মাহবুবা জেসমিন রুমা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন।